#বৃষ্টিবিলাস
২৬.
#writer_Mousumi_Akter
–হঠাত দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে পেছনে ফিরে তাকালো রোজা আর অহনা।
অহনার মা মিসেস রিনা পারভীন সাথে অহনার ভাই নাহিদ সাথে রোজার বাবা ইকবল আহমেদ।রোজা আর অহনা দুজনে বেশ অবাক হলো সবাইকে এক সাথে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে।রোজা চোখের পানি মুছে বেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলো।সবার চোখে মুখে বেশ গম্ভীরতা।একে একে সবাই ভেতরে প্রবেশ করে রোজার খাটে বসলো।তারা যে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে কথা বলতে এসেছে তাদের মুখের ভাব ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।রোজা আর অহনা দুজন দুজনের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।তারাও বেশ চিন্তিত পরিবারের সবাই ঠিক কি বলতে চাইছে।
“রোজাকে অহনার ভাই নাহিদ বললো, রোজা অহনা তোদের দুজনের সাথে কথা ছিলো।ঠান্ডা মাথায় শুনতে হবে।দুজনের কেউ কোনরকম রিয়্যাক্ট করতে পারবিনা।আমরা পরিবারের সবাই বেশ চিন্তিত।”
রোজা বুঝতে পারলো বেশ জটিল কিছু বলবে।
“রোজা বললো,কি বলবা নাহিদ ভাইয়া বলো না।এত ফরমালিটি করছো ক্যানো?আমার তো ভয় হচ্ছে যে কোনো মারাত্মক ব্যাপার কিনা।”
রোজার বাবা চুপচাপ বসে আছেন কোনো কথা বলছেন না।রোজার বাবা ভীষণ বিরক্ত বোঝায় যাচ্ছে।
“অহনার মা মিসেস রিনা পারভীন বললেন,তোমরা কেউ উত্তেজিত হতে পারবে না। আমরা উপায় না পেয়ে ভেবে চিন্তে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমাদের কিছু করার ছিলো না।”
“অহনা বললো,এত ভনিতা না করে বলোই না কি হয়েছে মা।তোমরা তো আমাদের দুজনের টেনশন হাইপার করে দিচ্ছো।এক্ষুণি বলো আগে কি হয়েছে।”
“আহনার মা বললো,অহনা তোমার বিয়ে আর সাতদিন পরে।বিয়েটা কিন্তু তোমাকে করতেই হবে পরিস্হিতি যায় হোক।”
“বিয়ে করবো না কখন বলেছি মা।”
“নাহিদ বললো,কারণ আমরা কিছু লুকিয়েছি তোর কাছে অহনা।তখন ই তোকে জানালে তুই রাজি হতিনা এ বিয়েতে।তাই গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়েছে।”
“কি লুকিয়েছো?আর কেনো?”
“অহনার মা বললো,তোমরা দুজনেই তো জানো রোজা পালিয়ে যাবার পরে আমাদের পরিবারের মান সম্মান চলে যাচ্ছিলো প্রায়।ওদিকে রোজার বিয়ে ঠিক ছিলো তারা আমাদের বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছিলো।রোজার যে ফ্যামিলিতে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তারা অনেক নামকরা ধনী ফ্যামিলি। তারা তাদের ছেলের বিয়ের এনাউন্সমেন্ট আগেই করে রেখেছিলো।ছেলেপক্ষের কাছে তাদের সম্মান বাঁচানো টা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।ছেলের বাবা আমার কাছে অনুনয় করলেন আমরা যেনো অহনার সাথে তার ছেলের বিয়ে দেই।তাহলে তাদের মান সম্মান বাঁচবে।তারা বলতে পারে ওই এক ই ফ্যামিলিতে বিয়ে হচ্ছে,পাত্রী পালায় নি।একটা মানুষের এমন অনুনয় বিনয় আমি ফেলতে পারিনি রাজি হয়েছি।অহনাকে না জানিয়েই রোজার রিজেক্ট করা ছেলের সাথে অহনার বিয়ে ঠিক করেছি।কিন্তু রোজার বাবা সেখান থেকে আমাদের সাথে খুব একটা কথা বলেন না।আমাদের উপর রেগে আছে।কোনভাবে এই বিয়ে সে মানতে চাইছে না।আচ্ছা মা রোজা তুই বল তুইতো স্বইচ্ছায় এ বিয়েতে রাজি হস নি।এখন অহনার সাথে বিয়ে হলে কি তোর খারাপ লাগবে।ছেলেটা কিন্তু ভালো।আমি বুঝতে পারছি সবার পছন্দ এক না তোর পছন্দ না হতেই পারে।কিন্তু আমার পছন্দ হয়েছে অহনার জন্য।ব্যাপার টা কিন্ত এমন না যে তোর বিয়ে ভেঙে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিচ্ছি।”
অহনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।রোজার সেই নিজেক্ট করা পাত্র কিনা অহনার ফিওন্সি।যাকে অহনা দেখেই পছন্দ করেছে।তাহলে রোজা এই ছেলেকে বয়স্ক বলে রিজেক্ট করলো ক্যানো?ক্যানো রিজেক্ট করলো সেটা পরে ভাবা যাবে কিন্তু তার কি নিজের কোনো সম্মান নেই।যে পাত্রকে বিয়ে করবে না বলে তার বোন বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে তাকে মিথ্যা বলে ঠকিয়ে তার মা আর ভাই কিনা সেই ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে।এটা কি মেনে নেওয়ার মতো।ভাবলেই গা গোলাচ্ছে অহনার।সে কিছুতেই রোজার ঠিক হওয়া পাত্রকে বিয়ে করবে না।বিয়ে হলেও রোজা সামনে এলেই মনে পড়বে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তাদের।এই বিয়ে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিলো অহনার।রোজ শুভর ছবির সাথে একা একা কথা বলে।অচেনা মানুষ টাকে নিয়ে রোজ ভেবে চলেছে অহনা।নিমিষেই গুড়িয়ে গেলো যেনো সব কিছু।মনের মতো একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হলে কোন মেয়েই বা রাজি না হয়।অহনা সরাসরি না দেখে কথা না বলেই ভালবেসে ফেলেছে শুভকে।ভেবেছিলো প্রথম যেদিন কথা হবে মনের সব কথা শুভ কে খুলে বলবে।ভালবাসা এমন ও হয় না দেখে অনুভবে তাকে ভীষণ ভালবাসা যায়।
রোজা ও ভীষণ শকড হলো।এমন বয়স্ক একজন মানুষ কিনা অহনার বর হবে।যে ছেলেকে বিয়ে না করার জন্য তার কাকী তাকে অনুরোধ করেছিলো আর আজ সেই ছেলের সাথেই নিজের বিয়ে দিবে।অহনার ওই ছেলের সাথে বিয়ে হবে এটা নিয়ে রোজার সমস্যা নেই বা খারাপ লাগা ও নেই।কিন্তু মানুষটার অত বয়স অহনার সাথে কি আদেও যাবে।আর অহনা যে তাকে ফোন করে বলেছিলো ছেলেটা ভীষণ হ্যান্ডসাম। অহনার খুব পছন্দ হয়েছিলো।অহনা কি টাকার লোভে রাজি হলো।ছিঃছি অহনার ব্যাপারে আমি এসব কি ভাবছি।অহনা তো এ ধরনের মেয়ে না।কিছুই তো মাথায় আসছে না।
অহনা এতক্ষণ পরে রাগে ফুঁসে উঠে বললো,
“এই বিয়ে হবেনা মা।কিছুতেই হতে পারেনা।যে ছেলের সাথে রোজার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সেই ছেলেকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না।”
“ছেলেটা কিন্তু খারাপ না অহনা।রোজার সাথে তো বিয়ে হয়ে যায় নি।রোজা বিয়ে করবে না।রোজার সাথে কোনদিন তার কথাও হয়নি দেখাও হয়নি।জাস্ট বিয়ের কথা হয়েছিলো।এখানে তোমার আপত্তির কি আছে অহনা।”
“আমার কি মতামত এর কোনো দাম নেই?কেনো এত মিথ্যা মা।কেনো ঠকালে আমাকে।কেনো বললে ভাইয়ার ফ্রেন্ড।এত গুলো মিথ্যার কি প্রয়োজন ছিলো।”
“ছেলেটা তো তোমার ভাইয়ার বয়সী ই।”
“রোজাকে আমার জীবনে আমি সব থেকে বেশী ভালবাসি মা।আজ যদি এই ছেলের ছবি দেখতো রোজা তাহলে কি বাড়ি ছেড়ে পালাতো।ও এই বিয়েতে রাজি হয়ে যেতো।কাকুর ফ্রেন্ডের সাথে কাকুর বন্ধুত্ব নষ্ট হতো না,আমাদের ফ্যামিলি তে অশান্তি হতো না।এমন কি রোজা পালিয়ে যাওয়াতে কাকুর সম্মান ও নষ্ট হতো না।কত মানুষ বলেছে রোজা পালিয়ে গিয়েছে কত হাবিজাবি বলেছে।এই সব কিছুর জন্য দায়ী কে মা।”
অহনা কাঁদতে কাঁদতে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো।
“অহনার মা বললো,এখানে কারো কোনো দোষ নেই।এখন মান সম্মানের ব্যাপার।রোজা তোমার বাবা আর অহনাকে বোঝাও মা।”
অহনার মা আর ভাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলে রোজা তার বাবাকে বললো,
“বাবা যা হবার হয়েছে প্লিজ ভুলে যাও।আমি লেখাপড়ায় মন দিতে চাই প্লিজ বাবা।আমার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো এর বেশী তো কিছু না।”
“ইকবল আহমেদ বললেন,মা আমার জীবনে দেখা সব থেকে ভালো ছেলে ছিলো।আমার খুব পছন্দের ছিলো ছেলেটা।”
“প্লিজ বাবা ভুলে যাও না।তুমি অহনা কে বোঝাও বিয়ের জন্য।অহনা ভাবছে আমি কষ্ট পাবো হয়তো।আসলে এসবের কিছুই না।এখানে সব দোষ তো আমার বাবা।অহনা বা কাকি কারোর না।আমি না পালিয়ে গেলে তো এসব হতোনা।”
ইকবল আহমেদ মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললেন লক্ষি মেয়েটা আমার।আমি বুঝাবো অহনাকে।
–অহনা নিজের রুমে উপুড় হয়ে সুয়ে সুয়ে কাঁদছে।রোজা অহনার পাশে সুয়ে বললো,
অহনা কুল ইয়ার প্লিজ।আমার একটুও ইন্টারেস্ট নেই কার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সেটা নিয়ে।কেনো ভাবছিস বলতো।।আমার মন আটকে গিয়েছে অন্য জায়গা।সেখান থেকে কোনদিন বেরোতে পারবোনা।
–রোজা তুই কাউকে ভীষণ ভালবেসে একবুক কষ্ট নিয়ে বাড়িতে ফিরেছিস কেনো?তোর এই কষ্টের মূলেই তো এই বিয়ে ভাঙা।এই বিয়ে না ভাঙলে তুই বাড়ি ছেড়ে পালাতিনা।আজ তোর জীবন টা ভীষণ সুন্দর হতে পারতো।
–ভালবাসা আমার কপালে নেই অহনা।
–হয়তো আছে রোজা।হয়তো সে এসে দাঁড়াবে সামনে।তোকে জড়িয়ে ধরে বলবে ভীষণ ভালবাসি রোজা।
–আমি কোনদিন আর তাকে ভালবাসি বলবো না অহনা।ও আমাকে ভীষণ ভাবে ঠকিয়েছে।
সারাদিন কেটে গেলো।রোজা কখনো হাসেনা।মন খুলে কথা বলেনা।সারাদিন চুপচাপ কাঁদে।টিভিতে সন্ধ্যা সাতটায় নিউজ দেখাচ্ছে আগামি সাতদিন নিম্নচাপ থাকবে।প্রচন্ড বৃষ্টি হবে একভাবে। চারদিকে মেঘে ঘনিয়ে এসছে।এমন সময় নিচ তলা থেকে দাঁরোয়ান রোজাকে খবর পাঠিয়েছে কেউ একজন তার সাথে দেখা করতে চাইছে।এক আকাশ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে।রোজা একটা ছাতা নিয়ে নিচে এসে আকাশের মেঘের থেকে বেশী জোরে চমকালো রোজার মনে।
চলবে….?