বিবাহ অভিযান পর্ব-০৯

0
97

#বিবাহ_অভিযান (৯)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

অয়ন ও রিতার এনগেজমেন্ট শুরু হয়ে যায়।‌সমুদ্র অয়নের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল রিতার দিকে চোখ পড়তেই রিতা ভেংচি কাটল। সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকাল, এই মেয়ে এইরকম করে কেন!

খুব সুন্দর ভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়।‌রিতা রাশিকে সাইটে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “ওই সমুদ্রের‌ সাথে তোর এত কিসের কথা!”

রাশি রিতার কথার ধরন বুঝতে পেরে বলল,
– “খবরদার উল্টো পাল্টা মিন করবি না।”

রিতা রাশির দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলল,
– “বয়েই গেছে উল্টো পাল্টা কথা বলতে। তবে একটা বিষয়ে সাবধান করার‌ ছিল।”
– “কি?”
– “ওই সমুদ্রের সাথে বেশি ভাব করতে যেও না, ওই ছেলেকে আমার দুচোখে সহ্য হয় না।”

রাশি বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সমুদ্রের সাথে রিতার এই ঠান্ডা লড়াই কবে শেষ হবে!

— —- —-

রাশি বারবার ঘড়ির‌ দিকে তাকাচ্ছে, সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে কিন্তু মানুষটার দেখা নেয়।

– “রাশি।”

চেনা কন্ঠস্বর শুনে রাশি সামনে তাকিয়ে দেখল সোহান অর্থাৎ ওর জুনিয়র প্রেমিক দাঁড়িয়ে আছে। রাশি বিরক্ত হয়ে বলল,
– “কি ব্যাপার আপনি এইখানে কেন?”
– “রাশি একটাবার আমার কথা শোনো।”
– “আপনাকে‌ আমি বারবার বারন করছি তারপরেও আপনি আমার পেছন ছাড়ছেন না কেন?”
– “আই রিয়েলী লাভ ইউ।‌প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও।”

রাশি তাচ্ছিল্যের হাসল। তারপর সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এক নারীতে মন ভরে না তাই না!”

সোহান থতমত খেয়ে গেল।‌রাশি কি বলতে চাইছে সেটা আন্দাজ করতে পারছে কিন্তু তবুও শিওর হবার জন্য বলল,
– “কি বলতে চাইছ তুমি!”
– “না বোঝার ভান করবেন না। আমি সবকিছুই জানি, আপনার বিষয়ে সব খোঁজই আমি নিয়েছি।”

সোহান থতমত খেয়ে গেল, কিন্তু রাশিকে বুঝতে না দিয়ে বলল,
– “আমাকে এত ভালোবাসো!”

রাশি বিরক্ত হয়ে বলল,
– “ভালোবাসা তাও আপনার মতো চরিত্রের ছেলেকে? আমার রুচি এতটাও খারাপ না, আপনার মতো ক্যারেক্টারলেস ছেলেকে ভালোবাসব।”

সোহান রেগে-মেগে রাশির দিকে তাকাল।‌তারপর রাশির হাতটা ধরে বলল,
– “এত তেজ ভালো না। ভালোবাসতে চাইছি সহ্য হচ্ছে না বুঝি?”
– “হাতটা ছাড়ুন।”
– “হাতটা ছাড়ার জন্য ধরিনি। আজকে তোমার সব তেজ বার‌ করব, চলো আমার সাথে।”

সোহান রাশির হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল।‌রাশি বারবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাতটা ছাড়ানোর জন্য কিন্তু সোহানের সাথে শক্তিতে পেরে উঠছে না।‌

– “সোহান হাতটা ছাড়ুন ভালো‌ হবে না কিন্তু।”
– “চুপ একদম।”

সোহান রাশিকে টান দিল তখনি সমুদ্র কোথা থেকে সোহানের সামনে হাজির হয়।

– “ওনার‌ হাতটা ছাড়ুন।”

সমুদ্র’কে দেখে সোহান বিরক্ত হয়।‌ সেইদিনের ছেলেটা আবার কোথা থেকে হাজির হলো‌ সেইটা বুঝতে পারল না।

– “ভাই আমাদেরকে আমাদের মতো ছেড়ে দিন। আমরা‌ বুঝে নেব।”

সমুদ্র এগিয়ে এসে সোহানের হাতের মুঠো থেকে রাশির হাতটা ছাড়িয়ে নিল।

– “দেখুন…

সোহানকে বলতে না দিয়ে সমুদ্র বলল,
– “ঝামেলা না চাইলে চুপচাপ এখান থেকে কেটে পড়ো, নাহলে ফলটা ভালো হবে না।”

সোহান রাগে নাক ফোলাল, ছেলেটা প্রথম দিন থেকেই ওর কাজে বাঁধা দিয়ে যাচ্ছে। তারপর রাশির দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে উঠে বলল,
– “হিসাবটা তোলা থাকল, সব সুদে আসলে তুলব।”

সোহান চলে যেতে রাশি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।”

সমুদ্র মিষ্টি করে হেসে বলল,
– “ইউ মোস্ট ওয়েলকাম, এন্ড সরি।”
– “সরি কেন?”
– “এই যে আমার আসতে দেরি হলো বলেই তো আপনি এইরকম একটা ঝামেলার মধ্যে পড়লেন।”
– “আরে এইসব বাদ দিন। চলুন ওইদিকটাই যায়।”

সমুদ্র আর রাশি পাশাপাশি হাঁটতে লাগল। শান্ত পরিবেশে দুজন মানুষ চুপচাপ হেটে চলেছে।‌পাশাপাশি হাঁটার সময়ে সমুদ্র ও রাশির হাতে হাত স্পর্শ হয়ে যায়। রাশি কেঁপে উঠল, ছেলেটার আশেপাশে থাকলে অন্যরকম একটা অনুভুতি হয় কিরকম একটা শান্তি শান্তি লাগে। কেন!

সমুদ্র হাঁটতে হাঁটতে বলল,

– “এইরকম একটা শান্ত পরিবেশে কারা হাঁটে বলুন তো!”

রাশি ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “কারা?”

সমুদ্র মৃদু হেসে বলল,
– “প্রেমিক-প্রেমিকা।”

সমুদ্রের কথা শুনে রাশি থতমত খেয়ে গেল। সমুদ্র এইরকম কথা বলল কেন! তাহলে কি!

সমুদ্র পকেটে হাত গুজে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
– “নিরিবিলি এক পথে একান্ত ব্যক্তিগত মানুষের সাথে কয়েক পা হাঁটতে চাই। হাঁটার মাঝে ছোট ছোট আদুরে প্রেমালাপ, আলতো হাতের স্পর্শ আর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি। সুন্দর না বিষয়টা!”

সমুদ্রের কথা শুনে রাশির‌ গা বেয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। একবার মনে হলো সমুদ্র কথাগুলো ওকে মিন করেই বলল, পরক্ষনেই নিজের এলোমেলো ভাবনাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিজে নিজেকেই মনে মনে বকা দিল,
– “ধ্যাত এইসব কি ভাবছি আমি!”

সমুদ্র কথা বলতে বলতে অনেকটা আগিয়ে গিয়েছে, পাশে তাকিয়ে দেখল রাশি পাশে নেয়। পেছন ফিরে দেখল রাশি একা দাঁড়িয়ে কি বিরবির করছে, সমুদ্র ডেকে বলল,
– “এই রাশি দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন?”

সমুদ্রের ডাক শুনে রাশির খেয়াল পড়ল, সমুদ্রের থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। রাশি তড়িঘড়ি পা চালিয়ে সমুদ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

– “চলুন।”

সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– “দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন কেন?”

রাশি থতমত খেয়ে গেল। সমুদ্রকে কীভাবে বলবে ওহ কি ভাবছিল!

– “এমনিতেই, চলুন।”

দুজন আবারো‌ পাশাপাশি হাঁটতে লাগল। সময়টা কখন যে কেটে গেল দুজন বুঝতেই পারল না।বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে রাশি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এইবার ফিরতে হবে।”
– “হুমম। চলুন আগিয়ে দিয়ে আসি।”

রাশি ঘাড় নাড়াল। সমুদ্রের সাথে সময় কাটাতে বেশ লাগছে।কখন যে এতটা সময় কেটে গেল বুঝতেই পারেনি।

রাস্তার পাশে চায়ের দোকান দেখে সমুদ্র রাশিকে জিজ্ঞেস করল,
– “চা খাবেন?”
– “এই শীতের সন্ধ্যায় চা খেলে মন্দ হয় না।”
– “তাহলে চলুন।”

সমুদ্র চায়ের দোকানে গিয়ে দুই কাপ কড়া চায়ের অর্ডার দিল।রাশি গায়ের চাদরটা আরো কিছুটা জড়িয়ে নিয়ে বলল,
– “এইবার ঠান্ডাটা ভালোই পড়েছে।”
– “হুমম। তবে আমার কাছে শীতটা ভালোই লাগে।”

রাশি কপাল কুঁচকে বলল,
– “শীত ভালো লাগে!”
– “হুমম। দারুন লাগে, ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদার তার সাথে গরম ধোঁয়া ওঠা চা…

সমুদ্রের কথা শেষ হবার‌ আগেই চা চলে আসে। সমুদ্র চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলল,
– “বলতে বলতে চা চলে এসেছে। এইবার চুমুক দিন, দেখুন কেমন লাগে।”

রাশি মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
– “শীতের দিনে গরম খাবার ভালো লাগবে এইটাই তো স্বাভাবিক।আমার কাছে শীত বিরক্ত লাগে, শীতটা কাটলে আমি বেঁচে যাই।”

সমুদ্র চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
– “সবার পছন্দ এক না। আমার শীত তো দারুন লাগে, আমি বিয়ে করলে শীতকালেই করব।”

রাশি মুখ কোঁচকাল। শীতে বিয়ে! অসম্ভব ব্যাপার।যারা শীতে বিয়ে করে তাদের সাহস আছে বলতে হবে।

চা খাওয়া শেষ করে রাশিকে গাড়িতে তুলে সমুদ্র নিজের‌ বাড়ির পথে পা বাড়াল।

— —-

রাশি বাড়ি যেতে যেতে সমুদ্রের সাথে কাটানো সময়গুলো ভাবতে লাগল। সমুদ্রকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাশি আপনমনে বলল,
– “আমি কি সমুদ্রকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছি!”

সমুদ্র বাড়ি ফিরতেই ওর‌ মা ওর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
– “অফিস ছুটি হয়েছে ৫টাই।আর এখন ৮টা বাজে এতক্ষন কোথায় ছিলে?”

মায়ের আচমকা প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল। তারপর কোনরকমে সামলে নিয়ে বলল,
– “একটা ফ্রেন্ডের সাথে মিট করার ছিল।”

সমুদ্রের মা রসিকতার‌ সুরে বললেন,
– “ফ্রেন্ড’টা কি সেই মেয়েটা?”

সমুদ্র মায়ের রসিকতা ঠিক ধরতে পারল না।‌ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– “কোন মেয়ে!”

সমুদ্রের মা মুখ বেঁকিয়ে বলল,
– “ওই যে অয়নের এনগেজমেন্টের দিন দুজন দাঁড়িয়ে গুজগুজ ফুঁস ফুঁস করছিলে।”

সমুদ্র মায়ের কথায় শিওর হলো সেইদিন রাশির সাথে কথা বলতে মা দেখে নিয়েছিল। না‌ জানি বিষয়টাকে কিভাবে নেয়।

– “কথা বলছিলাম।”
– “বুঝি বুঝি সব বুঝি।”

সমুদ্র কিছু বলল না। সমুদ্রের মা আবারো বললেন,
– “একটা কথা বলার ছিল।”
– “কি কথা!”
– “তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। পরশু তাকে দেখতে যাবো।”

#চলবে….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম