বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি পর্ব-০৭

0
361

#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

রেহানের মন খারাপ দেখে রিয়া রেহানের গাল টেনে বলল “মিস্টারের দেখি মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমি সত্যি বলছি এই ফুল গুলো নিয়ে আসায় আমি কতটা খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারবো।”

রিয়ার কথায় রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে বলে উঠলো “খাবার খেয়েছো”

রিয়া বলল “হুম এখন তাড়াতাড়ি চলেন তো খেয়ে নিবেন। দেখে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে।”

রেহান বলল “আচ্ছা চলো”

রিয়া রেহানকে খাবার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রেহান রিয়ার হাত টেনে ওর পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো। এক লোকমা ভাত নিয়ে রিয়ার মুখের সামনে ধরে ইশারায় খেয়ে নিতে বলে। রিয়া না করতে গিয়ে ও রেহানের জোড়াজড়িতে খেতে থাকলো। রিয়া কয়েকবার খেয়ে আর খাবেনা বলল। রেহান বাচ্চাদের মতো করে মুখ করে রিয়াকে খাবার খাইয়ে দিয়ে বলল। রেহানের ফেস দেখে রিয়া ফিক করে হেসে দেয়। রেহান রিয়ার হাসি দেখে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল

“আমার খুব শখ বউয়ের হাতে খাবার খাওয়া। কিন্তু আমার কেউ নেই আমি একা একা বোকা।”

রেহানের কথা শুনে রিয়ার হাসি চলে এলো। ও হাসতে হাসতেই খাবার রেহানের মুখে তুলে দিলো। রেহানও মুচকি হাসি দিয়ে খেতে লাগলো।

“জানপাখি এমন করে হেসো না। বুকে এসে লাগে। বুক যে ছেদ করে যায় তোমার ওই হাসি।” বুকে হাত দিয়ে বলল রেহান।

রিয়া হেসে দিলো।

খাবার শেষে ওরা রুমে চলে গেলো। বেডে দুইপাশে শুয়ে আছে রেহান আর রিয়া। রেহান সিলিং এর দিকে চোখ রেখে বলল

“তা আজ সারাদিন কেমন কাটলো। কোনো অসুবিধা হয় নি তো।”

রিয়া রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “সারাদিন অনেক ভালো কেটেছে। জানেন আপনার পরিবারের সবাই অনেক ভালো। বিশেষ করে আপনার আম্মু অনেক ভালো। আমার কাল ফ্লাইট..”

রেহান শোয়া থেকে উঠে বসে পরলো। আর বলল “তুমি কি চলে যাবে!”

রিয়া বলল “না আমি আরিফ মানে আমার পিএকে বলে দিয়েছি ও গিয়ে ওখানে সব সামলাবে আর আমি এখানেরটা মেনেজ করবো। আসলে আমি অনেক দিন হাসি নি। হাসতে ভুলে গেছিলাম আমি। এখানে এসে আমি মন খুলে হেসেছি। আপনারা সবাই আমাকে এমন করে আপন করে নিয়ে কেয়ার করবেন। আমি কখনো ভাবতে পারিনি। আসলে ওইদিনগুলোর পর ওই মানুষ গুলোর পরে যে এতো কিছু পাবো আমি কখনো ভাবতে পারিনি।”

রেহান শান্ত হলো রিয়ার কথা শুনে। রেহান মুচকি হাসে। সে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল “ঘুরতে যাবে কাল”

রিয়া রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “কোথায়”

রেহান বলল “বলা যাবে না ; বলো যাবে নাকি।”

রিয়া বলল “হুম”

রেহান বিভিন্ন কথা বলতে থাকলো। কিছুক্ষণ পর রেহান খেয়াল করলো রিয়া ঘুমিয়ে গিয়েছে। রেহান হাতে ভর দিয়ে রিয়া দিকে তাকিয়ে রইলো। ও ওদের মাঝে থাকা কোলবালিশটা আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে জরিয়ে ধরলো রিয়াকে। রিয়া ঘুমের মধ্যেই খানিকটা কেপে উঠলো। রেহান মনেমনে বলতে লাগল

“এখন থেকে তুমি সবসময় হাসিখুশি থাকবে। আমি থাকতে কখনো তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না জানপাখি।” রেহান আলতো করে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলো রিয়ার কপালে তারপর রেহানও ঘুমিয়ে পরলো।

সকালের মিষ্টি আলো চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো রিয়া। ও পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো রেহান সদ‍্য গোসল করে বের হয়েছে। পরনে শুধু একটি টাওয়েল পরা। এমন অবস্থা দেখে রিয়া তাড়াতাড়ি করে চোখ সরিয়ে নিলো। রেহান এসে রিয়ার সামনে এসে বলল

“যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আম্মু ডেকে গেছে একবার।”

রিয়া উঠে দাড়াতেই রেহান ওর কোমর পেচিয়ে ওর কাছে নিয়ে এলো। রিয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। রেহান বলল “ছাড়ার জন‍্য তো ধরিনি জানপাখি। জানো ঘুম থেকে উঠার পর এলোমেলো চুল আর তৈলাক্ত ফেসে তোমাকে কতো সুন্দর লাগছে। মন তো চাচ্ছে..”

রিয়া চোখ ছোট ছোট করে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “কি মন চাচ্ছে?”

রেহান একটা দুষ্টামি হাসি দিয়ে রিয়া আরো কাছে নিয়ে এনে বলল “বলা যাবে না। এখন যাও আম্মু অপেক্ষা করছে।” বলেই রিয়া ছেড়ে দিলো।

রেহানের মায়ের কথায় অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই রিয়াদের বাড়িতে গেলো রেহান আর রিয়া। ওখানে থেকে ঘুরে ওরা কিছু সপিং করতে যাবে।

বাড়ির দরজার কাছে গিয়েই রিয়া থমকে গেলো। সাত বছর পর সেই মানুষটার দেখা পেতেই বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো। বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে কেউ ওর পা ধরে আটকে রেখেছে। সামনের দিকে এগোতে দিচ্ছে না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ওর। কষ্টগুলো সব দলাপাকিয়ে ভিতরে আন্দোলন শুরু করেছে। রেহান অনেকক্ষণ যাবত ডাকছে রিয়াকে কিন্তু রিয়ার ঘুরে তাকানোর মতো শক্তি হচ্ছে না। অনেক কষ্টে রিয়া রেহানের দিকে তাকালো। রেহান রিয়াকে এমন অবস্থায় দেখে চমকে উঠলো। ও অস্থির হয়ে রিয়াকে জিঙ্গাসা করতে লাগলো কি হয়েছে। কিন্তু রিয়া চুপ করে আছে। হঠাৎ করেই রিয়া রেহানকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলো। রেহান বুঝতে পারছেনা কি এমন হলো যে রিয়ার এমন অবস্থা। কিছুক্ষণ পর রিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলে ওরা বাড়িতে প্রবেশ করলো।

গুটিগুটি পায়ে ফুপি বলে চলে এলো কুহু। রেহান কুহুকে নিজের কোলে তুলে নিলো। রিয়া চুপচাপ হয়ে মেঝেতে দৃষ্টি দিয়ে রয়েছে। হঠাৎ একটা গম্ভীর কন্ঠে কেপে উঠে রিয়া। সেই পরিচিত কন্ঠ।

“কেমন আছো রিয়া?”

রেহান তিয়াস ভাই বলেই জরিয়ে ধরলো সামনে থাকা ব‍্যক্তিটিকে। তিয়াস ও জরিয়ে ধরলো।

তিয়াসের দৃষ্টি এখনো রিয়ার দিকে। কিন্তু রিয়া একবারও ওর দিকে তাকায় নি। হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে রিয়াকে। আর মামুনি মামুনি বলে ডাকতে থাকে। রিয়া বাচ্চাটাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও বাচ্চাটা ছাড়ছে না আরো জোরে ধরছে। জরিয়ে ধরার জন‍্য রিয়া বাচ্চাটার মুখও দেখতে পারছে না।

রেহান কুহুকে নামিয়ে দিয়ে হাট গেড়ে বসে বাচ্চাটার মাথায় হাত দিয়ে বলে

“তিহান বাবু কি হয়েছে তোমার? তুমি চকলেট খাবে না।” অনেক কিছু বলেও রেহান বাচ্চাটাকে সরাতে পারলো না।

তিয়াস এসে কোলে তুলে নিলো বাচ্চাটাকে। বাচ্চাটার ফেস দেখে থমকে গেলো রিয়া। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও। তিয়াস মুচকি হেসে বলল

“আসলে ও ছোট থেকে মায়ের আদর পায়নি তো। আর তোমাকে দেখে মামুনি বলে ফেলেছে।”

রিয়া দেখলো তিয়াসের চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। চোখ নিচে লোকটির কালো দাগ পরে গিয়েছে। মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে আছে। রিয়া আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না তিয়াসের দিকে। আজিজুল সাহেব এসে….

#চলবে