প্রেমের সম্মোহন পর্ব-০৫ | বাংলা রোমান্টিক গল্প

0
4031

#প্রেমের_সম্মোহন💞
#পর্ব_৫
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনু কয়েকটা সেল্ফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিলো৷প্রায় দু’মিনিট পরেই ওর পোস্টে একটা কমেন্ট এলো সেই নীল প্রজাপতি আইডি থেকে৷

“তোমার এই ছবিতে আমি মোহিত৷ সকালের স্নিগ্ধ আলোতে তোমায় খুব স্নিগ্ধ, মায়াবী লাগছে মায়াবতী৷ আর তোমার হাসির তো কোনো তুলনাই হয়না৷ যাইহোক ফেসবুকে ফটো আপলোড না দিলেই ভালো হয়৷

অনু বিরক্ত হয়ে আইডিটা ব্লক করতে যেতে গিয়েও করলোনা৷ আনব্লক করেই রেখে দিলো৷
🍁
রাত হয়ে গেছে আকাশকে আজ সারাদিনে একবারও দেখা যায়নি৷ কোথায় কোন কাজ ঘটাচ্ছে আল্লাহ মালুম৷ অনু মিতার সাথে কিছুক্ষন গল্প করে নিচে চলে গেলো৷ ড্রয়িং রুমে গিয়ে টিভি অন করলো৷

অনুর ফোন বাজছে৷ চেয়ে দেখলো গ্রুপ ভিডিও কল এসেছে৷ ফোন রিসিভ করতেই চারজন চারকোনায় চলে গেলো৷ অনু,আরুহি,রিংকি কথা বলছে কিন্তু সামান্তা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে৷

আরুহিঃ কী রে সামু তুই এতো চুপচাপ আজকে?
.
অনুঃসামান্তার চুপচাপ থাকার কারন আছে৷ মনে হয়না কারনটা সামু তোদের বলবে৷যাইহোক কাল ভার্সিটিতে এসে ওর চুপচাপ থাকার কারনটা বলবো৷

ওরা চার বান্ধবী আরও কিছুক্ষণ কথা বলে কল রেখে দিলো৷
🍁
আবির সোফায় বসে বসে ল্যাপটপে কিছু করছে৷ ওর মা হাতে করে কফি নিয়ে ওর রুমে ঢুকলেন৷ আবির ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালো৷

“কী ব্যাপার মা আজ তুমি কফি আনলে যে৷
.
তো ঘরে কী বউ আছে যে বউ নিয়ে আসবে৷
.
সেরকমটা না সার্ভেন্ট নিয়ে আসতো এতোদিন আজ তুমি নিয়ে এলে যে তাই৷ কিছু বলবে কী মা?
.
একটা কথা বলার ছিলো?
.
হুম বলো৷
.
বিয়ে শাদি কবে করবে?
.
মা!!!!
.
হুম৷ আমার ওতো ইচ্ছে আমার ছেলের বউকে, নাতি পুতিকে দেখে যেতে৷ যদি মরে টরে যাই৷ হায়াতের কথা তো বলা যায়না৷ একটা মেয়েও আমার নেই৷ মেয়ে ছাড়া ঘর যেনো শুণ্য খাঁখাঁ করে৷ প্লিজ আমাকে একটা মেয়ে এনে দাও আবির৷ তুমি আমার একমাত্র সন্তান৷ তোমার বাবা থাকে নিজের বিজনেস নিয়ে আর তুমি থাকো নিজের গান নিয়ে৷ আমি কী নিয়ে থাকবো?যদি বাসায় একটা মেয়ে থাকতো তাহলে তো তার সাথে গল্প গুজব করে সময় পার করে দিতাম৷
.
মা এত বছর যখন একা থাকতে পেরেছো তাহলে আরও কয়েকটা বছর না হয় থেকে যাও প্লিজ৷
.
আরও কয়েকটা বছর মানে৷ কয় বছর মিন করছো তুমি৷
.
বেশি না দুই বা তিন বছর৷
.
যা করার করো৷ আমি আর তোমার বিয়ে নিয়ে নাক গলাবো না৷
.
আবিরের মা হনহনিয়ে রুম থেকে চলে গেলেন৷

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিলো৷ আহিলের চারটা কল দেখে তারাতারি কল ব্যাক করলো৷

কী ব্যাপার আহিল চারটা কল দিলি যে৷
.
আবির মিউজিক ডিরেক্টর শিশির আমাদেরকে যেতে বলছেন৷
.
এখন তো সন্ধ্যা সাতটা বাজে৷এখন কেনো?
.
মেবি কোনো গান নিয়ে ডিসকাস করার জন্য৷
.
আদিলদের কী খবর ওরা যাবেনা৷
.
আমি আদিল আর শ্রাবনকেও বলে দিয়েছি ওরা ক্লাবে আছে আর সেখান থেকেই আমাদের সাথে যাবে৷
.
ওকে আমি আসছি৷
🍁
অনু মিতার ডাক শুনে মিতার রুমে গিয়ে দেখলো সে বিছানায় বসে হাঁপাচ্ছে৷

“আপু কী হয়েছে তোমার? শ্বাসকষ্ট হচ্ছে নাকি আবারো?৷
.
হুম৷ আমার ইনহ্যালারও শেষ আর আকাশকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা৷ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বোন?
.
“আপু আমি তোমার জন্য ইনহ্যালার নিয়ে আসছি প্লিজ একটু ধৈর্য্য ধরো৷
.
অনু টাকা নিয়ে রাতের বেলায়ই বেড়িয়ে গেলো৷ আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে৷এখান থেকে তো অনেক দূরে ফার্মেসি সেখানে যেতে যেতে অনেক সময় লেগে যাবে৷ গাড়িও নেই৷ তাই অনু পায়ে হাঁটা শুরু করলো৷
.
ঝিরিঝিরি করে বৃষ্টি পরছে

“ইশ কেনো যে ছাতা নিয়ে এলাম না৷ মনেই ছিলো না যে এখন বর্ষাকাল৷ যখন তখন বৃষ্টি হতে পারে৷

বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেলো৷ বাতাসে অনুর জামা উরছে৷ অনু পায়জামা আর কামিজ একসাথে মুঠো করে দৌড়াতে লাগলো৷

আবিররা এদিক থেকেই আসছিলো একটা মেয়েকে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়াতে দেখে কিছুটা অবাক হলো৷অনুর সামনে এসে তারাতাড়ি গাড়ি থামালো৷ তীব্র আলো চোখে পরতেই অনু হাত দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে ফেললো৷ ভিজে তার শরীর একাকার৷

আবির, শ্রাবন,আদিল,আহিল ওরা সবাই ছাতা হাতে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো৷ অনুর পাশে কারও উপস্থিতি টের পেয়ে সে চোখ থেকে হাত সরালো৷ ওর সামনেই চারটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে৷ ছাতা দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে৷ অনুর ওদের দেখে খুব ভয় করছে৷

আবিরঃএই মেয়ে এতো রাতে এই বৃষ্টির মধ্যে তুমি ছাতা ছাড়া মাঝ রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছেন কেনো?
.
অনুর কন্ঠটা যেন কেমন চেনা চেনা লাগছে৷তবুও কিছু না বলে এগুতে নিতেই আবির সামনে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো৷

আবিরঃকী হলো বলছেন না কেনো৷?

অনু ইতস্তত বোধ করে বললো,,

অনুঃআসলে আমার বোনের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তাই তার জন্য ইনহ্যালার আনতে যাচ্ছি৷

আবিরঃআপনি ছাড়া কী আপনার বাসায় আর কেউ নেই৷
.
“আছে আমার আপু৷
.
আবিরঃআর আপনার মা বাবা?
.
উনারা দেশের বাহিরে থাকেন৷
.
আচ্ছা আমি যাচ্ছি৷ আমার আপুর বেশি কষ্ট হচ্ছে হয়তো৷
.
আবিরঃওয়েট ছাতাটা নিয়ে যান৷

অনু যেতে গিয়েও থেমে গেলো৷ ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,,,

“তার দরকার নেই৷ আমি এমনিতেই ভিজে গেছি৷

আবিরঃতারপরও ছাতাটা নিয়ে যান৷ নাহলে জ্বর আসবে৷
.
আবিরের জোরাজুরিতে অনু ছাতাটা নিয়ে নিলো৷ আবির ছাতাটা দিয়েই মুখ ঘুড়িয়ে নিলো তাই অনু ওর মুখ দেখতে পায়নি৷ ওরা সবাই আস্তে আস্তে গাড়িতে উঠে চলে গেলো৷
🍁
অনু ইনহ্যালার এনে বাসায় এসে দেখলো ওর আপু শুয়ে আছে আর মাঝেমধ্যে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে৷ অনু তারাতাড়ি মিতাকে টেনে তুললো,,,

“আপু ইনহ্যালারটা দাও৷
.
মিতা ইনহ্যালার দিয়ে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিলো৷ অনুর দিখে তাকিয়ে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বললো,,,,

“তোর জামা কাপড় বেজা কেনো৷ ছাতা নিয়ে যাসনি৷
.
না আপু আমি যখন বেড়িয়ে গেছিলাম তখন বৃষ্টি ছিলোনা৷প্রথমে ঝিরিঝিরি করে বৃষ্টি পরেছে পরে মুষলধারে৷ আচ্ছা তুমি শুয়ে থাকো আমি চেঞ্জ করে আসি৷
🍁
আবিররা সবাই মিউজিক ডিরেক্টর শিশিরের বাড়ির ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে৷

আবিরঃআমাদের ডাকছিলেন কেনো?
.
শিশিরঃএকচুয়েলি ভার্সিটিতে যে কাল একটা অনুষ্টান আছে সেটাতে যাওয়ার জন্য আপনাকে ইনভাইট করা হয়েছে৷ আপনাকে উনারা পাননি বলে আমাাকে জানিয়েছেন৷ এটা আমি ফোনেও বলতে পারতাম বাট একটা গানের অফার এসেছে সেইজন্য আরও আপনাদের ডেকে এনেছি৷কোন মিউজিক কমপোজারের মিউজিক আপনার ভালো লাগে সেইটা আপনি ঠিক করবেন৷গান গাওয়া ইজি বাট গান গাওয়ার আগে যে প্রস্তুতি নিতে হয় সেইগুলো অনেক হার্ড৷ তাই আপনি যদি অফারটা রাখেন তাহলে আমরা আজ থেকেই সব প্রিপারেশন নিয়ে নিতে পারি৷

আবিরঃআমি আপনার কথা বুঝতে পারছি বাট আজ প্রিপারেশন নেওয়ার মুড নেই পরশু থেকে বরং স্টার্ট করি৷
.
শিশিরঃআপনার যা ইচ্ছা৷
.
আবিরঃআর ওদের বলে দিন আমি ওদের ইনভাইট একসেপ্ট করেছি৷
🍁
অনু ছাতা হাতে ব্যলাকনিতে বসে আছে৷আর ভাবছে ছাতার মালিক কে হতে পারে৷মুখটাও স্পষ্ট দেখতে পারেনি৷ তবে কিছুটা আবিরের মতো লেগেছে৷ না না আবির কী করে হবে৷ এসব ভাবনা অনুর মাথায় ঘুরছে আর সে ঝেরে ফেলার চেষ্টা করছে৷

মেসেজ টুনের আওয়াজে ঘুর কাটলো অনুর৷ চেয়ে দেখলো সেই নীল প্রজাপতি৷

“ছাতা হাতে নিয়ে করছো?
.
আশ্চর্য আপনি কী করে জানলেন আমার হাতে ছাতা৷
.
যখনি এমন প্রশ্ন মনে জাগবে তখুনি নিচে তাকাবে উত্তর এমনি এমনিই পেয়ে যাবেন৷ তাহলে আরকি নিচে তাকিয়ে দেখো একবার৷ আমি কিন্তু তোমায় স্পষ্ট দেখতে পারছি৷

অনু তারাতাড়ি নিচে তাকালো একটা ছেলে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে কিচ্ছু দেখা না গেলেও দূরের ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোতে এটা দেখা যাচ্ছে যে কেউ দাঁড়িয়ে৷ ৷

“কে আপনি? আর প্রতিদিন আমার বাসার পাশে এসে কেনো দাঁড়িয়ে থাকেন?
.
সেটা নাহয় অজানা থাক৷ কোন একদিন আমাকে দেখতে পারবে৷ প্রতিদিন তোমার বাসার পাশে আসি তোমাকে দেখার জন্যে৷ তোমাকে না দেখলে আমার ঘুম আসেনা আর আমি জানি তুমি রাত্রে প্রতিদিন ব্যালকনিতে আসো৷ আমি অন্ধকার নামার পর থেকেই তোমার জন্য ওয়েট করি তুমি কখন আসবে আর কখন তোমাকে দেখবো৷ আজ তুমি তারাতাড়িই চলে এসেছো তাই আমিও আজ তারাতাড়ি চলে যাবো৷ ট্রাস্ট মি তুমি ব্যালকনিতে না আসা পর্যন্ত আমি তোমার জন্য এভাবেই মশার কামড় খেয়ে ওয়েট করি৷
.
তারমানে আমি যেদিন ১টা ২টায় ব্যালকনিতে আসি তখনও আপনি অপেক্ষা করেন৷
.
যেদিন আসোনা সেদিন তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে করতে চলে যাই৷ আর যেদিন চলে আসো সেদিন তোমাকে দেখে আমিও চলে যাই৷
.
কতোদিন যাবৎ আসছেন৷
.
দুইমাস৷
.
ওয়াট৷
.
হুম৷ দুইমাস ধরে আমি আমার ঘুম হারাম করে তোমাকে দেখতে আসি৷ কিন্তু তুমি টেরও পাওনি৷
.
তাহলে দুইদিন ধরে কেনো মেসেজ করছেন আগে করেননি কেনো৷
.
দুইদিন হলো তোমার আইডির নাম জেনেছি তোমরা মেয়েরা তো আবার অরিজিনাল নাম নিয়ে আইডি চালাও না৷
.
হু৷
.
তা ছাতা নিয়ে কী বৃষ্টিতে ভেজার প্ল্যান করছো৷
.
না আজ ভিজবো না৷ যাইহোক আপনি কেনো প্রতিদিন আমাকে দেখার জন্য আসেন সেইটাতো বললেন না৷
.
ওয়েট৷

কিছুক্ষন পর অনুর পায়ের কাছে কিছু একটা এসে পরলো৷ অনু হাতে নিয়ে দেখলো কাগজ দিয়ে মুড়ানো একটা আম৷ কাগজে কিছু লিখা অনু কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করলো৷

“আমি জানি তোমার মনে এই প্রশ্নটা একদিন জাগতে পারে যে চেনা নেই জানা নেই আমি কেনো তোমাকে প্রতিদিন দেখতে আসি৷ তাই আমি আগে থেকেই এই কাগজে তোমাকে দেখতে আসার প্রধান কারন লিখে রেখেছিলাম৷ বেশি কিছু জানার দরকার নেই শুধু এটাই জেনে রাখো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি৷আর এই জন্যই তোমাকে দেখতে আসি৷ জানিনা কখনো তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে পারবো কি না৷তাই লুকিয়ে লুকিয়েই এসে দেখে যাই৷

অনুর ফোনে আবারও মেসেজ এলো,,,,,,

“যে কারনে এসেছিলাম সেটা হয়ে গেছে৷ তোমাকে দেখা আমার হয়ে গেছে এখন আমি গেলাম৷গুডা নাইট জানেমন৷

#চলবে…….