প্রেমপ্রদীপ পর্ব-৫৩

0
2394

#প্রেমপ্রদীপ
Part–53 (বোনাস)
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

পিউ নিজের রুমে বসে আছে। লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।সে ভেবেই পায় নি রঙ্গন তাকে দেখতে এসেছে।এটা বুঝেই নি সে! রঙ্গন মুখ ফুটে না বললে সে কোন দিনই এটা বুঝতে পেতনা। বাবা তাকে আগে কেন বলেনি এসব কথা? উফ! তার বড্ড লজ্জা লাগছে৷

কিছুক্ষন আগে দুপুরে খাওয়ার পর মা তাকে আর রঙ্গনকে ছাদে পাঠালো একাকি কথা বলবার জন্য। পিউ তখনো এত সব বুঝেনি ।আসলে বিদেশে এভাবে মেয়ে দেখতে যায় কেউ। তাই তার মাথায় ও এই খেয়াল আসেনি। আর মা ও তো কৌশলে কি সুন্দর করে বলে, যাও ওকে নিয়ে ছাদ থেকে ঘুরে আসো।

পিউদের ছাদে অনেক গাছ আর পাখি আছে। পিউ ভেবেছে সেগুলোই দেখবে হয়তোবা৷

একসাথে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে সে রঙ্গনকে।বিভিন্ন গাছ-পালার সঙ্গে পরিচয় করাতে লাগে। এইসব গাছের নাম সে আগে জানত না। এখানে শিফট হওয়ার পর বাবা প্রতিটা গাছের নাম তাকে চিনিয়ে দিয়েছে। প্রতি দিন সকালে সে আর বাবা গাছে পানি দিতে আসে।

পিউ জালের সঙ্গে বেয়ে উঠা শাকপাতা দেখিয়ে বলে, এগুলো কুমড়া শাক। আর ওইযে ফুল দেখছো না গোলাপি রঙের। ওটা বাগান বিলাস। নিচে ও একটা আছে। ওটা আরো বড়।
আর এইটা তো চেনার কথা। এটা হলো গোলাপ।

পিউ উত্তেজিত হয়ে রঙ্গনের দিকে তাকালো। তার মুখে উল্লাসের ছিটেফোঁটাও নেই। বরং বিরক্ত দেখাচ্ছে তাকে।

পিউ বলে উঠে, হুয়াটস রঙ উইথ ইউ?

সে মুখ বিকৃত করে বলে, আসো একটু কথা বলি। এসব গাছ দেখে তো আমি বোটানি তে স্কলারশিপ পাব না।

— এভাবে কেন কথা বলছো?

— তো কিভাবে বলব? কই আসলাম তোমার সঙ্গে প্রেম আলাপ করব তা না করে তুমি আমাকে গাছ চেনাচ্ছো। এ-সব গাছ চিনে আমার লাভ কি? বল?

পিউ চোখ ছোট ছোট করে বলে, আমার সঙ্গে কথা বলেই বা কি লাভ?

— আমার সব আসল, মুনাফা, লাভ, ক্ষতি তো তোমাতেই!

–সর‍্যি?

রঙ্গন পিউয়ের কাছাকাছির এসে দাড়ালো। পিউ ঘাবড়ে গেল। সে তোতলানো শুরু করে দেয়।

— ও,,,ওই য,,যে ক্যাচক্যাচ শব্দ যারা করছো ওরা হলো মুনু আর টুনু। লাভ বার্ড পাখি।

রঙ্গন তাকে কাছে টেনে এনে বলে, যখন আমরা টোনাটুনির সংসার পাতব, তখন এরকম গাছ লাগাব। সব এক রকমের ফুল গাছ। কি ফুল গাছ জানো? নাইট কুইন। নাইট কুইন গাছের গন্ধ সারা রাত রুম মো মো করবে। আমরা কিন্তু ঘুমাব না। আচ্ছা? জেগে জেগে নাইট কুইন ফুলের সুগন্ধি নাকে নিব! সারা রাত একসঙ্গে গল্প করব।

পিউ এক ঝটকায় সরে এসে বলে, আমি কেন রাতে তোমার সঙ্গে থাকব?

পিউ বোকা প্রশ্নে রঙ্গন খুব করে হাসে। এমন হাসি হাসল যেন পিউ খুব মজার একটা জোকস বলেছে।

পিউ ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, হাসো কেন?

রঙ্গন হাসি থামিয়ে দিয়ে বলে, বারে! বিয়ে হলেও বুঝি আব্বু-আম্মুর কাছে থাকবে? আমার এতে কিন্তু অভিযোগ নেই। শুধু আমার ভাগের ভালোবাসা টা দিলেই আমি শান্ত থাকব বলে পিউকে চোখ মারলো।

পিউ তবুও কিচ্ছুটি বুঝল না। তাই আবার ও প্রশ্ন করল, বিয়ে মানে? এসব কি বলছো? ভাইয়ার বিয়ে তো শেষ! আবার কার বিয়ে?

রঙ্গন পিউয়ের গাল টেনে দিয়ে বলে, তোমাকে বিয়ে করে পালকি করে আমার ঘরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা চলছে৷ তুমি কি কিছুই জানো না?

পিউ মাথা নাড়িয়ে না বলল।

সে বলে উঠে, আমি তোমাকে বিয়ে করব।

পিউ চোখ বড় বড় করে তাকায় তার দিকে। রঙ্গন পিউয়ের গলা থেকে তার ওড়না নিজের হাতে নেয়।

পিউয়ের চোখ দ্বিগুন বড়বড় হয়ে যায়। সে মুচকি হেসে সুন্দর করে পিউয়ের মাথায় ওড়না দিয়ে দেয় এবং বলে উঠে, ভাগ্যিস লাল রঙের ওড়না পড়েছো। জানো পিউ তোমাকে এই মূহুর্তেই বিয়ে করে ফেলতে মন চাচ্ছে আমার৷

এইকথা শুনে পিউ লজ্জায় মুছড়ে গেল৷

তখনি আযান দিয়ে দেয়। সে বলে উঠে, আসো। নিচে যাই। আমাকে তো আবার বাসায় ফিরতে হবে।

সে পিউয়ে নিয়ে পিউদের বাসার সামনে আসার সময় বলে উঠে, মাথা থেকে ওড়না টা সরিয়ে নাও গো। তা নাহলে তোমার বাড়ির লোকেরা ভাববে তোমাকে আমি বিয়ে করে নিয়েছি।

পিউ আবারো লজ্জ পায়। এবং এই লজ্জাটা এখনো তার ভেতরে বিরাজ করছে।

আপাতত সে রুমে বসে আছে। বাবা রুমে এলেন।

পিউ বাবাকে দেখে আরো মাথা নিচু করে ফেলে। বাবার সঙ্গে মা এবং ভাইয়া এলো।

বাবা বলে উঠে, পিউমনি তোমার কি এই বিয়েতে আপত্তি আছে?

পিউ লজ্জায় কথা বলতে পারলোনা। এটা কিভাবে যেন মা বুঝে গেল। সে তার পাশে বসে বলে, উত্তর দিতে হবে না। মাথা নাড়ালেই চলবে।

আবেগ আবারো প্রশ্ন করে, তুমি কি এই বিয়ে করতে চাও নিজ ইচ্ছায়?

পিউ সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
সবাই মুচকি হাসল।

আবেগ বলে উঠে, ওরা বলল, পিউ রাজি থাকলে আগামী শুক্রবার আকদ পড়াবে৷ এরপর ধুমধাম করে বিয়ে।

রোদেলা বলে উঠে, এতো তাড়া কিসের? ওরা আগে একে অপরকে চিনুক তারপর দেখা যাবে৷

আবেগ বলে উঠে, রঙ্গনের আগামী মাসে ট্রান্সফার হবে কিনা এজন্য সে বিয়ে করে নিতে চাচ্ছে। মা তোমার সমস্যা আছে কোন?

পিউ ভীষণ লজ্জা পেল। সত্যি বলতে তার একদম কোন সমম্যা নেই। বরং সে চায় তার যেন বিয়ে হয়। অন্যদের কতো শখ থাকে। কারো বাগান করার শখ, কারো লেখালেখির শখ তো কারো ট্রাভেল করার শখ। কিন্তু পিউ একমাত্র ব্যক্তি যার ভীষণ করে লাল শাড়ি পড়ে বিয়ে করার শখ!

পিউ বলে উঠে, আমার কোন সমস্যা নেই৷

সমুদ্র পিউকে কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলে, প্রেমের বিয়েতে তো সমস্যা থাকবেও না। এই ছেলেটার সঙ্গে ই তো তুই আমার হলুদে নাচলি। যেচাবে নাচছিল আমার তো তখনি সন্দেহ হল। এতো ভীড়ে তোকে প্রশ্ন করতে পারিনি। কবে থেকে পরিচয় হলো ওর সঙ্গে?

পিউ উসখুস করতে লাগলো।

আবেগ বলে উঠে, তোমরা ভাই-বোন কথা বল৷ আমি আর তোমার আম্মু যাচ্ছি।

সমুদ্র বলে উঠে, কোথায়?

— সো রুমে যাব। ভুলে গেলে এতো দ্রুত?

–ওহ। বেস্ট অফ লাক বাবা। আমরা নতুন গাড়ি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

আবেগ সত্যি সত্যি রোদেলাকে নিয়ে বের হলো।

বাবা-মা যেতেই শ্রাবণ সমুদ্র পিউকে ঝেকে ধরল।

শ্রাবণ পিউকে নিয়ে মজা করছে৷ কিন্তু সমুদ্র ভাইয়ার কথা শুনে মনে হচ্ছে পিউয়ের প্রেম করাটা তার পছন্দ হয়নি।

পিউ মনে মনে বলে, ভাইরা কি এমনই হয়? নিজের প্রেম করবে অন্যের বোনের সঙ্গে। কিন্তু নিজের বোনকে অন্যের ভাইয়ের সঙ্গে প্রেম করতে দিবে না! আচ্ছা সে কি রঙ্গনের সঙ্গে প্রেম করেছে? নাহ! একদম না! এটাকে প্রেম বলে না। তবে কি বলে?

আয়না পিউয়ের পাশে বসে বলে, তুমি হ্যাপি তো পিউ,?

পিউ ভাবীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, আমার ফেইস দেখে কি মনে হচ্ছে তোমার ভাবী?

আয়না বলে উঠে, খুব সুখী মনে হচ্ছে।

শ্রাবণ বলে উঠে, এই বল না! তোদের প্রেম কিভাবে শুরু হলো?

পিউ বিড়বিড় করে বলে, কুত্তা বলা দিয়ে শুরু হয়েছিল!,

সমুদ্র কিছুটা রেগে গিয়ে বলে, আহ শ্রাবণ! চুপ কর।

বলে রুমের বাইরে গিয়ে দাড়ালো।

পিউ বলে উঠে, ভাবী ভাইয়া কি রাগ করেছে?

আয়না ভাবলেশহীন ভাবে বলে, মানুষ তিন বেলা খায়, তোমার ভাই তিন বেলা রাগ করে।

সমুদ্র ওপাশ থেকে বলে উঠে, খুব দ্রুতই আমাকে আয়ত্ত করে ফেলেছো দেখছি।

পিউ আর আয়না হেসে দিল একথা শুনে।

— হাসার মতো কিছু ই তো বলিনি।

আয়না বলে, তবুও আমরা হাসব। হাসতে তো বারং নেই!

সমুদ্র আর কিছু না বলে চুপ হয়ে যায় এবং এক দন্ড থেমে।বলে,আয়ু আমাকে চা দাও তো।

— আচ্ছা। দিচ্ছি।

সমুদ্র বলল, পিউ ছেলেটার নাম কি?

পিউ লজ্জায় লাল-নীল হয়ে বলে, রঙ্গন।

–পুরা নাম?

— রঙ্গন আহমেদ।

শ্রাবণ মজা নিয়ে বলে, রঙ্গন আহমেদের বাবুদের নাম কি রে?

পিউ উত্তর দেওয়ার জন্য মুখ খুললেই বুঝে গেল ভাইয়া মজা নিচ্ছে। সে আবারও লজ্জা পেল। আয়না হেসে দিল।

★★★

আবেগ রোদেলাকে নিয়ে গাড়ি কিনতে গেল। বাজেটের মধ্যে দুইটা গাড়ি পছন্দ হলো। একটা সাদা আর একটা কালো। আবেগের কালোটা পছন্দ হলেও রোদেলা চাচ্ছে না কালো গাড়ি কিনতে। তার নাকি কালো গাড়িকে কালো বিড়ালের মতো লাগে। সে চায় সাদা গাড়ি কিনতে।

আবেগ বলে উঠে, কালো গাড়ি যদি কালো বেড়ালের মতো হয় তাহলে তো সাদা গাড়িও সাদা বেড়ালের মতো।

রোদেলা আবেগের দিকে হাসি-হাসি মুখ করে বলে, আমরা সাদা গাড়িই কিনব। ব্যস।

রোদেলা এমন আবদার ফেলতে পারেনি আবেগ। অতঃপর সাদা গাড়িই কেনা হয়। শৌখিন সাহেব ও এসেছেন। টাকা-পয়সা, রেজিস্ট্রেশনের সব ঝামেলা চুকিয়ে শৌখিন সাহেব বলে উঠে, আমি একজন ড্রাইভার এনেছি সঙ্গে। গাড়ি করে চলে যান। ভাই।

আবেগ বলে।,আচ্ছা।

গাড়ির পেছনের সিটে তারা দুইজন বসে পড়ে। নতুন গাড়ি সো সো করে আগাচ্ছে। রোদেলার কি যে ভালো লাগছিল তা কেবল সে জানে
বারবার চোখে জল এসে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। কিন্তু কাদা যাবে না। কাদলেই আবেগ তাকে ধমক দিবে।

হুট করে আবেগ তার ডান হাত চেপে ধরে। রোদেলা করুণ চোখে তার দিকে তাকালো। আহা মানুষটার চোখে কত মায়া!

★★★

রঙ্গন নিজের বাসায় ফিরে কেদে দিল।।আজকে বহু বছর পর সে কাদছে। আচ্ছা পিউকে ঠকানো কি তার ঠিক হচ্ছে? সে কি পিউকে ভালোবাসো? মন সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো হ্যা।

সে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগে। কিন্তু! কিন্তু পিউয়ের পরিবারের জন্য তো তার মাকে কতো অপমান সহ্য করতে হয়েছে তার কি?

রঙ্গনের মা গ্রামের সাধাসিধা মেয়ে ছিল। অল্প বয়সে বিয়ে হয়। কিন্তু গ্রামের কম শিক্ষিত মেয়ে জন্য বাবা তার মাকে প্রথম থেকেই অবহেলা করত। এরপর তার বাবার জীবনে রোদেলা নামক নারীর আগমন ঘটে। বাবা আর রোদেলার মাঝে কি ছিল তা স্পষ্ট নয় রঙ্গনের কাছে। কিন্তু এতোটুকু জানে এই মহিলার জন্য তার মাকে বাবার হাতের মার খেয়ে হত। কেন সে রোদেলার মতো শিক্ষিত না, স্মার্ট না, সুন্দর না! শহরের না এসব নিয়ে প্রায় মা-বাবার ঝগড়া হত।

রঙ্গন এতোসব বুঝত না। কিন্তু এটা ঠিকই বুঝত বাবা মায়ের সঙ্গে রোদেলার তুলনা করত। তার মা তো তুলনাতীত! বাবা যখন তাদের একা ফেলে সেই মহিলার পেছনে পেছনে থাইল্যান্ড চলে যায় তখন থেকে রোদেলাকে রঙ্গন ঘৃণা করে। প্রচুর ঘৃণা করে। তার ঘৃণার জোর এতোই যে সকল ভালোবাসা তার কাছে হার মানবে।

তার ফোন বেজে উঠল। সে ধরতেই রজব আলী বলে উঠে, স্যার টাকা তো বিকাশ করলেন না।

সে ফোস করে একটা শ্বাস নিয়ে বলে, হ্যা দিচ্ছি। বকশিশ ও দিব। তোমার এক্টিং আসলেই ফাটাফাটি।

— ধন্যবাদ স্যার।

— স্যার বলবেন না। আপনি আমার বাবার বয়সী।

★★★
সমুদ্র তার রুমে গিয়ে গেট লাগিয়ে দিল। তার মেজাজ খারাপ। আশ্চর্য তার একমাত্র বোনের বিয়ে অথচ সে কিছু ই জানত না। ছেলে ।সম্পর্কে সে কিছুই জানে না।

সমুদ্রের এক ফ্রেন্ড পুলিশ। সে তাকেই কল দিল। আজকে আর কুশন বিনিময়ের সময় নেই। তাই ডিরেক পিউয়ের কথা বলে ধানমণ্ডি থানার এসপি সম্পর্কে জানতে চায় সে।

তার ফ্রেন্ড ইনফরমেশন নিয়ে পরে জানাব বলে কল কেটে দিল।

তখনি আয়না চা হাতে নিয়ে এলো। রুমের দরজা খুলে দাড়াতেই সমুদ্র চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিয়েই চা সরিয়ে রেখে বলে ,চিনি হয়নি।

আয়না ভ্রু কুচকে বলে, দুই চামচ দিলাম তাও হয়নি।

সমুদ্র শীতল কণ্ঠে বলে, না।

আয়না বুঝল সমস্যা চিনিতে না। সমস্যা জনাবের মেজাযে। তার মেজাজ খারাপ।খিটখিটে জন্য চায়ে চিনি লাগছে না।

আয়না পেছন দিকে ঘুরে চুল ছেড়ে দিল। আজকে সারা দিনে চুল আছড়ানো হয়নি। সে যেই না চুল আছড়াতে যাবে ওম্নি সমুদ্র পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে নিয়ে হাতে হাত চেপে বলে উঠে, আমি তিন বেলা রাগ করি? বল? এটা কি ঠিক? হু?

আয়না চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে, না। সামান্য ভুল।

সমুদ্র তাকে আরো শক্ত করে ধরে বলে, জানতাম।আমার মতো শান্ত-শিষ্ট ছেলে কোন দিনই তিন বেলা রাগতে পারেনা৷

— তুমি তিন বেলা না চারবেলা রাগো!

সমুদ্রের মুখ ভোতা হয়ে যায়। সে আয়নার আরো নিকটে এসে বলে, চার বেলা যদি রাগ করে রাগ ঝাড়ি তোমার উপর তাইলে দুইমাসেই তোমার প্রান নাই হয়ে যাবে।

আয়না নিজেকে ছাড়াবার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো। সে আয়নাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়নাকে পুনরায় জড়িয়ে ধরে। আয়না চোখ বুজে ফেলে। তার গা শিরশির করছে৷

সমুদ্র বেশকিছুক্ষন সেভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে আয়নাকে সরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক হলো।

কিছুক্ষন পর, সমুদ্রের ফোনে তার ফ্রেন্ডের কল আসে। সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে, তুই কি রঙ্গনের কথা বলছিলি না?

সমুদ্র ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে।,হ্যা।

— আমি খোজ নিলাম। ও অনেক ভালো নাকি। সৎ অফিসার। মেয়েলি কোন সমস্যা বা রেকর্ড নাই। মিশুক অনেক। ব্যবহার ভালো।

সমুদ্র কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়ে বলে, ওর বাবা-মা সম্পর্কে কিছু জানিস?

— না রে। আমি তো ডিপার্টমেন্টর লোকদের মাধ্যমে খবর নিয়েছি। পরিবারের খবর জানিনা।

— একটু খোজ নিতে পারবি?

— অবশ্য ই পারব। একটু টাইম দে।

–, আচ্ছা৷

সমুদ্র ফোন রেখে বিছানায় চিটপটাং হয়ে শুয়ে আয়নাকে বলে,ওগো শুনছো?

আয়না ভারী অবাক হলো সমুদ্রের মুখে এমন কথা শুনে। সে বলে উঠে, কি?

— মাথা টিপে দাও তো আমার।

আয়ু সমুদ্রের পাশে বসলে। সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র তার কোলে মাথা রেখে ঘুমের ভান করে।

আয়না সযত্নে সমুদ্রের মাথা টিপে দিতে লাগলো। বেশ কিছু সময় যাওয়ার পর সমুদ্র কর্কষ কন্ঠে বলে, একবার চুমু খেলেও তো পারো! কিন্তু না। তুমি তা খাবে না। ভালো জিনিস তো খাবে না। পেটে সয় না তোমার ভালো খাবার। খাবে কি? ভাত! ভাত শরীরের জন্য বিষ। আমাকে কাল থেকে লাল চালের শুকনা রুটি,,,,,,,,

সমুদ্র আর কথা বলতে পারলো না। আয়না আলতো করে তার ঠোঁট সমুদ্রের ঠোঁটের সঙ্গে মিশালো। সমুদ্র একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়।

চলবে।