ফিরে আসা ২ পর্ব-৫+৬

0
130

#ফিরে_আসা২
৫+৬
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

দুপুরের রোদটাকে আজ একটু বেশিই অসহনীয় বলে মনে হচ্ছে। অরার বিশাল এই কেবিনের একপাশটা কাঁচে ঘেরা। কাঁচ ভেদ করে তীক্ষ্ণ একফালি রোদ এসে পড়েছে তার মুখের ওপরে। উঠে গিয়ে স্ক্রিন টেনে দিয়ে এলেই হয়। তবে অরার আলসেমি তাকে বারবার বাঁধা দিচ্ছে।

বসে বসে কাজ করার মাঝে তার আলসেমি অনুভূত হয় না। যত আলসেমি সব শারীরিক কাজে। এই যেমন সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না, নাস্তা করতে ইচ্ছা করে না, অফিসে আসতে ইচ্ছা করে না। শরীরটাকে কোনমতে টেনে হিঁচড়ে অফিসে এনে নিজের কেবিনে বসতে পারলেই দিনের প্রথম ধাপের আলসেমি মোটামুটি শেষ। দ্বিতীয় ধাপের আলসেমি শুরু হয় অফিসের সব কাজ শেষে। অরার তখন ইচ্ছা হয় কেবল নিজের ডেস্কে বসে থাকতে।

আলসেমি জিনিসটা কোনোকালেই অরার মাঝে ছিল না। সে বেশ বুঝতে পারছে একটু একটু করে তার মধ্যে কে এই বদভ্যাস গড়ে তুলছে। তার মাঝে লুকিয়ে থাকা ওই ছোট্ট সুপারস্টার। অরার প্রেগন্যান্সির এখন আড়াই মাস চলছে। ডাক্তারেরা মাসে হিসাব করেন না, করেন সপ্তাহে। কারণ প্রতি সপ্তাহেই বাবুর মধ্যে কোনো না কোনো পরিবর্তন আসে। সেই হিসাবে অরা অবস্থান করছে দশম সপ্তাহে। এই সময়ের বাচ্চার সব অঙ্গগুলোর গঠন হয়ে যায়, তবে সেগুলো এখনো কাজ করতে পারে না।

অরার ভাবতেই অবাক লাগে সে না-কি মা হতে যাচ্ছে! ‘মা’ শব্দটিকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্যে হাজারটা শব্দও যথেষ্ট নয়। অরার মনে একটাই ভয়, সে কি পারবে ভালো মা হতে? এই প্রশ্নটা সে নিজের শাশুড়ি সেলিনা হককে করেছিল। তিনি এক ধমক দিয়ে বললেন, “ভালো মা আবার কী? মা তো মা-ই।”

মা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি প্রত্যেকটা মেয়েকে একটা অদৃশ্য শক্তি দিয়ে দেয়। যার বলে সে তার পুরো পৃথিবীটাই আবর্তিত হয় সন্তানকে কেন্দ্র করে। অরাও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম নয়। এখনই সে একটু একটু করে বাবুকে অনুভব করতে পারে। তাকে ঘিরে মনে হাজারটা স্বপ্ন সাজাতে পারে।

কম্পিউটারের দিকে চোখদুটো আটকে আছে অরার। নতুন একটা গল্প কিছুদিন আগে পাশ করেছে অরা। এই গল্প সে একা পছন্দ করেনি, ক্রিয়েটিভ টিমের সদস্যরাও তাকে সাহায্য করেছে। কোনো একটা গল্প কে ফিল্মস পছন্দ করে ফেললে তার পরবর্তী ধাপ স্ক্রিপ্ট বা চিত্রনাট্য লেখা। এক্ষেত্রে অবশ্য ডিরেক্টর আগেভাগেই স্ক্রিপ্ট লিখে রেখেছিলেন। স্ক্রিপ্টের ভুলভ্রান্তি ধরে ক্রিয়েটিভ টিম সেগুলো সংশোধন করতে দেয়। স্ক্রিপ্ট সংশোধনের পর তৃতীয় ধাপ অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচন।

একটা সিনেমায় অনেকগুলো চরিত্র থাকে। প্রধান চরিত্র, পার্শ্ব চরিত্র, একটু কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, একেবারেই গুরুত্বহীন চরিত্র। কে ফিল্মসের নিয়মকানুনের কড়াকড়ি একটু বেশিই। পরিচালককে এই তৃতীয় ধাপে নির্দেশ দেওয়া হয়, সে যেন স্ক্রিপ্টের ছোট-বড় সকল চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তালিকা পাঠায়।

সিনেমায় যদি এমন কোনো চরিত্র থাকে যেখানে প্রধান চরিত্র মাছওয়ালার কাছ থেকে মাছ কিনছে, তবে সেই মাছওয়ালার চরিত্রে কে অভিনয় করবে সেটাও জানাতে হবে। পরিচালকদের কাছে এই নিয়মটা বাড়াবাড়ি বলে মনে হলেও, এর প্রয়োজন আছে। অনেক সময় সিনেমায় অভিনেতা হিসেবে অনেক অযোগ্য লোক ঢুকে পড়ে। অভিনয় তো এরা পারেই না, বরং দর্শকের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অযোগ্য লোকের সংখ্যা কমাতেই এই ব্যবস্থা।

কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠা সেই তালিকার দিকে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে আছে অরা। হঠাৎ তার কেবিনের ডোরবেল বেজে উঠলো।
অরার ডেস্কের মুখোমুখি থাকা দেয়ালে ঝুলন্ত বিশাল এক টিভি। সেই টিভিতে ভেসে উঠছে গোটা অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ। অরা এখান থেকে বসেই যাতে দেখতে পারে, কোথায় কী ঘটছে। নিজের কেবিনের সামনের ফুটেজ বের করে অরা দেখলো, যুথী এসেছে। তার পেছনে একটা ছেলে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।

অরা উঁচু গলায় বলল, “Come in.”

যুথী দরজা সামান্য ফাঁক করে মাথা বের করে বলল, “ম্যাম আসি?”

যুথী, কে ফিল্মসের ক্রিয়েটিভ টিমের হেড। তারই পরিচালনায় চলে এই টিমের সকল কর্মকান্ড। মেয়েটা অরার একটু বেশিই কাছের। এই প্রোডাকশন হাউজের সূচনালগ্ন থেকেই যুথী আছে ক্রিয়েটিভ টিমে।

অফিসের অন্যান্য স্টাফরা বসের কেবিনের ঢোকার আগে অনুমতি চেয়ে বলে, “আসতে পারি?” তবে যুথী এক্ষেত্রে নিজেকে কিছুটা ব্যতিক্রম করে নিয়েছে। সে বলে, “আসি?”

অরা বলল, “এসো, যুথী।”

যুথী ছোট ছোট পা ফেলে কেবিনে প্রবেশ করলো। তার পিছু পিছু ওই ছেলেটাও এলো।

যুথী অরার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে এলাম ম্যাম। আমাদের টিমের নতুন মেম্বার, মাহমুদ রহমান।”

মাহমুদ নামের ছেলেটা ভদ্রভাবে বলল, “Good Morning Mam.”

অরা হাসিমুখে বলল, “Good Morning. Nice to meet you. বসো তোমরা।”

তারা দুজনেই বসলো অরার বিপরীতে থাকা চেয়ারদুটোতে।

যুথী মিষ্টি গলায় বলল, “মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে এমএ করেছে ম্যাম। তাছাড়াও বেশ অনেকগুলো টিভি নাটকের ক্রিপ্ট লিখেছে।”

অরা মাহমুদের দিকে তাকিয়ে অবাক ভঙ্গিতে বলল, “আপনি রাইটার?”

“আমাকে প্লিজ তুমি করে বলুন ম্যাম।”

অরা সংযত ভঙ্গিতে বলল, “আমি সহজে কাউকে তুমি বলতে পারি না। আপাতত আপনিটাই থাক।”

যুথী বলল, “ম্যাম আমাদের টিমে স্ক্রিপ্ট অ্যানালাইসিস করতে পারে এরকম একজনের প্রয়োজন ছিল না?”

“হুঁ।”

“সেজন্যেই মাহমুদকে অ্যাসাইন করা হয়েছে। মাহমুদ গল্পের ফ্লো অনুযায়ী স্ক্রিনপ্লে ঠিক আছে কিনা সেটা যাচাই করবে।”

অরা হালকা গলায় বলল, “বাহ্! তো মাহমুদ? কেমন লাগছে আমাদের অফিস?”

মাহমুদ মুগ্ধ গলায় বলল, “চমৎকার লাগছে ম্যাম। এত বড় অফিসে এর আগে আমি কোনোদিন আসিনি। আমার তো সকালে অফিসে পা রাখতেও ভয় করছিল। যেদিন ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম, সেদিন অবশ্য ভয় করছিল না। আমি ভেবেছিলাম আমার বোধ হয় চাকরি হবেই না। এসেছিলাম শুধু এক্সপেরিয়েন্সের জন্যে।”

একটা মানুষ এক নিঃশ্বাসে এতগুলো কথা বলে কী করে? অরার ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হলেও মুখে হাসি ঠিকই রয়েছে।

অরার বিস্ময় লক্ষ্য করে মাহমুদ বলল, “সরি ম্যাম।”

অরা হেসে বলল, “সরি বলার কী আছে? এখানে আপনার কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। আচ্ছা শুনলাম আপনি স্ক্রিপ্টও লিখেছেন?”

“টিভি নাটকের জন্যে লিখেছি ম্যাম। আমার বড় ভাই আসলে টিভি নাটকের ডিরেক্টর। ওর নাটকের জন্যেই লেখা।”

“ওহ্! তাহলে তো এই জগৎটা আপনার কাছে নতুন কিছু নয়।”

“কী যে বলেন ম্যাম। নাটক আর সিনেমা কি এক জিনিস? নাটক হলো পুকুর আর সিনেমা বিশাল সমুদ্র।”

অরা ভেবেছিল আজ প্রথম দিন, তাই হয়তো এক্সাইটমেন্টের বশে অতিরিক্ত কথা বলছে মাহমুদ। তবে এখন সে বেশ বুঝতে পারে, এই ছেলেটা স্বভাবতই অতিরিক্ত কথা বলে।

অরা আর কথা না বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বলল, “আই হোপ আপনার এখানে কাজ করতে ভালো লাগবে।”

তবে মাহমুদের উদ্যোগে কথা বেড়েই গেল। সে কৌতূহলী ভঙ্গিতে বলল, “আচ্ছা ম্যাম? আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো?”

“অবশ্যই, করুন!”

মাহমুদ হড়বড় করে বলল, “সিনেমার স্ক্রিপ্টে কতগুলো দৃশ্য থাকে? না মানে, নাটকের স্ক্রিপ্ট যখন লিখতাম সেখানে পঁচিশ থেকে ত্রিশটা দৃশ্য থাকতো। সিনেমায় কয়টা থাকে?”

যুথী ব্যস্ত হয়ে বলল, “মাহমুদ! এই বিষয়ে আপনাকে ব্রিফিং দেওয়া হবে। এ ধরনের ছোট ছোট প্রশ্ন করে ম্যামকে বিরক্ত করবেন না প্লিজ!”

এই ছেলেটার মধ্যে ভদ্রতা বলতে কিছুই নেই। অফিসে কেউ সিইও ম্যাডামকে এমন অহেতুক প্রশ্ন করে বিরক্ত করে না। তিনি এমনিতেই হাজারটা কাজে ব্যস্ত থাকেন। অথচ এই অফিসে পা রাখতেই মাহমুদের প্রথম কাজ অরাকে বিরক্ত করা।

অরা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আহা থাক না যুথী। নতুনরা তো প্রশ্ন করবেই। দৃশ্যগুলো ছোট ছোট হলে কখনো একশটা পর্যন্ত দৃশ্য হতে পারে। আর যদি বড় বড় হয় তাহলে প্রায় সত্তরটা। পুরোটাই নির্ভর করে গল্পের ওপর। যুথী তো বললই আপনাকে ব্রিফ দেওয়া হবে। তখন আরও ভালো করে বুঝতে পারবেন।”

মাহমুদ হাসি হাসি মুখে বলল, “Thank you mam! Thank you so much.”

যুথী শুকনো গলায় বলল, “আপনি এখন যেতে পারেন মাহমুদ। অফিসটা ঘুরে দেখুন। ম্যামের সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”

মাহমুদ বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুথী অনুতপ্ত গলায় বলল, “I’m sorry mam. আমি একেবারেই বুঝতে পারিনি এই জিনিস এত কথা বলে।”

অরা কম্পিউটারের দিকে চোখদুটো ফিরিয়ে নিয়ে বলল, “It’s fine. এই অফিসে এরকম জিনিসেরই দরকার আছে। তোমরা সবাই তো রোবটের মতো বসে থাকো সারাদিন।”

“তাই বলে আপনাকে এত বিরক্ত করবে? আমি ভালো করে ওয়ার্ন করি দেবো যেন আপনাকে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে প্রশ্ন না করে।”

“তুমি যখন নতুন ছিলে, তখন প্রশ্ন করতে না আমাকে?”

অরা এমনই। এই গোটা অফিসটাই যেন তার বাড়ি, আর অফিসের স্টাফরা সবাই আর পরিবারের সদস্য। পরিবারের সদস্যদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা তো তারই দায়িত্ব। একজন দক্ষ সিইওকে কেবল কোম্পানির জন্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষান্ত থাকলে চলে না। এই ছোট ছোট বিষয়গুলোকেও সমান গুরুত্ব দিতে হয়।

দুইদিন আগে মুক্তি পেয়েছে আরশাদের পরবর্তী সিনেমা ‘দূরে হারিয়ে’র ট্রেইলার। যে ট্রেইলার দেখে সীমার সকল বিস্ময় ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সেই ট্রেইলার আজ দেশের সকলের জন্যে উন্মুক্ত। দেশের সবথেকে বড় সুপারস্টার আরশাদ। তার অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সকল সিনেমাই থাকে দর্শকের সকল আগ্রহ ও কৌতূহলের কেন্দ্রে।

তবে ‘দূরে হারিয়ে’ নিয়ে যেন দর্শকের আগ্রহ একটু বেশি। কে ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত সর্বাধিক বাজেটের সিনেমা এটি। সিনেমার বাজেট যত বেশি হয়, তার আয়োজন হয় ঠিক ততটাই ব্যাপক। দর্শকের আগ্রহের কারণ সম্ভবত সেটাই। আগ্রহের আরেকটা কারণ অবশ্য আছে। সিনেমার গল্পের ধরন এবং আরশাদের চরিত্র।

ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মতো নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছে আরশাদ। ‘দূরে হারিয়ে’ সিনেমাটি মূলত একজন সিরিয়াল কিলারকে ঘিরে। সিরিয়াল কিলারদের মস্তিষ্ক সাধারণের থেকে কতটা আলাদা, একটা খুনের পেছনে তাদের কী উদ্দেশ্য থাকে – এই নিয়েই সিনেমা।

মুক্তির পর পর ফেসবুকের পাতায় পাতায় ট্রেইলারটির বিচরণ। ইউটিউবেও রয়েছে ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে। দর্শকের মুখে মুখে কেবল একটাই কথা, “আরশাদ হকের অভিনয়ের কোনো তুলনাই হয় না!” চিরকাল রোমান্টিক বা অ্যাকশন ধর্মী সিনেমায় অভিনয় করে আশা আরশাদ কী অবলীলায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে কঠিন এক চরিত্রে!

কে ফিল্মসের পিআর টিম এই সিনেমার প্রচারের জন্যে ভিন্ন কায়দা অবলম্বন করছে। সাধারণত আরশাদ নিজের সিনেমার তেমন একটা প্রচার করে না। কাউকে না জানিয়ে চুপি চুপি রিলিজ দিলেও তার সিনেমা হবে সুপারহিট।

তবে দর্শকেরা যাতে আরশাদের কাছাকাছি থাকতে পারে তাই এই সিনেমার প্রচার বেশ জাঁকজমোকভাবেই করা হচ্ছে। ট্রেইলার রিলিজের দিন বিশাল এক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছিল। দেশের এমন কোনো পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল নেই যারা এই প্রেস কনফারেন্সে নিজেদের সাংবাদিকদের পাঠায়নি।

আজ আবার সিনেমার প্রচারে আরশাদ এসেছে ‘জি নিউজ’ চ্যানেলে। সে একা নয়, তার সঙ্গে আছে এই সিনেমার পরিচালক সাদাদ করিম এবং নায়িকা তৃণা। নায়িকা বললে অবশ্য ভুল হবে। এই সিনেমার গল্প নায়ক-নায়িকা নির্ভর নয়। তাকে বলা যেতে পারে অভিনেত্রী। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে ‘জি নিউজের’ পর্দায়।

ইন্টারভিউয়ের সঞ্চালনা যে ছেলেটা করছে তার মধ্যে সূক্ষ্ম এক ছটফটে ভাব আছে। সঞ্চালকের মাঝে ছটফটে দেখতে দর্শকেরা পছন্দ করে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হাসিমুখে আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আরশাদ প্রথম প্রশ্নটা আপনার কাছে। বলা হচ্ছে দূরে হারিয়ে আপনার ক্যারিয়ারের সবথেকে বড় সিনেমা। ট্রেইলার দেখে দর্শক ইতোমধ্যেই প্রশংসায় ভাসাচ্ছে আপনাকে। তবে অভিনেতা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি এই সিনেমার প্রযোজকও। আপনার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কে ফিল্মসের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা এটি। প্রযোজক হিসেবে বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করছেন কি?”

আরশাদ সাবলীল গলায় বলল, “একেবারেই না। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেই আমি সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। মাঝে মাঝে তো ভুলেই যাই যে আমিই প্রোডিউসার।”

আরশাদের কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে পরিচালক সাদাদ আগ্রহ নিয়ে বলল, “আমি একটু ইন্টারাপ করতে চাই। শুটিংয়ের সময় একবার ভাইয়ার কাছে আমি বাজেটের একটা ইস্যু নিয়ে আলাপ করতে গেলাম। ভাইয়া তো এমনিতেই শুটিংয়ের সময় ক্যারেক্টারে ডুবে থাকেন। সেদিন হয়তো একটু বেশিই প্রেশার যাচ্ছিল। ভাইয়া আমাকে বলল, আমাকে বাজেট দেখাচ্ছো কেন? প্রোডিউসারকে গিয়ে দেখাও।”

আরশাদ ক্ষীণ হাসি হেসে বলল, “আমি শুধু কাগজ-কলমেই প্রোডিউসার। সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কাজ সামলায় আমার সিইও আর আমার টিম।”

কাজের ক্ষেত্রে অরাকে কখনো নিজের স্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করে না আরশাদ, সেটা তো ব্যতিগত সম্বোধন। কাজের ক্ষেত্রে অরা তার সিইও।

সঞ্চালক সুন্দরভাবে বলল, “পরের প্রশ্নে যাচ্ছি, দূরে হারিয়ের ট্রেইলার তো ইতিমধ্যেই চারিদিকে ব্যাপক সাড়া ফেলছে। বাংলাদেশে চব্বিশ ঘন্টায় সবথেকে বেশি ভিউ হওয়া ট্রেলারের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে। আপনার অনুভূতি কেমন?”

আরশাদ চোখের সামনে এসে পড়া চুলগুলো একহাতে সরিয়ে বলল, “দর্শকের আমি বরাবরই গ্রেটফুল। তাদের জন্যেই নতুন নতুন কাজ করা। এটা তারাও জানে। তাদেরকে নতুন করে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই।”

“আরশাদ তবে একটা মহল বলছে, নতুন প্রজন্মের ওপর এই সিনেমার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। যেহেতু সিরিয়াল কিলিংয়ের ওপর নির্ভর করছে সিনেমাটির গল্প।”

আরশাদ অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, “ট্রেইলার দেখেই তো বলে দেওয়া যায় না, সমাজের ওপর একটা সিনেমার কেমন প্রভাব পড়বে।”

সঞ্চালক বলল, “তৃণা আপনার এ নিয়ে কিছু বলার আছে?”

তৃণা খানিকটা ভেবে বলল, “আমার মনে হয় কী, সিরিয়াল কিলিং নিয়ে তো এর আগেও পৃথিবীতে হাজারো সিনেমা হয়েছে। এর থেকে ব্রুটাল দৃশ্যও দেখানো হয়েছে তাতে। আরশাদ ভাইয়ার প্রত্যেকটা সিনেমায় একটা না একটা ম্যাসেজ থাকে। দূরে হারিয়ে তার ব্যতিক্রম নয়। নতুন প্রজন্মের ওপর এই সিনেমা কোনো খারাপ প্রভাব তো ফেলবেই না, বরং আমার ধারণা দূরে হারিয়ে দেখলে এই প্রজন্মের কেউই খারাপ পথে যাবে না।”

সঞ্চালকের প্রশ্ন আবারও ফিরে গেল আরশাদের কাছে, “আরশাদ আপনার অভিনয় বরাবরের মতোই প্রশংসিত হচ্ছে। ট্রেইলারে আপনার ডায়লগ সকলের গায়ে কাঁটা দিয়েছে রীতিমত। এই চরিত্রের জন্যে কীভাবে প্রিপারেশন নেওয়া হয়েছে?”

আরশাদ শান্ত ভঙ্গিতে বলল, “যেকোনো চরিত্রের জন্যেই আমি শুটিংয়ের অনেক আগে থেকে প্রিপারেশন নিই। বলতে গেলে পুরো স্ক্রিপ্টটা মুখস্ত করে ফেলি। আয়নার সামনে বারবার ডায়লগগুলো রিহার্স করি। এবারও তাই করেছি। তবে তৃণা যেমনটা বলল, পৃথিবীতে সিরিয়াল কিলিং নিয়ে অনেক সিনেমা আছে। সেগুলোর কয়েকটা বাসায় বসে দেখেছি। ট্রু ক্রাইম ডকুমেন্টারি দেখেছি। সিরিয়াল কিলারদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে বোঝার চেষ্টা করেছি।”

সঞ্চালক তৃণাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “তৃণা আপনি তো একজন ক্রাইম জার্নালিস্টের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনি কীভাবে চরিত্রের জন্যে প্রিপারেশন নিয়েছেন?”

তৃণা আগ্রহ নিয়ে বলল, “আমার মামা আসলে এক সময়ে ক্রাইম জার্নালিস্ট ছিল। প্রিপারেশনের ক্ষেত্রে একটু সুবিধাই হয়েছে। শুটিংয়ের আগ দিয়ে আমি সারাদিন মামার বাসায় গিয়ে পড়ে থাকতাম, তাকে প্রশ্ন করে করে বিরক্ত করে ফেলতাম। মামা অবশ্য ধৈর্য নিয়ে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।”

“সাদাদ আপনার কাছে প্রশ্ন, আরশাদ ভিন্ন ভিন্ন ইন্টারভিউতে বলেছেন আপনি না-কি শুটিংয়ের সময় দুজনকেই টর্চার করেছেন। কাহিনীটা কী?”

এই প্রশ্নে কিছুটা রহস্য সৃষ্টি হলো ইন্টারভিউ সেটের মাঝে। আরশাদ এবং তৃণা দুজনের ঠোঁটেই ফুটে উঠলো রহস্যের হাসি।

সাদাদ খানিকটা হেসে বলল, “কাহিনী হলো আমি ভাইয়াকে ক্যারেক্টার থেকে বের হতে দিতাম না। আমরা তো দীর্ঘ দুই মাস বান্দরবানের গভীর অরণ্যে শুটিং করেছি। সিনেমার পুরো সেটটা সেখানেই করা হয়েছিল। যদিও আমরা সেখানে থাকতাম না। শুটিং শেষে সেট থেকে কিছুটা দূরে ইউনিটের সবাই থাকতো। কিন্তু আমি আরশাদ ভাইয়া বলতাম, আপনি সেটেই থেকে যান। বাইরে গেলেই ক্যারেক্টার থেকে বেরিয়ে যাবেন।”

“এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে একটা প্রশ্ন করি আরশাদ?”

“নিশ্চয়ই।”

সঞ্চালক কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে যেন নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো প্রশ্নটা করবে বলে। অবশেষে বলেই ফেলল, “আপনার দীর্ঘদিনের সহকর্মী এবং ইন্ডাস্ট্রির একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নওশীনকে আজ সকালে বিচারিক আদালত জামিন মঞ্জুর করেছে। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?”

মনে মনে যেন এক ধাক্কার মতো খেল আরশাদ। তার বিস্ময়ের সকল সীমা নিমিষেই ছাড়িয়ে গেল। সে বুঝতে পারছে না কী নিয়ে বেশি অবাক হবে? নওশীনের জামিন পাওয়া নিয়ে না-কি সঞ্চালকের তাকে এই নওশীন কেন্দ্রিক প্রশ্ন করার দুঃসাহসিকতা নিয়ে। হাজারো প্রশ্ন একসঙ্গে ঘুরপাক করছে তার মস্তিষ্কে। সেই সঙ্গে তিলে তিলে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তার চিরচেনা রাগ।

নিজের মধ্যে জমতে থাকা সকল অনুভূতিগুলোকে আরশাদ চাপা দিয়ে রাখলো নিজের দক্ষ অভিনেতার মুখোশের আড়ালে।
ক্যামেরার সামনে তাকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়লে চলবে না। বিশেষ করে, লাইভ টিভিতে তো একেবারেই না। হাজারো দর্শক তাকে দেখছে এই মুহূর্তে।

আরশাদ শীতল গলায় বলল, “পৃথিবীতে কতকিছু ঘটছে। সব বিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়া থাকাটা কি জরুরি?”

নওশীন, এই মানুষটাকে ঠিক কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করলে তার চরিত্রের উপযুক্ত ব্যাখ্যা করা যাবে কে জানে? প্রকৃতি হয় এই মানুষটাকে সৃষ্টি করেছে গভীর মনোযোগে, না হয় একেবারেই অগ্রাহ্যে। তার পুরো পৃথিবীটা আবর্তিত হয় কেবল নিজেকে কেন্দ্র করে। তার প্রতিটা কথা, প্রতিটা অনুভূতি, প্রতিটা পদক্ষেপ কেবল নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে।
নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি করতেও পিছপা হয় না সে।

অরার কিডন্যাপের পর আরশাদের করা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয় নওশীন। এছাড়াও তল্লাশির সময় তার বাড়িতে মাদকদ্রব্যের সন্ধান মেলায় পুলিশ তার নামে জুড়ে দেয় কঠিন মাদক মামলা। ফলত, সবমিলিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় নওশীনের।

নওশীনের সাজা কার্যকর হওয়ার পর পরই তার মা ইয়াসমিন বেগম ছুটে এসেছেন কানাডা থেকে। পাঁচ বছরের একবছর ইতোমধ্যেই কেটেও গেছে। তবুও হাল ছেড়ে দেননি তিনি। তার আপিল এবং নিয়োগ করা দক্ষ আইনজীবীর বলে কয়েকদিন আগে নওশীনের সাজা কমে তিন বছরে গড়ায়।

আজ আবার স্বশর্তে পঁয়তাল্লিশ দিনের জামিন পেলো সে। হয়তো কাল পরশুর মাঝেই আপাততভাবে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবে জেল থেকে।

নওশীনের অস্তিত্ব নিয়ে কোনপ্রকার মাথাব্যথা নেই আরশাদের। সে এই পৃথিবীতে থাকলেও যা, না থাকলেও তাই। সাজা কমবার খবরটা তাই একেবারেই ভাবায়নি তাকে। আজকের এই জামিনের ঘটনাও ভাবাচ্ছে না তাকে। তার বিরক্তি শুধুমাত্র একটা জায়গায়, বারবার তার নামের পাশে ওই বিশ্রী মানুষটার নাম জুড়ে দেওয়া হবে কেন?

বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেল আরশাদের। কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো বাড়ির একজন স্টাফ। এমনিতেই বিরক্ত আরশাদের বিরক্তি যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেল। প্রতিদিন সে কলিংবেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি একটা হাসি হেসে দরজা খুলে দেয় অরা। যে হাসি দেখার সঙ্গে সঙ্গে চোখদুটো জুড়িয়ে যায় তার, সমস্ত শরীরে খেলে যায় বিচিত্র এক প্রশান্তি।
আজ কোথায় গেল মেয়েটা?

বাড়ির ভেতরে একটু এগিয়ে গিয়েই বসার ঘরের চোখ পড়লো আরশাদের। অরা সোফার ওপরে পা তুলে বসে আগ্রহ নিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। টিভি চলেছে নওশীনের জামিনে নিউজ।

আরশাদের রাগ আর বিরক্তি যেন সকল সীমা ছাড়িয়ে গেল। একে তো মেয়েটা দরজা খুলতে যায়নি, তার ওপরে আবার বসে বসে নওশীনের নিউজ দেখছে। নওশীন নামটাকে আরশাদ যতই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে বলে, অরার আগ্রহ ঠিক ততটাই বেড়ে যায়।

হাজার রাগ থাকা সত্ত্বেও বরাবরের মতোই রাগের প্রকাশটা আর করতে পারলো না আরশাদ। চুপচাপ এগিয়ে গেল বসার ঘরের দিকে।

আরশাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অরা তার দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় বলল, “শুনেছো খবরটা?”

আরশাদ গম্ভীর স্বরে বলল, “হুঁ।”

“এখন?”

আরশাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, “কী এখন? অরা তোমাকে না কতবার বলেছি, লিভিং রুমে বসে এসব নিউজ দেখবে না। কথার চোখে পড়লে কী একটা অবস্থা হবে ভাবতে পারছো?”

অরা সঙ্গে সঙ্গে চ্যানেল পাল্টে বলল, “সরি।”

“কথা কোথায়?”

“ওর ঘরে, হোমওয়ার্ক করছে।”

আরশাদ আর কথা না বাড়িয়ে দোতলায় উঠে গেল। তার রাগটা স্বাভাবিক। নওশীনের নামটা পর্যন্ত শুনলে তার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটে ওঠে। নওশীনের জামিন নিয়ে অরা তাকে অযথা প্রশ্ন না করলেও পারতো।

এই খবরটা শোনার পর থেকে কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অরার। চিন্তার কোনো কারণ নেই। একজন মানুষ অপরাধ করেছে, সাজা পেয়েছে। আপিল করে জামিনও পেয়েছে। খুবই সাধারণ আইনি পদ্ধতি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ডুবে পড়ার কী আছে? তবুও অরার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। অদৃশ্য এই দুশ্চিন্তার কারণ কী?

রাত বারোটার কাছাকছি, ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে অরা। বাড়ির সামনের জায়গাটায় নতুন বাগান করেছে অরা। ফুলের বাগান, সবগুলোই দেশি ফুল। একেকটা সারিতে একেক রঙয়ের ফুলের টব। দুজন মালী এসে প্রতিদিন এই বিশাল বাগানের যত্ন নেয়। ছাদ থেকে এই দৃশ্যটা দেখতে অদ্ভুত জাদুকরী বলে মনে।

কিছুটা সময় পর অরার পাশে এসে নিঃশব্দে দাঁড়ালো আরশাদ। এতক্ষণ সে ছিল কথাকে ঘুম পাড়াতে ব্যস্ত।

আরশাদ অরার একটা হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল, “অরা সরি, আমি তখন একটু বেশিই রুড হয়ে গিয়েছিলাম।”

অরা এমনভাবে হাসলো যেন কোনো ছেলেমানুষের ছেলেমানুষীকে প্রশয় দিচ্ছে সে। হাসিটা ঠোঁটে বজায় রেখেই বলল, “এতটুকুর জন্যেও সরি বলতে হয়?”

আরশাদ ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল, “আজ লাইভ ইন্টারভিউতে এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন করে। সেই থেকে আমি মেজাজটা বিগড়ে ছিল। কে জামিন পেলো, না পেলো এসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার কথা হলো, ইন্টারভিউতে কেন বারবার আমাকে এই বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করা হবে।”

কিছুটা সময় চুপ করে থেকে অরা বলল, “আরশাদ?”

“হুঁ?”

অরা ইতস্তত করে বলল, “আমার না খুব ভয় করছে।”

আরশাদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, “কেন অরা?”

“দেখো আমি জানতাম, সে সারাজীবন জেলে থাকবেন না। একদিন না একদিন ঠিকই বেরিয়ে আসবেন। এই দিনটার জন্যে আমি প্রস্তুতও ছিলাম। তবে আজ হঠাৎ কেমন ভয় করছে।”

নীরবতার হাওয়া বয়ে গেল দুজনের মাঝে। অরার এই ভয়টা স্বাভাবিক। নওশীন এমন একটা মানুষ যার কারণে তার জীবনে নেমে এসেছিল ওই ভয়ানক দুটো দিন। ওই দিনদুটোর কথা মনে করলেই গা শিউরে ওঠে।

অরা ভীত ভঙ্গিতে বলল, “সে যদি আবারও আমাদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে?”

আরশাদ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে কিছু একটা ভেবে বলল, “তোমাকে সেদিন একই মানুষের ভিন্ন ভিন্ন রোলের কথা বলছিলাম, মনে আছে?”

“হুঁ।”

আরশাদ আক্ষেপের সুরে বলল, “তোমার রোলটা তখন ছিল আমার ম্যানেজারের। ম্যানেজারের রোল থেকে আমার বউয়ের রোলটা তুমি পেয়ে গেলে ঠিকই, কিন্তু আমার মস্তিষ্কে তুমি তখনও আমার ম্যানেজার। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি তোমার নতুন রোলটাকে। ভাবতেও পারিনি কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারে। তাই তোমাকে সিকিউরিটির বাড়াইনি। ভুল করেছি। এক ভুল তো মানুষ বারবার করে না। তোমার সঙ্গে এখন সবসময় একজন আর্মড বডিগার্ড থাকে। অফিস আর বাসায়ও টাইট সিকিউরিটি। ক্ষতিটা করবে কীভাবে?”

“ক্ষতি অন্যভাবেও তো করতে পারে।”

আরশাদ দৃঢ় ভঙ্গিতে বলল, “করুক, সেটা আমি দেখে নেবো। তোমার গায়ে যে একটা আঁচড় দিবে তাকে এই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবো আমি। তুমি শুধু শুধু ভয় পেয়ো না তো অরা। আমি তো আছি, আছি না?”

আছেই তো। এই মানুষটা আছেই বলেই তো জীবন এত সুন্দর।

(চলবে)