#বিবাহ_অভিযান (১১)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
রাশি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল,
– “তোমার সাহস কীভাবে হলো পাত্রপক্ষের সামনে বসার! আবার পাত্র নাকি সেই ছেলেটা, তলে তলে বুঝি এইসব চলছিল?”
আচমকা এইসমস্ত কথা শুনে রাশি ঘাবড়ে যায়। ওপাশের মানুষটা কে সে বুঝে উঠতে পারে না।
– “কে আপনি?”
– “চিনতে পারছ না, নাকি না চেনার অভিনয় করছ?”
রাশি বিরক্ত হয়ে বলল,
– “নাটক না করে বলুন নাহলে ফোন রাখুন।”
– “আমি সোহান। শুনলাম আজকে সেই ছেলেটা নাকি তোমাকে দেখতে এসেছিল?”
– “এসেছিল না আসেনি সেটা পরের কথা কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?”
সোহান মৃদু হেসে বলল,
– “যাকে ভালোবাসি তার সব খোঁজই রাখি।”
রাশি তাচ্ছিল্যের হাসল, তারপর বলল,
– “ভালোবাসা আর আপনি! একটা মেয়ে’র দায়িত্ব নিয়ে তাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়ে আমাকে ভালোবাসা দেখাতে আসছেন? আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো আমার থেকে আপনার কি চায়?”
সোহান মৃদু হেসে বলল,
– “কি চাই সেটা না হয় সময় এলেই বলব। রাখছি, খুব শীঘ্রই তোমার সাথে দেখা হচ্ছে।”
সোহান ফোন কেটে দিল। রাশি গোলক ধাঁধা’য় পড়ে গেল সোহানের কথার অর্থ বুঝতে পারল না, ওহ কি চায় রাশির কাছে!
—– —–
রাশি জল্পনা-কল্পনায় ব্যস্ত। তখনি দ্বিতীয়’বারের মতো ফোন বেজে উঠল, রাশি বিরক্ত হয়ে কানে ধরল।
– “রাশি।”
চেনা কন্ঠস্বর শুনে রাশির বিরক্ত উধাও হয়ে গেল, মুখের কোনে মৃদু হাসি ফুটে উঠল।
– “হুমম বলুন।”
– “কি করছিলেন?”
– “এই তো বসে আছি আপনি।”
– “আমি! আমি অনেক কিছু ভাবছিলাম।”
– “কি ভাবছিলেন?”
– “অনেক কিছু, বলা যাবে না।”
– “কেন?”
– “উঁহু, কাল দেখা করতে পারবেন?”
– “কখন!”
– “অফিস থেকে ফেরার পথে সেইদিনের মতো।”
রাশি মৃদু হেসে রাজি হয়ে যায়। মানুষটার সাথে সময় কাটাতে বেশ লাগে।
– “রাশি।”
– “হু বলুন।”
– “আজ থাক, কাল দেখা করে বলব।”
– “ওকে মশাই তাই হবে।”
দুজন অনেকটা সময় কথা বলল, এর মাঝে রাশির ফোনে রিতার কল আসে।রাশি বিরক্ত হয় ,এখনি ওকে কল করতে হলো।
– “কে কল করছে?”
– “রিতা।”
– “ওকে তাহলে ওর সাথে কথা বলো। আমি রাখছি।”
সমুদ্র ফোনটা কেটে দিতেই রিতার কল ঢোকে, রাশি ফোনটা রিসিভ করে বলল,
– “তোকে এখুনি কল করতে হলো?”
ফোনটা রিসিভ করেই এইরকম কথা শুনবে সেটা রিতা আশা করেনি, তাই থতমত খেয়ে যায়।
– “কেন কি করলাম?”
রাশি মুখটা গম্ভীর করে বলল,
– “কিছু না।”
– “কি হয়েছে বল?”
– “সমুদ্রের সাথে কথা বলছিলাম তোর কল আসলো বলে রেখে দিল।”
সমুদ্রের নাম শুনে রিতা ক্ষেপে গেল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
– “শয়তান ছেলের সাথে তোর এত কিসের কথা!”
– “আমার অনেক কথা, আচ্ছা রিতা ওর প্রতি তোর এতো রাগ কিসের!”
– “জানি না কিন্তু ওকে আমার সহ্য হয় না। আর আমি এইসব কি শুনছি।”
– “কি শুনেছিস?”
– “সমুদ্র তোকে দেখতে এসেছিল কথাটা কি সত্যি?”
– “হুমম।”
রিতা ন্যাকা কান্না করে বলল,
– “তুই এইটা কিভাবে পারলি? এইটা কিন্তু ঠিক না।”
– “আমি কি করব, আমি নিজেই জানতাম না।”
রিতা কিছু একটা ভেবে বলল,
– “রাশি সত্যি করে বল তো, তুই কি সমুদ্র’কে পছন্দ করিস?”
রাশি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল,
– “জানি না।তবে ওনার সাথে সময় কাটাতে, ওনাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।”
রিতা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
– “বন্ধুরে তুই পুরোই গেছিস। শেষমেশ তুই আমার শত্রুর প্রেমে পড়লি! তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক।”
রাশি হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারল না। রিতার আজহারি শুনে নিজেই কোমায় চলে যাচ্ছে, এই মেয়ে এত পাগল কেন?
— —- —-
সমুদ্র ফোনটা রেখে মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়াল। মায়ের সাথে অনেক কথা আছে, অনেক হিসাব মেলানোর আছে।
– “মা আসবো।”
– “আয়।”
সমুদ্র রুমে ঢুকে মা’কে জড়িয়ে ধরল। মা মৃদু হেসে বললেন,
– “কি ব্যাপার এত খাতির কেন?”
– “মা তুমি এত ভালো কেন!”
– “এখন মনমতো হচ্ছে বলে তুমি এত ভালো কেন! আর না হলে মা খারাপ, মা আমাকে বোঝে না তাই না।!”
সমুদ্র কিছু না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। পাশ থেকে ওর বাবা বললেন,
– “মা-ছেলে সবসময়েই ঠিক আছে আর আমি আঁটি মেঝেতেই গড়াগড়ি খাচ্ছি। আহ্ কি দুঃখ। কবে যে বউমা আসবে, একবার বউমা আসুক তারপর শশুর-বউমা মিলে মা ছেলেকে জব্দ করব।”
সমুদ্রের মা ভেংচি কেটে বলল,
– “আমার বউমা আমার দলেই থাকবে।”
সমুদ্রের বাবা ভাব নিয়ে বললেন,
– “সেটা দেখা যাবে।”
সমুদ্র বাবা-মায়ের দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া দেখে মৃদু হাসল। বাবা মায়ের মতো ওরাও একদিন এইরকম ঝগড়া করবে, ওরও একটা মিষ্টি সংসার হবে।
সমুদ্রের মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জমা হয়েছে, তাই আমতা আমতা করে বলল,
– “মা তুমি জানলে কীভাবে রাশি!”
সমুদ্রের মা মৃদু হেসে বললেন,
– “অয়নের এনগেজমেন্টের দিন তোদের কথা বলতে দেখছিলাম, সেইদিন রাশিকে দেখে আমার খুব পছন্দ হয়। অয়নের সাহায্যে ওদের বাড়িতে কথা পাঠায় তারপরেরটা তোর জানা।”
সমুদ্র মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “থ্যাঙ্ক ইউ এন্ড লাভ ইউ মা।”
– “পাগল ছেলে।”
—- ——
রাতে খাবার টেবিলে,
আকাশ দরকারি কাজে বাড়ি ফিরে গেছে কিন্তু খুশি থেকে গেছে। রাশি,খুশি আর ওর একসাথে খেতে বসেছে।খাবার মাঝে রাশির মা বললেন,
– “রাশি তুই হ্যাপি তো!”
রাশি মাথা নাড়ল। ওর মা মেয়ের মুখে হাসি দেখে আগেই বুঝেছিলেন মেয়ের মত আছে আর এখন শিওর হয়ে গেলেন। মনে মনে শান্তি পেলেন, মেয়েটা হ্যাপি থাকলেই ওনার শান্তি।
খুশি খেতে খেতে বলল,
– “জানিস দিদি সমুদ্র’দাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না কোথায় দেখেছি।”
রাশি হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “তোরও চেনা চেনা লাগছে?”
– “হুমম কিন্তু আর কার কার লাগছে?”
– “রিতার।”
– “রিতা’দি আবার কোথায় দেখেছে?”
রাশি সংক্ষেপে সবটা ওদের বলল। সবটা শুনে খুশি হাসতে হাসতে শেষ আর ওর মা দুঃখী দুঃখী ফেস করে বললেন,
– “আহা রে বেচারা ছেলেটার সাথে রিতা কিন্তু এইটা ঠিক করেনি।”
খুশি কোনরকমে হাসি থামিয়ে বলল,
– “রিতা’দি যদি এইরকম না করত তাহলে দিদির সাথে সমুদ্র’দার এত সহজে দেখা হত না।”
খুশির কথাটা রাশি ভাবল, রিতা ঝামেলা না করলেও সমুদ্রের সাথে ওর দেখা হত আর হয়েছেও। সমুদ্র -রাশি’র দেখা ভাগ্যে লেখা ছিল সেটা যেভাবেই হোক হবারই ছিল।
পরেরদিন,
রাশি পছন্দের একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।অফিস শেষে সমুদ্রের সাথে দেখা করতে যাবে, অন্যদিনের তুলনায় আজকে একটু নার্ভাস। কিরকম একটা লজ্জা লজ্জা লাগছে, কই আগে তো এইরকম হয়নি আজ কেন হচ্ছে?
রাশিকে শাড়ি পড়ে বের হতে খুশি বলল,
– “দিদি তুই কি পড়েছিস?”
– “কেন শাড়ি দেখতে পাচ্ছিস না!”
খুশি ভ্রু নাচিয়ে বলল,
– “সেটা তো দেখতে পাচ্ছি কিন্তু শাড়ি পড়ে অফিস,ব্যাপার কি!”
– “ধ্যাত সর তো। মা আমি আসছি, ফিরতে দেরি হবে।”
খুশি শয়তানি করে বলল,
– “দেরি তো হবেই মা তোমার মেয়ে হবু বরের সাথে দেখা করতে যাবে। একটু দোয়া করে দিও।”
রাশি লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। খুশি হাসতে হাসতে মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “মা দেখবে দিদি খুব ভালো থাকবে।”
– “তাই যেন হয়, দোয়া করি রাশি খুব ভালো থাকুক।”
—– —-
সমুদ্র অফিস শেষ করে রাশির সাথে দেখা করার জন্য পার্কে গেল। কিন্তু কোথাও রাশি’কে খুঁজে পেল না। বারবার ফোন করেও ফোনটা বন্ধ আসছে, খুশি’কে ফোন করেও জানল রাশি বাড়ি ফেরেনি। তাহলে রাশি কোথায় গেল!
#চলবে…
#বিবাহ_অভিযান (১২)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
সমুদ্র অফিস শেষ করে রাশির সাথে দেখা করার জন্য পার্কে গেল। কিন্তু কোথাও রাশি’কে খুঁজে পেল না। বারবার ফোন করেও ফোনটা বন্ধ আসছে, খুশি’কে ফোন করেও জানল রাশি বাড়ি ফেরেনি। তাহলে রাশি কোথায় গেল!
সমুদ্র কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে। তখন ওর খেয়াল হয় রিতার কথা কিন্তু ওর কাছে তো রিতার নম্বর নেয় কি করবে! সমুদ্র অয়নকে কল লাগল।
– “হ্যাঁ সমুদ্র বল।”
– “রিতার নম্বরটা আমাকে দে তো।”
– “রিতার নম্বর নিয়ে তুই কি করবি?”
– “আরে দ্যাখ না রাশির সাথে আমার আজ দেখা করার কথা ছিল কিন্তু এখানে এসে রাশিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ফোনটাও বন্ধ, তাই ভাবছিলাম রিতার যদি কিছু জেনে থাকে।”
অয়ন চিন্তিত কন্ঠে বলল,
– “রিতা কিছু জানে বলে আমার মনে হয় না। কিছুক্ষণ আগেই ওর সাথে কথা হল, বিয়ের নেমন্তন্ন দিতে ওরা ওদের মামার বাড়ি গিয়েছে।”
সমুদ্রের চিন্তা আরো বেড়ে গেল। রাশি যদি রিতার কাছেও না থাকে তাহলে কোথায় গেল।
– “সমুদ্র তুই চিন্তা করিস না, আমি এখুনি রিতাকে জিজ্ঞেস করছি তুই একটু হোল্ড কর।”
অয়ন সমুদ্রকে হোল্ড করে রিতার নম্বরে কল দিল। সঙ্গে সঙ্গেই কলটা রিসিভ হলো,
– “কি হলো আবার কল করলে? আমাকে ছাড়া বুঝি থাকতে পারছ না!”
– “রিতা রাশি কোথায়?”
অয়নের কাছ থেকে এইরকম প্রশ্ন শুনে রিতা হকচকিয়ে গেল। অয়ন হঠাৎ করে রাশির খোঁজ করছে কেন? সবকিছু ঠিক আছে তো!
– “রাশি কোথায় আমি কিভাবে জানব! বাড়িতে কিংবা অফিসে?”
– “নাহ কোথাও নেয়। সমুদ্র ওকে খুঁজে চলেছে কিন্তু পাচ্ছে না।”
– “মানে?”
অয়ন সংক্ষেপে রিতাকে সবটা বলল। রিতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়, এইভাবে লুকিয়ে পড়ে মজা করার মতো মেয়ে রাশি না। তাহলে ওহ গেল কোঁথায়? কোন বিপদ হলো না তো!
– “রিতা আমা এখন রাখছি, দেখি সমুদ্র কি করছে আর শোন রাশির খোঁজ পেলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ইনফর্ম করবে।”
– “হুমম তুমিও।”
রিতা ফোনটা কেটে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। মেয়েটা গেল কোথায়!
– “হ্যালো সমুদ্র, রিতা জানে না রাশি কোথায়।”
সমুদ্রের ভয়ের মাত্রা বাড়তে লাগল, অজানা ভয়ে বুকটা বারবার কেঁপে উঠছে রাশি ঠিক আছে তো! সবকিছু ঠিক থাকবে তো!
– “সমুদ্র তুই প্যানিক করিস না, কোথায় আছিস বল আমি এখুনি আসছি।”
সমুদ্র কাঁপা কাঁপা গলায় ঠিকানাটা অয়নকে দিয়ে ফোনটা রেখে বেঞ্চে মাথায় হাত বসে রইল। মাথা ফাঁকা লাগছে, কি করবে, রাশিকে কোথায় খুঁজবে!
অন্যদিকে,
মুখে পানি পড়ায় রাশির জ্ঞান ফিরল, এতটা সময় অজ্ঞান ছিল।মাথা ভারি ভারি লাগছে, নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে নিজের উপস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু বুঝতে পারল না কোথায় আছে!
– “আমি কোথায়?”
কোনো শব্দ পাওয়া গেল না। রাশি উঠে বসার চেষ্টা করল, মনে করতে চাইল এইখানে কিভাবে আসলো!
অফিস থেকে বেড়িয়ে সমুদ্রের সাথে দেখা করার জন্য যাচ্ছিল হুট করেই কেউ পেছন থেকে মুখে রুমাল চেপে ধরে তারপর ওর আর কিছুই মনে নেয়।
– “কেউ কি আছেন? আমাকে এইখানে কেন নিয়ে এসেছেন?”
তখনও কোনো উত্তর পেল না। রাশি বুঝতে পারছে এই ঘরে ওহ ছাড়াও আরো কেউ আছে কিন্তু সে কে? না সে তার পরিচয় দিচ্ছে আর না বলছে রাশিকে তুলে নিয়ে আসার কারন।কি চাইছে লোকটা?
– “দেখুন আমি জানি না আমাকে এইখানে কেন এনেছেন প্লিজ ছেড়ে দিন। কি ক্ষতি করেছি আপনার?”
একটা হাসির শব্দ শোনা গেল। রাশি সামনের মানুষটার অবস্থান খুঁজে চলেছে, অন্ধকারের মধ্যে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। হাসিটা থেমে গেল, ঘরের লাইট’গুলো জ্বলে উঠল। সামনের মানুষটাকে দেখে রাশি অবাক হলো,
– “আপনি? আপনি আমাকে এইখানে এনেছেন কেন?”
— —
অয়ন পার্কে এসে দেখল সমুদ্র বিধ্বংস্ত হয়ে বসে আছে। ছেলেটাকে এইভাবে ভেঙে পড়তে আগে কখনো দেখেনি, বড্ড মায়া হলো ওর জন্য। এগিয়ে এসে কাঁধে হাত রাখতেই সমুদ্র করুন চোখে তাকাল। চোখটা লাল হয়ে আছে, মুখটাও কিরকম শুকনো হয়ে গেছে। ছেলেটার চেহারা বলে দিচ্ছে ওহ রাশিকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই রাশি কোথায় গেল?
– “সমুদ্র রাশিকে পেলি?”
– “নাহ। আমার খুব ভয় লাগছে, মনে হচ্ছে রাশির কোনো বিপদ হয়েছে।”
– “চিন্তা করিস না। চল আমরা রাশির অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখি, যদি ওইখানে কোনো কাজে আটকে যায় তো।”
সমুদ্র তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়াল, টেনশানে এই কথাটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। হতেই তো পারে রাশি অফিসের কাজে আটকে গেছে।
– “চল।”
খুশিকে ফোন করে রাশির অফিসের ঠিকানা নিয়ে অয়ন আর সমুদ্র সেখানে যেতে লাগল কিন্তু আদৌও কি কোনো লাভ হবে?
খুশির ফোনে বারবার কল আসাতে ওর মা কিছু একটা সন্দেহ করলেন। তার উপর মায়ের মন, সন্তানের কিছু হলে সেই আগে সব’টা বুঝতে পারে।
– “কিরে খুশি কি হয়েছে? বারবার কে ফোন করছে?”
খুশি ধরা পড়ার ভয়ে আমতা আমতা করে বলল,
– “কই না তো।আমার রান্না পুড়ে গেল আমি গেলাম।”
খুশি একপ্রকার পালিয়ে বাঁচল কিন্তু মায়ের মন অশান্ত থেকে গেল। খুশি এড়িয়ে যাওয়া’তে ওনার সন্দেহ আরো কিছুটা বেড়ে গেল।কিছু তো একটা হয়েছে, কিন্তু কি সেটা?
রাশির অফিসের দারোয়ান’কে অয়ন জিজ্ঞেস করল,
– “এইখানে রাশি বলে কেউ জব করে?”
– “হ্যাঁ রাশি ম্যাডাম এইখানেই জব করে, কিন্তু আপনারা কারা আর ওনার খোঁজ করছেন কেন?”
– “আমরা রাশির ফ্রেন্ড, তা রাশি কি অফিসে আছে না চলে গেছে?”
– “অফিস টাইম তো শেষ। আর রাশি ম্যাডাম তো অনেক আগেই চলে গেছেন।”
অয়ন সমুদ্রের ফ্যাকাশে মুখটার দিকে তাকাল। যেটুকু আশা নিয়ে এসেছিল সেটাও নিভে গেল। দুজন হতাশ হয়ে ফিরে যেতে লাগল,
– “অয়ন আমার মনে হই না আর দেরি করা ঠিক হবে, আমার মন বলছে রাশির কোনো বিপদ হয়েছে। পুলিশ স্টেশন চল।”
– “কিন্তু সমুদ্র ২৪ঘন্টার আগে তো কোনো মিসিং ডায়রি করা যাবে না।”
– “আমি কিছু জানি না, চল।”
তখনি খুশির কল আসলো,
– “সমুদ্র’দা দিদির কোনো খোঁজ পেলে?”
– “নাহ্। আমরা পুলিশ স্টেশন যাচ্ছি, দেখি কি করা যায়।”
– “আমি আকাশ’কে বলেছি ওহ যাচ্ছে।”
– “ঠিকাছে।”
খুশি ফোনটা রেখে পেছন ফিরতেই দেখল মা দাঁড়িয়ে আছে। খুশি থতমত খেয়ে যায়,
– “মা তুমি?”
– “সত্যি করে বল কি হয়েছে?”
খুশি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না। মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল, ওর মা আরো অধৈর্য হয়ে উঠেছে।
– “কি হলো কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে বল, সবকিছু ঠিক আছে তো!”
– “মা দিদিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
খুশির মা অনুভূতিহীন হয়ে পড়ল।খুশিকে নিজের বুক থেকে তুলে বললেন,
– “খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি? কোথায় আমার রাশি!”
– “জানি না।”
খুশি মাকে সবটা বলল। খুশির মা এক পা পিছিয়ে গেলেন, মেয়েটা কোথায় গেল।
—- —-
– “আপনি, কেন আমাকে এনেছেন? কি চাইছেন আপনি!”
রাশির কথা শুনে সোহান মুচকি হেসে বলল,
– “কি চাই! প্রশ্নটা তুমি অনেকবার করেছ, উত্তরটা এইবার দেওয়া উচিত কি বলো!”
– “ফাজলামি না করে আমাকে ছাড়ুন আমি বাড়ি ফিরব।”
– “বাড়ি তো ফিরবে তবে আমার ইচ্ছামতো।”
– “কেন করছেন এইরকম?”
সোহান কিছুটা ভাবুক হলো, তারপর বলল,
– “কেন করছি বলো তো!”
রাশির প্রচন্ড রাগ লাগছে, ইচ্ছা করছে সোহানের মাথাটা ফাঁটিয়ে দিতে কিন্তু শরীরটা প্রচন্ড দূর্বল লাগছে আর ওর পক্ষে সোহানের সাথে লড়াই করা সম্ভব না। কিভাবে এইখান থেকে বের হবে!
– “দেখুন আপনার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। কেন শুধু শুধু আমাকে তুলে নিয়ে এসেছেন?”
– “কে বলল শত্রুতা নেই? অনেক শত্রুতা আছে।”
কথাটা বলার সময়ে সোহানের গলার স্বরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। রাশি কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
– “আমার সাথে আপনার আবার কিসের শত্রুতা?”
#চলবে….