#বিবাহ_অভিযান (১০)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
– “একটা মেয়ে দেখেছি, পরশু তাকে দেখতে যাবো।”
মায়ের কথায় সমুদ্র চমকে উঠল। মা মেয়ে দেখেছে মানে?
– “হঠাৎ করেই..
সমুদ্রকে পুরোটা না বলতে দিয়ে ওর মা বললেন,
– “হঠাৎ করেই কি! তুমিই তো বলেছ মেয়ে দেখতে আর আমি সেটাই করেছি এতে এতো অবাক হবার কি আছে?”
সমুদ্র আমতা আমতা করে বলল,
– “না মানে আসলে…
– “থাক আর এতো আমতা আমতা করতে হবে না, আমি সবটাই বুঝি। পাত্রীর বাড়িতে বলা হয়ে গেছে, এখন আর ক্যানসিল করা যাবে না।”
সমুদ্র মুখ গোমড়া করে রুমে চলে গেল। পাত্রী দেখার কথা শুনে খুশি হবার কথা ছিল কিন্তু সেটা হতে পারছে না, কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। মনখারাপের মাঝে ফোন বেজে উঠল, সমুদ্র ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল রাশি ফোন দিয়েছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রাশির কন্ঠ শোনা গেল,
– “হ্যালো।”
– “হুমম বলুন।”
– “গলাটা এইরকম লাগছে কেন? সব ঠিক আছে!”
সমুদ্র অবাক না হয়ে পারল না। মেয়েটা এই অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কিভাবে যেন ওকে চিনে গেছে, নাহলে কন্ঠস্বর শুনে কেউ বলে দিতে পারে কিছু হয়েছে!
– “কি হলো চুপ করে গেলেন?”
সমুদ্র মৃদু হেসে বলল,
– “তেমন কিছু না।”
– “তেমন কিছু না, নাকি আমাকে বলতে চাইছেন না! কোনটা?”
সমুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– “আসলে মা আমার জন্য পাত্রী দেখেছে, পরশু দেখতে যাবার কথা বলেছে।”
রাশি থমকে গেল, বুকের মধ্যে আলাদা একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল। মনে হচ্ছে সমুদ্রকে জিজ্ঞাসা না করলেই ভালো হত। জিজ্ঞাসা না করলে এই ব্যথাটা তো আর হতো না।
রাশি মেকি হেসে বলল,
– “তা মেয়েকে আপনার পছন্দ!”
– “জানি না, ছবি দেখিনি।”
– “কেন?”
– “এমনি।”
রাশি বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেল না। উশখুশ করতে করতে বলল,
– “আচ্ছা এখন রাখছি, মা ডাকছে।”
রাশি সমুদ্রের উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোনটা কেটে দিল। সমুদ্র কিছুই বুঝল না, ফোনটা রেখে বিছানায় গা এলিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করতেই রাশির সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল।
— — —
রাশি শান্ত হতে পারছে না। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সমুদ্র ওর অনেকটা কাছের কেউ হয়ে গেছে, রাশি বুঝে গেছে ওহ সমুদ্রের প্রতি দূর্বল। যখন নিজের মনের কথাগুলো বুঝতে শুরু করল তখনই এইরকম একটা নিউজ। আচ্ছা মেয়েটাকে যদি সমুদ্রের পছন্দ হয়ে যায় তাহলে! রাশি আর ভাবতে পারল না, সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
– “আসবো।”
মায়ের ডাকে রাশি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসল।
– “হ্যাঁ মা আসো।”
রাশির মা ভেতরে এসে বিছানায় বসলেন। রাশি মাকে জিজ্ঞেস করল,
– “কিছু বলবে মা!”
– “আসলে তোর জন্য একটা বিয়ের কথা এসেছে, ওরা তোকে দেখতে আসতে চাইছে। কি বলব!”
রাশি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, ওর মা ওর দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। রাশি সমুদ্রের বলা কথাটা মনে করল, তারপর বলল,
– “আসতে বলো।”
রাশির মা কিছুটা অবাক হলেন, মেয়ে এত সহজে রাজি হয়ে যাবে সেটা আন্দাজ করতে পারেননি। এর আগেও বহু কথা এসেছে, রাশি প্রতিবারই বারন করে দিয়েছে। এইবারও ভেবেছিলেন রাশি না করে নেবে কিন্তু ওহ রাজি হয়েছে এইটাই অনেক।
– “সত্যি বলছিস?”
– “হুমম।”
রাশির মা খুশিতে কেঁদে দিলেন। মেয়ের একটা গতি করতে পারলে শান্তিতে মরতেও পারবেন, মেয়েটা তো সংসারের জন্য কম কিছু করল না। এইবার একটু শান্তিতে সংসার করুক। রাশি অনুভূতিহীন, কেন কিসের জন্য দেখতে আসার কথাতে রাজী হলো নিজেই জানে না। সমুদ্র পাত্রী দেখতে যাবে শোনার পর থেকে সব এলোমেলো লাগছে, এইটা তো হবার কথা ছিল না।
— — —
আজ সেইদিন যেদিন রাশিকে দেখতে আসার আর সমুদ্রের পাত্রীকে দেখতে যাবার দিন। এর মাঝে একদিন রাশি ও সমুদ্রের মাঝে কথা হয়নি, দুজন ইচ্ছা করেই ফোন করেনি। সমুদ্র চিন্তার মাঝে আর রাশি অভিমানে ফোন করেনি।
পাত্রী দেখার জন্য সমুদ্র ও ওর মা বাবা পাত্রীদের বাড়িতে চলে আসে।
– “আপনাদের আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো!”
– “না না”
– “বসুন না আপনারা। আমি আকাশ আপনারা যাকে দেখতে এসেছেন তার ছোটবোনের হাসবেন্ড।”
আকাশ সমুদ্রদের আপ্যায়ন শুরু করে।আকাশ ওদের সাথে টুকটাক কথা বলছে এর মাঝে একজন মেয়ে নাস্তা নিয়ে আসে।
– “ওহ খুশি আমার ওয়াইফ।”
খুশি সবার সাথে পরিচিত হয়, ওর কাছে সমুদ্র’কে খুব চেনা চেনা লাগে কিন্তু মনে করতে পারে না কোথায় দেখেছে।
অবশেষে পাত্রী’কে নিয়ে আসার সময় হয়। খুশি রাশিকে আনতে যায়।
– “এই দিদি চল।”
– “আমার টেনশন হচ্ছে।”
– “টেনশনের কিছু নেয়, চল। আর শোন না ছেলেটাকে আমার চেনা চেনা লাগছে কিন্তু বুঝতে পারছি না কোথায় দেখেছি।”
– “চেনা লাগছে! নাম কি?”
খুশি প্রথমে নামটা মনে করতে পারল না, তাই বিরক্ত হয়ে বলল,
– “নাম মনে পড়লে বলব, এখন চল তো।”
খুশি রাশিকে নিয়ে সমুদ্রদের সামনে আসল।সমুদ্রের মা বললেন,
– “নাম কি তোমার?”
– “রাশি।”
সমুদ্র মাথা নিচু করে ছিল, রাশি নামটা শুনে চমকে সামনে তাকাল। রাশিকে পাত্রী হিসাবে দেখবে সেটা কল্পনার বাইরে ছিল, এখন কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত সেটাতেই কনফিউজড। সমুদ্র মায়ের দিকে তাকাতেই দেখল মায়ের মুখে হাসি, তারমানে কি মা ইচ্ছা করেই এইটা করেছে!
সমুদ্রের মা মৃদু হেসে বললেন,
– “তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে, একটু মুখটা তোলো তো।”
রাশি মাথাটা তুলতেই সমুদ্রের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। সমুদ্রের মতো ওহ শকড, সমুদ্রকে পাত্র হিসাবে আশা করেনি। সবটাই কি কাকতালীয় নাকি ইচ্ছাকৃত!
– “ওরা একটু আলাদা করে কথা বলুক ততক্ষন আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা’টা শেষ করে নিই কি বলেন?”
সমুদ্র ও রাশিকে আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হলো। রাশি উশখুশ করছে, এতদিন সমুদ্রের সাথে সম্পর্কটা আলাদা ভাবে ছিল আর এখন পাত্র হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে একটু অস্বস্তি হওয়া তো স্বাভাবিক।
– “আপনি জানতেন?”
রাশি সমুদ্রের কথায় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– “কি?”
– “এই যে আমি দেখতে আসছি!”
– “নাহ্। মা বলল দেখতে আসবে আমি শুধু হ্যাঁ বলেছিলাম।”
সমুদ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল,
– “যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকত!”
রাশি কিছু উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। সমুদ্র উত্তরের আশায় না থেকে দ্বিতীয় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
– “বিয়েতে রাজি আছেন?”
প্রথম প্রশ্নটা তো এড়িয়ে গেল, কিন্তু এই প্রশ্নটা কীভাবে এড়িয়ে যাবে! আর কিই বা উত্তর দেবে রাশি?
– “কি হলো বলুন।”
– “ফ্যামিলি যা বলবে তাই।”
সমুদ্র মৃদু হাসল, তারপর বলল,
– “ফ্যামিলির সিদ্ধান্ত মেনে নেবার মতো মেয়ে আপনি নন, আর যদি সত্যি ফ্যামিলির কথা মেনে নিতেন তাহলে এতদিন অবিবাহিত থাকতেন না।”
রাশির প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে, এই লোকটাকে এত সত্যি বলতে কে বলেছে! রাশি অস্বস্তি কাটাতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। সমুদ্র ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
– “তাহলে বিয়ের জন্য না বলে দিই কি বলেন?”
রাশি চমকে সমুদ্রের দিকে তাকাল। দুজন-দুজনের চোখাচোখি হলো, রাশি কিছুটা লজ্জা পেয়ে তড়িঘড়ি চোখটা সরিয়ে নিল। সমুদ্র মৃদু হাসল, তারপর বলল,
– “উত্তরটা পেয়ে গেছি, আর কিছু বলার প্রয়োজন নেয়।”
বলেই ছাদ থেকে চলে গেল, রাশি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সমুদ্রের কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে চলে গেল, কিসের উত্তর পেয়ে গেছে সমুদ্র!
— — —
সমুদ্র’রা চলে যাবার পর রাশি মা ও খুশির সাথে সবকিছু গুছিয়ে সেইমাত্র বিছানায় গা এলিয়েছে তখনি ফোনের কর্কশ শব্দে ঘুম গায়েব হয়ে যায়। ফোনটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসলো,
#চলবে….