বাড়িয়ে দাও তোমার হাত পর্ব-০৯

0
182

#বাড়িয়ে_দাও_তোমার_হাত
#নবম_পর্ব
#হুমাইরা_হাসান
_____________________

– তুমি যখন সিয়ার বয়সী ছিলে তখন আমার শহরে একটা দোকান ছিলো তা মনে আছে নিশ্চয়। বেশ ভালো ব্যবসা চলতো। কিন্তু একবার ব্যবসার বাজার এত খারাপ হয়েছিলো যে ঋণ অনেকটা বেড়ে যায়। ওগুলো শোধ করতে আর পরিবারের ভরনপোষণ জোগাতে আমি বাধ্য হয়ে দোকানটা বিক্রি করে দেই৷ তখন আমি একূল ওকূল ছাড়া নাজেহাল অবস্থায় পড়ি। শহরে আমার দোকানের গলিতে সবচেয়ে বড় দোকান ছিলো মুর্শেদ উদ্দীন ভাইয়ের৷ তার সাথে আমার সম্পর্কটা খুব ভালো ছিলো। ওই বিপদের দিনে একমাত্র সেই মানুষটায় আমাকে ভরসা করে নিজের নামে লোন তুলে দেন। সেই টাকা দিয়ে আমি গাঁয়ে ব্যবসা শুধু করি। আল্লাহ আমার দিকে মুখ ফিরে চান। একটু একটু করে দাঁড়াতে সক্ষম হই। যদিও আমি পরে পুরো টাকা টা ভাইয়ে শোধ করেছিলাম কিন্তু ওই বিপদের দিনে তার দেওয়া হাজার টাকা আমার কাছে কোটির সমান ছিলো। যেহেতু ব্যবসা গ্রামে শুরু করেছিলাম তাই শহরে যাওয়াটা একেবারে কমে আসে। শুধু মাঝেমধ্যে মাল আনতে যেতাম। একটা সময় একেবারেই যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মুর্শেদ ভাই এর মাঝে হুট করেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার স্ট্রোক করে মারা যাওয়ার খবর টাও আমি জানতাম না। যতদিনে জেনেছি ততদিনে অনেকটা দেরি হয়েছে। যেই মানুষটা আমায় এতটা সাহায্য করেছে তার বিপদের দিনে পাশে থাকতে না পেরে খুব আফসোস হয়েছিলো। মুর্শেদ ভাইয়ের বড় ছেলে রোমান তখন নিজের পড়াশোনা ছেড়ে পরিবারের হাল ধরে। আমি মাঝে মধ্যেই যেতাম। ভাগ্যের নিষ্ঠুরতম পরিনতি ছেলেটাও রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপর থেকে আমার ও বাড়িতে যাওয়া হয়না বললেই চলে। এর মাঝেই একদিন মালপত্র আনতে শহরে গিয়ে রোকেয়া ভাবীর সাথে দেখা হয়। হালচাল জিগ্যেস করলে ছোট ছেলেটার কথা বলে অফসোস করে। আমায় বলে তার ছেলের জন্য একটা মেয়ে যদি খুঁজে দেই তাহলে খুব ভালো হয়। বিশ্বাস কর আমি মিহিরের জন্য তোকে দিয়েছি নিজের উপকারের প্রতিদান দিতে না, আমি চেয়েছি একটা ভদ্র,সুশীল, শিক্ষিত মানুষের হাতে তোকে দিতে। টাকা পয়সা, রিজিক সবই আল্লাহর দান মা। তিনি যতটুকু আমাদের জন্য নির্ধারিত রেখেছেন ততটাই পাবো। টাকার পেছনে ছুটে মানুষ টাকায় পায় সুখ আর না। আমি মিহিরকে অনেক ছোট থেকে চিনি। আমি চেয়েছি তুই খুশি থাক। তোকে আমি যেভাবে গড়ে তুলেছি তাতে আল্লাহ দিলে একদিন খুব সফল হবি। তুই কী আমার ওপর অভিমান করেছিস?

বাবার কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে নিরব শ্রোতার মতো শুনলো মাসনুন৷ কিন্তু শেষ প্রশ্নটার প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসলো। তার দিয়ে চেয়ে বলল,

– কখনো তোমার কোনো সিদ্ধান্তে দ্বিমত করেছি আমি? চিন্তা কোরো না। শুধু মিহির নয় মিহিরের মা দাদী সবাই খুব ভালো। আর বাচ্চাদুটো তো এখন আমারই সন্তান। তুমি যে দৃষ্টিকোন থেকে আমার বিয়েটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে আমিও সেই দৃষ্টিকোনকে সম্মান করে খুব ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

সুবহান কবির হেসে দিয়ে মাসনুনের মাথায় হাত রাখলেন সস্নেহে। মাসুমা বেগম তাড়া দিয়ে বললেন,

– বাপ মেয়ের অনেক গল্প হয়েছে। ছেলেটা যে এখনো ভাত খায়নি সে খেয়াল তো কারো নেই। তুই কেমন রে মাসনুন এটুকু খেয়াল করছিস না?

মাসনুন ভাবলেশহীন ভাবে চেয়ে বলল,

– আম্মু, তুমি এসে থেকে বেচারাকে যে সার্ভিস টা দিচ্ছ ও দুদিন না খেলেও সমস্যা নেই।

– চুপ কর ফাজিল। আমি খাবার বেরে দিচ্ছি তুই ঘরে নিয়ে যা। একসাথে খাস দুজন।

মাসনুন মাকে পেছন থেকে ডেকে বলল,

– এখানেই খাক। অসুবিধা কোথায়?

– তোর বাবা রাতে আর ভাত খাবেনা। সিয়াটাও ঘুমিয়ে পড়েছে তোরা দুজন বরং ঘরেই খা।

বলে রান্নাঘর থেকে খাবার গুলো প্লেটে তুলে এনে মাসনুনের হাতে দিলে ও ঘরে এলো। মিহির ওর জানালার ধারে দাঁড়িয়ে। স্বাভাবিকের ন্যায় এক হাত নয় বরং দুটো হাতই পকেটে গুঁজে। মাসনুন নিঃশব্দে এগিয়ে এসে বলল,

– খেয়ে নিন।

মিহির ঘুরে দাঁড়ালো। নীল জামাতে মাসনুনকে ভীষণ সুন্দরী লাগলেও মিহিরের যেনো খালি খালি মনে হচ্ছে। মাসনুনের সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে বলল,

– শাড়ি কেনো পরোনি?

মাসনুন বেশ বিব্রত হলো। মিহিরের এরূপ আচরণ গুলো যেনো একটু বেশিই অপ্রত্যাশিত ছিলো। রয়েসয়ে বলল,

– ইচ্ছে করছিলো না। ওটা খুব ঝামেলার বস্তু। আপনি আসুন তো।

বলে সরে আসতে নিলেও একটা স্পর্শে থেমে গেলো। পুরুষালী হাতটা ওর কব্জি ধরে নিজের কাছে এগিয়ে নিলো। জানালার কাছ ঘেঁষে ওকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে বলল,

– আকাশে দেখো।

মাসনুন গ্রিলের ফাঁক দিয়ে তাকালো বিশাল আকাশের বুকে সাজানো তারকারাজি আর রাণীর মতো আসন পেতে বসে থাকা চাঁদটার দিকে। মুগ্ধ হয়ে বলল,

– চাঁদটা কী সুন্দর তাই না?

মিহির সুগভীর স্বরে বলল,

– একদম অপরূপা।

মাসনুন তড়িৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। মিহিরের চশমা ছাড়া ফোলা ফোলা চোখদুটোর অগাধ দৃষ্টি নিজের পানে স্থির দেখে খানিক আড়ষ্টতা বোধ করলো। পরিস্থিতি অন্যদিকে ঘোরাতে সরে এলো। আগের ন্যায় স্বাভাবিক ভাবে বলল,

– চশমা পরেননি কেনো?

– সবসময় চশমা কেনো পরতে হবে? তোমার কী মনে হয় আমি চশমা ছাড়া চোখে দেখি না?

মাসনুন আড়চোখে তাকালো। তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,

– চশমিশ দের চশমাতেই মানায়। না তো চোখ দেখলে মনে হয় গা’ঞ্জা খেয়ে এসেছে।

মিহির বিস্ফারিত চোখে তাকালো। এগিয়ে এসে বিস্ময়কর গলায় বলল,

– সিরিয়াসলি! তা বলে গা’ঞ্জা!

– হু।

বলে মাসনুন খাবার গুলো এনে বিছানায় রাখতে লাগলে মিহির খুব অন্যরকম ভাবে বলল,

– কথাটা অবশ্য এখনকার জন্য ঠিকই আছে তবে পুরোটা না হাফ।

মাসনুন কৌতূহলী চোখে চেয়ে বলল,

– কী বলছেন আদৌও বুঝছেন তো? বলতে চাচ্ছেন সত্যিই গা’ঞ্জা খেয়েছেন?

– না ওটা খাইনি। তবে নে’শা হয়েছে।

মাসনুন স্তব্ধ নয়নে তাকালো। মিহিরের গলাটা কেমন অন্যরকম ঠেকলো না! মনে মনেই বেশ জড়তা কাজ করলেও মুখে প্রকাশ করতে চাইলো না। মাসনুনকে নীরব দেখে মিহির এগিয়ে এসে বসতে বসতে বলল,

– না না ওসব খাইনি। চোখের সামনে পরীর মতো বউ থাকলে নে’শা হওয়াটা তো অস্বাভাবিক না।

মাসনুন দু হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো। ওর দিকে চেয়ে বলল,

– মুভি বেশি দেখছেন নাকি? হিরোদের মতো ফিল্মি ডায়লগ দিচ্ছেন খুব!

– নাহ্। ওসব ফিল্ম সিল্ম আমি দেখিনা। যা সত্য তাই তো বলছি।

বলে প্লেট টা হাতে তুলে নিলো। চামচ ঘোরাতে ঘোরাতে মাসনুনের দিকে তাকালো বার কয়েক। মাসনুন ওর হাবভাব দেখে বলল,

– এমন চোরের মতন তাকাচ্ছেন কেনো? দেখলে ভালো মতই দেখেন।

মিহির ভ্রু কুঁচকে রইলো খানিক। অতঃপর মুখ ভারি করে বলল,

– তুমি এখন আর আমাকে পছন্দ করেন না। তাই না?

– পছন্দ করিনা মানে?

– মানে সেদিন তো খাইয়ে দিয়েছিলে। এখন তো আর দাও না।

মাসনুন কতভাবে নিজের বিস্ময় চেপে রাখবে সেটা নিজেও বুঝে উঠতে পারেনা। একদিনের ব্যবধানে লোকটার এত পরিবর্তন! কাল অব্দি মুখ লুকিয়ে বেড়াচ্ছিল৷ নাকি আগে থেকেই এমন ছিলো শুধু জড়তার আর ভয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখতো?
মাসনুন এসে মিহিরের পাশে বসে বলে,

– আমার এবার সত্যিই মনে হচ্ছে আপনি নিশ্চয় হিন্দি সিরিয়াল দেখে এসেছেন।

– নিজের বউকে কিছু বলতে হিন্দি সিরিয়াল কেনো দেখতে হবে? আমি কী কিছুই বলতে পারিনা?

মাসনুন বড় বড় চোখে তাকিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলল,

– কেনো পারেন না! অবশ্যই পারেন।

মাসনুনের কৌতুক করাটা বুঝতে পেরে মিহির চুপ করে নিজে নিজেই খেতে লাগলো আর কোনো কথা না বলে। মিহিরের এমন ফোলা ফোলা মুখটা দেখতে বেশ লাগছে মাসনুনের। মনের ভেতর কেমন অদ্ভুত উদ্বেলন জুড়ে যাচ্ছে। লোকটার চোখ,মুখ,কথা, এমনকি ওকে নিয়ে ভাবতে, বলতেও খুব ভালো লাগছে। মাসনুন বুঝে পায় না এ অনুভূতির নামটা কী দেওয়া যায়! শুধু এইটুকুই মনে মনে উপলব্ধি করে যে যা হচ্ছে হোক, যেভাবে খুশি হোক। মিহির আর ওর এই পাগলামি গুলো এমনই থাক। ভীষণ রকম ভালো লাগছে।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওর হাত থেকে থাল কেড়ে নিজের হাতে নিলো৷ খাবারের লোকমা ওর মুখে দিয়ে বলল,

– এই সব কিছুর জন্য চার্জ দিতে হবে। ফ্রী তে মাসনুন কবির কোনো সার্ভিস দেবে না।

মিহির ফোলা মুখেই মুচকি হাসলো। মিহিরকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেলো মাসনুন। সমস্ত কাজ মিটিয়ে রাতে শোবার প্রস্তুতি নিলো। বিছানায় এসে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে থাকলে কিয়ৎকাল সময় পার হলে পেছন থেকে একটা হাত খুব সন্তপর্ণে স্পর্শ করলো ওর কোমর। মাসনুন ঝামটা দিয়ে হাতটা সরিয়ে পেছনে মুখ ফিরিয়ে বলল,

– কত বড় সাহস ভাবা যায়! আমায় ধরলে খবর করে রেখে দেবো।

এটুকু বলে আবারও মুখ ফিরিয়ে চোখ বুজলে কিছুক্ষণ পর আবারও হাতটা খুব আলতো স্পর্শে এক হাতে কোমরটা পেঁচিয়ে ধরলো। সর্বাঙ্গে শিথিলতা ছড়িয়ে গেলো মাসনুনের। স্বামী নামক ব্যক্তিটির এমন আবেদনময়ী স্পর্শে ও মোটেও অভ্যস্ত বা প্রস্তুত নয়। তবে এবার আর সরিয়ে দিলো না। মিহির সরে এসে একদম কাছাকাছি ঘেঁষে কাঁধের কাছটায় মুখ রাখলো। মাসনুনকে পেছন থেকে খুব যত্নে জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলল,

– এখনও রেগে আছেন? সত্যি বলছি আমি আপনাকে সময় দিতে চেয়েছিলাম কক্ষনও এড়িয়ে যেতে চাইনি।

মাসনুন প্রত্যুত্তর করলো না। মিহিরের উষ্ণ প্রশ্বাস ঘাড়ে গলায় সূঁচের মতো বিঁধে যাচ্ছে। কেঁপে উঠছে সমস্ত সত্ত্বা। মিহিরও আর কোনো কথা বলল না। বরং শক্তপোক্ত বাঁধনে মাসনুনকে আঁকড়ে ধরেই থাকলো সারাটা রাত।

•••

দেখতে দেখতে দুটো দিন দেদারসে পেরিয়ে গেলো। মাসনুন আর মিহির তৃতীয় দিনে শহরে ফিরে এলো নিজেদের বাড়িতে। সুবহান কবির এবং মাসুমা বেগম খুব করে বলেছিলো আরও দুটো দিন থাকতে কিন্তু মিহিরের অনুপস্থিতিতে ব্যবসাতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিলো। ওপরদিকে মা দাদী দুটো মেয়ে মানুষ বাড়িতে বাচ্চা গুলোকে নিয়ে একা আছে। তাই আর থাকাটা সম্ভব হয়নি। মাসনুন নিজেই বুঝিয়ে এসেছে। এই দিন কয়েকে মিহির আর মাসনুনের সম্পর্কে বেশ উন্নতি হয়েছে। দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা জড়তার গণ্ডি পেরিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়েছে। মাসনুনের পরীক্ষা যেহেতু শেষ তাই কয়েকটা দিন ওর অবসর। বাড়িতে বাচ্চা আর কাজ করে পরিবারের সাথে সময় কাটায়।

– মা তুমি এতদিন আমাদের ছেড়ে ছিলে। অনেক গুলো স্টোরি বাকি হয়েছে। এখন সব শোনাবে।

রোহানের কথায় সাঁয় দিয়ে রুহিও ছোট ছোট শব্দে বলল,

– হ্যাঁ মা। এই ক’দিনে গল্প গুলো খুব মিস করেছি। বড়মাকে গল্প বলতে বললে এক লাইন ও শেষ করতে পারে না। রোজ বলে এক গাঁয়ে একটা লোক ছিলো এইটুক বলতে না বলতে ঘুমিয়ে যায়।

রুহির গোলগাল মুখে কপট রাগ আর অভিযোগ মিশ্রিত কথাগুলো শুনতে বেশ লাগলো। মাসনুন শব্দ করে হেসে উঠলো। তখনই পেছন থেকে শোনা যায়,

– কী ব্যাপার ধানী লঙ্কা হম্বিতম্বি ছেড়ে হাসাহাসি করছে যে!

বলতে বলতে এগিয়ে এলেন আছিয়া খাতুন। রোহানের পাশে বসে আবারও বললেন,

– আমারেও ক তোরা। আমিও হাসি একটু।

– বড়মা রুহি বলছিলো তুমি নাকি রোজ গল্পের এক লাইন বলেই নাক ডাকা শুরু করো।

রোহানের কথা শুনে মুখখানা চুপসে গেলো বৃদ্ধার। শক্ত গলায় রুহিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

– কী রে পোনা! এতদিন আমাকে খাটিয়ে গল্প শুনে এখন আমার নামেই দুর্নাম করছিস?

রুহি ওর সরু গলায় খানিক চ্যাঁচিয়ে বলল,

– এই রোহানটা মিথ্যে বলল। আমি ঘুমানোর কথা বলেছি কিন্তু নাক ডাকার কথাটা ওই বলেছে।

– সত্যিই তো বলেছি। নাক তো বড়মা ডাকেই। কী বিশ্রী শব্দ হয় ইশ! মনে হয় কেউ ট্রাক্টর চালাচ্ছে।

বলে হাহা করে হেসে উঠলো রোহান। রুহিও বাদ গেলো না তাতে। মাসনুন হাসি আঁটকে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও আছিয়া বেগমের ক্ষুব্ধ চেহারা দেখে ততই বেশি হাসি পাচ্ছে। মুখ টিপে হাসতে থাকলে আছিয়া খাতুন খেঁকিয়ে মাসনুনকে বললেন,

– তুই আর গাল টিপে রেখেছিস ক্যান? তুই ও দাঁত কেলা এই বিচ্ছু দুটোর মতো। সবগুলো ইতর।

বলে মুখ ফুলিয়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। মাসনুন এবার জোরেসোরে হেসে উঠলো ওদের সাথে। আরও কিছুক্ষণ ওদের সাথে গল্প করতে করতে পড়তে বসালো। দুজনকে পড়া করিয়ে খাইয়ে রোকেয়া বেগমের ঘরে রেখে ঘরের দিকে এলো। রাত নয়টা বাজতে চলল অথচ মিহির এলো না যে! কেমন দুঃশ্চিতা হলো মাসনুনের। ঘরে ঢুকে মিহিরকে কল দেওয়ার জন্য ফোন করার জন্য। তখনি পেছন থেকে চেনা কণ্ঠে ডাক এলো,

– মাসনুন!

মাসনুন ঘুরে তাকাতেই আঁৎকে উঠলো। মিহিরের ব্যান্ডেজ করা কপাল আর হাতটা দেখে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো ওষ্ঠভাঁজ থেকে। ছুটে এসে মিহিরকে ধরে বলল,

– হায় আল্লাহ্! এ কী হয়েছে? মাথায়, হাতে ব্যান্ডেজ কেনো? কীভাবে লাগলো। কতখানি লেগেছে?

– শান্ত হও নুন। আমায় একটু বসতে দাও বলছি আমি।

মাসনুন মিহিরকে ধরে এনে বিছানায় বসিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে দিলো। অশ্রুভেজা চোখে মিহিরের হাতটা ধরে বলল,

– এসব কী করে হলো? কখন হলো?

– রাস্তায়। বিকেলে বাড়ি ফেরার জন্য বেরিয়েছিলাম। একটা অটো এসে আমার রিকশায় ধাক্কা দিয়েছে। বেশি কিছু হয়নি শুধু চামড়া ছিলে গেছে একটু।

– হয়নি মানে কী? হাত, মাথা সবখানে ব্যান্ডেজ করে রেখেছেন। আবার বলছেন হয়নি। আপনি কেমন হ্যাঁ? এতবড় একটা ঘটনা হলো আর একটা বার আমায় জানালেন না? আল্লাহ্ না করুন যদি আরও বড় কিছু হতো!

মিহির মাসনুনের হাতে হাত রেখে বলল,

– হাইপার হইয়ো না গো৷ আমি ঠিক আছি। এই যে তোমার সামনে বসে আছি। রিয়াজ ছিলো আমার সাথে। ওই হসপিটালে নিয়ে গেছিলো। দুইদিনে সেরে যাবে এসব।

মাসনুনের উত্তেজিত মনটা তবুও দমলো না। সমস্ত বাঁধা চুরমার করে চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। কান্নামিশ্রিত গলায় বলল,

– আপনার সাথেই হতে হলো এমন? কেনো উঠেছিলেন ওই রিকশাতে? হাতটায় কতখানি লেগেছে!

মিহির শান্ত স্বরে মাসনুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

– দ্যাখো আমি লুকিয়ে এসেছি যাতে মা কিংবা দাদী না দেখে। ঘুমাতে গেছে বোধহয়। এখন তুমি যদি এভাবে কান্নাকাটি করো তাহলে ওরাও জেগে এসে পড়বে। তখন সবাই মিলে কাঁদলে কেমন হবে বলো তো! তুমিই দ্যাখো আমি একদম ফিট্ এ্যন্ড ফাইন আছি।

মিহিরের কথাটুকু শেষ হতেই মাসনুন ঝাপিয়ে পড়লো ওর বুকে। দু’হাতে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। ভাঙা ভাঙা স্বরে বলল,

– আমায় কেনো বললেন না? যদি আরও কিছু হতো। আপনাকে এই অবস্থায় দেখে আমার কেমন লেগেছে জানেন!

.
.
.
চলমান

#Humu_❤️