প্রেম এসেছিলো নীরবে পর্ব-০৯

0
745

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(৯)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
গাড়িতে জানালার সাথে ঘেসে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে প্রাহি।একটু আগেই অর্থ তাকে ধমক দিয়েছে।স্কুল ছুটির শেষে গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো প্রাহি।অর্থ সেই স্কুলের দারোয়ানকে বলে গিয়েছে স্কুল ছুটি হলেই যেন প্রাহিকে তার সাথে রাখে।অর্থ এসে ওকে নিতে আসবে।কিন্তু প্রাহি তা অমান্য করেছে।আসলে স্কুল ছুটি শেষে রাস্তার অপাশে ফুসকা দেখে প্রাহির খেতে মন চাইছিলো।প্রাহি যেতে নিলেই দারোয়ান ওকে মানা করে দেয়।অর্থ প্রাহিকে কোথাও যেতে মানা করে দিয়েছে।কিছুক্ষন পর অর্থ আসতেই প্রাহি অনেকটা সাহস জুগিয়ে মিনমিন করে অর্থকে ফুসকা খাওয়ার কথা বলতেই অর্থ ওকে না করে দেয়।আবারও একই কথা বলায় রামধমক দিয়ে প্রাহি টানতে টানতে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।সেই থেকেই প্রাহি মুখ ফুলিয়ে ঠোঁট উলটে বসে আছে। অর্থ গম্ভীর স্বরেই বলে,

-” আজ স্কুলের প্রথম দিন কেমন গিয়েছে?”

প্রাহি কিছুই বললো না।চুপ করে বসে রইলো।অর্থ আবারও একই কথা জিজ্ঞেস করলেও প্রাহি কিছুই বলল না।এইবার অর্থ আবারও ধমকে বলে,

-” হোয়াট্স রোং উইথ ইউ?কিছু জিজ্ঞেস করলে আন্সার দিচ্ছো না কেন?”

প্রাহি এইবার অর্থ’র ধমক খেয়ে কেঁদেই দিলো।দুহাত দিয়ে বাচ্চাদের মতো করে চোখ মুচ্ছে আর কাঁদছে।অর্থ সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক কষলো।বললো,

-” হোয়াট দ্যায়ায়া।কি সমস্যা এরকম কান্না করছো কেন?”

প্রাহি কাঁদতে কাঁদতেই বলে,

-” আপনি আমাকে ফুসকা খেতে দিননি। আবার কতোবার ধমন দিয়েছেন।আমি থাকবো না আপনার কাছে।”

প্রথমে প্রাহির কথাগুলো ভ্রু-কুচকে শুনলেও।শেষের কথাগুলো শুনে অর্থ রেগে গেলো।এক ঝটকায় নিজের আর প্রাহির সিটবেল্ট খুলে প্রাহির দুবাহু ধরে।দাতেদাত চিপে বলে,

-” কেন থাকবে না?একশোবার আমার সাথেই থাকবে।সারাজীবন থাকতে হবে।”

প্রাহি ভয়ে একদম বিড়াল ছানার মতো কাচুমাচু করে হয়ে আছে।ভীতু চোখে অর্থ’র দিকে তাকাচ্ছে। অর্থ চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করলো।কন্ঠে নম্রতা এনে বলে,

-” ফুসকা খাবে তাই তো?”

প্রাহি অবাক হয়ে তাকালো একটু আগেও লোকটা কি রেগে ছিলো।আর এখন কি সুন্দর করে কথা বলছে।প্রাহি অবাক হয়েই মাথা নাড়ালো।অর্থ বললো,

-” ওকে ফাইন দেন।”

অর্থ আবারও গাড়ি স্টার্ট দিলো।কিছুক্ষন পর গাড়িটা থামতেই অর্থ গাড়ি থেকে নেমে প্রাহিকে গাড়ি থেকে নিচে নামালো।প্রাহি দেখে তারা একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে।অর্থ প্রাহির হাত ধরেই রেস্টুরেন্টের ভীতরে নিয়ে গেলো।প্রাহি অবাক চোখে সবকিছু দেখছে।সে আগে কখনই রেস্টুরেন্টে এসেনি।আসবে কিভাবে?ও দুবেলা খেতে পারতো এটাই তো অনেক।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে কোনার একটা টেবিলে বসলো।অর্থকে দেখেই ম্যানেজার দৌড়ে আসলো।বললো,

-” আসসালামু আলাইকুম স্যার।ভালো আছেন?”

অর্থ ভ্রু-কুচকে বললো,

-” ওয়া আলাইকুমুস সালাম! আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি কেমন আছেন?আর ইসহাব কোথায়?”

-” জ্বি আমিও ভালো আছি।ইসহাব স্যার দোতলায় আছে।আমি এখনি ডেকে দিচ্ছি। আপনি ওর্ডার দিন।”

কথাগুলো বলেই একটা ওয়েটারকে অর্থদের অর্ডার নিতে বলে তিনি চলে গেলেন।ওয়েটার আসতেই অর্থ নিজের জন্যে একটা ব্লাক কফি আর প্রাহির জন্যে স্পেশালভাবে ফুসকা অর্ডার দিলো।ওয়েটার চলে যেতেই কিছুক্ষন পরেই হাসিমুখে ইসহাব আসলো।ইসহাবকে দেখেই অর্থ উঠে তার সাথে হাগ করে কুশলাদি বিনিময় করলো।প্রাহি অবাক চোখে সবকিছু দেখছে।একেতো সে এইসব রেস্টুরেন্টে প্রথম আসলো আবার সে স্কুল ড্রেস আবার দুই বেনী করে এখানে এসেছে।সবাই কতো স্টাইলিশভাবে এসেছে।প্রাহি আশেপাশে মেয়েদের দেখছে সবাইকে কতো সুন্দর লাগছে।একেকজন জিন্স,টি-শার্ট, লেগিন্স,টপ্স এসব পড়ে এসেছে।আর ও কিনা এসেছে একটা স্কুল ড্রেসে?সবাই কি বলবে?আর এখানে সবাই বড় বড়। ও মনে হয় একাই এখানে এতো পিচ্চি।প্রাহি এতো কিছু ভেবে ভেবে ঠোঁট উল্টে বসে রইলো।অর্থ’র দিকে চোখ যেতেই অর্থ হালকা আওয়াজে বলে,

-” ঠোঁট উল্টাবে না।এখন বলো কি সমস্যা?”

প্রাহি কাঁদো গলায় বলে,

-” সবাই এখানে কতো সুন্দরভাবে এসেছে আর কিনা স্কুল ড্রেস পরে এখানে চলে এসেছি।”

অর্থ ভ্রু-কুচকে বললো,

-” তো?হোয়ার ইজ দ্যা প্রোবলেম?”

প্রাহি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।ইসহাব এতোক্ষনে মুখলো,

-” অর্থ এইটা কে?তোর কোন কাজিন বোন?”

অর্থ চোখ গরম করে ইসহাবের দিকে তাকালো রাগি গলায় বলে,

-” সাট-আপ।”

প্রাহি ভ্রু-কুচকালো অর্থ’র এইভাবে বলায়।সেতো এক হিসাবে অর্থ’র বোনই তো লাগে তাই না?এখানে এরকম করার কি হলো?প্রাহি আস্তে করে বললো,

-” আমি উনার বোনই হই।হেমন্ত ভাইয়ার খালাতো বোন আমি।তাহলে আমি উনার চাচাতো খালাতো বোন আর উনি আমার ভাইয়া।”

শেষের কথা বলেই প্রাহি মুচকি হাসলো।অর্থ ধরাম করে টেবিলে বারি দিলো।প্রাহি কেঁপে উঠলো ভয়ে।অর্থ রেগে গিয়ে বলে,

-” হোয়াট ডিড ইউ স্যে?আমি তোমার ভাইয়া?আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া?হ্যা?ইডিয়ট কোথাকার?”

প্রাহি মাথা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো। সে অনেক ভয় পেয়েছে।ইসহাব অর্থ’র কাধে হাত দিয়ে বলে,

-” কুল ডাউন ইয়ার।রাগটা একটু কমা।দেখছিস না ও ভয় পাচ্ছে?”

অর্থ ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে রইলো।ইসহাব আরোকিছু কথা বলেই চলে গেলো।কিছুক্ষন পর ওয়েটার ফুসকা আর ব্লাক কফি নিয়ে আসতেই ওরা খাওয়া শুরু করে দিলো।প্রাহি তো মনের সুখে ফুসকা খাচ্ছে।আর মুখ দিয়ে ‘উম উম! ‘ শব্দ করছে।অর্থ নিজের ফোন বের করে প্রাহির আড়ালেই সেসব ভিডিও করে নিলো।খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা গিয়ে আবারও গাড়িতে গিয়ে বসলো।তারপর সোজা বাড়িতে এসে পড়লো।অর্থ সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।আর বাকিরা প্রাহির আজ স্কুলের প্রথম দিন কেমন গিয়েছে জিজ্ঞেস করলো।প্রাহিও সব বললো সবাইকে। তারপর ও নিজের রুমে চলে গেলো।স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে প্রাহি ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হলো।সাদা ফতুয়া সাদা স্কার্ট পড়েছে প্রাহি আজ।এইগুলো কাল ও নিজের খাটের উপর পেয়েছিলো।আরো অনেক জামাকাপড় ছিলো।তবে এটা প্রাহির সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।তাই আজ এটাই পরেছে।ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে হাতে পায়ে লোশন আর মুখে ক্রিম লাগিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।মাথা দেখে তোয়ালে খুলে চুল ভালোভাবে ঝেড়ে নিয়ে সবচুল একসাইডে করে রাখলো।তোয়ালেটা সুন্দর মতো বেলকনিতে নেড়ে দিয়ে।ভীতরে রুমের ভীতরে যেতে নিলেই পাশের বেলকনিতে নজর যায় প্রাহির।সাথে সাথে চোখ বড়বড় হয়ে যায় ওর।অর্থ পুরো উদম গায়ে। আর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।সাথে সাথে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে রুমের ভীতরে চলে যেতে নিলেই অর্থ’র শীতল কন্ঠস্বরে থেমে গেলো।

-” দারাও যাচ্ছো কেন?”

প্রাহি উলটো দিকেই ঘুরেই জবাব দেয়,

-” এমনি।ভালো লাগছে না।আমি গেলাম।”

-“দারাও।আমার দিকে ঘুরো।ঘুরো বলছি।”

অর্থ’র ধমকে প্রাহি আস্তে আস্তে অর্থ’র দিকে ঘুরে তাকায় কিন্তু চোখের উপর থেকে হাত সরায়নি।অর্থ হালকা হাসলো।বললো,

-” হাত সরাও।সোজা আমার দিকে তাকাবে।”

প্রাহির যেন নিঃশ্বাস আটকে যাবে।জোড়েজোড়ে শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে বললো,

-” না প্লিজ।এমনটা করবো না।”

-” আচ্ছা,তাকিয়েই দেখো।”

প্রাহি হাত সরিয়ে অর্থের দিকে তাকালো না এইবার ঠিক আছে।লোকটা একটা কালো টি-শার্ট পড়েছে সাথে কালো টাউজার।মাত্রই মনে হয় গোসল করেছে সুন্দর লাগছে দেখতে।
অর্থ এইবার ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে,

-” ড্রেসটাতে তোমাকে সুন্দর লাগছে।ওড়না ছাড়া তো একেবারে…!”

বলেই থেমে গেলো অর্থ।প্রাহি নিজের দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে ভো-দৌড়।বেচারি এমন লজ্জায় মনে হয় কখনো পড়েনি।অর্থ এইবার হু হা করে হেসে দিলো।সে মনে হয় মন খুলে এমনভাবে কখনো হাসেনি।পিচ্চিটা একেবারে ওকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।এই সাদা ড্রেসটা ওর অনেক পছন্দ হয়েছিলো তাই তো কাল অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছিলো।তবে ওর পিচ্চিটাকে যে এই ড্রেসটায় এতো সুন্দর লাগবে ভাবতে পারিনি ও।মেয়েটার প্রেমে একেবারে পাগল হয়ে যাচ্ছে।কবে যে পিচ্চিটা বড় হবে কে জানে?উফফ,অপেক্ষা আর ভালো লাগেনা অর্থ’র।মন চাইছে এখনি তুলে এনে মেয়েটাকে বুকের মাজে ডুকিয়ে রাখতে।অর্থ নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।নিজেকে একটু শান্ত করতে হবে ওর এখন।নাহলে ওত দ্বারা কোন ভুল হয়ে যাবে।

#চলবে____

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।