#বিবাহ_অভিযান (১৪)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
– “কিরে রাশির খোঁজ পেলি?”
বাবার কথায় সমুদ্র মাথা তুলে তাকাল, চোখ গুলো ভয়ংকর লাল হয়ে আছে। সমুদ্রের মা ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে ছেলের পাশে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। সমুদ্রের এইটারই দরকার ছিল, মায়ের স্নেহের হাতটা পাবার পরেই কষ্টগুলো আরো তাজা হয়ে উঠল, মায়ের কোলে মুখ গুঁজল। সমুদ্রের মা বাবা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল, এই কিছুটা সময়ে তাদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি সমুদ্র রাশির প্রতি ঠিক কতটা দূর্বল হয়ে পড়েছে। মেয়েটার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে নাহ কোথায় আছে সেটাও কেউ জানে না। অজানা ভয়ে ওনাদের গলা শুকিয়ে আসছে। যদি কোনো বিপদ হয় তখন যে সমুদ্রকে সামলানো কষ্টকর হয়ে যাবে।
অয়ন সমুদ্রের রুমে ফ্রেশ হতে গেছে অফিস থেকে ফিরেই সমুদ্রের সাথে দৌড়েদৌড়ি করেছে। সমুদ্রকে হাজার বার বলেও ফ্রেশ হতে রাজি করাতে পারেনি শেষে বাধ্য হয়ে নিজেই ফ্রেশ হতে গেছে।
— — —
সোহান রাশির মুখের কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলল,
– “চলো।”
– “কোথায়?”
– “তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।”
রাশি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– “সত্যি ফিরিয়ে দিয়ে আসবেন?”
– “হুমম। সবকিছুর জন্য সরি। আসলে আমি আবেগের বর্শবতী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম। যা কিছু হয়েছে তাতে তোমার তো কিছু দোষ নেয়, আমি শুধু শুধু তোমার বদনাম করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলাম পারলে আমাকে মাফ করে দিও।”
রাশি মৃদু হেসে বলল,
– “নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক বড়ো কিছু। অযথা অন্যের কথা ভেবে নিজের সুন্দর লাইফ’টা নষ্ট করবেন না, নিজেকে নিয়ে ভাবুন নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে ভাবুন। নতুন করে সবকিছু শুরু করবেন কেমন।”
– “হুমম, চলুন।”
সোহান রাশিকে বাইরে এনে নিজের বাইক নিয়ে এসে বলল,
– “উঠে আসুন।”
– “বাইকে যাবো?”
– “হুমম কেন কোনো অসুবিধা!”
– “নাহ তেমন কিছুই না। চলুন।”
রাশি বাইকে উঠে বসল। সোহান বাইক চালাতে শুরু করল।একা বসে থাকতে বোরিং লাগছে তাই রাশি জিজ্ঞেস করল,
– “আপনার ওয়াইফের নাম কি?”
– “মিষ্টি।”
– “বাহ্ মিষ্টি নাম। তা কবে তাকে বাড়ির বউ করে নিয়ে আসবেন?”
– “হুমম খুব শীঘ্রই।”
– “আপনার বোন কি করছে?”
– “বোন পড়াশোনা করছে।”
– “বোনেরও তো বিয়ে দিতে হবে?”
– “হুমম পড়াশোনা শেষ করুক তারপর দেব। তবে ওহ বিয়ে করতে চায় না, বলে কোনদিন বিয়ে করবে না।”
– “কেন?”
– “ওর নাকি বিয়ে-টিয়ে ভালো লাগে না।”
রাশি মৃদু হেসে বলল,
– “চিন্তা করবেন না। জীবনে সঠিক মানুষ আসলে সব কিছুই রঙিন লাগবে। আপনার বোনের জীবনে সঠিক মানুষ আসলে ওহ নিজেই বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে যাবে।”
সোহান মজা করে বলল,
– “ঠিক আপনার মতো তাই তো!”
রাশি কিছুটা লজ্জা পেল, সোহান এইভাবে সত্যিটা বলে দেবে সেটা বুঝতে পারেনি। সোহান রাশির চুপ করে যাওয়া দেখে বলল,
– “মজা করলাম, কিছু করো না।”
– “আরে না না ঠিক আছে।”
– “ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলেছেন তাই না?”
রাশি কিছু উত্তর দিল না। সমুদ্রের প্রতি কখন কিভাবে এতটা দূর্বল হয়ে পড়ল বুঝতেই পারেনি। আচ্ছা ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে সমুদ্র কি চিন্তা করছে? আজকে তো ওদের দেখা করার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই তো রাশি গায়েব হয়ে গেল। সমুদ্র এখন কি করছে? রাশিকে খোঁজাখুঁজি করছে নাকি নিশ্চিতে বাড়ি গিয়ে রেস্ট নিচ্ছে।
এইসব ভাবনার মাঝে রাশির খেয়াল পড়ল বাইকটা ওর বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তায় যাচ্ছে।সোহান ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে? রাশি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– “কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
– “যেখানে নিয়ে যাবার দরকার সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি, একটুখানি বিশ্বাস করে বসুন।”
রাশি আর কিছু বলল না, সোহানকে অবিশ্বাস করার মতো কিছুই দেখছে না। রাশি চুপচাপ বসে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগল। হঠাৎ একটা আলো তারপরেই…..
রাশির মা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে, ওনাকে কিছুতেই সামলাতে পারা যাচ্ছে না।
– “মা মা শান্ত হও দিদির কিছু হয়নি।”
রাশির মা অধৈর্য হয়ে বললেন,
– “আমার মন বলছে আমার রাশির কোনো বড়ো বিপদ হয়েছে, মায়ের মন ভুল বলতে পারে না। তুই একটাবার সমুদ্রকে ফোন করে খোঁজ নে না রাশির খোঁজ পেল নাকি।”
খুশি মাকে সামলাতে সামলাতে বলল,
– “মা শান্ত হও। সমুদ্র’দা তো দিদির খোঁজ করছে, ওরা খোঁজ পেলেই আমাকে জানাবে তুমি চিন্তা করো না।”
রাশির মা কিছুতেই শান্ত হতে পারলেন না, এদিক সেদিক করতে লাগলেন।
—- —–
অয়ন ফ্রেশ হয়ে সেইমাত্র ফোনটা হাতে নিয়েছে, সেই সময়েই ফোনটা বেজে উঠল। রিতার নম্বর থেকে কল এসেছে, অয়ন ভাবল রাশির খোঁজ নেবার জন্য হয়তো রিতা ফোন করেছে তাই কলটা রিসিভ করল।
– “হ্যালো, বলো।”
ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। অয়ন থতমত খেয়ে গেল, রিতাকে সামলানোর জন্য বলল,
– “রিতা কান্না থামাও, রাশির কিছু হবে না। আমরা ঠিক ওর খোঁজ পেয়ে যাবো।”
রিতা হেঁচকি তুলে তুলে বলল,
– “রাশি রাশির এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
অয়ন চমকে উঠল। রাশির এক্সিডেন্ট হয়েছে মানে কি? আর রিতা সেটা কিভাবে জানল!
– “রাশি এক্সিডেন্ট করেছে কোথায়? আর তুমি এইটা কীভাবে জানলে?”
– “আমি কিছু জানি না, আমার কাছে এখুনি কল এসেছিল একজন বলল রাশির এক্সিডেন্ট হয়েছে, হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে। আমি তো এতদূর থেকে যেতে পারব না, তুমি প্লিজ একটু যাও না।”
– “ওকে আমি এখুনি যাচ্ছি। তুমি হসপিটালের ঠিকানাটা দাও।”
রিতা হসপিটালের ঠিকানা বলে কলটা কেটে দিল। অয়ন গায়ে জামা জড়িয়ে বসার ঘরে এসে দেখল সমুদ্র মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, অয়নের ওকে ডাকতে ইচ্ছা করল না। কিন্তু কিছু করার নেয় এখন ডাকতেই হবে।
– “সমুদ্র চল।”
সমুদ্র ও ওর বাবা মা অয়নের দিকে তাকাল। অয়ন কিছুটা থতমত খেয়ে গেল। সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “কোথায় যাবো?”
অয়ন সত্যিটা বলতে গিয়েও আটকে গেল, এমনিতেই সমুদ্র অনেকটা ভেঙে পড়েছে এখন ওকে সত্যিটা বললে আরো ভেঙে পড়বে তাই এখন না বলাই ভালো।
– “কি রে বল?”
– “রাশির খোঁজ পেয়েছি, চল তাড়াতাড়ি।”
সমুদ্র তড়িঘড়ি উঠে বসল।অয়নকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল, সমুদ্রের মা বাবা নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলেন।
—- —-
সমুদ্র বের হবার সময়ে বাইক নিয়ে বের হয়েছে, এত রাতে অন্য গাড়ি পাওয়া খুব একটা সহজ হবে না। তাই তার থেকে বেটার হবে বাইক নিয়ে যাওয়া।
– “সমুদ্র আমাকে দে আমি চালাচ্ছি।”
– “কেন? আমি ঠিক আছি।”
– “আরে দে না।”
অয়ন জোর করে বাইক নিজে চালাতে শুরু করে। সমুদ্র বাধ্য হয়েই পেছনে বসে। বাইক চলতে শুরু করে…
হসপিটালের সামনে বাইক থামাতে সমুদ্র চমকে উঠল, অজানা ভয়ে মনটা কেঁপে উঠছে।রাশি ঠিক আছে তো!
– “এই অয়ন তুই এইখানে আনলি তো? রাশি ঠিক আছে তো!”
– “ভেতরে চল।”
– “আগে বল কি হয়েছে।”
– “চল…
অয়ন সমুদ্র’কে টেনে ভেতরে নিয়ে গেল। রিসেপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “রাশি নামে একজন কিছুক্ষণ আগে এসেছে, সে কত নম্বরে আছে।”
– “৩০২ নং কেবিনে, দোতলায় উঠে ডানদিকে।”
অয়ন সমুদ্রকে নিয়ে যেতে লাগল। রাশি ভর্তি হয়েছে শুনেই ওহ ভেঙে পড়েছে।সমুদ্রের মনে ভয় জমতে শুরু করেছে, রাশি ঠিক আছে তো!
– “এই অয়ন রাশির কি হয়েছে? রাশি ঠিক আছে তো।”
– “সব ঠিক আছে। তুই একটু শান্ত হও, নাহলে প্রবলেম হবে।”
– “হুমম।”
অয়ন দোতলায় উঠে ৩০২নং কেবিনের সামনে গিয়ে উঁকি মারল।রাশি পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, মাথায় ও হাতেও ব্যান্ডেজ করা আছে। অয়ন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলল, ছেলেটা আবার না প্যানিক করতে শুরু করে।
– “সমুদ্র ভেতরে চল।”
– “রাশি ঠিক আছে তো?”
– “হুমম ঠিক আছে।”
অয়ন সমুদ্রকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। রাশিকে এইরকম অবস্থায় দেখে সমুদ্র চিন্তিত কন্ঠে ওর দিকে এগিয়ে গেল।
– “রাশি ইউ ওকে? তুমি ঠিক আছো? এইসব কিভাবে হলো?”
রাশি চোখ মেলে তাকাল না, এটা দেখে সমুদ্র প্যানিক করতে লাগল। অয়নকে বলল,
– “এই অয়ন রাশি কথা বলছে না কেন? রাশি ঠিক আছে তো!”
#চলবে….