প্রেম এসেছিলো নীরবে পর্ব-১০ + বোনাস পর্ব

0
735

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (১০)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছে প্রাহি।সামনেই অর্থ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ওদের সামনেই একটা ছেলে জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে।ছেলেটাকেও থাপ্পর মেরেছে অর্থ।ছেলেটাকে চিনেনা প্রাহি আজকে দিয়ে দুদিন হলো ছেলেটা ওকে প্রেম নিবেদন করেছে।প্রাহি কাল না করে দেওয়া সত্ত্বেও ছেলেটা আজ আবার এসেছে।আর স্কুলের দারোয়ান সে কথা অর্থকে বলে দিয়েছে।তাই তো অর্থ প্রাহিকে নামিয়ে দিয়ে আর যায়নি।অপেক্ষায় ছিলো কখন ছেলেটা আসবে।স্কুল ছুটির পর প্রাহি বের হতেই ছেলেটা ওকে আবারও প্রোপোজ করে।প্রাহি বারবার মানা করে দেয়।কিন্তু ছেলেটা ওকে বলে যে ওর হাতের গোলাপটা যদি প্রাহি নেয় তাহলে ছেলেটা আর ওকে ডিস্টার্ব করবে না।প্রাহি ভেবেছে একটা ফুলই তো।ফুলটা নিলে যদি ছেলেটা ওকে আর ডিস্টার্ব না করে তাহলে তো অনেক ভালো।তাই তো ফুলটা নিয়েছিলো।আর তখন ছেলেটাকে এক চড়ে অজ্ঞান করে দিয়ে।উলটো ঘুরে আবারও প্রাহিকে রাম থাপ্পড় মারে অর্থ।
অর্থর পুরো মুখশ্রী লাল হয়ে আছে।চোখজোড়া ভয়ানক লাল।পারলে এক্ষুনি সে প্রাহিকে মেরে ফেলে।কিন্তু সেটাও পারছে না।এই মেয়েটার কিছু হলে ও নিজেও মরে যাবে।নিচে পড়ে থাকা ছেলেটাকে ওর অন্যান্য বন্ধুরা ধরাধরি করে নিয়ে গেলো।এদিকে প্রাহি লজ্জায়,ভয়ে, অভীমানে আর মাথাটাই তুললো না।এতোগুলো মানুষের সামনে অর্থ তাকে থাপ্পর মেরেছে।সবাই নিশ্চয়ই হাসছে।অর্থ ভীষন রেগে দাঁত কিরমিরিয়ে বললো,

-” চল,তোকে ছেলেদের থেকে গোলাপফুল নেওয়া ভালোভাবে শিখিয়ে দিবো।”

বলেই প্রাহির হাত ধরে হনহন করে হাটলে লাগলো।কিন্তু অর্থের এমন দানবিয়ভাবে হাটাচলার সাথে কি প্রাহি পেরে উঠে?প্রাহি উষ্ঠা খেয়ে প্রায় পরেই যেতে নিচ্ছিলো।অর্থ তাকে এক টানে কোলে তুলে নিয়ে হাটা দিলো গাড়ির দিকে।এদিকে অন্যরা চোখ বড়বড় করে ওদের দেখছে।
—–

গাড়িতে একেবারে জানালার সাথে লেগে বসে আছে প্রাহি।গালে হাত দিয়ে এখনো ফুপাচ্ছে।পাশেই অর্থ চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে।কিছুতেই সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।তার পিচ্চিটা অন্য একজনের হাত থেকে গোলাপ নিয়েছে দৃশ্যটা যতোবার ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে ততোবার ওর মন চাচ্ছে সব কিছু ভেংগে গুরিয়ে দিতে।এদিকে প্রাহিকে এমনভাবে কাঁদতে দেখেও ওর রাগটা আরো তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। অর্থ এইবার সোজা হয়ে বসে প্রাহিকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।তারপর প্রাহিকে কিছু বুজার সুযোগ না দিয়েই প্রাহি স্কুল ড্রেসটা কাধ থেকে টান দিয়ে নামিয়ে দিয়ে প্রাহির কাধে একটা কামড় দিলো।ওতোটাও জোড়ে না।এদিকে প্রাহির যেন নিশ্বাস আটকে গিয়েছে।শীরদারা দিয়ে যেন একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।হাত পা অবশ হয়ে আসছে ওর।এটা কি করছে অর্থ ওর সাথে?নিজেকে কোনভাবেই সামলাতে পারছে না প্রাহি।অর্থ যখন ঠোঁটজোড়া আরো গভীরভাবে স্পর্শ করলো প্রাহি চোখ খিচে বন্ধ করে অর্থ’র কোট খামছে ধরলো।প্রাহি সহ্য ক্ষমতা শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্থ’র বুকে নিজের মাথা এলিয়ে দিলো।প্রায় অনেকক্ষন পর অর্থ ঠোঁটজোড়া সরিয়ে স্কুল ড্রেস ঠিক করে দিলো প্রাহির।তারপর একহাত প্রাহির কোমড়ে আরেকহাত প্রাহির মাথার পিছনে দিয়ে প্রাহিকে নিয়ে জানালার সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া হলো।প্রাহি এখনো অর্থ’র কোট খামছে ধরে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।অর্থ প্রাহির কানের কাছে মুখ নিলো।এতে অর্থের নিশ্বাসগুলো প্রাহির কানে এসে বারি খাচ্ছে।প্রাহি আবারও কেপে উঠে আরেকটু সিটিয়ে গেলো অর্থের মাজে।অর্থ ফিসফিসিয়ে বলে,

-” অন্য ছেলের থেকে গোলাপটা নেওয়ার আগে একবারও বুক কাঁপলো না তোমার?আমার কথা একবারও মনে পরলো না?”

প্রাহি এইবার ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো।অর্থের কোট খামছে ধরা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।এতেই যেন অর্থ’র রাগ গলে গেলো।অর্থ আরেকটু শক্ত করে প্রাহিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-” ওই ছেলেটা আমকে কাল প্রেম নিবেদন করেছিলো।আমি না করে দিয়েছি।আজও আবার এসেছে আমি আজও মানা করে দিয়েছি।কিন্তু সে কিছুতেই মানতে রাজি হচ্ছিলো না।বললো তার ওই ফুলটা গ্রহন করলে আর ডিস্টার্ব করবে না।আমিও ভাবলাম একটা ফুলই তো যদি নিয়ে নেই তাহলে আর আসবে না ছেলেটা। তাই তো হাতে নিয়েছিলাম তারপরেই তো আপনি এসে…..!”

আর বলতে না পেরে আবারও কান্না করতে লাগলো প্রাহি।অর্থ’র বুকে মুখ গুজে আছে ও।আর অর্থ প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অর্থ’র বুকটা শীতলতায় ছেয়ে আছে।কারন তার প্রেয়সীযে এখন তার বুকে।অর্থ প্রাহির চুলে ঠোঁট ছোয়ালো।প্রাহির ভারি নিশ্বাস অর্থ’র বুকে বারি খাচ্ছে।অর্থ প্রাহির মাথাটা উঠিয়ে দেখে প্রাহি ঘুমিয়ে গিয়েছে।অর্থ এইবার সাবধানে উঠে বসলো।প্রাহিকে নিয়েই ড্রাইভিং এ বসলো।প্রাহির দু-পা ওর দুই কোমড়ে আড়-আড়িভাবে রেখে একহাতে প্রাহিকে আগলে রেখে আরেকহাতে ড্রাইভিং করতে লাগলো।
——
ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিলো আরাফ,হিয়া আর হেমন্ত।আজ আরাফ এখানে প্রাহিকে দেখতে এসেছে।তারও একটু দেখতে ইচ্ছে করে ওর বন্ধুটা কেন ওই পিচ্চি মেয়েটার জন্যে এতো পাগল।ওদের আড্ডার মাজেই অর্থ প্রাহিকে কোলে নিয়ে ভীতরে ডুকলো।হিয়া ওদের দেখতে পেয়েই দাঁড়িয়ে গেলো।দ্রুত পায়ে ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেলো ও।হিয়াকে এইভাবে দাড়াতে দেখে ওরাও পিছনে ফিরে অর্থ আর ওর কোলে প্রাহিকে দেখতে পেলো।হিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কোন কিছুরই জবাব দিলো না অর্থ। শুধু গম্ভীর স্বরে হিয়াকে বলে,

-” ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আয় যা।”

হিয়া ভ্রু-কুচকে একপলক ভাইকে দেখে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।গিয়ে মা আর কাকিকেও সবটা বললো।তারাও রান্না রেখেই ড্রয়িংরুমে ছুটলো।হিয়া বরফ নিয়ে এসে অর্থ’র সামনে রাখতেই।অর্থ প্রাহিকে একসাইড থেকে জড়িয়ে ধরে প্রাহির মাথাটা ওর বুকে ঠেকালো।তারপর বাটি থেকে বরফ তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে প্রাহির গালে ঘসতে লাগলো।হঠাৎ গালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেতেই কেপে উঠে প্রাহি।কিন্তু কান্না করার ফলে ঘুমটা ওর বেশ গাঢ়ো হয়েছে তাই উঠলো না।অর্থ’র আরেকটু কাছে ঘেসে গেলো ও।এদিকে রায়হানা বেগম আর হেনা এসে এসব দেখতেই ভ্রু-কুচকালেন।রায়হানা বেগম প্রাহির গালে আঙ্গুলের ছাপ দেখে বুজতে বাকি রাখলেন না ছেলে তার প্রাহিকে থাপ্পড় মেরেছে।উনি হেনার দিকে তাকালেন দেখেন হেনা ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছেন।রায়হানা বেগম এইবার হালকা রাগি আওয়াজে বলে,

-” তুমি প্রাহিকে মেরেছো?”

অর্থ’র সহজ সিকারোক্তি,

-” হ্যা!”

রায়হানা যেন এতে আরো রেগে গেলেন বললেন,

-” কেন মেরেছো?”

অর্থ প্রাহির গালে বরফ ডলা অবস্থায় সবার দিকে তাকালো।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবটা বললো সবাইকে।সব শুনে আরাফ আর হেমন্ত মুখ টিপে হাসতে লাগলো।ওদের হাসতে দেখে হিয়াও হেসে দিলো।ভাই তার পুরোই পাগল হয়ে গেছে।প্রাহিকে প্রোপোজ করেছে তাই জন্যে একসাথে দুটোকেই চড় থাপ্পড় দিয়ে অবস্থ খারাপ বানিয়ে দিয়েছে।এদিকে রায়হানা বেগম রাগী গলায় বলে,

-” তাই বলে তুমি প্রাহিকে থাপ্পড় মারবে?প্রাহির এখানে কি দোষ।”

অর্থ শক্ত কন্ঠে বলে,

-” ও ফুলটা কেন নিলো ওই ছেলের হাত থেকে?”

রায়হানা বেগম আবারও বললেন,

-” প্রাহি তো কারনটা বলেছে তাইনা?এটলিস্ট ওর থেকে জিজ্ঞেস তো করে নিবে?”

অর্থ দাঁত খিচিয়ে বললো,

-” বেশ করেছি থাপ্পড় মেরে।এরকম করলে আবার থাপড়াবো ওকে।”

রায়হানা বেগম আবার কিছু বলতে নিবেন।হেনা তাকে টেনে রান্না ঘরে নিয়ে আসলো।রায়হানা বেগম অবাক হয়ে বলে,

-” নিয়ে আসলি কেন?”

হেনা হাসি মুখেই বলে,

-” অর্থকে কেন বকছো শুধু শুধু?প্রাহিকে ভালোবাসে তাই তো মেরেছে।অন্য ছেলেকে প্রাহির কাছে দেখে জেলাস হয়েই এটা করেছে।আর কিছু বলো না ভাবি।”

রায়হানা বেগম শুধু অবাক হয়ে হেনাকে দেখে গেলেন।এদিকে অর্থকে এইভাবে দেখে হেমন্ত,আরাফ, হিয়া হাসছে আবার ছোট্ট প্রাহির জন্যে খারাপও লাগছে।অর্থ এইবার সবার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে থেকে প্রাহিকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেলো।প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে কম্পল গায়ে দিয়ে দিলো।প্রাহির গালে হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বলে,

-” তুমি শুধু আমার আর কারো নও।”

প্রাহির কপালে চুমু খেয়ে অর্থ চলে গেলো নিজের রুমে।

#চলবে______

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পর্ব)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
(বিঃদ্রঃটা পড়বেন)
হিয়াজ সিকদার বেজায় রেগে আছেন অর্থ’র উপরে।তার ছেলে যে এমন কিছু করবে সে ভাবতে পারেনি।রাগি চোখে অর্থকে উদ্দেশ্যে করে বললো,

-” কেন এমনটা করলে?এটা খুব জরুরি ছিলো?আমরা সবাই জানি যে তুমি আহিকে ভালোবাসো। তাই বলে কি প্রাহির সাথে যা মন চায় তাই করবে?তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছি আমরা?নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে শিখো অর্থ।তোমাকে যদি আমি কখনো আর কোনদিন প্রাহির গায়ে হাত তুলতে দেখি আমি প্রাহিকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিবো বলে দিলাম।তুমি প্রাহিকে আর কোনদিন আর প্রাহিকে পাবে না।”

রায়হানা বেগমও রেগে আছেন বেজায়।তিনি বললেন,

-” ভালোবাসা আগলে রাখতে শিখো।রাগ সবকিছু ধ্বংশ করে দেয়।রাগের মাথায় এমন কিছু করোনা যাতে তোমার প্রিয় মানুষগুলো কষ্ট পায়।তোমার এই অতিরিক্ত রাগের কারনেই আমি তোমাকে মাত্র ১১ বছর বয়সে তোমার মামাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।সেখানে গিয়ে চিকিৎসাও করিয়েছি তোমার।এই অতিরিক্ত রাগের জন্যে।চিকিৎসার কারনে অনেকক্ষানি রাগ কমে এসেছে।আমাদের সাথে রাগ দেখাতে না।কিন্তু বুজলাম না প্রাহি আসার পর থেকে তোমার রাগের মাত্রাটা বেরে গেছে অনেক।এমন হলে আমি তোমাকে আবারও তোমার মামা মামির কাছে পাঠিয়ে দিবো।আবার তোমাকে চিকিৎসা নিতে হবে এই রাগ কমানোর জন্যে।”

অর্থ মাথা নিচু করে আছে।সে বুজতে পারছে আজ সত্যিই প্রাহির গায়ে হাত তোলা ওর উচিত হয়নি।কিন্তু সে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রন করতে পারিনি।তবে প্রাহির জন্যে তার ভালোবাসাটা মিথ্যে না।নাহ,তাকে আবারও ডাক্তারের সর্নাপন্ন হতে হবে।আবারও মেডিসিন খেতে হবে।প্রাহির জন্যে হলেও ওকে বদলাতে হবে।ওর রাগের মাত্রা কমাতে হবে।অর্থ সবার দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।হেমন্ত, আরাফ আর হিয়াও বুজতে পারছে।যেটা স্বাভাবিক বিষয়ভেবে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো।সেটা আসলেই স্বাভাবিক না।প্রাহিকে মারাটা অর্থ’র একদম ঠিক হয়নি।তাই তারাও মাথা নিচু করে বসে আছে।হেনা কিছুই বলছেন না।কারন তিনি জানেন সকালে রায়হানা বেগমকে চুপ করালেও তিনি যে হিয়াজ সিকদারকে সব বলে দিবেন তা তিনি খুব ভালো জানেন।তাই তো সকালে আর কোন ঝামেলা করেননি।কারন সকালে তিনি যদি কিছু বলতেন তাহলে এটা ঠিক হতো না।কারন অর্থ’র বাবা মা আছেন।তারা অর্থ’র শাষন করতে পারবেন।তিনি আগ বারিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।যদি দেখতো হিয়াজ বা রায়হানা কিছু না বলতেন তাহলে তিনি কিছু বলতেন।কিন্তু তিনি জানেন হিয়াজ আর রায়হানা কখনো ছেলেমেয়ের অন্যায় মেনে নেন না।অর্থকে বুজানোর দায়িত্ব আগে ওর বাবা আর মার তারপর তাদের।নুরুল আমিন সিকদার হিয়াজ সিকদারকে শান্ত করলেন।বললেন তিনি নাতিকে বুজিয়ে বলবেন যাতে এরকম যেন আর না করে।তবে মনে মনে তিনিও একটু রেগেছেন অর্থ’র উপর।হিয়ান্ত সিকদার ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন আর তাকে বুজাচ্ছেন সবটা।
——-
বেডে মাথা নিচু করে বসে আছে প্রাহি।ওর চোখ দিয়ে অস্রুকনা গড়িয়ে পরছে।জীবনটা এতো কঠিন কেন ওর জন্যে?সবার সামনে হাসি খুশি আর বাচ্চামো করে মেতে থাকলেও।ওর ভীতরটা তো আর কেউ জানেনা তাই না?সে হাসিখুশি থাকে কারন ও চায়না ওর মন খারাপ দেখে বাকিরা কষ্ট পাক।ও এই কারনে হাসি খুশি দুষ্টুমি করে কারন ওকে খুশি দেখে যেন বাকিরাও খুশি থাকে।কিন্তু আজ আর পারছেনা নিজেকে ধরে রাখতে।এতোদিনের কষ্টগুলো যেন বাধ ভাঙ্গা জোয়ার হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।নিজের সাথে লড়াই করতে করতে ও ক্লান্ত।আজ বিনা কারনে সে শাস্তি পেয়েছে।কেন পেলো?কি দোষ ওর?সে তো আর ইচ্ছে করে যায়নি ছেলেটার কাছে তাই না?এতোদিন লোকটার সবকিছু সে মেনে নিয়েছে।কারন বাড়িটা তাদের।তারা ওকে এতো সুন্দর ভাবে থাকতে, খেতে,পড়তে দিচ্ছে এটাই তো অনেক।তাই কিছু বলতো না।কিন্তু আজ লোকটা থাপ্পড় মেরেছে আবার বিনা অনুমতিতে ওকে স্পর্শও করেছে।তবে প্রাহিকে নিজেকে নিজেই অনেকগুলো থাপ্পড় মেরেছে।কারন তখন কেন লোকটাকে থামাতে পারিনি ও।কেন লোকটার বুকে মাথা রেখে কেঁদেছে।মনে হয়েছে ওই লোকটার বক্ষস্থল ওর কাছে দুনিয়ার সবথেকে নিরাপদ স্থান।কেন পারেনি দূরে ঠেলে দিতে?কেন?নিজেরই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে প্রাহির।লোকটার সামনে সে আর কখনো যাবে না প্রাহিকে।যাবে না।এগোরটা বছর যাবত তিলে তিলে শেষ হয়েছে সে।ওর মতো বয়সে মেয়েরা রাজকন্যা হয়ে থাকতো আর সে থেকেছে কাজের মেয়ে হয়ে।তবুও মিথ্যে হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে এই বাড়ির প্রতিটা লোকের সামনে থেকেছে।বাচ্চামো করে বুজিয়েছে সে এখানে এসে ভালো আছে।কিন্তু তার ভীতরের শূন্যতাটা কেউ অনুভব কর‍তে পারেনি কেউ না।রাতের অন্ধকারে হাজারো অস্রুকনা দিয়ে সে যখন বালিশ ভিজিয়ে কাঁদে সেটাও যেন কেউ না বুজে তাই হাসতে থাকে সে।ঠিক একদিন এমন করে মিথ্যে হাসি হাসতে হাসতে একদিন সে এই পৃথিবীটাও ত্যাগ করবে।কিন্তু তার যে এখনি মরে যেতে ইচ্ছে করে।বাঁচতে ইচ্ছে করেনা।অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচাটা যেন গলায় কাটার মতো বিধে থাকে ওর।পারছে না সে আর এই মিথ্যে অভিনয় করতে।ক্লান্ত অনেক ক্লান্ত ও।সে চিরনিদ্রায় যেতে চায়। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব?

#চলবে___