বৃষ্টিবিলাস পর্ব-৩৬

0
429

#বৃষ্টিবিলাস
৩৬.
#Writer_Mousumi_Akter

ড্রয়িং রুমে সাথে সাথেই রীনা পারভীন প্রবেশ করে রোজাকে দেখেই বেশ ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,

“একি রোজা তুই এখানে কেনো?”

শুভ বললো,”আমি ডেকেছি।”

“ওহ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।বাড়ির হবু জামাই আজ প্রথম এ বাড়িতে এসছো। দুপুরে না খেয়ে কিন্তু যাবে নাহ।আজ আমি সব রান্না করবো তোমার জন্য।”

“আমি আজ কিছুই খাবো না। তবে আপনাদের জামাই হলে নিশ্চয়ই খাবো।আমি অহনার সাথে পারসোনাল ভাবে কথা বলতে এসছি আপনার কোনো আপত্তি আছে আন্টি।”

“আপত্তির কি আছে বাবা এতে।বাইরে কোথাও যাওয়া ঘুরে এসো দুজনে।বিয়ের আগে দুজনের কথা বলা ভালো। ”

“তার আগে আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।”

“যা বলতে চাও বলো বাবা।”

“আমি আমার আর অহনার বিয়ে নয় আন্টি আমার আর রোজার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে এসছি।আপনাদের সবার অনেক বড় মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে।ভুল টা সবার ই ভাঙা উচিত আন্টি।একটা ভুলে অনেক কিছু উল্টে পাল্টে গিয়েছে।আমি অহনাকে ভালবাসিনা কোনদিন ভালবাসতেও পারবোনা।আমি রোজাকে ভালবাসি আন্টি।এখন বলেন জেনে শুনে এমন একটা ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন।অহনার এমন ক্ষতিটা কেনো করবেন।যে আপনার মেয়েকে ভালবাসবেনা তার সাথে বিয়ে দিলে কি আপনার মেয়ে সুখি হবে।আমি রোজাকে বিয়ে করতে চাই।জেনে শুনে তিনটা জীবন কেনো নষ্ট করবেন।তাছাড়া আমার বিয়ে তো রোজার সাথেই ঠিক হয়েছিলো।আর আমার মনে হয় আপনাদের ই কারো ভুলে রোজা ভুল বুঝেছিলো।এতে রোজার কোন দোষ নেই।”

“তুমি কি বিয়েটা ভেঙে দিতে এসেছো?”

“আমার সাথে রোজার বিয়েটা পাকাপক্ত করতে এসেছি। অহনা আমরা কি কথা বলতে পারি।তোমার মায়ের সাথে আমার কথা শেষ।”

অহনা শুভ কে নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করলো।শুভ খুব বিনয়ের সাথে বললো,

“অহনা আই এ্যম সো সরি।আসলে আমি জানিনা কি বলবো তোমায়।আমি রিয়েলি সরি অহনা।আমার জীবনের পুরোটা জুড়ে রোজা।এই জায়গাতে আমি ভীষণ সেল্ফিস অহনা।আমি জানিনা আমার অনিচ্ছায় তোমাকে কতটা হার্ট করলাম।”

“অহনা খুব জোরে হেসে দিয়ে বললো আরে এসব কি বলছেন।আমি আগেই জানতাম সব।আমি একটু এক্টিং করছিলাম সবার সাথে।আপনি আমার একমাত্র দুলাভাই আর আমি আপনার শালিকা।আপনার মুখটা কেমন চুপসে গিয়েছে দেখুন।আমাকে নিয়ে একটু ও ভাববেন না।আমার অন্য একজনের সাথে মনে মনে ইয়ে হয়ে গিয়েছে।আমি এত চাপ না নিয়ে একা একা বিয়ে করে নিবো দেইখেন।”

অহনার কথা শুনে শুভর মন থেকে যেনো একটা ভীষণ বড় বোঝা নামলো।শুভ নিশ্চিন্ত মনে বিদায় নিলো অহনার থেকে।

সেদিন সন্ধ্যায় নাহিদ রোজার বাবাকে বললো,

“কাকু শুভ এসেছিলো।সে বলে গিয়েছে এই বিয়ে সে করতে পারবে না।সে রোজাকে বিয়ে করতে চাইছে।”

“ইকবল আহমেদ বললেন,বাড়িতে আত্মীয় আসতে শুরু করেছে।এখন এসব কি কথা।রোজাকে আমি আর ওই ফ্যামিলিতে কিছুতেই বিয়ে দিবোনা।বিয়ে কি মজা নাকি। আজ এর সাথে তো কাল ওর সাথে।রোজাকে আমি আর এসবের মাঝে জড়াতে চাইনা কিছুতেই না।”

“কাকু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। তাছাড়া অহনা নিজেও এ বিয়েতে রাজি না।”

“যা খুশি তোমরা করো।আমার মেয়েকে এসবের মাঝে আর জড়াবোনা।”

শুভ নিজে এসে বলে যাবার পরেও অহনার মা কিছুতেই মেনে নিতে চাইছিলোনা।শুভর বাবাকে বিয়ে নিয়ে প্রেসার দিয়ে যাচ্ছিলো।রোজা আর শুভর বিয়ে যেনো অহনার জন্যই আটকে গেছিলো।বাড়িতে আত্মীয়ে ভরপুর হয়ে গিয়েছে।দুইদিন বাদেই বিয়ে।অহনার মা কাউকেই জানায় নি যে শুভ বিয়ে করতে রাজি নাহ।রোজার বাবা এ ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছেন না।অহনার মা যা ইচ্ছা করুক।শুভর বাবা যেনো রোজাকে মেনে নেয় সে পথ ক্লিয়ার করতেই পরের দিন ঘটলো ভীষণ অবাক করা ঘটনা।

কথা অনুযায়ী সেদিন অহনার গায়ে হলুদ হবার কথা।বাড়িতে সোহানাদের ফ্যামিলির সবাই ও হাজির হয়েছে।কিন্তু অহনাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।সারাদিন অহনা বাড়িতে নেই।আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশী বিভিন্ন কথা বলাবলি করছে।মেয়ে ভেগেছে এমন কথা ই বলাবলি হচ্ছে।রোজা ও ভীষণ দুঃচিন্তায় আছে।অহনার সাথে রাজ ও নিঁখোজ।তারা কেউ ফোন তুলছে না।সন্ধ্যার পরে অহনা এমন ভাবে এসে হাজির হলো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।অহনার পরনে লাল বেনারসি রাজের পরণে সেরওয়ানি।বাড়ি ভরা আত্মীয় স্বজন সবাই অবাক।রোজা তো আরো বেশী অবাক।কবে কখন তাদের রিলেশন হলো কেউ জানেনা।রোজা মনে মনে ভাবছে তলে তলে টেম্পু চালালো আমরা বুঝতেও পারলাম না।সোহানা, রাজের আম্মা সবাই ভীষণ অবাক হয়ে গেলো।কেউ কিছু বুঝতেই পারলোনা।
অহনার বাবা একদিন আগেই বাড়িতে এসে পৌছেছেন।বাড়ির আত্মীয়দের সমালোচনার শেষ নেই।তবে অহনার বাবা সব টা শুনেছেন আগেই তাই সে মেয়ের সাপোর্ট এ আছে।সবার অনেক প্রশ্ন মনে জেগেছে অহনা বুঝতে পারলো।তবে সবার সব কথার উত্তর না দিয়ে অহনা নিজের মাকে বললো,

“আমি আর রাজ বিয়ে করেছি মা।রাজ আর আমি দুজন দুজনকে ভালবাসি।”

“রীনা পারভীন সোজা বলে দিলেন,এই বিয়ে মানিনা,লোক জানাজানির আগে রাজ এখান থেকে চলে যাও।অহনার বিয়ে শুভর সাথেই হবে।”

“অহনার বাবা অহনার মায়ের গালে থাপ্পড় মেরে বললেন,বেয়াদব মহিলা একটা।আমার মেয়ের জীবন নিয়ে জু*য়া খেলছিস।যে ছেলে বিয়ে করবে না তার সাথে জোর করছিস।আমার মেয়ে তোর এই অশান্তি থেকে বাঁচতে বিয়ে করেছে।একদম ঠিক করেছে অহনা আজ।শুভ শুভ কেনো করছিস।শুভর বিয়ে রোজা মায়ের সাথেই হবে।”

অনেক টা অশান্তির পরে অহনার বাবা রোজা কে বললো,

“ওদের ঘরে নিয়ে যাতো মা।”

রোজা ওদের ঘরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে বললো,

“আচ্ছা অহনা তুই প্রেম করলি কবে আমিতো কিছুই জানলাম না।”

“আমরা তোর মতো প্রেম নিয়ে অশান্তিতে পড়তে চাইনি তাই সোজাসুজি বিয়ে।তাইনা রাজ বলো।”

রাজ বললো,”ইয়েস বউটা”

রোজা পালিয়ে গেলে যে অপমান টা ইকবল আহমেদ হয়েছিলেন আজ তার থেকে দ্বীগুন অপমান রীনা পারভীন হয়েছেন।শুভর বাবা অহনার মাকে ইচ্ছ মতো কথা শুনালো।রোজার সাথে যা করেছিলো তার হাজার গুন নিজে ফেরত পেলো।

সেরাতে রাজ বললো,

“অহনা তুমি হঠাত বিয়ের নাটক করলে ক্যানো?এই মিথ্যা বিয়ের নাটক কেনো?”

“আমি এখন বিয়ে করে নিয়েছি।আমার মা তো আর জোর গলায় বলতে পারবে না কিছু শুভর বাবাকে।এখন রোজা আর শুভর পথে কে বাঁধা হবে শুনি।এখন আর কোনো বাঁধা নেই।থ্যাংক্স রাজ।আমার কথাটা শোনার জন্য।আমাকে হেল্প করার জন্য।রোজা আর শুভর বিয়ে হলে এই মিথ্যা বিয়ের নাটক টা আর তোমাকে করতে হবেনা রাজ জাস্ট কয়েকদিন।”

দুজন মানুষ বন্ধুত্ত্বের জন্য যেটা করলো ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে থাকবে।সত্যিকারের বন্ধুত্ব কিছু মানুষের মাঝে আজ ও আছে।রাজ আর অহনা দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ।

–শুভর বাবা রোজার বাবার কাছে ক্ষমা চাইলেও রোজার বাবা আর মেয়ে দিতে রাজি হন নি।ইকবল আহমেদ কারো কথায় শুনতে চান নি।শুভ রোজার জন্য ফোন পাঠিয়েছে।সে ফোনেই কথা হচ্ছে দুজনের।রোজার বাবাকে সবাই বুঝাচ্ছে কিন্তু সে আর রাজি নাহ এই বিয়েতে।শুভর মা -বাবা অনেক বার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু কাজ হচ্ছেনা।এই বর্ষার মৌসুমে রোজ বৃষ্টি হচ্ছে।শুভ রোজ ওই জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে রোজার জন্য।শুভ রোজাকে বলেছে পালিয়ে আসতে।কিন্তু রোজা বাবার মাথায় হাত দিয়ে ওয়াদা করেছিলো সে আর বাবাকে ছেড়ে ওভাবে যাবেনা।বাবার কথা ভেবে রোজা বাড়ি থেকে পা বাড়ায় নি।

এভাবে কেটে গেলো আরো সাতদিন।শুভ আর জানালার পাশে আসেনা।রোজা চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।শুভ তো না আসার ছেলে নাহ।রোজা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।রাজ আর অহনা নড়াইল রাজের বাড়ি চলে গিয়েছে।এইজন্য আর খোজ নিতে পারছে না।শুভর মা রোজাকে ফোনে জানালো শুভ হসপিটালে,অবস্থা বেশী ভালো নাহ।টাইফয়েড হয়েছে অবস্থা খুব ই খারাপ।কথাটা শুনেই রোজার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।শুভর কিছু হলে কি হবে রোজার।এটা ভেবেই রোজা ফোন ফেলে নিজের বাবার কাছে ছুটে গেলো।

চলবে,,