প্রিয়_ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
3098

#প্রিয়_ভালোবাসা

#নিশাত_তাসনিম

#পর্ব:৪

বাহ্, বিয়ের একদিন না হতেই বউকে মুখে তুলে খাওয়ানো হচ্ছে?এতদিন তো বিয়ে করবি না করবি না বলে কত কাহিনী করলি।এক রাতে কী এমন হলো যে বউকে মুখে তুলে খাওয়ানো হচ্ছে?আমরাও শুনি,বল?

মাএ মুখে নাস্তা দিয়েছি এমন কথা শুনে খাবার গলায় আটকে গেলো।মাথা তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি স্লিভলেস ব্লাউজে সাথে পাতলা শাড়ী পড়া এক মহিলা টেবিলের দিকে আসতে আসতে বলতেছেন।মুখে ভারী মেকআপ , শরীরের রং মেক আপ এর কারনে বুঝাও যাচ্ছে না,পায়ে ইয়া বড় হিল।উনি সোজা এসেই আমাদের সামনের চেয়ারে বসলেন।

আমাকে বসে বসে মহিলাটিকে গবেষনা করতে দেখে উনি এতো জোরে এক ধমক দিলেন সাথে সাথে আমি কেঁপে উঠলাম।

উনি আবারো ধমক দিয়ে বললেন,,,”কি হলো খাচ্ছো না কেনো?”

আমি তাড়াহুড়ো করে গিলতে গিয়ে ভাত গলায় আটকে গিয়ে কাশি উঠে যায়।আমাকে খুক খুক করে কাশতে দেখে উনি আমাকে পানি খাওয়াতে লাগলেন।

আমাকে পানি খাওয়াতে দেখে মহিলাটি বলে উঠলেন,,,ও বাবাগো পানিও মুখে তুলে খাওয়ানো হচ্ছে।বাহ এতো তাড়াতাড়ি তোমার প্রাক্তন প্রেমিকাকে ভুলে গেলে?কি যেনো বলতে, ও হ্যা, “আমি আমাকে ভুলে যেতে পারি কিন্তুু ইশিকাকে নয়।”তাই না এটাই তো বলতে,তাইতো?আর এখন বউ একদিন আসতে না আসতে কোলে করে নিয়ে আসা হচ্ছে আবার মুখে তুলে খাওয়ানো হচ্ছে। বাহ্ বউয়ের তো ভালোই আদর যত্ন হচ্ছে।তা কি এমন করলো যে এতো পরিবর্তন?

আমি পানি খাওয়া বাদ দিয়ে উনার কথা শুনতে লাগলাম, এ মহিলা বলে কী?কই আমাকে আদর যত্ন করতেছে?উনি তো উল্টো সেকেন্ডে সেকেন্ড ধমকাচ্ছে আর একটু উহ্,আহ করলে ঠাস ঠাস করে থাপ্পর দিতেছে।সকাল থেকে তিনটা থাপ্পর দেওয়া শেষ।

সকালের ঘটনার পর আমি নিজে নিজে নিচে আসতে পারবো না বলে উনি আমাকে ঠাসস করে এক থাপ্পর দিয়ে বললেন আমার কোলে উঠার জন্য এত নাটক তাই না?আমি গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, কিছু বললাম না।খাওয়ার সময় হাত কাটার কারনে নিজে খেতে পারবো না দেখে উনি আরেকটা থাপ্পর দিয়ে বললেন, আমার হাতে খাওয়ার জন্য হাত কেটেছো, তাই না?আমি এবারো কিছু বললাম না।নিজের মনকে বুঝলাম নেশা করতে না পারায় এমন বিহেভিয়ার।

“বুঝো না, নতুন বিয়ে করেছি বউয়ের একটু আদর-যত্ন না করলে চলে?”

আমিও উনাকে ঠেস মেরে বললাম,,,”হুম,একদম সেই লেভেলের আদর-যত্ন চলতেছে।”

কথাটা একটু আস্তেই বলেছি কিন্তুু ব্যাটা ঠিকই শুনেছে।সাথে সাথে আমার হাত টা এক মোচড় দিয়ে দিলেন।আমি ব্যাথায় আহ করার আগেই উনি আমার মুখে খাবার দিয়ে দিলেন,সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।

আমার চোখে পানি দেখে মহিলাটি এবার কিটকিটে হেসে বললেন,,,ওমা নতুন বউয়ের চোখে পানি,কিন্তুু কেনো?জামাই কী বেশি আদর-যত্ন করেছে নাকী?

মহিলাটির কথার জবাবে উনি হেসে বললেন,, “ফুফি আসলে ওকে কেউ আগে এমন আদর করে খাওয়াইনি তো তাই আর কী চোখে পানি চলে এসেছে,বুঝোই তো।”

মহিলাটির মুখের হাসি মুহূর্তেই চলে গেলো,সাথে সাথে চোখ ছোট ছোট করে বললেন,,”তুই কী সত্যিই বলছিস?তোকে আমি যতটুকু চিনি তুই এমন ভালো বিহেভ ওর সাথে কখনই করতে পারিস না,তাহলে? ”

মহিলার কথা শুনে উনি শুধু ভিলেন মার্কা হাসি দিলেন আর কিছু না বলে উপরে চলে যেতে লাগলেন,আমার কথা ভুলে গেলেন মনে হলো।আমিও কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম।উনি কয়েক কদম যেয়ে আবার ফিরে এসে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিলেন।এমনভাবে চেপে ধরলেন আমার হাত লাল হয়ে গেলো, চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি পড়তে লাগলো।পিছনে ওই মহিলাটি কী কী বলতে লাগলো,আর কাজের লোকগুলো চুপচাপ সব দেখতে লাগলো।

রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন, আমাকে বিছানায় বসিয়ে এক থাপ্পর দিয়ে বললো,,”তখন বললি না কেনো তোকে নিয়ে আসার কথা মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো।”

আমি গালে হাত দিয়ে বললাম,,আপনিই তো তখন বললেন আমি নাটক করে আপনার কোলে উঠতে চাইতেছি, তাই,,,,

এবার উনি আরেকটা গাল চেপে বললেন,, “চুপপ, মুখেমুখে তর্ক করিস কেনো?তোরা মেয়েরা তো শুধু এটাই পারিস।”

আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম।কথায় কথায় এতো মারে কেনো?কথা বললেও মারে আবার না বললেও মারে।খুব কান্না আসতেছে,ইচ্ছে করতেছে জোরে জোরে কাঁদি।মামা-মামিও কখনও আমাকে এমন মারেন নি।গায়ে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে তার উপর উনার মারামারি আবার হাত-পা কেঁটে প্রচুর রক্তও শেষ হয়েছে।

পুরো রুম এলোমেলো করে কী জন্য খুজতেছেন উনি,এমনভাবে খুঁজতেছেন যে পুরো রুম এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।কিছু সময় পর কী যেনো পেলেন ঘরের কোনে,পেয়েই হেসে উঠলেন।আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখি ড্রাগস।তাহলে এর জন্যই এতো ডেস্পারেট হয়েছিলেন।

ড্রাগস নেওয়ার পর(ড্রাগস কীভাবে নেয় আমি জানি না তাই উল্লেখ করি নি)মরা মানুষের মতো শুয়ে পড়লেন।পুরো রুমে এতো বাজে গন্ধ হয়ে গেলো যে আমার দম বন্ধ হতে লাগলো।সব কিছু দেখে এতো অবাক না লাগলেও উনার শেষের কথায় খুব অবাক হলাম।বিরবির করে বলতে লাগলেন, “ইশিকা আমাকে ছেড়ে কেনো চলে গিয়েছো?”

আমি অবাক হয়ে গেলাম।একটা মেয়েকে কতটা ভালোবাসতে পারলে এমন করতে পারে?এই নেশা না করতে পেরেই এতো হিংস্র হয়েছিলেন উনি।নেশা না পেলে তো পাগলের মতো হয়ে যায়,তাহলে আমি কীভাবে উনার নেশা ছাড়াবো?

কোনোরকম উঠে দরজাটা খুলে দিলাম।একজন সার্ভেন্ট রুমে এসে সব পরিষ্কার করতে লাগলো।

–“ম্যাম আপনার পা থেকে রক্ত পড়তেছে।”

সার্ভেন্টের কথা শুনে আমি পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি রক্ত পড়তেছে,ইভেন আমি যে যে জায়গা দিয়ে হেটে এসেছি সেসব জায়গাতেও রক্তের চোপ চোপ দাগ লেগে আছে।উনি তো পা ঠিকঠাক মতো বেন্ডেজ করে দিয়েছিলেন,তাও রক্ত বের হচ্ছে কেনো??

সার্ভেন্ট থেকে জেনে নিলাম শাশুড়ির রুম কোনটা।শাশুড়ীর রুমে ঢুকতেই শুনতে পেলাম শাশুড়ি কার সাথে যেনো তর্ক করছে।ভিতরে ঢুকেই দেখলাম নিচের ওই মহিলা আর শাশুড়ি কথা বলতেছে।আমাকে দেখে মহিলটি আমার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে কেমন করে তাকিয়ে চলে গেলেন।উনি যেতেই আমার শাশুড়ীমা ধপ করে বিছনায় বসে পড়লেন।

প্রায় ৫ মিনিট হয়ে গেলো শাশুড়ীর পাশে বসে আছি,কারো মুখে কোনো কথা নেই।আসলে কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না,তাই চুপ করে রইলাম।

—“আমি জানি তুই নিজ থেকে কিছু জিজ্ঞাস করবি না,তাই আমি বলতেছি। ”

শাশুড়ীর কথা শুনে অবাক হলাম উনি কীভাবে জানেন আমি নিজ থেকে কিছু বলবো না।

–“এই মাএ যাকে দেখলি সে হলো অনুভবের চাচী।উনি,,,

আমি উনার কথার মাঝখানেই বলে উঠলাম,,”কিন্তুু উনি তো ফুফি বলে ডেকেছিলেন।”

—“হুম, সম্পর্কে অনুভবের ফুফিও হয়।আসলে অনুভবের চাচা আর চাচী সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন হয়।”

আমি বললাম,,”ওহ্।কিন্তুু উনি এমন করেছেন কেনো?”

শাশুড়ীমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলেন,,
“সে অনেক কাহিনী।প্রথম থেকে না বললে বুঝবি না।আমার আর অনুভবের বাবার বিয়েটা পারিবারিকভাবেই হয়েছিলো।আমাদের বৈবাহিক জীবন ৫বছর পর্যন্ত ঠিকই ছিল।পাঁচ বছর পর হঠাৎ একদিন জানলাম উনার অন্য কারো সাথে পরকীয়া চলছে।এ বিষয় নিয়ে উনাকে প্রশ্ন করার পর, উনি আমাদের ছেড়ে ওই মেয়ের সাথে চলে যান।তখন অনুভবের চার বছর বয়স ছিল।সে সময় আমি একদম ভেঙ্গে পড়ি,তখন চমার শাশুড়ী আমার পাশে দাড়ান।আমি নিজে রোজগার করার জন্য বাহিরে কাজ করতাম যার কারনে ছেলেটাকে সময় দিতে পারতাম না।নিজের মতো করে বড় হতে লাগলো অনুভব,সবসময় একলা একলা থাকতো।কিন্তুু ও কেনো একলা থাকতো তা জানার প্রয়োজনই মনে করতাম না,আমি ভাবতাম ও হয়তো এমনই।কিন্তুু পরে জানতে পারলাম ওর সাথে কেউ মিশতো না সবাই ওকে তাড়িয়ে দিতো,ওর বাবা নিয়ে প্রশ্ন করতো।তাই নিজের মতো থাকতো।আমার ছেলের ছেলেবেলাটাই শেষ হয়ে গিয়েছিলো,কখনই ছেলেবেলা উপভোগ করতে পারে নি।আস্তে আস্তে ও বড় হতে লাগলো ততই নিজের মতো চলতে লাগলো,বাজে ছেলেদের সাথে মিশতে লাগলো।

অনুভবের ১২ বছর বয়সে ওর দাদী মারা যায়।তখন ওর চাচা-চাচী আমাদের শুধু আমাদের ভিটে বাড়ীটা দিয়ে ছিলেন বাকি সব কিছু উনারা নিয়ে যায়।অনুভবের চাচা-চাচীর এক মেয়ে আর দুই ছেলে।মেয়েটা একদমই বাজে,ওর মাকে দেখেছিস না এই বয়সেও কেমন স্টাইল করে ঠিক মেয়েটাও হয়েছে তেমন।অনুভবের ৭বছরের ছোট। আমাদের এত সম্পত্তি হওয়ার পর উনারা ওই বাড়ীর অংশ দাবী করতে আসেন এবং অনেক জামেলা করে,পরে অনুভব উনাদের পাশের ফ্ল্যাট দিয়ে দেয়। তাও হয়নি উনাদের পুরো সম্পত্তির লোভে উনাদের মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলো,শর্ত দিয়েছিলো পুরো সম্পত্তি উনার মেয়ের নামে করে দিতে হবে।অনেক কিছুর পর ৮০ % এ রাজি করাই,কিন্তুু হঠাৎ জানতে পারি মাহি প্রেগন্যান্ট। বিয়ের আগেই যে মেয়ে এই কাজ করে ফেলে সে মেয়ে নিশ্চয় ভালো না পরে আমি বিয়ে ক্যান্সেল করে দেই।তখন উনারা বলেন সম্পত্তি লাগবে না তাও বিয়ে করাতে কিন্তুু আমি মানি নি।গ্রামে গিয়ে তোমার সাথে বিয়ে করিয়ে নিয়ে আসি, তাই উনি এমন করেছে।”

আমি কিছুই বুঝলাম বলে মনে হলো না,তাও মাথা নাড়ালাম যার মানে বুঝেছি।কিন্তু উনি সবটা বলেছেন বলে তো মনে হয় নাই।না, না মনে হওয়ার কী আছে সিউরই বলেন নি।

আমি শাশুড়িমাকে প্রশ্ন করলাম,,”উনি কীভাবে এতো টাকা পয়সা আই মিন কীভবে এমন পজিশনে এসেছেন? উনার ইয়ে মানে প্রাক্তন, ইশিকা আপুরই বা কী হয়েছিলো?আর উনি এমন বাজেই কীভাবে হয়েছেন?

চলবে,,,,

(সবার পছন্দ এক নয়,ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।)