প্রেমপ্রদীপ পর্ব-১৪+১৫

0
3723

#প্রেমপ্রদীপ

Part–14(বোনাস)

Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

আয়না যেতে ইচ্ছুক না শুনে সমুদ্র হতাশ হলো। তার বাইরে ঘুরতে যেতে চাওয়ায় রাজী হওয়ার মূখ্য কারন আয়না ই ছিল। তার সাথে কিছুটা সময় কাটানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আয়না স্বয়ং তার আশায় পানি ঢেলে দিচ্ছে। মেয়েটার উপর রাগ উঠছে। কেন যাবে না আজব!

আলিয়া অনেক বুঝালো আপাকে। কিন্তু আয়না তার সিদ্ধান্তে অটল। সে যাবে না।

অতঃপর আলিয়া বেরিয়ে এলো। আপা না গেলে সে ও যাবে না। নাহলে ব্যাপার টা দৃষ্টিকটু দেখাবে। তার চেয়ে দুই বোন ই যাবে না। কাহিনি শেষ। এখন আবার শুনছে শ্রাবণ ও যাবে নাকি। শ্রাবণ গেলে সে গিয়ে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে৷ তবে আলিয়ার যেতে মন চাচ্ছে। এভাবে অনেক দিন ঘুরা হয় না। সেই লাস্ট অনেক আগে ফুল ফ্যামিলি মিলে সাজেক গিয়েছিল। এরপর আর ঘোরা হয় নি ফ্যামিলি নিয়ে। সে তাও সময় পেলে ফেন্ড নিয়ে ঘুরে তাও খুব অল্প সময়ের জন্য।

আলিয়া বের হতেই দেখল বাবা এসেছে বাসায়। এতোক্ষন অফিসে ছিল। বাবাকে দেখে আলিয়া স্মিত হাসল।

এই বাসায় যদি কেউ তাদের দুই বোনকে আল্লাদ করে তাহলে তা হলো তাদের বাবা। তবে বাবা তার চেয়ে বেশি আপাকে ভালোবাসে। তা বোঝা যায়।

আলিয়া বাবার কাছে গেল।

মেঘ সবে অফিস থেকে ফিরল। বাসায় আসতেই ছোট মেয়েকে দেখে সে মুচকি হেসে বলে, কি রে মা? তোর মুখ কালো কেন? মা বকেছে নাকি?

আলিয়া হাসল। বাবাও না! সে কি বোঝে না তার মেয়েরা বড় হয়ে গেছে৷ এখন আর বকা দেওয়া লাগেনা। কড়া একটা কথা বললেই মনের অবস্থা শেষ।

মেঘ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, এক কাপ চা বানিয়ে দিতে পারবি?

এমন সময় রোদেলা এসে বলে, আমি বানিয়ে দিচ্ছি। ওরা তো বাইরে যাবে।

আলিয়ার মন চাচ্ছে ফুপুকে বলতে যে তারা যাচ্ছে না। কিন্তু বললো না।

মেঘ আলিয়াকে প্রশ্ন করে, কোথায় যাওয়া হচ্ছে মামনি?

আলিয়া মুখ গোমড়া করে বলে, আপা যেতে চায় না। তাই যাব না।

রোদেলা পাশেই ছিল। আলিয়ার কথা শুনে তার খটকা লাগলো। রোদেলা এই অল্প সময়ে বুঝে গেছে যে আয়নার কোন সমস্যা আছে। কিন্তু সে চায় না যে সে এমন কিছু বলুক যাতে মেয়েটা কষ্ট পাক। তার কাছে পিউ যেমন আয়না-আলিয়া ও তেমনি! তফাত শুধু পিউ তার মেয়ে, তার আয়না তার ভাইয়ের মেয়ে। কিন্তু মেয়ে তো!

মেঘ বলে, আয়না যাবে। আমি ওকে ম্যানেজ করব। তুই মন খারাপ করিস না।রেডি হ গিয়ে।

আলিয়া খুশি হয়ে গেল এবং খুশি মনে পিউয়ের কাছে গেল।

মেঘ দ্রুত তার বড় মেয়ের কাছে গেল। আয়না বসে ছিল তার রুমে জানালার দিকে তাকিয়ে। মেঘ রুমে ঢুকে আয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে, বড় মামনি!

আয়না বাবার ডাক শুনে পেছনে তাকিয়ে বাবাকে দেখে খুব খুশি হলো। পৃথিবী তে বাবাই একমাত্র পুরুষ যাকে সে বিশ্বাস করে। বাবা থাকলে তার ভেতরের ভয় কমে যায়। বাবা আশেপাশে থাকলে তার নিজেকে নিরাপদ লাগে। মনে হয় কেউ একজন তার মাথার উপরে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘ মেয়ের পাশে বসে বলে, দেখি মা, একটা সুন্দর জামা পড় তো!

— কেন?

— তোকে নিয়ে ঘুরতে বের হব।

— আমি যাব না। ( ভীত গলায়)

— কিচ্ছু হবে না তো। ওরা সবাই আছে। সমুদ্র আছে, শ্রাবণ আছে পিউ আছ। তোর নিজের বোন আছে। দুইটা ছেলে থাকলে কি আর ভয় থাকে

আয়না বিড়বিড়িয়ে বলে, ছেলেদেরকেই তো সবচেয়ে বেশি ভয় লাগে।

মেঘ নিজ থেকে মেয়ের আলমারি থেকে একটা জামা বের করল। বাবা এতো জোড় করল যে আয়না মানা করতে পারেনি। অগত্য জামাটা পড়ে বের হলো রুম থেকে।

সমুদ্র আয়নাকে দেখে খুব খুশি হলো। কিন্তু পিউ আর আলিয়ার সাজ-সজ্জা ভরা মুখের সামনে আয়নাকে খুবই সাধারণ লাগছে। পুরানা একটা ঘিয়া রংয়ের জামা আর ওড়না। চুল গুলো ছাড়া রাখলেও নেতিয়ে গেছে।মনে হয় চুল আছড়ায় নি। তারপর ও সমুদ্রের চোখ আয়নাতেই আটকা পড়ল। আয়নার নাকের নিচে আর ডান ঠোটের সামান্য উপরে একটা ছোট্ট তিল আছে!

শ্রাবণ পাঞ্জাবি পড়ে রেডি হয়ে অনেক কড়া পারফিউম দিয়ে চুল স্পাইক করে বের হলো। বের হতেই বড়সড় ধাক্কা গেল। নাগিনীর মানুষ রুপ দেখে সে ধাক্কা, বিশাল ধাক্কা খেল।

আলিয়া বেগুনি রঙের একট শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে এবং বর্তমানে সে হেসে হেসে পিউয়ের সাথে কথা বলছে৷

শ্রাবণ আলিয়ার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না। মানে, কাল নাগিনী ও এতো সুন্দর হয়! হাউ কিউট!

সমুদ্র বলে উঠে, রওনা দিই তাহলে?

শ্রাবণ বলে, হ্যা, হ্যা চল।

শ্রাবণ একটা মাইক্রো এনেছে।তার বাবার অফিসের গাড়ি এটা। যেন সবাই একসাথে হৈচৈ করে যেতে পারে।

শ্রাবণ ড্রাইভারের সাথে বসল। এরপর তিন মেয়েকে সমুদ্র পেছনের সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে তৃতীয় সারিতে একা গিয়ে বসল। গাড়ি চলা শুরু করল।

এসি ছাড়ায় আয়নার ঠান্ডা লাগতে শুরু করল। এমনি তার মাত্র জ্বর থেকে সেরেছে। তবে ঠান্ডার মাঝেও তার ভালো লাগছে। অনেক দিন পর রাস্তা দেখছে সে। পিচঢালা রাস্তা। লাইট পোস্ট। হলুদ বাতি, বড় বড় বিল্ডিং গুলোও কি সুন্দর লাগছে।

আয়না যা ই দেখছে তাতেই মুগ্ধ হচ্ছে। রাস্তার সামনে ফলের দোকান। লাল টকটকে আপেল,কমলা, স্ট্রবেরি, কলা ঝুলিয়ে রাখা। আবার কোথাও কোথাও খাবার দোকান। এতো এতো মানুষ! সবাই ব্যস্ত! বিশাল ব্যস্ত আকাশের নিচে আয়না বসে আছে।

আয়নার নাক টানার শব্দে সমুদ্র বুঝল, তার ঠান্ডা লাগছে। সমুদ্র দ্রুত শ্রাবণ কে এসি বন্ধ করতে বলে, জানাল হালকা খুলে দিতে বলে। সমুদ্রের কথা অনুযায়ী তাই করা হলো। এতে বাইরের উম্মুক্ত বাতাস এসে গা জুড়িয়ে গেল আয়নার।

ধানমন্ডি এসে থামল গাড়ি। সবাই নেমে গেল। সমুদ্র গিয়ে আয়নার সামনের দরজা খুলে দিল। আয়না আস্তে করে নামল। সে কিছুটা ভীত। অনেক দিন পর বের হয়েছে সে। যদি কোন ক্ষতি হয় তার?

গা শিউরে উঠল আয়নার। সমুদ্র একটা মাস্ক আয়নাকে দিল। তারপর বলল, আয়ু মাস্ক পড়ো।

এর আগে আয়না অনেক বার মাস্ক পড়েছে ল্যাবে।আজকে প্রথম এম্নেই মাস্ক পড়ছে করোনার জন্য।

সমুদ্র নরম গলায় বলে, আসো।

আয়না আর সমুদ্র পাশাপাশি হেটে হেটে যেতে লাগলো। পিউ আর আলিয়া গল্প করতে করতে হাটছে। তাদের প্রতি খেয়াল রাখছে শ্রাবণ। যদিও বা শ্রাবণ ভাবে নাগিনী আশেপাশে থাকলে এমনি মানুষ দৌড়ে পালাবে তাই সে আলিয়াকে খুব একটা দেখে রাখছে না। পিউকে নজরে রাখছে সে। মেয়েটা বিদেশ থেকে এসেছে কিছুই চেনে না।

পিউ হুট করে থেমে গিয়ে পেছনে ফিরে বলে, শ্রাবণ ভাইয়া? ধান কই? এখানে তো সব বিল্ডিং!

শ্রাবণ পিউয়ের মাথায় চাটি মেরে বলে, বলদ! ধানমন্ডি একটা জায়গার নাম।

— ওহ! আই সি।

শ্রাবণ এসে দাড়িয়েছে জন্য আলিয়া একটু দূরে সরে গেল। এতে মেজাজ খারাপ হলো শ্রাবণের। সে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করে বলে, ভাইয়া আসুক। তারপর আগাই।

— ওকে।

ওদিকে আয়না আস্তে আস্তে পা ফেলছে জন্য বেশ খানিকটা পিছিয়ে গেছে সমুদ্র রা। এতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না সমুদ্র। বরং তার ভালোই লাগছে আয়নার পাশে হাটতে। এক অন্যরকম অনুভূতি এটা। আয়নার গায়ের মিস্টি গন্ধ সমুদ্রের নাকে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। সে খেয়াল করছে, আয়না পা ফেলছে বেশ আস্তে আস্তে। অধিকাংশ জনগণই তাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। কারো দিকেই নজর নেই সমুদ্রের। সে আয়নাকে নিয়ে ব্যস্ত। আস্তে আস্তে সময় নিয়েই তারা বাকিদের কাছে পৌছালো।

শ্রাবণ বলল, কই যাব এখন?

সমুদ্র হাত নেড়ে দেখালো, ভেতরে মেলা হচ্ছে সাথে পিঠা উৎসব ও হচ্ছে ।ইনডোর। খোজ নিসি। সেখানেই যাব।

— আচ্ছা। (পিউ)

সবার চেয়ে পিউয়ের এক্সাইটমেন্ট বেশি। সে আগে আগে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

ধানমণ্ডি তে এমন আয়োজন প্রায় করে। অনেক রেস্টুরেন্টই করে। মেলার মতো করে সাজানো হয়। যেন শহরের মানুষ গ্রাম্য মেলা উপভোগ করতে পারে৷ কিন্তু সবকিছুর দাম খুব বেশি থাকে৷

ভেতরে ঢুকতেই একটা আভিজাত্যর আমেজ পাওয়া গেল। যে যার মতো ব্যবস্থা। মেলা বসলেও কিছুটা ফুডকোর্টের মতো বসার জায়গা করা আছে। একপাশে বিরাট দেয়ালে কারুকার্য করা। চারপাশে ছোট ছোট স্টল বসেছে। এক পাশে পিঠা-পুলি।

পিউ আর আলিয়া স্টলের দিকে গেল। অনেক সুন্দর করে জামদানি শাড়ি আর নকশি কাথা ঝুলিয়ে রাখা আছে। এছাড়াও, বিভিন্ন মাটির পুতুল আর ছোট সাজিয়ে রাখার রিকশা। সমুদ্র নিরাশ হলো। এটাকে মেলা বলে না। জায়গাটা খুব বড়ও না।

তবুও সে আয়নাকে নিয়ে একটা টেবিলে বসল। সমুদ্র জিজ্ঞেস করল, কি খাবে আয়ু?

আয়না কেপে উঠে। সমুদ্র এখনো কেন তাকে আয়ু বলে ডাকে? সে কি এখনো এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য আছে?

আয়না কিছু বললো না। এজন্য সমুদ্র নিযে থেকেই বলে উঠে, সিংগারা আছে ফুচকা আছে, ভাপা পিঠা আছে। কি খাবে?

ফুচকা আয়নার খুব প্রিয়। ফুচকার কথা শুনে তার খেতে ইচ্ছা করল। অনেক দিন ফুচকা খাওয়া হয় না।

সে আস্তে করে বলে, ফুচকা খাব৷

সমুদ্র খুব খুশি হলো। আয়না কথা বলেছে জন্য। যদিও বা সে এখানকার প্রায় সব আইটেম ই আনত আয়নার জন্য। তাও আয়না বলায় সে খুশি হলো।

ফুচকা, পিঠা, সিংগারা অর্ডার দিল সবার জন্য।

★★★

পিউ আগ্রহ নিয়ে সবকিছু খুটে দেখছে। হুট করে দেখল আলিয়া তার পাশে নেই। এমন সময় আমেরিকা থেকে তার ফ্রেন্ডের ফোন এলো। সে ফোন রিসিভ করে কিন্তু কিছু শুনতে পাচ্ছে না জন্য বাইরে বের হয়ে কথা বলতে লাগলো।

হুট করে পিউ খেয়াল করে, কেউ একজন তার পিঠে আপত্তিকর স্পর্শ করছে। পিউ এক মূহুর্তের জন্য ফ্রিজড হয়ে গেল।

মেয়েদের সাথে হ্যারেজ হওয়ার কথা অনেক শুনেছে কিন্তু নিজে এর কবলে পড়েনি এর আগে কোন দিন।

ভয় পেয়ে যায় পিউ। স্পর্শ গভীর হতে লাগলো। পিউয়ের নাক-কান দিয়ে গরম হাওয়া বের হতে লাগলো। রেগেমেগে বোম সে। সে যেই না পেছনে ঘুরবে হাতটা সরে গেল।

পিউ পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা কালো শার্ট পড়া ছেলে গাড়ি তে হেলান দিয়ে ফোন চালাচ্ছে। চোখে সানগ্লাস পড়া।

পিউ ছেলেটার দিকে তেড়ে গেল। মানে সাহস কিভাবে হয় একটা মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ার! বাজে ভাবে স্পর্শ করার।

পিউ কোন রকম কথা না বলে ছেলেটার কাছে গেল এবং এতো এতো লোকের সামনে ছেলেটার শার্টের কলার চেপে ধরে।

ছেলেটা চোখ বড় বড় করে পিউয়ের দিকে তাকালো। হচ্ছেটা কি ছেলেটার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

পিউ ঝারি মেরে এক নাগাড়ে বলে, তোর সাহস কিভাবে হয় আমার গায়ে হাত দেওয়ার? অসভ্য কোথাকার? ঘরে মা-বোন নাই? বেয়াদব ছেলে! মেয়েদের সম্মান দিতে জানিস না! কুত্তা!

রঙ্গন চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। যা হচ্ছে সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে হুট করে এক মারাত্মক রূপবতী মেয়ে এসে তার কলার ধরে কিসব বলছে! রঙ্গনের কানে কিছুই যাচ্ছে না। সে মেয়েটাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে। তবে শেষ কথা শুনেছে। মেয়েটা তাকে কুত্তা বলেছে। রঙ্গন রেগে যাচ্ছে। মেয়েটা সুন্দর বলে তাকে ছাড় দেওয়া যাবেনা।

রাস্তার অপজিটে পুলিশ জীপ তার জন্য অপেক্ষা করছে। চারজন জুনিয়র পুলিশ তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ কি লজ্জা! কি ভাবছে তারা রঙ্গনের ব্যাপারে।

এভাবে কোন মেয়ে কেন তাকে এসে চেপে ধরবে। তাও আবার অতিমাত্রায় মারাত্মক সুন্দরী মেয়ে! যেই মেয়েকে দেখলে যে কারো বুকের মধ্যে তোলপাড় উঠে যেতে পারে!

পিউ অচেনা ছেলেটার কলার ঝাকাতে লাগলো। রাগ তার নাকের ডগায় কিলবিল করছে৷কান নিয়ে গরম বাতাস বইছে। আর চোখে জল। এভাবে কোন দিন হ্যারেজমেন্টের শিকার হয় নি সে।

রঙ্গন আবারো মেয়েটার দিকে তাকালো। সবুজ শাড়ি পড়ে আছে। নাকটা লাল হয়ে আছে৷ মুখ-চোখ ও লাল!

মেয়েটার এই রাগী চাউনি তীরের মতো গিয়ে বিধলো রঙ্গনের বুকে।

সে পিউয়ের কাছে এগিয়ে আসতে লাগে। পিউ ভয় পেয়ে যায়। আশেপাশে মানুষ জোড়ো হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা এভাবে তার দিকে কেন আসছে? খারাপ কোন উদ্দেশ্য আছে কি?

পিউয়ের চোখ মুখ শুকিয়ে গেল। ছেলেটাকে দেখে তার ভয় লাগছে।

রঙ্গন পিউয়ের কিছুটা কাছে এসে ঝুকে পড়ল। পুলিশ হওয়ায় রঙ্গন বেশ লম্বা। তাই পিউ তার কাধেও পড়েনা।

সে পিউয়ের মুখে ফুক মেরে বলে, বোম্বে মরিচের এতো ঝাঁঝ!

রঙ্গনের মুখের গরম বাতাস পিউয়ের মুখে আছড়ে পড়তেই সে চোখ খিচে বন্ধ করে।

রঙ্গন শয়তানী হাসি হেসে বলে, অতি মাত্রায় রূপবতী দের এতো রাগী হতে হয় না! রূপবতীদের তুষারের ন্যায় ঠান্ডা আর মোলায়েম হতে হবে গো!

পিউ চোখ খুলে ডাগর ডাগর চোখে রঙ্গনের দিকে তাকায়। রঙ্গন একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখে পিউকে রেখেই পেছন দিকে হাটা দিল৷ পিউ হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল।

★★★

হুট করে কেউ একজন আলিয়ার হাত টান দিয়ে পিউয়ের কাছ থেকে সরিয়ে আনে। আলিয়া তাকাতেই দেখে শ্রাবণ তার হাত ধরে আছে।

আলিয়া বাজখাঁই গলায় বলে, তুমি আমাকে টাচ কেন করেছো?

শ্রাবণ রাগী গলায় বলে,কেন? তোমার গায়ে চামড়ার হাত দিয়ে ধরা যাবে না? এখন কি হাত সোনা দিয়ে বাধাবো?

— ফালতু কথা বলবা না!

— আমাকে আনব্লক করো।

— পারব না।

শ্রাবণ বিরক্ত হয়ে গেল এবং বলল, ফেসবুক এ আনব্লক কর লাগবে না। তুমি কার কার সাথে ঘুরো সেটা দেখার ইচ্ছা নাই আমার৷ কথা আছে। আনব্লক করবা৷

— কি কথা? এক্ষুনি বল।

— আনব্লক করিতে ভয় লাগিয়াতেছে নাকি?

শ্রাবণ মাঝে মাঝে হুটহাট করেই অশুদ্ধ সাধু ভাষায় এক-দুই লাইন বলে। এটা তার মুদ্রাদোষ৷।

আলিয়া বলে, ভয় কেন লাগবে?

শ্রাবণ আলিয়ার দিকে ঝুকে হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলে, If you fall in love with Again and Again !

আলিয়া হোহো করে হেসে বলে, নাড়িয়া বেল তলায় একবারই যায়!

শ্রাবণের মুখ কালো হয়ে আসল। সে আলিয়ার চুলে হাত দিয়ে বলে, কই এই যে এতো বড় বড় চুল তোমার! নাকি ফেইক এগুলো?

আলিয়া তার চুল ছাড়িয়ে নিয়ে পেছন ঘুরতে গেলে চুলে টান অনুভব করে তাই পুনরায় শ্রাবণের দিকে ফেরে। শ্রাবণের শার্টের বোতামে তার চুল আটকে গেছে।

আলিয়া চোখ-মুখ শক্ত করে বলে, আমার চুল!

— ছিঃ! আলিয়া গালি দিতে হয় না!

আলিয়া প্রথমে বুঝে নি। পরে বোঝা মাত্র সে রেগেমেগে বোম। শ্রাবণ কে ঝারি মেরে বলে, ইচ্ছা করে এমন করেছো তাই না?

— তোমার সানস্লিক মাখা চুল আমার বোতামে আটকায় লাভ টা? চুল নিজ থেকে আটকে গেছে। আমার হাত নাই। এসব আবাল কাজ করি না আমি।

আলিয়া কথা না বাড়িয়ে দ্রুত শ্রাবণের বোতাম থেকে তার চুল ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হুট করে তার চোখ শ্রাবণের গলায় গেল। সে থমকে যায়। এটা তো তার দেওয়া চেইন আর লকেট।

আলিয়া কাপা হাতে চুলগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে এলোমেলো পা ফেলে অন্য দিকে চলে যায়।

শ্রাবণ বাকরুদ্ধ ভাবে চেয়ে আছে আকাশের দিকে। এই বিশাল আকাশটাও ঠুনকো তার ভালোবাসার কাছে!

★★★

ফুচকা এসে গেছে। নাও খাও।

কথাটা সমুদ্র আয়নাকে বললো। ফুচকা দেখে মৃদ্যু হাসি দিল আয়না।

সমুদ্র আরেকদফা হা হয়ে গেল। আয়নাকে এই প্রথম হাসতে দেখে সে দফায় দগায় মুগ্ধ হলো। আয়ুকে হাসলে এতো বেশি সুন্দর লাগে!

আসলে হাসলে প্রতিটা মানুষ কেই সুন্দর লাগে।

সমুদ্র ও হাসল। আয়না চোখ তুলে সমুদ্রের দিকে তাকায়।

সমুদ্রের হাসি তার বুকে আঘাত হানে। সে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়। একটা দম নিয়ে ফুচকা হাতে নিল। এখন আর খেতে ইচ্ছা করছেনা। তার খুব করে কান্না পাচ্ছে। সবকিছু অসহ্য লাগছে।

— কি হলো খাও!

সমুদ্রের কথা শুনে আয়না ফুচকা মুখে দিল। অনেক দিন পর ফুচকা খেয়েও তার ভালো লাগছেনা। বরং ঝাল লাগছে।খেতে জঘন্য লাগছে।

কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো খুশি মনে খেতে হয়! যেমন– ফুচকা। ফুচকা আসলে মজাদার খাবার না। মেয়েরা খুশি মনে মজা করে খায় জন্য আপেক্ষিক দৃষ্টি তে ওটা মজার খাবার!

আয়নার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। সমুদ্র দ্রুত এক বোতল পানি খেতে দিল আয়নাকে।আয়না দ্রুত পানি খেল।

পানি খাওয়া শেষ হতেই সমুদ্র আয়নার মুখে নারকেল পুলি পুড়ে দিল। আয়না মুখে খাবার নিয়ে অদ্ভুত চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল।

সমুদ্র বললো, এখনো ঝাল খেতে শিখলি না তুই আয়ু।

আয়না সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, তোর এখনো মনে আছে আমি ঝাল খেতে পারিনা!

আয়নার মুখে তুই শুনে একটা ঝটকা খায় সমুদ্র। এই নতুন আয়ুর সাথে তুই শব্দটা বেমানান। কেন? সে কি আয়নাকে বন্ধু ভাবে না? নাকি বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু ভাবছে জন্য তুই বলে ডাকটা হজম হচ্ছেনা।

বিকেলের উষ্ণ বাতাস এসে আয়নার এলোমেলো চুলগুলো আরো এলোমেলো করে দিচ্ছে। এক নামহীন মায়া এসে আয়নার চেহারাকে আরো মায়াময় করে দিচ্ছে।

সমুদ্রের ইচ্ছা করে তার হাত দিয়ে কৃত্রিম ভাবে আয়নার চুল গুলো আরো এলোমেলো করে দিতে। কিছু কিছু জিনিস এলোমেলো ই সুন্দর। যেমন আয়ুর চুল আর তার মন মহাশয়!

সেই সঙ্গে বিকেলের উষ্ণ তাপ সমুদ্রের মনটাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। যেন এটা উষ্ণ তাও না বরং তেজক্রিয় রশ্মি। সমুদ্রের মন ভেঙে চুরমার হচ্ছে। যার প্রতিটা মৌলিক কণায় আয়নার নাম লেখা!

ভালোবাসার পেছনে অনেকাংশ প্রকৃতি দায়ী থাকে।

চলবে।

#প্রেমপ্রদীপ
Part–15
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

রোদেলা রান্নাঘরে অযথা ঘুটঘাট করে সময় নষ্ট করছে। আসলে সময় নষ্ট না বরং সময় পার করছে। তার মন খচখচ করছে৷ কিছু কি ঘটবে নাকি? সকাল থেকেই তার বাম চোখে সমস্যা হচ্ছিল। যদিও বা এসব কুসংস্কার তাও রোদেলার চিন্তার শেষ নেই। তার ছেলে-মেয়ে ঠিক আছে তো? সমুদ্র?পিউ? দুজন ই তার চোখের সামনে আছে। আচ্ছা, আবেগ কেমন আছে? দুইদিন ধরে কথা হয় না আবেগের সাথে। সেই লাস্ট আমেরিকার এয়ারপোর্টে এ যাওয়ার পূর্বে কথা হয়েছিল এরপর থেকে আবেগ আর ফোন তুলছে না।পিউকেও নাকি কল দেয় নি৷ কালকে পিউ বারবার বলছিল বাবা একবারো ফোন দেয়নি, ফোন ধরছেও না। আজকে অবশ্য পিউ এমন কোন কথা বলে নি। তার মানে আবেগ মেয়েকে কল দিয়েছিল!

রোদেলা রুমে গিয়ে আবেগকে কল দিলো। কিন্তু ফোন বন্ধ। কি করবে সে? বাসায় যাবে? এতো বছর পর! তার শ্বশুর তো মারা গেছেন। রোদেলার শ্বশুড়ই একমাত্র ব্যক্তি ছিল যাকে একটু হলেও সাপোর্ট করত৷ মানুষ টা আর নেই ভাবতেই বুক কেপে উঠে। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আবেগ ও খুব ভালো। কোন খারাপ স্বভাব নেই। নারীদের দিকে সে মোটেও ঠিক ভাবে তাকাত না।

আবেগ সবসময় বলত, নিজের চোখ আর মন কে সংযত করতে হবে৷ আবেগের সিগারেটের নেশাও ছিল না। এমন ছেলে এখনকার যুগে খুব কম পাওয়া যায়। আবেগ তার মায়ের একটু বেশি বাধ্যগত সন্তান। মা যা বলবে তাই। এর বাইরে আবেগ যাবে না। এটা নিয়েও রোদেলার সমস্যা ছিল না। ছেলে মায়ের কথা মেনে চলবে। এটা তো নিয়ম। কিন্তু মাকেও তো মায়ের মতো হতে হবে। ছেলেকে ভুলভাল বোঝানো তো ঠিক না। এসব আজগুবি ভাবতে ভাবতে রোদেলার মাথায় আসল, এসময় তো আবেগের অফিসে থাকার কথা। তাহলে একবার অফিসে গিয়ে দেখে আসা যাক। মানুষ টা হুট করে লাপাত্তা কেন হয়ে গেল!

রোদেলা আবারো আবেগকে কল দিলো। ফোন বন্ধ। এবার সে রেডি হতে গেল।

বিকেল এখন। আর একটু দেরি করে গেলেই আবেগ বাসার উদ্দেশ্য বের হবে৷ এজন্য মনের মধ্যে অস্থিরতা নিয়েই রওনা দিল রোদেলা৷ আবেগের অফিসে গিয়ে পরিচয় দিতেই একজন স্টাফ আবেগের রুমে নিয়ে গেল। কিন্তু রুম ফাকা। স্টাফ জানালো, আবেগ মাগরিবের নামাজে গেছে।

রোদেলা চেয়ারে বসতেই স্টাফ বললো, ম্যাডাম চা-নাস্তা দিব?

রোদেলা কিঞ্চিৎ হেসে বলে, না। এখন কিছু খাব না। আপনার স্যার কোথায় একটু খোজ নিয়ে আসেন। ওনার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। সম্ভবত জানেও না আমি এখানে এসেছি।

–আচ্ছা ম্যাডাম।

স্টাফটা চলে গেলেও মিনিট পাচ পর আরেক জন্য স্টাফ এসে চা আর মিস্টি দিয়ে গেল। সাদা চমচম। রোদেলা বারং করেছিল তার পর ও দিল। স্টাফটা যাওয়ার পর রোদেলা উঠে দাড়ালো এবং সমস্ত কেবিন ঘুরে দেখল। তেমন কিছু নেই। টেবিলে এক গাদা ফাইল পড়ে আছে৷ একটা ফাইল খোলা পড়ে আছে। সব কিছুই এলোমেলো করে রাখা। টেবিলের বাম পাশে অধেক খাওয়া লেবুর শরবত। লেবুর শরবত তো আবেগের শরীর ভালো না থাকলে খায়। আচ্ছা আবেগ কি অসুস্থ?

রোদেলা টেবিলের কাছে গেল। চেয়ার-টেবিলে আবেগের গায়ের গন্ধ টা পাওয়া যাচ্ছে। টেবিলের এক কোনে একটা ফটো ফ্রেম। একটা ফ্রেমে দুইটা ছবি রাখা যাবে। দুই পাশে দুইটা ছবি। একটা ছবি সমুদ্রের আর একটা পিউয়ের। সমুদ্র হাসি মুখ করে বসে আছে ছবি তে। আর পিউ দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রের ছবিটা বাংলাদেশ এ তোলা আর পিউয়েরটা নিউইয়র্কে তোলা। রোদেলার বর্তমান পোস্টিং আমেরিকার নিউইয়র্কে। লাইফে অনেক সাকসেস হয়েছে সে। তার ক্যারিয়ারটা সোনার মতো চকচক করছে। সব জায়গায় সম্মান। টাকা -পয়সাও কম কামায় নি। কিন্তু তারপর ও কোথায় একটা কিন্তু, একটা শূন্যতা রয়ে যায়। রোদেলা বুঝে গেছে, সে অনেক।বড় ভুল করে ফেলেছিল। যার কোন প্রায়াশ্চিত হয় না। ক্ষমা ও পাবে না সে।

রোদেলা ভাবতে লাগে, তার ছেলে-মেয়ের একসাথে কোন ছবি নেই!

এমন সময় আগের স্টাফটা এসে বলে, ম্যাডাম স্যার তো চলে গেছেন। নামাজ পড়ে বের হয়ে গেছেন।

রোদেলার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে একটা দম নিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে আগালো। সঙ্গে গাড়ি এনেছে। আবেগের অফিস থেকে বের হতেই রোদেলার ড্রাইভার গাড়ি বের করল।

রোদেলা গাড়ি তে বসেও স্বস্তি পাচ্ছেনা৷ কেমন হাস-ফাস লাগছে তার৷

★★★

আবেগ মসজিদ থেকে নামাজ পড়েই বাসায় ফিরে এসেছে। আর অফিসে যায় নি। খুব ক্লান্ত লাগছে। গায়ে জ্বর। শুকনা কাশির জন্য বুক, পিঠ ব্যথা হয়ে গেছে তার। ইদানীং কিছু না করলেও তার ক্লান্ত লাগে। শরীরে বল পায় না। খাওয়ার রুচি নাই। কিছুই খেতে পারছেনা। কালকে শুক্রবার। পিজিতে যাবে ভাবছে আবেগ।চেক আপ করাবে।

আবেগ বাসায় ফিরে আসতেই ময়নার মা তাদের বাড়ির কাজের মহিলা মেইন গেট খুলে দিল। আবেগ তাকে দেখে স্মিত হেসে বলে, খালা, আজকে এতোক্ষন পর্যন্ত আছেন যে? আপনি তো দুপুরের পর পর চলে যান।

ময়নার মা বললেন, চাচীর শরীলটা ভালো ভাইজান।

আবেগের মুখের শুকনা হাসিটায় মিলিয়ে গেল সে চিন্তিত গলায় বলে, কি হয়েছে মায়ের?

— জানি না। হাত-পা কাপতেছে ওনার। মুখ বাইকা গেছে গা ভাইজান।

বলে কাদা শুরু করে দিল। আবেগের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। মায়ের শরীর ভালো যাচ্ছে না। ডাক্তার বলেছে স্টোক করার চান্স আছে।

সে ক্লান্ত পায়ে মায়ের ঘরে গেল। মায়ের মাথায় কাছে গিয়ে বসল।

জাবেদা খাতুন নেতিয়ে শুয়ে আছে। মুখ হা করে সে নিশ্বাস নিচ্ছে। এবং শাশা শব্দ করছে। আবেগ তার মায়ের প্রেসার মাপলো। প্রেসার অনেক বেড়ে গেছে।

সে ফোন বের করল। ফোন বন্ধ ছিল। সে ফোন অন করে, ভাবতে লাগে, কাকে ফোন দিয়ে সাহায্যে নিবে? ঢাকায় তার কোন আত্মীয় নেই। সমুদ্র কে কল দেয় আবেগ। কিন্তু সমুদ্র ফোন ধরছেনা দেখে না চাইতেও রোদেলাকে কল দিল।

একবার রিং হতেই রোদেলা রিসিভ করে বলে, কই তুমি? আর ফোন বন্ধ কেন তোমার?

আবেগ কাপা গলায় বলে, বাসায় আসতে পারবে একটু?

রোদেলা অবাক হয়ে বলে, এখন!

–যদি ব্যস্ত না থাকো, কাজ না থাকে, তাহলেই আসো।

রোদেলা আবেগের কথা শুনে কষ্ট পেল। এভাবে কটাক্ষ না করলেও পারত।

রোদেলা জিজ্ঞেস করে, কোন সমস্যা হয়েছে? তোমার শরীর ভালো তো?

— মা কেমন যেন করছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতাম।

— আচ্ছা। তুমি অপেক্ষা কর আমি আসছি।

আবেগ কিছু একটা ভেবে বলে, আমি মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি হাসপাতালে চাইলে আসতে পারো।

রোদেলা বলল, চাইলে আসতে পারো মানে কি আবেগ?

আবেগ নিস্তেজ গলায় বলে, তোমাকে আসার জন্য বাধ্য করার অধিকার আমার নেই। এজন্য অনুরোধ করলাম।

রোদেলা আর কিছু বললো না। এইসময় ওসব বলে সময় নষ্ট না করাই ঠিক হবে।

আবেগ ময়নার মায়ের সাহায্য আর দারোয়ানের সহযোগীতায় জাবেদা খাতুন কে হাসপাতালে দিয়ে গেল।

মাইনোর হার্টএটাক করেছেন জাবেদা খাতুন।

রোদেলা পনের মিনিটের মধ্যে চলে এসেছে। রোদেলা হাসপাতালে গিয়েই আবেগের কাছে গেল। আবেগ একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে। তার নিজের ই খুব খারাপ লাগছে৷ মনে হচ্ছে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে।

রোদেলা এতোদিন পর আবেগকে সরাসরি দেখছে। তার কেমন যেন লেগে উঠল। চোখের কোনে পানি চিকচিক করতে লাগলো। রোদেলা চোখ মুছে আবেগের কাছে গেল।

সে কাপা গলায় বলে উঠে, আবেগ!

রোদেলার কন্ঠস্বর শুনে আবেগ চমকে গেল। তার চারপাশ সব থমকে গেল। রোদেলার ভয়েসটা কি বদলে গেছে? নাকি সরাসরি শুনছে জন্য কিছুটা অন্যরকম লাগছে। এতো দিন ফোনে কথা বলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে জন্য এখন সরাসরি কন্ঠস্বর শোনার জন্য অন্যরকম লাগছে তার। নাকি সে অসুস্থ জন্য এমন লাগছে তার!

আবেগ মাথা তুলে রোদেলার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। রোদেলা একদম আগের মতোই তো আছে। সেই আগের অতি পরিচিত চেহারা দেখে আবেগের বুকটা ছ্যাত করে উঠে। রোদেলা হালকা গোলাপি রঙের একটা শাড়ি পড়ে আছে। চুলগুলো খোপা করা। আবেগ রোদেলার দিকে এক প্রকার হতভম্ব হয়েই তাকিয়ে রইল।

এদিকে আবেগকে দেখে রোদেলা ও চমকে গেছে।শরীরের এ কি হাল বানিয়েছে আবেগ। চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছে আবেগ খুব অসুস্থ।

রোদেলা আবেগের কাছে গিয়ে বলে, এই! তোমার কি হয়েছে? অসুস্থ তুমি?

— নাহ। আমি ঠিক আছি।

— চেহারা দেখেছো নিজের! এই চেহারা দেখে কে বিশ্বাস করবে তুমি সুস্থ আছো?

আবেগ স্মিত হেসে বলে, আমি ঠিকই আছি। তোমাকে ডিস্টার্ব করলাম তাই না? (শান্ত গলায়)

রোদেলার বুকটা দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো আবেগের কথা শুনে।

রোদেলা চাপা বেদনা নিয়ে বলে, মা কেমন আছে? ডাক্তার কি বললো?

আবেগ শান্ত গলায় বলে, মাইনোর হার্ট এটাক।

তখনই আবেগের ফোনে কল আসলো। সমুদ্র কল করেছে।

আবেগ কল রিসিভ করতেই সমুদ্রের ওপাশ থেকে বলে উঠে, আসসালামু আলাইকুম আব্বু। একটু বাইরে ছিলাম আমি। এজন্য ফোন ধরতে পারিনি।

আবেগ বলে উঠে, সমুদ্র! তোমার দাদী অসুস্থ। দ্রুত আসো বাবা। সঙ্গে পিউকে এনো। তোমার দাদী মনে হয় না আর বাচবে। ডাক্তার আইসিইউ তে রেখেছে। কিন্তু ডাক্তার কিছু ই সঠিক ভাবে বলছে না। তুমি আসো।

সমুদ্র বাবার কথা শুনে থমকে যায়। তার চোখ ভিজে উঠতে লাগলো। সে কি করবে কিছুই বুঝে পাচ্ছে না। মাথা হ্যাং মেরেছে।

★★★
পিউ আর শ্রাবণ কে নিয়ে রওনা দিল সমুদ্র। তার মন খচখচ করছে। দাদীর যেন কিছু না হয় এটাই প্রার্থনা করছে সে।

চলবে।