বিরোধীদলীয় প্রেম পর্ব-০৭

0
125

বিরোধীদলীয় প্রেম
পর্ব – ৭
আফরোজা আক্তার
[দয়া করে কেউ কপি করবেন না]

নওমি বাড়ি ফিরে সব কাজ নিজ হাতেই করতে শুরু করে। আসার পর প্রথমেই মাহার সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষ করে তারপর চুটিয়ে গল্প করে। এতদিনে মাহার মনে হলো, এই বাড়িতে এমন কেউ আছে যার সঙ্গে প্রাণ খুলে মনের কথা বলা যাবে। সায়েমকে অবশ্য সেভাবে ছোটো ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল না। সে-ও নিজের সম্মান বজায় রেখেই চলছে। মাহাও সায়েমকে বড়ো ভাইয়ের আসনে বসিয়েছে। নওমি-সায়েম দম্পতির দুই সন্তান। মেয়ে সিমরান ক্লাস ফোর ছেলে নওফিল ক্লাস টু৷ দু’জনেরই কাকীমাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। ওরা আসবে বলে ওদের জন্য মাহা মামাতো দেবরের মাধ্যমে কিছু গিফট আনিয়ে রেখেছিল। সেগুলো পেয়ে দু’জনেই বেজায় খুশি।
বাগানের দক্ষিণ পাশে বসার জায়গায় সা’দকে দেখতে পায় সায়েম। ছোটো ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসে সে। সা’দ ছোটো থেকে নির্ভয় প্রকৃতির মানুষ। বড়ো ভাইয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছে। সায়েমের দিক থেকেও তেমন শাসন করার প্রবৃত্তি ছিল না। সায়েমকে দেখে হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে দিল সা’দ। এই দৃশ্য দেখে সায়েম হালকা হেসে বলল, ‘আমার সামনে টানলে সমস্যা কোথায়?’
‘হাজার হোক, তুমি আমার ভাই। বড়ো ভাই। তোমার সামনে সিগারেট টানা বেমানান।’
‘আমার অগোচরে তো ঠিকই টানিস।’
‘তুমিও আমার অগোচরে কম স্মোকিং করো না। তাই বলে আমি কখনও আমার সামনে তোমাকে সিগারেটে আগুন ধরাতে দেখিনি।’
ছোটো ভাইয়ের কথায় লজ্জা পায় সায়েম। সে যে স্মোকিং করে সেটা সা’দ জানে। তবুও নিজেকে উচ্চতায় রেখে সায়েম বলল, ‘আমার সামনে কয়েকবার সিগারেট হাতে ধরা পড়লি। আমি তো আর পড়ি নাই তোর সামনে।’
‘তা ঠিক। এটা আমার দুর্ভাগ্য আর ওটা তোমার সৌভাগ্য।’
‘মেয়েটাকে অবশেষে বিয়ে করেই ছাড়লি।’
‘বলেছিলাম না, এই মেয়েকে আমি সারাজীবনের জন্য আমার চোখের সামনে রাখার ব্যবস্থা করব।’
‘আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারতি।’
‘সময় ছিল না।’
‘রাফির কাছে সব শুনেছি আমি। ফিরোজের সাথে মারামারি করলি কেন? বাবাকে তো চিনিস তুই। তার কানে গেলে কী হবে, ভাবতে পারছিস।’
‘ভাইয়া প্লিজ, বাবার ভয় আমাকে দেখিও না তো। গিয়ে দেখ, তোমার বাবা আমাকে ভয় পায়। আর তাছাড়া ফিরোজের সাথে ঝামেলায় যেতেই চাই না আমি। তবে ও আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসলে মেরে গুম করে দিতে আমার এতটুকুও হাত কাঁপবে না।’
‘তোর মধ্যে এত জেদ কোথা থেকে আসল, আল্লাহ পাক-ই জানে।’
‘বাদ দাও। তোমার বউ কোথায়? এসেই তো কাজে লেগে গেছে শুনলাম।’
‘তোর সাথে দেখা হয়নি, তোকে ধোঁলাই করবে।’
‘ভাইয়া, তোমার বউ আমাকে দেখলেই জ্ঞান দেয়। এইটাই ভালো লাগে না। চ্যাম্প কোথায়?’
বড়ো ভাইয়ের একমাত্র ছেলে নওফিল। সা’দ নিজের থেকেও ওদের বেশি ভালোবাসে। নওফিলের ব্রেইন প্রচন্ড ভালো। সব কিছুতেই সে এগিয়ে। আদর করে ভালোবেসে সা’দ তাকে চ্যাম্প বলে ডাকে। নওফিলও চাচ্চুকে ভীষণ ভালোবাসে। নিজের সমস্ত আবদার তার চাচ্চুর কাছে।
‘তোর বউয়ের ফ্যান হয়ে গেছে।’
‘ভালো।’
সা’দকে চুপচাপ দেখে সায়েম বলে, ‘এক সপ্তাহের বেশি হলো বিয়ে হয়েছে। মাহার দিক থেকে সব পজিটিভ আছে তো?’
সা’দ কিছুই লুকায়নি ভাইয়ের কাছে।
‘নাহ। সবই নেগেটিভ। যার ভেতর প্রথম থেকেই নেগেটিভিটি আছে তাকে পজিটিভ করব কীভাবে?’
‘এইভাবে বিয়েটা না করলেও পারতি। ক্ষতি তো উভয়েরই হচ্ছে। ক্ষতি মাহারও হচ্ছে, ক্ষতি তোরও হচ্ছে।’
‘এইসব নিয়ে ভাবছি না ভাইয়া। মেয়েটাকে ভালোবেসে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মে বি আমিই হয়েছি।’
‘তাহলে ভালোবাসলি কেন?’
‘ভালো তো তুমিও বেসেছ। ভাবী তো অগ্রাহ্য করেনি। তুমি নিশ্চয়ই বোঝো ভালোবাসার মর্ম।’
সায়েম আর কিছু বলেনি। অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়।
‘হাতের ব্যথা কেমন এখন?’
‘নাড়তে কষ্ট হয়। এছাড়া আর কিছুই না।’
‘আমাদের রিসিভ করতে যেতে পারতি। তোর ভাবী বলছিল, তুই নাকি বউ পেয়ে আমাদের ভুলে গেছিস।’
‘ভাবীকে বোলো, তার দেবরের এখনও সেই সৌভাগ্য হয়নি যে বউয়ের ভালোবাসায় সবাইকে ভুলে যাবে।’
‘এই শুক্রবার তোদের রিসিপশন। বাবা দেখলাম অনেককেই ইনভাইট করেছেন।’
‘হ্যাঁ। ওইদিকটা তুমি সামলে নিও।’
সা’দ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। সায়েম সেখানেই বসে থাকে। আশেপাশে তাকিয়ে পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট মুখে দেয়। তারপর আগুন জ্বালায়।

★★

নাইটি পরে বারান্দায় গিয়ে সায়েমের পাশে দাঁড়ায় নওমি। সায়েমকে সিগারেট টানতে দেখে চিন্তিত নওমি প্রশ্ন করে, ‘সায়েম, কী হয়েছে? এত সিগারেট টানছ আজকে।’
‘কিছু হয়নি। তবে হতে বেশি দিন নাই।’
‘মানে, বুঝলাম না।’
‘মাহার সঙ্গে তো অনেকক্ষণ কথা বললে। কী বুঝলে? মেয়েটা কেমন?’
‘বেশ ভালো। দারুণ মেয়ে। খুব মিশুক।’
‘দারুণ মেয়ে বলা চলে না। তোমার মতো দারুণ কেউ না।’
‘আশ্চর্য! আমার সঙ্গে তার তুলনা কেন?’
‘এই যে তুমি, আমাকে কত ভালোবাসো। সবাই নিজের বরকে এত ভালোবাসে না।’
‘কি যা তা বলছ বলো তো সায়েম। আমি আমার মতো করে তোমাকে ভালোবাসি। মাহা তার মতো করে সা’দকে ভালোবাসবে।’
‘উহু। বাসবে না। মাহা কোনোদিনই সা’দকে ভালোবাসবে না।’
কথাটা শুনে নওমি চমকে যায়।
‘এই কথা বললা কেন সায়েম?’
সায়েম সব খুলে বলে নওমিকে। সে যা যা জানত সবই বলে। এইবার নওমি নিজেই চিন্তায় পড়ে যায়। বারান্দার এক পাশে রাখা বেতের সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে। সায়েমও নওমির পাশে বসে। বলে, ‘সা’দের জেদের জন্য দুটো জীবন নষ্ট। এক সা’দ, দুই মাহা।’
নওমি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না বললেও পরে বলল, ‘একত্রে থাকতে থাকতে ভালোবাসা হয়েই যাবে সায়েম। চিন্তা কোরো না। চলো, শোবে চলো।’
নওমি উঠে যেতেই সায়েম পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দেয় নওমিকে। সায়েমের এমন হুটহাট তাকে কোলে নেওয়াটা খুব ভালো লাগে। দুই বাচ্চার বাবা হয়েও তার ভালোবাসায় একটুও ঘাটতি পড়েনি। বরং দিন দিন এই ভালোবাসা বেড়েই চলছে। লাইট অফ করে নওমির পাশেই শুয়ে পড়ে সায়েম। ডান হাতে নওমির নাইটির ফিতা খোলে। এসির ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়ায় নওমির শিরশিরে ঠোঁটে নিজের ঠোঁটের ছাপ ফেলে সায়েম। শুষে নেয় নওমির সমস্ত ক্লান্তি। নওমিও সুখের জলে ডুব দেয়।

চলমান………………..