বৃষ্টিবিলাস পর্ব-২৮

0
603

#বৃষ্টিবিলাস
২৮.
#writer_Mousumi_Akter
ক্রমশ বৃষ্টি বাড়ছে, রাত আরো অন্ধকারে ঘনিয়ে আসছে।চারদিকে বৃষ্টির ঝুম শব্দ।রান্নাঘর থেকে ভুনা খিচুড়ির ঘ্রাণ ভেষে আসছে।বৃষ্টির জন্য আজ বেশীরভাগ মানুষ ই আগে আগে বাসায় ফিরে এসেছে।বৃষ্টির সাথে এলোমেল বাতাস।বাতাসে রোজার ঘরের নীল সাদা ছাপার পর্দাটা এলোমেলো উড়ছে।জামা কাপড়ের মতোই রোজার শখ ঘরের পর্দা চেঞ্জ করার।সে দু’মাস পর পর ই নতুন পর্দা কিনে আনে আর চেঞ্জ করে করে পর্দা লাগায় ঘরের।রোজার সেদিকে খেয়াল নেই।বাইরে থেকে রমলা আন্টি রোজাকে বলছে রোজা মা ঘরের জানালাখান বন্ধ কইরা দাও মা। জানালা দিয়ে পানি এসে ঘর ভিজে যাচ্ছে।রোজা উদাসীন ভাবে উঠে গিয়ে জানালার পাল্লা লাগাতে গিয়ে চমকে গেলো।জানালার সোজাসুজি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ।সে এক ভাবে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে।কখন রোজা আসবে জানালার কাছে সেই অপেক্ষায় আছে রোজা।রোজার চোখ চিকচিক করছে পানিতে, কিছুটা ঝাপসা হয়েও এলো।এই ভীষণ বৃষ্টিতে সে কেনো ভিজছে।তার নাকি জ্বর,এই জ্বর নিয়ে কেনো এইভাবে ভিজছে।কি করবে রোজা বুঝে উঠতে পারছে না।মানুষ টার কষ্ট সে সহ্য করতে পারেনা।রাগ থাকুক ঘৃনা থাকুক কিন্তু সে কষ্ট পাক রোজা সেটা চাইছে না।যাকে ভীষণ ঘৃণা করা উচিত রোজা তাকে ঘৃণা করতে পারছেনা।

রোজা জানালা দিয়ে একটু উঁকি দিতেই শুভ ডকলো,

“রোজা আমার কিন্তু প্রচন্ড জ্বর।”

রোজা শুভর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে।এই কথাটা বলার মানে কি তার জন্য মায়া হোক।না আমার মায়া হবেনা তার জন্য কিছুতেই না।

শুভ আবার বললো,

“রোজা আমার সম্পূর্ণ কথা তোমাকে শুনতেই হবে।না হলে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো আমি।আমাকে এইভাবে ইগনোর করতে পারোনা তুমি।পরে কিন্তু আমার থেকে তুমি বেশী কষ্ট পাবে।”

রোজা কোনো কথার ই উত্তর দিলোনা। একটা জানালার পাল্লা টেনে ধরতেই আবার ও শুভ বললো,

“রোজা প্লিজ বন্ধ করোনা,বাইরে প্রচন্ড বজ্রপাত হচ্ছে।আমার কিন্তু কিছু হয়ে যেতে পারে।জানালা টা অন্তত খোলা রাখো প্লিজ রোজা।”

রোজা একটা কাগজে কিছু লিখে ছুড়ে মারলো।

শুভ খুলে দেখলো তাতে লেখা,

“আজে বাজে কথা বলে আমাকে কত কষ্ট দিতে চান।আপনি না হয় ভালবাসেন নি আমি তো ভালবেসেছিলাম তাই আপনার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারবোনা।দয়া করে এখান থেকে চলে যান দোহায় লাগে।”

শুভ আবার ও বললো,

“তোমার দোহায় আমি শুনবো না রোজা।আমি যাবো না রোজা।তোমাকে আসতেই হবে।আমাকে ভালবাসতে হবে রোজা।আমার কথা শুনতেই হবে।না হলে আমি যাবো না।”

“দেখুন বাবা এসে দেখে ফেলবে।”

“দেখুক তার মেয়ে তার জামাই কে কত কষ্ট দিচ্ছে।”

“তাহলে থাকুন এখানে। ”

রোজা জানালা বন্ধ করে দিলো।ওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো।কিন্তু কোনো কিছুতে মন বসছে না
।আধা ঘন্টা পরে জানালা আবার খুলে দেখলো শুভ তখন ও দাঁড়িয়ে আছে।মানুষ টা কি সত্যি পাগল হয়ে গিয়েছে।রোজা জানালা খুলতেই শুভ বললো,

“জানতাম রোজা তুমি জানালা আবার খুলবে।বিকজ ইউ লাভ মি!”

শুভর হাতে একটা বড় কাগজ সেখানে লেখা আই লাভ ইউ রোজা,প্লিজ একটা সুযোগ দাও।কাগজ টা নিমিষেই বৃষ্টিতে ভিজে গেলো।

রোজা কিছুই বললো না।

“শুভ আবার বললো,রোজা আমি কিন্তু এই শহরে প্রেমের কার্ফু জারী করবো তোমার জন্য।”

রোজা কোনো কথা বলছে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

“শুভ আবার বললো,রোজা তোমার মন কে প্রশ্ন করো আমি কি মিথ্যা বলছি।আমার এই কষ্ট কি মিথ্যা।আমার অনুভূতি গুলো কি মিথ্যা।”

এরই মাঝে ইকবল আহমেদ রুমে প্রবেশ করলেন।রোজা আতকে উঠলো বাবাকে দেখে।জানালার বাইরের দিকে পিট দিয়ে বাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ালো।

ইকবল আহমেদ বললেন,

“মা জানালা লাগিয়ে দাও।বৃষ্টিতে ঘর ভিজে যাচ্ছে।আর এসো খেয়ে নাও।”

“যাও বাবা আমি আসছি।”

ডায়নিং এ বসে রোজা খাবার নাড়াচ্ছে শুধু।সে কি খেয়েছে।নাকি না খেয়েই পাগলামো করছে।আমি কি তাকে বিশ্বাস করবো।কি করবো আমি।বিভিন্ন প্রশ্ন রোজার মনে।ডায়নিং এ রোজা ইকবল আহমেদ, নাহিদ,রিনা পারভীন সবাই।রোজার মা মারা যাওয়াতে দুই ভাই এক সাথেই আছে।অহনার বাবা বিদেস এ থাকেন।ইকবল আহমেদ এর ঢাকায় ব্যবসা আছে।মেয়েকে নিয়ে হাড়ি আর আলাদা করে নি।সংসারে বাজারের টাকা সে ই বেশী সিয়ে থাকে।বাসার কাজের মহিলা ও তার ই রাখা।ডায়নিং এ বসে অহনার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে।এখন সবাই মেনে নিয়েছে অহনার বিয়ে।ইকবল আহমেদ ও খুশি মনে মেনে নিয়েছে।অনেক ঝামেলার পরে পরিস্হিতি বেশ স্বাভাবিক।রোজা বললো,কাকিআম্মা অহনা? রিনা পারভীন বললেন,মনে হয় পাশের ফ্ল্যাটে ঘুরতে গিয়েছে।নাহিদ বললো,আচ্ছা মা এটা কোন ধরনের কথা রাতের বেলা তোমার মেয়ে পাশের ফ্ল্যাটে কেনো?এক্ষুণি ডেকে আনো।রিনা পারভীন বললো দুইদিন পর চলে যাবে পরের ঘরে এখন একটু বেড়াক।

———————————————————
কাক ভেজা ভিজে অহনা এলোমেলো ভাবে হেঁটে যাচ্ছে।মন কোথায় কে জানে?কাধ বেয়ে ওড়না পড়েছে অহনার তাতে অন্য মনস্ক থাকার চিহ্ন স্পষ্ট আর ক্লিয়ার।রাস্তার পাশের দোকানদার দোকানের সাটার অফ করছে আর বলছে এইযে ম্যাডাম এইভাবে ভিজে কোথায় যাচ্ছেন। আপনি তো একদম ভিজে নেয়ে গিয়েছেন একটা গাড়িতে উঠুন।অহনার কোনো হেলদোল প্রকাশ পেলোনা।খালি পায়ে হেঁটে চলেছে।বৃষ্টির ফোঁটা অহনার দুই পায়ের মধ্য নৃত্য করছে।পায়ের পাতা ইট বালু আর পিজের ময়লায় ভরে গিয়েছে।কালো রঙের প্লাজুর প্রায় হাঁটু পর্যন্ত ময়লায় ভরে গিয়েছে বৃষ্টিতে ছিটে ছিটে লেগেছে।একটা সফেদ রঙের গাড়ি বার বার হর্ণ দিচ্ছে কোনো হুঁশ নেই অহনার।গাড়িটা বেশ অনেক্ষণ ধরেই হর্ণ দিয়ে যাচ্ছে।আর একটু হলেই অহনার উপর দিয়ে গাড়ি উঠে যেতো।ড্রাইভার বাধ্য হয়েই গাড়িটা থামিয়ে দিলো।গাড়ি থেকে সুদর্শন এক যুবক বেরিয়ে এলো।ছেলেটি আর কেউ নয় রাজ।রাজ এসে অহনার কাঁধে হাত দিয়ে ঝাঁকি দিয়ে বললো হ্যালো।এক্ষুণি গাড়ি উ*ঠে যেতো আপনার উ*পর দিয়ে।আর কেস খাইয়ে দিচ্ছিলেন আমাকে।আর কে আপনি এই ভাবে পে*ত্নির মতো হাঁটছেন কেনো?আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে পে*ত্নি ভেবে ভয় পেয়ে যেতো।অহনা এবার রাজের দিকে তাকাতেই দুজন ভীষণ অবাক হয়ে যায়।দুজন দুজনকে ভিডিও কলে দেখেছে সেদিন।আজ ই প্রথম দেখা তাদের তাও এইভাবে।অহনা এক বুক কষ্ট নিয়ে বললো আপনি কি রাজ।রাজ প্রশ্নবোধক ভাবে বললো অহনা?অহনার থেকে কোনো উত্তর আসার আগেই অহনা সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায় রাজের উপর।রাজ অহনাকে এই রাতের বেলায় এলোমেলো ভাবে হাঁটতে দেখে বুঝেছে অহনার কিছু একটা হয়েছে।তাছাড়া রাজ অহনার কাছেই যাচ্ছিলো।একমাত্র অহনায় পারে রাজকে হেল্প করতে।রাজ অহনার গালে হাত দিয়ে বারবার ডাকছে অহনা কি হলো তোমার।অহনা প্লিজ চোখ খোলো প্লিজ।রাজ কোলে তুলে অহনাকে গাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো।অহনার শরীরের ভেজা কাপড়ে গাড়ির সিট ভিজে গেলো।রাজ ড্রাইভার কে বললো,প্লিজ হেল্প মি!ভাই।আমার আত্মীয় সে।কিভাবে জ্ঞান ফেরানো যায়।ড্রাইভার বললো,চোখের উপরের শিরায় চাপ দিন জ্ঞান ফিরে আসবে।রাজ ড্রাইভারের কথা শুনে চোখের উপরের শিরায় চাপ দিতেই অহনা চিৎকার দিয়ে উঠলো।অহনা চোখ খুলে তাকিয়ে রাজ কে দেখলো।গাড়ির সিটে উঠে বসে নিজের ভেজা ওড়না ঠিক করতে গিয়ে দেখে একটা শুকনো টাওয়াল তার বুকে পেচানো।রাজ বললো ঠিক আছো তুম অহনা।অহনা রাজের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।রাজ খুব বিস্মিত হলো।অহনার এই কাঁন্নার কারণ রাজ বুঝতে পারছে না।রাজ আবার ও জিজ্ঞেস করলো অহনা প্লিজ বলো কি হয়েছে।হবু বরের সাথে কিছু হয়েছে।শুনেছি দারুণ একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছো তবে কাঁদছো ক্যানো হুয়াই।অহনা এবার আরো জোরে কেঁদে বললো,বাইরে যাবেন আমার সাথে।

–যাবো বাট কোথায়?

–কোথায় জানিনা তবে আমাকে ভিজতে হবে।না ভিজলে মনের অশান্তি ধুয়ে যাবেনা।

–বাট জ্বর হবে তোমার।

–অসুখের ভয় নেই রাজ।যে অসুখ আমার মনে করেছে সে অসুখ কি কোনদিন সারবে।

চলবে???