বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি পর্ব-০২

0
474

#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

কুহুর হাসি দেখে রিয়ার মুখেও হালকা একটা মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। নিশি ও মুচকি একটা হেসে বলল

“তোমাকে কিন্তু হাসলে অনেক ভালো লাগে। সবসময় হাসিমুখে চললে কি হয় গোও। সবসময় এতো গম্ভীর থাকো কেন?”

রিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “আমার হাসি হারিয়ে গেছে। যা আর কখনো ফিরে আসবে না। সে যাইহোক তোমার মেয়েটাকে কিন্তু আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আর তুমি ও অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। আচ্ছা আবার পরে কথা হবে আমার একটা কাজ আছে। ওটা করে একটু পরেই ফিরে আসবো। তুমি দাদু আর চাচুকে একটু বলে দিও।” নিশির উত্তরের অপেক্ষা না করে হনহন করে চলে গেলো।

রিয়া ড্রাইভিং করে ঘুরতে বের হয়েছে। একটা স্কুলের সামনে গাড়ি থামায় ও। স্কুলটির দিকে তাকিয়ে পুরানো সব কিছু মনে পরতে লাগলো। ওর হাসি উজ্জ্বল দিন গুলোর কথা মনে পরে যায় রিয়ার। সে তো চেয়েছিলো ওমনই হাসি উজ্জ্বল থাকতে সারাটা জীবন। কিন্তু ওই যে বলে না ভাগ‍্য। ভাগ‍্যে যে ওর তা ছিলো না।

রিয়া আর কিছু মনে করতে চায় না ও। ও তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে ড্রাইভ করে চলে এলো কিছু কেনাকাটা করতে। কিছু দিন তো এখানে থাকতে হবে। আর সবার জন‍্য কিছু না কিছু উপহার নিলো রিয়া। তবে পরিবারের সবার জন‍্য কিছু না কিছু নিলেও।

বাড়িতে এসেই কুহুর কাছে গেলো রিয়া। রিয়াকে দেখেই কুহুর মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠছে। রিয়া কাজের লোককে গাড়ি থেকে সব কিছু নিয়ে আসতে বলে। কাজের মহিলা রহিমা বেগম সবকিছু নিয়ে এলে। রিয়া অনেকগুলো জামা টেডি আর চকলেট দেয় কুহুকে। কুহু খুশিতে হাত তালি দিতে থাকে। কুহুর খুশি দেখে রিয়ার ও মনে আনন্দ আনন্দ অনুভব হয়। নিশি এসে বলল

“আপু এগুলোর কি দরকার ছিলো ”

রিয়া বলল “ছিলো দরকার; আর নিশি তুমি সবাইকে সব কিছু দিয়ে দিও তো। আমার মাথাটা ধরেছে। আমি রুমে যাই তুমি এক মগ কফি পাঠিয়ে দিও তো।”

নিশি বলল “আচ্ছা আপু ;তুমি যাও আমি দিচ্ছি।”

রিয়া চলে গেলো রুমে। এখানে এসে একটুও ভালো লাগছে না ওর। সবকিছু মনে পরছে ওর। ও তো মানিয়ে নিয়েছিলো। এই কয়েকবছরে ও নিজেকে পালটিয়ে ফেলেছে।

————-

রাতের খাবার আর খাওয়া হয় নি রিয়ার। ওই যে কফি নেওয়ার পর সেই দরজা লাগিয়েছে আর খোলেনি। মন চায়নি তার ওই মানুষটার সম্মুখে যেতে। হয় তো মন নরম হয়ে গেলে ক্ষমা করে দিতে মন চাবে। না করবেনা সে ক্ষমা। কখনও না। নিশি অনেকবার ডেকে গিয়েছে খাওয়ার জন‍্য। কিন্তু রিয়া কোনো সাড়া দেয় নি। ভালো লাগছে না। খুব মনে পরছে তিয়াসকে। একটু কি ভালোবাসা যেতো না। ও তো প্রচণ্ড ভালোবাসতো তিয়াসকে। ভালোবাসতো না এখনো ভালোবাসে। না না এগুলো কি ভাবছে এগুলো ও। ও ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ‍্যে চলে গেলো রিয়া।

———

কেটে গেছে দুটো দিন আজ গায়ে হলুদ জেরিনের। এই দুটো দিন প্রায় সারাক্ষণই রিয়া ওর রুমেই ছিলো দরজা বন্ধ করে। সময় সময় নিশি এসে খাবার দিয়ে গিয়েছে। আর কুহুকেও নিয়ে এসেছিলো রিয়ার কাছে। কুহু এখন রিয়া বলতে পাগল। সকালে এসে নিশি একটা শাড়ি দিয়ে যায়। এটাই নাকি পরতে হবে তাকে। নিশি আর জেরিন আবদার করেছে। কেন যেন ওদের আবদার ফেলতে পারলো না ও।

সন্ধ‍্যায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। ছাদে অনুষ্ঠানের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই ছাদেই আছে। কিন্তু রিয়ার খবর নেই। নিশি নিচে রিয়ার রুমে গিয়ে নক করতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিয়া দরজা খুলে দেয়। রিয়াকে দেখে নিশি হা হয়ে যায়। কারণ রিয়াকে আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে। এতোদিন রিয়াকে মর্ডান ড্রেসে দেখেছে নিশি। তবে আজই যেন রিয়াকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে বলে না শাড়িতে নারীর সৌন্দর্য । নিশিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিয়া বলল “কি হয়েছে!”

নিশি বলল “জানো আপু তোমাকে কতো সুন্দর লাগছে। অনেক মিষ্টি লাগছে তোমাকে।”

রিয়া বলল “তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে আর কুহুকেও।”

কুহু কি বুঝলো কে জানে। কুহুও ফিক করে হেসে দিলো।

————-

চারিপাশে নিরব পরিবেশ। হলুদের অনুষ্ঠান কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। তারপর থেকে রিয়া ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে। শো শো করে বাতাস বইছে। চাঁদও একাকিত্ব ঘোচাতে তারাদের ডাকছে। কিন্তু রিয়া কাকে ডাকবে। তার একাকিত্ব দূর করার মতো মানুষটা যে এখন অন‍্যকারো। অন্য কারো মায়ায় যে সেই ব‍্যক্তি আবদ্ধ। আসলেই মায়া খুব অদ্ভুত জিনিস। একবার কারো মায়ার বান্ধনে আবদ্ধ হলে। অনেক কষ্ট হয় সেই মায়া কাটাতে। ও নিজেই তো সাতবছর হয়ে গেছে তাও মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি ফুটে উঠলো রিয়ার ঠোঁটে।

কাল বিয়ে তারপর বউভাত। তার পরের দিনেই ওর ফ্লাইট। ও চলে যাবে এই বেইমান দেশ ছেড়ে। এই দেশের সব মানুষ বেইমান। সে আর কারো বেইমানি সহ‍্য করতে পারবে না।

আচ্ছা কাল কি আসবে ওই প্রিয় মানুষটা। হলুদের অনুষ্ঠানে তো দেখলো না তাকে সে। আসবে তো বিয়েতে।

পাশে কারো উপস্থিতি টের পেতেই সে পাশে তাকালেও কাউকে দেখতে পেলো না। ও চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো পাশের ছাদে কেউ একজন আছে। রিয়া তাকাতেই সেই ব‍্যক্তিও রিয়ার দিকে ফিরলো। চোখে চোখ পরে গেলো ওদের। চাঁদের আলোতে দুইজন দুইজনকে দেখছে। ছেলেটি হঠাৎ করেই অন‍্যদিকে ঘুরে গেলো। ছেলেটির এমন করায় রিয়া ভরকে গেলো। রিয়া পরক্ষণেই আবার তাকাতেই দেখলো ওখানে কেউ নেই। রিয়া আর ভাবলো না কিছু। সে ছাদ থেকে নেমে নিচে রুমে চলে গেলো।

অন‍্যদিকে রেহান নিজের রুমে গিয়ে ভাবতে লাগলো কি হলো তার। ওই মেয়েটাকে দেখে কেন তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিলো। আচ্ছা ওটা কি মেয়ে ছিলো না পরী। অতিরিক্ত হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ায় ও নিচে নেমে আসে। এমন হলো কেন তার সঙ্গে সে বুঝতে পারলো। সে রাতে আর কিছুতেই ঘুমাতে পারলো না। এই দিকে সকালে বিয়ের দাওয়াত ও আছে। বিছানায় শুয়ে এপাশ অপাশ করতে থাকলো রেহান। যখনই চোখ বন্ধ করছে তখনই শুধু ছাদের সেই মেয়েটির মুখটি ভেসে আসছে।

———————-

সকাল থেকেই রিয়া দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে হয় তো কারো জন্য । আজিজুল সাহেব রিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলল

“কি হলো রিয়া মামুনি কেউ কি আসবে?”

রিয়া বলল “না চাচু কেন কি হয়েছে!”

আজিজুল সাহেব বললেন “অনেক অস্থির লাগছে আর দরজার দিকে তাকাচ্ছো একটু পর পর তাই।”

রিয়া বলল “না কিছু না এমনি।”

আজিজুল সাহেব অন‍্য কাজে চলে গেলো। রিয়াও জেরিনের রুমের দিকে রওনা দিলো। জেরিনের রুমে যাবে তখনই হঠাৎ করে কার সঙ্গে যেন ধাক্কা খেলো। রিয়া বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকাতেই ব‍্যক্তিটা সরি সরি বলে চলে গেলো। রিয়াকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। সরি বলেই চলে গিয়েছে লোকটি। রিয়াও কিছু বলল না। জেরিনের রুমে গিয়ে দেখলো জেরিনের সাজানো শেষ প্রায়। জেরিন রিয়াকে আসা দেখে জেরিন উঠে এসে রিয়াকে টেনে নিয়ে আয়নার সামনে বসিয়ে বলল

“নিন আপুকেও সাজিয়ে দেন।”

রিয়া বলল “না জেরিন আমি..

জেরিন বলল “কোনো কিছু শুনবো না।”

#চলবে