বিধ্বস্ত অনুভূতি পর্ব-০৫

0
4129

#বিধ্বস্ত_অনুভূতি
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্ব-৫

অনির যখন বাসায় ফিরেছে তন্দ্রা তখন নিজের ঘরে পেট চেপে ধরে বসে আছে।
সালোয়ারের ভেদ করে রক্ত তখন উঁকি দিচ্ছে।
পাঁচ মাসের পেট নিয়ে তন্দ্রা চোখমুখ কালো করে বসে আছে।

অনির তন্দ্রাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। কাছাকাছি আসতেই তন্দ্রা বা হাতে অনিরের বুকের শার্ট খামচে ধরে বলল,

“আমার বাচ্চাটা!”

অনির দিগবিদিক শূন্য হয়ে তন্দ্রাকে তার বোরখায় আবৃত করে নেয়। কোলে তুলতে পারে না।তন্দ্রার ওজনের জন্য নয়। ইদানীং অনিরের শরীরেই ব্যথা বাসা বেধেছে।
তবুও শক্ত হাতে তন্দ্রাকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।

রিক্সায় আসার সময় তন্দ্রা অনিরের কাঁধে মাথা রেখে যখন মূর্ছা যাচ্ছিলো তখন অনির বার বার তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো

“তুমি প্লিজ শান্ত হও। কিচ্ছু হবে না তো।আমি আছি। কিছু হবে না বাবুর।তুমি স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে থাকো।”

তন্দ্রা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,

“একটা উপকার করবে?”

“উপকার কেন বলছো?”

“বলো করবে কী না?”.

“বলো।”

“ডক্টরকে বলবে যদি আমার সন্তান না বাঁচে তাহলে যেন আমাকেও না বাঁচিয়ে রাখে। কিছু করে আমাকেও যেন মেরে ফেলে।”

“এমন কথা কেন বলছো?”

তন্দ্রা কোনো জবাব দিতে পারেনি।তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। ডক্টরের কাছে পৌঁছে খুব কষ্টে নিজেকে জাগিয়ে রেখেছে সে।
পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডক্টর জানালেন সৃষ্টি কর্তার কৃপায় বাচ্চা ভালো আছে তবে তন্দ্রা ভীষণ দুর্বল। শরীরে পুষ্টির অভাব শুধু তাই নয় তন্দ্রার ঠিকমতোন সেবাযত্ন প্রয়োজন। নির্দিষ্ট সময় পর পর তাকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া উচিৎ। রাতে তন্দ্রাকে হাসপাতালে রাখা হলো।ডক্টর তাকে পুরো বেড রেস্ট দিয়েছেন। কারণ গর্ভকালীন নানান জটিলতায় ভুগছে তন্দ্রা।

অনির তন্দ্রার জন্য কেবিন নিয়েছিল।পুরো রাত সে দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি।
তন্দ্রাকে ছাড়া সে নিজের জীবন ভাবতেই পারে না।তার জীবনের অন্যতম উপহার তন্দ্রা।যখন সে অল্প পয়সার চাকরি করতো তখন সেই অল্প পয়সা দিয়ে সংসার চালিয়ে নেওয়া মেয়ে তন্দ্রা।
হাতে টাকা না থাকলে যার উপর মানসিক রাগ ক্ষোভ প্রকাশ করে অনির অথচ মেয়েটা একটু পরেই পানির গ্লাস হাতে নিয়ে এসে দাঁড়ায় সেই মেয়ে তন্দ্রা।

মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। চোখের নিচে কালি জমেছে। গালের হাড় গুলো স্পষ্ট। এতটা শুকিয়েছে?

অনির এবার স্পষ্ট বুঝতে পারছিল এক বিছানায় পাশাপাশি ঘুমালেই স্বামীর দায়িত্ব পালন করা যায় না।

তন্দ্রা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে তখন অনিরের দৃষ্টিতে শুধুই তন্দ্রা।

সাইত্রিশ তম কল দিলো নীলিমা অনিরের ফোনে। অনির ফোন তুলছে না।
আজ তার সাথে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছে। অফিস সংক্রান্ত কাজে।
নীলিমার এলাকায় নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছে অনিরের কোম্পানি। সম্পূর্ণ দায়িত্ব অনিরের ছিল।কাজ শেষ করার পর নতুন অফিসের দায়িত্বে রয়েছে নীলিমা।এই প্রজেক্টে কাজ করার সময়তাদের আলাপ।তারপর ধীরে ধীরে প্রেম।অনির কখনো নিজের পরিবার বা বন্ধু সম্পর্কে তাকে কিছুই বলেনি।নীলিমা এখন কার থেকে তার খবর নিবে?

রাত যেন কাটছেই না।সকাল হতেই অফিস থেকে অনিরের ঠিকানা যোগাড় করে নীলিমা।
প্রায় বেলা এগারোটার দিকে সে ঠিকানায় পৌঁছে যায়। অনির তন্দ্রাকে নিয়ে তখন সবে মাত্র ফিরেছে। বাসার গেটের সামনেই তাদের সাথে দেখা হলো।
অনির নীলিমার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করলেও তন্দ্রা নিজেকে গুটিয়ে নিলো।
মেয়েটার কথায় এটা স্পষ্ট বুঝতে পারছিল যে,

“নীলিমা নামের মেয়েটি হয়তো জানেই না অনির বিবাহিত।”

জীবনটা নাটকের চেয়েও নাটকীয় মোড় নেয়। অনির জানে না তন্দ্রা সবটা জানে। নীলিমা জানে না তন্দ্রা কে আবার তন্দ্রা সব’টা জেনেও বড্ড অসহায়।

ড্রয়িং রুমে বসে যখন নীলিমা অনিরকে হাজার খানেক প্রশ্ন করছিল,তন্দ্রা তখন মনে মনে এক ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলো।

নীলিমাকে বাসায় দেখে অনির ভীষণ চমকে উঠলেও প্রকাশ করেনি। এখানে নীলিমা প্রত্যাশিত ছিল না।তাছাড়া তন্দ্রাকে কী বলে পরিচয় করিয়ে দিবে? যতদ্রুত সম্ভব হয়েছে অফিসের বাহানা দিয়ে নীলিমাকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে অনির।

তন্দ্রার নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার পূর্বে সে নীলিমার ফোনে ম্যাসেজ করে দেখা করার জন্য।অনিরের ফোন থেকেই নাম্বার পেয়েছে সে। আগামীকাল সকালে হবে তাদের দেখা।

অনিরের বাসায় থাকা মেয়েটার তাকে কী বলবে ধারণা না থাকা নীলিমা উৎসুক মনে অপেক্ষা করছিল তন্দ্রার জন্য। ক্যাফেতে বসে তন্দ্রা যখন তার এবং অনিরের সম্পর্ক সবটা বলে তাকে ফিরে যেতে বলল তখন নীলিমা অসহায় কন্ঠে তন্দ্রা কে বলল,।

“আমার কী দোষ বোন?আমি কোথায় যাবো? আমিও যে ওকেই ভালোবাসি। আমার মান সম্মান, দেহ সব ওর হাতে তুলে দিয়েছি। আমাকে সরে যেতে বললে আমার মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো পথ থাকবে? ”

চলবে