বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি পর্ব-০৫

0
400

#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

হঠাৎ করেই রেহান মিটিমিটি হেসে বলতে লাগলো “আজ তো আমাদের বাসার রাত। তাই না বউ।”

রেহানের কথায় রিয়ার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো। ও বলল “মানে”

রিয়ার এমন তাকানি দেখে রেহানের হাসি পাচ্ছে । ও আর হাসি আটকে রাখতে না পেরে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। রিয়া অবাক হয়ে বলল

“আপনি হাসছেন কেন কি হয়েছে!”

রেহান খাবার প্লেট নিয়ে যেতে যেতে বলল “কিছু না। আমি খাবার প্লেট রেখে আসি।” রেহান চলে গেলো। রিয়া আবার তার ভাবনায় চলে গেলো।

রেহান রুমে এসে বলে উঠলো “আজকে সারারাত গল্প করবে আমার সঙ্গে। না করো না প্লীজ।”

রিয়া কেন যেন না করতে পারলো না। সে হ‍্যাঁ বোধক সম্মতি দিতেই রেহানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। রেহানের হাসি মাখা মুখ দেখে কেন যেন রিয়ারও ভালো লাগছে।

ওরা দুইজন মিলে বারান্দায় গিয়ে বসলো। হালকা বাতাস বইছে বৃষ্টি আসবে হয় তো। মেঘও ডাকছে মাঝে মাঝে। প্রকৃতি সুন্দরতম রুপ ধারণ করেছে। এমন এক মুহূর্তে নবদম্পতি রিয়া আর রেহান চুপ করে বসে আছে। দুইজনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরবতা কাটিয়ে রেহান বলতে লাগলো জানো তো আমি একটা মেয়েকে প্রচণ্ড ভালোবাসতাম।

রিয়া আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রেহানের দিকে তাকায়। আর নম্র সুরে বলতে থাকে “আপনি এগুলো আমাকে বলছেন কেন?”

রেহান মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলল “তুমি আমার জীবনসঙ্গী। আর তোমার এগুলো জানার অধিকার আছে।”

রিয়া আর কিছু বলল না চুপ করে রইলো।

রেহান আবার বলতে থাকে। “আমি যখন অর্নাস ফাইনাল ইয়ারি পড়ি তখন আমার দেখা হয় হৃদমীর সঙ্গে। হৃদমী ছিলো ফাস্ট ইয়ারের। প্রথমদিন যখন ওকে দেখি সেইদিনই ওর মায়ায় পরে যাই।”

রিয়া রেহানের কথায় ফোড়ন কেটে বলল “আপনি খালি প্রথম দেখাইয় মায়ায় পরেন তাই না।”

রিয়ার কথা শুনে রেহান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। পেটে হাত দিয়ে হাসছে ও। রিয়া একদৃষ্টিতে রেহানের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। রেহানের হাসিটা কেন যেন রিয়ার খুব ভালো লাগছে। ও খুটিয়ে খুটিয়ে রেহানের হাসি দেখতে লাগলো। একটা ছেলে কিভাবে এতো সুন্দর হতে পারে।

রেহান হাসি থামিয়ে বলতে থাকলো “আর তাকিয়ে থেকো না জানপাখি বুকে লাগে যে ওই দৃষ্টি।”

রিয়া চোখ নামিয়ে নিলো।

রেহান আবার বলতে থাকলো “জানো তো আমি হৃদমীকে অনেক ভালোবাসতাম। ও আমাকে প্রোপজ করেছিলো। আমি ও না করি নি ভালোই চলছিলো আমাদের সম্পর্ক। কিন্তু সময় যেতে থাকলে হৃদমীর ইগনোর করতে থাকে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর অবহেলায়। আমি অনেক জিঙ্গাসা করেছিলাম যে কেন এতো অবহেলা করছিলো আমাকে। সে আমাকে কিছু বলেনি। প্রায় চারমাস পর আমি যখন ওকে অন‍্য একটা ছেলের সঙ্গে দেখি। তখন আর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি তখনই ওর সামনাসামনি চলে যাই কিন্তু ও আমাকে না চেনার ভান ধরেছে। তখন থেকে আমি আর ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আর ও কখনো চেষ্টাই করেনি। তখন থেকেই আমি উল্টাপাল্টা হয়ে পরি। পরে আম্মু বাবার কথা ভেবে আমি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক ভাবে থাকার চেষ্টা করতে লাগি। কিন্তু এই যে নিরব রাতে একাকিত্ব আমাকে ঘিরে ধরে। যখন হৃদমীর কথা আমার প্রচণ্ড মনে পরতো। তখন নিজেকে পাগল পাগল লাগতো। আস্তে আস্তে বিভিন্ন নেশায় নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলি। সেটা আম্মু বাবা জানতো না। বুঝতেই দিতাম না ওদের। তখনই নিশি আপু আমাকে অনেক বুঝায়। আমি কেন ওই বেইমান মেয়েটার জন‍্য কষ্ট পাবো। জানো তো এরপর কোনো মেয়ের উপর আমার কোনো অনুভূতি কাজ করতো না। রাগ আর ঘৃণা হতো। কিন্তু ওইদিন হঠাৎ তোমাকে দেখে আমার চোখ আটকে যায়। আমার মনের মধ্যে এক অজানা অনুভূতি কাজ করতে থাকে। আর তোমাকে শাড়িতে দেখে আমার চোখ আটকে গেছিলো। তোমার টানা টানা চোখের মায়ায় আটকে যাই। আসলে ভালোবাসা বলে কয়ে আসে না। আচ্ছা আমি কি তোমার কোলে মাথা রাখতে পারি। প্লীজ না করো না। আমি অনেক দিন শান্তি মতো ঘুমাতে পারিনা।”

রিয়া কেন যেন রেহানের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারলো না।

———————-

সকালের মিষ্টি আলো রিয়ার চোখে পরতেই রিয়া ঘুম ভেঙে যায়। ও পিটপিট করে চোখ খুলতেই দেখলো রেহান একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও লাফিয়ে উঠলো। রিয়ার লাফানি দেখে রেহান ভরকে যায়। রিয়া কিছুক্ষণ চোখ কচলে বলল “সরি আসলে আমি ঘাবড়ে গেছিলাম আপনার তাকানি দেখে।”

রেহান মুচকি হেসে বলল “ঠিক আছে। এখন যাও ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। আম্মু আমাদের জন‍্য অপেক্ষা করছে।”

রিয়া আর কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো রেহান সোফায় বসে মনের সুখে ফোন টিপছে। রিয়া গিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে “এইযে শুনছেন কি হলো শুনছেন আপনি।”

রেহান ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলতে লাগলো “হুম বলো শুনছি আমি।”

রিয়া বলল “আমার জামা লাগবে। আমি চেন্স করবো।”

রেহান ফোন থেকে চোখ তুলে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল “আমি এখন সকাল সকাল কোথায় মেয়েদের জামা পাবো।”

রিয়া ধুপ করে বেডে বসে পরে আর বলতে লাগলো “আমি জানিনা;আপনি যা খুশি করেন। আমার জামা লাগবে এটাই জানি আমি।”

রেহান কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়ে কি যেন একটা ভাবলো তারপর হুট করে রুম থেকে চলে গেলো। রিয়া বিরক্তি মাখা মুখে রেহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

পরক্ষণেই রেহান এসে একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বলল “আম্মু শাড়ি পরে তাই তুমি এটা পরতে পারো। এখন তো জামা আনতে পারছিনা। পরে জামা এনে দিবোনি।”

রিয়া করুন দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে মুখ ছোট করে মিনমিনে সুরে বলল আমি শাড়ি সামলাতে পারিনা আর ঠিকমতো পরতেও পারিনা। ওইদিন পার্লার থেকে আসা লোক পরিয়ে দিয়েছিলো আর হলুদের দিন ঠিক করে পরতে পারিনি পরে নিশি ঠিক করে দেয়।”

রেহান ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল “এতো বড় হয়ে গিয়েছো তাও শাড়ি পরতে পারোনা। কি পারো কি তুমি?”

রিয়া চুপ করে রইলো। রেহান বলল “আমি পরিয়ে দিচ্ছি। তুমি শাড়ির সঙ্গে যেগুলো পরে সেগুলো পড়ে আসো।”

রিয়া চোখ বড় বড় করে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “আপনি শাড়িও পরাতে পারেন।”

রেহান একটা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বলে “বিয়ের পরে সবকিছু শিখে নিতে হয়। বুঝলে গো বউ।” বলে রিয়ার নাক টেনে দিলো।

রিয়া রেগে বলল “খবরদার নাকে হাত দিবেন না। মেজাজ গরম হয়ে যায় আমার। আর একদম দুষ্টামি বুদ্ধি মাথায় আনবেন না।”

রেহান হুট করে রিয়ার কোমর জরিয়ে ধরে আর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল “দুষ্টামি বুদ্ধি তো আনতেই হবে বউ। তাছাড়া আমার জুনিয়ার পরী আসবে কি করে?”

রেহান কথা বলায় তার উষ্ণ নিশ্বাসে রিয়া দম বন্ধ হয়ে আসছে। রেহান রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বলল “যাও পরে এসো। আম্মু আমাদের জন‍্য অপেক্ষা করছে।”

#চলবে