প্রেম আমার পর্ব-৫+৬+৭

0
9217

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০৫♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍁
.
– এই মেয়ে প্রবলেম কি তোমার? সবসময় আমার সামনে এসেই কেন তোমার পড়তে হয়? ভার্সিটিতে ঢুকতে না ঢুকতেই হাজির! ডিজগাস্টিং! 😠
.
এবার আমার রাগ উঠা শুরু করলো। ভাবলাম ছোট্ট করে একটা সরি বলে চলে যাবো। কিন্তু না উনি তো এলিয়েন, মানুষ না। আমি তা ভুলেই গেছিলাম। কি ভাবেনটা কি উনি নিজেকে? আমি কি ইচ্ছে করে উনার বাইকের সামনে মরতে আসসি নাকি? উনার কি মিনিমাম সেন্স টুকুও নেই নাকি? দেখছে আমি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাচ্ছি আর উনি বকা দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন? আশ্চর্য তো!
এসব ভেবে রেগে মেগই জবাব দিলাম,
.
– আপনার প্রবলেম কি হ্যা? আমি যেখানেই যাই সেখানেই একদম টুপ করে আকাশ থেকে পড়ে হাজির হয়ে যান? এই দিকে তো আপনাকে কখনো দেখিনি। মানুষজন কম তাই এদিক টায় আসলাম। কিন্তু কপাল আমার! এখানেও শান্তি নেই। আর আপনার কি কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই? কেউ কি নিজে থেকে মরতে বাইকের সাথে ধাক্কা খায়? হুট করে কই থেকে টপকে পড়লেন! উফফফ! দেখুন কি জ্বালা করছে। এহ্যাএহ্যা! (কান্নার ভান করে)
.
– ইউ স্টুপিড! সাহস কি করে হয় তোমার আমার সাথে এভাবে উঁচু গলায় কথা বলার? (চেঁচিয়ে)
তুমি চোট পাইছো তাই কিছু বললাম না, বাট এই লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি ফার্রদার আমাকে বিরক্ত করবা না। নাহলে ব্যাপারটা মোটেও ভালো হবেনা। নাও লিভ! ( শান্ত গলায়)
.
উনার শান্ত গলার ধমকটা কেমন যেন কাসুন্দি ছাড়া পেয়ারা মাখার মতো লাগলো আমার। কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। কারণ নিজের ভালো পাগলেও বোঝে, সেখানে আমি তো সুস্থ মস্তিষ্কের একজন মানুষ।
.
আমি উঠার চেষ্টা করছি কিন্তু পায়ের ব্যথায় উঠতেও পারছিনা। নীবিড় ভাইয়া কার যেন ফোন পেয়ে বাইক ওখানেই স্টান্ড করে রেখে সাইডে যেয়ে কথা বলতে লাগলেন।
এদিকে আমার নাজেহাল অবস্থা! রাত্রি বারকয়েক আমাকে উঠানোর জন্য টানাটানা, হেচড়া হেচড়ি, ঠেলাঠেলি পর্যন্ত সব চেষ্টা চালানোর পর হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো,
.
– এই অনন্যা! তোকে এতো ভারী লাগছে কেনো বলতো? উফফ জান টা বের হয়ে গেল তাও উঠাইতে পারলাম না।
.
– তা পারবি কেমনে? তোর শক্তির শ টাও আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়। আর তুই আমাকে আর যাই হোক ভারী, মোটাচোটা বলতে পারিস না, এমন জিরো ফিগারের মেয়েকে ভারী বলছিস তুই? আমার লম্বা হিসেবে ৫০ কেজি ওজন অনেক কম। BMI বের করছিলাম, রেসাল্টে আমাকে রোগা বলা হইছে! বেশি বেশি পুষ্টি সম্পন্ন খাবার খাইতে বলছে। আজকাল এতো সুন্দর ফিগার ওয়ালা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির মেয়ে পাবি কোথায়?
.
– অনন্যা…..! (চেঁচিয়ে) তুই এতো কথা বলিস কেন? টকেটিভ কথাকার! এটলিস্ট এরকম একটা পরিস্থিতিতে একটু চুপ থাক। আমি দেখছি কি করা যায়!
.
আমাদের কথোপকথন এর মধ্যেই নীবিড় ভাইয়া ফোনের লাইন কেটে বাইকের কাছে আসেন।
.
– এই তুমি এখনো উঠো নি কেন এখান থেকে? (চেঁচিয়ে)
.
আমি অসহায় মুখ করে উনার দিকে চেয়ে রইলাম। আর রাত্রি উনাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
– ভাইয়া! ওর পায়ে খুব লেগেছে। অনেক চেষ্টা করেও উঠাতে পারিনি। (মাথা নিচু করে)
.
নীবিড় ভাইয়া কিচ্ছুক্ষণ চুপ করে থেকে কিছু একটা ভেবে আমার দিকে ঝুঁকতে লাগলেন!
হয়তো হাত বাড়িয়ে উঠানোর জন্য। আরে আরে করে কি এই মিয়া? রাত্রি এতো টানাটানি করেও উঠাতে পারলোনা আর উনি হাত দিয়ে উঠাবেন? নিশ্চয় এটার মাথার কয়েকটা তাড় ছিঁড়া আছে!
আমি এসব ভেবে ঠোট উল্টিয়ে ভ্রু কুঁচকে রাত্রির দিকে তাকালাম ও কাধ দুটো উঁচু করে হাতের পিঠ উল্টিয়ে বুঝালো ও নিজেও কিছু বুঝতে পারছেনা।
.
উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে এক হাত কোমড়ে আর একহাত হাটুর উলটো পিঠে দিয়ে এক ঝাটকায় আমাকে শুণ্যে তুলে নিলেন। ব্যাপারটা এতো দ্রুত হলো যে আমি পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। মাথাটা হুট করেই হ্যাং হয়ে গেল। খানিক বাদে বুঝলাম আমি উনার কোলে! উনি সামনের দিকে তাকিয়ে বড়বড় পা ফেলে আমাকে কোলে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন! রাত্রি আমাদের পেছন পেছিন চুপচাপ হেটে আসছে খানিকটা ডিস্টান্স বজায় রেখে।
.
কিছুদূর যেতেই আমি উনার হাত খাঁমচে ধরলাম। উনি হাটা থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। আমি ভয়ে ঘামতে শুরু করে দিয়েছি। হাতের ইশারায় উনাকে সামনে তাকাতে বললাম। উনিও আমার দেখানো আঙুল বরাবর সামনে তাকালেন। উনি বিরক্ত হয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
.
– সামান্য একটা ডগি দেখে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে! চুপ থাকো কিচ্ছু হবেনা।
.
কিন্তু উনার এই আশ্বাসটা আমার ততোটা পছন্দ হলো না। এমনিতেই ক্লাস ফাইভে থাকতে ২ টা কুকুরের তাড়া খেয়েছি আমি। একটা সামনে থেকে এট্যাক করেছিল আর একটা পেছন থেকে। আমার বাম পাশে আমাদের বাসা আর ডান পাশে ছিল বাগান। কুকুরগুলো আমাকে বাসায় ঢুকতেও দিচ্ছিলোনা। কি সেই দৌড়াদৌড়ি! আজীবনেও ভুলবোনা। তারপর পুরো এক বছরেও আমার কাঁপাকাঁপি বন্ধ হয়নি। হাতে শক্তি পাইতাম না। লিখতে গেলেও হাত কাঁপতো! উফফফ!(এটা কিন্তু আমার জীবনের বাস্তব ঘটনা 😰)
.
ভয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইলাম। উনি আবার হাটতে উদ্দ্যত হওয়া মাত্রই কুকুরটা বিকট এক আওয়াজে চিল্লিয়ে উঠলো,
.
– ভাউউউউউউউউউ!
.
না না আমি পারবো না। কোথায় পায়ের ব্যথা আর কোথায় কি? এক লাফ মেরে উনার কোল থেকে নেমেই আম্মুউউউউউ বাচাও কুত্তা….! বলে চেঁচাতে চেঁচাতে উলটো দিকে দৌড় লাগালাম। নীবিড় ভাইয়া রেগে মেগে বলছেন, ” আরে এই মেয়ে দৌড়িও না কুকুর তাড়া করবে।”
.
উনার কথাটা বলতে দেরী হলেও কুকুরটার উনার দিকে তেড়ে আসতে দেড়ি হয়নি। যাইহোক কুকুরটা ভদ্র ঠিক বুঝতে পেরেছে যে আমাকে নয় ওই সাদা বিলাইকেই তাড়া করতে হবে। এমনিতেই কুকুক আর বেড়াল জাত শত্রু!
নীবিড় ভাইয়া মহা বিপদে পরে গেলেন যেন। উনি না পারছেন দৌড়াতে আর না পারছেন সেখানেই ঠায় দাঁড়ায় থাকতে! শেষে কুকুরটা একদম উনার কাছাকাছি চলে আসায় জীবন বাজি রেখে দৌড় লাগালেন। কুকুরের কামড় কেই বা খেতে চায়। একে তো কামড় দিবে তারওপর ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ঘুতা খাইতে হবে, আই মিন ইঞ্জেকশন!
.
🍂
.
সাদা বিলাইয়ের পেছনে কুকুর দৌড়োচ্ছে থুক্কু নীবিড় ভাইয়ার পেছনে কুকুর দৌড়োচ্ছে আর নিবীড় ভাইয়া অলিম্পিকে রেস লাগানোর প্রিপারেশন নিচ্ছেন। আমি দৌড়ে একটা সেইফ জায়গা দেখে লুকিয়ে পরি। ওদিকে রাত্রিকেও দেখা যাচ্ছেনা। বুঝতে বাকি নেই ও নিজেও ভাগছে। ইশশ! পা টা ভীষণ ব্যাথা করতেছে। এই খোড়া পা নিয়ে দৌড়ানোটা ঠিক হয়নি মোটেই।
.
ভার্সিটির সবাই ভবন থেকে মাঠের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে যেন শুটিং চলছে। একেক জন একটু পর পর বলে উঠছে,
.
– এই নীবিড়ের পেছনে আজকে মেয়ের বদলে কুকুর লেগেছে। হায় হায়!
– আল্লাহ! এটা কি হলো? নীবিড় দৌড়িয়ে এদিকে আসো (চেঁচিয়ে)
– নাহ! আমার ক্রাশের একি অবস্থা হায় রে!
.
এরকম নানা মন্তব্য করে যাচ্ছে সবাই। যেহেতু সবার ক্লাস টাইম তাই মাঠে তেমন কেউ নেই। অগ্নি গাছের নিচে বসে ফোনে গেমস খেলছিলো হঠাৎ ও কারো কথা শুনতে পায় যে নীবিড়কে কুকুর তাড়া করছে।
.
অগ্নি ফোন রেখে ছুট লাগায় মাঠের দিকে। যেয়ে দেখে নীবিড়ের তেরটা বেজে গেছে। বেচারা হাপায় গেছে। কুকুরটাও হার মানবার মানুষিকতা, না না মানুষ হলে না মানুষিকতা থাকবে? আই মিন কুকুষিকতা নিয়ে মাঠে নামে নি। ভাউউউ ভাউউউ করতে করতে ছুটছে নিবীড়ের পেছনে। অগ্নি এইরকম পরিস্থিতি দেখে কি করবে ভেবে না পেয়ে পায়ের কাছে কিছু ইটের টুকরো দেখতে পেল। সেগুলো হাতে নিয়ে কুকুরটির দিকে ছুড়লো। উদ্দেশ্য কুকুরটিকে মারা নয়, তাকে ভয় দেখিয়ে পিছু ছাড়ানো।
.
বেশ কয়েকটা ঢিল ছুড়ার পর কুকুটিকে তাড়াতে সক্ষম হয় অগ্নি। নীবিড় পেছিনে তাকিয়ে কুকুরটিকে দেখতে না পেয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাচে। ঘাসের ওপরেই হাটু গেড়ে ধপ করে বসে পরে। কপাল বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝড়ে যাচ্ছে তার। অগ্নি নীবের কাছে যেয়ে নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
.
– পানিটা খেয়ে একটু দম নে।
.
নীবিড় বোতল থেকে দু-তিন ঢোগ পানি খেয়ে বাকি পানি হাতে নিয়ে মুখের ঝাপটা মারে। বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে শান্ত হবার চেষ্টা চালায় যায় সে!
.
.
.
চলবে………………..❤

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍁
.
অগ্নি কিছুক্ষণ চুপ করে নীবিড়কে পর্যবেক্ষণ করে হুহা করে হেসে উঠলো। যা দেখে নীবিড় দাঁত কটমট করে অগ্নির দিকে তাকালো। কিন্তু তাতেও তার কোনো হেলদোল নেই, সে হেসেই যাচ্ছে! মনে হচ্ছে কেউ ওকে লাফিং গ্যাস খাইয়ে দিয়েছে!
.
– ওই শালা, তোর হাসা বন্ধ করবি?
.
– আরে ব্যাটা, এতোদিন পর তোকে এরকম একটা পরিস্থিতিতে দেখেও কিভাবে হাসি আটকাবো বল? হাসতে দে ভাই! 😂 (হাসতে হাসতেই অগ্নি বলে উঠলো)
.
– অগ্নি! বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে! আশাপাশে দেখ সবাই তোকে আর আমাকে কিভাবে দেখতেছে!
.
অগ্নি হাসতে হাসতে মাঠে শুয়ে একপ্রকার গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কোনোরকমে নিজের হাসি চাপায় রেখে অগ্নি বলে উঠলো
.
– আরে এ আর নতুন কি? ভার্সিটিতে তোকে আর আমাকে ছাড়া কেউ কাউকে দেখে নাকি? চিল না! এতো চাপ নিস না। এখন বল কুকুরটার সাথে কি কাবাডি খেলতেছিলি? কাবাডি কাবাডি কাবাডি! 😆
.
– চুপ কর শালা! তোর কি আমাকে বলদ মনে হয়? তোর জন্যই তো তাড়াতাড়ি আসতে হলো আর এই তাড়াতাড়ি আসাটাই আমার শনি হয়ে দাঁড়ালো! না জলদি আসতাম আর না ওই মেয়েটার সাথে বাইকে ধাক্কা লাগতো আর না কুকুর তাড়া করতো! উফফফ! (কপালে স্লাইড করতে করতে)
.
– মেয়ে? কোন মেয়ে রে? একটা মেয়ের জন্য সাদমান শাহরিয়ার নীবিড় কে কুকুরের তাড়া খেতে হলো! ওয়াও! মেয়ে টাকে পাইলে একটা থ্যাংকস দিবো দোস্ত! 😂
.
– শালা তোকে তো আমি…….!
.
বলেই অগ্নিকে ধরতে গেল নীবিড়। আর তা দেখে অগ্নি বসা থেলে উঠে এক দৌড়ে পগারপার! নীবিড় অগ্নি পেছনে ছুটছে আর অগ্নি ভেংচি কেটে সামনে দৌড়ে চলেছে!
.
ওদের এভাবে দেখে কিছু মেয়ে কানাঘুষো শুরু করে দিয়েছে,
– এই এই দেখ ডগি টা তো গেল এবার এক ক্রাশ আরেক ক্রাশের পেছনে ছুটছে। (একটা মেয়ে)
.
– ইশশ! এরা এতো কিউট কেনো রে? উফফ! যদি মেয়েদের দুটো বিয়ে করা যেত তাহলে আমি নীবিড় আর অগ্নি দুজনকেই বিয়ে করে নিতাম! (২য় মেয়ে)
.
– বললেই হলো? ওরা আদৌ কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নাকি? দুটোই মনে হয় মেয়ে দেখলে ঘাসে মুখ দিয়ে চলে! একটু দেখেও না! দেখলে আমার প্রেমে পড়তোই! আম শিউর! (৩য় মেয়ে)
.
এরকম আরোও নানান কথাবার্তা বলে চলেছে মেয়েরা। এদিকে আমি পা টিপেটিপে মাঠে নেমে রাত্রিকে খুঁজে চলেছি,
– রাত্রি….! এই রাত্রি…..! কোথায় লুকোলি বলতো? বেড়িয়ে আয় কুত্তা চলে গেছে তো!
.
আমার ডাক শুনে রাত্রি গেইটের পাশের পিলারটার পেছন থেকে বেড়িয়ে এক দৌড়ে আমার কাছে এসে থামলো।
.
– অনন্যা রে, কি করলি এটা বলতো? শেষ মেশ নীবিড় ভাইয়াকে কুকুরের তাড়া খাওয়ালি? ভেবে দেখেছিস তোকে পেলে নীবিড় ভাইয়া কি করবে? পুরা কাচ্চা চাবায় গিলে ফেলবে! (ভয়ে ভয়ে)
.
– আমার কি দোষ বলতো? কুকুরটাকে ওভাবে চেঁচাতে কে বলেছিল? তাহলে তো আর আমি লাফ মেরে ছুট লাগাতাম না। হুহ!
.
– হ্যা এখন নিজের দোষ ঢাকতে বেচারা কুকুরটাকে দোষী বানা! ফাজিল মাইয়া! না তুই দৌড় মারতি আর না কুকুরটা তোক ধরতে না পেরে নীবিড় ভাইয়াকে সামনে পেয়ে তাড়া করতো! এখন যে কি হবে আল্লাহ মালুম!
.
– আরে কিচ্ছু হবে না! তুই এতো ভ…ভ..ভয় পাস কেন বলতো? চিল মার না! আমরা ওই সাদা বিলাইয়ের সামনে যাবোই না। লুকায় লুকায় চলে যাবো।
.
– ভয় কি আমি পাচ্ছি? না তুই? উফফফ তোকে নিয়ে আমি আর পারি না চল তো এখন। ক্লাসের টাইম পার হয়ে যাচ্ছে!
.
🍁
.
ক্লাস শেষে চুপিচুপি বের হয়ে চোখ এদিক থেকে ওদিক ঘুরাচ্ছি। আই মিন সাদা বিলাইটাকে খুঁজে চলেছি। চোখের সীমানা যতদূর ততোদূর উনাকে পেলাম না।
.
– এই রাত্রি, আয় রাস্তা ক্লিয়ার। (ফিসফিসিয়ে)
.
রাত্রি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পা টিপে টিপে আমার সাথে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গেল। ভার্সিটি থেকে বের হয়ে আমি একটা বিজয়ের হাসি দিয়ে বলে উঠলাম,
.
– আরে বাহ আনানয়্যা! তেরা তো কোই জাওয়াব হি নেহি হ্যায়! আই এম সো প্রাউড অফ ইউ! (চুল গুলো পেছনে ঠেলে)
.
– অনু…! অনু রে..!
– আরে তোর আবার কি হলো?
– আমার দিকে না তাকিয়ে, সা…সা সামনের দিকে তাকা!
– কি আছে সামনে হ্যা?
.
বলেই মাথা ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকানো মাত্র দেখি নীবিড় ভাইয়া ফোনে মুখ গুঁজে স্টলের সিটে বসে রয়েছে। যা দেখে আমি মুখ দিয়ে বলে উঠলাম, “খাইছে রে, ভাগ মিলখা ভাগ, থুক্কু ভাগ অনন্যা ভাগ!”
বলেই রাত্রির হাত ধরে ব্যাথা পা নিয়েই উলটো দিকে হাটা দিলাম একটা রিক্সা পাওয়ার আশায়। কিন্তু ওই যে আমার কপাল! যা চাই তাহা আজীবনেও না পাই টাইপ! তাই তো আজ একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা। শালার সব কটা রিক্সা মরছে বোধহয়!
.
আর কয়েকধাপ দিতেই একটা গাড়ি আমাদের সামনে এসে থেকে যায়। গাড়িটা চিনতে অসুবিধা হলো না। গাড়ির কাচ নামিয়ে ভেতর থেকে কেউ বলে উঠলো,
.
– তাড়াতাড়ি উঠে পড় দুজনেই।
.
– আরে ভাইয়া তুই গাড়ি নিয়ে এলি কখন?
.
– ড্রাইভার আংকেল কে কল করে আসতে বলছিলাম। তোকে পৌঁছে দিয়ে আবার আসবো। ফ্রেন্ডরা মিলে একটা প্রজেক্টের কাজ করছি তাই!
.
আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ গাড়িতে উঠে পড়লাম দুজনে। রাত্রি পেছনে বসলো আর আমি ভাইয়াকে ড্রাইভার উপাধি দিতে চাই না বলে সামনে ভাইয়ার পাশে বসলাম। আচমকা গাড়ির দরজা বন্ধ করতে যেতে পায়ে যেখানে ব্যাথা পেয়েছিলাম সেখানে লেগে গেল। ব্যাথায় কুকিয়া “আহহহ” করে উঠলাম।
.
– বোন কি হইছে পায়ে? ব্যাথা পেলি কি করে? এই রাত্রি ও পায়ে চোট পাইকো কিভাবে?
.
রাত্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বলে উঠি,
– আরে ভাইয়া তেমন কিছু না। পায়ের নিচে ইট ছিলো, না দেখে হাটতে যেয়ে পরে গেছি।
.
– আহ! অনু তুই কবে বড় হবি বলতো? আমি তো আর সবসময় তোর সাথে সাথে থাকতে পারবো না। একটু দেখেশুনে চলবি তো! উফফফ এমন বাদর একটা বোন থাকলে জীবনটাই ত্যানাত্যানা!
.
– কি আমি বাদর! তুই বান্দর, গুই সাপ, এনাগন্ডা, জলহস্তী, মিনি হাতি, কুমির…!
.
আর বলতে না দিয়ে ভাইয়া নিজের হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো,
– চুপ আর একটা কথাও না। অকাম করার সময় তো আর আপনার মনে থাকে না মহারাণী! এখন চুপ করে বসে থাক।
এই রাত্রি দেখোতো পেছনে ফার্স্ট এইড বক্স রাখা আছে। ওটা আমাকে দাও। (মাথা পেছনে ঘুরিয়ে)
.
রাত্রি বক্সটা ভাইয়ার দিকে এগিয়ে দিতেই ভাইয়া তাড়াতাড়ি করে বক্স খুলে স্যাভলন এন্টিসেপ্টিক আর ব্যান্ডেজ বের করে নিলো।
খুব যত্নসহকারে ভাইয়া আমার পায়ের কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।
.
রাত্রি মুগ্ধ নয়নে অগ্নির দিকে চেয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। তার মতে অগ্নির মতো এতো কেয়ারিং আর কিউট ছেলে দ্বিতীয়টা হয়না। সে অগ্নির প্রতি মুগ্ধ! অনেক আগে থেকেই।
.
ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে অগ্নি ফার্স্টএইড বক্সটা রাত্রির দিকে এগিয়ে দিয়ে ধরতে বলে। কিন্তু রাত্রিতো এখন অন্য ভাবনায় ডুবে আছে। দু-তিনবার ডেকেও তার কোনো ভাবাবেগ হলো না তাই আমি পেছন ফিরে রাত্রির মাথায় একটা চাটি মেরে দিলাম। সাথে সাথেই রাত্রি হকচকিয়ে হুশে ফিরলো,
.
– কিরে? কোন ধান্দায় ডুবে আছিস? বক্সটা পাছনে রাখ!
.
রাত্রি তাড়াতাড়ি করে বক্সটা নিয়ে পেছনে রেখে মুখে ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– না রে কিছু না। বুঝতে পারিনি।
.
আমি আর কথা বাড়ালাম না। ভাইয়া চুলগুলো এক হাত দিয়ে ঠিক করে আরেক হাত দিয়ে সানগ্লাসটা পড়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।
.
🍁
.
আজকে শুক্রবার,
ওয়ার্ক আউট করা হয়নি এই সপ্তাহে। কাল তো কোনোরকমে নীবিড় ভাইয়ার হাত থেকে বেচে গেছি আজও ভার্সিটি অফ। মজাই মজাই! আজকে উড়াধুরা ড্যান্স হপ্পে।
.
অডিও স্পিকারে লাইডে মিউজিক প্লে করে ওয়ার্ক আউট করছি। পরনে একটা ব্লাক টি শার্ট আর ব্লাক লেগিংস। মিউজিক লাউডে থাকায় বাইরের কোনো আওয়াজ ভেতরে আসবে না। শান্তি মতো ওয়ার্ক আউট করতে পারবো।
.
ওদিকে,,,,
কেউ দরজায় বেল বাজানো মাত্রই অগ্নি দরজাটা ফট করে খুলে দিলো।
আরে ব্যাটা আয় আয় জলদি বলেই টানতে টানতে মানুষটিকে ভেতরে ঢুকালো।
.
– আরে শালা এতো টানাটানি করিস না। আমার এতো স্ফট স্ফট বডি পার্টস খুলে যাবে।
– ইহহহ আইছে রে। খুইল্লা যাবে! হাহ! তুই বোস আমি আম্মুকে ডাকি।
আম্মুউউ…আম্মুউউউউ… দেখো কে এসেছে।
.
আম্মু কিচেন থেকে বের হয়ে নীবিড়কে দেখেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে উঠলেন,
– বাবুই তুই এসেছিস! আয় আয় আমার বুকে আয়।
– ও আমার সুইট কিউট মামুনি…!
বলেই নীবিড় এক ছুটে আম্মুর কাছে গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে!
.
.
.
চলবে………………….💗

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০৭♥
#Ayanaa_Jahan_(Nusraat)♥
.
– আআআআআআআআ…………! আপনিইইইই?
.
-তুমিইইইইইইইই???
.
(একটু আগে আমি জেমসের “ঝাকানাকা ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলানা” গানটা ছেড়ে লাফাতে লাফাতে নেচে নেচে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছিলাম। আর বের হতেই দেখি আমার যম মানে সাদা বিলাই থুক্কু নীবিড় ভাইয়া আমাদের সোফায় বসে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কিছু একটা করছেন। আমি তো নাচতে ব্যস্ত ছিলাম ওতো না বুঝেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছি। তাছাড়া এটা নতুন কিছু না কিন্তু এই সাদা বিলাইটা যে এখানে থাকবে তা কে জানতো? উনাকে দেখেই আমি নাচ থামিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি। উনি হঠাৎ করে কাউকে নেচে নেচে সামনে আসতে দেখে ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠেন।)
.
আমাদের দুজনের এরকম বাড়ি কাঁপানো চিল্লানিতে আম্মু খাবারের ট্রে হাতেই হন্তদন্ত হয়ে কিচেন থেকে বেড়িয়ে আসেন। আর ভাইয়া হাতে একটা ফাইল নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।
.
আমার গায়ে ওড়না নেই দেখে এক দৌড়ে রুমে যেয়ে কোনোরকমে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে আবার ড্রয়িংরুমে চলে আসি।
.
– আপনি এখানে কি করছেন? আমাকে শাস্তি দিতে এখানেও চলে এসেছেন? আল্লাহ দড়ি ফালাও আমি আসতেছি।😣
.
– হোয়াট রাবিশ! তোমাকে শাস্তি দিতে এসছি মানে কি? আর তুমি এই বাড়িতে কেন?
.
– বারে! নিজের বাড়িতে থাকবো না তো বাইরে গড়াগড়ি খাবো নাকি?
.
আমাদের কথার মাঝে ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
– কিরে তোরা আগে থেকেই কি দুজন দুজনকে চিনতিস নাকি? ধুর আমি ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দিবো। তুই তো আমাকে শালা বলে বলে মাথাটাই খেয়ে ফেলেছিস তাই বোনকে দেখিয়ে তোর আমাকে শালা বলা বের করে দিতাম। (নীবিড়কে উদ্দেশ্য করে)
.
– কিহহ! এই বিচ্ছুটা তোর বোন? ওহ মাই গড! তাইতো বলি ওর মুখটা কার জেনো সাথে মেলে। তোর সাথে মেলে এবার বুঝছি। থাক ভাই মাফ চাইছি আর তোকে শালা বলার দুঃসাহস দেখাবো না!
.
এর মধ্যে আম্মু খাবারের ট্রেটা টেবিলে রেখে নীবিড় ভাইয়ার পাশে বসলেন।
.
– কিরে বাবুই তুই চেঁচালি কেন? আর অনু তোকে বলতাম না আমার আরেক ছেলে আছে। এইযে সেই ছেলে আমার। অগ্নির বেস্টফ্রেন্ড কম ভাই বেশী।
.
এদের কথা শুনে এবার আমার কান্না করে দেওয়ার মতো অবস্থা। কথায় আছে না যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়! সরি সরি প্রবাদটা আমার ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন হওয়া উচিৎ! লাইক “যেখানেই সাদা বিলাইয়ের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।” ভেবেছিলাম উনার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াবো কিন্তু ঐ যে অনন্যার ফুটা কপাল! যার থেকে পালাবো ভাবছি সে নিজেই বাড়িতে এসে হাজির। ভাইয়াও কি আর ছেলে পায় নি বেস্টু কম ভাই বেশী বানানোর জন্যে? হায় দাইয়া!
.
আমার ভাবনার মধ্যে নীবিড় ভাইয়া বলে ওঠেন,
– মামুনি! এটা তোমার মেয়ে কি করে হতে পারে? তুমি এতো সুইট কিউট, তোমার পেট থেকে এরকম ফাজিল মেয়ে কি করে বের হতে পারে মামুনি! হাও?
.
– কেন রে কি করেছে ও তোর সাথে?
অনন্যা কি করেছিস নীবিড়ের সাথে বলতো? তুই যে দুষ্টু! ঠিক বাবুইয়ের সাথেও দুষ্টুমি করেছিস তাইনা?
.
আমি কি বলবো ভেবে না পেয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম। কিন্তু কিছু বলার আগেই বাঁধ সাজলেন নীবিড় ভাইয়া। উনি আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
.
– ও কি বলবে? আমি বলছি, মামুনি জানো সবে তিনদিন ভার্সিটিতে গিয়েছে তাতেই আমার বারো অবস্থা বানিয়ে ছেড়েছে। প্রথম দিন গিয়েই পিঠে কিল বসিয়ে দিয়েছে, আবার দ্বিতীয় দিন ভুল করে আমার গালে চড় মেড়ে দিয়েছে। আর গতকাল কি করেছে জানো? আমাকে কুকুরের দৌড়ানি খাইয়ে ছেড়েছে।
.
উনার কথা শুনে আম্মু রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন। আর ভাইয়াতো সরু চোখে ভ্রু কুচকে আমার দিকে চেয়ে রয়েছেন। সবার চাহুনী দেখে যা মনে হচ্ছে তা হলো এই ” আমি কাঠগোরায় দাঁড়িয়ে থাকা খুনের আসামী, আর যাকে খুন করেছি সে স্বয়ং ভূত হয়ে উরে এসে আমার বিরুদ্ধে শাক্ষি দিচ্ছে।”
.
আর আমি এটাও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি যে এখন যদি আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে একটা শব্দও উচ্চারণ করি তবে এরা আমার জ্বিব টাই কেটে দেবে তাও মানবে না যে আমি ভোলাভালা কিছু করিনি। আর ঠিক এটার সুযোগ নিয়েই উনি গড়গড় করে বলে দিলেন আমার ফল্টগুলো। অথচ নিজে যে শাস্তি হিসেবে আমাকে কান ধরে দাঁড় করে রেখেছিলেন দেন আয়া পর্যন্ত বানিয়েছিলেন তাতো বললেন না। কি সুন্দর করে নিজেকে ধোঁয়া তুলসি পাতা বানিয়ে নিলেন আর আমাকে আগাছা বানিয়ে দিলেন। এর শোধ তো আমি তুলবোই। তুলতে আমাকে হবেই।
.
আমি আম্মু আর ভাইয়াকে বুঝানোর জন্য বলে উঠলাম,
– আরে আমি তো আর ইচ্ছে করে এসব করি নি। প্রথম দিন উনি সেম ভাইয়ার গেট আপে ছিলেন। আজো তাই আছেন শুধু শার্টটা ভিন্ন। তাই চিনতে ভুল করাটা অস্বাভাবিক কিছুই ছিল না। সেদিন ভুল করে পেছন থেকে উনাকে দেখে ভাইয়া ভেবে মেরেছিলাম। আর পরের দিন উনার বাইকে ওড়না আটকে গেছিলো। আমি কোনো ছেলে অসভ্যতামি করছে ভেবে না দেখেই চড় মেরে দিয়েছিলাম। আর আজ যা হলো তা তো বলার মতোই না। তোমরা জানো আমি কুকুর দেখে কি পরিমাণ ভয় পাই তাই দৌড় মেরেছিলাম আর কুকুরটা আমাকে না ধরে সাদা বি…থুক্কু নীবিড় ভাইয়াকে তাড়া করে। আমার ইচ্ছাকৃত কোনো দোষ নেই। (ইনোসেন্ট মার্কা ভাব নিয়ে।)
.
– তোকে কতবার বারণ করবো বলতো? শুধু অকাজ করে বেরাস! আগে ভালো করে দেখবি সবকিছু তারপর কোনো স্টেপ নিবি। বুঝেছিস? আর যেন এরকম কমপ্লেইন না আসে। (আম্মু)
.
বলেই নীবিড় ভাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে উনাকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। আর ভাইয়া এদিকে মুখ টিপে হাসছে। ভাইয়ার হাসি দেখে আমি ওর পেটে হাতের কুনুই দিয়ে গুঁতো মেরে দিলাম।
.
– ওই হাসছিস কেন? (ফিসফিসিয়ে)
.
– থ্যাংক ইউ বোনু 😂।
.
– থ্যাংকস আবার কিসের জন্য? (ভ্রু নাচিয়ে)
.
– এই যে তুই নীবিড়লে কুকুরের দৌড়ানি খাওয়াইলি। আমি শুনে তখনই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম যে মেয়ে ওরে দৌড়ানি খাওয়াইছে ওরে একটা ধনিয়াবাদ দিবো। 😄 আর তুই আমাকে আগে বলিস নি কেন বলতো? মিথ্যা বলছিস কেন?
.
– হ্যা আমি বলতাম আর তুই আমাকে ক্ষেপাইতি আর বকাও দিতি তাইনা? তার কোনো দরকার নাই তাই বলিনি। বান্দর ভাই কথাকার। হুহ!
.
– 😂 যাক গে শুন কাল নবীনবরণ অনুষ্ঠান আছে জানিস তো তাইনা?
.
– কিহ??? কালকে? কই আমি তো জানি না।
.
– তা জানবেন কিভাবে? অডিটোরিয়ামে তো আপনার পা পরে নি। যাই হোক। নীবিড় আসছে ওর সাথে ওসব নিয়েই ডিয়াকাস আর প্লানিং করবো। আফটার অল আমরা ভার্সিটির সিনিয়রদের মধ্যে টপারস। তা তোদের কোনো প্লানিং থাকলে ফ্রেন্ডসরা মিলে করিস কেমন? এখান খেতে বস। আমারও খিদে পেয়েছে মারাত্মক।
.
বলেই ভাইয়া আম্মুর পাশে বসে পড়লো।
– আম্মু নীবিড়কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে নাকি? আমাকেও খাইয়ে দাও।
.
– ওই সারাজীবনই তো খাস। আমি পুরো দু সপ্তাহ বাদে আসলাম। সো আজকে আমাকে খেতে দে।
.
– আরে আরে হইছে তোরা বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করিস না। আমি তোদের দুজনকেই খাওয়ায় দিচ্ছি।
.
ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আমি কেউ না। আমি যে জলজ্যান্ত একটা মানুষটা সামনে দাঁড়িয়ে আছি তাতে এদের কোনো হুশই নেই। এখন এই সাদা বিলাই আর এই সাদা বান্দরই সব নাকি? আমাকে কি ডাষ্টবিন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে নাকি? হায় খোদা! তুমি দেখো কি অবিচার টাই না হচ্ছে আমার সাথে।
.
মনে মনে কথাগুলো বলে, কান্নাকান্না ফেস বানিয়ে বলে উঠলাম,
– আমাকে কেউ ভালোবাসে না। কেউ আমারে আদর করেনা, আমি এক অভাগা নারী থুক্কু সন্তান। উহুহুহু 😭!
.
আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। আম্মু বলে উঠলো,
– হইছে তোর ড্রামা? এবার আয় আজকে তিনজন কেই খাইয়ে দিবো।
.
আমি খুশিতে এক লাফ মেরে টেবিলের ওপর গিয়ে বসে পড়লাম। যেহেতু সোফায় আম্মুর এক পাশে ভাইয়া আর একপাশে সাদা বিলাই। তারপর আম্মু আমাদের তিন জনকেই নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন। ইশশ! মায়ের হাতে খাওয়ার স্বাদ টাই আলাদা। আমি যখন একা খাই তখন বেশি খেতেই পারিনা। অথচ আম্মু খাইয়ে দিলে যেন আমার পেট আর আমার পেট থাকে না। যতই খাওয়াক পেটে অটোমেটিক্যালি ঢুকে যায়।
.
.
.
চলবে…………………….💗