প্রিয়_ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
2680

#প্রিয়_ভালোবাসা

#নিশাত_তাসনিম
#পর্ব:৫

বিয়ের একদিন না হতেই আমি বোবা হয়ে গেলাম,অসুস্থ হয়ে গেলাম,অচল হয়ে গেলাম।কী ভাগ্য আমার তাই না?কিছুই নিজের মতো করতে পারতেছি না উনারা যা বলতেছে তাই করতেছি।

আমার প্রশ্নের বিপরীত শাশুড়িমা বললেন,,,

“আমি যতটুকু বলতে পারবো ততটুকুই বলেছি।এ ববাড়ীতে কারোই অনুভবের ললাইফ ননিয়ে ককথা ববলার অধিকার নেই,আমি অনুভবের মা হওয়া সত্বেও আমার ওর পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই।এ বাড়ীতে এটাই নিয়ম।”

শাশুড়িমায়ের কথা শুনে বেশ অবাক হলাম।বলে কী এসব?এদের মাথায় সমস্যা আছে নাকী?এত সময় যা বললো ততা ককি ততাহলে প্রফেশনাল ছিলো নাকী?আমি কোনোরকম মুখে হাসি ফুটিয়ে আচ্ছা বলে উঠে গেলাম।কয়েক কদম যাওয়ার পর মাথাটা ঘুরতে লাগলো,নিজেকে কোনো রকম সামলিয়ে নিলাম।কিন্তুু আরেকটু যেতেই সবকিছু ঝাপসা হতে লাগলো এক সময় সব অন্ধকার দেখতে লাগলাম।
_________________________________

চোখ খুলে দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি আর আমার হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে।আমি তো এসব দেখে অবাক? হচ্ছে টা কী?মাথাটা একদম হ্যাং মেরে দিয়েছে,কিছুই মাথায় আসতেছে না। কয়েক সেকেন্ড ভাবতেই সব মনে পড়ে গেলো।

চোখ গোলগোল করে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম।পুরো রুমে এতো মানুষ, কই থেকে আসলো এরা?তবে আমি মানুষ কম তাদের পোশাক আর মেকআপ বেশি দেখতে লাগলাম।কী সুন্দর সুন্দর জামা যদিও আমি জীবনেও এসব পড়তাম না তাও সুন্দর লাগে।

–“মেডাম সবাইকে পর্যবেক্ষণ হয়ে গেলে, আমার দিকে একটু তাকান, আপনার ঔষধ নিয়ে কবে থেকে বসে আছি।”কথাগুলো দাতে দাত চেপে বলতে লাগলেন উনি।

উনাকে দেখে চমকে গেলাম,উনি এখানে, কখন আসলেন আর কীভাবেই আসলেন?উনার তো এখন মদ খেয়ে টাল হয়ে পড়ে থাকার কথা।

–“সমস্যা কী?যখন তখন অন্য মনষ্ক হয়ে এতো কী ভাবো?সবাই অনেক আগেই চলে গিয়েছে, এদিক ওদিক কী তাকাচ্ছো?”

আমি আবার সামনে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি সত্যি ওরা চলে গেছে,পুরো রুম খালি।কিন্তুু গেলো কখন?

আজব কী হচ্ছে,কিছুই বুঝতেছি না।আমি উনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই , উনি খাবারের প্লেট টা নিচে রেখে ঠাসস করে আমার গালে এক থাপ্পর দিয়ে দিলেন।আমি তো অবাক হয়ে গেলাম, কি হলো?আমাকে মারলো কেনো?আমি কি করেছি,কথায় কথায় উনি এত মারে কেনো?

–“আর একবার যদি এসব ন্যাকামি করেছিস তো দেখিস কি করি।”

আমি কিছু বললাম না, জানি এখন কিছু বললেই আমাকে মারবে।চুপচাপ ঔষদ খেয়ে নিলাম।উনি ঔষদ খাওয়াচ্ছেন আর আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি।বিষয়টা পুরো বাংলা সিনেমার মতো লাগতেছে বাট মোটেও তেমন না।উনার দৃষ্টিতে ছিলো হাজার হাজার বিরক্তি, অসহ্যতা আর আমার দৃষ্টিতে ছিলো উনার প্রতি রাগ আর কৌতুহল।
__________________________

রুমে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম তখনই রুমে এক অতি আল্ট্রা মডার্ন মেয়ের আগমন,মেয়েটি হেলতে দুলতে আই মিন স্টাইল করে হাটতে হাটতে চরম বিষ্ময় নিয়ে বলতে লাগলো,,

—“ইশিকা আপু,তুমি এখানে?”

মেয়েটির কথা শুনে আমার ভ্রু দুটি কুচকে গেলো,এই মেয়ে ইশিকা না ফিশিকাকে কই দেখছে?আমি তো দেখতেছি না।আমি কিছু বলবো তার আগে দেখলাম আমার জামাই আর মেয়েটি ইশারায় কী যেনো বলতেছে।এরা ইশারায় কথা কেনো বলতেছো?

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,,,কে ইশিকা?কই ইশিকা?

উনি নির্বিকারে বললেন,,”আমার বউ ইশিকা হওয়ার কথা ছিলো,তাই ও ভেবেছে তুমি ইশিকা।আসলে সবাই জানে আমাদের রিলেশনের কথা তাই রিয়া ভেবেছে তুমি ইশিকা।”

উনার বলা কথাটা কেনো জানি হজম হলো না,আমাকে না দেখে বললে মানা যেতো কিন্তুু আমাকে দেখে কেনো বললো?আর কি এক প্রেম করছে দুনিয়া জানে,যত্তসব।এসব দেখলে গা জ্বলে যায়।

–“সরি ভাবী,আসলে আমি আপনাকে খেয়াল করি নো তো তাই,তুমি কিছু মনে করো না।”

আমি হেসে বললাম,,”না,না কিছু কেনো মনে করবো?”

–“আসলে তোমাকে দেখতে এসেছি,তুমি নাকী অসুস্থ।”

আমি বললাম,,”না আমি অসুস্থ না।”

আমার কথায় উনারা দুজনে কেমন করে তাকালো সাথে সাথে আমি হেসে বললাম,,”না,মানে অনেক অসুস্থ আর কি।”

–“ওহ্।তা ভাইয়া আজ অফিসে গেলেন না,আপনাকে তো কোনোদিন এ সময়ে ঘরে পাওয়া যায় না।”

মেয়েটার অতিরিক্ত ন্যাকামি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে,আমার জামাইর সাথে এতো ঢলাঢলি কেনো করতেছে।

উনি উনার মতো ল্যাপটপ নিয়ে মগ্ন হয়ে আছেন,এমন একটা ভান করেছেন যেনো কিছুই হয় নি।মেয়েটা নিজের উত্তর না পেয়ে মুখটা কালো করে ফেললো,আমার দিকে তাকিয়ে কোনো রকম মুখে হাসি ফুটালো।

আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,,”তা ভাবি চলুন আপনার সাথে পরিচয় হওয়া যাক।আমাকে সবাই রিয়া বলে আপনি আমাকে রিয়া বলতে পারেন।আমি সম্পর্কে অনুভবের চাচাতো বোন হই,তাছাড়া আমার আবার অনুভবের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।”

বুঝলাম রিয়া আমাকে ঠেস মেরে কথা বলতেছে,তাই আমিও বললাম,,”হুম জানি।পরে আপনার কুকর্মের কারনে হয় নি, তাই না।”

আমার কথা শুনে রিয়া রেগে গেলো,কটমট করে কিছু বলবে তার আগেই অনুভব রিয়াকে রুম থেকে চলে যেতে বললো।রিয়া চলে যেতেই উনি আমার কাছে এসে বসলেন।আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম,উনি ধীরে ধীরে আমার পাশে বসে আমার হাতের কাটা জায়গাতে এক চাপ দিলেন সাথে সাথে আমি আহ করে উঠি কিন্তু উনি আমার মুখ চেপে ধরেন যার জন্য শব্দ হয় নি।আমার মনে হচ্ছিলো কেউ আমার কলিজা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়তে লাগলো,আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “নেক্সট টাইম আমার পরিবারের কাউকে নিয়ে কিছু বলার আগে দশবার ভেবে নিও।”

উনি চলে যেতেই চুপচাপ কান্না করতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম, মামাকে তাহলে ঠিকই বলেছিলেন যে আমার লাইফ শেষ হয়ে যাবে।কিন্তুু উনি আমার সাথে এতো খারাপ বিহেভ কেনো করছেন?মনে হচ্ছে কোনো কিছুর তীব্র প্রতিশোধ নিচ্ছেন কিন্তুু উনাকে এর আগে তো আমি কোথাও দেখি নি।

একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজের ভাগ্য মেনে নিলাম।কারন আমি মেয়ে, আমাকে সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করতে হবে।আমার ভাগ্যের জন্য তো আমিই দায়ী,নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দিলাম টাকার জন্য।
________________________________

রুমে ব অন্যমনস্ক হয়ে বসে ছিলাম,হঠাৎ মমনে পড়লো মামীর সাথে এখনও কথা হয় নি।ফোনটা এদিক ওদিক খু্ঁজতে লাগলাম।হঠাৎ করেই অনুভব বলে উঠলো,,
—“যা খুঁজছো তা পাবে না।”

আমি বললাম,,”কেনো পাবো না?আমার ফোন কেনো নিয়েছেন?আমার ফোন দিন,আমি মামার সাথে কথা বলবো।”

উনি উনার মতো করে উনার ফোন টিপতে লাগলেন,আমি এবার একটু চেচিয়ে বললাম,, “কী সমস্যা আপনার?আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো?আমি কী করেছি,আপনার মা আমার কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করেছিলো বলেই আমি আপনাকে বিয়ে করেছি আর আমার টাকার প্রয়োজন ছিলো। তাই বলে কী আপনি আমার সাথে এমন বিহেভ করছেন?আমাকে নিয়ে আপনার সমস্যা কোথায়???

উনি এবার মোবাইল টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার গাল চেপে বললেন,,”একদম চেঁচাবি না,এটা তোর বাপের বাড়ী নয়।আর আমার সমস্যা তোর চেহারায়।তোর এই চেহারা দেখলে আমার,,,

চলবে,,,