বিবাহিতার সাতকাহন পর্ব-০৬

0
210

#বিবাহিতার সাতকাহন
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৬

কারণ তিনি বলে উঠলেন

“আমরা তো আসব সেটা তো জানতেনেই। দেওয়ার হলে আগেই সব কিনে রাখা যেত। শুধু শুধু এখন এসব বলে নাটক করার দরকার নেই। আপনাদের প্রতিটা কাজকর্মে কোনো রকম শৃঙ্খলা নেই। আমার আত্মীয় স্বজনের কাছে এজন্য আমার মাথা কাটা গেছে।”

মায়ের কথা শুনে এবার আমার বড়ো বোন বেশ চটে গেল। প্রথম থেকে সকল কাহিনি তাকে বলেছিলাম আর সে জানে সব। সে চটেই উত্তর দিল

“আপনারা কী কম করেছেন? আমার বোন প্রথম আপনাদের বাড়িতে গিয়েছে আর আপনারা আমার বোনকে পুড়া ভাত আর ডাল খাইয়েছেন। আজকে প্রথম মুমু শ্বশুড় বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসলো ওর হাত গলা খালি। আপনাদের ৫ লাখ টাকার ফার্নিচার দিয়েছি তারপরও আপনাদের মন ভরেনি। এরপর ভাবলাম টাকা দিই স্যুট কেনার জন্য। যেহেতু আমাদের দেওয়া জিনিস আপনাদের পছন্দ হয় না। কিন্তু না, আপনি তাতেও রিয়েক্ট করলেন। এরপর আপনাদের ভুলের জন্য স্যুট কিনতে পারেননি দোষ দিলেন আমাদের। আমার বোনকে কথায় কথায় ফকিন্নির জাত বলতেছেন। এটা কী কোনো ভদ্র মানুষ করে? টাকা পয়সা দিলেই সব হয়ে যায় না। আমার বাবাও ফকির ছিলেন না। ফকির হলে ৫ লাখ টাকার ফার্নিচার দিতাম না। ২০ হাজার টাকা স্যুটের জন্য পাঠাতাম না। আপনারা তো ডিজিটাল ফকির। আমার বোনের সংসার করার দরকার নেই৷ ওকে এভাবেই আমি রেখে দিব। আপনারা কোনো বড়োলোকের দুলালি বিয়ে করে আনেন। এসেছেন ভালো কথা। আমরা তো ভেবেছি একদিন থাকবেন। আর আপনারা কয়জন আসবেন তা তো জানা ছিল না যে আগের দিন সব কিনে রাখব। রিতী অনুযায়ী পাত্রের বাড়ি থেকে যারা আসবে সবাইকে কাপড় দিয়ে দিতে হয়। এখন আগে থেকে কিনে রাখলে কে কে আসবে কে কে আসবে না বুঝব কী করে? আর মফস্সল এলাকা হুট করে বললেই এক ঘন্টার মধ্যে গিয়ে কিনে নিয়ে আসা যাবে না। আপনাদের উচিত আমাদের সময় দেওয়া। তা না করে উল্টা আঘাতের উপর আঘাত করে যাচ্ছেন। আপনারা ছেলে নিয়ে চলে যান। এমন বিয়ের দরকার নেই।”

আমার বড়ো বোনের কথা শুনে আমার শ্বশুড়বাড়ির সবাই চুপসে গেল। কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা বিরাজ করল। এর মধ্যে নীরবতা ভেঙে শ্বশুড় বাবা বলে উঠলেন

“নুহাশের মায়ের কথায় কিছু মনে করবেন না। আমরা তো বিয়ে করিয়েছি বৌমা কে রেখে যাওয়ার জন্য না বরং সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিয়েসাদীতে টুকটাক কথা কাটাকটি হয়েই। এটা নিয়ে আর কোনো কথা বাড়াবাড়ির দরকার নেই। দুই তরফ থেকেই কিছু ভুল ছিল সেগুলো মানিয়ে নিলেই হবে। আর আমরা আজকের দিনটা থেকে যাচ্ছি। এর মধ্যে আপনারা যা কেনার কিনে নিন। যদি সব ঠিক থাকে কাল সকাল বেলা রওনা দিব।”

আমাদের দিক থেকে আর কথা বাড়ানো হলো না। শ্বাশুড়ি মা সেই যে মুখ গোমরা করলেন আর মুখটাকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক করলেন না। তেমন কথাও বললেন না। আমার ভেতরটায় একটু হলেও শান্তি লাগছে। এখন একটু হলেও মনে হচ্ছে আমার পরিবার আমার সাথে আছে৷ এদিকে বড়ো আপু তৈরী হয়ে শপিং এর দিকে রওনা হলো।

রাত বাজে ৯ টা। আপু আসলো সবে। সবার জন্যই যতটুকু পেরেছে কাপড় কিনেছে। সবাইকে একেক করে কাপড় দিল। সাথে নানী শ্বাশুড়ি , দাদী শ্বাশুড়ীর কাপড়ও আনা হয়েছে। চাচী শ্বাশুড়ি,খালা শ্বাশুড়ির জন্যও আনা হয়েছে। মোটকথা সবার জন্যই বড়ো আপু কাপড় এনেছে যাতে করে এখানে কোনোরকম কথা, অভিযোগ উঠে না আসে। সবাইকে সবার কাপড় গুলো দিয়ে আপু যেন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল।

এর মধ্যে মা আরও ভিন্ন জাতের পিঠা বানাতে লাগল আমার শ্বশুড়বাড়ির সবাইকে আপ্যায়ন করার জন্য। রাত এগারটায় সব বানানো শেষ হলো। সবাইকে খেতে দেওয়া হলো। সবাই বেশ ভালো করে খেয়ে নিল। অরুন ভাই সবার থাকার ব্যবস্থা করে আমাকে আর নুহাশকে একটা রুমের ব্যবস্থা করে দিল। আমি রুমে বসে আছি। নুহাশ এতক্ষণ এত চিল্লাচিল্লি হয়েছে তবুও কিছু বলেনি। কিন্তু এখন রুমে ঢুকেই বলে উঠল

“তোমার বোনের উচিত হয়নি মাকে এভাবে সবার সামনে কথা শুনানো। মায়ের মুখটা দেখছো এখন পর্যন্ত গোমরা হয়ে আছে। আর বিয়ের সময় টুকটাক সমস্যা হয়েই। আমি যেহেতু তোমার স্বামী হয়ে তোমার ব্যােপারগুলো সুন্দর করে মেনে নিচ্ছি৷ তোমার বোনের ও উচিত ছিল। যতই হোক মা আমাদের মুরব্বি। এভাবে সবার সামনে অপমান করা ঠিক হয়নি।”

নুহাশের কথা শুনে আমি শুধু মৃদু গলায় জবাব দিলাম

“আর আমার মাকে যখন জাত,পাত তুলে আপনার মা অপমান করল তখন?”

আমার কথা শুনে নুহাশ আর কথা বাড়াল না। রাগে মুখটা উল্টো দিক করে শুয়ে পড়ল। আমি পাশেই শুয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছে বিয়েটা করে জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল করেছি। বিয়ে হওয়ার পর থেকে শুধু আঘাতেই পেয়ে যাচ্ছি। চাইলেও যেন সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

সারা রাতেই নুহাশ উল্টো দিক করে ছিল। শুধু যখন তার প্রয়োজন পড়ল তখন সে কিছুক্ষণের জন্য আমার কাছে আসলো। তারপর আমার উল্টো মুখ করেই শুয়ে পড়ল। একটা বারও আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগা তার কাছে প্রাধান্য পেল না।

সকাল বেলা উঠেই নাস্তা করে রওনা দিলাম ৮ টায়। সবার কাছে বিদায় নিয়ে যখন আসছিলাম তখন বেশ শূন্য শূন্য লাগছিল। রাজশাহী পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আর আসার পরেই যেন নতুন নাটকের সূচণা হলো।

কপি করা নিষেধ