প্রেমদণ্ড পর্ব-০৬

0
146

#প্রেমদণ্ড (০৬)❤

“এক্সকিউজমি!” একগাদা মহিলা গসিপের মধ্যে থেকে মুশফিকার হাত ধরে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এল আহিদ। কোলে তাদের তিন বছরের মেয়ে আরু।

মুশফিকা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বিরক্তির সহিত বলল, “কি হয়েছে আহিদ? এভাবে টে’নে নিয়ে আসলে কেন? ওনারা কি ভাবল!”

“তাতে আমার কী? আমার বউকে আমি যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে আনব তাতে ওনাদের কী? তুমি এভাবে কথা বলছ কেন? দূরে দূরে কেন থাকছো?” আহিদের নির্বিকার উত্তর।

মুশফিকা রেগে গেল আহিদের নির্বিকার উত্তরে। দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,
“বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আমি সবার সাথে ব‍্যাস্ত থাকব সেটাই তো স্বাভাবিক তাই না? নাকি তোমাকে কোলে করে ঘুরে বেড়াব?”

“ছিঃ নাউযুবিল্লাহ! আমাকে কেন কোলে নিবে? দিন দিন এত অশ্লীল হয়ে যাচ্ছ কেন মুশফিকা?”

মুশফিকা অবাক হয়ে বলল, “আমি অশ্লীল হয়ে যাচ্ছি? এত বড় মিথ্যা কথা বলতে বাধলো না তোমার?”

আহিদ মুশফিকার প্রশ্নোত্তর না দিয়ে আরুর কানে কানে কি যেন বলল। আরু বাবার কোল থেকে নেমে নানুমনির দিকে হাঁটা ধরল। আরু যেতেই আহিদ মুশফিকার কাছাকাছি গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “তুমি যদি চাও তোমাকে কোলে নিয়ে এক রাউন্ড ঘুরিয়ে আনতে পারি। বল চাও? আমি কিন্তু মাইন্ড করব না।”

মুশফিকা এক ঝটকায় সরে দাড়াল। বলল, “পাগল হয়ে গিয়েছ তুমি? কি বলছ তখন থেকে।”

“পাগল হতে আর বাকি রেখেছ কোথায়? তুমি জানো না তোমাকে এমনি দেখলেই আমার পাগল পাগল লাগে। আর এভাবে সেজেগুজে ঘুরে বেড়াচ্ছ কি জন্য?”

“ও আল্লাহ সে কি কথা? ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান আর আমি সাজব না তা কি করে হয়?”

“তাহলে একটা চুমু দিয়ে যাও।” নিঃসঙ্কচ আবদার আহিদের।

মুশফিকা খানিক দুরে স্টেজের মত জায়গায় বসা ইজহান অনুজাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ওই দিকে তাকিয়ে দেখ আমার ভাইটা তার নতুন বউকে নিয়ে বসে আছে। দেখ তো, তোমার মত এমন অসভ‍্যপনা করছে নাকি?”

“সবার সামনে সুযোগ পাচ্ছে না। নাহলে কত কি করতো। সেসব বাদ দাও বউ। এখানে দিতে লজ্জা পেলে বাসায় চল। দিয়ে আবার চলে এস আমি আটকাব না।”

“তোমার মা’কে ডেকে আনব? বলব, শাশুড়ি মা আপনার আধবুড়ো ছেলে ভরা লোক সমাগমের মধ্যে অসভ‍্যতামি করছে। বলব? গেলাম তাহলে?” মুশফিকার হুমকিতে কাজ হল। আহিদের হাসি হাসি মুখখানা চুপসে গেল।

আহিদ যেতে যেতে বলল, “এর শোধ কিন্তু আমি তুলব মেয়ে। আমাকে ভয় দেখানো? এই আহিদ। রেডি হও ডিয়ার!”

আহিদের হুমকিতে মোটেও ভয় পেল না মুশফিকা। বরং তার ঠোঁট কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। মানুষ বলে বয়স হলে নাকি বুদ্ধি বাড়ে, আবেগ কমে, বিবেক বাড়ে। অথচ ত্রিশ পেড়নো এই যুবা পুরুষটা মুশফিকার কাছে এলে একেবারে বাচ্চা হয়ে যায়। মুশফিকা তার মানুষটার বাচ্চামোতেই খুশি। সে মন মনে শতবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আরশে আজিমে থাকা স্রষ্টার প্রতি। মৃত্যু আগে পর্যন্ত মানুষটা একান্ত তার থাকুক। একান্তই নিজের! আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে মেয়ের কাছে গেল মুশফিকা। মেয়েটাকে একদম সময় দেওেয়া হচ্ছে। নেহাত মেয়েটি বড্ড শান্ত, শীতল স্বভাবের।
_______________
সগৌরবে মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকা সাত তলার দালানের ছাদে আজ আলো ঝিকিমিকি করছে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া যেকোন পথিকের নজর কাড়তে বাধ‍্য। দুই ইউনিটের বিল্ডিংয়ের ছাদটা বেশ বড়সর আর খোলামেলা। ছাদের চারপাশের রেলিং ঢাকা পড়েছে রঙবেঙের চাদোয়ায়। মাথার ওপরে ঢেকে দেওেয়া শামিয়ানা। বর কণের বসার জন্য ছোট্ট করে স্টেজ করা হয়েছে। চারিপাশে আর্টিফেশিয়াল ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ছাদের ডানপাশে খাওয়া দাওয়ার জন্য চেয়ার টেবিলের ব‍্যবস্থা। কেউ দাড়িয়ে গল্প করছে কেউ বা খাওয়ায় ব‍্যাস্ত।
আইরিন রহমান মুশফিকার শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎ এক প্রতিবেশি এক গাল হেসে বলে ওঠেন, “ভালো জামাই জুটিয়েছেন আপা। সবই তো ছেলের। একটু অল্প বয়স মেয়েটার। কিন্তু ভালো করেছেন বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।”

আইরিন রহমানের বুঝতে বেগ পেতে হয় না মহিলা তাকে হাসিমুখে লোকের সামনে ছোট করতে এসেছে। তবুও তিনি হেসে বললেন, “দোয়া করবেন ওদের জন্য।”

পাশ থেকে আরেক মহিলা বলে উঠল, “তা আপা, শুনলাম ওদের নাকি আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। কি যেন শুনলাম ওরকম ই।”

আইরিন রহমান এবার বিব্রববোধ করছেন। মেয়ের শশুর বাড়ির আত্মীয়ের সামনে এসব কথা তাকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। তিনি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই মুশফিকা এসে মুখের ওপর জবাব দিয়ে বসল, “কি বলুন তো আন্টি। ওরা আমাদের পরিবারের সন্তান অথচ আমরাই জানিনা ওদের আগে থেকে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশি কত কি জেনে ফেলেছে। অন‍্যের ব‍্যাপারে খবরদারি না করা ই ভালো বুঝলেন? তেলের যা দাম তাতে আমার মনে হয় অন‍্যের চরকায় তেল না দিয়ে নিজের চরকায় দেওেয়া ভালো। আপনার মেয়েটা চতুর্থ বারের মত পালিয়ে পঞ্চমবারের মত বিয়ের পিড়িতে বসেছে। সে বিষয়ে কিছু বলেছি আমরা?”

মুশফিকার কথায় মহিলা মুখ কালো করে চলে গেলেন। কিছু বললেন না। মুশফিকা আইরিন রহমানের উদ্দেশ্য বলে, “আন্টি অন‍্যের কথায় কখনও কান দিবেন না। মেয়ে আপনার, কষ্ট করে বড় করে তুলেছেন আপনি। সেখানে অন‍্যের নাক গলানো এলাউ করবেন কেন? মনে রাখবেন আপনার মেয়েকে আপনার মত কেউ ভালোবাসবে না। ওকে কখনও দূরে ঠেলে দিবেন না।”

পাশের চেয়ারে বসা পঞ্চাশ পেড়নো পৌঢ়া মহিলা বসা। মুশফিকা তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “আম্মা চলুন কিছু মুখে দিবেন। বাবা কোথায় গেলেন?”

ভ‍দ্রমহিলা বললেন, “তোমার শশুর তোমার আব্বার সাথে কোথায় যেন গিয়েছেন। ওনার জন্য চিন্তা করিও না। ওনি তোমার আব্বাকে ছাড়া কিছু খাবেন না। ওনারা একসাথে খাবে।”

“তাহলে আপনারা সবাই খেয়ে নিন। আন্টি চলুন। আমি আম্মা সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি। বেশ রাত হল।”

মুশফিকা চলে যেতেই ভদ্রমহিলা আইরিন রহমানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “বড্ড ছটফট করে মেয়েটা। পাঁচটা বছর আমার বাড়িতে বউ হয়ে গিয়েছে। আমার কখনও মনে হয় না পরের ঘরে মেয়েকে এনেছি। মনে হয় এ আমার নিজের মেয়ে ই।”

আইরিন রহমান বললেন, “ফাতিমা আপাও খুব ভালো। তার মেয়ে ভালো না হয়ে পারে?”
________________
“সরি সরি।” আবারও গাউনে পা বেধে পড়তে নিলে সেই শ‍্যামবর্ণের হাতটি এসে বাঁচালো ইসরাতকে। নিজেকে সামলে উঠেই উক্ত কথাটি বলল। এবার সে মানুষটিকে চিনি নিতে ভুল করল না। চোখের সামনে ভেসে উঠল শান্ত, গম্ভীর শ‍্যামবর্ণের এক নজরকাড়া মুখশ্রী। শ‍্যামবর্ণের কোন মানুষকে এতটা সুন্দর লাগতে পারে তার জানা ছিল না। ষোল বছরের আবেগী কিশোরী সুন্দর বলতে লম্বা আর ফর্সা রঙের ছেলেদের ই বুঝত। আজ তার ভুল ভাঙলো। অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল, “সুন্দর!”

পাশ থেকে শ‍্যামলা যুবা পুরুষটি গম্ভীর কন্ঠে শুধাল, “কিছু বললেন?”

প্রতিত্তোরে মাথা নাড়াল। অর্থাৎ না। পুনরায় গম্ভীর স্বরে বলতে শোনা গেল, “দেখেশুনে চলবেন। এ নিয়ে দুবার পড়তে গিয়ে বেঁচে গেলেন। সবসময় তো আমি থাকব না। যা পড়তে পারেন না তা পরেন কেন আপনারা? মেয়ে মানুষের এই এক দোষ এক হাত লম্বা পাদুকা না পড়লে যেন চলেই না।”

সুদর্শন পুরুষের এবারের বলা কথাটি মোটেও মধুর শোনাল না ইসরাতে কর্ণকুহুরে। সে ঘাড় কাত করে কাঠ কাঠ কন্ঠে প্রতিত্তোরে বলল, “খোটা দিচ্ছেন? যান আপনাকে আর ধরতে হবে না। আমি নিজেই নিজেকে সামলাতে পারব।” কথার সমাপ্তি ঘটিয়ে আর দাড়াল না। গটগট শব্দ তুলে অনুজার কাছে গিয়ে মুখ ভোতা করে দাড়িয়ে রইল।

অন‍্যদিকে ষোড়শী কিশোরী ইসরাতের রাগে লালিমায় ছেয়ে যাওয়া মুখটা দেখে প্রথমবারের মত দণ্ডয়মান পুরুষের বুকে চিনচিন ব‍্যাথার শুরু হল। যুবক মুচকি হেসে বলল, “ষোড়শী মানেই বিপদজনক!”

ইসরাতকে মন খারাপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অনুজা চিন্তিত স্বরে শুধাল, “কি হয়েছে?”

“কিছু না।” ভোতা মুখেই জবাব দিল।

“আহ! বল না। কি হয়েছে? না বললে বুঝব কি করে?”

ইসরাত প্রতিত্তোরে বলল, “ওই যে অফ ওয়াট রঙের পাঞ্জাবী পড়া ছেলে টা কে?”

“কেন? তোকে কিছু বলেছে?”

অনুজার পাল্টা প্রশ্নে বিরক্ত হল ইসরাত। চোখমুখ কুচকে বলল, “পাল্টা প্রশ্ন করিস কেন? যা জিজ্ঞাসা করেছি জানা থাকলে উত্তর দে।”

“বুবুর দেবর, আইমান।” পাশ থেকে ইজহান জবাব দিল।

“কিছু হয়েছে? কিছু বলেছে?” ফের প্রশ্ন করল ইজহান।

ইসরাত বলল, “না সেরকম কিছু হয়নি। রাত তো বেশ হল। আমি বরং আব্বুকে আসতে বলি। নাহলে দেরি হয়ে যাবে।”

অনুজা বলল, “আর কিছুক্ষণ থাকলে হত না?”

“নাহ। আম্মু বলেছেন, বেশি রাত না করতে। পরে আবার রাগ করবে।”

অনুজা আর কিছু বলল না। মৌন হয়ে বসে রইল।

খেয়ে দেয়ে কিছু কিছু অথিতিরা চলে যাচ্ছেন। ঘনিষ্ঠ কিছু আত্মীয় এখনো বসে গল্প করছেন। অনিশা, ইয়াস মুশফিকার ছোট্ট আরুর সাথে খেলা করছে। দৌড়াদৌড়ি করছে। আইরিন রহমান সকলের সাথে গল্প করছেন। অনুজা চারপাশটা অবলোকন করছিল। বেশ ভালো ই লাগছে মায়ের স্বাভাবিক হাসিমাখা মুখখানা।

“আব্বুর জরুরি একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় নিতে আসতে পারছে না। এখন আমি কি করি? এতরাতে একা কি করে যাব। আম্মু রাগ করছেন। তিনি আসতে চাইছেন। কিন্তু বোনুর এত জ্বর। এরমধ্যে কিভাবে আসবে!” হঠাৎ ইসরাতের কাদোঁকাদোঁ কন্ঠে বলা কথা শুনে অনুজা অবাক স্বরে বলল, “তুই এত চিন্তা করছিস কেন? এ বাড়িতে কি মানুষজন কেউ নেই? আন্টিকে নিষেধ কর। বল, এনাদের গাড়ি আছে, ইজহানের বাইক আছে একটাতে গেলেই হবে। অত চিন্তা করিস না। থেকে গেলেই তো হয়।”

ইসরাত কিছু না বলে ফোনে ব‍্যাস্ত হয়ে পড়ল।

অনুজা মুশফিকা’কে ডেকে ইসরাতের যাওয়ার কথা বলতেই মুশফিকা বলল, “চিন্তা করিও না। আমার দেবর গিয়ে যদি দিয়ে আসে কোন সমস্যা হবে? ও বাইকে করে এসেছে। দেখছ তো। আইমান ও নিয়ে যাবে।”

অনুজা আইমানের কথা বলতেই ইসরাত কিছুক্ষণ ইতস্তত করে রাজি হল। আইরিন রহমান বারবার থেকে যেতে বললেন। কিন্তু পরদিন কোচিং থাকায় আর বাসা থেকে অনুমতি না নিয়ে আসায় ইসরাতকে জোর করতে পারলেন না। বললেন, “সাবধানে যেও। বাসায় গিয়ে ফোন করবে ঠিক আছে?”

ইসরাত সম্মতি জানিয়ে বলল, “ঠিক আছে আন্টি।”

তারপর এক এক করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল ইসরাত। প্রথমবারের মত অচেনা অজানা কোন পুরুষ মানুষের সাথে বাসায় ফিরছে ইসরাত। মনের মধ্যে কেমন ধুকপুক করছে। সিড়ি দিয়ে নিচে নামার রিস্ক নিল না ইসরাত। লিফটে করে নেমে বাইকের পিছনে উঠে বসল। এরমধ্যে পুরোটা সময় আইমান ছিল নির্লিপ্ত, গম্ভীর!

লোক সমাগমের মধ্যে থাকায় শীতের তীব্রতা টের পাইনি ইসরাত। রাস্তায় নামতেই ঠাণ্ডায় দাঁতে দাঁত লেগে আসছে। বাসা থেকে আসার সময় কোন গরম কাপড় নিয়ে আসেনি সে। আইমান হয়তো ইসরাতের সমস্যা বুঝেছিল। নিজের গায়ের জ‍্যাকেট খুলে দিয়ে ইসরাতের উদ্দেশ্যে বলল, “নিন এটা পড়ুন। আপনাদের মেয়েদের কাহিনি বুঝি না। তারা মুখে আটা ময়দা মাখতে ভুল করে না অথচ শীতের দিনে উষ্ণ কাপড় ছাড়া নির্দিধায় বেড়িয়ে পড়ে।”

ইসরাত জ‍্যাকেট না নিয়ে বলল, “লাগবে না আপনার জ‍্যাকেট। আপনার জ‍্যাকেট আপনিই রাখুন।”

“আহ! এত রেগে যান কেন মিস? নিন জ‍্যাকেট গায়ে দিন। আমি বাইক স্টার্ট দিব। ঠিক করে বসবেন।”

ইসরাত বিনা বাক‍্যব‍্যায়ে জ‍্যাকেট গায়ে দিয়ে শক্ত হয়ে বসে রইল। বাইক কিছু দুর যেতেই মোড় বাধল। আরেকটু হলেই পড়ে যেত ইসরাত। বাতাসে আইমানের ভাসা ভাসা কথা শোনা গেল, “ধরে বসুন। নাহলে পড়ে যাবেন।”

গন্তব্যে পৌঁছে ইসরাত নেমে গেল। আইমান গাড়ি ঘুরিয়ে ইসরাতকে বলল, “শুনুন কথায় কথায় রাগ করবেন না। রেগে গেলে আপনাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগে। আর হ‍্যাঁ নিজের বাবা ভাই ছাড়া অন‍্য কারো বাইকে উঠবেন না। অন‍্যের পিঠে আপনার নখের দাগ যেন না লাগে। ঠিক আছে? চলি।”

ইসরাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আইমান ঝড়ের গতিতে চলে গেল। ইসরাত অবাক হয়ে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে নিজেদের ফ্লাটের দিকে পা বাড়াল।

মুশফিকা শশুর শাশুড়িকে এগিয়ে দিতে এসেছে। বাবু ঘুমিয়ে পড়েছে। তারা আহিদের সাথে যাবে। আহিদ নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছেন। মুশফিকার শশুর শাশুড়ি বাড়ি ফেরার কথা কিছু না বললেও আহিদ বলল, “কাল দুপুরে খেতে এসে যেন তোমাকে বাড়িতে পাই। মনে থাকবে?”

মুশফিকা জবাবে বলল, “যাব। আরেকটু কাজ আছে। ভুল ভাঙাতে হবে তো। তুমি সাবধানে যেও।”

“আচ্ছা।”

আহিদ খুব একটা শশুর বাড়িতে রাত কাটায় না। ব‍্যবসায়ী মানুষ। একদিনের অনুপস্থিততে হিসাবের গড়মিল হয়ে যায়।

অনুজার ভাই ইয়াশ ঘুমিয়ে পড়েছে। অনিশার চোখও লাল। গেস্টদের বিদায় দিয়ে সবাই ইজহানদের বাসায় বসে আছে। আইরিন রহমান, ইজহানের মামা, ফুফু, মামি। ইজহান ইয়াশকে কোলে তুলে নিল। অনিশা যাবে না বোনকে ছেড়ে। সে বোনের কাছেই থাকবে। অগ‍্যতা ইজহান ঘুমন্ত ছোট শা’লাকে কাধে তুলে নিয়ে আইরিন রহমানকে এগিয়ে দিতে গেল। অনুজা অনিশাকে নিয়ে নিজেদের বিছানায় শুইয়ে দিল। যদিও মুশফিকা নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু অনিশা অনড়। সে বোনের কাছে ঘুমাবে।

ইজহানের বৃদ্ধা নানুসহ কাছের কিছু আত্মীয় থেকে গেলেন। সবকিছু গুছিয়ে অনুজা ঘুমাতে এল। কিন্তু কোথাও ইজহানকে দেখল না। পড়নের ভাড়ি শাড়ি, গহনা বদলে সুতি কামিজ পড়ল। ইজহানকে না দেখতে পেয়ে ব‍্যাকনিতে গেল। আবিষ্কার করল ইজহান চুপটি করে বসে। অনুজা এগিয়ে গিয়ে শুধাল, “রাত তো অনেক হল। ঘুমাবেন না?”

“আমি কোথায় ঘুমাব? শালিকা এসে আমার জায়গা দখল করে নিয়েছে। আমি কই ঘুমাব বল?”

“কেন বিছানায় আর জায়গা নেই?”

“আছে বৈ কী। কিন্তু নিজের বউকে নিয়ে শান্তিতে যদি ঘুমাতেই না পারি তবে কেন ঘুমাতে যাব বল?”

অনুজা ইজহানের আজব যুক্তিতে হেসে দিয়ে বলল, “কিছু করার নেই। শালা শালীর এতটুকু অত‍্যাচার সহ‍্য করতে হবে।”

ইনশাআল্লাহ চলবে…

লেখায়~সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি