বাড়িয়ে দাও তোমার হাত পর্ব-০৮

0
177

#বাড়িয়ে_দাও_তোমার_হাত
#অষ্টম_পর্ব
#হুমাইরা_হাসান
_____________________

– ছ্যাঁচড়ার মতো আমার পিছু পিছু আসছেন কেনো? লজ্জা করছে না!

মিহির ডায়ে বাঁয়ে ঘাড় নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করলো। মাসনুন হাতের ব্যাগটা ধপ করে মাটিতে ফেলে এগিয়ে এসে বলল,

– এটা কিন্তু আমার এলাকা। বেশি ছক্কর মক্কর করলে খবর করে রেখে দেবো বলে দিচ্ছি। এখনো সময় আছে ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে যান আমায় একা থাকতে দিন।

মিহির খুব আলগোছে সম্মতি জানিয়ে দিলো। মাসনুন ব্যাগটা আবারও হাতে তুলে হাঁটতে শুরু করলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের প্রখরতাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বাস থেকে নেমে সরু গলি ধরে এগোলে পায়ে হেঁটে দশ মিনিটের পথ মাসনুনের বাড়ি। মাসনুন নিঃশব্দে বাকিটা পথ এগিয়ে যেতে থাকলো। খানিকটা এগোনোর পর হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ালো । মিহির কী সত্যিই চলে গেলো? নিজ ভাবনাতে সায় দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ঠিকই কিন্তু পথটা শূন্য দেখে ললাটে ভাঁজ পড়লো। লোকটা সত্যি সত্যি চলে গেলো? মনের মাঝে দুঃশ্চিতা গেঁথে রইলেও খোঁজ করার প্রয়োজন বোধ করলোনা। আরও কয়েক পা ফেলে ধুপধাপ করে বাড়িতে ঢুকলো। দরজাটা হাট করে খোলা। বাইরে থেকেই মাসনুন গলা ছেড়ে ডাকলো,

– আম্মু? ও আম্মু?

হয়তো মেয়ের ডাকের অপেক্ষাতেই ছিলেন মাসুমা বেগম। হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। মেয়েকে দেখবার জন্যে তর সইলো না আর। উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে এলেন হাসিমাখা গোলগাল মুখে। কিন্তু যতটা উৎকণ্ঠিত হয়ে ছুটে এসেছিলেন মাসনুনকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ততটাই দমে গেলেন। পানসে মুখে বললেন,

– তুই একাই এসেছিস মাসনুন? জামাই আসেনি?

মাসনুন নিজেও অবাক হয়েছে মিহিরের ফিরে যাওয়ায়। কিন্তু মায়ের সামনে সেটা সংগোপন করে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

– এতগুলো দিন পরে ফিরলাম অথচ তোমার আমায় রেখে পরের ছেলে নিয়ে চিন্তা?

– এসব কেমন কথা মাসনুন! পরের ছেলে আবার কী?

– হ্যাঁ তো তোমার পেটের ছেলেও তো নয়!

একথা বলে আবারও মাসনুন বিরক্তি দেখিয়ে বলল,

– ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে। এসব কথা ছাড়ো তো, ঘরে চলো। সিয়া কোথায়?

মাসুমা বেগম নিরস মুখে ব্যাগটা হাতে তুলে দু’কদম এগোতে এগোতে বললেন,

– জামাইয়ের কী শরীর খারাপ? ওকে রেখে এলি কেনো তুই?

– আশ্চর্য! আমি যে এসেছি তার কোনো মূল্য নেই? তোমরা দেখছি..

– আসসালামু আলাইকুম।

নিজের কথার মাঝেইপ চেনা কণ্ঠের পুরুষালী স্বরের সালামে থমকে গেলো মাসনুন। কৌতূহলী চোখ দু’টো বাড়ির গেইটের দিকে ঘোরালে হাস্যজ্বল চেহারায় এগিয়ে এলো মিহির। মিহিরকে দেখে মাসুমা বেগমের মুখটা উজ্জীবিত হয়ে উঠলো হাসিতে। এগিয়ে এসে সালামের উত্তর দিয়ে বলল,

– তুমি দেরীতে এলে যে বাবা? আমি তো মাসনুনকে একা দেখে ভাবছি অসুস্থ হলে নাকি।

– না না মা। আপনাদের সকলের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।

– ভালো থাকলেই ভালো। খুব খুশি হয়েছি বাবা তুমি এসেছো বলে।

এটুকু বলে স্বল্প বিরতিতে পূনরায় ব্যস্ত স্বরে মাসুমা বেগম বললেন,

– ভেতরে এসো বাবা। অনেকটা পথ এসেছো।

মিহির ঘাড় নাড়িয়ে খুব সহবত, সৌজন্য সুলভ হাসলো। বাড়িতে প্রথম জামাইয়ের আগমনে বেশ অস্থির হয়ে পড়লেন মাসুমা বেগম আপ্যায়নের ব্যবস্থা নিয়ে। তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে মাসনুনকে বলে গেলো,

– জামাইকে নিয়ে তোর ঘরটায় বোস। আমি শরবত করে আনি।

মায়ের কথা কানে গেলেও মাসনুন সেসবে মনোযোগ দিলো না। মিহিরের হাতভর্তি ফলমূল আর মিষ্টির প্যাকেট। বাঁ হাতটায় এতগুলো প্যাকেট ধরে রাখতে নিশ্চিয় কষ্ট হচ্ছে? মাসনুন দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো। মিহিরের হাত থেকে প্যাকেট গুলো নিজ হাতে নিয়ে কর্কশ স্বরে বলল,

– কোথায় গিয়েছিলেন? নিজেকে কী মনে করেন হ্যাঁ? এভাবে না বলে কয়ে চলে গিয়ে কী বোঝাতে চান!

– তুমিই তো বললে আমায় তোমার সাথে না আসতে। আর আমি চলে যাইনি তো! প্রথম বার শ্বশুর বাড়িতে কী খালি হাতে আসা যায়? তাই তো এই..

– তাই একা একাই পাকনামি করতে চলে গেলেন? কে বলেছিলো ওস্তাদিটা করতে? এক হাতে এতগুলো ব্যাগ টানা যায়! আহাম্মক।

এতগুলো ধমক দিয়েও ক্ষান্ত হলো না। গজরাতে গজরাতে ঘরের ভেতর ঢুকলে মিহির ও মুচকি হেসে ওকে অনুসরণ করলো। মাসনুনের সাথে ওর ঘরে এসে প্রথমেই ফ্রেশ হয়ে নিলো। হাত পা মুখে পানি দিলেও শরীরটা কেমন ঘর্মাক্ত হয়ে আছে। গোসল টা করে নিলেই বোধহয় ভালো হত৷ কিন্তু ওর কাপড় টাও তো..

– আর কতক্ষণ লাগবে আপনার? শিগগির বের হোন।

মাসনুনের তাড়া দেওয়াতে ওভাবেই বেড়িয়ে এলো মিহির। বাথরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তোয়ালে হাতে। মিহিরকে দেখে তোয়ালে টা এগিয়ে দিয়ে বলল,

– ধরুন।

মিহির হাত মুখ মুছে খাটের ওপর বসলো। মাসনুন লেবুর শরবতটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

– এটা খান। আব্বু বাজার থেকে ফিরেছে আপনার সাথে কথা বলবে বলে খোঁজ করলো আর আপনি ঢুকে বসে আছেন বাথরুমে।

মিহির শুকনো গলাটা এক নিঃশ্বাসে শরবত গলাধঃকরণ করে ভেজালো। দম ছেড়ে বলল,

– রাস্তাঘাটের ধূলোময়লায় শরীরটা কেমন ম্যাচম্যাচ করছে। গোসল করতে পারলে ভালো হতো।

মাসনুন তোয়ালে টা হাত থেকে নামিয়ে রাখলো। মুখাবয়ব টা ভীষণ রকম কঠোর করে বলল,

– সুযোগ পেয়েই তো পেছন পেছন চলে এলেন। নিজের জামা কাপড় টা যে প্যাকিং করেননি সে খেয়াল তো নেই। আশ্চর্য একটা মানুষ।

বলে দরজার দিকে অগ্রসর হলে মিহির ডেকে বলল,

– কোথায় যাচ্ছো?

– কোথায় আবার। গোসল করে জামা কাপড় ছাড়াই তো আর ঘুরে বেড়াতে পারবেন না! আব্বুর লুঙ্গি এনে দিচ্ছি ওটাই বরং পরুন।

বলে পূনরায় পা বাড়াতে নিলে মিহির বলল,

– সেসবের দরকার নেই। ব্যাগটা খোলো।

মাসনুন ভ্রু কুঁচকে বলল,

– কিন্তু ব্যাগে তো শুধু আমার শাড়ি আর সালোয়ার।

– তুমি খোলো আগে।

মিহিরের কথামতো মাসনুন নিজের জামা কাপড়ের ব্যাগটা খুললো। নিজের পোশাকের ওপর প্যান্ট আর শার্টের স্তূপ ঠেসেঠুসে রাখা দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেলো। উত্তেজিত স্বরে বলল,

– এসব আপনি কী করেছেন? কখন করেছেন?

– রাতে। যখন তুমি ঘুমিয়ে ছিলে।

কত সুন্দর করে শাড়ি গুলো সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছিলো মাসনুন। সেখানে নিজের শার্ট প্যান্ট ঠেসেঠুসে ঢুকিয়ে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা করে ফেলেছে মিহির ৷ শাড়ির ভাঁজ গুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। মাসনুন দাঁত খিঁচিয়ে বলল,

– এগুলো কী করেছেন হ্যাঁ? সমস্যাটা কী আপনার? কত কষ্ট করে সব গুছিয়ে ছিলাম আমি।

মোহরের আফসোস ভরা খেদোক্তি আর ভর্ৎসনা শুনে মিহিরের শুকনো মুখটা আরও চুপসে গেলো। খাটো স্বরে বলল,

– তুমিই তো রেগেমেগে ঘুমিয়ে গেলে। আমার কথা শুনলে কোথায়। তাই আমি ওভাবে ঢুকিয়েছি জামা কাপড়। কী আর করতাম।

মিহিরের অসহায়ের ন্যায় বলা কথাগুলোর পৃষ্ঠে আরও কয়েকটা কর্কশ বাণী ছুড়ে দিলো না মাসনুন। হতাশা মিশ্রিত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মিহির ওর যাওয়ার পানে চেয়ে দুষ্টুমি ভরা একটা হাসি দিয়ে ঘাড় ঝুঁকালো।

– আসতে পারি?

কথাটা কান অব্দি পৌঁছালে মিহির তড়িৎ ঘাড় তুলে তাকালো। আগন্তুকের চেহারাটা দেখে অবিলম্বেই সামান্য হাসলো। উঠে এসে বলল,

– আসুন,প্লিজ। অনুমতি নেওয়ার কোনো দরকার নেই।

সুবহান কবির তার নম্র চেহারাটায় আরও হাস্যজ্বল ভাব এনে এসে মিহিরের সাথে ওর পাশে বসলেন। মিহির নরম গলায় বলল,

– কেমন আছেন বাবা?

মিহিরের বাবা ডাকটা শুনে নরম মনটা একদম বরফের মতো গলে গেলো সুবহান কবিরের। ছেলেটাকে এমনিতেই খুব পছন্দ তার। তার সাথে যদি ছেলে সন্তানহীন পিতাকে বাবা ডাকটা শোনার স্বাদটা উপহার দেয় তবে কেই বা পারে সেখানে শক্ত থাকতে। সুবহান কবির সস্নেহে মিহিরের কাঁধে হাত রেখে জিগ্যেস করলো,

– শরীর কেমন আছে বাবা? সব ঠিকঠাক চলছে তো?

– আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী আর সকলের দোয়াতে খুব ভালো আছি বাবা। সবটায় খুব ভালো চলছে।

– আমার মেয়েটা কী খুব জ্বালাচ্ছে? ও আবার ছোট থেকেই ভীষণ রাগী জানোতো। ভালোবাসা টাও ওর রাগ দিয়েই উসুল করে।

মিহির স্মিত হেসে জবাব করলো,

– না ও জ্বালাবে কেনো। বরং ও তো খুব কমপ্রোমাইজ্ করে, আমার জন্য অনেক কিছু অ্যাডযাস্ট করতে হয় ওর।

সুবহান কবির পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মিহিরের মুখে। ওর মাথায় হাত ছুঁয়ে বললেন,

– কখনও এমনটা ভেবো না যে মাসনুন অ্যাডযাস্ট করছে তোমার সাথে। মাসনুন কখনো আপোষ করার মতো মেয়ে নয়। যাদের ও পছন্দ করে না তাদের আশেপাশেও ভেড়ে না। যা কিছু করে নিজ মন থেকে ভালোবেসেই করে।

বলে কিঞ্চিৎ বিরতি নিয়ে খুব নিচু গলায় বললেন,

– নিজেকে বোঝা ভাবার ভুলটা কোরো না বাবা। আমাকে তো চেনো, আমার মেয়েটা আমার মতোই। তোমাকে সেই ছোট থেকে দেখেছি। ভরসা করি,আমি জানি আমার মেয়েকে সপে দেওয়ার মতো গুরুদায়িত্বটা তোমার হাতে চোখ বুজে অর্পণ করা যায়।

ওদের কথার মাঝেই মাসনুনের গলা শোনা গেলো। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,

– আব্বু এসো তাকে নিয়ে। বেলা হয়েছে তো, মা খেতে ডাকছে।

ওরা কথাবার্তা শেষ করে উঠলো। মিহির একবারে গোসল টা করে নিয়ে তবেই বেরোলো খাওয়ার জন্য। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। সারাটা দুপুর মিহির সুবহান আর মাসুমা বেগমের সাথে গল্প করে কাটিয়েছে৷ সিয়া ওর বাবার সাথে গেছিলো বাজারে, বাড়িতে ফিরে এসে থেকে চিপকে আছে মিহিরের সাথে। যেভাবে গল্প ইয়ার্কি করছে যেনো কতদিনের চেনা। মাসনুন সবটা লক্ষ্য করলেও তেমন কিছুই বলল না প্রয়োজন ছাড়া। মাসুমা বেগম একমাত্র জামাতার আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি না রাখার জন্য হরেক রকমের পাকোয়ান প্রস্তুত করে যাচ্ছেন একের পর এক। মাসনুন বহুবার নিষেধ করলেও কানে তোলেননি। তার মতে, ‘জামাই মানুষ সে তো আর মুখ ফুটে বলবে না কোনটা বেশি পছন্দ। তাই যতটা সম্ভব করবো৷ কোনো ত্রুটি রাখলে আমি শান্তি পাবো না’ অগত্যা মা জননীর কাছে হার মেনে মাসনুন চুপচাপ সাহায্য করে যাচ্ছে। মন্দ লাগছে না ওর অবশ্য। বাবা-মা, সিয়া সবার সাথে মিহিরের এমন সহজতর, মিশুক ব্যবহারটা বেশ ভালো ঠেকছে। মিহির আসায় মাসনুনের আব্বু আম্মু দুজনেই ভীষণ খুশি। মাসনুন অবাক হলো মায়ের অস্থিরতা দেখে। যেই মা বিয়ের আগের দিনও মেয়ের চিন্তায় কেঁদেছেন, মেয়েকে ঠিক হাতে হস্তান্তর করছে কী না ভেবেই দ্বিধাদ্বন্দে জর্জরিত ছিলেন আজ যেনো জামাতা তার চোখের মণি। মাসনুন ও অখুশি হলো না এতে।

সন্ধ্যার সময়টাতেও রান্নাঘরে এসে আসন গেড়েছেন মহিলা। চায়ের সাথে হরেক রকমের নাস্তা তৈরী করছেন আর মাসনুন সাহায্য করছে।

– আমায় সত্যি করে একটা কথা বলবি মাসনুন?

মায়ের কণ্ঠে বেশ গভীরত্ব আর গাম্ভীর্য অনুভব করলো মাসনুন। নিজের কাজ বহাল রেখে উত্তর দিলো,

– মিথ্যা কবে বললাম।

– তুই আর মিহির খুশি তো?

মাসনুন হাতটা থামালো। মায়ের চোখে তাকিয়ে বলল,

– কোন খুশির কথা বলছো?

– মানে দুজনের সম্পর্ক! তুই তো জানিস কতটা দুঃশ্চিতা নিয়ে তোকে বিয়ে দিয়েছি। পাড়ার মানুষের কত কথা শুনেছি। শুধু তোর বাবার ওপর ভরসা করে কিচ্ছুটি বলিনি। এখন তুই সত্যি করে বল না তুই সুখী আছিস তো? ও বাড়িতে তোর খেয়াল রাখা হয়? তুই শান্তিতে আছিস তো?

হাতের কাজটা ফেলে এসে মেয়ের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কথাগুলো একনাগাড়ে বললেন মাসনুনের মা। মাসনুন আলতো হাসলো। ধীর কণ্ঠে বলল,

– সম্পর্ক নিয়ে কী বলব? আমি তো আগে বিয়ে করিনি তাই সুখী সম্পর্ক কেমন হয় আমার জানা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি লোকটা আজ অব্দি আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেনি নাইবা আমার কোনো কাজে বাঁধা দিয়েছে। আমি যত রাত অব্দি জেগে পড়ি সেও কাজের বাহানায় ফাইল গুলো খুলে ঘুমঘুম চোখ টেনে বসে থাকে। সকাল বেলা পড়তে বসলে ঘুম পাবে বলে নিজে গিয়ে চা বানিয়ে আনে৷ বাচ্চাদুটোকে স্কুলে রেখে রোজ ছুটে এসে আমায় পরীক্ষার হল অব্দি রেখে আসতো। আবার পরীক্ষা শেষ হলে আমি বেরোনোর আগেই এসে দাঁড়িয়ে থাকে৷ একটা হাতে ছাতিটা আমার মাথায় ধরে রাখে যাতে রোদে আমার চামড়াটা ফিকে না হয়, কষ্ট না হয়। আমার পেছনে সময় নষ্ট করে রাত জেগে কাজ গুলো পূরণ করেছে। ওর নিজেরই তো একটা হাত অচল আম্মু, তবুও যে হাতটা নাড়াতে পারে সারা রাস্তা সে হাতটা আমার কপালের ওপর ধরে রেখেছে যাতে আমার মুখে রোদ না লাগে।

দুজনের নিশ্চুপতা ভঙ্গুর করে মাসনুন জিগ্যেস করলো,

– একে কী সুখী সংসার বলে আম্মু? সুখী সংসারের সংজ্ঞা আমার জানা নেই। তবে আমার একটুও দুঃখবোধ হয়নি। আশেপাশের লোক যেভাবে হেয় করেছিলো, কেচ্ছা করেছিলো এক মুহুর্তের জন্য আমারও ভয় হয়েছিলো আগামী জীবনটা কেমন হবে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার এখন বারবার মনে হয় তোমরা যদি আমায় ওই পঙ্গু লোকটার সাথে বিয়ে না দিয়ে টাকাপয়সা,বাড়ি, গাড়ি আছে এমন লোকের সাথে বিয়ে দিতে তাহলে আমি সুখ হয়তো পেতাম তবে এতটা সুখী হতে পারতাম না। তার একটা হাত অচল বলেই তোমাদের চিন্তা তাই না আম্মু? চিন্তা কোরোনা। ওই মানুষটা তার এক হাতেই আমায় যতটা যত্ন করে তা দুই হাত দিয়েও খুব কম মানুষ ই পারবে।

নিজের অজান্তেই চোখ দু’টো ভরে এলো। মায়ের চোখ তো বেহায়া চোখ। সন্তানের জন্য অশ্রুর বন্যা বইয়ে দেওয়ার সুযোগ পেলে একচুল ও ছাড় দেয় না। মায়ের উৎকণ্ঠিত মনটা আজ মেয়ের জবাবে উদ্বেলিত হলো। এগিয়ে এসে মাসনুনের কপালে চুমু দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

– খুব সুখী হও মা। আল্লাহ্ তোমাদের দুজনকে নেক হায়াত দিন, রহমত দিন। দিনশেষে যেনো তোমরা শান্তিতে থাকো। আমার আর কোনো চিন্তা নেই।

.
.
.
চলমান।

#Humu_❤️