বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি পর্ব-০৩

0
429

#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

জেরিনের জেদের কাছে হেরে গিয়ে রিয়া সাজলো তবে খুব কম। ওর এগুলো ভালো লাগে না। জেরিনের জোরাজরিতে শাড়িও পরেছে। এমনি আগের দিন অনেক কষ্টে শাড়ি সামলিয়েছে তাই আজকে পরতে চেয়েছিলো না। কিন্তু ওই যে জেরিন নাছোড়বান্দা।

মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছে রিয়া জেরিনের পাশে। চারিদিকে মানুষ দিয়ে গিজগিজ করছে। চেচামেচি করছে সবাই। রিয়া বিরক্ত লাগছে এগুলো। সে এতোগুলো মানুষের মধ্যে থাকতে চায় না। রিয়ার পাশ দিয়ে শায়ান যাচ্ছিলো। তখনই রিয়া শায়ানকে ডেকে বলল

“আচ্ছা ভাইয়া আর কেউ আসবে না।”

রিয়ার কথায় শায়ান চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল “না আর তো কেউ বাকি নেই সবাই চলে এসেছে। আর বর যাত্রীও কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। আর কেউ আসবে না আর আসার কথাও না। কেন রিয়া তুমি কি কাউকে খুজছো?”

রিয়া এইদিক ওইদিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল “আয়েশা চৌধুরীর আদরের মেয়ে আর জামাই আসবে না।”

শায়ান বলল “ওনি তোর মা হয় নাম ধরে বলছিস কেন?”

রিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “মা আমি তো ভুলেই গেছিলাম। যাইহোক যা জিঙ্গাসা করছি তা বলো ভাইয়া।”

শায়ান কিছু বলতে নিবে তার আগেই আজিজুল সাহেব এসে শায়ানকে তাড়া দিয়ে অন‍্যকাজে পাঠিয়ে দিলেন। রিয়ার বিষয়টি কেমন যেন লাগলো। আচ্ছা সবাই কি কিছু আড়াল করছে ও কাছ থেকে।

রিয়া ভাবছিলো তখনই কারো ডাকে তার ভাবনায় ছেদ ঘটলো। রিয়া পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা সুদর্শন ছেলে তার পাশে মুখে মুচকি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটির গায়ের রঙ উজ্জল শ‍্যামলা। হাসলে গালে টোল পরে চাপ দাঁড়িয়ে চোখ দুটো যেন মায়া দিয়েই ত‍ৈরি। রিয়া ছেলেটিকে পর্যবেক্ষণ করছিলো তখনই ছেলেটি বলে উঠলো

“কি হলো মিস এমন করে কি দেখছেন? বাই দা ওয়ে নাম কি আপনার?”

রিয়া কপাল কুচকে বলল “নাম জেনে কি করবেন?কিছু কি বলবেন বলার হলে বলেন।”

ছেলেটি বলল না “তেমন কিছু না বোরিং লাগছিলো তাই কথা বলতে আসলাম। দেখলাম আপনিও একা একা বসে আছেন।”

রিয়া বলল “ভালো”

ছেলেটি বলল “আপনার নামটা তো বললেন না।”

রিয়া বলল “রিয়া চৌধুরী আর কিছু বলবেন।”

ছেলেটি বলল “না মানে আমার নাম রেহান। আচ্ছা কাল রাতে কি আপনি ছাদে ছিলেন!”

রিয়া কপাল কুচকে চোখ ছোট ছোট করে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “কেন বলুন তো?”

রেহান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল” না মানে এমনি জিঙ্গাসা করছিলাম। আপনিই ছিলেন তাই না।”

রিয়া বলল “হুম তো কি সমস্যা।”

রেহান আমতা আমতা করে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল “আপনি কি সিঙ্গেল?”

রিয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “এখন যদি বলেন আপনাকে প্রথম দেখায় আমার ভালো লেগে গেছে। হেনতেন। তো আপনার খবর আছে।”

রেহান রিয়ার দিকে একটু ঝুকে গিয়ে ফিসফিস করে বলল “কি করবেন আমাকে?”

রেহানের এমন ঝুকে আসায় ঘাবড়ে গেলো রিয়া। রিয়া কিছু বলতে পারলো না।

রেহান হুট করে টুক করে একটা চুমু বসিয়ে দিলো রিয়ার গালে আর বলল “বুঝে গেছি আমার লাইন ক্লিয়ার এখন থেকে রেডি থাকেন মিস আপনাকে আমি নিজের করেই ছাড়বো। প্রমিস আর রেহান কখনো তার প্রমিস ভাঙে না। সো টাটা বাই বাই। বলেই রেহান চলে গেলো।”

রিয়া ওখানেই পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নিশির ধাক্কায় হুশ ফিরলো রিয়ার। রিয়া নিশির দিকে তাকিয়ে দেখলো। নিশি মিটিমিটি হাসছে। রিয়া বলল

“কি হয়েছে এরকম করে মিটিমিটি করে হাসছো কেন?”

নিশি বলল “না মানে কিছু না। রেহান কিন্তু অনেক ভালো একটা ছেলে। সহজে কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলে না ও। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে তোমার সঙ্গে কি সুন্দর কথা বলছিলো হেসে হেসে।”

রিয়া বলল “আজাইরা ঢং দেখায় তোমাদের সামনে। ঠিকি অন‍্য জায়গায় মেয়েদের সঙ্গে হেসে কথা বলে।”

নিশি বলল “না আপু সত্যিই ছেলেটি অনেক ভদ্র আর ভালো। আমার সঙ্গেও কথা বলে মাথা নিচু করে। আগে নাকি ছেলেটি অনেক চঞ্চল ছিলো। কিন্তু এখন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে একটা মেয়ের জন‍্য।”

রিয়া বলল “মানে”

নিশি বলল “একটা মেয়ে রেহানের সঙ্গে বেইমানি করেছে। তারপর থেকে ছেলেটি চুপচাপ হয়ে পরে। মানুষের সঙ্গে মিশাই বাদ দিয়ে দিয়েছিলো। আর মেয়েদের তো দেখতেই পারেনা”

রিয়া বলল “ও ভালো, তা ওর এতো গুনগান করছো কেন? আর ওর এতোকিছু তুমি কিভাবে জানো।”

নিশি মৃদু হেসে বলল ও আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।”

রিয়া বলল “ওহ আচ্ছা তুমি কি আয়েশা চৌধুরীর ছোট মেয়ের বিষয়ে কিছু জানো। ও কেন আসে নি।”

নিশি চারপাশে একবার চোখ বোলালো। তারপর ফিসফিসিয়ে বলল “প্লীজ আপু আমাকে কিছু জিঙ্গাসা করবেন না। আমি কিছু বলতে পারবো না।”

রিয়া বলল “কেন বলতে পারবেনা?”

নিশি বলল “সেটাও বলতে পারবো না প্লীজ আপু আমাকে আর কিছু বলতে বলো না।”

রিয়া দমে গেলো। সে খেয়াল করলো নিশির চোখ মুখে কোনো এক ভয় কাজ করছে। রিয়া নিশিকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। তখনই হঠাৎ রিয়ার পিএ এসে হাজির। নিশির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে রিয়া জিঙ্গাসা করলো কি বলতে এসেছে ও।

আরিফ যা বলল তা শুনে রিয়ার মাথা গরম হয়ে গেলো। কারণ আবহওয়া খারাপের জন‍্য আরো পাঁচদিন রিয়াকে থাকতে হবে এখানে। সে তো এখান থেকে চলে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাকে যেন এক অদৃশ্য বাঁধা আটকিয়ে রেখেছে। রিয়ার কেন যেন মনে হচ্ছে সে আর এখান থেকে যেতে পারবেনা। সে হনহন পায়ে গাড়িতে করে একটা লেকের পাশে চলে আসলো। আগে প্রায়ই মন খারাপ হলেই এই লেকের পাশে চলে আসতো রিয়া। দীর্ঘ সাতবছর ধরে তার এখানে আসা নেই। রিয়ার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে। তার বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। সবকিছু আবার মনে পরছে তার। কিন্তু সে যে মনে করতে চাচ্ছে না। দীর্ঘ দেড় ঘন্টা কান্নাকাটি করে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে গাড়ি করে একটা কবর স্থানের সামনে। সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো

“আব্বু কেন তুমি চলে গেলে। তুমি কেন তোমার রাজকুমারীটা একা করে রেখে গেলে। দেখো না আব্বু তোমার রাজকুমারীটা কষ্ট পাচ্ছে। তুমি আবার আমার কাছে ফিরে আসলে কি এমন হতো।” রিয়া হাটু গেড়ে বসে পরে। আর আকাশের দিকে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।

————-

রিয়া চারপাশে তাকিয়ে দেখলো এটা তো একটা অচেনা জায়গা। ও বিছানা থেকে উঠতে গেলেই পরে যেতে নিতেই একটা বলিষ্ঠ হাত এসে ওকে আঁকড়ে ধরেছে। রিয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে রেহান তার দিকে চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যখন রিয়া খেয়াল করলো রেহান ওকে ধরে আছে। ও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। রেহান একটা ধমক দিয়ে বলতে লাগলো “ঠিকঠাক মতো চলতে পারো না। আর খাওয়া দাওয়া করো না কেন ঠিকঠাক মতো। মাথা ঘুরিয়ে এখানে সেখানে পরে থাকো।”

রিয়া কপাল কুচকে বলল “মানে”

রেহান বলল “আমি না থাকলে কি হতো। জানো তুমি। ভালো যে আমি একটা কাজে এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তোমাকে ওই অবস্থায় দেখে আমি কতটা ঘাবড়ে গেছিলাম জানো তুমি। রাত দশটায় কবর স্থানে পরে ছিলে। আমি তখন না গেলে কি হতো।”

#চলবে