প্রেমের সম্মোহন পর্ব-০৪ | বাংলা ভালোবাসার গল্প

0
3739

#প্রেমের_সম্মোহন💞
#পর্ব_৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

ঘুমের মধ্যেই অনু টের পাচ্ছে ওকে কেউ খুব গভীর ভাবে দেখছে আর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে৷ নিজের সন্দেহ দূর করার জন্য তারাতারি চোখ খুললো অনু৷লাইট অন করে চারিদিকে চোখ বুলালো৷

“নাহ কেউ তো নেই এখানে হয়তো মনে ভয় পুষে ঘুমানোর জন্যই এমনটা হয়েছে৷ঘুমিয়েও শান্তি পাইনি৷

অনু খাটে শুয়ে আরও কতক্ষণ এপাশওপাশ করলো তবুও তার চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছেনা৷ খাটের কোনায় মাথা রেখে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো৷

“যদি আজ সত্যি সত্যি আমার টের পাওয়াটা সত্যি হয়ে যেতো৷ আকাশ যদি এখানে চলে আসতো তখন তাহলে কী করতাম আমি?

অনুর মনে এখন যেনো ভয় আরও ঝেকে বসেছে৷
সে খাট থেকে নেমে পানি খাওয়ার জন্য জগে হাত দিলো৷ না জগ তো খালি৷ এখন পানি আনার জন্য যদি নিচে যাই আর আকাশ চলে আসে তখন কী করবো৷ না না রিস্ক নেওয়ার দরকার নেই৷

অনু গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনিতে গেলো
বর্ষাকালে যেন বৃষ্টি হওয়াটাই প্রকৃতির প্রধান কাজ৷ এর জন্যই তো বৃষ্টির সিজন বর্ষাকাল৷ মাঝে মধ্যে আকাশে গর্জন দিচ্ছে বজ্রপাত হচ্ছে৷একটু আগে শুধু বৃষ্টি থেমেছে হয়তো আবারও বৃষ্টি হবে প্রকৃতি সেটারই জানান দিচ্ছে৷ কদম ফুলের সুবাস চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে৷ ঝিঁঝি পোকার ডাকও শুনা যাচ্ছে গাছের পাতা হেলেদুলে নড়ছে বাতাসে সাথে অনুর খোলা চুলও উড়ছে৷ বৃষ্টি হওয়ার পরের দৃশ্য খুব ভালো লাগে৷ যেনো এক স্নিগ্ধ সুবাস ছড়িয়ে পড়ে পুরো পরিবেশে৷আর সাথে সেই মিষ্টি হাওয়া৷ কয়েকটা গাছ থেকে আম পরার শব্দও কানে আসছে৷ এখন কাঁচা আমের সময়৷ কাল সকালে গিয়ে আমগুলো কুড়িয়ে আনবে৷

হঠাৎ একটা ধমকা বাতাস দিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো৷ অনু তারাতাড়ি বাইরে দিয়ে দু’হাত এক করে রাখলো তাতে পানি পরে হাতে আটকে যাচ্ছে৷ অনু হাত দিয়ে এনে বৃষ্টির পানি খেলো৷

“একেবারে ফ্রেশ পানি ছিলো এটা৷মনটাও যেমন কেমন ফ্রেশ হয়ে গেছে৷ প্রকৃতি যেমন পরিশুদ্ধ তেমন প্রকৃতির উপাদানও পরিশুদ্ধ৷

অনু ওর রুম থেকে জগ নিয়ে এলো৷ তাতে বৃষ্টির পানি দিয়ে ভরে রাখবে৷ বৃষ্টির পানির চা দেখতে যেমন ভালো লাগে তেমনি খেতেও আলাদা একটা স্বাদ লাগে পাশাপাশি ঘ্রান তো আছেই৷

অনু জগটাকে এমন জায়গায় রাখলো যেখান থেকে ছাঁদের কার্নিশ বেয়ে বৃষ্টির পানি বেশি করে পরছে৷

জগ রেখে আবারো মন দিলো প্রকৃতি দেখায়৷ এই মুহুর্তে যেনো আকাশের কথা একেবারে মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে৷ মানুষ ঠিকি বলে সব কিছু যদি কারও সাথে শেয়ার করা না যায় তাহলে সেটা মন খুলে একমাত্র প্রকৃতির সাথেই শেয়ার করা যায়৷ মানুষ মনে তৃপ্তি না দিতে পারলেও প্রকৃতি পারে৷
অনু মনোযোগ দিয়ে প্রকৃতি দেখছে আর নিচ থেকে আরেকজন ওকে মন দিয়ে দেখছে৷

মেসেজ টুনের আওয়াজ কানে আসতেই অনুর কপালে বিরক্তির বাজ ফুটে উঠলো৷ কে মেসেজ দিতে পারে এই মুহুর্তে৷ হাতে ফোন থাকায় সহজেই মেসেঞ্জারে ঢুকে মেসেজ চেক করলো৷

মেসেজ এসেছে”হাই৷
অনু অনিচ্ছা সত্ত্বেও হ্যালো লিখে সেন্ড করলো৷কারন সে সিন করে ফেলেছে৷

রিপ্লাই আসলো,,

“আমি নীল প্রজাপতি৷
.
তো আমি কী করবো৷ আপনি যদি নীল প্রজাপতি হয়ে থাকেন তাহলে গিয়ে লাল প্রজাপতির সন্ধান করেন৷ আমাকে কেনো মেসেজ দিয়েছেন৷
.
আমার জানা মতে আমি ঠিক জায়গাতেই মেসেজ দিয়েছি৷
.
মানে৷
.
মানে সিম্পল তুমি আমার লাল প্রজাপতি৷ আর আমি আমার প্রজাপতির সন্ধান পেয়ে গেছি৷ তুমি কী জানো মায়াবতী তোমাকে এই মুহুর্তে কতোটা স্নিগ্ধ আর নিষ্পাপ লাগছে৷ যদিও আমার চোখে তুমি সবসময়ই স্নিগ্ধ নিষ্পাপ৷ আমার খুব শখ ছিলো বৃষ্টি ভেজা এক গুচ্ছ কদম ফুল তোমার হাতে তুলে দিতে কিন্তু কী করবো বলো আমি তো আর গাছে উঠতে পারিনা৷ যদি পারতাম তাহলে এভারেস্টের সমান উঁচু গাছ থেকে হলেও তোমার জন্য কদম নিয়ে আসতাম৷ বাতাসে তোমার চুল উড়ছে আর তোমার মুখে আছড়ে পড়ছে তুমি বিরক্ত হয়ে বার বার কানের পিঠে চুল গুজছো আর চুল বাতাসে বার বার এলোমেলো করে দিচ্ছে৷ আমি যদি তোমার পাশে এইমুহুর্তে থাকতাম তাহলে তোমার চুলে ধরে রাখতাম আর তুমি পরিবেশ,প্রকৃতি দেখতে৷ কিন্তু আমি চাইলেই তোমার চুলে ধরে রাখতে পারবোনা আমি নিরুপায়৷চুল ধরতে গেলেও অধিকার লাগে আমার সেই অধিকার নেই৷ তবে খুব তারাতাড়িই সেই অধিকারটা করে নিবো আর টেনশন করোনা কোন একদিন ঠিকই ধরবো৷ তোমার মনে প্রশ্নে জাগছে যে কে আমি আর তোমাকেই বা কী করে দেখছি তাহলে নিচে তাকিয়ে দেখো একবার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে৷

অনু এতো বড় আর গুছালো মেসেজ দেখে বেহুশ৷ তবুও দেড়ি না করে তারাতাড়ি নিচে তাকালো৷ কিছুটা দূরে একটা শিমুল গাছের নিচেই একটা ছেলে বসে আছে গায়ে তার রেইন কোট৷ মুখটাও টুপি দিয়ে ঢেকে রেখেছে তাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা৷ অনুর ফোনে আবারও মেসেজ এলো৷

“কী দেখছো এতো করে৷ বেশি দেখোনা নজর লেগে যাবে৷
.
অনুও উত্তরে কিছু লিখতে যাবে তার আগেই ওর পায়ের কাছে কিছু একটা এসে পড়লো৷ হাতে নিয়ে দেখলো শিমুল ফুলের ফল৷

“কদম তো দিতে পারবোনা আর শিমুল ফুলও না৷ সব ঝরে গেছে তাই তোমায় শিমুলের ফল দিলাম৷ এটাকে আবার সাধারন ভেবে ফেলে দিয়োনা মনে রেখো ঝিনুকের পেটেই কিন্তু মুক্তো থাকে অথচ এটাকে দেখলে কতো সাধারনই মনে হয়৷ যাইহোক আমি গেলাম আর অনেকরাত হয়েছে তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো৷ নাহলে বাতাসে আবার জ্বর এসে যাবে৷

অনু ব্যালকনি থেকে এসে পর্দা টেনে দিলো৷ হাতে শিমুলের ফল ঠিকই আছে৷ অনু খুব যত্নসহকারে ফলে যে চারটা ফালি আছে, সেই ফালি একটা একটা করে ভাঙতে লাগলো৷ ভেতরে এক গুচ্ছ তুলা৷ কী সুন্দর লাগছে একেবারে ফ্রেশ সাদা৷ মনে হচ্ছে যেনো একটুকরো মেঘ৷ অনু একটু তুলা হাতে নিলো৷ ফ্রেশ তুলা দিয়ে সে গ্লিসারিন লাগাবে৷

গ্লিসারিন তুলাতে ঢালতেই তুলা একেবারে গলে গেলো আর গরমও হয়ে গেলো [আমি এমন করসিলাম একদিন তাই জানি😜]

“যাক ভাভা এটা কী হলো৷ এটার চাইতে তো আমার হাতই বেটার৷৷

বেশ কিছুক্ষন পর আবারও অনুর ফোনে মেসেজ এলো

“কী তুলা নিয়ে দুষ্টুমি করছো তাইতো৷
.
আশ্চর্য আপনি কী করে জানলেন৷
.
আমি জানি ওই একভাবে৷আচ্ছা তুমি এখনো ঘুমাওনি?৷
.
আপনি যদি একটু পর পর এভাবে মেসেজ দিয়ে জ্বালান তাহলে ঘুমাবো কী করে৷?
.
স্যরি স্যরি৷ আমি আর এখন মেসেজ দিচ্ছিনা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো৷
.
অনু ডাটা অফ করে দিলো৷ কোথায় থেকে যে আসে এসব চেনা নেই জানা নেই কেয়ার করতে শুরু করে দেয়৷ আর এসব কী মেসেজ আর রিকুয়েষ্ট আসে রে ভাভা,উরন্ত কাকের ঝুলন্ত লেজ,শ্যাওরা গাছের পেত্নি,শাঁকচুন্নি,লম্বা লেজের বাঁদর,ডানা কাটা পরী৷ নীল প্রজাপতি, লাল প্রজাপতি৷ যদিও নীল প্রজাপতি নামটা মন্দ না৷
আর ছেলেটাকে দেখতে খুব ভালোই লাগছিলো ইশ ভালো করে যদি মুখটা দেখতে পারতাম৷ধ্যাত কী ভাবছি আমি৷ এদের সাথে সাথে আমিও পাগল হয়ে গেছি৷
.
অনু ওর ফোন বেড় করে আবিরের একটা ফটো বেড় করলো৷
.
“জাতির ক্রাশ আবির রায়হান চৌধুরী৷ ইশ সামনাসামনি তো শুধু মাত্র একবার দেখতে পেলাম,আরেকবার যদি দেখতে পারতাম৷ তাহলে বোধহয় জীবনটা সার্থক হতো৷ কতো মেয়ে উনাকে মন দিয়ে বসে আছে উনি কী আদৌ কাউকে মন দিয়েছেন?নাকি দেননি? সেলেব্রিটি মানুষ গার্লফ্রেন্ডের তো নিশ্চয় অভাব নেই৷
🍁
কড়া রোদ এসে পরছে অনুর উপর৷ চোখ মুখ কুঁচকে ঘুম থেকে উঠলো সে৷ ব্যালকনির পর্দা টেনে দেয়নি তাই রোদ এসে সোজা চোখে মুখে পরছে৷ আড়মোড়া ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো নয়টা বাজে৷ কাল লেট করে ঘুমানোর জন্য আজ লেট করে উঠেছে৷
ফ্রেশ হয়ে হাতে জগ নিয়ে কিচেনে গেলো৷ মিতা আগেই সব নাস্তা বানিয়ে রেখে দিয়েছে৷ অনু একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে চুলায় পাতিল বসালো তাতে কালকের বৃষ্টির পানি ঢাললো চা বানাবে৷

চা হওয়ার পর অনু মিতাকে এক কাপ আর নিজের জম্য এক কাপ নিলো৷ আকাশ বাসায় নেই৷ সে চা নিয়ে সোজা ছাঁদে গেলো৷ ধোঁয়া উঠা চায়ের সাথে পরিবেশ দেখবে৷ চারিদিক দেখে মনে হচ্ছেনা রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে৷সব শুকিয়ে গেছে৷ ছাঁদের অনেক জায়গাতে পানি আটকে আটকে আছে৷ অনু চা শেষ করে রেলিঙের উপর কাপ রাখলো৷ আকাশের দিকে রোদের জন্য তাকানোই যাচ্ছেনা৷ পূর্ব দিকে কী যেমন রং বেরঙের মতো লাগছে৷ অনু ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ওটাতো রেইনবো,রংধনু৷ ওয়াও কতো সুন্দর রংধনু জীবনের প্রথম দেখলাম৷ বইয়ে পেয়েছিলাম বৃষ্টির পরে রোদ উঠলেই রংধনু দেখা যায়৷ এরপর থেকে সব সময় রংধনু দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম কিন্তু আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রংধনু কখনো আমায় দেখা দেয়নি তবে আজ দিয়েছে৷ রংধনুর সাতটি রঙের মতো যদি আমার জীবনটাও রঙীন হতো তাহলে কতোই না ভালো হতো৷ অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনের ক্যামেরা অন করলো৷ রংধনুর ছবি তুলবে সে৷কয়েকটা ছবি তুলতেই অনুর ফোনে একটা নোটিফিকেশনে এলো৷সামান্তা ফটো সেন্ড করেছে৷ফটোতে আবিরের সাথে একটা মেয়ে৷ মেয়েটাকে তো চেনা চেনা লাগছে ও হ্যাঁ এটাতো মডেল নীলা৷ যেরকম পোজের ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড৷ যাইহোক তাতে আমার বাপের কী৷ এই সামুর বাচ্চা কী আমাকে জ্বালানোর আর অন্য কোনো ওয়ে পায়না নাকি৷ আমি কতবার বলেছি যে আমি জাস্ট ওকে লাইক করি৷ আর কিচ্ছুনা৷ অনুও একটা ফটো সেন্ড করলো যেটাতে আদনানের সাথে একটা মেয়ে৷

“এবার দেখ কেমন লাগে হুহ!!!”

#চলবে,,,,,