বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে পর্ব-১৪

0
599

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_১৪
#Esrat_Ety

“কাকে খুজছিস ছোটো? গার্লফ্রেন্ড?”

ভিড়ের মধ্যে ভাইয়ার কন্ঠস্বর শুনে ইশমামের মুখে হাসি ফোটে। সে প্রস্তুত ছিলো এই মুহূর্তের জন্য। ইশমাম জানতো ভাইয়া ছুটে চলে আসবে তাকে রিসিভ করতে। ভাইয়ার কাছে ইশমামের থেকে ইম্পরট্যান্ট কিছু নেই।
ইশমামের চোখ খুঁজতে থাকে সামিনকে। সামিন এক হাত উঁচু করে ধরে বলে,”আমি এখানে ছোটো, ডানে তাকা।”

ইশমাম ডানে তাকাতেই দেখতে পায় তার ভাইয়া তার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে। সেই মুখ,সেই হাসি,সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, সেই ফিট বডি, পাঞ্জাবি পরে হাতা গুটিয়ে রাখার স্টাইল, সেই পেশীবহুল শক্তিশালী হাত, সেই সিংহের মতো টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, চারবছর আগে ভাইয়াকে সে ঠিক যেরকম দেখে গিয়েছে,এই ভাইয়া আর সেই ভাইয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য ইশমামের চোখে ধরা পরছে না। সামিন হাত বাড়িয়ে আছে। ইশমাম প্রায় ছুটে গিয়ে ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে। তারপর বলে,”তুমি আগের মতোই আছো ভাইয়া, পারফিউম টা-ও বদলাও নি। একই ফ্রেগরেন্স।”

_হ্যা,যেটা তুই চু’রি করে মাখতি গায়ে। আমায় না বলে।
সামিন হেসে বলে কথাটি। ইশমাম হেসে ফেলে। ভাইয়ের কপালের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভেবেছি কপালের কাছে কিছু চুল উঠে গিয়ে টাক হয়ে গিয়েছো তুমি। ভিডিও কলে অন্যরকম লাগতো।‌ ত্রিশ পেরিয়েও নায়কের মতো সুদর্শন দেখতে তুমি। একটুও বদলাও নি তুমি। ছিটেফোঁটাও না। ”
_কিন্তু তুই বদলে গিয়েছিস। তোকে এখন ব্যাটা-ছেলেদের মতো লাগছে। আগের সেই বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা নেই। সুপুরুষ লাগছে।

ইশমাম হাসে। সামিন বলে,”তখন এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে খুজছিলি? প্রেমিকা?”
_তোমাকেই ভাইয়া।
কথাটি বলে ইশমাম আশেপাশে তাকায়, তারপর ম্লান হেসে বলে,”আমি জানতাম আর কেউ না আসুক,তুমি আসবে।”

_বাবা চেন্নাই গিয়েছে ছোটো। ইলহাম আর ইশিতাকে আমি নিষেধ করেছি আসতে। তাদের বাড়িতে কিছু কাজ দিয়েছি।

ইশমাম চুপ করে থাকে। সামিন ইশমামের কাঁধে হাত রেখে বলে,”চল। বাড়িতে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তোর জন্য। ইহান খুব এক্সাইটেড। ওকে তো দেড় বছরের দেখে গিয়েছিলি তুই। তাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে।”
_মেজো ভাবী কেমন আছে? ভাইয়া শুধরেছে নাকি আছে আগের মতোই?

সামিন কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ির দরজা খু’লে দেয়।

গাড়ীতে উঠে ইশমাম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”মেয়র সাহেব কোন সারপ্রাইজের কথা বলেছিলেন? কি সারপ্রাইজ?”

সামিন ড্রাইভ করতে করতে ইশমামের দিকে তাকায়। ঠান্ডা গলায় বলে,”বাড়িতে চল। দেখতে পাবি।”
_ইশুর বিয়ে ঠিক করেছো?
_আগে চল বাড়িতে।

দুজনের দৃষ্টি সামনের দিকে। সামিন কিছু সময় পরে বলে ওঠে,”কি আবদার তোর?”

ইশমামের চোখ মুখ অ’স্ব’স্তি’তে ছেয়ে যায়। সামিনের চোখে তা ধরা পরে। ঠান্ডা গলায় বলে,”আমি জানি তুই এমন কিছু চাইবি না যেটা আমি তোকে এনে দিতে পারবো না বা আমার অওকাদের বাইরে। তবুও যদি এমন কিছু হয় তাহলে জেনে রাখ তোর ভাইয়া কোন বাক্য ব্যয় না করে তোর আবদার পূরণ করবে। এতো টেনশন নেয়ার কিছু নেই।”

ইশমাম সামিনের কথায় স্বস্তি পায়না। সে তার ভাইয়াকে খুব ভালো করেই চেনে। কখনোই ভাইয়া অদ্রিতাকে মেনে নেবে না। কখনোই না। তবু এটা ইশমামের প্রথম এবং শেষ চেষ্টা।

সামিন দৃষ্টি সামনের দিকে রেখে ইশমামকে বলে,”গাজীপুরের বাগান বাড়িটা বাবাকে দিয়ে তোর নামে লিখে দিয়েছি। তোর তো নিড়িবিলি স্থান খুব পছন্দ। ওখানে গিয়ে সময় কাটাতে পারবি।”

_এসব আমার কিছু চাই না ভাইয়া। বাবার কোনো সম্পত্তির ভাগ আমি চাই না। পরে আবার কথা শোনাবে। আমি সম্পত্তির লো’ভে দেশে ফিরেছি।

_বাবার উপর তোর কেনো এতো রা’গ বলতো? বাবা তো সবকিছু থেকে বেরিয়ে এসেছে। রাগ থাকলে আমার উপর থাকার কথা, রা’জ’নী’তি আমি করছি।

ইশমাম চুপ করে থাকে। সামিন বলে,”তোর জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করে রেখেছি আমি। তোর ফুয়াদ ভাইয়ার কাজিন। ফুয়াদ আমাকে ছবি দেখিয়েছে। তোর পছন্দ হবে। মেয়েটির চৌদ্দ গুষ্টিতে কেউ রা’জ’নী’তির সাথে জড়িত নেই। একেবারে তোর মনের মতো সম্বন্ধ।”

ইশমাম ম্লান হাসে। সামিন বলে,”সিরিয়াস আমি ছোটো। একবার যখন দেশে এসেছিস আর যেতে পারবি না তুই। লেখাপড়া অনেক করেছিস।”

***
নিচতলায় শো’র’গো’লে’র আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আলো সেদিকে কান না দিয়ে জানালার বাইরে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। এখান থেকে দৃষ্টি দিলেই দূরে তাদের কলেজের পাঁচতলা ভবনের কিছুটা দেখতে পাওয়া যায়। আলোর বুকটা হুহু করে ওঠে। সামনের সপ্তাহে তাদের ইনকোর্স এক্সাম শুরু হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আলো এক্সাম দিতো। এখন তো আলোর পুরো জীবনটাই অনিশ্চিত। শুধুমাত্র একটা মানুষের জে’দ আর প্র’তি’হিং’সা’র শি’কা’র হয়েছে সে।

দরজার নব ঘোরার শব্দ হয়। আলো ঘুরে তাকায় না। পি’শা’চ’টা সকাল সকাল কোথাও বেড়িয়ে গিয়েছে। নিশ্চয়ই সে ফিরেছে।

“ভাবী।”
রিতু আলোকে ডাকে। আলো কপাল কুঁ’চ’কে তাকায়। রিতুর হাতে কিছু বক্স। আলোর দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,”আপনার জিনিসপত্র সব ভাইয়ার আলমারির পাশে যে আলমারি টা আছে সেটাতে গুছিয়ে রেখেছি ভাবী।”

আলো কিছু না বলে আবারও জানালার বাইরে দৃষ্টি দেয়। রিতু হাতের বক্স গুলো বিছানার উপরে রাখতে রাখতে বলে,”আমাদের শাশুড়ি মায়ের গয়না ভাবী। মা সবকিছু তিন ছেলের বৌয়ের জন্য ভাগ করে দিয়ে গিয়েছিলো। এগুলো আপনার ভাগের গয়না।”

আলোর রা’গ উঠে যায়। রিতু নামের ভী’তু মেয়েটিকে দুটো মন্দ কথা শুনিয়ে কোনো লাভ হবে না আদৌও,তাই সে চুপ থাকে। রিতু একটা বক্স থেকে দুটো সোনার বালা বের করে আলোর কাছে এগিয়ে যায়। অনেকটা সাহস নিয়ে আলোর হাত ধরে বালা দুটো পরিয়ে দিতে দিতে বলে,”এই দু’টো কিন্তু আমার শাশুড়ি মায়ের ব্যাবহার করা। এই দু’টোর কোনো ভাগ হয়নি। তিনি বলে গিয়েছেন এই দু’টো তার বড় ছেলের বৌ পাবে। তিনি পেয়েছিলেন আমাদের দাদী শাশুড়ির থেকে। দাদী শাশুড়ি পেয়েছিলো তার শাশুড়ি মায়ের থেকে।”

আলো হাত সরিয়ে নেয় না। সামিনের পো’ষ্য মানুষগুলোকে কিছু বলতে ইচ্ছে হয়না আর তার। সে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার হাতের দিকে। একদিকে সামিন ইয়াসার তার পায়ে শি’ক’ল পরিয়ে দিয়েছে আর আজ হাতে এই চুড়ি। একটু একটু করে আলোর অ’স্তি’ত্ব মিটে যাচ্ছে।

রিতু আলোর আলমারি খুলে একটা গোলাপী রঙের কাঞ্জিভরম শাড়ি বের করে বিছানার উপর রেখে বলে,”গোলাপী রঙে বেশ মানায় আপনাকে ভাবী। এটা পরে নিন। আজ আমাদের ছোটো দেবর আসার উপলক্ষে বাড়িতে নতুন নতুন মেহমান আসবে কিছু। ভাইয়া বলে গিয়েছে আপনাকে রেডি করিয়ে রাখতে।”

***
“আজ সকাল সকাল এলেন যে।”
ইশিতার কথায় শান্ত একবার ইশিতার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ইশিতা ভালো করে লক্ষ্য করে লোকটাকে। ঘন কালো ঝাঁকড়া চুলের সুদর্শন এক যুবক। মোটা কালো ফ্রেমের চশমার আড়ালে দুটো সহজ সরল চোখ, বেশিরভাগ সময় যার দৃষ্টি থাকে মেঝের দিকে। যেনো এই বাড়িতে ঢুকে সে অন্যকিছুর দিকে তাকালে সামিন ইয়াসার মির্জা তার প্রা’ন নি’য়ে নেবে। ইশিতা মৃদু স্বরে বলে,”মেঝেতে কিছু খুঁজছেন ? কিছু কি পরে গিয়েছে আপনার?”

শান্ত খুবই নিচু স্বরে বলে,”জ্বি না।”
_তাহলে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো? আপনাকে দেখলে মনে হয় আপনার কোনো অমূল্য সম্পদ মেঝেতে পরে গিয়েছে আর আপনি সেটা খু’জে বেড়াচ্ছেন মেঝেতে।”

শান্ত কিছু বলে না। মনে মনে সে প্রচন্ড বি’র’ক্ত হয়। এই বাড়িতে টিউশনি নেওয়াটা তার ভুল হয়ে গিয়েছে। এই বাড়ির কোনো লোককেই তার সুবিধার মনে হয়না। সবাই গু’ন্ডা প্রকৃতির। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই মেয়েটিও তাই। কথাবার্তায় কোনো আন্তরিকতা নেই। হয়তো সে গরীব শ্রেনীর কেউ তাই তাকে এমন ব্যবহার ফেইস করতে হয়।
ইশিতা শান্তকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বলে,”আপনাকে পরপর কয়েকটি প্রশ্ন করলাম,আপনি একটারও উত্তর দিলেন না। আপনি ইহানকে পড়ান কিভাবে? যেখানে নিজের মুখ থেকেই কথা বের হয় না।”
শান্ত একবার ইশিতার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিয়ে বলে,”সকাল সকাল এসেছি কারন রিতু ভাবী ডেকেছে। ইহানের ছোটো চাচা আসবে তাই সকাল সকাল পড়িয়ে যেতে হবে। আর আমি মেঝেতে কিছু খুঁজছিলাম না। আমার কোনো অমূল্য সম্পদ নেই যেটা মেঝেতে পরে গেলে আমি খুজবো। আমি এভাবেই হাঁটি। ”
কথাটি বলে শান্ত সদর দরজার দিকে এগিয়ে যায়। ইশিতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শান্তর দিকে। যতটা বো’কা আর শান্ত ভেবেছিলো,এই ছেলেটা তা নয়। শান্ত কিছুদূর গিয়ে পেছনে ফিরে ইশিতার দিকে একবার তাকায়। ইশিতার দৃষ্টি তার চোখের দিকে। ইশিতা তখনো বুঝতে পারেনি সে খুব শিগগিরই ঐ মোটা কালো ফ্রেমের চশমার নিচের শান্ত দুটি চোখের মায়ায় আটকা পরতে চলেছে।

***
ভাইকে দেখে বুকে জ’রি’য়ে ধরে ইলহাম কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। যত মান অভিমান হোক না কেনো র’ক্তে’র টান উপেক্ষা করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব।
ইশিতা পাশ থেকে বলে ওঠে,”কত জন্ম অপেক্ষা করাবি আমাকে ইশমাম,ভাইয়াকে ছে’ড়ে আমাকে দেখ। আমার গিফট দে!”

ইশমাম ইলহামকে ছেড়ে ইশিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”আজ বুঝতে পারলাম ইশু, তোর বিয়ে কেনো হচ্ছে না। তোর যা চেহারা হয়েছে তাতে পাত্র জুটবে বলে মনে হয়না।”

ইশিতা ইশমামের বুকে আদরের সহিত কি/ল ঘু/ষি মেরে বলে,”আমার ভাইদের থেকেও দেখতে হ্যান্ডসাম, রাজপুত্রের মতো বর হবে আমার দেখিস। তোরা হা হয়ে যাবি।”

ইহান গুটি গুটি পায়ে লিভিং রুমে গিয়ে দাঁড়ায়। রিতু তাকে নিয়ে এসেছে। ইলহাম রিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আরেকজন “হোসনে আরা শান্তি” দাঁড়িয়ে আছে ভাবী। মাথায় এতো বড় ঘোমটা।”
রিতু মুচকি হাসে। ইশমাম ইহানের দিকে তাকিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে,”আমাকে চিনেছো তুমি? আমি ছোটো বাবা তোমার।”
ইহান অ’বা’ক চোখে তাকিয়ে থাকে তার ছোটো বাবার দিকে। ইশমাম এসে ওকে কোলে তুলে চু’মু খায়।

নিচে হাসাহাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে। গায়ে ওই লোকটার দেয়া শাড়ি,গয়না। নিজের দিকে তাকাতেই আলোর দুঃখ হচ্ছে খুব। নিচে ঐ লোকটা আনন্দ করছে। আজ তার ভাই এসেছে। তার পরিবার সম্পূর্ণ হয়েছে। লোকটাকে দেখে যতদূর মনে হয়েছে লোকটা তার পরিবারের লোকদের প্রচন্ড ভালোবাসে। অথচ এই লোকটা আলোকে তার পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে নিজের কা’রা’গা’রে ব’ন্দি করে রেখেছে।

ইশমাম এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,”ভাইয়া বলেছে সারপ্রাইজ আছে! কি সারপ্রাইজ? এখানে তো কোনো সারপ্রাইজ নেই।”

সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। সামিন ইশমামকে সোফায় বসার নির্দেশ দিয়ে নিজেও বসে। ইহান তার ছোটো বাবার কাছ থেকে উঠে গিয়ে বড় বাবার কোলে বসে পরে। সামিন ইশমামের দিকে দৃষ্টি দিয়ে ঠা’ন্ডা গলায় বলে,”আমি বিয়ে করেছি ছোটো।”

ইশমাম প্রথমে বুঝে উঠতে পারেনি ভাইয়ার কথা। কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে সে যেই না সবটা বুঝেছে অমনি চাপা স্বরে চেঁ’চি’য়ে বলে,”রিয়েলি! ভাইয়া! মজা করছো না তো!”

সামিন মৃদু হেসে মাথা নাড়ায়। রিতু এবং ইশিতা একে অপরের দিকে শুকনো মুখে তাকায়। ইশমাম সামিনকে বলে,”এতো বড় একটা কথা তুমি এখন বলছো ভাইয়া? এটা কোনো কথা? আমি খুব করে চাইতাম তুমি বিয়ে করো। আর তুমি আমাকে না জানিয়েই…….”

ইলহাম ইশমামকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”তোকে সারপ্রাইজ দিয়েছে। এতো ক্ষেপে যাচ্ছিস কেনো তুই?”

ইশমাম অভিযোগের সুরে বলে,”ক্ষেপে যাচ্ছি না। আমি সবার জন্য কত গিফট নিয়ে এলাম,সেখানে নতুন ভাবীকে খালি হাতে দেখবো। কি একটা লজ্জায় ফেলে দিলে তুমি ভাইয়া। আচ্ছা নতুন ভাবী দেখতে কেমন?”

ফুলির মা পাশ থেকে বলে ওঠে,”এক্কেবারে হিন্দি সিনেমার নায়িকা দিব্যিয়া ভারতীর মতো ছোটো ভাইজান। কিন্তু গায়ের রং টা একটু চাপা এবং একটু খা’টো। তয় বড় ভাইজানের পাশে খুব মানাইছে। মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ!”

ইশমাম হেসে ফেলে,”তোমার বর্ণনা শুনে আমার তো আর তর সইছে না ফুলির মা। আমাদের দিব্যিয়া ভারতী ভাবী কোথায়? ডাকো তাকে? নাকি ভাইয়ার ঘরে গিয়ে দেখবো?”

_তুই বস। রিতু ডেকে আনছে।
সামিন ইশমামকে কথাটি বলে রিতুর দিকে তাকায়। রিতু মাথা না’ড়ি’য়ে সিঁড়ির কাছে যায়।

ইশমাম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”কবে করলে বিয়ে?”
_চার-পাচ দিন আগে।
_নির্বাচনী ঝা’মে’লা’র মধ্যে? কি এমন তাড়া ছিলো? প্রেমের বিয়ে নাকি ভাইয়া? কখনো তো বলো নি আমাকে! বাবা জানে?

“ভাবী।”
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের থেকে চোখ সরিয়ে রিতুর দিকে তাকায় । দরজার বাইরে থেকে উঁ’কি দিয়ে ডাকছে আলোকে। নিস্তেজ কন্ঠে আলো বলে,”আবার কি? শাড়ি গয়না তো পরেছি।”

রিতু ভেতরে ঢোকে। আলোকে একবার তাকিয়ে দেখে। কি সুন্দর মুখশ্রী,তার ভাসুর এমনি এমনি দি’ও’য়া’না হয়নি। সোনার গয়না গুলো পরে একেবারে নতুন বৌয়ের মতো লাগছে আলোকে। চোখ ফেরানো দায়। আলো তার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রিতু বলে,”নিচে চলুন ভাবী। ভাইয়া ডাকছে!”
_আমি কেনো নিচে যাবো? তার দরকার থাকলে তাকে এখানে আসতে বলো।

_আপনাকে নিচে নিয়ে যেতে বলছে। তার ছোটো ভাই এসেছে। সম্পর্কে আপনার দেবর।
_তাতে আমার কি? যাকে স্বামী বলে স্বী’কা’র করি না তার ছোটভাইকে দেবর বলছো কেনো?

কঠিন গলায় বলে আলো। রিতু বলে,”চলুন ভাবী। জে’দ করবেন না। দুমিনিট থেকেই চলে আসবেন।”

আলো একটা দী’র্ঘ’শ্বা’স ছেড়ে রিতুর পিছু পিছু সিঁড়ির দিকে যায়। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে হঠাৎ করে সে থ’ম’কে দাঁড়ায়। নিচে সবাই কথা বলছে। ইয়াসার মির্জা, ইলহাম মির্জা ছাড়াও অন্য একটি পুরুষ কন্ঠ আলোর কানে যেতে সে চ’ম’কে ওঠে। সে কি সত্যি শুনছে নাকি তার ভ্রম! রিতু আলোকে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে বলে,”আসুন ভাবী।”

আলো কাঁ’প’ছে। তার মস্তিষ্ক কাজ করছে না। অত্যন্ত পরিচিত ওই পুরুষ কন্ঠটি তার মস্তিষ্কে তীরের ফলার মতো আ’ঘা’ত করছে। সে দ্রুত পায়ে হেঁটে সিঁড়ি থেকে নামে। লিভিং রুমে সবাই বসে আছে। আলো অচেনা পুরুষটির চেহারা দেখতে পায়না,সে ওদিকে ফিরে বসে তার ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। ক্রমে ক্রমে আলোর অস্বস্তি বেড়ে চলেছে। সামিন ইয়াসার আলোকে দেখতে পায়, হুট করে তার চোখ চলে যায় আলোর হাতের দিকে। তার মায়ের চুড়িতে এই মেয়েটার হাত দুটো সজ্জিত হয়েছে। খুবই ভালো লাগছে দেখতে। আলো ধীরপায়ে হেটে এগিয়ে যেতে থাকে। ফুলির মা চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”ছোটো ভাইজান,বড় ভাবী আইসা পরছে।”

ইশমাম উঠে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। আলো আরো দুই কদম এগিয়ে যেতেই দাঁড়িয়ে পরে। ইশমাম আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসিতে প্রশস্ত হয়ে থাকা ঠোঁট জোড়া হঠাৎ করে অন্য রূপ ধারণ করেছে, কাঁপছে কিছু টা। আলো ইশমামের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সেই চোখ,সেই নাক,সেই ভ্রু-যুগল,সেই থুতনির নিচের টোল। আলো ভুল দেখছে না। কিছুই ভুল দেখছে না সে। তার মস্তিষ্কে অনবরত কেউ হাতুড়ি পে’টা’চ্ছে। কেউ দা’মা’মা বাজিয়ে যাচ্ছে, অদৃশ্য কেউ চিৎকার দিয়ে বলছে,”তুই ঠ’কে’ছি’স আলো,তোকে ঠ’কা’নো হয়েছিলো।”

ইশমাম বুঝতে পারছে না সে কি করবে। তার পায়ের দিক টা হঠাৎ করে অ’সা’ড় হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে পুরো শরীরে তা ছড়িয়ে পরছে। সামিন ইশমামের পাশ থেকে বলে ওঠে,”তোর বড় ভাবী। অদ্রিতা আলো। চিনিস ওকে তুই।”
ইশমাম বোকার মতো তার ভাইয়ের দিকে তাকায়। তাকায় আলোর দিকে, ইশিতার দিকে, ইলহামের দিকে, রিতুর দিকে, ফুলির মায়ের দিকে,ইহানের দিকে। সে ফ্যালফ্যাল করে দেখছে প্রত্যেকের মুখ। এটা কি কোনো ষ’ড়’য’ন্ত্র! তার সাথে সবাই মজা করছে নাকি!

আলো খেয়াল করলো সে হঠাৎ করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দুই বার দেখছে। মনে হচ্ছে দুজন দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। দুজন ইশমাম,দুজন প্র’তা’র’ক, দুজন ধা’ন্দা’বা’জ, দুজন মিথ্যুক। মনে মনে বলতে থাকে,”তুই শক্ত থাক আলো। দোহাই তোর। তুই দয়া করে শক্ত থাক।”

আলোর ভেতরে যে আলো আছে‌। সে আলোর অনুরোধ রাখে না। তীব্র অ’ভি’মা’ন, ঘৃ’ণা, আ’ঘা’তে জর্জরিত হয়ে লুটিয়ে পরে মেঝেতে।

রিতু চেঁচিয়ে ওঠে,”বড় ভাবী!”
ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকে অ’বা’ক হয়ে মেঝেতে পরে থাকা অ’চে’ত’ন আলোকে দেখতে থাকে। কয়েক মুহূর্ত কেটে যেতেই সামিন ছুটে যায় আলোর কাছে। ঝুঁকে বসে পরে মেঝেতে। আলোর গালে আলতো করে চা’প’ড় মে’রে গম্ভীর কন্ঠে ডাকতে থাকে,”আলো…..আলো!”

ইশমাম সামিন আর আলোকে দেখতে থাকে। সে দাঁড়িয়ে আছে একটা জড়বস্তুর মতো,একটা পাথরের মতো।

সামিন এদিক ওদিক তাকায়। ফুলির মা এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে সামিনের হাতে দেয়। সামিন আলোর মুখে ছেটাতে থাকে পানি। কোনো কাজ হয় না তাতে। সামিন পাঞ্জাবির হাতা ভালো করে গুটিয়ে নিয়ে আলোকে পাঁ’জা’কো’লা করে তুলে নেয়। ইশমাম একদৃষ্টে সেই দৃশ্য দেখতে থাকে।
আলোকে উঠিয়ে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে থাকে। রিতু,ইশিতা,ফুলির মা চিন্তিত ভঙ্গিতে সামিনের পিছু পিছু যায়।

লিভিং রুমে দাড়িয়ে থাকে ইশমাম এবং ইলহাম। ইলহাম ইশমামের কাঁধে হাত রেখে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,”আমাদের বড় ভাবীর যখন তখন সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার রো’গ আছে। ঘা’ব’ড়ে যাস না। তুই ঘরে গিয়ে রেস্ট নে। ভাত খাবি তো? সিতারাকে বলছি তোর খাবার টেবিলে দিতে। তোর পছন্দের সব রান্না করে রেখেছে ইশিতা আর ইহানের মা।”

ইশমাম ইলহামের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।

***
বিছানায় আলোকে শুইয়ে দিয়ে সামিন আলোর গালে হাত রেখে আলোকে ডাকতে থাকে।

রিতু আলোর পায়ের কাছে বসে চিন্তিত ভঙ্গিতে ইয়াসারকে বলে,”ভাইয়া ডাক্তার ডাকেন, হুট করে এভাবে অ’জ্ঞা’ন কেনো হয়ে যাবে।”

সামিন রিতুর দিকে তাকিয়ে একবার আলোর দিকে তাকায়। হঠাৎ করে তার ফোন বেজে ওঠে। সবুজের নাম্বার,তার মানে হসপিটাল থেকে এসেছে। সামিন ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। ইশিতা এসে আলোর মাথার কাছে বসে। রিতু ইশিতার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”কি হলো বলো তো আপা, এমন করে অ’জ্ঞা’ন হয়ে যাবে কেনো!”

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফুলির মা নিচু স্বরে বলে ওঠে,”চিন্তা কইরেন না ভাবী। অ’জ্ঞা’ন হয়নাই। বড় ভাবী নতুন নতুন জ’ন্ম’নি’রো’ধ’ক বড়ি খায় তাই হয়তো এমনি মাথা ঘুরে পরে গেছে। বিয়ার পরপর আমিও ওই সব খাইতে পারতাম না। শুধু ব’মি হইতো আর মাথা ঘুরতো সারাদিন। এখন গা সওয়া হয়ে গেছে।”

রিতু কপাল কুঁ’চ’কে ফুলির মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”চুপ করবে তুমি!”

সামিন ফোনে কথা বলে ঘরে এসে ইশিতার দিকে তাকায়। তারপর বলে,”ডাক্তার পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমাকে একটু বের হতে হবে। জামিলের অবস্থা ভালো না। একটু দেখিস।”

ইশিতা কোনো জবাব দেয়না। আলোর জন্য ভাইয়ার মধ্যে উ’ৎ’ক’ণ্ঠা দেখে সে কিছুটা অবাক হয়।

সামিন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখে ইশমাম এখনো লিভিং রুমে দাড়িয়ে আছে। সে চেঁচিয়ে বলে,”তুই কি নতুন এ বাড়িতে? এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস। উত্তর পাশের ঘরটা সাজিয়ে রেখেছি। ঘরে গিয়ে রেস্ট নে। আমি এক ঘন্টার জন্য বাইরে যাচ্ছি। এসে কথা হবে। ”
সামিন তাড়াহুড়ো করে চলে যাওয়ার সময় দেখলো না সে তার আদরের ছোটো ভাইটাকে কিভাবে,কতটা জ’ঘ’ন্য ভাবে ভে’ঙে’চু’রে দিয়ে গিয়েছে। খেয়ালই করলো না সামিন ইয়াসার মির্জা।

***
হসপিটালে পৌঁছে সামিন গাড়ি থেকে নেমে দেখে ফুয়াদ দাঁড়িয়ে। সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”ইশমাম এসেছে?”

_হু। কিছুক্ষণ আগে।
_না আসলেও পারতি,আমরা দেখছি। অবস্থা স্টেবল এখন কিছুটা।

সামিন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাতের ফোনের দিকে তাকায়। তারপর একজন ডাক্তারকে ফোন করে বলে,”হ্যা আপনি পৌঁছেছেন ডক্টর? হ্যা দেখুন। আচ্ছা রাখছি।”

ফুয়াদ অবাক হয়ে বলে,”ডাক্তার কার জন্য? কে অ’সু’স্থ?”

_আলো।
_কি হয়েছে?
_হঠাৎ করে সে’ন্স’লে’স হয়ে গিয়েছে।

ফুয়াদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,”কি যে একটা অবস্থা! তুই কি করতে চাইছিস কিছু বুঝতে পারছি না।”
_কিছু বুঝতে হবে না, জামিলের কাছে চল।

***
ডাক্তার পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই আলোর জ্ঞা’ন ফিরেছে। চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখছে সবাইকে। রিতু নিচু স্বরে ডাকতে থাকে,”ও ভাবী! শুনতে পাচ্ছেন! আপনার কি কোথাও ক’ষ্ট হচ্ছে!”

আলো একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি ছেড়ে দেয়। ইশিতা তা খেয়াল করে বলে,”কি সমস্যা! বলো আমাদের।”

আলো উঠে বসতে চায়। ইশিতা আলোকে ধরে বসিয়ে দেয়। সিতারা এসে জানায় নিচে ডাক্তার এসেছে,তাকে উপরে পাঠাবে কিনা জানতে চায়। ইশিতা বলে,”পাঠিয়ে দাও।”

_নাহ।
তেজী কন্ঠে বলে ওঠে আলো। সবাই তার মুখের দিকে তাকায়। আলো আর্তনাদ করে ওঠে,”কেউ আসবে না। আমি একা থাকতে চাই। আপনারা বেড়িয়ে যান এই ঘর থেকে!”

ইশিতা আলোকে ধরে বলে,”তুমি অসুস্থ আলো,ডাক্তার এসে দেখে যাক একবার।”

_বললাম না কেউ আসবে না? বললাম না আপনাদের এই ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে ?

আলোর কন্ঠে কিছু একটা ছিলো। সবাই চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
***

ডাক্তারের কথা শুনতে শুনতে সামিন বেশ কয়েকবার ফোনের দিকে তাকায়। ফুয়াদ তা খেয়াল করে। ডাক্তার চলে যেতে ফুয়াদ সামিনকে বলে,
“একটা লোক, যে সবসময় তার ছেলে পুলেদের বলতো জরুরি কাজের সময় বৌয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে, জরুরি মিটিং-এ বৌয়ের ফোন রিসিভ না করতে, সেই লোক বারবার বৌয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে ফোন চেক করছে কেনো? অদ্ভুত!”

সামিন কপাল কুঁচকে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে,”ফাজলামি করিস না। বিয়ে করেছি, একটা রেসপনসিবিলিটি আছে। ওদের মতো লু’তু’পু’তু কথা বলার জন্য বসে নেই আমি।”

_তা এতোই যখন রেসপনসিবিলিটি তাহলে নিজেই ইশিতাকে ফোন করে জেনে নে জ্ঞান ফিরেছে কি না। ওর ফোনের আশায় বসে আছিস কেনো? নাকি যেচে ফোন দিলে তোর পু’রু’ষ’ত্ব অপমানিত হবে?

সামিন ফুয়াদের দিকে চোখ রা’ঙি’য়ে একবার তাকিয়ে হাঁটতে থাকে। তারপর বলে ওঠে,”তার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে যাচ্ছি। গেলেই দেখতে পাবো।”

***
ইশমামের দরজার সামনে এসে রিতু ইশমামকে ডেকে বলে,”খাবে না ভাইয়া?”
বেশ কিছুক্ষণ পরে ইশমাম কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দেয়,”আমি একটু ঠিক হয়ে নেই ভাবী। জার্নিতে মাথাটা খুব ধরেছে।”

হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে আলো। কিছুক্ষণ যেতেই ফুঁ’পি’য়ে ওঠে। শরীরটা একটু একটু করে কাঁ’প’ছে। জানালার থাই গ্লাস খোলা, বাইরে সম্ভবত ঝড়ো হাওয়া বইছে। বৃষ্টি নামবে হয়তো।জানালা থেকে ঝড়ো হাওয়া ঘরে প্রবেশ করে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পরছে। বাইরে যে ঝড় বইছে তার থেকেও হাজার গুণ বেশি ঝড় আলোর মনে বয়ে চলেছে। আলোর আলগা হয়ে যাওয়া খোপা খুলে গিয়েছে। চুল গুলো বেপরোয়া উড়ছে। দরজার নব ঘোরার শব্দ হতেই আলো মাথা তুলে চোখের পানি মুছে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে। ভেবেছিল ইয়াসার এসেছে। ঐ লোকটাকে সে তার চোখের পানি দেখাতে চায় না। আলোর ধারণাকে মিথ্যে করে দিয়ে ঘরে ঢোকে ইশমাম। আলো থমথমে মুখ নিয়ে ইশমামের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইশমাম ধীর পায়ে আলোর দিকে এগিয়ে আসে।
ব্যাকুল কন্ঠে বলে,”অদ্রিতা।”
আলো বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে তেজী কন্ঠে বলে ওঠে,”ওখানেই দাঁড়িয়ে যাও।”

ইশমাম দাঁড়িয়ে পরে। আলো ইশমামের চোখের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে ধরা গলায় বলে ওঠে,”প্র’তা’র’ক, ঠ’ক, মি’থ্যু’ক, ধা’ন্দা’বা’জ।”

ইশমাম আকুতির সুরে বলে,”অদ্রিতা আই ক্যান এক্সপ্লেইন।”

_এখান থেকে বেরিয়ে যাও তুমি, বেরিয়ে যাও প্র’তা’র’ক।

হিংস্র বাঘিনীর মতো গ’র্জে ওঠে আলো।

চলমান……