প্রীতিলতা আসবে বলে পর্ব-০৬

0
1277

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট :৬

প্রীতি চাপাটি টা একপাশে রাখলো ৷তারপর একটা কেঁচি হাতে নিল ৷ওসমানের কাছে যেয়ে ওর শার্ট টা কাটতে লাগলো ৷ ওসমানের শার্ট কাটতে কাটতে প্রীতি বলল

কি রে অবাক হচ্ছিস নাকি হুমম ৷তোকে কেন এভাবে বেধেঁ রেখেছি বুঝতে পারছিস না তাই তো ৷আর আমি কি করছি তাও বুঝতে পারছিস না তাই না ৷সব বুঝতে পারবি কিছুক্ষনের মধ্যে ৷ওসমানের শার্ট কেটে ফেলে দিল প্রীতি ৷একটু দুরেই কয়লার আগুনে লোহার শিক গরম হয়ে লাল হয়ে আছে ৷প্রীতি হাতে গ্লাভস পরে নিল ৷তারপর একটা শিক হাতে নিয়ে নিল ৷ওসমানের দিকে আস্তে আস্তে প্রীতি এগিয়ে আসছে ৷এদিকে ওসমান ছটফট করছে ৷

প্রীতি বাকা হেসে ওসমানের মুখের টেপটা খুলে দিল ৷তারপর ওর খোলা বুকে শিকটা চেপে ধরলো ৷ওসমানের বুকে শিকটা চেপে ধরতেই সে চিৎকার করে উঠলো ৷আর প্রীতির মুখে বাকাঁ হাসি ৷ওসমান ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে ৷দুই মিনিট পর প্রীতি শিকটা উঠিয়ে নিল ৷তারপর ওসমানের চুলের মুঠি ধরে বলল

কিরে কষ্ট হচ্ছে খুব হ্যা ৷ঠিক এই ভাবেই আমার ভাই কষ্ট পেয়েছিল ৷ঠিক এই ভাবেই আমার মা কষ্ট পেয়েছিল ৷প্রীতি কথাটা বলেই আরেকটা শিক নিল ৷আর ওসমানকে এলোপাথারী মারতে লাগলো ৷শিকের সাথে ওসমানের চামড়া উঠে আসছে ৷

অনেকক্ষন পরে প্রীতি শান্ত হলো ৷ওসমান অস্পষ্ট ভাবে বলল কে তুই ৷আমাকে কেন মারছিস ৷

প্রীতি একটি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল আয়ান চৌধুরীর কথা মনে আছে ৷যাকে নিজের পাপ ঢাকতে তুই খুন করেছিস ৷আমি তার মেয়ে প্রীতিলতা ৷এবার মনে হয় চিনেছিস ৷

আমাকে ছেড়ে দে ৷আমাকে মাফ করে দে ৷

প্রীতি বাকা হাসলো ৷টেবিলে রাখা মরিচ আর লবনের গুড়োর বাটিটা প্রীতি হাতে নিল ৷ওসমান কাপঁছে ৷প্রীতি ওসমানের ঘা গুলোতে এবার মরিচ লবনের গুড়ো মাখতে লাগলো ৷আর ওসমান চিৎকার করতে লাগলো ৷

প্রীতি ওর শরীর মরিচ গুড়ো লাগাতে লাগাতে বললল

যত ইচ্ছে চিৎকার কর ৷ তোর যন্ত্রনা আমার সুখ ৷তোর চিৎকার কেউ শুনবেনা ৷কারন ঘরটাই তো সাইন্ড প্রুফ ৷

ওসমান ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে ৷ওসমান কোনো ভাবে বলল তুই পাগল হয়ে গেছিস ৷তোর মাথা ঠিক নেই ৷তুই একটা সাইকো ৷তুই যা করছিস এগুলো সাইকো রাই করে ৷

ওসমানের কথা শুনে প্রীতি হাসতে লাগলো ৷হাসতে হাসতে বলল তুই একদম ঠিক বলেছিস ৷আমি আসলেই একটা সাইকো ৷তবে আমি সাইলেন্ট সাইকো ৷যাকে সহজে ধরা যায় না ৷দেড় বছর মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি কি এমনি এমনি ছিলাম ৷জানিস আমাকে ছাড়ার পর, ওখানের ডাক্তার আমার পালিত এসিপি বাপকে কি বলেছিল ৷

ডাক্তার বলেছিল আমি নাকি মানসিক ভাবে অসুস্থ ৷আমার নাকি একটা স্বাভাবিক জীবন চাই ৷নইলে নাকি আমি সাইকো হয়ে যাবো ৷কিন্তু ডক্টর তো জানে না যে আমি তখন ওলরেডি সাইকো হয়ে গেছি ৷তখন অলরেডি আমি দুইটা খুন করে ফেলেছি ৷জানিস তোর আগে আমি আরো পঞ্চাশটা খুন করেছি ৷আর তোকে নিয়ে একান্নটা হবে ৷

ওসমান ভয়ে কাছে ৷ওসমানে বেহাল দশা দেখে প্রীতি বলল কি রে ভয় করছে খুব ৷কষ্ট হচ্ছে তোর ৷তোকে আরো কষ্ট দেব আমি ৷এই ভাবেই আমার মা কষ্ট পেয়েছিল ৷যখন তোরা ধর্ষনের পর আমার মায়ের গায়ে সিগারেটের আগুন দিয়েছিস ৷আমার ফুলের মতো অবুঝ ভাইটাও তোদের হাত থেকে রেহাই পায় নি ৷

প্রীতি হঠাৎ করেই কেদেঁ দিল ৷তারপর ওসমানের কাছে যেয়ে বলল এই কেন করলি এমন ৷আমার বাবা সৎ ছিল এটাই তার অপরাধ ছিল ৷আমার মা একজন সৎ ডক্টর ছিল ৷এটাই তার অপরাধ ৷কিন্তু আমার ভাইটার কি অপরাধ ছিল ৷

প্রীতি কাদঁতে কাদঁতে বলল এই কেন তোরা মারলি ওদের ৷আমি যে তখন খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম ৷তোরা আমার পরিবারকে কেন শেষ করলি ৷প্রীতি দুই হাটুতে মুখ গুজে কাদঁতে লাগলো ৷

হঠাৎ ওর কান্না বন্ধ হয়ে গেল ৷প্রীতি নিজের মাথা তুলল ৷ঘার একপাশে কাত করে প্রীতি বাকা হাসতে লাগলো ৷তারপর বলল এবার আমার পালা ৷তাইতো তোর ফোন মাঝ রাস্তায় বন্ধ করতে বলেছি ৷যেন তোর ফোনের লাস্ট লোকেশন আন্দাজ না করা যায় ৷আমাকে যেন কেউ সন্দেহ না করে ৷তাই তোকে বলতে নিষেধ করেছি আমার কথা ৷আর আজ যে নাম্বারটা দিয়ে তোকে কল করেছি ৷ওটা আজ আমি চুরি করেছি বাস থেকে ৷যেন আমাকে না ধরা যায় ৷ আমাদের মতো সাইলেন্ট সাইকোরা সব আস্তে আস্তে করে ৷ প্রীতি ওসমানের দিকে এগিয়ে আসছে ৷

প্রীতি নিজের হাতে চাপাটি টি নিল ৷তারপর বলল এই হাত দিয়ে তুই আমার মায়ের গায়ে হাত দিয়েছিস তাই না ৷এই হাত দিয়ে তুই আমার বাবার মাথায় প্রথম আঘাত করেছিস ৷এই হাত দিয়ে তুই আমার ভাইয়ের গায়ে সিগারেট দিয়ে পুড়ে দিয়েছিস ৷তোর এই হাত আমি রাখবো না ৷রাখবো না আমি ৷ প্রীতি এক কোপে ডান হাতের কবজিটা কেটে ফেলল ৷ ওসমান গগন কাপানো চিৎকার করে উঠলো ৷প্রীতির চেহারায় এখন হিংস্রতা ভর করেছে ৷মায়াবী চোখ দুটো আগুনের মতো লাল হয়ে আছে ৷

তুই আমার বাবাকে আগে আঘাত করেছিস তাই না ৷আমার বাবা যতটা কষ্ট পেয়ে ছিল ৷আজ তার সব তোকে আমি ফেরত দেব ৷প্রীতি ওর পাশে থাকা লোহার রড দিয়ে ওসমানের মাথায় এলোপাথারী মারতে লাগলো ৷একের পর এক আঘাত দিতেই লাগলো ৷ঐ দিকে ওসমানের মাথার যে একপাশ থেতলে গেছে সেই দিকে ওর হুশ নেই ৷একের পর এক আঘাত সে করতেই লাগলো ৷আজ ওর মাথায় খুন চেপেছে ৷ ওসমান মারা গেছে ৷প্রীতি বাকাঁ হাসলো আবারো ৷তারপর ওসমানের রক্ত নিজের শরীরে মাখতে লাগলো ৷ ওর মাথায় কাজ করছে না ৷রক্ত মাখা শরীরটা নিয়ে প্রীতি ফ্লোরে হাটু ভাজ করে বসে রইলো ৷হঠাৎ মনে হলো কেউ যেন প্রীতিকে বলছে

কি রে আজও একটা খুন করলি ৷

প্রীতি পাশে তাকালো ৷প্রীতি হেসে বলল

আমি খুন করেছি ৷ওরা তোমাদের মেরেছে ৷এবার আমার পালা ৷আর তুমি বারবার কেন আসো আমার কাছে ৷তুমি জানো না ডাক্তার কি বলেছে ৷ডাক্তার বলেছে আমি নাকি কল্পনায় তোমাকে দেখি ৷এটা আমার মানসিক রোগ ৷আমি একটা মানসিক রোগী ৷যাও তুমি যাওওওওওওও ৷আমাকে একা থাকতে দাও ৷আমি একা থাকবো ৷প্রীতি কথা গুলো বলতে বলতে সামনে তাকালো ৷না এখন আর কেউ নেই ৷প্রীতি ওসমানের লাশের কাছে গেল ৷তারপর ওর লাশটা গুম করার কাজে লেগে পড়লো ৷ ৷

পরের দিন প্রীতি নিয়ম করে ভার্সিটির দিকে রওনা দিল ৷ আজ তার মনটা অনেক ভালো ৷ভার্সিটিতে যেয়ে প্রীতি নিজের ক্লাসে ঢুকছিল ৷হঠাৎ করেই একটা মেয়ে ওকে ল্যাং মারলো ৷প্রীতি পরে গেল ৷প্রীতি উঠে সামনে তাকালো ৷তার সামনে একটা মিনিস্কার্ট পরা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ৷ আর আশে পাশের সবাই হাসছে ৷ প্রীতিকে উদ্দেশ্য করে মর্ডান মেয়েটা বলল

এই কালো ভুতটা এখানে কি করছে রে ৷

পাশ থেকে একটা ছেলে বলল আমাদের এখানে নতুন এসেছে ও৷ তুই কাল আসিস নি ৷ তাই জানিস না মিলা ৷

কি সব ড্রেস পরে আছে দেখ ৷পুরাই ক্ষেত জংলী ৷অন্য একটা মেয়ে বলল ৷সবাই আবারো ওকে নিয়ে হাসতে লাগলো ৷

প্রীতি কাউকে কিছু বলল না ৷সে মাথা নিচু করে আছে ৷নিজের ব্যাপারে কাউকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না ৷প্রীতি কিছু বলল না ৷বরং মুচকি হেসে চলে গেল ৷

অন্যদিকে প্রীতিকে ফেলে দেওয়া মেয়েটা অবাক হলো ৷অন্য কেউ হলে তো তার সাথে ঝগড়া করতো ৷কিন্তু এই মেয়ে কি ৷কোনো কথাই বলল না ৷

চলবে…..