বিধ্বস্ত অনুভূতি পর্ব-০৬

0
3489

#বিধ্বস্ত_অনুভূতি
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৬

আমাদের সমাজে মেয়েদের বিয়ের সঠিক বয়স হচ্ছে অনার্স ভর্তির পরপর। মেয়ে যদি লেখাপড়া করতে চায় তবে বলা হয় আরো পড়তে চাই। তখন পরিবার থেকে বলা হয়

“বিয়ে শাদীর পর পড়ালেখা করাই যায়। আর পাত্রপক্ষ পড়াবে। ছেলের পরিবার পড়াতে রাজি থাকলে বিয়েতে সমস্যা কী?”

মেয়ের তখন কিছুই বলার থাকে না। কারণ ছেলেপক্ষ পড়াতে রাজি। বিয়ের পর সেই ছেলের বাড়ি থেকে পড়াতে না চাইলে বাবার বাড়ি থেকে কিছুই বলে না।তখন তারা বলবে

“বাচ্চাকাচ্চা পড়ানোর মতো যথেষ্ট জ্ঞান আছে। এবার মন দিয়ে সংসার করো।নিজের টা বুঝে নাও। লেখাপড়া করে কী জজ ব্যারিস্টার হবা?না সরকারি চাকরি করবা?সংসার করো,সংসারে মন দেও।”

তন্দ্রার ক্ষেত্রেও একই ঘটেছিল।অনার্স ২য় বর্ষ পড়াকালীন সময়ে বিয়ে হয়। ইচ্ছে ছিল অনার্স শেষ করে বিয়ে করবে কিন্তু পরিবার বলল
ছেলে বিয়ের পর লেখাপড়া করাবে কিন্তু বিয়ের পর দুদিন কলেজ যাওয়ার পর আর সে দিকে যেতে পারেনি তন্দ্রা।
নানান জটিলতা ছিল। কখনো আফসানা এসেছিল পরিবার নিয়ে কখনো তার শাশুড়ি অসুস্থ থাকতেন।ভালো বউ, ভালো স্ত্রী, ভালো ভাবী হতে হতে সে নিজের অস্তিত্ব কখন হারিয়ে ফেলেছে তন্দ্রা নিজেও জানে না।

খুব আশা নিয়ে তন্দ্রা নীলিমার কাছে এসেছিল।ভেবেছিল নীলিমা তার মতোন এতটা অসহায় নয়। সে শিক্ষিত, স্বাবলম্বী, চাকরিজীবী নারী। তন্দ্রার মতোন গলগ্রহ নয়। সে চাইলে এই অবৈধ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে এবং তন্দ্রাকে বৈধ সম্পর্কে টিকে থাকতে সাহায্য করবে কিন্তু সে ভুল ছিল।
নীলিমা অনিরের থেকে সরে যাবে না।

এতক্ষণে হয়তো অনির জেনেছে নীলিমার সাথে তন্দ্রা দেখা করেছে। অনিরের লুকোচুরি এবার হয়তো শেষ হবে। তন্দ্রাকে হয়তো সে ত্যাগ করবে। তার বাবার বাড়ি কী তাকে ঠাঁই দিবে?
না কী বলবে

“একটু মানিয়ে নাও। সংসারে এসব ঠোকাঠুকি হয়। একটু মানিয়ে নাও।”

নীলিমার দু চোখ রক্তিম রুপ নিয়েছে। বেসিনে সামনে দাঁড়িয়ে সে বার বার চোখে মুখে পানির ঝাপ্টা দিচ্ছে।
এতবড় ভুল? এতবড় ভুল না পাপ সে কীভাবে করতে পারলো?
তার কী উচিৎ ছিল না অনির সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার?
রাগে ক্ষোভে তার মাথার শিরা উপশিরা ফুলে উঠেছে।
বেডরুমে মৃদু শব্দে বাজছিল রবীন্দ্র সংগীত।

যেতে যেতে একলা পথে
নিবেছে মোর বাতি।
ঝড় এসেছে, ওরে, এবার
ঝড়কে পেলেম সাথি।
আকাশ-কোণে সর্বনেশে
ক্ষণে ক্ষণে উঠছে হেসে,
প্রলয় আমার কেশে বেশে
করছে মাতামাতি।
যে পথ দিয়ে যেতেছিলেম
ভুলিয়ে দিল তারে,
আবার কোথা চলতে হবে
গভীর অন্ধকারে।
বুঝি বা এই বজ্ররবে
নূতন পথের বার্তা কবে,
কোন্ পুরীতে গিয়ে তবে
প্রভাত হবে রাতি।

অনিরের সাথে নীলিমার প্রথম দেখা হয় প্রজেক্টের কাজে। সেখানে কাজ করার সময় কখন সে তার প্রতি দুর্বল হয়েছিল সে নিজেও জানে না।
সেবার অনির যখন ঢাকায় ফিরেছিল তখন সে অনুভব করে অনিরের প্রতি তার দুর্বলতা।

অনির এদিকের কাজ সামলে যখন সাত দিন পর ফিরেছিল তখন নিজের মনের কথা নীলিমা অকপটে স্বীকার করে অনিরের সামনে।
অনির মুচকি হেসে সায় দেয় কিন্তু কখনো মনে হয়নি অনির বিবাহিত বা তার পরিবার রয়েছে।

দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রেমে শারিরীক সম্পর্ক খুব স্বাভাবিক।দুজনের সম্মতি ছিল। নীলিমা কেন তাকে সামলে নেয়নি?এখন কী করবে সে? আজ যে মেয়েটি এসেছিল তাকে সে দেখেছে অনিরের বাসায়।
মেয়েটি মা হতে চলেছে। কিন্তু অনির কীভাবে এক সাথে দুজন কে ঠকাতে পারে?

তন্দ্রার ভাই এসেছেন তাকে দেখতে। সে আজ জেনেছেন তাদের বোন অসুস্থ।এই লোক বাবা মায়ের থেকে আলাদা থাকে। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তার ওঠবস। তন্দ্রা তার একমাত্র বোন।ক্ষমতাসীন এই ব্যক্তি অনিরের কিছু করে ফেলা দুই মিনিটের ব্যাপার। তাছাড়া অনিরের মা শুনেছে সে নাকী কুখ্যাত মানুষের সাথেও চলাফেরা করে। অনির তন্দ্রাকে মারধর করে যখন প্রথম জেনেছিল এসে হুমকি দিয়েছিল অনিরকে সরাসরি দাফন করে ফেলবে। এই লোক যদি জানতে পারে খাট টান দিয়ে তার বোনের এই অবস্থা তাহলে কী করবে?আর তন্দ্রা যদি বলে সব?মনে মনে আল্লাহ্ কে ডাকছিল অনিরের মা।

তাকে তদবির করার জন্য অনিরের মা নিজের হাতে চা বানিয়ে এনেছেন। বার বার লোক দেখানো হলেও তন্দ্রার খেয়াল রাখার চেষ্টা করছে। সেদিকে তোয়াক্কা না করে তন্দ্রার মেঝ ভাই সরাসরি প্রশ্ন করলেন,

এমনটা কেন হয়েছে?
তন্দ্রা ভাইয়ের পাশে বসে বলল,

“ভাই হঠাৎ করে এমন হলো।”
“আমি তোকে নিতে এসেছি ঘুম। তুমি আমার সাথে চল। তুই নিজের খেয়াল একটুও রাখছিস না।”

“ভাই কিন্তু……”
“দেখ প্রথম সন্তান বাবার বাড়ি হয়।যেমন তোর ননদ এসেছে।”

তন্দ্রার ভাইয়ের কথা শুনে অনিরের মা বললেন,

“ওমা! এ কি কতা? বউ যাইবে ক্যান? তোমার সাথে গেলে বুঝি বাপের বাড়ি যাওয়া হইবে?তুমি তো আলাদা থাকো।”

“মাওই মা চিন্তা করবেন না।আমার স্ত্রী একজন ডক্টর। সে তন্দ্রার খেয়াল রাখতে পারবে।”

“কিন্তু অনির?”

অনিরের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করেনি তন্দ্রা।
তন্দ্রা যেন হাসফাস করছিল এবাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। মেঝ ভাই যেন তার জন্য স্বর্গের দূত। সে বিনা বাক্য ব্যয় করে চলে গেলেন তার মেঝ ভাইয়ের সাথে।
অনেকদিন পর যেন প্রাণ খুলে শ্বাস নিলো তন্দ্রা৷ সে সবটা জানাবে তার মেঝ ভাইকে। কারণ সে বেরুতে চায় এই মরীচিকার সম্পর্ক থেকে।

চলবে