বঁধুয়া কেমনে বাঁধিবো হিয়া পর্ব-০৭

0
353

#বঁধুয়া_কেমনে_বাঁধিবো_হিয়া
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব — সাত

কার্টেসিসহ কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!

প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে ফুটপাতের ওপর হাঁটুভর দিয়ে বসে আছে মাহদিয়া। সামান্য একটা ধাক্কা খেয়ে শরীর টালমাটাল না হলেও মনের ভেতর প্রশ্ন জেগে উঠেছে। এমন একটা সিচুয়েশনে কে তাকে সাহায্য করল, নাম-ঠিকানা না দিয়ে তার জ্ঞান ফেরার আগেই-বা কেন চলে গেল! কোনো পথচারী হবে কী? হতে পারে। আশেপাশে অনেক মানুষ থাকলেও কাউকে জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না। কত মানুষই তো যাতায়াত করে রোজ! কে কার খোঁজ রাখে? কে মরল, কে বাঁচল, এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। বেলা ডুবে যাচ্ছে। এখান থেকে উঠে যেতে ইচ্ছে করছে না। যানবাহন ও কর্মব্যস্ত মানুষের ছোটাছুটি দেখছে সে। হায়দার সাহেব এরমধ্যেই কয়েকবার ফোন করেছেন, তিনি কাজী অফিসে অপেক্ষা করছেন, অথচ মাহদিয়া যাবে না বলে পথের দ্বারে চুপচাপ বসে আছে। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর খেয়াল করল, চিন্তিত চোখমুখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন হায়দার সাহেব। সে ঝিম ধরে বসে রইল। তিনি পাশে এসে দাঁড়ালেন। মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে চমকে গেলেন। দুঃখভরা কণ্ঠে বললেন,

-‘এসব কী করে হলো দিয়া? আমাকে বলিসনি কেন? এখানে বসে আছিস কী কারণে? চল, বাড়ি চল। শমসের কাজীর ওখানে গিয়েছিলাম। তাকে পাইনি। কোথায় যেন বিয়ে পড়াতে গেছেন। দ্যাখি, ওঠ। এখানে বসে বসে কী ভাবছিস বল তো!’

মাহদিয়া আনমনা স্বরে বলল,
-‘দ্যাখছি।’

-‘কী দ্যাখছিস?’

-‘এইযে, এত ভীড়, এত মানুষ। এখন পর্যন্ত কেউ মানবিকতার খাতিরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বলল না, ‘ইজ এ্যানিথিং রং?’ অথচ অজ্ঞান অবস্থায় কেউ আমার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, অ্যাক্সিডেন্টের সময় গাড়িটা টার্নিং পয়েন্টের মুখোমুখি জায়গায় ছিল, ফুটপাতে আসলো কী করে?’

হায়দার সাহেব চমকালেন। বিস্ময়ের গুটিকয়েক রেখা ফুটে উঠল তার চেহারার। চিন্তার ভাঁজ পড়ল কপালে। কোথাও কোনো চোর-ডাকাতের খপ্পরে পড়ল না তো? তড়িঘড়ি তিনি গাড়ি চেক করলেন। গাড়ির ভেতরে সবকিছু ঠিকঠাক দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। যাক, আগন্তুক তবে চোর-বাটপার নয়। ভালো মানুষ। কিন্তু নীরবে, গোপনে এই সাধু-সন্ন্যাসী সাজবার দরকার কী? সম্মুখে দাঁড়িয়ে বিপদগামী মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দোষ কোথায়? মনে প্রশ্ন জাগলেও, কোনো উত্তর খুঁজে পেলেন না। গাড়ির সিটে নিচে বেশকিছু ভাঙা কাঁচ দেখতে পেলেন। টিস্যুর সাহায্যে সেসব পরিষ্কার করে মাহদিয়াকে বললেন,

-‘সন্ধ্যে হয়ে আসছে। গাড়িতে ওঠ। তোকে পৌঁছে দিয়ে গাড়ি নিয়ে আমি ওয়ার্কশপে যাব। ভাঙা কাঁচ সারাতে হবে।’

ঘাড় কাত করে সায় জানিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল মাহদিয়া। শরীর দোলে উঠল। কপালে হাত রেখে কোনোমতে ধীরপায়ে গাড়িতে উঠে বসল। হায়দার সাহেব ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলেন। বললেন,

-‘ঔষধ নিয়েছিস?’

অস্ফুটস্বরে ‘হুম’ উচ্চারণ করে হাতে থাকা চিরকুটটা বাড়িয়ে দিল ভদ্রলোকের দিকে। প্রথমে কাগজের লেখা বুঝতে পারলেন না, পরে চিরকুট দেখে, পড়ে নিশ্চিত হলেন, যে সাহায্য করেছে সে একজন ডাক্তার। কিন্তু কে? কী নাম? সাহায্য করে এইভাবে বিপদে ফেলে চলে গেল কেন? কেন আরেকটু কষ্ট করে অসুস্থ রোগীকে গার্ডিয়ানের হাত পর্যন্ত এগিয়ে দিল না। কেমন মানুষ সে, যে বিপদে সাহায্য করেও কোনোপ্রকার ইশারা, ইঙ্গিত না দিয়ে চলে যায়? চিরকুটটা পড়ে তিনি হতাশার সুরে বললেন,

-‘যে-ই সাহায্য করুক, নাম-পরিচয় দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। উপকারের বিনিময়ে প্রতিদান নিবে না?’

মাহদিয়া হাসার চেষ্টা করল। ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখাও দেখা গেল। মাথা হেলিয়ে ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বলল,

-‘হয়তো সাহায্যকারী চায় না, কেউ তাকে চিনুক। জানুক। কিংবা, সামান্য কাজের বিনিময়ে ধন্যবাদ দিয়ে তাকে লোকলজ্জার সম্মুখে ফেলুক। ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ নামে এই সমাজে অনেক মানুষের বসবাস আছে। যারা গোপনে সাহায্য করে নিজেদেরকে সবসময় লুকিয়ে রাখতেই ভালোবাসে। আজকের আগন্তুক হয়তো সেরকমই কেউ।’

-‘থাক্! ওসব ভেবে লাভ নেই। বাড়ি গিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিবি। ঠিকমতো ঔষধ খাবি। কাজী সাহেবের সাথে তো আজ আর দ্যাখা হোলো না। তুই সুস্থ হ, দু’চারদিন পর আবার বের হব।’

মাহদিয়া জবাব দিল না। মাথায় টনটনে ব্যথা হচ্ছে। চোখে জড়িয়ে এসেছে ঘুম। চোখবন্ধ করা মাত্রই ঘুম এসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল তাকে। নিশ্চুপে, নীরবে ঘুমানোর সুযোগটাকে কাজে লাগাল।

***

খাবার টেবিলেও শান্ত হয়ে বসে আছে মাহদিয়া। খেতে গিয়েও বার বার দুর্ঘটনার সময়টা চোখে ভাসছে তার। কেউ এসে তাকে সাহায্য করে কেন চলে গেল! কষ্ট করে গাড়ি পার্কিংও করল, অথচ একবার ডাক দিয়ে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করল না। সে চাইছে না, ভাবনা গভীর হোক। বার বার মনে এসব কথা উঁকিঝুঁকি না মারুক। তবুও হচ্ছে। ভুলতেও পারছে না, আবার সহজে গ্রহণ করতেও পারছে না। অহেতুক দুঃশ্চিন্তা এসে ভর করছে মনে। হায়দার সাহেব নির্বিঘ্নে খাচ্ছেন কিন্তু কায়ছার সাহেব মাহদিয়ার অসুস্থ মুখখানির দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছেন। তখন বলেছিলেন, একা যেও না। যেচেপড়ে গিয়ে, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে, এখন ঝিমিয়ে থেকে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করছে। সব অতি পাকনামির ফল। এত পাকতে হবে কেন? গুরুজনদের কথা একটু শুনলে ক্ষতি কী! ছেলেমেয়েরা বড়ো হয়ে গেলে, নিজেদের সবসময় সর্বসেরা দাবী করে। নিজেদের কাজ, সিদ্ধান্তই যেন সব। সেরা হওয়া তো দূর, ভুল ঠিকের মধ্যে থাকা পার্থক্য যারা বুঝতে শিখে না, তারা আবার নিজেদের নিয়ে কী সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে, এটাই হলো প্রশ্ন। মাহদিয়ার এই বেখেয়ালি আচরণ এমনিতেও তাঁর ভালো লাগছে না। তারমধ্যে কাজ দেখাতে গিয়ে অকাজ করে এসেছে। এটাই আরও রাগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্ত চোখে তাকাচ্ছেন তিনি অসুস্থ মেয়েটার দিকে। সে খাচ্ছেও না, কারও সাথে কথাও বলছে না। প্লেটে খাবার নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। এত হেয়ালিপনা ভালো লাগল না তার। তিনি কণ্ঠে দাম্ভিকতা টেনে এনে বললেন,

-‘খাচ্ছ না কেন? তাড়াতাড়ি খাও, ঔষধ খাও, দ্রুত বিছানায় যাও। ওই অসভ্য ছেলেকে নিয়ে মাথা ঘামাতে বলেছি তোমায়? কেন বাড়াবাড়ি করছ? দেশে এসেছ। ঘুরো, ফিরো, ভ্রমণ কোরো। ছুটি শেষ হলে চলে যাও। অকারণ অন্যের বিরক্তির কারণ হচ্ছ কেন?’

এইভাবে কেউ তাকে অপমান করবে, সে কারও বিরক্তির কারণ এমন অজুহাত দেখাবে, এটা শোনেও খাবার তার গলা দিয়ে নামবে কী করে? শাদাবকে খুঁজতে গিয়ে, তাকে না পেয়ে যতটা অসহায় সে হয়েছিল, তারচেয়ে অসহায়ত্ব অনুভব করল কায়ছার সাহেবের এমন অহেতুক কথা ও বোঝা হওয়ার মতো কটুবাক্য শোনে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল সে। আমতা-আমতা স্বরে বলল,

-‘আমি তোমাদের কাউকে বিরক্ত করছি বড়ো মামা? আমি কেন এসেছি জানো না? ভুলটা তোমরা করেছিলে। শাস্তি পাচ্ছি আমরা দু’জন। না ঠিকানা জানি, না চেহারা! কোথায় গিয়ে খুঁজব আমি ও’কে?’

-‘খুঁজতে হবে না। ওসব ভুলে যাও।’

খেতে খেতেই এমন অহেতুক কথা বললেন কায়ছার সাহেব। হায়দার সাহেবও এবার ভাইয়ের দিকে কড়া চোখে তাকালেন। বললেন,

-‘ভুলবে কেন? বিয়ে দিয়েছ! বিয়েটা ভুলা যায়? ওরা দু’জন অবুঝ ছিল, কিন্তু কেউ অজ্ঞান ছিল না। তাই বিয়েটা অল্প বয়সের ভুল হলেও, এত সহজেই এটা ভুলে যাওয়ার মতো ছোটোখাটো কোনো সস্তা স্মৃতি বা ফেলনা ওসব নয়! এটা একটা দামী সিলমোহর। দামী সম্পর্ক। এসবের মূল্য তোমার কাছে না থাকলেও ওর কাছে আছে। তাই বয়স কম হলেও, সম্পর্কটাকে তুচ্ছ ভাবতে পারছে না।’

কায়ছার সাহেব কথা খুঁজে পেলেন না। কী বলবেন! কী বলার বাকি আছে! আর কিছু বললেও তো মাহদিয়া সেসব শুনবে না। তিনি তো চান না, শাদাব কিংবা সায়রা করীম কেউ আর কোনোদিন এই বাড়িতে ফিরে আসুন। এই বিষয়টা যত এড়িয়ে যাবেন, ততই তার জন্য মঙ্গল। উপায়ন্তর না পেয়ে খাবার টেবিল ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন তিনি। মাহদিয়া পিছন থেকে বলল,

-‘দেশে ফিরার আগে বার বার জানতে চেয়েছিলাম, আমি এখানে আসলে কোনো অসুবিধা হবে কি-না। তখন কিছু বলোনি। আমি বিরক্তির কারণ হব, এ-ও বুঝতে দাওনি। আজ যখন বুঝিয়ে দিলে, তখন আর এখানে এক সেকেন্ডও বসতে পারব না।’

মাথায় এখনও যথেষ্ট ব্যথা। সেইসাথে ব্যথা তার শরীরেও। সবটুকু ব্যথা এবার মনের ওপর পড়েছে। একেই তো দুটো মানুষকে খুঁজে না পাওয়াতে অস্থির হয়ে আছে, তারমধ্যে কায়ছার সাহেবের এই খোঁচানো কথা ঠিক হজম হলো না মাহদিয়ার। অভিমানে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। ব্যথাতুর শরীর নিয়ে রুমে এসে নিজের কাপড়চোপড় গোছাল। হায়দার সাহেব খাওয়া শেষ করে টেলিভিশন দেখছিলেন। মাহদিয়াকে এইভাবে অসুস্থ শরীরে লাগেজসমেত রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললেন,

-‘রাত দশটা বাজে। অসুস্থ শরীরে কোথায় রওনা দিচ্ছিস এখন? ভূতে ধরল না-কি?’

ট্রলিব্যাগ টেনে হায়দার সাহেবের সামনে এগিয়ে আসলো মাহদিয়া। দাঁড়িয়ে থেকে পুরো বাড়িতে চোখ বুলাল। বলল,

-‘এখন বুঝতে পারছি, ওই দুটো কেন বাড়ি থেকে চলে গেছে! যে মানুষ মুখ দিয়ে আঘাত করতে জানে, সে ছু রি না চালিয়েও কাউকে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে পারে। আমি যে বের হচ্ছি, এটা মা’কে বলো না। শুধু একবার টোটোনকে খুঁজে পাই, আজকের দিনের এই জবাবটা আমি দিবই ছোটো মামা।’

আঁৎকে উঠলেন হায়দার সাহেব। এসব কী শুনছেন তিনি? অভিমানে মেয়েটা বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে! দুটো মানুষ সেদিন চলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। মাহদিয়াও যদি না আসে! কী হবে তখন? কী জবাব দিবেন শায়লা সুলতানার কাছে? অসম্ভব! এই অন্যায় হতে দিতে পারেন না তিনি। ঝটপট সোফা থেকে দাঁড়িয়ে বললেন,

-‘পা গ ল হয়ে গিয়েছিস তুই? কে কী বলল, না বলল, সেটা ধরে নিয়ে ঘর ছেড়ে দিবি? এসব কথাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছিস কেন তুই? পাগলামি করিস না। ঘরে যা। তুই অসুস্থ। এইমুহূর্তে তোর বিশ্রাম দরকার, দিয়া।’

মাহদিয়া ম্লানমুখে বলল,
-‘আমি একদম ঠিক আছি ছোটো মামা। জানোই তো, আমার ইগো একটু বেশি-ই। ওতে সামান্য আঘাত এসে লাগলে সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এখানে এসব কিছুই করব না। নিজের মন-মেজাজ ও মানসিকতার এতটাও অধঃপতন হয়ে যায়নি। আমি অলওয়েজ স্ট্রং এবং পজেটিভ। তা-ই আমার জীবনের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত আমি-ই নেব। অতীতে কে কী করেছে, সেটা ধরে বসে থেকে আমার বর্তমান, ভবিষ্যৎ আমি অন্ধকার করতে পারব না। বড়ো মামা সত্য কথা সহজেই মেনে নিতে পারে না, এটা তার মানসিক সমস্যা। তাকে দ্যাখলে আপাদমস্তক একজন সুস্থ মানুষ মনে হলেও তিনি আসলে অসুস্থ। এত অসুস্থ যে, এর পর্যাপ্ত ট্রিটমেন্ট তার নিজের হাতেও নেই, আমাদের হাতেও নেই। কারও শরীরে রোগ বাসা বাঁধলে ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে তাকে সুস্থ করা যায়, কিন্তু মনে রোগ বাসা বাঁধলে ডাক্তারেরাও বোধহয় সেই রোগ সারাতে হিমশিম খায়।’

নিজের ভাইকে হাড়ে হাড়ে চিনেন হায়দার সাহেব। লোকটা নিজে যা ভালো বুঝবে, তাই করবে। কারও মতামতকে কোনোদিন প্রাধান্য দেননি। আগামীতেও যে দিবেন না, সে বিষয়ে স্পষ্ট। কিন্তু অবুঝ মেয়েটাকে তিনি কী বলে আটকাবেন, সেটাও ভেবে পেলেন না। মাহদিয়া আটকাতে কথা খোঁজার চেষ্টা করলেন। বললেন,

-‘ওসব ছেড়ে দে মা। তুই এসেছিস নিজের কাজের জন্য। কাজটা শেষ হোক, তারপর ফিরে যাবি। ক’টাদিন এখানেই থাক। অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন কোথাও বের হওয়ার দরকার নেই।’

-‘আমাকে এসব বুঝাতে এসো না ছোটো মামা। যে বুঝে না তাকে বুঝাও। এই ঘরে আমি কাউকে বিরক্ত করতে আসিনি। এখানে না থাকলে আমার কাজও থেমে থাকবে না। আমি ওদের খুঁজে বের করবই। তারপর এই লোকটার মুখোমুখি হব। আমাকে যেতে দাও।’

হায়দার সাহেব প্রচণ্ড অসহায়বোধ করলেন। মেয়েটা এইভাবে চলে যাবে, এটাই মানতে পারছেন না তিনি। একা একটা মেয়ে অচেনা শহরে, চেনা দুটো মানুষের খোঁজে বেরিয়ে যাবে, আর তিনি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন, তা তো হয় না। বলেকয়েও যখন আটকানোর মতো আর কোনো উপায় দেখলেন না, তখন শেষ একবার মাহদিয়াকে ইমোশনাল কথাবার্তা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে বললেন,

-‘যাব বললেই যাওয়া হয় না-কি? এই বাড়িতে থাকার অধিকার তোর আছে। যে তোকে ‘কবুল’ বলে গ্রহণ করেছে সে যদি চলে যাওয়ার কথা বলে, তাহলে-ই কেবল যাবি। নয়তো তোকে এখানেই থাকবে হবে। একটা আধপাগল লোক অকারণ নিজের রাগ দ্যাখাল, আর তুইও সেই রাগ ধরে বসে থেকে জেদ ধরবি! এমনটা হয় না দিয়া।’

মাহদিয়াও থেমে গেল না। সোজাসাপটা কথার জবাব একটু ত্যাড়াব্যাকা করে দিতেই তেজী কণ্ঠে বলল,
-‘ওই মাথামোটা সুযোগ বুঝে পালিয়েছে। ওর জন্যই এত কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে। শুধু একবার সামনে পাই, গলায় ছু রি বসিয়ে দেব। ঘর ছেড়ে যাওয়ারই যদি ছিল, তবে ‘কবুল’ বলার আগে কেন গেল না? আমাকে ফাঁসির দড়িতে অর্ধেক ঝুলিয়ে রেখে কেন গেল? না পাচ্ছি কোনো পথ, না পাচ্ছি কোনো সমাধান। আমার যে দিন কীভাবে কাটে, সেটা শুধু আমি জানি ছোটো মামা। আর কেউ জানে না।’

-‘সব পিছনে ফেলে রাখ। তুই আমার কথা শোন। এখন রুমে যা, বিশ্রাম নে। এই শরীরে বেশিদূর যেতেও পারবি না। ফের রাস্তায় বিপদ হবে। একবার বেঁচে ফিরেছিস মানে এই না, বার বার কেউ তোকে মাঝরাস্তায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।’

হায়দার সাহেব নিজেই ট্রলিব্যাগটা হাতে নিয়ে মাহদিয়ার রুমের দিকে এগোলেন। নূরুন্ নাহারকে চোখের ইশারায় বুঝালেন, বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মেয়েটাকে যেন আটকানোর চেষ্টা করেন। তিনিও কাজ ফেলে ছুটে আসলেন মাহদিয়ার কাছে। দুটো হাতে তাকে খাবার টেবিলের সামনে এনে চেয়ারে বসালেন। কোঁকড়ানো চুলের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। বললেন,

-‘একটু ধৈর্য্য ধরো মা। তোমার উদ্দেশ্য যদি সৎ হয়, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই মুখ তুলে চাইবেন। তুমি কারো কথা কিংবা সিদ্ধান্তের পরোয়া কোরো না। মন যা চায়, যে সিদ্ধান্ত নিতে সায় দেয়, সেটাই কোরো। তার আগে সুস্থ হও। দুটো মানুষকে খুঁজতে হলে আগে নিজেকে সবদিক দিয়ে সুস্থ ও ফিট থাকতে হবে। নয়তো কঠিন মুহূর্তগুলো খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারবে না। একটু বোসো, আমি খাবার নিয়ে আসি। মুখে তুলে খাইয়ে দেব। একদম ছোটোবেলার মতো।’

মায়েদের কথা, কাজ ও তাদের ভালোবাসার ধরন বরাবরই আলাদা। ঠাণ্ডা মাথায় মায়েরা যেভাবে সন্তানদের বুঝতে পারেন, আগলে নিতে পারেন, সেভাবে বাবা আগলে রাখতে পারেন না বলেই সন্তানেরা মায়ের কাছে ভরসা খুঁজে পায়। নূরুন্ নাহার তার নিজের মা নন। কিন্তু মমতাময়ী এক নারী। যার কথা ও কাজ মাহদিয়াকে শান্ত করে দেয়। চঞ্চল, দিশেহারা, অস্থির, অশান্ত মনেও ভদ্রমহিলার কথা শোনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায়। তিনি বুঝতে পারেন বলেই, তার সাথে তর্কে যেতে পারে না মাহদিয়া। নীরবে ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। নূরুন্ নাহার দেরী করেন না আর। দ্রুতহাতে প্লেটে খাবার সাজান। ভাত-তরকারী মেখে নলা সাজিয়ে যত্ন সহকারে খাবারটা মাহদিয়ার মুখে তুলে দেন। কোনো বাদ-প্রতিবার ছাড়াই এই আদরটুকু উপভোগ করে মাহদিয়া। খাওয়ানোর ফাঁকে মুখ খুললেন নূরুন্ নাহার। বললেন,

-‘টোটোন রাগ করলে ঠিক এইভাবেই ও’কে খাইয়ে দিতাম আমি। সবার ওপর রাগ করলেও আমার ওপর রাগ দ্যাখিয়ে থাকতে পারে না ও। আমি তোমার মা নই, কিন্তু তবুও আজ তোমাকে একটা কথা বলি। জীবনে চলার পথে যা কিছুই করবে, কখনও কারও প্রতি অন্যায় কোরো না। কেউ তোমার সাথে অন্যায় করলেও মুখ বুঁজে সহ্য কোরো না। মনে রেখো, তোমার জীবনটা কেবল তোমার। সেটা কীভাবে সাজাবে, কীভাবে গঠন করবে, সেই সিদ্ধান্ত একমাত্র তুমি-ই নিবে। টোটোনকে তুমি কেন খুঁজছ জানি না। পাবে কি-না এ-ও জানি না। তবে সম্পর্ক নিয়ে যা-ই সিদ্ধান্ত নিতে চাও, সেটা ঠিক না-কি ভুল তা বিবেক দিয়ে যাচাই করে নিও। তোমার বড়ো মামার একটা ভুলে টোটোন আজ ঘরছাড়া। বেগম সাহেবা সংসার ছাড়া। আমি চাই না, আর কোনো ভুল কেউ করুক। একটা ভুলে অনেকগুলো জীবন নষ্ট হয়ে যায় মা।’

***

-‘টোটোন খাবি আয়। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব? খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে বাবা।’

বাইরে থেকে ফিটফাট হলেও ভেতর থেকে পুরোটাই অস্থির হয়ে আছে শাদাব। চোখের সামনে ভাসছে মাহদিয়ার রক্তাক্ত পুতুল পুতুল মুখখানি। এক পলকের একটুখানি দেখাতেই মনের ভেতর উথাল-পাতাল স্রোত বইছে। চেম্বার থেকে বাড়ি ফিরেছে রাত বারোটার দিকে। এখন বাজে দেড়টা। ফ্রেশ হয়ে বিছানার ওপর একধ্যানে বসে আছে সে। সায়রা করীম রাতের খাবার খেতে তাকে ডাকছেন। সে সাড়া দিচ্ছে না। তার ভাবনায় এখন অন্যকেউ। যাকে ফেইস করবে না বলে এতগুলো বছর যোগাযোগ রাখল না, বাবার ওপর জেদ থেকে একপ্রকার ইগনোর করে গেল, শিহাব সমস্ত সত্যি জেনে যাবে, এই ভয়ে বাড়ি যাওয়া তো দূর মাহদিয়া যে তার বিবাহিতা স্ত্রী সেটাই অস্বীকার করতে শুরু করল তার মন। সম্পর্ক যেমনই হোক, এত বছর পর মাহদিয়াকে চোখের সামনে এইভাবে দেখে কোনোমতেই নিজের সিদ্ধান্তের ওপর স্থির থাকতে পারছে না সে। মনে হচ্ছে, একবার মেয়েটার মুখোমুখি হওয়া উচিত। জানতে চাওয়া উচিত, সে কী চায়! কেন এসেছে? সম্পর্ক গড়তে এসেছে, না-কি ভাঙতে! এরপর যদি কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হয় তবে সে তা-ও হবে। কিন্তু সেটা শিহাবের চোখের আড়ালেই। কোনোমতেই ওর চোখের সামনে কিচ্ছুটি পড়তে দেবে না। কোনো সত্যি প্রকাশ্যে আসতে দেবে না। মনের ভেতর এমন জটিল সমস্যার হিসাব-নিকাশ নিয়ে খাবার টেবিলে আসলো সে।

রেহনুমা সবকিছু যত্ন করে রেঁধেবেড়ে রেখেছে। এখন শুধু খাওয়ার অপেক্ষা। শিহাব অনেক আগেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন শুধু মা-ছেলে একসাথে বসে খাবেন। বেসিনে হাত ধুয়ে চেয়ারে বসল শাদাব। সায়রা করীম প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বললেন,

-‘আজ ফিরলি দেরী করে। খেতে বসছিস দেরী করে। তোর হয়েছেটা কী? কখনওতো এমন অনিয়ম করিসনি!’

-‘তেমন কিছু না মা, এমনি। একটু ক্লান্ত লাগছে।’

রেহনুমা দ্রুতহাতে তরকারীর বাটি এনে টেবিলে রাখছে। সায়রা করীম খেতে বসে বাড়তি একটা প্লেট রাখলেন অন্যপাশে। রেহনুমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-‘সারাদিন ধরে ছুটছিস মা। এখন বসে খা।’

বড্ড লজ্জা পেল রেহনুমা। প্লেটে খাবার নিয়ে রান্নাঘরের মেঝেতে চলে যেতে চাইল। সায়রা করীম এবার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালেন তার দিকে। ধমকিয়ে বললেন,

-‘দুপুরেও বলেছি, একসাথে খাব। এখানেই বোস্। মেঝেতে বসার দরকার নেই।’

নিলুফা তাকে এখানে পাঠানোর আগে বার বার বলেছে, বুঝিয়েছে, সায়রা করীম মানুষটা কেমন। সবার সাথে তার ব্যবহার কেমন। আজ প্রথম দেখাতে সবটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও ধীরে ধীরে তার কাছে একটা মানুষের মনের ভেতরের সবটুকু সৌন্দর্য ফুটে উঠছে। তাতেই সে বুঝতে পারছে, নূরুন্ নাহার এই মহিলার কেন এত আপন! তিনি মানুষটাই তো এমন। মুহূর্তেই সবার সাথে মিশে যান। আপন ভাবতে শুরু করেন। বিশ্বাস করে বসেন। যার কারণে কাছের মানুষেরা তার বিশ্বাসকে তুড়ি মেরে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে সুযোগ পায় বেশি। দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কষ্ট দেয় বেশি।

খেতে বসেও স্বস্তি পাচ্ছে না শাদাব। অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে নূরুন্ নাহারের নম্বরে। সায়রা করীম ছেলের এই অস্থিরতা দেখছেন ঠিকই কিন্তু বুঝতে পারছেন না, আচমকা এত অস্থির হওয়ার পিছনের কারণ কী! কিছু জিজ্ঞেস করলেও এখন উত্তর দিবে না। এড়িয়ে যাবে। এটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন। বুঝেন। এই কারণে অহেতুক প্রশ্ন না করে চুপ করে রইলেন। অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর নূরুন্ নাহার কল রিসিভ করতেই শাদাব উৎকণ্ঠিত গলায় বলল,

-‘খালা, ভ্রমর কি ঘুমিয়েছে?’

সায়রা করীম চমকালেন ঠিকই তবে ছেলেকে সেটা বুঝতে দিলেন না মোটেও। মনোযোগ দিয়ে খেতে লাগলেন, যেন তিনি কিচ্ছুটি শোনতে পাচ্ছেন না। ওপাশ থেকে কী উত্তর এলো শোনা গেল না। তবে এপাশ থেকে শাদাব বলল,

-‘ঘুমানোর আগে ঔষধ খেয়েছিল?’

নূরুন্ নাহারের উত্তর শোনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল শাদাব। পরক্ষণেই বলল,
-‘দু’দিন একটু সাবধানে থাকতে বোলো। বাড়ি থেকে একা বের হতে দিও না।’

ফিসফিস গলায় আরও অনেক কথা ভেসে এলো। শাদাব শুনল। চোয়াল শক্ত করে বসে রইল। কথা শেষ হওয়া মাত্রই ফোন ছুঁড়ে মারল ফ্লোরে। অমনি সেটা কয়েক টুকরো হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সায়রা করীম ছেলের রাগের সাথে পরিচিত। কিন্তু এবারের রাগটা ভিন্ন। এতক্ষণে এটা ক্লিয়ার যে কোনো কারণে মাহদিয়াকে নিয়েই চিন্তিত সে। কোনো উচ্চবাচ্য না করে ঠাণ্ডা মাথায় বললেন,

-‘কার রাগ, কীসের ওপর দ্যাখাচ্ছিস?’

-‘ওই লোকটা শুধু বিবেকহীন পশুই না। আস্তো একটা জানো য়ার। বাবা বলে ডাকতেও মুখে বাঁধে। অসুস্থ একটা মেয়ের সাথে এত বাজে ব্যবহার করেন কী করে উনি? কথা বলার সময় হুঁশজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন না-কি?’

সমস্যাটা যে মাহদিয়াকে নিয়ে, এবার নিশ্চিত হলেন সায়রা করীম। শাদাবের কথার উত্তর দেয়ার আগে নিজের ফোন থেকেই নূরুন্ নাহারকে কল করলেন। রিসিভ হওয়ার পর অনেক কথা শুনলেন। দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে কথা কাটাকাটি, মাহদিয়ার রাগ। ব্যাগ গুছিয়ে একা বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। সব শোনে তিনি বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেললেন। বোবা হয়ে বসে রইলেন। পনেরো বছর আগের সেই নরকযন্ত্রণা চোখের সামনে উপলব্ধি করলেন। বুকফাটা আর্তনাদ বুকে আটকে ফোন রেখে সন্দিহান চোখে ছেলের দিকে তাকালেন। বললেন,

-‘দিয়ার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, সেটা তুই কী করে জানলি? নাহার এর আগে থেকে তোকে কল করেছিল?’

রাগে ফুঁসছে শাদাব। ইচ্ছে করছে, এক্ষুণি ওই জাহান্নাম থেকে মাহদিয়াকে টেনে নিয়ে আসুক। কিন্তু কিছু একটা তাকে আটকে দিচ্ছে। এগোতে গিয়েও পিছিয়ে আসছে। মাথার ভেতর অসংখ্য দুঃশ্চিন্তা এসে ভীড় জমিয়েছে। চোখের সামনে ভাসছে, শিহাবের শৈশব স্মৃতি। ও যে মেন্টালি সিক, এখনও অনেককিছু সহ্য করতে পারে না, অনেক সত্য গ্রহণ করা মানেই অসুস্থ মস্তিষ্কে ধাক্কা লাগা, সেটা মনে হলেই হাত-পা গুটিয়ে আসে তার। এগোনোর সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। তার সামান্য ভুল সিদ্ধান্ত যদি শিহাবের ওপর প্রভাব ফেলে, শিহাব যদি পুরোপুরি ডিপ্রেশনে চলে যায়, মানসিক যে সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছিল, সেসব যদি পুনরায় ঝেঁকে বসে, তাহলে প্রাণের ভাইকে সে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে। নরক থেকে মা ও সেদিনের সেই ছোট্ট প্রাণকে বাঁচাতে একাকী সংগ্রামী জীবন বেছে নিয়েছিল, আজ আবার সেই নরকযন্ত্রণার দিকে কী করে ভাইকে ঠেলে দিবে? অসম্ভব। কিন্তু জেনে-বুঝে মাহদিয়াকেই বা কীভাবে থামাবে? কীভাবে সব সত্য তাকে খুলে বলে, সমাধানের উপায় খুঁজে বের করবে। মাথা যেন কাজ করছে না আর। এমন সময় আবার সায়রা করীম বললেন,

-‘বললি না তো, দিয়া অসুস্থ তুই জানলি কী করে!’

কপালে হাত দিয়ে চিন্তিত স্বর নিয়েই জবাব দিল,
-‘দুর্ঘটনার সময় আমি ওখানে ছিলাম।’

সব ঘটনা খুলে বলল শাদাব। সায়রা করীম চমকে গিয়েও এবার ছেলের কাণ্ডজ্ঞান দেখে হতাশ হয়ে রেগে গেলেন। বললেন,

-‘ওই লোককে বকে লাভ কী! দোষ তো তোর মাঝেও আছে। অসুস্থ মেয়েটাকে মাঝরাস্তায় ফেলে এসে এখন রাগ দ্যাখাচ্ছিস!’

-‘রোগীরা অপেক্ষায় ছিল। দেরী হচ্ছিল আমার। ও যথেষ্ট স্ট্রং। একা সামলে নিতে পারবে ভেবে…!’

-‘কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই টোটোন। আমি তোকে খুব ভালো করেই চিনি। তুই এখনও চাস না, মাহদিয়া তোর খোঁজ জানুক। তাই এই কাজটা করেছিস।’

সায়রা করীম যথেষ্ট আহত হলেন। শাদাব মায়ের মনের অবস্থা বুঝে তড়িঘড়ি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াল। পিছন থেকে মাকে আগলে নিয়ে বলল,

-‘রাগ কোরো না মা। আমায় একটু সময় দাও। আমি শীঘ্রই ওর সাথে দ্যাখা করব। প্রমিস…!’

***

চলবে…