ফাগুন আমায় ভালবাসেনা পর্ব-১৫+১৬+১৭+১৮ এবং শেষ পর্ব

0
519

#ফাগুন_আমায়_ভালবাসেনা (শেষপর্ব)

১৫.

মা অসুস্হ জেনে মাহমুদ ছুটির আবেদনটা জমা দিয়েই বাসে ওঠে। বসের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকার কারনে ছুটি নিয়ে সমস্যা হয়নি। মুনকে টেক্সট করে জানায় মায়ের অসুস্থতার কথা। এখন শুধু অপেক্ষা কখন বাড়ি পৌছুবে।
বাসায় পৌছে ব্যাগটা রেখেই হাসপাতালে ছোটে । হাসপাতালের বিছানায় মাকে দেখে মাহমুদ কেঁদে ফেলে। মা কে কখনই এমন দেখেনি সে। মায়ের হাত ধরে বসে থাকে কিছুক্ষন। ঘুমের ঔষধের কারনে মা এখনো ঘুমে। সে ঠিক করে মা কে ঢাকায় নিয়ে সিএমএইচ এ ভর্তি করাবে। ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য বাইরে এসে দেখলো বাবা আর ছোট খালা দাড়িয়ে। সে বাবা কে নিয়ে ডাক্তারের ঘরে গেল।
-ডাক্তার বললেন, উনি তো এখন প্রায় সুস্থ্য। দুই এক দিনের মধ্যেই বাড়ি নিতে পারবেন। এখন জার্নি করলে হয়তো আরও দুর্বল হয়ে পড়বেন। আসলে ওনার দরকার বিশ্রাম আর সময়মত খাওয়া দাও্য়া। আপনারা এক কাজ করতে পারেন, বাসায় কদিনের জন্য একটা নার্স রাখতে পারেন।
রেহানা বেগমের ঘুম ভাঙ্গতেই মাহমুদকে দেখে তিনি চিৎকার শুরু করলেন।
-ও কেন এসেছে? এমন ছেলের তো আমি মুখ দেখতে চাই না। আমি মরে গেলেও কেউ ওকে ডাকবা না। বের হতে বল এখান থেকে।
মাহমুদ দৌড়ে এসে মায়ের পা ধরে বসে পড়ে।
-মা এমন কোরো না। তুমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। মাথা ঠান্ডা কর প্লিজ।
-এই হাসনা একে বাহির কর এখান থেকে। আমার মাথা আরও গরম হচ্ছে। ও এখানে থাকলে বললাম আমার মরা মুখ দেখবে।
হাসনা মাহমুদকে উঠতে বলে
-বাবা তুমি একটু বাইরে বস। দেখছই তো কি অবস্হা।
-মা তুমি আমায় মাফ কর। তুমি যা বলবে আমি তাই করব। এই তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিলাম।
বলেই মাহমুদ খালাকে রেখে বাইরে চলে যায়।
রেহানা বেগমের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। তার এতদিনের কষ্টের ফল পেয়ে গেছেন। এখন বাড়ি যেয়েই বিয়েটা দিয়ে দিতে হবে। আর এখন একটু অসুস্থতার অভিনয় শুরু করতে হবে। তাহলে মাহমুদ আর মত বদলাতে পারবে না।

একদিন পরেই বাড়ি ফিরলেন রেহানা বেগম। তার জন্য নার্স রাখা হয়েছে। তিনি তার ছোট বোন, বোনের স্বামী, তিতির আর তার পরিবারের সবাইকে ডাকলেন, তার মনের ইচ্ছার কথা জানালেন। তিনি চান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিতির আর মাহমুদের বিয়ে দিতে।
মাহমুদ এই কথা শুনে চেয়ারে বসে পড়লো মুখ নিচু করে আর তিতির তার মাকে টেনে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে গেল।
-মা এসব কি? খালার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?
-আস্তে বল। আসলে তোর খালা আগেই জানিয়েছিল। আমরা তোর পরীক্ষা শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
-বাহ কি সুন্দর কথা। আমার কথা কেউ একবার ভাবলে না। আমারও কো একটা মতামত আছে নাকি?
-না করিস না মা। তোর খালার শরীরের অবস্থা তো দেখছিস। আমাদের জন্য যদি কিছু হয় তখন কি হবে?
-তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি বেরিয়ে পড়ি যে দিকে দুচোখ যায়।
-তিতির উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। তোর খালা যা বলেছেন তাই হবে। চল এখন ভেতরে।

১৬.

তিতিরের সাথেই বিয়ে ব্যাপারটা বুঝতেও কষ্ট হচ্ছে মাহমুদের। কিন্তু কিছু বলতে গেলেই তো মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কথা বলা হবে। এ কেমন বিপদে পড়লো সে। একটাই আশার ব্যাপার তিতির যদি কোনভাবে আটকাতে পারে। সে নিজের ঘরে চুপচাপ শুয়ে থাকে। তিতিরের সাথে কি কথা বলবে?

তিতিরের কান্নাকাটি তে হাসনা বেগম বিরক্ত। কেনরে বাবা এমন মরা কান্না? তোরে তো আর জলে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে না।
-কাঁদছিস কেন? তোর কি নিজের কোনো পছন্দ আছে?
কি বলবে তিতির মাকে? নিজের পছন্দ তো আছে কিন্তু অয়নের সাথে তো যোগাযোগ করতেই পারেনি সে। আর অয়নকে তো আনতেও পারবে না এখন।
-না মা পছন্দ নেই। কিন্তু বিয়ে করবো না। আমি পড়াশুনা শেষ করে তারপর বিয়ে করব।
-তোর কি মনে হয় আপা বা মাহমুদ তোকে পড়তে দেবে না? তোর জন্য তো আরো ভালো। ঢাকায় থাকবি আর ওখানেই কোথাও একটা ভর্তি হবি। শোন তোর খালা অসুস্থ আর তোর বাবা আর আমার ইচ্ছা বিয়েটা এখানেই হোক। কারণ ছেলেটাকে ছোট থেকে আমরা চিনি। তুই অমত করিস না।
তিতির চুপ করে বসে থাকে। সে কি পালিয়ে যাবে। পালিয়ে বা যাবে কোথায়। নি:শব্দে চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
পরেরদিন যোহরের নামাযের আগে আগে তিতির আর মাহমুদের বিয়ে ঘরোয়া ভাবে হয়ে গেল। দুজনের কেউ যে খুশি না তা তাদের মুখ দেখেই বলে দেয়া যায়। কাবিনের পর মাহমুদ বাড়ির বাইরে চলে গেল। আর তিতির ইভানার ঘরে চুপ করে বসে রইলো। মা আর ইভানা আত্মীয় স্বজন যারা এসেছে তাদের নিয়ে খুব ব্যস্ত।
মাহমুদ রাস্তায় এলোমেলো কিছুক্ষন হেটে বাড়ি ফিরলো। তাকে দেখেই ইভানা বলে উঠলো -কই গিয়েছিলে? সবাই তোমাকে খুঁজছে।
মাহমুদ সেই কথার গুরুত্ব না দিয়ে জিজ্ঞেস করলেো,
-তিতির কই?
-ওরে বাবা বিয়ে হতে না হতেই এই অবস্হা? আমার ঘরে… তুমি যাও। আমি একটু পর খাবার নিয়ে আসছি।
মাহমুদ ঘরে ঢুকতেই তিতির উঠে গিয়ে জানালার কাছে দাড়ালো।
-তোর সাথে আমার জরুরী কিছু কথা আছে।
-কি বলবে বলো?
-তোকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিলনা। মার জন্য বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছি। আমি অন্য একজনকে ভালবাসি। তাকে বিয়ে করবো বলেই কথা দিয়েছিলাম। আমি চাইনা তার আর আমার মাঝে তুই ঢুকে পড়িস। তবে আমি তোকে অবশ্যই ঢাকায় নিয়ে যাব। তার জন্য তোকে অপেক্ষা করতে হবে। আমি কোনো ভাল লেডিস হস্টেলের ব্যাবস্থা করেই তোকে সেখানে দিয়ে আসব। কোচিং করবি তারপর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবি, সব খরচ আমি করবো আর তোর খোঁজ খবরও নিয়ে আসব কিন্ত ভাই হিসাবে। কেউ যেন জানতে না পারে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
তিতির অবাক হয়ে যায় মাহমুদের কথা শুনে।
-বাসায় কি বলবে তবে?
-আমি যেয়ে বাসার জন্য আবেদন করবো। আর কখনও কেউ যদি আমাদের বাসায় বেড়াতে যেতে চায় তবে নিশ্চই আগে থেকে জানাবে। তখন তুই এসে বাসায় কদিন থাকবি।
-তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
-হ্যা হয়েছে মাথা খারাপ। তবে আমার কথার উপর আর কোনো কথা বলতে যেন না শুনি।
মাহমুদ বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। তিতির বিছানায় এসে বসে। এই ছিল তার কপালে? কি করে চলবে একলা পথ? কাকে বলবে তার দু:খের কথা।

-ভাইয়া কই গেল? তোমাদের জন্য খাবার এনেছি।
-কিযে জানিনা তো। তার ঘরে মনেহয়।
-চল তবে ওই ঘরে এক সাথে বসে খাবে।
-আমার মাথা খুব ব্যাথা করছে। এখন কিছু খেতে পারবো না। তুই ভাইয়াকে খাবার দিয়ে আয়।
-কি বললে? ভাইয়া, হি হি হি। আচ্ছা তুমি শুয়ে থাক। আমি যাই।

১৭.

অয়নের কাজের ব্যস্ততায় দিন কেটে যায় ঠিকই তবে মন যেন দেশেই পড়ে থাকে। সব সময় দিন গুনতে থাকে আর ভাবে আর তো কয়েকটা মাস। বাড়িতে নিয়মিত যোগাযোগ হলেও তিতিরের সাথে যেগাযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি । এখানে আসার আগে তিতিরের পাঠানো চিঠিটা অবশ্য পেয়েছিল।
মাহমুদের ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করছে। মাহমুদ কে পায়নি। কি হয়েছে ওর? ফোন ধরছে নাই বা কেন?
এখানে সবসময় গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকে তাছাড়া স্হানীয় লোকদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে হয়। কখন কোথায় ছুটে যেতে হয়।
কদিন ধরেই অয়নের মন কেমন করছে। কোথাও কি কোনো সমস্যা হচ্ছে যেটা সে জানে না? সকাল থেকে অফিসে বসেই কাজ করছিল । আজ মনটা বেশী খারাপ কোনো কাজেই মন বসাতে পারছে না। এমন তো আগে কখনও হয়নি। ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে এসে দাড়ায় সে। বেশ গরম পড়েছে, আকাশ বেশ মেঘলা। বৃষ্টি হবে কি? কতদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি। তিতিরকে কে নিয়ে সমুদ্রের ধারে বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে বেশ হতো। সব কিছু পানিতে মিশে একাকার। ঘরে এসে বসতেই খবর আসলো পাশের গ্রামে বিদ্রোহীদ্র সাথে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। তাদের এখনই যেতে হবে। কয়েকজন অফিসার আর বেশ কিছু সৈনিক নিয়ে তারা রওনা হয়। ভাঙ্গা এবড়ো থেবড়ো পথ। তাই তারা বেশী জোরেও এগুতে পারে না। গ্রামটার কাছাকাছি আসতেই প্রচন্ড বিস্ফোরনে প্রথম ট্রাকটা উড়ে গিয়ে খাদে পড়ে। বাকি দুই ট্রাক সাথে সাথে দাড়িয়ে পড়ে। উদ্ধারকারী দল আসার অপেক্ষায় না থেকে বাকি সবাই ঝাপিয়ে পড়ে উদ্ধার কাজে।
অয়নকে বের করা হয় সবার শেষে। তার পুরী শরীর ছিন্নভিন্ন। দোমড়ানো মোচড়ানো মাংস পিন্ড। ট্রাকের সামনে থাকার কারণে মাইন বিস্ফোরণ হবার সাথে সাথে সে সবচেয়ে বেশী আহত হয়েছিল এবং খাদে পড়ার সময় সে দরজা ভেঙ্গে বাইরে পড়ে আর ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে যায়।
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো। অয়নের শেষ ইচ্ছাটাই যেন পুরণ করতে চায় আল্লাহ। ধুয়ে যাক তার সব রক্ত।
পাঁচজনের মৃতদেহ আর পাঁচজন আহতকে এ্যামবুলেন্স এ উঠিয়ে বাকি সহকর্মীরা পথের ধারেই বসে পড়ে। কান্নায় ভেঁঙ্গে পড়ে সবাই। এই কি তাদের নিয়তি?

১৮.

তিতিরের শরীরটা বেশী ভাল না। ডিপ্রেশনের কারণে সব অনুভুতি ভোতা হয়ে গেছে।
বিয়ের পরের দিনই মাহমুদ চলে গেছে। তাই সে বাবা মায়ের সাথেই আছে। বেশীর ভাগ সময় অয়নের চিঠিটা হাতে বসে থাকে। সাইক্রিয়াটিস্ট দেখানো হয়েছে। ঔষুধ গুলো খেলে তার আরো খারাপ লাগে। অনেক ঘুম পায়। তবুও অনেকটা হাল্কা মনে হয় নিজেকে। বিয়ে নামের পাহাড়টা বুকের ওপর থেকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও নামে।

হাসনা বেগমের দু:খের শেষ নেই। মেয়ের ভালো করতে যেয়ে এত বড় সর্বনাশ করে ফেলেছেন। ভুল শোধরানোর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। তিতিরকে বসার ঘরে এনে মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন তিনি আর তিতিরের বাবার সাথে গল্প করছিলেন।

তিতিরের বাবা খবর দেখছিলেন। হঠাৎ বলে উঠলেন,
-দেখো দেখো কি বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে সিয়েরা লিয়নে। বাংলাদেশের পাঁচজন সেনা কর্মকর্তা মারা গেছে।

এই কথা শুনে তিতির টিভির পর্দায় চোখ রাখে। অয়নের নাম আর ছবিটা দেখতেই সে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। হাসনা বেগম চিৎকার শুরু করেন।
-কি হয়েছে আমার মেয়ের। তিতিরের বাবা তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকো।
ফুলির মা দৌড়ে গিয়ে পানি আনে। দুজনে ধরে তিতিরের ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেয়।

মাহমুদ অয়নের খবরটা সাথে সাথেই পেয়েছিল। সারাদিন মন খুব খারাপ থাকায় কাজে তেমন মন বসাতে পারে নাই। টিভির ঘরে অনেকেই খবর দেখছে। হঠাৎ মাহমুদ ফোনের কাছে দৌড়ে আসে। সে জানে তিতিরের মানসিক অবস্থা ভালো না। এই অবস্হায় এই খবর দেখলে হয়তো সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাবে। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করেও ওপাশের ফোন কেউ ধরে না। সে নিজের বাসায় ফোন করে। সেখানেও একি অবস্হা? কি হলে সবার? মনে হচ্ছে একছুটে বাড়ি চলে যায়।

তিতিরের অবস্থা বেশ খারাপ । জ্ঞান ফিরেছে তবে কাউকে চিনতে পারছে না। চারিদিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজছে। তিতিরের মা কান্নাকাটি শুরু করেছেন। ইভানা তিতিরের হাত ধরে বসে আছে। কেউ আসলে বুঝতে পারছে না কেন তিতিরের এমন হলো।
ডাক্তার তিতিরের অস্থিরতা দেখে ঘুমের ঔষধ দিলেন।
রেহানা বেগমকে বললেন,
-আপনার রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যান। আমাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি।

রেহেনা বেগম মাহমুদ কে ফোন করেন।
-বাবা তিতিরের অবস্থা ভালো না। তুই ডাক্তার দেখানোর সব ব্যবস্থা কর। আমরা কাল সকালেই চলে আসব।
মাহমুদের মাথায় আকাশ ভেঁঙ্গে পড়ে। তার জন্যই মেয়েটার এমন পরিণতি। সারারাত তার ঘুম হয় না।
পরের দিন সকাল দশটার আগেই মা, খালা আর খালু তিতিরকে নিয়ে চলে আসে।
মাহমুদ কে দেখেই তিতির কথা বলে ওঠে,
-আরে আপনি এখানে? অয়ন কোথায়? উনি তো বললেন আপনার সাথেই থাকবেন? প্লিজ ডেকে আনেন। আমি কতদিন থেকে তার অপেক্ষা করে বসে আছি। প্লিজ ডাকেন।

মাহমুদ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তাড়াতাড়ি করে সিএমএইচ এর ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সব টেস্ট করা হয়। ডাক্তার পরিবারের সবার সাথে আলাদা আলাদা কথা বলেন। পরে মাহমুদকে ডাকেন,
-আসলে হতাশা আর প্রচন্ড শকে উনি অনেককিছু ভুলে গেছেন। কিন্তু যেহেতু অয়নকে অনেক পছন্দ করত তাই তার কথা একটু হলেও মনে আছে। আপনার যা করতে হবে তার সাথে স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। অনেক যত্ন নিতে হবে। সময়মত ঔষধগুলো দিতে হবে। কোন কিছু নিয়ে জোর করা যাবে না। ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিতে হবে তার মনের গ্লানি। তাতে যদি ধীরে ধীরে তার পুরোনো সব কথা মনে পড়ে। আর আমরা তো রুটিন চেকআপ করবই।

মাহমুদ ডাক্তারের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। আজ থেকে থেকে আরেক যুদ্ধ। তাকে তো বিজয়ী হতেই হবে। কোনো এক ফাগুনে নিশ্চই সে আর তিতির হাত ধরে পথে পথে হাঁটবে। সামনে তাকাতেই সে দেখলো তিতির তাকে হাত ইশারায় ডাকছে। সে এগিয়ে যায়
-কি হয়েছে?
-এই তুমি কি জান আমি অয়নকে একটা লাল গোলাপ পাঠিয়েছিলাম। কই সে তো কিছু পাঠানো না?
-নিশ্চই পাঠাবে। অপেক্ষা করতে হবে তো।
-অনেকদিন তো অপেক্ষা করলাম। কোথায় গেল অয়ন আমাকে ফেলে?

তিতিরের জীবনের ফাগুনগুলো একটার পর একটা চলে যেতে থাকে। অয়নের অপেক্ষায়। আর মাহমুদ অয়ন হয়েই চিঠি লিখে তিতিরকে, উপহার পাঠায়। সময় বয়ে যায়।

সমাপ্ত

এমি