প্রেম আমার পর্ব-৮+৯+১০

0
9004

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০৮♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
– হেই ইউ তোমাকে কতোবার বলবো That I don’t love you? কেন বোঝো না? আমি তোমাকে ভালোবাসি না। ভুলে যাও আমাকে। Just forget me damn it!
.
– ভেবে বলছো তো? সত্যিই কি আমাকে ভালোবাসো না?
.
– ইয়াহ! আমি ভেবেই বলছি। আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।
.
– কিন্তু তোমার চোখ তো আলাদা কথা বলে অগ্নি!
.
– শুনো মেয়ে আমার চোখ কি বলে না বলে তা নিয়ে তোমাকে গবেষণা করতে হবে না। মেডিকেলে পড়ছো, ভালো করে স্টাডি করো। তাহলেই হবে। এন্ড ওয়ান মোর থিং, ফার্দার আমার সাথে আর দেখা করতে আসবে না ওর কল, মেসেজ এসব ও দেবে না। গট ইট? নাও গো। বাড়ি যাও নিজের।
.
– আই আম সো সরি অগ্নি, আমি যে তোমার এই কথাটা রাখতে পারবো না। আমি তোমাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আমার করে নেবোই। তুমি যতই আমাকে এভোয়েড করো আমি জানি তুমি কিঞ্চিত পরিমাণে হলেও আমার প্রতি উইক। এন্ড তুমিও আমাকে ভালোবাসবে। It’s my challenge!
.
বলে নিত্য রেস্টুরেন্ট থেকে উঠে হাটা ধরলো। অগ্নি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রাগে দুঃখে নিজের চুল ছিঁড়া শুরু করে দিয়েছে সে। এমন কিন্তু না যে অগ্নি নিত্য কে বিন্দু মাত্রও ভালোবাসে না, বরং সে ও মনে মনে নিত্যর প্রতি উইক। ও যে নিত্যকে ভালোবেসে ফেলেছে তা একটু হলেও বুঝতে পারলেও সে বুঝতে চায় না। সে তার মন কে বোঝাতে চায় যে সে নিত্যর প্রতি উইক না। কিছুতেই না।
সে চায় না তার ভালোবাসার জন্য নীবিড় আর তার বন্ধুত্ব তে ফাটল ধরুক।
.
এবার আসি নিত্য কে সেই প্রসঙ্গে। নিত্য হলো নীবিড়ের ছোট বোন। রাজশাহী মেডিকেলে ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট। নিত্য অনেক আগে থেলেই অগ্নিকে ভালোবাসে। প্রথম যেদিন নীবিড়ের সাথে অগ্নিকে দেখেছিল ঠিক সেদিন থেকেই সে অগ্নিকে মন প্রাণ সব দিয়ে ফেলেছে। এই নিয়ে সে বেশ কয়েকবার অগ্নিকে বলেছে কিন্তু প্রতিবারই অগ্নির উত্তর না বোধক! এতে অবশ্য আর নিত্যর কোনো কষ্ট নেই। কারণ কয়েকদিন যাবৎ সে লক্ষ্য করেছে যে অগ্নিও তার প্রতি কিছুটা উইক হয়ে পড়ছে। যদিও সেটা অগ্নি মুখে বলতে নারাজ তবে নিত্য তা বেশ বুঝতে পারছে। হাজার হোক মেয়েদের এই গুণটা কিন্তু খুব আছে। তারা চট করেই সামনে থাকা ব্যক্তির অঙ্গভঙ্গি দেখেই তার মনে কি চলছে বুঝে নিতে পারে।
.
আজ নীবিড়ের সাথে ফাংশনের সব কাজ করার পর নিত্য অগ্নিকে কল করে ডাকে। প্রথমে বেশ কয়েকবার মানা করার পরও নিত্য নাছরবান্দা তার একটাই কথা অগ্নি না গেলে সে রেস্টুরেন্টে বসেই থাকবে বাড়িতে যাবেনা। তাই অগ্নি একপ্রকার বাধ্য হয়েই কোনো একটা বাহানা দিয়ে বেড়িয়ে পরে নিত্যর টেক্সট করা ঠিকানায়। ওদিকে নীবিড়কে মামুনি কিছুতেই যেতে দিতে চাচ্ছে না। উনার একটাই আবদার আজ যেন নীবিড় রাতের ডিনারটাও করে যায়। তাই নীবিড় মামুনির কথার ওপর আর কিছু না বলেই থেকে যায়।
.
🍁
.
সন্ধ্যে হয়ে আসছে। ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে এখন ৬ টা বেজে ১৭ মিনিট। নীবিড় ভাইয়া এখনো ল্যাপটপে মুখ গুঁজে রয়েছেন। আমি বারবার উনার সামনে দিয়ে যাওয়া আসা করছি শুধুমাত্র উনার হাবভাব বুঝার জন্য। কারণ আবার যদি শাস্তি টাস্তি দেন তাহলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর হ্যা এবার আমি চুপ থাকবোও না। যদি খারাপ বিহেভ করেন তাহলে আমিও আর চুপ থাকবো না। না না না।
.
এসব ভাবতে ভাবতে আবারোও উনার সামনে দিয়ে হেটে যেতে নিলে উনি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই এক হাতের ১ টা আঙুল দুবার মুড়িয়ে আমাকে তার কাছে যেতে ইশারা করলেন। আমার বুকটা যেন মুহূর্তেই ধক করে উঠলো। কে জানে আবার কি করে। যতই হোক এটা আমাদের বাড়ি সো এখানে উনি কিছু করতে পারবেন না। তাই এতো ভয় পাওয়ার তো কোনো মানেই হয়না।
– বি স্ট্রং আনানয়্যা! ইউ ক্যান ডু ইট। (বিড়বিড় করে)
.
– এই যে মিস বিড়বিড় করা বন্ধ করে এইদিকে আসেন।
.
উনার কথায় আমি বিষম খেয়ে গেলাম যেন। উনার কি চারিদিকেই চোখ কান আছে নাকি? স্ট্রেঞ্জ! ব্যাপারটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আপাতত উনার কাছে যাই।
এসব ভেবেই উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
.
– সিট।
– হা
– ওয়াট হা? বসতে বলেছি তোমাকে। সোফায় বসো। (শান্ত গলায়)
.
আসলে আমি ভেবেছিলাম উনি উনার কোলে বসতে বলছেন। কারণ আমি যেভাবে দাড়িয়ে ছিলাম, হুট করে বসতে বললে তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক।
নিজের বোকামির জন্য নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে উনার পাশে বসে পড়লাম।
.
– কি..কিছু বলবেন?
.
– হুম। (ল্যাপটপে টাইপ করতে করতে)
.
– তো বলুন কি বলবেন? আর দেখুন প্লিজ কালকের ওই কুত্তার দৌড়ানি নিয়ে কিছু বলবেন না। আমি আসলে অনেক ভয় পাই তাই না ভেবেই….
.
আমাকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
– ওয়াট ইজ দিস? কুত্তা কি হ্যা? ল্যাংগুয়েজ ঠিক করবা। আর ভুল করার কথা বলছো তো ওটা তো তোমার স্বভাবই। প্রতিদিনই কিছুনা কিছু ভুল করা দেন সরি বলা। লেট ইট গো। এখন কথা হচ্ছে তোমার ডিপার্টমেন্ট থেকে যেকোনো একজনকে স্টেজে স্পিচ দিতে হবে ভার্সিটি সম্পর্কে। এন্ড আই থিংক ইউ ক্যান হ্যাভ দ্য চান্স। যেহেতু ঝগড়া করতে মুখ ভালোই চলে তোমার আশা করি ইজিলি স্পিচ দিতে পারবা। ওকে?
আর এই যে এটা তোমার স্ক্রিপ্ট! (একটা কাগজ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে) এটার ডায়ালগ গুলো বলবা। এন্ড দেন তোমার এই কয়দিনে কি ধরণের এক্সপেরিয়েন্স হলো তা তুলে ধরবা। লাইক তোমাদের টিচার্স, ক্যাম্পাস, ফ্রেন্ডস এন্ড ডিসিপ্লিনস এসব সম্পর্কে তুলে ধরবা। ওকে? এখন তুমি আসতে পারো।
.
উনার কথাবার্তা শুনে আমি যেন সপ্তম আকাশ থেকে দুম করে পড়ে গেলাম। উনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন আমি কোনো জবের জন্য জোড়াজুড়ি করছি আর উনি আমাকে দয়া দেখি জবটা দিয়ে দিলেন। হাহা! কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। কারণ আমার এই কাজটা বরাবরই ভালো লাগে। আগে কলেজে থাকতে আমাকেই যেকোনো বক্তব্য দেওয়ার জন্য সিলেক্ট করা হতো কারণ এটা আমি খুব ভালো করেই পারি। কিন্তু এখন ভাববার বিষয় হচ্ছে আমি বক্তব্যে বলবোটা কি?
এটা বলবো নাকি যে “প্রথম দিনই আমার একটা ভুলের জন্য কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেকেন্ড দিন আরোও একটা ভুলের জন্য ঝাড়ুদারনি হয়ে ছিলাম, আর তৃতীয় দিন সিনিয়রকে কুকুরের দৌড়ানি খাইয়েছিলাম!”
.
কথাগুলো ভাবতেই নিজের অজান্তে হুহা করে হেসে উঠলাম, আমার হাসি শুনে সাদা বিলাই ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই ভ্রু কুচকে বলে উঠলেন,
.
– এতোই যখন হাসি পাচ্ছে তাহলে নিজের ঘরে গিয়ে হাসো। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। নাহলে কুকুরের তাড়া খাওয়ানোর পানিশমেন্ট টা মাফ না করে সুদে আসলে উসুল করে নিবো। সো কিপ কোয়াইট। এন্ড লিভ নাও।
.
উনার কথা শুনে পুরো মেজাজটাই বিগড়ে গেল। নিজেকে যে কি ভাবেন উনি আল্লাহ মালুম! অদ্ভুদ ব্যাপার এতোগুলো কথা বললেন অথচ একটা বারের জন্যেও আমার দিকে তাকান নি উনি। ভাব! যত্তসব! রেগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে উঠে দাঁড়ালাম। তখনই বেল বেজে উঠলো।
আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি ভাইয়া মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু জিজ্ঞাস করবো তার আগেই আমাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে গেল।
.
– অগ্নি…! শালা এতো দেরী হলো কেন তোর ফিরতে? জানিস কখন থেকে প্রজেক্টের ওপর কাজ করছি। মরার কাজ শেষই হচ্ছেনা।
(অগ্নির মুখ দেখে) কিরে তোর মুখ এতো শুকনো লাগছে কেন?
.
ততক্ষণে আম্মু আব্বুও ঘর থেকে বেল বাজার আওয়াজ পেয়ে বেড়িয়ে এলেন।
– কিরে ভাইয়া? তোর কি হয়েছে?
– বাবাই শরীর ঠিক আছে? (আম্মু)
.
– কিছু না ঠিক আছি আমি। জাস্ট একটু টায়ার্ড লাগছে। দ্যাটস ইট। তোমরা থাকো আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি তাহলে বেটার ফিল হবে।
.
নীবিড় ভাইয়া কিছু একটা ভেবে বলে উঠলেন,
– আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর দেখতেছি।
.
কেউ আর কথা বাড়ালোনা। ভাইয়া ফ্রেশ হতে চলে গেল।
– হ্যা গো কি হলো বলো তো ছেলেটার। ও যতই টায়ার্ড থাক কখনোও এভাবে মুড অফ করে থাকে না। সবসময় হেসে খেলে বেড়ানো ছেলেটা এমন চুপচাপ হয়ে গেলো কেন? (আম্মু)
.
– সেটা তো আমিও ভাবছি। হয়তো কোনো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশড। (আব্বু)
.
– মামুনি, বাপী তোমরা চিন্তা করো না ওকে আমি দেখে নিবো। ওকে আমার ওপর ছেড়ে দাও। তোমরা রিল্যাক্স থাকো।
.
নীবিড় ভাইয়ার কথা শুনে আম্মু আব্বু অনেকটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হলেন যেন। আম্মু মুচকি হেসে কিচেনে গেলেন। ডিনারের ব্যাবস্থা করতে।
.
রাত ৯ টা বেজে ৪০ মিনিট,
সবাই ডায়ানিং টেবিলে বসে আপন মনে খাচ্ছি। সবার মাঝেই এখম পিনপতন নীরবতা বিরাজমান। মাঝে মাঝে প্লেট, গ্লাস, চামচ এসবের টুং টাং আওয়াজ কানে ভেসে আসছে।
নীরবতা ভেঙে নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
.
– মামুনি আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি এখন আসছি। আর অগ্নি ঠিক সকাল ৭ টার মধ্যে ফাংশন এট্যেন্ট করবি। মামুনি ও না উঠলে লাথি মেরে উঠাবা। ওকে?
.
– আচ্ছা বাবুই। তুই এখন যেতে পারবি তো? থেকে যা নাহয়?
.
– না মামুনি। বাসায় বোন আছে। রাগ করবে।
.
বলেই উনি উঠে অগ্নি ভাইয়ার কাধে একটা কিল মেরে চলে গেলেন। আর আমরা সবাই উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
.
.
চলবে………………….❤

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০৯♥
#Ayanaa_Jahan_(Nusraat)♥
.
– ভাইইইয়ায়ায়ায়া………..!
.
– এই কে কে? (ঘুম থেকে ধরফরিয়ে লাফ মেরে উঠে বুকে ফুঁ দিতে দিতে)
.
ভাইয়ার এমন চমকে ঘুম থেকে উঠা দেখে আমি আর হাসি থামায় রাখতে পারলাম না। হুহা করে হেসে উঠলাম। আমার হাসি ভাইয়ার সহ্য হচ্ছে না। রাগে দাত কটমট করতে করতে দিলো একটা হুংকার,
.
– শাঁকচুন্নিইইইইইইই……!!! এতো জোড়ে কেউ কানের কাছে এসে চিল্লায়? ফাজিল মেয়ে কথাকার! ঘুমের মধ্যেই হার্ট ফেইল করায় দিবি তুই নাকি?
.
আমি হাসি কন্ট্রোল করে বলে উঠলাম,
– দেখ ভাই আম্মু তোকে কয়েকবার ডেকে গেছে। তুই উঠিসনি। আম্মু তো আর নিজের ছেলেকে লাথি মারতে পারে না তাইনা? তাই তো পানি আনতে গেছিলো তোর মুখে মারার জন্য। হাজার হোক আমি তোর আদরের বোন বলে কথা তাই তো আম্মুকে আটাকালাম, বললাম আমি উঠিয়ে দেবো তোকে। কোথায় একটা ধন্যবাদের বদলে চকলেট দিবি তা না আমাকে বকলি! তুই খুব পচা ভাইয়া! (ন্যাকা কান্না করতে করতে)
.
– এই এই হইছে হইছে! থাম আমার মা! তোর এই ঘর কাপানো চিল্লানির পর আর ঘর কাঁপানো ন্যাকা কান্না করিস না প্লিজ। ঘুম টা তো হারাম করলি এখন এটলিস্ট আমার কান টাকে রেহাই দে। (হাত জোর করে)
.
আমি রাগ করে মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলাম,
– মানুষের ভালো করতে নেই। তাড়াতাড়ি উঠ। সাদা বিলাই তোকে ৭ টায় পৌঁছাতে বলছে। এখন ৬ টা বেজে ১৫ মিনিট। ৪৫ মিনিটে কিভাবে যাবি সেটা ভেবে নে। নিচে ব্রেকফাস্ট রেডি আছে।
.
বলেই হনহন করে নিজের রুমে চলে আসলাম। আহহহ রাত্রি কে একটা কল করে বাসায় আসতে বলি। বান্দরনিটা কি কি সব প্লান করছে। আমি তো কিছুই জানি না। বলে রাত্রিকে কল লাগালাম।
.
ওদিকে অগ্নি কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বুঝলো যে সাদা বিলাই কে! বুঝতে পেরেই হু হা করে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল শাওয়ার নেওয়ার জন্য।
.
– হ্যা রাত না দিন? থুড়ী রাত্রি জলদি আয় বাসায়।
– ৫ মিনিট দ্বারা আমি প্রায় রেডি হয়েই গেছি জাস্ট একটু আই ল্যাস লাগিয়ে নেই।
– এই আই ল্যাস টা ফির কিরে?
– অনন্যা, তুই কি জানিস তুই মেয়ে জাতির কলঙ্ক?
– মানে? কলঙ্ক হতে যাবো কেন রে?
– কেন আবার? মেকআপ তো আল্লাহর ওয়াস্তে করিস না তারওপর মেকআপ করতে কি কি লাগে এটাও বুঝিস না। তুই মেয়ে নাকি ছেলে মাঝে মাঝে আমার ভীষণ ডাউট হয় জানিস?
– এক চউড়ে তোর চাউয়া চাপালির দাঁত লেভেল করি দিমু শয়তাইন্না মাইয়া! বখরির খালাম্মা, হনুমানের নানি, বলদের বলদি!
.
আমাকে থামায় দিয়ে রাত্রি ফোনের ওপাস থেকে বলে উঠলো,
– হইছে হইছে পরে গালি দিস বইন। আমি আসতেছি একটু ওয়েট কর।
বলেই ফুট করে লাইনটা কেটে দিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো রাত্রি।
.
এদিকে আমি রাগে বোম্বাই মরিচের মতো লাল হয়ে গিয়েছি। বলে কি মেয়ে আমি নাকি মেয়ে তাতে ওর সন্দেহ হয়। হুহ! আসুক খালি মজা দেখাবো।
.
🍁
.
অগ্নি শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে ৬ টা ৩০ মিনিট। বাইক নিয়ে যাইতেও মিনিমাম ১৫ মিনিট তো লাগবেই
তারমানে তার হাতে এখন পাক্কা ১৫ মিনিট।
এর মধ্যে তার খাওয়া রেডি হওয়া দুটোই করতে হবে। কাবার্ড খুলে হোয়াইট আর ব্লাকের মধ্যে ডিজাইন করা একটা শার্ট আর ব্লাক প্যান্ট পড়ে নিলো অগ্নি। প্যান্টের এক সাইডে চেইন সিস্টেম রয়েছে। হাতে একটা ব্রান্ডেড ওয়াচ পড়ে চুলগুলো ভেজা হওয়ার টাওয়াল দিয়ে ভালো করে মুছে ব্রাশ করে সেট করে নিলো। তার সাথে চোখে ব্লাক সানগ্লাস। ব্যাস পারফেক্ট। এক্কেবারে কিলার লুক।
.
অগ্নি রেডি হয়ে ফোন টিপতে টিপতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো। আর ঠিক সেইম টাইমে রাত্রি নিচ থেকে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিলো। রাত্রির পরনে নেভি ব্লু কালারের একটা গর্জিয়াস শাড়ি। সেই শাড়িটাই ধরে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে খুব সাবধানে উঠছিলো রাত্রি যাতে শাড়িতে পা লেগে না পড়ে যায়। এভাবেই দুজনের বেখেয়ালি পনায় হুট করে ধাক্কা লেগে যায় যার জন্যে রাত্রি পড়ে যেতে ধরে, যা দেখে অগ্নি ততক্ষণাত রাত্রির হাত টেনে ধরে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে আটকিয়ে দেয়।
.
রাত্রির চোখে মুখে খুশির ঝিলিক তার সাথে সে বড্ড অবাকও হয়েছে বটে। সে এতোটাও আশা করে নি কখনোও। অগ্নি এক রাশ বিরক্তি নিয়ে রাত্রিকে টেনে সোজা করে দাঁড় করিয়ে, “দেখে শুনে চলবে” বলেই গটগট করে ওকে ছেড়ে নিচে নেমে গেল।
রাত্রি এখনোও মুগ্ধ নয়নে অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
আমি রুম থেকে বেড়িয়ে দেখি রাত্রি সিঁড়িতে একধ্যানে নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বলে উঠলাম,
– কিরে কোন ধান্দায় আছিস বল তো? আয় জলদি আমাকে রেডি কর।
.
রাত্রির হুশ ফিরায় সে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে আমার প্রশ্ন উপেক্ষা করে আমার হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে।
আমি বুঝলাম না ওর হঠাৎ হলো টাকি। এসব ভাবতেই আমার চোখেই পড়ে নি যে রাত্রি শাড়ি পড়েছে। যার ফলস্বরুপ রাত্রি মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো,
.
– কিরে অনু, তুই আমাকে বললি না যে কেমন লাগছে? এতো কষ্ট করে সেজেগুজে আসলাম আর তুই একটু কমপ্লিমেন্ট ও দিলি না। হুহ যা রাগ করসি।
(মনে মনে) অবশ্য যার জন্য সাজলাম সে তো দেখেও দেখলোনা। 😔
.
রাত্রির কথায় আমি ওর নিচ থেকে উপর একবার চোখ বুলিয়েই ফিউজ হয়ে গেলাম যেন, নেভি ব্লু রঙ টা কি দারুণ মানিয়েছে তাকে। সব মিলিয়ে একদম নীলপরির মতো লাগছে ওকে। মনে এক হলেও মুখে আরেক হয়ে ওকে ক্ষেপানোর উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম,
.
– কি এসব রে? পেত্নি সেজেছিস কেনো? আল্লাহ গো ভয় পাইছি আমি। 😱
– কি? আমাকে পেত্নির মতো লাগছে? এটা বলতে পারলি তুই?
.
বলেই মন খারাপ করে ফেললো রাত্রি। আমি তো মজা করলাম বাট ও সিরিয়াসলি নেবে তা ভাবি নি তাই মজা না করে সিরিয়াস মুডে বলে উঠলাম,
– না রে মজা করছিলাম। সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে। আজকে যে কত ছেলের মনে আগুন ধরাবি তুই ভাবতেই খুব এক্সাইটেড ফিল হচ্ছে রে। (হেসে)
.
– ইহহহ হইছে হইছে। বস এবার তোকে শাড়ি পড়িয়ে দেই। কোনটা পরবি বল তো? তোর তো আলমারি ভর্তি শাড়ি কিন্তু একটাও জীবনেও পড়িস নি। দাড়া আমি দেখছি।
.
বলেই ঝট করে আলমারি খুলে আপন মনে শাড়ি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রাত্রি। বেশ বুঝতে পারছি আজ শাড়ি পড়াবেই আমাকে। যাক এতোদিন পর শাড়ি পড়ার শখ টা মেটাতে পারবো। শুধু কিনেই রেখে দেই পড়া আর হয় না।
রাত্রি একটা ব্লাক জরজেটের শাড়ি বের করলো যেটায় হোয়াইট কালারের ভারী পাথরের কাজ আছে। বলতে গেলে শাড়িটা আমারও খুব পছন্দের তারওপর আমার ফেভারিট কালারও ব্লাক। রাত্রির চয়েজ আছে বলতে হবে।
.
রাত্রি খুব সুন্দর করে আমাকে শাড়িটা পড়িয়ে দিলো। সাথে ম্যাচিং ব্লাক এন্ড হোয়াইট পাথরের জুয়েলারি। নাকের ফুটাই করানো হয়নি তাই নাকফুল বাদে গলায় হাড়, আর কানে দুল। চুলগুলো এমনিতেই স্ট্রেট তাই কষ্ট করে মেশিন দিয়ে করাতে হয়নি। চুলগুলো দু ভাগ করে অর্ধেক সামনে নিয়ে এলাম। আর বাকি অর্ধেক পিঠে ফেলে রাখলাম। কোমড় পর্যন্ত চুল গুলো এক সাইডে সিথি করে নিলাম।
.
– এই অনন্যা, মেক আপ করবি?
.
– এই আমি ওসব করিও না আর কি কি লাগে আমার কাছে নাইও। জাস্ট কাজল আর লিপস্টিক আছে। ওগুলো দিলেই বেশি সেজেছি মনে হয় আর তো মেক আপ!
.
– আচ্ছা ঠিক আছে। কাজল আর রেড লিপস্টিক দে।
.
আমি মুচকি হেসে চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে রেড লিপস্টিক দিয়ে নিলাম। ব্যাস! আমার সাজ কমপ্লিট। নিজেকে আয়নায় দেখে নিজেই এক দফা ক্রাশ খেয়ে গেলাম। উফফ কি সুন্দর লাগছে।
.
– এই রাত না দিন আয়নায় দেখতো এটা কি আমিই? (সন্দেহের দৃষ্টিতে)
– না মহারানী ওটা ভূত। চল এবার জাওয়া যাক। 9 টা বেজে গেছে।
– হুম চল।
.
🍁
.
ভার্সিটিটা একদম ঝকমক করছে। অনেক সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। পুরো ক্যাম্পাসে চোখ বুলাতেই আমার চোখ এক জায়গায় আটকে গেল।
এটা কি সাদা বিলাই? হায় কি লাগছে। হোয়াইট শার্ট তারওপর ব্লাক কোটি। সিল্কি চুল গুলো ওঠানামা করছে। একদম পেস্ট্রি কেক! হায় হায়!
উনি লোকগুলোকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আর আমি হা করে উনাকে দেখছি। হঠাৎ রাত্রির হেচকা টানে ধ্যান ভাঙ্গে আমার৷ রাত্রি আমার হাত ধরে হাটা শুরু করে দিয়েছে।
.
হাটতে হাটতে হঠাৎ অনুভব করলাম আমার শাড়িটা লুজ হয়ে যাচ্ছে। এইরে পিন লাগাতে ভুলে গেছিলাম। এই জরজেট শাড়িতো এমনিতেই সামলানো যায় না। আমি হাটা থামিয়ে শাড়ির দিকে তাকাতেই কেউ ঝড়ের গতিতে এসে আমাকে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে যায়। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি হলো যে কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছিলাম।
.
চোখ পিটপিট করে খুলে সামনে তাকাতেই দেখি আমার যম আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগে ফোসফাস করছেন। যা দেখে আমি ভয়ে শেষ।

চলবে…………..❤

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-১০♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍂
.
– আ…আ…আপনি…! আ..আমাকে এখানে এনেছেন কেন? আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।
.
– জাস্ট সাট আপ! (চেচিয়ে) যেটা সামলাতে পারো না সেটা পরতে যাও কেন ড্যাম ইট? এখন যদি সবার সামনে শাড়ি খুলে যেতো তখন তো আমার প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যেতো। (প্রচন্ড রেগে)
.
নীবিড় ভাইয়ার গর্জন শুনে আমার বুকে মনে হচ্ছে কেউ ড্রাম বাজাচ্ছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে আমার। কিন্তু আমার শাড়ি খুলে গেলে উনার প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি হবে কেন? কথাটা বুঝতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলাম,
.
– আমার শাড়ি খুলে গেলে আপনার কি? যা যাবে তা তো আমার যাবে তাইনা? তো আপনার সম্মান নষ্ট হতে যাবে কেনো?
.
আমার কথার উনি ঠিক কি বুঝলেন তা আমার জানা নেই তবে উনার ঘাড় আর কপালের রগ ফুলে উঠলো নিমিষেই। উনার চোখ দিয়ে যেন লাভা বের হচ্ছে। উনি রেগে আমার পাশের দেয়ালে সজোড়ে ঘুষি মারলেন। যা দেখে আমি ভয়ে আঁতকে উঠলাম। রাগে ফোসফোস করতে করতে বলে উঠলেন,
.
– হেই ইউ লিসেন, অগ্নি তোমার ভাই। তোমার সম্মানহানি হওয়া মানে অগ্নির সম্মানহানি হওয়া। আর অগ্নির সম্মানে দাগ লাগা মানে বুঝতেই পারতেছো। আমি বেচে থাকতে তা কোনো দিনই হতে দিবো না। গট ইট? (চেচিয়ে)
.
উনার এক একটা চিৎকার আমার কলিজা ভেদ করে বেরিয়ে যাচ্ছে মনে হয়। এরকম আরো ২-৩টা ধমক খেলে আমাকে আর পাওয়া যাবে না। আমার প্রাণ পাখি বিদায় পিতিবি বলে ফুরুত করে উরে যাবে। ইতিমধ্যে আমার গা ঘেমে উঠেছে শকের পর শক গুলো আমি নিতে পারতেছিনা। উনাকে দূর থেকে যতটা কিউট লাগে কাছ থেকে ঠিক ততটাই ভয়ানক লাগে। আমার মনে হয় উনার নাম নীবিড় না রেখে অগ্নি রাখতে হতো আর ভাইয়ার নাম অগ্নি না দিয়ে নীবিড় দিতে লাগতো। তাহলে হয়তো তাদের ন্যাচারের সাথে নামটা মানানসই বলা যেত।
.
– এই মেয়ে! তোমার কাছে পিন আছে?
.
ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে পিনের কথা শুনতেই মনে পড়লো পিন আমার হ্যান্ডব্যাগেই আছে। আমি মুখে কিছু না বলে হা বোধক মাথা ঝুকালাম। উনি বাঁকা হেসে আমার ব্যাগ থেকে পিন বের করে ফ্লোরে নিচু হয়ে ঝুকে বসলেন। উনি ঠিক কি করতে চাচ্ছেন তা আমার এই ছোট্ট মাথায় ঢুকতে চাইছে না মোটেই। আমি শুধু ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছি উনার দিকে।
উনি হুট করে সোজা হয়ে দাঁডিয়ে আমার কোমড় থেকে আধখুলা শাড়ির কুঁচিগুলো খুলে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলেন। ঘটনার আকস্বিকতায় আমি পুরাই স্তব্ধ বনে গেলাম। আমি ভাবিও নি উনি এমন কিছু করবেন। আমি ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। কিন্তু তাতে উনার আদৌ কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বললেই চলে। উনি আপন মনে আমার দিকে না তাকিয়েই খুব মনোযোগ সহকারে শাড়ির কুঁচি গুলো পূণরায় করতে লাগলেন।
আমি বাঁধা দিতে চেয়েও থেমে যাচ্ছি। কেনো যেন মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না।
উনার কুচি করা হয়ে গেলে তাতে পিন দিয়ে আটকিয়ে সেট করে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। অপর পাশে মুখ ফিরিয়ে বলে উঠলেন,
.
– নাও ধরো। কুঁচিগুলো ভালো করে গুঁজিয়ে নাও।
.
আমি কাঁপাকাঁপা হাতে কুঁচিগুলো হাতে নিয়ে কোমড়ে গুঁজিয়ে নিলাম। উনি উল্টো দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন,
.
– ইজ ইট ডান?
.
আমি কাঁপাকাঁপা গলায় “হুমম” বলে উঠলাম। উনি উত্তর পেয়ে আমার দিকে ফিরেই আবার নিচে বসে পড়লেন। আমি উনার উদ্দেশ্য বুঝবার জন্য উনার দিকে হেলে তাকালাম।
.
উনি কত যত্ন সহকারে শাড়ির কুঁচকে যাওয়া কুঁচিগুলোর প্রান্ত হাত দিয়ে সোজা করে দিলেন। আমি তো অবাকের পর অবাক হয়ে যাচ্ছি। উনার এই রূপগুলো আমি নিতে পারছিনা। আমার বুকটা কেমন যেনো ধুকপুক করা শুরু করে দিয়েছে। ঘেমে শরীর একাকার। উনি হয়তো আমার অবস্থা বুঝতে পেরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের পকেট থেকে টিস্যুর একটা প্যাকেট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
.
– টেক ইট। আই থিংক ইউ নিড দিস। ঘাম মুছে ফ্রেশ মাইন্ডে ফাংশন এটেন্ড করো।
এন্ড ওয়ান মোর থিংক ফাংশন স্টার্ট হওয়ার পর স্টেজের আশেপাশেই থেকো। এনাউন্সমেন্টে নাম ডাকলে স্পিচ দিতে উঠে যেও। ওকে?
.
আমি উনার হাত থেকে টিস্যুর প্যাকেটটা নিয়ে প্রতিউত্তরে শুধু হ্যা বোধক মাথা নাড়ালাম। উনি আমার দিকে না তাকিয়েই শার্ট থেকে সানগ্লাসটা এক হাত দিয়ে পড়তে পড়তে বড় বড় পায়ে চলে গেলেন। আমি পুরাই আহাম্মক হয়ে চেয়ে রইলাম উনার যাওয়ার দিকে।
.
.
আমি আর রাত্রি ক্যান্টিনে বসে স্ট্র দিয়ে জুস খাচ্ছি। খিদের জন্যে নয়, শুধু মাত্র গলাটা স্বাভাবিক করার জন্য। কারণ গলাটা এতোটাই শুকিয়ে গেছে যে গলা থেকে কোনো আওয়াজই বের হচ্ছিলো না। এতোক্ষণে কম করে হলেও নিম্নে ৫০ বার রাত্রি আমাকে প্রশ্ন করেছে যে হুট করে ওর পাশ থেকে কোথায় গেয়িছিলাম। কিন্তু আমার মুখ থেকে একটা কথাও বের হয়নি। আমি শুধু হাতের ইশারায় ওকে বলেছিলাম ক্যান্টিনে যেতে। একপ্রকার বাধ্যহয়েই মুখ একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমার সাথে জুস খাচ্ছে।
.
– অনন্যা হলো তোর গলা
ভেজানো হলো? এবার তো বল ওরকম ভূতের মতো উধাও হলি কিভাবে? আমি এক মুহুর্তের জন্য অন্যদিকে তাকাতেই হাওয়া!
.
আমি জুসের গ্লাসটা শেষ করে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নড়েচড়ে বসলাম। আমার ভাবভঙ্গি এই যে এখন এমন একটা মারাত্মক সিরিয়াস কথা বলবো যে পুরা দুনিয়া উলটে যাবে।
রাত্রি আমার এক্সপ্রেশন দেখে নিজেও প্রিপেয়ার্ড হয়ে আমার দিকে মনোযোগ দিয়ে কান খাড়া করে তাকালো। কিন্তু আপসোস আমি ওর সমস্ত আশায় এক গামলা জল ঢেলে দিয়ে আমি বলে উঠলাম,
.
– আমার না খুব জোড় ইয়ে পেয়েছিল। (হাতের এক আঙুল উঁচু করে দেখিয়ে)
.
মুহূর্তেই আমার কথা শুনে রাত্রির মুখ লাল, নীল, বেগুনি রঙের মিক্সারে যে রং পাওয়া যায় এই বর্ণ ধারণ করলো। রাগচণ্ডী বেশ ভালো করেই রাত্রির ঘাড়ে বসেছে তা ওর হাবভাব দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তবে এতে আমার কোনো হেলদোল হলো না। চুপচাপ বসা থেকে উঠে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে হাটা ধরলাম স্টেজের দিকে। ফাংশন অলরেডি স্টার্ট হয়ে গিয়েছে। আর এনাউন্সমেন্টে আমার নাম ডাকতে বেশি সময় নেই।
.
রাত্রি রেগে মেগে বোম্বাই মরিচ হয়ে আমার পেছনে ছুট লাগালো। আমিও এবার কিছু সিরিয়াস হয়েই শাড়ি ধরে জগিং এর মতো ধীরে ধীরে দৌড়োতে লাগলাম। রাত্রিও যে অলিম্পিকের ট্রফি নিতে জান প্রাণ বাজি রেখে ছুটবে তা কিন্তু না। যেহেতু সেও শাড়িই পড়েছে সো নো টেনশন।
কিছুদূর যেতেই সামনে অগ্নি ভাইয়া চলে আসে। এসেই এক ধমক।
.
– ওই দৌড়োচ্ছিস কেনো? (আমাকে ভালো করে দেখে)
অনু বোন তুই শাড়ি পড়ছিস? সিরিয়াসলি? (নিজের হাতে একটা চিমটি কেটে)
সত্যিই তো! তা কে পড়িয়ে দিলো? আম্মু দিবে না নিশ্চয়। তুই যে তিড়িংবিড়িং গঙ্গা ফড়িং আম্মু শাড়ি পরানোর রিস্ক নেওয়ার মতো মানুষ না।
.
রাত্রি ভাইয়ার কথা শুনে বলে উঠলো যে সে আমাকে পড়িয়ে দিয়েছে।
ভাইয়া রাত্রির কথা শুনে আমাদের দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
– শাড়ি পরেছিস ভালো কথা। লাফালাফি বাদ দিয়ে সাবধানে চলা ফেরা কর। আমি গেলাম। এনাউন্সমেন্টের কাজ আছে। ডাক দিলে চলে আসিস।
.
আমি শুধু সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালাম। ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল। এদিকে রাত্রির মনটা খারাপ হয়ে গেল কারণ অগ্নি একটিবারের জন্যেও ওর দিকে তাকায় নি।
.
🍁
.
স্টেজে মাইক্রোফোনটা ধরে কি কি বলতে হবে তা একবার মেমোরাইজ করে বলা শুরু করলাম,
.
– সম্মানীয় শিক্ষকবৃন্দ এবং সকল ছাত্র ছাত্রীদের আমার সালাম। আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।
ফার্স্টলি থ্যাংকস ফর গিভিং মি আ চান্স। আমি আয়ানা জাহান অনন্যা! ফাস্টইয়ার স্টুডেন্ট, ডিপার্টমেন্ট কেমিস্ট্রি! সবে আজ ধরে ৪ দিন হলো আমার এই ভার্সিটির সাথে পরিচয়। এই কয়দিনেই আমি যেটা লক্ষ্য করেছি তার মধ্যে টিচার্স দের লেকচার উল্লেখযোগ্য। তারা স্টুডেন্ট দের সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি। খুব সহজেই বুঝিয়ে লেকচার দেন তারা। যেটা আমার খুব ভালো লেগেছে। এন্ড সকল সিনিয়র স্টুডেন্টস রাও অনেক হেল্প ফুল। তারা আমাদের রুলস বুঝিয়ে দেন। (নীবিড় ভাইয়ার কথা মনে পড়তেই) ভুল করলে ভুল ধরিয়ে যথাযথ শিক্ষাও দেন। আর ক্যাম্পাস তো বরাবরই সব থেকে পছন্দের আমার কাছে। সব মিলিয়ে ইটস আ রিয়েলি ভেরী ইম্প্রেসিভ ভার্সিটি ইন বিডি! ইটস সো প্লেজার টু মি টু হ্যাভ আ চান্স ইন্টু দিজ ভার্সিটি।
এভরিবডি স্টে হ্যাপি।
থ্যাংকইউ!
.
বলেই নিজের বক্তব্য শেষ করে নিচে নেমে এলাম। সবার করতালির ধ্বনি কানে বারি খাচ্ছে বারংবার। কিন্তু আমার দুচোখ খুঁজছে রাত্রিকে। এতো মানুষের মধ্যে নিজের সিট ফেরত পাবো তো। সেই ভয় নিয়ে এগোতেই দেখি এক জোড়া হাত আমাকে ইশারা করে ডাকছে। হাতগুলো আর কারো না আমার জানু রাত্রির।
ও আমার সিটে নিজের ব্যাগ রেখে জায়গা ধরে রেখেছিলো। আমি ওর গাল টেনে মুচকি হেসে বসে পড়লাম।
.
– দোস্তো ফাটিয়ে দিয়েছো। আর একটা হেব্বি খবর আছে।
– কি খবর শুনি?
– আরে নীবিড় ভাইয়া তার গ্রুপ সহ ড্যান্স করবে।
– ওয়াট? সাদা বিলাই নাচতেও পারে? আমি তো জানি শুধু নাচাতেই পারে। 😅
– তা আর বলতে? শুনেছি ফাটাফাটি নাচে ভাইয়া। আজ স্বচক্ষে দেখেই নেই।
– ওকে দেখি সাদা বিলাইয়ের তাতা থৈ থৈ।
.
🍁
.
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। এতো গুলো পারফরমেন্স যে শেষই হচ্ছেনা। এরপরের পারফরমেন্স নাকি নীবিড় ভাইয়ার। তাই একটা অন্যরকম এক্সটমেন্ট কাজ করছে।
আহা আহা সাদা বিলাই ধিতাং ধিতাং করে নাচবে ভাবা যায়!
.
– শিট! অগ্নি কোথায়?
– জানি না ভাই, কি একটা কাজ আছে বলে বেরিয়ে গেছেন।
– হোয়াট দ্য হেল! এটা লাস্ট পারফমেন্স ছিল তাও আমাদের। এভাবে চলে যেতে পারলো? কি এমন মহান কাজ। শালা আসুক খালি। ওরে বুঝাবো। এই রোহান তোরা অগ্নি বাদে দু জন তাইতো?
– জ্বী ভাই।
– ওকে আমার পেছনে সাইড বরাবর ফাঁকা রেখে থাকবি আমি সামনে। ওকে? চল চল টাইম হয়ে গেছে।
.
.
– তোমার প্রবলেম কি? এভাবে হুটহাট না বলে চলে আসো কেন? (অগ্নি)
– তোমার জন্য! এই আজকে তোমাকে অন্নেক সুন্দর লাগছে। চলো ওইদিকটায় যাই। (নিত্য)
– সাট আপ! তোমার মাথা ঠিক আছে? পারফরমেন্স ছেড়ে আসছি আমি। ওদের কি জবাব দেবো?
– আমার ভাই ই তো। ঠিক সামলে নেওয়া যাবে। এখন চলো নাহলে আমি রাস্তা বসে কান্না শুরু করে দিবো।
.
বলেই একপ্রকার জোড় করে অগ্নিকে নিয়ে গেলো নিত্য।
.
🍁
.
স্টেজ পুরো অন্ধকার…! হুট করে নীল, লাল ছোট ছোট বাতি জ্বলে উঠলো, সবার এক্সাইটমেন্ট যেন আর ধরে না।
প্লে করা হলো মিঠুন চক্রবর্তীর ” I am a Disco Dancer” song এর নেউ ভার্সন। যেটাই Tiger shroof সুট করেছেন।
.
.
নাচ শেষ কিন্তু আমার মুখ এখনোও হা! এক সাথে দশ কি বারোটা ফুচকা ঢুকানো যাবে নির্ঘাত। হায় ম্যায় মার যাবা। কি নাচলো! উফফফ পুরাই টাইগার স্রোফ! আমি সহ অনেকেরই একি অবস্থা। এর মাঝে অনেকে আগে থেকেই উনার নাচ দেখছে তাই এতোটাও অবাক হন নি। তবুও অনেকটাই অবাক।
.
– এই অনন্যা? হুশে আয়। পারফরমেন্স শেষ।
.
রাত্রির ডাকে হুশ ফিরলো আমার। অনেকেই যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। ফাংশন শেষ হয়ে গেল। ইশশ! আর একটু নাচলে কি এমন হতো?
.
রাত্রি ওর আব্বুকে গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো,
– এই অনু আব্বু আসছে আমাকে নিতে। তুই অগ্নি ভাইয়ার সাথে যাস রে। ঠিক আছে?
– ওকে যা তুই।
– আচ্ছা জানু উম্মমাহ! (যেতে যেতে)
.
.
.
চলবে……………….❤