বৃষ্টিবিলাস পর্ব-২৩

0
616

#বৃষ্টিবিলাস
২৩.
#writer_Mousumi_Akter

“বেঈমান রা কি এমন ই হয় মিষ্টার আয়ান আহমেদ শুভ।বেঈমান দের অভিনয় কি এতই নিঁখুত হয়।কারো মনে ভালবাসার দাগ কেটে সীমাহীন কষ্ট উপহার দেওয়ার মাঝে পৈচাশিক আনন্দ আছে তাইনা?কারো চোখের পানি কতটা ভয়াবহ যন্ত্রণায় বের হয় আপনি কি জানেন।কত বিষাক্ত যে যন্ত্রণা।এখন কি হ্যাপি আপনি।আমি শুধু এটুকু জানতে চাই এখন কেমন লাগছে আপনার।না মানে আপনি হ্যাপি তো।আমার সাথে ফ্লার্টিং করে আপনি কতটুক হ্যাপি।আপনার ফিলিংস টা এখন কেমন শুধু এটুকু জানতে চাই।নিশ্চয় অনেক হ্যাপি আপনি।ভালবাসার অভাবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসা একটা মেয়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে ঠকিয়ে ঠিক কতটুক আনন্দ পেলেন।কারো মন ভাঙতে পারার আনন্দ কেমন হয় মিষ্টার আয়ান আহমেদ শুভ সেটা আপনার থেকে শিখতে হবে।আপনি কেনো ঠকালেন এটা জানতে চাইবো না আর আমি।জেনে কি লাভ হয়তো শোনাবেন কোনো মিথ্যা গল্প।আবারো জড়াবেন কোনো মিথ্যা ভালবাসার গল্পে।তাই কিছুই জানতে চাইবো না।কেননা যে ঠকায় তার কাছে কোনো প্রশ্নের উত্তর থাকেনা।তার উদ্দেশ্য ঠক,অসৎ আর মিথ্যায় ভরপুর।আমি চলে যাচ্ছি আয়ান আহমেদ শুভ।এই চোখের পানির মূল্য কোনদিন চাইবো না।এর মূল্য কেউ দিতে পারে না।এটা একান্ত আমার করে নিয়ে গেলাম।পৃথিবীর মানুষ বড্ড নিষ্টুর, বড্ড হৃদয়হীন।চারদেওয়ালের বাইরে না বেরোলে আজ বুঝতেই পারতাম না।অপূর্ণতায় ঘেরা এই ভালবাসা নিজের ভেতর লালন করবো আমি।আমার সব টা জুড়ে ভালবেসেছিলাম আমি আপনাকে।আপনার সবটা মিথ্যা ছিলো কিন্তু আমার সবটা সত্য ছিলো।কখনো ভাবিনি জীবনে এতটা কষ্ট আসবে।আমার জীবন টা একদম ই নষ্ট হয়ে গেলো। চলে যাচ্ছি আমি। আপনার বিবাহিত জীবনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা শুভ।”

চিঠিটা পড়ে ভীষণ অবাক হয়ে গেলো শুভ।কয়েক জায়গা কালি লেপ্টে গিয়েছে।স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে চিঠি লেখার সময় রোজার চোখের পানি পড়ে পড়ে এমন হয়েছে।শুভর বুকটা কেঁপে উঠলো রোজা তাকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে গিয়েছে।কিন্তু কেনো কি করেছে সে।চিঠিটা হাতের মুঠোয় দলা করে ফেললো শুভ।শুভর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সোহানা আর রাজ।মাত্রই ঘুম থেকে উঠলো শুভ।শুভর অজান্তে কত কি ঘটে গিয়েছে শুভ নিজেই জানেনা।শুভ রাজ আর সোহানার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

“মন ভীষণ ভারী করে শুভ বললো,ভাবি কি হয়েছে?”

“সোহানা বললো,আমি ঠিক জানিনা শুভ।আমি ঘুমিয়ে ছিলাম রোজা আমার রুমে গিয়ে বললো আপু এই চিঠিটা শুভ কে দিও।একটা সারপ্রাইজ আছে।আমি বললাম তুই দিয়ে দে।রোজা বললো আমি ঘুমোতে যাচ্ছি তুমিও ঘুমোও, শুভ ঘুম থেকে উঠলেই দিও কেমন।ওর চোখ মুখ কেমন অস্বাভাবিক লাগছিলো।আমি ঘুমের ঘোরে কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।আমি আরো এক ঘন্টা পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি রোজা কোথাও নেই।আমি আর মা পুরো বাড়ি খুজেও রোজাকে পাই নি।এই অচেনা শহরে রোজা কোথায় হারিয়ে গেলো।আর তোমাকেই বা এই চিঠি কেনো?”

“রাজ বললো,ভাবি একটু বাইরে যাও আমার শুভর সাথে একটু কথা আছে। সোহানা বিষয় টা বুঝতে পেরে বাইরে চলে গেলে।”

“শুভ মলিন মুখে তাকিয়ে বললো,কি হয়েছে রাজ? রোজাকে তুই কিছু বলেছিস। আমার সম্পর্কে তো এখানে কারো কিছু জানার কথা নয়।কি হলো রাজ বল ভাই।কিছু কি জানিস রোজার কি হয়েছে আমাকে কেনো ভুল বুঝলো।”

“রাজ শান্ত চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,তুই রোজার সাথে এমন করলি কেনো শুভ?কেনো অভিনয় করলি ওর সাথে।মেয়েটা ভীষণ ইনোসেন্ট ছিলো শুভ।তুই তো ভালবাসা নিয়ে অভিনয় করা ছেলে না ভাই।হঠাত কি হলো।”

“আমি অভিনয় করেছি?আমি কি অভিনয় করতে পারি।আমি রোজাকে ভালবাসি রাজ। বাট তুই কি কিছু বলেছিস রোজাকে।”

“রোজা আমাকে বলছিলো তুই নাকি রোজাকে ভালবাসিস।আমি বললাম তুই অন্য কাউকে ভালবাসতে পারিস না।বিকজ তুই ছোট বেলা থেকে অন্য কাউকে ভালবাসিস।হয়তো ফান করেছিস রোজার সাথে।বিলিভ মি ভাই আমি রোজাকে ভুল বোঝাতে কিছুই বলিনি।আর রোজা তোকে নিয়ে এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি আমি।এইভাবে সব ছেড়ে চলে যাবে ভাবতে পারিনি।”

“আমি রোজাকে ভালবাসি রাজ।ভীষণ ভালবাসি রাজ।তোকে অনেক কিছু বলার ছিলো তার আগেই সব এলোমেলো হয়ে গেলো।”

“তাহলে সেই মেয়েটা।যার জন্য এত গুলো বছর অপেক্ষা করলি।”

“শুভ রাজ কে জড়িয়ে ধরে বললো,
সেই মেয়েটায় এই মেয়েটা রাজ।সেই মেয়েটায় আজকের ইরহাম আহমেদ রোজা।আমি ওকে ভীষণ ভালবাসি।প্লিজ ওকে ফিরিয়ে এনে দে।আই ওয়ান্ট রোজা।একমাত্র তুই পারবি ওর ভুল ভাঙাতে।তুই তো জানিস ছেলেবেলার ভালবাসা কত যত্নে আগলে রেখেছি আমি।ওর জন্য আমি ঠিক কতটা পাগল।”

“রাজ ভীষণ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,তাহলে রোজা বাড়ি ছেড়ে পালালো কেনো?”

“আমি নিজেও জানতাম না।বাসে প্রথম যখন ওর মুখ দেখলাম আমার ভেতরে শুরু হলো ভীষণ কম্পন। নড়াইল থেকে ফিরে গেলে যার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা সে কিনা পালিয়ে এসছে।যদিও এর আগে রোজা আমাকে কল দিয়ে বলেছিলো আমার মতো বয়সী ছেলে সে বিয়ে করতে চাই না।ভেবেছিলাম সে সেইম বয়সী ছেলে বিয়ে করতে চাইছে।হয়তো সিনিয়র পারসন লাইক করে না।কিন্তু তাকে বাসে দেখে বুঝেছিলাম সে সত্যি পালিয়ে এসছে।তখন ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম রোজাকে আমার ভালবাসা বোঝাবো।রোজাকে ভালবাসার অনুভূতি বোঝাবো যেনো রোজা সিনিয়র পারসন কে ভালবাসতে পারে।তার পর সত্য বলবো।যাতে রোজা খুশী মনে আমাকে গ্রহন করতে পারে।তবে কিছু রহস্য থেকে গিয়েছে রোজা বারবার বলছিলো ওর বিয়ে একটা মধ্যবয়সী মানুষের সাথে ঠিক হয়েছে।কিন্তু ওর বিয়েতে আমার সাথে ঠিক হয়েছিলো।”

রাজের সমস্ত শরীর কাঁপতে শুরু হলো।শুভর কথা শুনে শরীরের সমস্ত বলশক্তি হারিয়ে ফেললো।একমাত্র বন্ধুর ভালবাসার কাছে নিজের ভালবাসা তুচ্ছ মনে হলো রাজের।রোজাকেও প্রচন্ড ভালবেসে ফেলেছে আজ রাজ।ভেতর টা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে রাজের।নিজের ভালবাসার মানুষ কে ছেড়ে দেওয়া সহজ কথা নয়।আর মন কারো কথা শুনে চলে না।রোজা এমন একটা মেয়ে যাকে শুভ ভালবাসে আরো বহু বছর আগে থেকে।রাজ জানে সে রোজাকে ছাড়া ম*রে যাবে না তবে কষ্ট হবে।কিন্তু শুভ রোজাকে ছাড়া ঠিক ই মরে যাবে।সেই ছোট বেলা থেকে শুভ ভালবাসে রোজাকে পাগলের মতো ভালবাসে।শুভ যে শুধু রোজাকে ভালবাসে তাই নয় রাজকেও ভীষণ ভালবাসে।ভাজ্ঞিস তার ভালবাসার কথা শুভ বা রোজা কাউকেই জানায় নি সে।নিজের ভালবাসার কষ্ট সহ্য করতে পারলেও নিজের বন্ধুর কষ্ট সহ্য করতে পারবে না রাজ।ত্রীকোন ভালবাসার সব থেকে মর্মান্তিক কষ্টের জায়গা অবস্থান করছিলো রাজ।অপ্রকাশিত ভালবাসা গুলো ভীষণ পোড়ায়।এমন একজন কে ভালবাসে যাকে চাইলেও অন্যায় হবে আবার ভোলা ও সম্ভব নয়।রাজ পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।

“শুভ বললো,আমি ঢাকা ফিরে যাচ্ছি রাজ।বাবা কে নিয়ে রোজার বাসায় যেতে হবে।সব টা রোজাকে বলতে হবে।আমার মনে হয় বাবা জানেন না যে রোজা পালিয়েছে।রোজার বাবা হয়তো বলেন নি।কেননা বাবা আমার বিয়ের শপিং করছেন।”

“রাজ বললো,তুই যা শুভ তোর ভালবাসার কাছে।আমি কাল ই ফিরছি।তোর জীবনের সব আনন্দ নষ্টের মূলে আমি।আমি আমার জীবনের সব থেকে বেষ্ট ট্রাই করবো রোজাকে তোর জীবনে ফিরিয়ে আনার।আমাকে ক্ষমা করে দে।শুভ কে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁদছে রাজ।এই কাঁন্নার কারণ হয়তো রাজ কোনদিন শুভকে বুঝতে দিবে না।

চলবে,,