বিষাদময় জীবন পর্ব-০১

0
489

#পর্ব১
#বিষাদময়_জীবন
#অধরা_ইসলাম

বিবাহের দুই বছরের ভেতর যখন আমি প্রেগন্যান্ট হই তার কিছুদিন পর জানতে পারি আমার স্বামীর পর’কী’য়া’র কথা, আর হ্যাঁ এখন আমি সাত মাসের প্রে’গন্যা’ন্ট আর আজকেই আমার স্বামী দিত্বীয় বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে বাড়িতে!

যেদিন এসব জানি সেদিন যেনো পা’য়ের নিচ থেকে মাটি স’রে গেছিলো এরকম অবস্থা! আর আজকে তো একেবারে সোজা বিয়ে করে নিয়ে এসছে। ডাইনিং টেবিলে খাবার খাচ্ছিলাম দুপুরবেলা ঠিক তখুনি কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই বের হই আর দেখি নিরব দাঁড়িয়ে আছে পাশে যুবতী একটা মেয়েকে নিয়ে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটির বয়স বেশি না হয়তো কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী হবে মেয়েটি। আবেগের বশে যে কি করেছে সেটা হয়তো মেয়েটির বোধ হবে আরো কিছুদিন পর! এক পলক নিরবের দিকে তাকালাম সে ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলো…..

—-“শোনো মায়া এই হচ্ছে আমার স্ত্রী ওর সঙ্গে মানিয়ে থাকবে বুঝলে? কিচ্ছু করবে না একদম চুপচাপ থাকবে।”

আমি নিরবের কথা শুনে বাকরুদ্ধ প্রায় বলতে গেলে! অশ্রুও নেই বোধহয় কান্নাও পাচ্ছে না আমার। পাবেই বা কেনো? আমি তো জানতামই এমন হবে তবুও বুকে পা’থরসম কষ্টের পরিমান হয়েছে যা আমি উপলব্ধি করতে পারছি কিন্তু প্রকাশ হচ্ছে না! হয়তো অতি কষ্টে পাথর হয়ে গেছি এরকম অবস্থা হয়ে গেছে আমার। বাড়িতে আমার ননদ আর শশুড় মশাই ছাড়া কেউ নেই, শাশুড়ী মা মারা যাবার পর থেকেই নিরবের এরকম অবস্থা। ভাগ্যের কি নি’ষ্ঠুর’ পরি’হা’স আমার শাশুড়ী মায়ের কতো ইচ্ছে ছিলো সে তার নাতি নাতনীর সঙ্গে সময় পার করবে আর আল্লাহ তায়ালা এর আগেই উনার ডাক পাঠিয়ে দিলেন নিজের কাছে। উনি যাবার দুই মাস পরে জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট, আর আমার প্রেগন্যান্সির তিন মাস বয়সের সময় আস্তে আস্তে নিরবকে পাল্টে যেতে দেখে, কোনো কথা বলতো না আমার সঙ্গে প্রয়জোন ছাড়া, আর না আগের মতন ভালোবাসতো কেমন৷ একটা করতো কিন্তু কেনো করতো তা আমিও নিজেও বুঝতাম না তখন। একটা রা*গী ভা’ব নিয়ে থাকতো ও সবসময় ওর ফোনটাও ধরতে দিতো না। কিন্তু কথায় আছে না? সত্যি টা বোধহয় বেশিদিন লুকোনো থাকে না সে জন্য একদিন ওর ফোনে এাকটা ম্যাসেজ দেখি সেখানে লেখা ছিলো….…..

-_”তোমার জন্য কালকে বিকেলে পার্কের কাছের হোটেলটাতে অপেক্ষা করবো। ওখানে তো আগে কতোবারই গেছি বলো? বেশ ভালো লাগে হোটোল কতৃপক্ষের রুম গোছানো সবকিছু দেখে এমনেই ভাল্লাগে আর আমার শ’রী’রকে তৃ’প্ত করার জন্য তো তুমি আছোই তাই না বলো? এই ছোট্ট জীবনে যদি একটু সুখকর মুহূর্তই না আসে তাহলে আর কিসের জীবন? চলে আসবে ঠিকসময় কালকে আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।”

ব্যস এই মেসেজ টা পড়ে আর নিজেকে ধাতস্থ রাখতে পারিনি। তখন হুট করে নিরবের খা’রা’প ব্যবহার, দূরে সরে যাওয়া এই সব কিছুর হিসেব স্পষ্ট হয়ে যায় আমার কাছে। সেদিন বিকেলের পর আর রাত্রে আমার ঘুম হয়নি যেনো কিছুতেই। পরদিন সেই ঠিকানা মতন চলে যাই সেই হোটেলে গিয়ে দু’জনকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পার্কে বসে থাকতে দেখি, তখনও চুপচাপ চলে আসি কিন্তু সেদিন নিরব আসে নি আমার পিছু পিছু,শুধু কয়েকবার নাম ধরে ডাক দিয়েছিলো ব্যস আর কিচ্ছু বলেনি। আরো একবার বুঝে গেছিলাম ওর কাছে আমার মুল্যটা হয়তো আসলেই নেই! সেদিন বাড়িতে এসে শশুড়মশাইকে সব সত্যি বলি রাতে যখন নিরব বাড়িতে ফিরে সবাই মিলে ওকে প্রশ্ন করে বসে৷ আমি ছিলাম চুপটি করে। সবার প্রশ্ন করছিলো কিন্তু নিরব নির্বিকার ভাবে ছিলো! রুমে এসে আমার পা জো’ড়া আ’কড়ে ধরে বলেছিলো… ……….

—“যা করেছি ক্ষমা করে দাও। আর এরকম করবো না কখনো, আমি আমাদের বাচ্চাকে নিয়ে সুখে থাকবো মায়া। শেষবারের মতন ক্ষমা করে দাও প্রমিস আর কিচ্ছু করবো না, মানুষ তো ভুল জীবনে একবার করে বারবাবর তো আর করে না বলো!”

সেদিনও আমি পারিনি ওকে ক্ষমা করে, ওর কথার প্রতিত্তোরে ওকে দু’টো চ*ড় মে*রে চলে যাই। চলতে থাকে সময় এভাবেই একে একে দু তিন দিন চলে যায় তখন নিরবের পরিবর্তন লক্ষ্য করি ও বিয়ের শুরুতে আমাকে নিয়ে যে রকম পজেসিভ ছিলো সেরকম দেখতে থাকি বারবার ক্ষমা চাইতে থাকে আমার কাছে। নিজের মনকে বোঝাতে থাকি আমি তো এখন আর একা নই আমার সঙ্গে আছে আরো একজন, ওকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো? বাবার সংসারে? সে তো স’ৎ মায় কিছুতেই থাকতে দিবে না আর থাকতে দিলেই বা কয়দিন? আজীবন তো আর রাখবে না তার উপর দু’জন আমি এখন! বাচ্চাটারই বা কি হবে? সেসব কথা ভেবে মনকে বুঝ দিয়ে চুপচাপ মেনে নিই সংসার করতে থাকি। নিরব খাা*রাপ ব্যবহার না করলেও দূরে স’রে সরে থাকতো। কিন্তু তাতেও বুঝি হয়নি এখন নিরব আরেকটা বউ নিয়ে আসছে!!

বাবা কিংবা ননদ রিতু কেউই নেই বাড়িতে, আমি চুপটি করে বসে আছি নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছি! নিয়তি বারংবার আমার সঙ্গে কেনো এরকম করে? একটু সুখে থাকতে চাইলে এমন কেনো হয়? এতো ভাবনা চিন্তার মাঝে নিরবের ডাক পড়লো! ওর ডাকটা শুনতেই বুকে ছ্যা’ৎ করে ওঠলো! পরপর চার পাঁচবার ডাকলো পরিশেষে ওরা নিচে নেমে এলো।

—“কানে কি শুনতে পাও না না-কি? নয়নার ক্ষিদে পেয়েছে ও খাবার খাবে। বিয়ের কাজ সারতে দেরি হয়েছে তাই দুপুরের খাবার খাইনি এখনো, তুমি খাবার নিয়ে উপরে আসো, বেশি দেরি করলে খা’রা’প হয়ে যাবে বলে দিলাম।”

সইতে পারলাম না আর আমি! যেখানে নিজে আট মাসের প্রেগন্যান্ট হয়ে আছি অথচ নিরবের কোনো ভাবান্তরই নেই আর এদিকে সে বিয়ে করে নতুন বউ এনেছে! একা একা আর সহ্য করতে পারলাম না, কাউকে খুব করে পাশে অনুভব করছি কিন্তু কেউ নেই। বাধ্য হয়ে ফোন দিলাম বাপের বাড়ির ফোন নম্বরে। আব্বুর ফোনে রিং হতেই মো”টা গলার আওয়াজ শুনে বুঝে গেলাম নতুন মা ফোন ধরেছে! আপাততো সেগুলা মাথায় ছিলো না নিজের কষ্টগুলো উজার করে দিয়ে একে একে সব বললাম বিনিময়ে নতুন মা’র উত্তর,,,

—“দেখ মায়া তুই এখন তোর স’তী’নের জন্য আমার সংসারে এসে বসিস না, আমারও একটা মেয়ে আছে বুঝলি তো? এখন তুই এসে বসলে আমার সেই মেয়েটাকে বিয়ে দিবো কি করে? তার উপর তোর এখন ভরা পেট তুই তো একা নস আর বোঝার চেষ্টা কর, তোর স্বামীর তো সম্পত্তির অভাব নাই আর সেও তো তোকে ছেড়ে দিবে এরকম কিছু বলেনি তাহলে তুই কেনো চলে আসতে চাইছিস? খাওয়া পড়া সব তো পাচ্ছিসই তাহলে? তোর বাবাকে বিয়ে করার পর তোর ঘা’নি টেনেছি,, বিয়ে দিয়েছি ব্যস এখন আর পারবো না এসব কাহিনী সামলাতে ভাই। ওখানে থাকলে থাক নইলে তোর রাস্তা তুই মাপ।”

মায়া চুপটি করে বসে পড়ে! নিয়তি তাকে কোথায় এনেন দাঁড় করিয়েছে এই বি’ষা’দ’ম’য় পরিস্থিতিতে একজনও নাই যে ওকে একটু ভরসা দিবে! নিরব শব্দে কান্না? যেটা মানুষ বেশি কষ্ট পেলে করে মায়ারও হয়েছে সেরকম অবস্থা! চুপচাপ কেঁদে চলেছে। তখুনি আবার নিরবের আগমন!

—“তোকে কখন বলেছি খাবার আনতে? আমার ঘরে কি খাবার নেই রে? নয়না ভাবছে আমি ইচ্ছে করে করেছি এসব, এমনিই নয়না হচ্ছে আমার সো’না’র হ’রি’ন বুঝলি? তোকে হাতছাড়া করা যাবে কিন্তু ওকে না! যা খাবার নিয়ে আয় যদি আর একটাবারও বলতে হয় না তো আজকেই এই বাড়িতে শেষ দিন তোর! তারপর দেখিস কি হয়।”

চলে গেলো নিরব মায়া ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে সে করবে কি এখন? বাপের বাড়ি যাবে সে তো পথ নেই! এখান থেকে অন্য কোথাও যাবে সে রাস্তাও তো নেই! মায়া পেটে হাত বুলালো একবার,

—-“তুই চিন্তা করিস না, মা তোকে একবার পৃথিবীর আলো দেখাতে দে তারপর এই সবকিছু থেকে চলে যাবো আমরা। তুই আসা আগ অব্দি যে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে রে।”

মায়া খাবারে প্লেট সাজিয়ে রুমে যায়, গিয়েই দেখতে পায় যে নয়না নিরবের বুকের উপর মা’থা রেখে আরামসে শুয়ে আছে, মায়া চোখ ফিরিয়ে নিলো খাবার নিয়ে রুমে যেতেই নয়না খাবারের প্লেটগুলো মাটিতে ফে’লে দেয়! মায়া হতভম্ব হয়ে সে খানে দাঁড়িয়ে আছে। এতোকিছু চুপচাপ মেনে নেবার পরও এসব হচ্ছে কেনো? মায়ার মা’থা ঘু”রা’তে লাগলো।।

#চলবে?