বৃষ্টিবিলাস পর্ব-২৭

0
619

#বৃষ্টিবিলাস
২৭.
#writer_Mousumi_Akter

টলমলে চোখ দুটো লাল রক্তজবার মতো হয়ে আছে শুভর।ভয়ানক খারাপ আবহাওয়ায় মাঝে এক আকাশ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রিয়তমার বাড়ির নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছে।ভীষণ ক্লান্ত মনে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে রোজার জন্য।কখন রোজা আসবে আর বলবে আমার সেই ভালবাসার মানুষ টা তুমি রোজা।যার জন্য কত শত প্রহর গুনেছি একাকি।যার জন্য দিনের পর দিন,রাতের পর রাত জেগে স্বপ্ন সাজিয়েছি।তুমিই সেই রোজা যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।নিশ্চয়ই এগুলো শুনে অভিমানে কেঁদে বুকের উপর এসে হুমড়ি দিয়ে পড়ে বলবে কেনো এত কষ্ট দিলেন আমায়,কেনো এতদিন বলেন নি আমাকে আপনি সেই।শুভর অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। রোজা একটা ওয়াটার কালারের ছাতা মাথায় দিয়ে সাদা ড্রেস পরে এসে দাঁড়িয়েছে শুভর সামনে,চুল গুলো খুলে ছেড়ে দেওয়া।শুভকে দেখেই রোজার হাত পা কাঁপতে শুরু হলো।রাগে ঘৃনায় জ্বলে উঠলো রোজার শরীর।দুজ৷ দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রোজা আবার বাসার ভেতরে আসার জন্য পা বাড়াতেই শুভ ডাকলো,

“অভিমান নাকি অভিযোগ,রাগ নাকি ঘৃণা।কোনটা বেশী হয়েছে মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।এগুলোর শক্তি ভালবাসার শক্তির থেকেও বেশী।”

রোজা আবার পা বাড়াতেই শুভ ডাকলো,

“রোজা যেও না প্লিজ।আমাকে একটা সুযোগ দাও।অনেক বড় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।প্লিজ রোজা আমাকে একটা সুযোগ দাও।”

রোজা রাগি মুডে শুভর একটু কাছে এসে বললো,

“কেনো এসছেন এখানে।নতুন নাটক করতে।বেরোন এখান থেকে।আমার বাড়ির ঠিকানা খুজে কি প্রুভ করতে চান।অনেক ভালবাসেন আমায়।আমাকে বুঝাতে এসছেন আপনার ভালবাসা।কি ভুলবুঝেছি বলুন।”

“রোজা যত ইচ্ছা বকো, যা মনে চায় বলো তবুও আমার কথা শোনো।আমার কথা শুনলে সব রাগ অভিমান মিটে যাবে তোমার।”

“কি শুনাতে চান আমাকে।রাজ ভাইয়া যা বলেছে তা মিথ্যা? আপনি গরীবের ছেলে?”

“না রোজা, আমি গরিব না।”

“মিথ্যা বলে আমাকে যাচাই করছিলেন আমি কোন টাইপের মেয়ে তাইনা?কই আমি তো কিছু যাচাই করতে যায় নি।”

“শুধু এটুকুর ভিত্তিতে ভুল বুঝোনা রোজা। ”

“শুধু এটুকু তাইনা?আপনি যে ছোটবেলা থেকে একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালবাসেন তার সাথে বিয়ে ও ঠিক এগুলাও মিথ্যা ছিলো।”

“রাজ যা বলেছে সব সত্য।তাকে আমি ভীষণ ভালবাসি রোজা।বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছি শুধু তার জন্য।আর সেই মেয়েটায় তুমি।”

“ওই মেয়েটায় আমি তাইনা রিয়েলি?আমাকে কি বোকা পেয়েছেন।নতুন করে অভিনয় করতে এসেছেন।আমার দূর্বলতা বুঝে গিয়েছেন তাইনা যে আপনি যা বলবেন আমি তাই মেনে নিবো।আমাকে অতটাও দূর্বল ভাববেন না প্লিজ।যে কোনো প্রতারক কে জীবনে দ্বীতীয় বার বিশ্বাস করবো।”

“রোজা আমি সত্য বলছি আমি তার প্রুভ ও দিতে পারবো।”

“নো,নিড।কোনো প্রুভ চাইনা আমার।আর দ্বীতীয় বার কাউকে মম ভাঙার সুযোগ দিবোনা বুঝতে পেরেছেন।আর কোনদিন যেনো এ বাসার নিচে না দেখি।আপনার মুখ দেখার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।আই হেট ইউ।”

“বাট আই লাভ ইউ রোজা।”

রোজা বাসার দিকে পা বাড়াতেই শুভ বললো,

“রোজা একবার কপালে হাত দিয়ে দেখো কত জ্বর আমার।তুমি ফিরে গেলে এই জ্বর নিয়ে এই তুফানের মাঝে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবো।তোমার রুমের পাশের জানালা টা খুলে রেখো রোজা।”

“আমি কেনো দেখবো আপনার জ্বর।আপনার মুখ ও দেখতে চাইনা।তবে সত্যি জ্বর হলে এই নিন ছাতা এটা নিয়ে বাসায় ফিরে যান।”

রোজা ছাতা টা ছুড়ে মেরে রুমে চলে এলো।রুমে এসে ভয়ংকর কাঁন্না জুড়ে দিলো।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে তার,ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।শুভর বলা কথাগুলো সত্য হলোনা কেনো?কেনো সে শুভর ছোটবেলার ভালবাসা হলোনা।এই কথাগুলো সত্য হলো এক্ষুণি গিয়ে শুভ কে জড়িয়ে ধরে বলতো ভীষণ ভালবাসি শুভ।রোজার কাছে শুভর একটা ছবি আছে।রাজের রুম থেকে নিয়েছিলো।ছবিটা হাতে নিয়েই কাঁদছে রোজা।কিছুক্ষণের মাঝেই অহনা এসে দেখলো রোজা কাঁদছে।

— রোজার কাছে বসে অহনা বললো,এই রোজা কাঁদছিস কেনো?

–রোজা খুব জোরে কেঁদে দিয়ে বললো,আমি তাকে ভীষণ ভালবাসি অহনা,তার অভাবে আমি ধীরে ধীরে মা*রা যাবো।আমি কাউকে বোঝাতে পারিনা কি ভীষণ কষ্ট হয় আমার তার জন্য।সে কেনো আমাকে ঠকালো অহনা।কেনো মিথ্যা বললো।

–অনেক ভালবাসিস তাইনা?

–অনেক বেশী ভালবাসি।

–ভালবাসা সত্য হলে ও আসবে ঠিক ই।

–ও এসেছিলো।কেনো এসছিলো?আই হেট হিম।

–রিয়েলি এসছিলো কোথায়?

–বাইরে জ্বর নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।

–ওহ রিয়েলি!ছেলেটা তাহলে তোকে অনেক ভালবাসে রে।আরে আমার ফিওন্সি কে দেখ না।জীবনে আমাকে ফোন ও দেই নি।সারাক্ষণ শুধু মা এর সাথে কথা বলে।আরে ইয়ার সে নাকি আমাকে ভালবাসে তাহলে সেটা মার কাছে না বলে আমাকে বললেই তো পারে।

হঠাত রোজার হাতে একটা ছবি দেখে অহনা ছবিটা হাতে নিয়ে বললো,

–এই ছবির ছেলেটা কে রোজা।

–ও ই শুভ।যার সাথে আমার বৃষ্টিবিলাস হয়েছিলো।যে আমাকে ভীষণ ভালবেসে ঠকিয়েছিলো।

অহনার হাত পা কাঁপছে চাইলেও স্বাভাবিক থাকতে পারছে না।এই শুভর সাথেই রোজার ভালবাসা হয়েছিলো।আবার এই শুভর সাথেই রোজার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।শুভর সাথে রোজার বিয়ে হলে ওদের বিয়ে + ভালবাসা দুটোই হতো।হলোনা কেনো তাহলে?সব ভুল আমার।আমার জন্য আজ রোজার জীবন টা এমন এলোমেলো হয়ে গেলো।রোজা কেনো শুভ কে বয়স্ক বললো?রোজার কাছে শুভ কে বয়স্ক মনে হলে তো বাড়ি ছেড়ে পালানোর পর তাদের ভালবাসা হতোনা।কোন কিছুই তো মিলছে না।আর রোজা কেনো শুভ কে ঠকবাজ ভাবছে।এই সব প্রশ্নের উত্তর মা জানে।আমার মায়ের ভুলে যদি রোজার জীবন ছারখার হয় তাহলে তার দায় ভার সম্পূর্ণ আমার।আমি কোনদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।রোজার সামনে নিজের কাঁন্না আটকাতে পারছে না অহনা।অনেক কষ্টে ঠোঁট মুখ চেপে প্রশ্ন করলো শুভ তোকে কিভাবে ঠকিয়েছে রোজা।

শুভ ছোট বেলা থেকে একটা মেয়েকে ভালবাসে।ভীষণ ভালবাসে।আর সেই মেয়ের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।কিন্তু মাঝে খানে আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে।

অহনার মনে যেনো বজ্রপাত হচ্ছে।ভূমিকম্পন এ কাঁপছে সব কিছু।চারদিক ভীষণ ভাবে ঘুরছে।অস্বাভাবিক লাগছে সব কিছু।মনের মাঝে ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।দম বন্ধ হয়ে আসছে অহনার।তার মানে শুভ রোজাকে ছোট বেলা থেকে ভালবাসতো তাই পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।সব টা ক্লিয়ার এখন রোজার কাছে।অহনা গুটি গুটি পায়ে রোজার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তাকে এখন কাঁদতে হবে,চোখের পানি বের না হলে এই দম বন্ধ কষ্ট কমবে না।

গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে ভয় ডর উপেক্ষা করে অহনা বাড়ির বাইরে বেরোলো।রাস্তায় রোড লাইটের আলো জ্বলছে।ক্রমশ গাড়ি যাওয়া আসা করছে।অহনা কোথায় যাচ্ছে জানেনা।উদাসীন ভাবে হাঁটছে।যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তাকে নিয়ে কিছুক্ষণ আগেও হাজারো স্বপ্ন বুনেছিলো অহনা।চুরমার হয়ে গিয়েছে সব।অহনা মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেয়াল করলো রোজার রুমের জানালা খোলা।ঘরের আলো বাইরে এসে পড়েছে।সেখানে সাদা শার্ট আর ব্লু জিন্স পরিহিত একটি যুবক দাঁড়িয়ে ভিজছে।এই মানুষ টা শুভ,শুধুই রোজার শুভ।এই মানুষ টার উপর আর কারো অধিকার থাকতে নেই।রিয়েল লাভ বুঝি এমন ই হয়।যেটা শুভ কে দেখলেই বোঝা যায়।রোজা সত্যি ভীষণ লাকি।

চলবে,,??