প্রেমের সম্মোহন পর্ব-০১ | বাংলা রোমান্টিক গল্প

0
4920

#প্রেমের_সম্মোহন💞
#পর্ব_১
#Nusrat_Jahan_Sara

গভীর রাতে বোনের রুম থেকে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে বেড়িয়ে আসতে দেখে বেশ অবাক হলো অনু৷ আরও অবাক হলো যখন দেখলো ওর বোনও অনুর বয়ফ্রেন্ডের পিছন পিছন আসছে৷সে অনুর বোন মিতার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়ে চলে গেলো৷

অনুর বয়ফ্রেন্ড চলে যাওয়ার পরই অনু এবার পিলারের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে ওর বোনের চোখাচোখি হলো৷ ওর বোন হুটহাট অনুকে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো৷

মিতাঃত,,,তুই কী করছিস এখানে এতো রাত্রে?
.
আমারও সেম কুয়েশ্চন৷আমার ঘুম আসছিলো না তাই আমি হাটাহাটি করছিলাম কিন্তু তুমি এতো রাতে কী করছো৷
.
ঔ আসলে আমার চোখেও ঘুম ছিলোনা তাই হাটঁতে বেড়িয়েছিলাম৷
.
আমি তোমার চোখে স্পষ্ট ভয় দেখতে পাচ্ছি৷ কী লুকাচ্ছো তুমি আামার কাছ থেকে৷
.
আব ক…,কই কী লুকাবো তোর কাছ থেকে৷
.
আপু আমি কিন্তু সব দেখেছি৷ কে ছিলো ওই ছেলে৷
.
মিতা কিছুক্ষণ ইতস্তত বোধ করে বললো,,,

কাউকে বলবি না তো৷
.
না বলবোনা বলো৷
.
প্রমিস৷
.
প্রমিস৷
.
আসলে ঔ ছেলেটা আমার বয়ফ্রেন্ড৷
.
কিন্তু রাতের বেলা কেনো এসেছিলো৷
.
আসলে আমাদের কয়েকদিন আগে বিয়ে হয়েছে এখন কেনো এসেছে ভালই করেই বুঝতে পারছিস৷ আর কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করিসনা৷ ছোট ছোটর মতো থাকিস৷
.
মিতা ওর রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ অনু নির্বাক হয়ে এখনো টেয় দাঁড়িয়ে আছে৷চোখে পানি টলমল করছে৷ দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো৷ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে অনু৷

“সেইজন্যই আকাশ আমাকে ইগনোর করতো৷ ও আপুকে ভালোবাসে তাহলে আমায় কেনো ব্যবহার করলো৷ না না ব্যবহার করেনি ওর বোধহয় আপুকে ভালো লেগে গিয়েছিলো৷ তাহলে ও আমাকে বলতে পারতো কেনো আমাকে অযথা মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে গেলো এতোদিন৷
কাঁধে কারও স্পর্শ পেয়ে তারাতাড়ি চোখ মুছলো অনু৷

মিতাঃবোন আমাকে মাফ করে দে৷ আমি জানি তুই কেনো কাঁদছিস৷ সত্যি তোকে তখন এইভাবে বকাটা আমার উচিৎ হয়নি৷ প্লিজ অনু আমায় মাফ করে দে৷ আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই কী থেকে কী বলে ফেলছি বুঝতে পারিনি৷ যখন বুঝতে পারলাম তখন দৌড়ে তোর কাছে চলে আসলাম৷ আমার মন বলছিলো তুই কাঁদছিস দেখ সেটাই হলো৷
.
না আপু ইট’স ওকে৷ আমারি ভুল ছিলো৷ ছোট ছোটর মতোই থাকতে হয়৷ [অভিমানী সুরে,)৷
.
স্যরি রে বোন৷ এবারের মতো মাফ করে দে৷আই প্রমিস আর কখনো তোকে বকবোনা৷
.
সামান্য বকার জন্য তুমি আমার কাছে এতোবার মাফ চাইছো কিন্তু যখন জানতে পারবে তুমি আমার সবচাইতে পছন্দের জিনিসটাই কেড়ে নিয়েছো তখন কী করবে[মনে মনে]
.
দূর বোন বকতে তো পারেই৷ তাতে স্যরি বলার কী আছে৷ আর আমার কী মনে হয় জানো তোমাদের এখন আপাতত ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করে ফেলা উচিৎ৷
.
কিন্তু বাবা মাকে ছাড়া কীভাবাে৷
.
কেনো যখন মা বাবাকে ছাড়া কোর্ট ম্যারিজ করেছিলে তখন বুঝি খেয়াল ছিলোনা৷ আচ্ছা আপু তুমি আমাকে এটা বলো যে তুমি ওর সাথে কোর্ট ম্যারিজ কেনো করলে আই মিন আনুষ্ঠানিক ভাবে করলে কী হতো৷
.
আসলে আকাশকে বলেছিলাম যে মা বাবা বিদেশ থেকে ফিরলে আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করবো কিন্তু সে বলল উনারা ফিরতে ফিরতে অনেক লেট আছে আমরা বরং আগে কোর্ট ম্যারিজ করে ফেলি পরে আনুষ্ঠানিক৷ আমি নাকি অন্য ছেলের উপর আসক্ত হয়ে পরবো আমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চায়না তাই বিয়ের জন্য জোরাজুরি করতে শুরু করে৷ আমিও ওর জেদের কাছে হার মেনে রাজী হয়ে গেলাম৷ও পাগলের মতো ভালোবাসে আমায়৷

এসব শুনে অনুর যেনো শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে৷ তবুও মুখে একটু মেকি হাসে টেনে বললো,,
.
তা কতদিন হলো রিলেশনের
.
ওইতো ছয় মাস৷
.
ও আচ্ছা৷ তা ওর বাবার বাড়িতে কে কে আছে৷(জেনেও না জানার বান করে)
.
ওর মা বাবা সবাই দেশের বাহিরে৷
.
এটা কেমন কথা সবাই দেশের বাহিরে আর ও দেশে একা৷
.
হুম লেখা পড়া আর বিজনেসের জন্য বাংলাদেশেই রয়ে গেছে৷ ও আমাকে ওর মা বাবা ভাইবোনের সাথেও কথা বলিয়েছে৷
.
হুম৷ ওকে জানিয়ে দিও কালই তোমার সাথে ওর বিয়ে৷ বিয়েতে আমার তোমার বান্ধবীরা আর ওর বন্ধু বান্ধব থাকবে৷
.
কিন্তু যখন মা বাবা জানবে৷
.
সেটা এখন ভাবছো৷ আমি ওদের ম্যানেজ করে নিবো একভাবে?

মিতা খুশি হয়ে অনুকে হাগ করে চলে গেলো৷ মিতা চলে যাওয়ার পরই অনু একফোটা চোখের জল ছেড়ে দিলো৷ খুব কষ্টে এতক্ষন চোখের জল আটকে রেখেছিলো৷ দৈনন্দিন জীবনের ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই অনু ডায়েরীতে লিখে রাখে তাই আজ যা হলো সেসবও ডায়েরীতে লিখে রাখার জন্য রুমে চলে গেলো৷অনু কাঁদছে আর লিখছে৷প্রতিটি অক্ষর সাক্ষী ওর কষ্টের৷
🍁
পরের দিন ~~~~

অনু ওর সব বান্ধবীকে রাতেই ফোন করে আসার জন্য বলে দিয়েছিলো তাই ওরা সঠিক সময়ে চলে এসেছে৷ আকাশ আর মিতার ফ্রেন্ডরাও এসেছে একেকজন একেক কাজ করছে কেউই বসে নেই৷

রাত অনেক হয়ে গেছে অনু একটা রুমের কোনায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে৷ ঘড়ির ক্রিংক্রিং শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো অনুর৷ সাথে সাথে কোনদিকে না তাকিয়ে ছোটলো ওর বোনের রুমের দিকে৷ ওর খেয়ালই ছিলোনা একটু আগে ওর বোনের বিয়ে হয়েছে৷

বাসর ঘরে ঢুকে বরের সাথে বোনকে দেখে রেগে গেলো অনু৷পরক্ষনেই যখন মনে হলো আজ ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ওর বোনের বিয়ে হয়েছে তখন দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলো৷

অনুর নিজের চোখের সামনেই আজ ভালোবাসার মানুষটার সাথেই ওর বোনের বিয়ে হয়েছে
🍁
নিস্তব্ধ রাত সবাই ঘুমিয়ে আছে শুধু ঘুম নেই অনুর চোখে৷ ব্যালকনি দিয়ে বাইরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর চোখের জল ফেলছে৷ নিজের চোখের সামনে ভালবাসার মানুষটাকে অন্যকারো হতে দেখলে কেউই নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেনা৷ আঙুলের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো অনু৷ যখন ফুল গাঁথছিলো তখন আঙুলে সুই ঢুকেছিলো৷ প্রত্যেকটা ফুল গাঁথার সাথে সাথে অনুর কষ্টগুলোও গেঁথে দিয়ে এসেছে ওদের বাসর ঘরে৷ চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে৷ অনু উঠে ছাঁদের দিকে পা্ বাড়ালো৷

“হে আল্লাহ এটা কী হওয়ারই ছিলো৷ আপুর বিয়ে অন্যকারো সাথে হলে কী হতো৷আমি যে এসব সহ্য করতে পারছিনা আমি ওতো ওকে ভালবাসতাম তাহলে আমায় কেনো ও ঠকালো৷ কেনো?

ফ্ল্যাশব্যাক🍀🍀

আকাশ অনুদের বাড়িতে এসে যখন অনুকে দেখলো তখন সে খুব অবাক হলো৷ তারাতারি মিতাকে ডেকে আনলো৷

“আচ্ছা এই মেয়েটা কে?
.
আরে হে তোমাদের তো পরিচয়ই করিয়ে দেওয়া হয়নি৷ ও আমার বোন অনিতা রহমান অনু৷ দেখোনা ওর কথাতেই তো আজ আমাদের বিয়ে হচ্ছে৷ আমার বোনটা খুব ভালো৷ ওকে নিয়ে আমি সত্যিই খুব গর্বিত৷ কীভাবে একজন সংসারী মেয়ের মতো সবকিছু গুছাচ্ছে দেখো৷

আকাশ অনুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলো৷ ও সত্যিই জানতোনা অনু মিতার বোন৷ তার মনে ভয় ঝেকে ধরেছে যদি অনু বিয়েতে কোনো গন্ডগোল করে৷ আকাশের সন্দেহ কে মিথ্যা প্রমানিত করে অনু আকাশের সাথে মজা করছে যেভাবে একজন শালি তার দুলাভাইয়ের সাথে করে৷ ভিতরে যে চাপা কষ্ট সেটা কাউকে বুঝতে দিচ্ছেনা৷

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড🍀🍀

বেশ কিছুক্ষন পর ছাঁদে কারও আসার পায়ের শব্দ শুনা যাচ্ছে অনু ফিছন ফিরে দেখলো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আরুহি এসেছে৷ আরুহিকে দেখে অনু কিছুটা অবাক হলো৷ ওর চোখে পানি টলমল করছে৷

অনুঃতুই এখানে এতো রাতে??

#চলবে,,,,,