বিরোধীদলীয় প্রেম পর্ব-০৬

0
135

বিরোধীদলীয় প্রেম
পর্ব – ৬
আফরোজা আক্তার
[দয়া করে কেউ কপি করবেন না]

রাহেলা চিন্তিত মনে মাহার পাশে বসে আছে। ঘর ভর্তি আত্মীয় স্বজনরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। সা’দের সঙ্গে সবাই খুব একটা কথা বলে না। কথা না বলার কারণ হচ্ছে ভয়। সা’দকে প্রচন্ড ভয় পায় তার কাজিনরা। ওর পেছনে পেছনে ওকে নিয়ে হাসাহাসি মাতামাতি করতে সবাই ওস্তাদ। কিন্তু সামনে আসলেই সবার হাওয়া টাইট। সা’দের মামা এগিয়ে আসেন।
‘তোমার হাতটা তো অনেকখানি কেটে গেছে সা’দ। ডক্টর রহমান যখন এসেছেন, হাতটা ড্রেসিং করিয়ে নাও।’
‘আমি ঠিকাছি মামা। এত উত্তেজিত হবার মতো কিছু হয়নি।’
ডক্টর রহমান আর জাফর ইসলামের বন্ধুত্বের বিশালতা সবাই জানেন। একই সাথে ছোটো থেকে বড় হয়েছেন। একই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। সব এক থাকলেও দু’জন নিজেদের পেশায় ভিন্নতা খুঁজে নিয়েছেন। জাফর ইসলাম ব্যবসায়ী হলেন আর তিনি হলেন ডাক্তার। রাহেলার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘এমন হলো কীভাবে?’
রাহেলা জবাব দেন, ‘আমরা তো সবাই নিচে ছিলাম। সা’দ ঘরেই ছিল। সা’দ-ই আমাদের ডাকল। রহমান ভাই, কী হয়েছে ওর?’
‘প্রেশার ফল করেছে। প্রচন্ড স্ট্রেসের কারণে এমন হয় অনেক সময়। ঘুমও কম হয় মনে হয়। অবশ্য সেটা তো সা’দ-ই বলতে পারবে।’
ডক্টর রহমান অত্যন্ত মজার ছলেই কথাটা বলেছেন যার ফলে সেখানে উপস্থিত সবাই হেসে ফেলে। এই মজাটা অবশ্য সা’দের পছন্দ হয়নি। ডক্টর রহমান আবারও বললেন, ‘সমস্যা নাই। মেডিসিন লিখে দিলাম। নিয়মিত খাওয়াবেন। ঠিক হয়ে যাবে।’
রাহেলা প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিচে গেলেন। অচিরেই ঘর ফাঁকা হয়ে গেল। ডক্টর রহমান সা’দকে লাউঞ্জে বসেছেন। সা’দের হাতটা ড্রেসিং করতে করতে বললেন, ‘তোমার বউয়ের নাম যেন কী সা’দ?’
‘মাহা।’
‘মাহা। নাইস নেম। সা’দ, দেখে যা বুঝলাম মাহার কিন্তু লো প্রেশার। স্ট্রেস দেওয়া যাবে না একদম। দেখলে তো, স্ট্রেস দিয়েছ আর বেহুশ হয়ে গেছে। আর হাত এতটা ফাটল কীভাবে?’
‘আংকেল, বাইক নিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম।’
‘রাস্তায় পড়ে গিয়ে ঠোঁটেও ব্যথা পেয়েছ নাকি? সা’দ, উঠতি বয়স তো, রক্ত গরম হবেই। সেই গরম রক্তকে আগুন হতে দেবে না। নয়তো তোমার জন্যই ক্ষতি। এনিওয়ে, টেক কেয়ার অফ ইউর ওয়াইফ। ওকে।’
ডক্টর রহমান সা’দের হাতে ব্যান্ডেজ করে উঠে পড়েন। তখনই সা’দ বলল, ‘আংকেল, একটা কথা ছিল।’
ডক্টর রহমান সা’দের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলে, ‘ডোন্টওরি, জাফর কিছুই জানবে না। তবে বেশিদিন লুকাতেও পারবে না। বি কেয়ারফুল সা’দ।’

★★

আজ আর বাড়ির বাইরে যায়নি সা’দ। শাওয়ার নিয়ে খেয়ে শুয়েছিল কিছুক্ষণ। হাতটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। মাহা সা’দকে শুয়ে থাকতে দেখে সোফায় বসে থাকে। সকালের পর বাড়িতে কারো সঙ্গে কথা হয়নি মাহার। বারান্দায় গিয়ে মা’কে ফোন দেয়।
‘কেমন আছো মা?’
‘এইতো ভালো। তুই কেমন আছিস, জামাই কেমন আছে?’
‘সবাই ভালো আছি। বাবা কোথায়?’
‘তোর বাবা একটু বাইরে গেছে। মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পেরেছেন, এখন তার ছাড়া হাত-পা।’
ভালো মন্দ আরও কিছুক্ষণ কথা বলে মাহা ফোন রাখে। রাহেলা বেগমের কড়া আদেশ, তিনি বলা না পর্যন্ত সে নিচে নামবে না। আজকের দিনে তো একদমই না। জাফর সাহেব এসে ছেলের বউয়ের সঙ্গে দেখা করে গেছেন। আগামীকাল তাদের বড় ছেলে, বড় বউ আসবেন। মাহা কখনও তাদের সামনাসামনি দেখেনি। ছবিতে পিচ্চিদের দেখেছে। সোফায় এসে পুনরায় বসে। সা’দ তখনও ঘুমে। পুরো ঘর অন্ধকার। আলো ইচ্ছে করেই জ্বালায়নি মাহা। তার চোখে বারংবার কেবল একই দৃশ্য ভেসে উঠছে। সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না কাটা হাতটা দিয়ে দেওয়ালে আঘাত করেছে সা’দ। আর গড় গড় করে রক্তগুলো গড়িয়ে পড়া শুরু করল। কী বিভৎস দৃশ্য। ভাবলেই শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। তেষ্টায় গলা বসে যেতে লাগল মাহার। সে জগ থেকে পানি ঢালছিল এমন সময় ঘরের লাইট জ্বলে ওঠে। হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠায় মাহা চোখে হাত দেয় আর তার হাত কেঁপে ওঠে। সা’দ মাহাকে দেখে অবাক হয়নি। সে ওয়াসরুমে ঢুকে যায়। মাহা পানি খেয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে যাতে সা’দকে চোখের সামনে দেখতে না হয়।
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর সা’দ ফোন টিপছে। মাহার ফেসবুক আইডিটা সামনে পড়তেই সে স্ক্রল করা শুরু করে। সেখানে মাহার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল দেখে তার মেজাজ গরম হয়। আজকে এক সপ্তাহ হয়ে গেছে তাদের বিয়ের অথচ সে এখনও রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করেনি। সা’দ বারান্দায় যায়৷ মাহার পাশে গিয়ে বসে।
‘তোমার ফোনটা দাও।’
মাহা বেশ অবাক হয়।
‘কেন?’
‘আমি বলেছি তাই।’
‘ফোন হচ্ছে ব্যক্তিগত জিনিস। সবার জীভনেই প্রাইভেসি আছে। আরেকজনের ফোন হাতে নেওয়া কেমন অভ্যাস?’
‘চুপচাপ ফোনটা দাও। নয়তো ফোনটা আর তোমার সাথে থাকবে না।’
‘কী করবে তুমি, হ্যাঁ?’
‘গুড়ো গুড়ো করে ফেলব। তুমি এখনও আমাকে চিনতে পারোনি। প্রাইভেসি কী আবার? তুমি আমার স্ত্রী। আমার কাছে কীসের প্রাইভেসি? আর তোমার কাছেই বা আমার কীসের প্রাইভেসি?’
‘অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করতেছ তুমি।’
‘বাড়াবাড়ির কিছুই দেখনি এখনও। ফোনটা দাও। আরেকটা কথা মন দিতে শোনো, আমি তোমার প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করছি না।’
পরে সা’দ নিজেই মাহার ফোন নেয়। নিজেই ওর আইডিতে যায়৷ সেখানে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ম্যারেড লিখে সেভ করে। নিজের ফ্রেন্ডলিস্টে মাহার আইডি অ্যাড করে। এরপর মাহার ফোন মাহাকে দিয়ে দেয়।
‘বিয়ে হয়েছে এক সপ্তাহের বেশি হবে। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল দিয়ে রাখছ। কিছু বুঝি না ভাবছ! এতটা বোকা আমি না। আর আমাকে তুমি তোমার লিস্টে রাখো নাই। তাই লিস্টেও অ্যাড করে দিলাম। আমি এতটাও খারাপ নই মাহা, যে তুমি আমাকে এইভাবে ইগ্নোর করতে থাকবে।’
সা’দ ভেতরে চলে গেলে মাহা বিড়বিড় করে বলে, এই লোক মনে হয় পাগল হয়ে গেছে। অতি দ্রুতই একে পাগলাগারদে ভর্তি করাতে হবে। জোর করে কাউকে নিজের জীবনে আঁটকে রাখা যায় না এটা সে বোঝে না। নাকি বুঝেও বুঝতে চায় না৷

চলমান…………