বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি পর্ব-০৪

0
386

#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

রিয়া একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “কি আর হতো শেয়াল কুকুর ছিড়ে খেতো বা রাস্তার কোন অমানুষ মেরে ফেলতো। আর কি হতো মরে যেতাম এই।”

রিয়ার কথা শুনে রেহানের রাগ উঠে গেলো। ওর চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। রেহান ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রিয়াকে আর কটমট করে মুখ চেপে ধরে বলল

“খুব শখ না তোর মরার। নিজেকে কি মনে করিস তুই। সব কিছুর সমাধান কি মৃত্যু। কি এমন হয়েছে তোর যে মরবি তুই। একজন যে নিজের অজান্তেই তোকে ভালোবেসে ফেলছে তুই কি কখনো বোঝার চেষ্টা করেছিস। তা করবি কেন? আগে কে কি করছে সেটা নিয়ে পরে থাকা তোর কাজ।”

রিয়ার ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে থাপ্পড় খেয়ে। তার উপর জোরে করে মুখ চেপে ধরায় প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে রিয়ার। তবে মুখ ফুটে কোনো শব্দ বের হচ্ছেনা। শুধু চোখ গড়িয়ে পানি পরছে।

হঠাৎ করে এক আওয়াজ হতেই রেহান রিয়াকে ছেড়ে দেয়। রেহান রিয়ার মুখ চেপে ধরায় ওরা খুব কাছাকাছি ছিলো। দুইজনই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। আজিজুল সাহেব ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশের লোকজন ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। একটা মহিলা তো বলেই উঠলো

“বিদেশ থাকে চরিত্র কেমন হবে তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আর আগে থেকেই তো… ভালো ছেলেটাকে নষ্ট করে দিলো এই মেয়েটি। চৌধুরী পরিবারের মেয়ে হয়ে একটা ছেলের সাথে রাতে একসঙ্গে এক ঘরে আবার এতো কাছাকাছি ছি.ছি.”

রিয়া মহিলাটার কথা শুনে তো রেগে আগুন হয়ে গেলো। না জেনে এতো সব বলার মানে কি? সে কিছু বলার জন‍্য আগাতে লাগলেই আজিজুল সাহেব এসে রিয়াকে আটকিয়ে বলে

“আপনারা কি বলতে চাচ্ছেন এগুলো। আমি জানি আমার মামুনি এমন না।”

আরেকটা লোক বলে উঠলো “আপনি বলেই হলো নাকি। রাতে একসঙ্গে দুটো অবিবাহিত ছেলে মেয়ে এক রুমে পাওয়া গেছে। তারপরেও এগুলো বলছেন কিভাবে? আর এই মেয়ের তো আগে থেকেই সমস্যা ছিলো।”

রিয়ার নামে সবাই খারাপ খারাপ কথা বলতে লাগল। রেহান আর সহ‍্য করতে পারলো না। ও চেচিয়ে বলে উঠলো

“না জেনে খবরদার উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না।”

একটা লোক বলে উঠলো “এএ অন‍্যয় করছে আবার মুখে বড় বড় কথা।”

হঠাৎ একটা থাপ্পড়ের শব্দে রেহান তাকিয়ে দেখলো। রিয়ার গালে থাপ্পড় দিয়েছেন আয়েশা বেগম মানে রিয়ার মা। রিয়া গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে ওর।

আয়েশা বেগম বললেন লজ্জা করে না তোর। একবার করে শান্তি মেলে আবার।আমার মেয়ে হয়ে তুই ছি ছি”

রেহান রিয়ার কাছে গিয়ে রিয়াকে নিজের বুকে আকড়ে ধরে বলতে লাগল “আপনি কোন অধিকারে ওর গায়ে হাত তুললেন।”

আয়েশা বেগম বললেন “অধিকার মানে আমি ওর মা।”

আয়েশা বেগমের কথা শুনে রেহান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “মা আমি তো ভুলেই গেছিলাম। মা হওয়ার কোনো রাইট আছে আপনার।”

রেহানের কথা শুনে আয়েশা বেগম দমে যায়। রেহান তো মিথ্যা কিছু বলে নি।

রেহান বলল “আপনাদের যখন এতোই সমস্যা তাহলে আমি বিয়ে করবো রিয়াকে।”

রিয়া রেহানের কথা শুনে ওর মুখের দিকে তাকাল। রেহান আবার বলতে লাগলো “এখন তো কোনো সমস্যা নেই আপনাদের তাই না।”

একটা লোক বলে উঠলো “শুধু মুখেই বলা যায় বিয়ে করবো। করা এতো সহজ নাকি। মেয়েটাও দুই তিন দিনের মধ্যে বিদেশ চলে যাবে। ছেলেও আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলবে। মেয়েটাও বিদেশ গিয়ে আবার অন‍্য ছেলের সঙ্গে ফুর্তি করবে। তখন আর কে কি বলবে। সব ফালতু কথা। বিয়ে করবে না ছাই।”

রেহান আরো চটে যায়। ও আজিজুল সাহেব উদ্দেশ্য করে বলে

“এখনই রিয়াকে আমি বিয়ে করবো কাজী নিয়ে আসেন।”

রেহানের কথায় রিয়া অবাক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকালো। ছেলেটার রাগের কারণে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামও জমেছে। রিয়ার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। কি হচ্ছে এসব ওর সঙ্গে।

রাত দুইটা বাজে কাজী এসে বিয়ে পড়াচ্ছে। রিয়ার এখনো বোধগম্য হচ্ছেনা কিছু। কি থেকে কি হতে চলেছে তার জীবনে। সব যে তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অশ্রুকণা ঝড়ে পরতে চাইছে। সে যে এই বিয়ে নামক বন্ধনে কখনো জরাতে চায় নি। তার ছন্নছাড়া বিস্বাদময় জীবনের সঙ্গী হিসেবে যে সে কাউকে চায় নি। ভালো তো ছিলো একাকিত্বে বেড়াজালে। রাত তিনটা বাজে অন্ধকার রুমে বসে আছে রিয়া। জানলার পাশ ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া। বর্ষণ হচ্ছে এই বর্ষণকে খুব ভয় করে রিয়া। রিয়ার অতীত জেনে মেনে নিবে কি রেহান। যা বুঝেছে তা অনুযায়ী রেহান ছেলেটা অনেক ভালো। আর ভালোবেসে ফেলেছে ওকে। রেহান কি সবকিছু জেনে ওকে এইরকম করেই ভালোবেসে যাবে। হয় তো হ‍্যাঁ অথবা না। ভিতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো রিয়ার। দরজা খোলার শব্দে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো রেহান হাতে খাবার প্লেট নিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও একপলক রেহানের দিকে তাকিয়ে আবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। রেহান আস্তে আস্তে হেটে রিয়ার কাছে এসে বলল

“সরি”

রিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “সরি কেন?”

রেহান মাথা নিচু করে বলল “আসলে তখন তোমার পারমিসন না নিয়েই বিয়ে করার কথা বলে ফেলেছি। আসলে আমি তোমার নামে এগুলো সহ‍্য করতে পারছিলাম না। আর আবার সরি।”

রিয়া প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল “আবার সরি কেন?”

রেহান আরো অপরাধবোধ নিয়ে বলল “আসলে রাগের মাথায় তোমার গায়ে হাত তুলে ফেলেছি। আসলে তুমি যখন মরার কথা বলছিলে তখন আমার বুকে মোচড় দিয়ে উঠেছিলো। আমি যে প্রথম দিন তোমাকে দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি।”

রিয়া চুপ করে রইলো।

রেহান ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলা শুরু করলো “সারাদিন কিছু খাও নি। সেইজন‍্যই মাথা ঘুরে পরে গেছিলে। এখন একটু খেয়ে নেও প্লীজ। তাছাড়া আবার অসুস্থ হয়ে পরবে।”

রিয়া বলল না “আমি কিছু খাবো না ভালো লাগছে না।”

রেহান ফট করে রিয়ার হাত ধরে টেনে সোফায় বসিয়ে দিলো। তারপর মুখ চেপে ধরে খাবার মুখে তুলে দিলো। আর বলল

“এখন যদি তুমি না খাও তাহলে আমি উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবো।”

রেহানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে রিয়া তাকাতেই দুষ্টামি একটা হাসি দিলো রেহান। রিয়া বাধ্য মেয়ের মতো খাবার খেতে লাগলো কারণ এই ছেলের উপর তার কোনো বিশ্বাস নেই। কখন কি করে বসবে কে জানে। রিয়া দেখলো অর্ধেক খাবার খাওয়ার পর রেহান নিজে বাকি খাবার টা খেতে লাগল।

রিয়া বলল আরে “কি করছেন আমার এটো খাবার খাচ্ছেন কেন?”

রেহান একটা মুচকি হেসে বলল “জানো এক প্লেটে খাবার খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। বুঝলে বউ”

রিয়ার বুকে তোলপাড় শুরু হতে লাগলো রেহানের মুখে বউ ডাকটা শুনে। তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে।

হঠাৎ করেই বিষম উঠে যায় রেহানের। রিয়া তাড়াতাড়ি করে পানি এগিয়ে দেয়। রেহান ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে নেয়। হঠাৎ করেই রেহান ……….

#চলবে