ফাগুন আমায় ভালবাসেনা পর্ব-৫+৬+৭+৮+৯

0
287

#ফাগুন_আমায়_ভালবাসেনা (৫,৬,৭,৮,৯)

৫.

‘গভীর জলে তলিয়ে যাচ্ছে সে, কোন ভাবেই মাথা তুলতে পারছে না। অনেক কষ্ট করে হাত পা ছুড়তে শুরু করে।’ চোখ খুললো তিতির। দেখে মা মাথায় জলপটি দিচ্ছেন। ওহ্ তাহলে ওটা স্বপ্ন ছিল। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো যেন।
-জানিসই তো তোর এমন হয় সব সময়। একটু সাবধানে থাকলে কি ক্ষতিটা হয় শুনি? মায়ের হাড়মাশ জ্বালিয়ে না খেলে তোর ভালো লাগে না না? এখন উঠে একটু স্যুপ খেয়ে ঔষধটা খা।
-খেতে ইচ্ছা করছে না মা।
-এই কথা বললে তো হবে না। গায়ে জ্বর তো কম না। খেয়ে চুপ করে শুয়ে থাক। আমি কাজ শেষ করে আসছি।
জ্বর হলে তিতিরের ভালই লাগে। কি সুন্দর সবার আদর পাওয়া যায়। সে শুয়ে শুয়ে ভাবে জ্বরটা বেশ কিছুদিন থাকুক। তাহলে নিশ্চই মাহমুদ ভাইয়া দেখতে আসবে। আর তখন অয়নও আসবে ভাইয়ার সাথে। আচ্ছা সে কি অয়নের প্রেমে পড়ে গেল? এমনও কি কখনও হয়। অয়ন চলে গেলে তার কি আর কখনও দেখা হবে? মনে হয় না। কিন্তু সে এত ভাবছে কেন? নাহ এই চিন্তাকে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না।

-কি রে, ঘুমাস নাই এখনও? আমি আজ তোর সাথে থাকবো।
তিতিরের পাশে শোবার ব্যাবস্থা করতে থাকে হাসনা।
-জানো মা মাহমুদ ভাইয়ার একটা বন্ধু এসেছে। কি যে সুন্দর আর কি সুন্দর করেই না কথা বলে। নামটাও অনেক সুন্দর অয়ন। সুন্দর না মা?
-তোকে দেখি সুন্দরে পেয়েছে। কই আপা তো কাল অয়নের বন্ধুর কথা কিছু বললো না?
-আরে খালা তো ভাইয়ার উপর খুব রাগ। না জানিয়ে বন্ধুকে এনেছে। গজগজ করছিল। তোমার বোনের যা স্বভাব আর কি?
-এই তোর খালা মুরব্বী না। এমন করে বলে নাকি? চুপ কর এখন। ঘুমা, রাত হয়েছে অনেক। রাতে কিছু দরকার হলে আমাকে ডাকিস?
বলেই তিনি চোখ বন্ধ করলেন। কিন্তু তিতিরের যে ঘুম আসতেই চায় না। চোখ বুজলেই দুটি মায়াময় চোখ ভেসে ওঠে। অয়নের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ল সে বুঝতেই পারলো না।

৬.

-মাহমুদ, এই মাহমুদ। এখনও ঘুম ভাঙ্গলো না তোদের?

অয়নের দিকে তাকায় মাহমুদ। এখনও গভীর ঘুমে। সে উঠে আসে। মা ততক্ষন পর্যন্ত ডাকতে থাকবে যতক্ষন না সে উঠে। একবার শুরু হলে খামবার উপায় নেই।
-কি মা? সকাল সকাল কি শুরু করলে। আরাম করে একটু ঘুমাতেও পারবো না ছুটিতে।
-সকাল এগারোটা বাজে মাহমুদ। আমার তো দুপুরের খাবারও রান্না করতে হবে। তোর বন্ধুকে ডেকে খেয়ে নে।
মাহমুদ অয়নকে ডাকতে তার ঘরের দিকে যায়। নাস্তা শেষ করে বাইরে যেতে হবে।
মা অবশ্য রাগ করতে পারে। যে এসেই বাসায় থাকার নাম গন্ধ নেই। শুধু বাইরে বাইরে ঘোরাঘুরি। অয়নকে এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখাতে হবে। ও তো বেশি দিন এখানে থাকবে না।
-অয়ন ওঠ। ফ্রেশ হয়ে নে। আমরা নাস্তা করেই আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাব। ওঠ তাড়াতাড়ি।
বাড়ি থেকে বের হতে হতে দুপুর হয়ে যায়। গ্রামের বাড়িতে গ্রামের পরিচিত ভাইরা মিলে একটা ছোটখাট পিকনিকের মত হলো। সব শেষ করে ফিরতে ফিরতে তাই তাদের রাত হয়ে গেল। এসেই দেখে মা খুব রেগে আছেন। দরজা খুলে দিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।
ছোট বোন তাকে আলাদা ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-তোমরা কি খাওয়া দাওয়া করবে নাকি খেয়ে এসেছো?
-নাহ খেয়ে এসেছি। কিন্তু কি হয়েছে?
-মায়ের মেজাজ বিকাল থেকেই তুঙ্গে। তিতির আপু আজ পড়তে আসেনি। আর তোমরাও দেরি করে ফিরলে। টেলিফোনও নষ্ট হয়ে আছে। মা তাই ছোট খালাকে ফোন করতে পারে নাই। আমি যাই এখন। তোমাদের আশেপাশে আমাকে ঘুরঘুর করতে দেখলে আমার খবর আছে। জানোই তো মা বাইরের লোকের সামনে আসা পছন্দ করেন না।

মাহমুদ ঘরে ঢুকতেই অয়ন হেসে ওঠে।
-তোদের বাড়িতে তো তোর মা পুরা মিলিটারী শাসন চালায় দেখি।
-আর বলিস না, ছোট থেকেই এই চলছে। মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার উপায় নেই।
– দোস্ত, আমি বলি কি আমি কাল সকালের ট্রেনে চলে যাই। না জানিয়ে এসে তোদের ও সমস্যায় ফেললাম। আসলেই তো ছুটিতে একটু পরিবারকে সময় দেয়া দরকার।
-কি বলিস এক সপ্তাহ থাকবি বলে আসলি। কাল যাবি কি রে?
-নাহ রে যাই। অন্য কোন সময় আবার আসবো।
মাহমুদ একটু বিব্রত হয়। অয়ন কি তার মায়ের আচরণে অপমানিত বোধ করছে। মাও যেন কেমন। একটু ভালো করে কথা বললে কি ক্ষতি হয়।
-দোস্ত আমার মায়ের জন্য চলে যেতে চাচ্ছিস নাতো আবার? আসলে মা একটু এমনি। আর আজ তিতির পড়তে আসে নাই। তাই ক্ষেপে আছে। মা এমন অনিয়ম পছন্দ করেন না।
-ধুর, পাগল নাকি। এসব ব্যাপারে কখনও মন খারাপ করতে আছে নাকি। আমার বাবাও তো অমন। কিন্তু তিতির এলো না কেন? কোনো সমস্যা হয়নি তো? তোর পিচ্চি বোন কিন্তু ভীষন কিউট।
-কিরে ডুবে ডুবে জ্বল খাওয়া শুরু করলি নাকি? আমি কিন্তু খেয়াল করেছি তিতির কেমন অবাক হয়ে তোর দিকে তাকিয়ে ছিল। আগুন মনে হয় দুই দিকেই সমান ভাবে লাগলো।
-ফাজলামি রাখ তো। এখন ঘুমিয়ে পড়। ট্রেনের টিকেট না পেলে আবার বাসে যেতে হবে। তাই সকাল সকাল উঠতে চাই।

৭.

পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তিতির যখন আসলো না, রেহানা বেগম মাহমুদ কে ডাকতে তার ঘরে গেলেন। যেয়ে দেখেন ছেলে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে। অয়নকে সকালে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে আসার পর থেকে তার সাথে ভাল করে কথা বলেনি মাহমুদ। তিনি কি করবেন। সে তো জানেই তিনি ঠিক বাইরের মানুষকে পছন্দ করেন না। যাক ছেলেটা যে নিজে থেকেই কি বুঝে চলে গেছে সেটাই ভালো হয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন ছুটিতে তিতিরের সাথে মাহমুদ একটু সময় কাটাক। কিন্তু মেয়েটাও হয়েছে তেমন দুই দিন ধরে তার দেখা নেই।

-মাহমুদ বাবা ওঠতো। একটু তোর ছোট খালার বাসায় যা। তিতির কেন আসছে না সেই খোঁজটা তো নিতে হবে। তোর খালা খালুরও কমনসেন্স বলে কিছু নেই। একটা খবরও তো দিতে পারে।
-এখন যাও তো মা। আমি সন্ধ্যার পরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসবো।
তিনি কোনো কথা না বাড়িয়ে পড়ার ঘরের দিকে গেলেন। প্রাইভেট মাস্টারের কাছে মেয়েকে একা পড়তে দিয়েও শান্তি নেই।

-মা আমি বাইরে বের হচ্ছি। আসার পথে খালার বাসা হয়ে আসব বলেই সে বাইরে যাবার জন্য দরজা খোলে।
-চা খেয়ে গেলি না?
-বাইরে খেয়ে নেব মা। বন্ধুরা সব অপেক্ষা করছে।

উঠি উঠি করেও আড্ডা শেষ হতে রাত দশটা বেজে গেল। খালারা কি ঘুমিয়ে পড়লো। মা খোঁজ নিয়ে না গেলে খুব রাগ করবে। ধীরে ধীরে হেটে সে ছোট খালার বাড়ির সামনে এসে দাড়ায়। বেল বাজাতেই খালু এসে দরজা খুলে দিলেন।
-আসসালামুওয়ালাইকুম খালু। মা পাঠালেন তিতিরের খোঁজ নিতে। দুদিন হয়ে গেল ও পড়তে যাচ্ছে না।
-ভেতরে আস বাবা। আমি তো গিয়েছিলাম তোমাদের বাসায় খবর দিতে। আর বলোনা তিতিরের দুদিন ধরে এমন জ্বর।
-আল্লাহ তাই নাকি। মা অবশ্য বিকেলেই আসতে বলেছিলেন। বন্ধুদের সাথে গল্প করতে দেরি হয়ে গেল। যাই তিতিরকে দেখে আসি।
এক দিনেই তিতির প্রায় বিছানার সাথে মিশে গেছে। ছোট খালা বিছানায় বসে আছেন। সে একটা চেয়ার টেনে বসে।
-কি রে পিচ্চি কি অবস্থা তোর? জ্বর বাধিয়ে ফেললি।
-তিতির হাসার চেষ্টা করে। তুমি একা এসেছো?
-আর কে আসবে। ওহ্ অয়ন? ও তো আজ চলে গেল।
-বাবা তোমরা কথা বল। আমি তোমার খাবার দেই টেবিলে। নিশ্চই কিছু খাও নাই।
বলেই হাসনা বেগম উঠে চলে যান।
অয়ন চলে যাবার কথা শুনে তিতির একটু হতাশ হয়ে পড়ে। চুপ হয়ে যায়।
-কিরে, অয়ন আসে নাই বলে তোর তো মনে হয় মন খারাপ হয়ে গেল। ঘটনা কি?
-কি যে বল তুমি। যাও তুমি খাওয়া দাওয়া কর। রাত হয়ে গেছে। খালা চিন্তা করবে।
-আচ্ছা তুই তবে ঘুমিয়ে পড়। আমি কাল আবার আসবো তোকে দেখতে।

বাসায় ঢুকতেই মা বলে উঠলেন গিয়েছিলি ওই বাসায়? তোর খালু তো বললো তিতিরের খুব জ্বর।
-হ্যা মা ওখান থেকেই তো আসলাম। তিন চার দিন সময় তো লাগবেই সারতে। আমি কাল আবার যেয়ে দেখে আসবো। আমি খেয়ে এসেছি মা। তুমি শুয়ে পড়।

ছেলে নিজেই কাল তিতিরকে দেখতে যাবে বললো দেখে রেহানা বেগম খুশি হয়ে গেল।

৮.

দরজা খুলেই টাপুর অবাক।
-আরে ভাইয়া তুমি? তোমার তো আরও কয়েকদিন পরে আসবার কথা। মা দেখো কে এসেছে?
বলেই সে ভেতরে ছোটে। অয়ন দরজা লাগিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে বসে। সন্ধ্যা প্রায় হয় হয়। সে কি পালিয়ে এলো। কেন?
-কি রে বাবা। ফিরে এলি যে। তোর তো বেশ কদিন থাকার কথা ছিল?
মা কে জড়িয়ে ধরে অয়ন।
-তোমাদের ছেড়ে ভাল লাগছিল না মা। তাই চলে এলাম।
-ভালো করেছিস বাবা। এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি তোকে খাবার দেই। মুখটা এমন শুকনো কেন?
-কিছু না মা। সারাদিনের জার্নির ধকল। তুমি যাও আমি আসছি।

বাথরুমে ঢুকে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে সে কিছুক্ষন আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে কেন চলে এত তাড়াতাড়ি ? নাহ্ বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। আর তিতিরের বয়স তো এখনও অনেক কম। কোনো ভাবেই এই আবেগ কে পাত্তা দেয়া যাবে না। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে টাপুর বসে আছে খাটের উপর।
-তোমার সাথে অনেক জরুরী কথা আছে ভাইয়া।
-বল, কি জরুরী কথা তোর।
-বাবা না তার বন্ধুর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
-কি বলিস এসব, আমাকে না জানিয়ে কি করে বাবা এমন করতে পারে?
-জানোই তো বাবার কথার উপর কোনো কথা চলে না। আমরা তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবা না করেছেন। আরে তুমি তো জুঁই আপুকে ছোট থেকেই চেন।
-কি জুঁই? ওকে বিয়ে করতে হবে নাকি? আমার কি মাথা খারাপ।
-তুমি কি করবে তুমি জানো। বাবার সাথে কথা বলে দেখ। তবে বাবা কথা দিয়ে ফেলেছেন।
-তুই যা তো এখন। আমি একটু একা থাকবো।
বেলকুনিত এসে সে একটা সিগারেট জ্বালায়। একটার পর একটা সমস্যা। এই সব সমস্যা থেকে বের হবে কি করে সে?
-কিরে বাবু খাবিনা?
মার কথায় চট করে সিগারেট টা নিচে ফেলে দিল সে।
– তুমি যাও মা আমি আসছি।
কোন রকমে খাবার শেষ করে ছাদে আসে সে। মোবাইল ফোনটা বের করে মাহমুদ কে টেক্সট করে, ‘আমি ভালো আছি, ঠিক মত পৌঁছেছি। তোর কি খবর?’ কবে যে কল রেট কমবে। সাড়ে সাত টাকা মিনিট, কোনো মানে হয়। যদিও এখন যোগাযোগ করাটা অনেক সহজ হয়েছে। সে আর মাহমুদ এক সাথেই কিনেছিল ফোন।
হাল্কা শীতে ছাদে হাটতে ভালই লাগছে। কৃষ্ণপক্ষের রাত, তারা ঝলমলে আকাশ। নিজের মত বাঁচার কি কোন উপায় নেই?
টুং শব্দে ফোনের দিকে তাকালো। ‘তিতিরের খুব জ্বর, ওকে দেখে বাসায় ফিরলাম মাত্র।’
আমি এত বোকা কেন? সব কিছুতেই তাড়াহুড়া। কি এমন ক্ষতি হত এক দিন বেশি থেকে এলে? যখন দেখলাম মেয়েটা পড়তে এলো না । খোঁজ নিয়ে আসা উচিত ছিল। তিতিরের নিশ্চই ফোন নেই। কি করে যোগাযোগ করবে। মেয়েটাকে কি বেশী গুরুত্ব দিয়ে ফেলছে। দূরে থাকাটাই তো নিরাপদ হবার কথা। সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে মাহমুদ কে লিখে, ‘কেমন আছে এখন তিতির? জ্বর কি খুব বেশী’
এ তার কি হল? মন এক কথা বলে আর মাথায় অন্যকিছু। এভাবে কি নিজের সাথে যুদ্ধ করা যায় নাকি। ঘরে এসে গান ছেড়ে একটা উপন্যাস হাতে নিয়ে বসে। কিন্তু কিছুতেই মনযোগ দিতে পারে না।

৯.

জ্বর আর গলা ব্যাথাটা বেশ ভোগালো তাকে। তবে আজ সে কিছুটা সুস্থ। বারান্দায় রোদে বসে আরাম করে গল্পের বই পড়ছিল। আপাতত মা কিছু বলবে না গল্পের বই পড়বার জন্য। কলিং বেলের শব্দ পেল। ফুলির মায়ের সাথে কথা বলছে মাহমুদ ভাইয়া। এই অবেলায় আবার ভাইয়া কেন।
-আপা বারান্দায় বইসা আছে। আপনি যান। আমি খালাম্মারে খবর দিতাছি।
মাহমুদ এসে চেয়ার টেনে বসে। হাতে সুন্দর একটা কাগজে মোড়ানো বাক্স।
-কেমন আছিস তিতির?
তিতির তো অবাক পিচ্চি ছেড়ে তিতির, ঘটনা কি?
-কি ব্যাপার বলোতো হঠাৎ তিতির? পিচ্চি পিচ্চি করে তো মাথা খাও?
মাহমুদ হো হো করে হেসে ওঠে।
-তোকে পিচ্চি বললে একজন খুব রাগ করে?
-রাগ করে? কে বলোতো?
-কেন, অয়ন।
তিতিরের মলিন গালেও যেন লাল আভা ছড়ায়।
-কি রে, তুই তো লাল হয়ে গেলি। যাক আজ তো ভালই আছিস মনে হয়। তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে ওঠ। আমার ছুটিও প্রায় শেষের দিকে। এই নে ধর। বলে প্যাকেটটা তার দিকে বাড়িয়ে দেয়।
-কি এতে?
-খুললেই বুঝতে পারবি কি? আমি এখন যাই তাহলে। খালার সাথে দেখা করি।
মাহমুদ চলে যেতেই সে প্যাকেটা খোলে, অনেকগুলো উপন্যাস আর তার সাথে একটা চিঠি।

তিতির

তোমার সাথে দেখা না করেই চলে এসেছিলাম। আমার মনের অবস্থা ঠিক তোমাকে বোঝাতে পারবো না। অনেকটা এই কবিতাটার মত-
কাছে যাওয়া বড্ড বেশি হবে
এই এখানে দাঁড়িয়ে থাকাই ভালো,
তোমার ঘরে থমকে আছে দুপুর
বারান্দাতে বিকেল পড়ে এলো !
শুনি আপন বুকের দুরুদুরু
সেখানে এক মত্ত আগন্তুক,
রক্ত কণায় তুলেছে তোলপাড়
সেই খানেতেই সুখ আমার সুখ।

সমরেশ মজুমদার এর কবিতা। বলতে পারো একরকম পালিয়ে এসেছি। তবে তখন জানতাম না তুমি অসুস্থ। তাহলে নিশ্চই তোমায় দেখে আসতাম। খুব ইচ্ছা করছিল তোমার সাথে দেখা করার। জানিনা আর কখনও দেখা হবে কিনা ? মাহমুদের কাছে তোমার খবর সব সময় নিয়েছি। সুস্থ্য হয়ে ওঠ তাড়াতাড়ি। যদি পার যোগাযোগ কোরো। চিঠিও লিখতে পার।
জানিনা তুমি কি পছন্দ কর তবে আমার পছন্দের কিছু বই পাঠালাম। হয়তো তোমার ভালো লাগতেও পারে। আচ্ছা তোমার ঠিকানায় কি চিঠি পাঠানো যাবে? তুমি আমাকে জানিয়ো কি করে যোগাযোগ করবো তোমার সাথে। আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার উত্তরের।
অয়ন

তিতিরের আনন্দে প্রায় নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে এল। এত খুশি সে কোথায় রাখবে। স্বপ্ন দেখছে নাতো? নিজেই নিজের গায়ে একটা চিমটি কাটে।

-এখনও বারান্দায় বসে আছিস? রোদ তো পড়ে গেছে। যা ঘরে যা। একটু ভাল হতেই অনিয়ম শুরু।
-যাই মা।
উঠতে গিয়ে চিঠিটা পড়ে গেল। বইগুলো হাতে ধরা। সে পাথর হয়ে দাড়িয়ে পড়লো।
হাসনা বেগম চিঠিটা তুলে পড়লেন। তার হাতে দিয়ে কিছু না বলেই চলে গেলেন।
তিতির যেন প্রাণ ফিরে পেল। যাক বকা দেয়নি এই ভালো। কিন্তু কেন কিছু বললো না?
সে ঘরে এসে কত বার যে চিঠিটা পড়লো তবুও তার মনে হতে লাগলে কিছু একটা পড়া হয়নি। নিশ্চই আরো কিছু রয়ে গেছে।
পড়ার টেবিলে বসে সে তার সবচেয়ে পছন্দের চিঠি লেখার কাগজটা বেছে নেয়। কাগজের একপাশে খুব যত্ন করে একটা লাল গোলাপ আঁকে। কি লিখবে সে?

ভাইয়া
এত খুশি হয়েছি সেটা আপনাকে বোঝাতে পারবো না। জ্বরের ঘোরেও আপনার কথা ভেবেছি। মাহমুদ ভাইয়া যেদিন দেখতে এলো ভেবেছিলাম আপনিও এসেছেন। কিন্তু যখন শুনলাম চলে গেছেন তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কেন হঠাৎ এলেন আবার চলেও গেলেন। আপনাকে তো জানাই হলো না আমার। অজানাই রয়ে গেলেন।
আমি জানিনা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো কি না? তবে অবশ্যই যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবো। আমার তো ফোন নেই তাই হয়তো চিঠি লিখবো।
অনেক অনেক ভালো থাকবেন।
তিতির

চিঠিটা লুকিয়ে রাখলে বইয়ের ভেতর। খাম নেই বাসায়। ফুলির মাকে দিয়ে আনাতে হবে। কিন্তু ফুলির মা যদি মাকে বলে দেয়?

চলবে…..

এমি