প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো পর্ব-২২

0
7777

#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো💖
#পর্ব_২২
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
,
–পৃথু তুই আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস না আমি ভালোবাসি তোকে আমি বাঁচবো না তোকে ছাড়া।
প্রচুর ভালোবাসি তোকে তুই যদি আমাকে রেখে কোথাও হারিয়ে যাস বাঁচবো না।
বাঁচবো না পৃথু।
হসপিটালের একটি বেঞ্চে বসে মাথায় হাত দিয়ে কথা গুলো বলছে প্রেয়ন।
–বাবা তুই শান্ত হ আমার বিশ্বাস মেয়েটার কিছু হবে না।
–বাবা মা কই?
–জানি না সকলে বেরোলো কোথাও এখনো আসে নি ফোনেও পাচ্ছি না ওকে।
–কে বলেছে আমি নেই।
প্রেয়নের বাবার কথায় ছেদ ঘটিয়ে চলে এলো আয়লা।
–প্রেয়ন বাবা আমার পৃথুলা কেমন আছে আল্লাহ আমি যখনি শুনতে পেয়েছি ওর এই অবস্থা তখনি আমি দৌড়ে চলে এসেছি। (কান্নার ভান ধরে)
–কিন্তু নয়লা তোমায় তো আমি কিছু বলি নি তুমি আমার ফোন ধরো নি।
কিছুটা বিশম খেয়ে গেল আয়লা কথাটা শুনে।
–আরে তুমি বলো নি বাসায় গিয়ে মেড দের কাছে শুনলাম।
–ওহ তুমি গেছিলা কই?
–এখন এতো প্রশ্ন কেন করছো আমার পৃথুলা মা অসুস্থ তুমি সে খেয়াল করছো না কেন?
–হ্যাঁ তাই তো।



–আপু আমাকে ক্ষমা করে দে আপু আজ আমার জন্য তোর এই অবস্থা।
আল্লাহ আমার আপুকে সুস্থ করে দেও তুমি তো জানো আম্মু চলে যাবার পর আপুই আমার সব ছিলো।
আমাকে দ্বিতীয় বার অনাথ করে দিও না তুমি।
হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বলছে রাইমা।
নীল বাইরে থেকে সবটা শুনছে।
–কি করে বুঝাবো আমি রাইমাকে আমি আপুকে গুলি করি নি।
নাহ এভাবে চুপ থাকলে হবে না ওকে বুঝতে হবে আমার কথা।
নীল ভেতরে প্রবেশ করলো।
নীলের উপস্থিতি রাইমা বুঝতে পারলো,
–দয়া করে আমার কাছে আসবেন না প্লিজ আমি ভিক্ষা চাইছি আমার থেকে দুরে থাকুন আমার কাছে আসবেন না এক দম সহ্য হচ্ছে না আমার নিজেকে পুড়িয়ে দিবো সত্যি বলছি আপনি আমাকে স্পর্শ করলে।
মুখ তুলে কথা গুলো বললো রাইমা।
–রাইমা আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো আমি,
–আমি শুনবো না কিছু দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না আপনার মুখ আমার প্লিজ আমাকে মুক্তি দিন আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
চিল্লিয়ে কথা গুলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো রাইমা।
–ঠিক আছে নিজেকে নির্দোষী প্রামনিত করেই তোমার সামনে আসবো সেদিন তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেও আমি ফিরে যাবো না।
কথাটা মাথায় গেথে নেও।

নির্ঘুম কাটছে প্রেয়ন,নীল আর রাইমার রাত।
এটাই হয়তো ভালোবাসা।
কারোর চোখে এক বিন্দু ঘুম নেই।
রাইমা সারাটা রাত কেঁদেছে।
নীল রাইমার রুমের দরজার পাশে বসে ছিলো।
আর প্রেয়ন সেও পৃথুলার দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।
মাঝ রাতে অনেক ইবাদত করেছে পৃথুলার জন্য।
কারন তার পৃথুলা তাকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করানো শিখিয়েছে।

ভোরের সূর্য উদয় হলো,
–রাইমা দরজা খুলো খাবারটা অন্তত খেয়ে নেও।
–রেখে যান ওখানে।
–ঠিক আছে আমার মুখ দেখতে চাও না বুঝতে পরছি রেখে গেলাম এখানে।
নীল চলে গেল খাবারটা রেখে।
রাইমা দরজা খুলে খাবারটা নিয়ে ঘরের ময়লার বালতির মধ্যে ফেলে দিলো।
–হে আল্লাহ আমাকে মাফ করো এ খাবার আমাকে না অন্য কোন প্রানির পেটে দিও।



হসপিটালে,
–মি.খান।
–জি। ডক্টর আমার স্ত্রী।
–অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি কথাটা আপনার স্ত্রী এর হার্ট এর কিছুটা দুরে গিয়ে গুলিটা থেমে গেছে গুলিটা কাল বার করেছি ঠিক কিন্তু একটা অংশ ওনার শরীরের ভেতরে রয়ে গেছে।
এটার জন্য অপারেশন করতে হবে কিন্তু যেহেতু এটা ওনার হার্ট এর এক দম কাছে সেহেতু হয়তো আমারা সাকসেস হতে পারি নাহলে ওনাকে চিরজীবনের মতো হারাতে হবে আপনাকে।
আর এই অপারেশন না করেও কোন উপায় নেই।
প্রেয়ন ডক্টর এর কথা শুনে চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকলো ডক্টর এর দিকে।
–মি.খান আমি বুঝতে পারছি আপনি ওনাকে অনেক ভালোবাসেন কিন্তু এ ছাড়া কোন উপায় নেই।
–কতো শতাংশ সম্ভবনা।
–এই ৪০% বেঁচে থাকা ৬০% মৃত্যু।
–ও পুরো সুস্থ হয়ে যাবে তো?
–জি আমরা সাকসেসফুলি অপারেশন কম্পিলিট করতে পারলে অবশ্যই সুস্থ হবে।
–কোন ফর্মালিটি আছে।
–জি বন পেপার সাইন করে দিন।
–ঠিক আছে।
প্রেয়ন পেপার সাইন করে দেয়।
এ ছাড়া আর কোন উপায় যে নেই৷

–পৃথু তুই আমাকে একা রেখে কেন ওখানে শুয়ে আছিস আমার কষ্ট হচ্ছে যে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস কর।



–মি.চৌধুরী আমার একটা ফোন লাগবে। (রাইমা)
–আমারটা নেও। (নীল)
–আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।আপনার মতো একজন মানুষের ফোন আমার ভাইয়া ধরবে না।
–তোমার ভাইয়া আমার এই নাম্বার চিনে না এখন ফোন কিনে সেটা সেট করতে তো সময় লাগবে এটা দিয়ে কথা বলো রাতে এনে দিবো
রাইমা নীলের থেকে ফোনটা নিয়ে প্রেয়ন কে ফোন করে,
–আসসালামু আলাইকুম।
–আলাইকুম আসলাম। ভাইয়া আমি রাইমা৷
–রাইমা তুই চিন্তা করিস না আপু আমি তোর আপুকে সুস্থ করেই আগে তোকে নিয়ে আসবো ওখান থেকে।
–না ভাইয়া আমি সে জন্য ফোন করি নি তুমি আমার কথা ভেবো না আমি যেভাবে থাকি থাকবো তুমি বলো আপু কেমন আছে?
–ডক্টর বলেছে,
(সবটা খুলে বললো)
–ইস এতো সোজা নাকি হুম আমাকে রেখে যাওয়া এতো সোজা নয়।
তুমি চিন্তা করো না এক দম ভেঙে পরবে না আমি ভালো রেজাল্ট করলে ওকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে নিজ হাতে আমাকে।
তুমি চিন্তা করো না ওর কিছু হবে না।
এতে সোজা নাকি হুম।
(ভাঙা গলায় কথা গুলো বললো রাইমা)
–নামাজ পড় তুই চিন্তা করিস না আমি তোকে ওই জল্লাদ এর কাছে রাখবো না।। –
–আমাকে নিতে তুমি আর আপু না আসলে আমি যাবো না।
–আসবে আমাকে এক করে দিয়ে ও কেথাও যেতে পারবে না।
–হুম।
–আল্লাহ হাফেজ।
–আল্লাহ হাফেজ।

রাইমা ফোনটা কেটে নীলকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
নীল তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার দিকে।
নীলও নামাজ পড়তে গেল।
নিজের ২২ বছর বয়সে এই আল্লাহর কাছে সে কিছু চাইবে নীল।
নীল কখনে আল্লাহর কাছে কিছু চাই নি।
কিন্তু আজ চাইবে।
প্রেয়ন ও নমাজে বসে সাথে রাইমা ও।
এতো মানুষের দোয়া কি লাগবে পৃথুলার নাকি সবাইলে কাঁদিয়ে সে চলে যাবে না ফেরার দেশে।
চলবে,