বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি পর্ব-০৬

0
393

#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

রিয়া হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো। তারপর ও সবকিছু ঝেড়ে ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর রিয়া বেড়িয়ে এলো। রেহান হালকা হেসে রিয়ার কাছে এসে শাড়ি পরিয়ে দিলো। তারপর রিয়াকে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে রিয়ার চুলগুলো ঠিক করে দিলো। রিয়া যেন পুতুল হয়ে গিয়েছে। রেহানের পুতুল রেহান যে ভাবে নাচাচ্ছে ও যেন সেভাবেই নাচতেছে। এর আগে এভাবে কেউ এরকম করে যত্ন নেয় নি তার। এমকি তার মা ও না। তার বাবা তাকে অনেক যত্ন করতো কিন্তু সে যে রিয়াকে ছেড়ে চলে গেছে । অনেক দূরে। রিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পরলো।

রেহান রিয়ার চোখে পানি খেয়াল করতেই রেহানের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। রেহান অস্থির হয়ে বলতে লাগলো

“কি হয়েছে জানপাখি তোমার কি কোনো অসুবিধা হচ্ছে। অসুস্থ লাগছে। কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে। প্লীজ বলো আমি যে তোমার চোখের পানি সহ‍্য করতে পারছিনা।”

রিয়া ছলছল নয়নে রেহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে “না কিছু হয় নি আমার। আপনি অস্থির হবেন না। আসলে কিছু ঘটনা মনে গেছিলো তাই আর কি।”

রেহান রিয়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল “এখন আর কোনো অতীত নিয়ে ভাববে না। শুধু বর্তমান নিয়ে ভাববে। আর আমি ও কখনো তোমার অতীত সম্পর্কে জানতে চাইবো না। আমি চাই না তুমি কখনো অতীত মনে করে কষ্ট পাও।”

রিয়া একদৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। রেহান রিয়ার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে দিলো। রিয়াও আবেশে চোখ বুজে নিলো।

রেহান রিয়ার হাত ধরে খাবার টেবিলের কাছে নিয়ে আসে।

রিয়া দেখলো খাবার টেবিলে একজন ভদ্রলোক আর একটা ছেলে আর একটা মেয়ে পাশেই ছোট একটা বাচ্চা বয়স পাঁচের উপরে হবে না। সবাই রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়া সবার তাকানি দেখে মাথা নিচু করে ফেলে।

রেহান ভদ্রলোক লোকটির দিকে ইশারা করে বলল ওনি আমার বাবা।

রিয়া ওনার দিকে তাকিয়ে সালাম দেয়। রায়হান খান মুচকি হেসে সালামের উত্তর দিয়ে বলল “রেহান তুই যেমন বলেছিলে তার থেকেও তো আমার বউ মা আরো মিষ্টি।”

“মিষ্টি তো হতেই হবে কার ছেলের পছন্দ দেখতে হবে না।” একটা মহিলা মানুষের মিষ্টি কন্ঠে সামনে তাকাতেই দেখলো একটা ভদ্রমহিলা হাতে একটা বাটি নিয়ে এসে টেবিলে কাছে এসে দাড়ালেন। রিয়া বুঝতে পারলো এটা রেহানের মা। রিয়া খেয়াল করলো রেহান দেখতে একদম তার মায়ের মতো হয়েছে। রেহান পাশে বসা ছেলে আর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল “ভাইয়া,ভাবি আর রাব্বি।”

রিয়া ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ওরাও হাসলো। রেহানের আম্মু সবাইকে খাবার দিয়ে ওনিও খেতে লাগলেন। খাওয়া শেষ হতেই রেহানের আম্মু মুচকি হেসে রিয়া কাছে এসে দাড়িয়ে বলতে লাগল

“তুই কিন্তু এখন আমার মেয়ে। আমি বকবো আবার আদরও করবো তুই কিন্তু কিছু মনে করতে পারবিনা।”

রিয়া ছলছল দৃষ্টিতে রেহানের আম্মুর দিকে তাকালো। রিয়ার ছলছল দৃষ্টি দেখে রেহানের আম্মু ভরকে গেলো। ওনি অস্থির হয়ে বললেন

“কি হয়েছে তুই বললাম দেখে কি মন খারাপ করলি। তুই পছন্দ না করলে আর বলবো না।”

রিয়া ঝটপটিয়ে বলে উঠলো “না না আপনি আমাকে তুই করেই বলেন আন্টি। এটাই শুনতে ভালো লাগে।”

রেহানের আম্মু আছিয়া বেগম গাল ফুলিয়ে বললেন “তুই আমাকে আপন ভাবতে পারছিস না তাই।”

রিয়া বলল “কেন আন্টি!”

আছিয়া বেগম বললেন “এই যে তুই আমাকে আন্টি বলে ডাকছিস। আমাকে কি আম্মু বলা যায়।”

রিয়া একটা মুচকি হেসে বলল “কেন না আম্মু।”

পাশ থেকে মোহর বলে উঠলো “আম্মু তো আমাকে ভুলেই গেছো নতুন মেয়ে পেয়ে।”

আছিয়া বেগম হেসে মোহরকে আলতো করে জরিয়ে ধরে বলল “পাগলি মেয়ে তোকে কিভাবে ভুলি। তুই তো আমার বড় মেয়ে আর রিয়া মা আমার ছোট মেয়ে।” বলেই দুইজনকে বুকে জরিয়ে নিলেন আছিয়া বেগম।

হঠাৎ করে রিয়ার ফোন বেজে উঠায় রিয়া একটা মুচকি হেসে একপাশে সরে গিয়ে কল রিসিভ করতেই তার পিএ আরিফ বলতে লাগলো

“মেম কাল আপনার ফ্লাইট।”

রিয়া চোখ বন্ধ করে বলল “তুমি একা চলে যাও। আমি যাবো না। অনেকদিন পরে হয় তো সুখের ছোয়া পাচ্ছি আমি। আমি এখান থেকে বিজনেস সামলাবো। আর তুমি এখানে গিয়ে সামলাও সব।”

আরিফ বলল “কিন্তু মেম”

রিয়া আরিফকে আর কিছু না বলতে দিয়ে কট করে ফোন কেটে দিলো। পিছন ঘুরে তাকাতেই সে রেহানকে একদম ফরমাল ড্রেসে দেখে।

রেহান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল “আমি যাচ্ছি বউ। আফিসে একটা জরুরি মিটিং আছে। তাছাড়া যেতাম না। তাড়াতাড়ি ফিরে আসার চেষ্টা করবো।” বলেই ফট করে রিয়ার কপালে একটা চুমু দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।

রিয়া রেহানের এমন আচমকা চুমুতে রিয়া পাথর হয়ে গিয়েছে। মোহরের ডাকে রিয়া নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে মোহরের দিকে তাকালো। মোহর মুখে হাসি নিয়ে বলল “আমার ছেলেটা তোমার সঙ্গে গল্প করতে চাইছে।”

রিয়া হাটু গেড়ে রাব্বির সামনে বসে রাব্বির গাল টেনে বলল “কি গল্প করবে গো আমার সঙ্গে।”

রাব্বি বলল “অনেক গল্প আছে চাচি আম্মু। তুমি শুনবে আমার গল্প।”

রিয়া রাব্বিকে কোলে নিয়ে বলল “হুম বাবু। তুমি বলো।” রিয়ার সম্মতি পেয়ে খুশিতে হাততালি দিতে লাগলো রাব্বি। রিয়া হেসে দিলো ওর কান্ড দেখে।

অনেক আনন্দ মজা করেই সারাদিন পাড় করলো রিয়া। তার কল্পনাতীত ছিলো এতো আনন্দদায়ক মুহুর্ত কাটানো। সে তো ভুলেই গিয়েছিলো কিভাবে হাসতে হয়। আনন্দ করতে হয়। সকালের পর আর দেখা মেলেনি রেহানের। অফিসে কি যেন সমস্যা হয়েছে তাই রেহানের বাবা আর ভাই একা সামলাতে পারছিলেন না। মাঝে মাঝে অনেক কল আর মেসেজ দিয়েছে রেহান। সবগুলোই রিয়ার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কারণ রেহানের একি কথা ভালো আছো। হয় তো কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে তার কিন্তু কি বলবে তা খুজে পাচ্ছে না।

—————

রাত বারোটা বাজে। এই সময় রিয়ার কফি খাওয়ার অভাস। সেই মতোই এক মগ কফি নিয়ে বারান্দায় রেহানের জন‍্য অপেক্ষা করে বসে রইলো। আর সারাদিনের মুহুর্ত গুলো মনে করতে লাগলো।

আচমকা পেটে কারো আলতো স্পর্শে কেপে উঠলো রিয়া। রেহান রিয়ার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করতে বলতে লাগলো

“মিস করেছো আমায় বউ”

রিয়া কেপে উঠলো। রেহান রিয়াকে নিজের দিকে করে একটা গোলাপ ফুল আর বেলি ফুলের মালা ওর হাতে পরিয়ে দিলো। রিয়া অবাক হয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল

“আপনি কিভাবে জানলেন গোলাপ আর বেলি ফুল পছন্দ!”

রেহান ক্লান্ত শরীরে মুচকি হেসে বলল “এই দুটো ফুল আমারো খুব পছন্দ। তাই নিয়ে এসেছি আমি জানতাম না তোমারও পছন্দ।”

রিয়ার মুখটা ছোট করে মনেমনে বলল “ওর ও যে এই ফুল গুলো প্রতিদিন এনে দিতো আমায়।”

রেহানের ডাকে রিয়ার ভাবনায় ছেদ ঘটলো। রেহান বলল “এগুলো এনেছি দেখে কি তোমার মন খারাপ হয়ে গেলো।”

রিয়া মুখে হাসি টেনে বলল “না না মন খারাপ একটা অন‍্য বিষয়ে হয়েছে।”

রেহান মুখ ছোট করে বলল “ওও”

#চলবে