বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ পর্ব-১৮+১৯

0
524

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

১৮.
‘সখী গো আমার মন ভালা না
কালার সাথে পিরিত কইরা সুখ পাইলাম না
সখী গো আমার মন ভালা না’

‘ওই বেটা চুপ।’ টায়রার কর্কশ ধমকে থেমে গেলো আর্দ্রর সুর বিহীন বিখ্যাত গানটি। ভ্রু কুচকে টায়রার দিকে তাকিয়ে আর্দ্র বলল, ‘আমি বেটা?’

‘কেনো বুইড়া নাকি?’

আর্দ্র অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, ‘মহা চাপাবাজ মেয়ে তো। আপনার সাথে চাপা করা আমার মতো নাদান বাচ্চার কর্ম নয়।’

টায়রা তেড়ে এসে বলল, ‘একে তো আমার এতো সুন্দর মুড টা এই ফালতু গানের কারণে নষ্ট করলেন। তারউপর আবার আমাকেই চাপাবাজ বলছেন?’

আর্দ্র বড় বড় চোখ করে আতংকিত গলায় বলল, ‘এই মারবেন নাকি?’

‘হুম। একদম মেরে দিবো।’ টায়রা বলল ডাকাতিনীর গলায়।

‘আচ্ছা চাপাবাজ বলবো না। ফুটা টায়ার বলেই ডাকবো।’ দাঁত কেলিয়ে বলল আর্দ্র।

_____________________________

সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে। দুপুর একটায় ওদের লঞ্চ। নিঝুম দ্বীপ থেকে বের হতে হবে প্রায় দশটা নাগাদের দিকে। তাই ভোরেই চলে এসেছে সূর্যোদয় দেখতে। নামার বাজার সি বীচ আর উপর বাজার সি বীচ এ ঘণ্টা দুয়েক এর মতো থেকে সকালের নাস্তা করে ওরা রিসোর্টে ফিরবে। এরপর গোছগাছ করে নিয়ে নিয়েই বেরিয়ে পরবে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে।

ডুবি ডুবি সূর্যটা তার লাল কিরণ মেলে দিয়ে যখন জাগ্রত হতে আরম্ভ করলো সেই রশ্মিতে আদর দেখতে পেলো টিকলি হাস্যোজ্জ্বল মুখ। টিকলির টিকলো নাকের ভাঁজে ঠেসে দেওয়া ছোট্ট একটা আকাশি রঙের নোস পিন। কানে দুটো মাঝারি আকারের সাদা পাথরের দুল। হাতে সাদা ফিতার ঘড়ি। মুখে লাবণ্যতা, শ্রীময়ী, কোমলতা ভাব।
টিকলিকে দেখতে দেখতেই হঠাৎ আদর আবিষ্কার করলো টিকলির ঠোঁট থেকে কিছুটা দূরে গালের একটু নিচে দুটো ছোট ছোট গর্ত। চুল গুলো টান টান করে বেধে ছেড়ে দিয়েছে বলে কপালের একদম কিনারায় আরেকটা গর্তও চোখে লাগলো। সাদা মুখটায় ক্ষুদ্র গর্তগুলোর জন্য টিকলির বদনখানা হয়ে উঠেছে বড্ড কমনীয় এবং আকর্ষণীয়। আদর কৌতুহল লুকাতে না পেরে প্রশ্ন করলো,

‘আচ্ছা, এগুলো কীসের গর্ত? গালে, কপালে?’

টিকলি একটু চমকে উঠেছিলো। সূর্যের উদয় দেখতে দেখতে ধ্যানমগ্ন হয়ে গেছিলো। আদরের কথা সম্ভিত ফিরে সে বলল,

‘এগুলো? পক্সের দাগ।’
‘ওহ।’
ছোট করে উত্তর দিয়ে আদর পকেটে হাত গুজে দাড়ালো। টিকলি আদরের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আবারো সামনে তাকালো। সমুদ্রের বুক থেকে ধীরে ধীরে জাগ্রত হলো সূর্য। চারিপাশে পানির মেলা। বাতাসে মাতাল হাওয়া। তার মাঝে অগ্নিরাজকুমারী টিকলিকে এই নিঝুম দ্বীপে সম্ভাষণ জানাতে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে উঠে আসছে সূর্যদেব। আদর হঠাৎ বলল,

‘সুন্দর লাগে।’

টিকলি চকিতে তাকালো আদরের দিকে। অস্ফুটে কণ্ঠে বলল, ‘কি বললেন?’

আদর বলল না। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো। টিকলি আবার জিজ্ঞেস করলো। আদর গম্ভীর গলায় বলল, ‘ভদ্র লোকের এক কথা।’

কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে টিকলি তেজি গলায় বলল, ‘মারাত্মক! মারাত্মক ফালতু লোক আপনি। আপনার সাথে কথা বলাই ভুল।’

টিকলি ফালতু বলতেই আদরের মনে পরলো, প্রথম দিনের কথা। যেদিন সেই পনেরো দিনের প্রেগন্যান্ট মেয়েটার সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল রেস্টুরেন্টে। মেয়েটা যাওয়ার আগে আদরকে ফালতু বলে গিয়েছিলো। আদরের ভারি রাগ হলো সাথে প্রশ্ন জাগলো, আচ্ছা? মেয়েটাকে যে সদরঘাটে দেখেছিলাম। মেয়েটা কি কোথাও যাচ্ছিলো? গেলেও কোথায় গিয়েছিল?
মনের প্রশ্নে আদর আবারো মনকে ধমক দিয়ে বলল,

‘ইশশ ওই মেয়ের কথা এতো মনে করতে হয় কেনো তোর?’

আদরের মন থেকে পাল্টা জবাব না এসে উল্টো জবাব আসলো,

‘আচ্ছা? টিকলির এই কপালটা কি বেশি মিল না ওই মেয়েটার সাথে? মাস্ক পরিহিতা সেই মেয়েটা কেমন ছিলো বলতো? তোর দেখতে ইচ্ছে করে না রে আদর?’

আদর টিকলির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। তার দৃষ্টি ছিলো টিকলির কপালের দিকে। আচ্ছন্ন এক ঘোরে থেকেই আদর মনকে জবাব দিলো,

‘নাহ দেখতে ইচ্ছে করে না। এই মহারানীর কাছে বোধ হয় বাকিসব রমণী তুচ্ছ।’

আদরের কথায় বোধহয় তার মনটা বড় বড় বিস্ময়কর চোখ করে তাকালো। কণ্ঠে রাজ্যের অবাকতা ঢেলে বলল, ‘এই আদর তুই কি প্রেমে পরলি?’

আদর গরম কণ্ঠে বলল, ‘আর একটা কথা বললে তোর একদিন কি আমার একদিন।’

_____________________________

ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়েছে। লঞ্চের এ মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলো ওরা সবাই। এইতো আর কয়েক ঘন্টা এরপর যে যার মতো আলাদা। আর্দ্র একটু চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। আদর প্রশ্ন করলো,

‘কিরে? কি হয়েছে তোর?’

আর্দ্রকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টায়রা ফটাফট উত্তর দিলো, ‘আরে ভাইয়া ব্রেকাপ হয়েছে তো। তাই গার্লফ্রেন্ডের দুঃখে কাদছে।’

‘এ আর নতুন কি?’ অবহেলার গলায় আদর বলল।টিকলি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনে বলল,

‘তা ভাইয়া? আপনার এতো ব্রেকাপ হয় কেনো বলুন তো? আপনি এতো সুন্দর, বুদ্ধিমান আর মেয়েদের হাতের মুঠোয় রাখতে পারেন না?’

টিকলির কথায় আদর এক পলক চোখ মেলে ওর দিকে তাকালো। টিকলি খেয়াল করলো না। আর্দ্র দুঃখে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলে উঠলো,

‘কি করবো বলো আপু? সবাই শুধু আমাকে চায়। আমি বেশি হ্যান্ডসাম তো তাই ব্রেকাপ হয়।’

আর্দ্রর কথায় টায়রা পেট ধরে হেসে দিলো। খানিক জোরালো শব্দে হেসে উঠলো আদরও। টিকলি আদরের হাসির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। এই কয়দিনের মধ্যে লোকটাকে এই প্রথম শব্দ করে হাসতে শুনলো টিকলি। আদর হাসি থামালো। মুগ্ধ টিকলির কানে তখনো মন্ত্রের মতো বাজছিলো সেই হাসির সুর। সারা শরীরে কাপন ধরলো। হাসির শব্দ মিশে গেলো লোমকূপের ভাঁজে ভাঁজে। শরীর আত্মায় অসহনীয় ভালো লাগা কাজ করা শুরু করলো। ইশ…ভালোই হলো। শেষ যাত্রায় একটা দূর্লভ বস্তু টিকলিকে দেখা দিলো। অন্যদিকে ঘুরে তৃপ্ততার হাসি হাসলো। সে বলতে শুনলো। টায়রা আর্দ্রকে বলছে,

‘বেশি হ্যান্ডসাম তাই আপনাকে সবাই ডাম্প করে?’ বলেই আবার হু হা হাসিতে মেতে উঠলো।

আর্দ্র থমথমে মুখ নিয়ে বলল,

‘হ্যাঁ তাই তো। জানেন, আমার এক গার্লফ্রেন্ডকে আমার একটু একটু ভালো লাগতো। তো সে একদিন বিয়ের কথা তুলল। আমি বললাম আচ্ছা। তার দুইদিন পর এসে হঠাৎ মেয়েটা বলে কাবিননামায় দেনমোহর ধরবে এক কোটি টাকা। যাতে আমি কক্ষনো তাকে ছেড়ে যেতে না পারি। ব্যস, বিয়ে টিয়ে সব চুলোয় যাক; আগে ব্রেকাপের পায়তারা খোঁজা যাক।’

আদর স্বাভাবিক থাকলেও টিকলি আর টায়রা কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকলো। এরপর টায়রা আবারো উচ্চহাসিতে মেতে উঠলো। টিকলি শব্দবিহীন হাসলো। আর্দ্র গম্ভীর গলায় বলল, ‘মেয়েদের এতো উচ্চস্বরে হাসতে নেই।’

,

চারিদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে। দিনের সুমিষ্টি আলো রাতের কালোগহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে। ঝুম ঝুম করে নিঝুম বৃষ্টি। প্রকৃতি এখন শান্ত। আকাশ হলুদাভ রঙে সজ্জিত। সূর্যাস্তরের সেই হলুদ আলোয় টিকলির মুখখানা দেখতে লাগছে একদম সকালের সূর্যোদয়ের সাথে দেখার মতোই স্নিগ্ধ।
টিকলি তাকিয়ে ছিলো জলের গা ছিটিয়ে চলে আসা লঞ্চের উত্তাল ঢেউয়ের দিকে। হঠাৎ একটু আনমনা কিন্তু করুণ গলায় বলল,

‘আমাদের আর দেখা হবে না তাইনা?’

আদর টিকলির দিকেই তাকিয়ে ছিলো। টিকলি আবার বলল একটু হেসে,

‘আজ থেকে আবার আমরা আলাদা। তবুও এই কয়দিনে আপনাদের সাথে সময় কাটিয়ে বেশ ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে দীর্ঘ পরিচিত বন্ধুদের সাথে সময় কাটালাম।’

আদর স্মিত হাসলো। ঠোঁটের কোণায় থুতনিতে গর্ত পরলো। ভাঁজ পরলো। সুন্দর দেখালো তাকে। টিকলি মাত্রই খেয়াল করলো আদর হাসলে তার ঠোঁটের কোণায় টোল পরে। টিকলি হঠাৎ বলল,

‘আর্দ্র ভাইয়া ঠিক বলেছিলো আপনি খুব ভালো।’

আদর খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মেয়েটার দিকে। এই মেয়েকে বুঝতে পারে না আদর। আচ্ছা, এই মেয়েটার সাথে তার পথ যখন আলাদা হয়ে যাবে তখনও কি তাকে মনে থাকবে আদরের? নাকি শুকতারার মতো মনের মাঝে মনতাঁরা হয়ে বাস করবে? নাহ…মনতাঁরা কেনো হবে? মনতাঁরা কি যে কেউ হতে পারে নাকি? কিন্তু আদর তো নিজের মনকেই বুঝতে পারছে না তবে সেখানে তাঁরা বাস করবে কীভাবে? ইশশ… কি করে গেলো এই মেয়েটা আদরকে? এই মেয়ে নামক মনতাঁরাটা কি আদরকে একটুও উলোটপালোট করে দিয়ে গেলো না? তার ডানার উজ্জ্বল আলো দ্বারা কি আদরকে রাঙিয়েও নিভিয়ে দিয়ে গেলো না?

,

বেশ রাতের দিকে লঞ্চ এসে থামলো সদরঘাটে। লঞ্চ থেকে নামতেই চোখে এসে পরলো হাজারো বাতি। ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে অনেক লঞ্চ। সেখান থেকে লাল নীল সবুজ বাতি প্রতিফলিত হচ্ছে নিঃসৃত চার যুবক-যুবতীর মুখমন্ডলের উপর। কতক্ষণ কেটে গেলো কে জানে। টিকলি বলল,

‘আসি তবে?’

আদর কিছু বলল না। আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে টিকলি আবার বলল, ‘এই যে, ভালো থাকবেন ভাইয়া। ঠিক মতো পড়াশোনা করে তাড়াতাড়ি উকিল হয়ে যান তো। আমার বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন পেপার সব আপনার হাতে তৈরি করাবো।’

টায়রার চোখ ছলছল করছিলো। এর মাঝেও সে বলল, ‘হ্যাঁ আর আমার বিয়েতে উকিল বাপ বানাবো।’

আর্দ্র গরম চোখে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলল, ‘মাথামোটা। বলদ।’

‘এই আপনি…আপনি আবার?’

‘হাজারবার বলবো। বলদকে বলদ বলবো নাতো কি বলবো?’

ওদের ঝগড়া এড়িয়ে টিকলি এগিয়ে গেল আদরের দিকে। আদরের পাশাপাশি দাড়ালো। সাইড থেকে একটা আলো এসে ঝলকানি দিয়ে পরলো দুজনার উপর। আদর টিকলির দিকে তাকিয়ে স্ফীত হেসে বলল,

‘সাবধানে যাবেন।’

টিকলি মাথা নাড়ালো। বলল, ‘আপনিও।’

টায়রার হাত ধরে টিকলি বলল, ‘চল টায়রা।’

‘আসি ভাইয়া।’ টায়রা হাত মেলালো আদরের সাথে।

টিকলি আর্দ্রকে বাই দিয়ে চলে যেতে লাগলো। আদর আর্দ্রও উল্টো পথ ধরলো। কিছুদূর যেতেই চারজনই ঘুরে দাড়ালো। তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ চারজনার দিকে। এরপর একসাথে বিদায় দিতে নাড়লো চারটি হাত। আবার চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কদম ফেলা হলো।

চারজনের মনেই বেজে উঠলো এক ভয়ংকর ডঙ্কার সুর। বুকে ধামাধাম তবলা বাজিয়ে চারটে মন জানান দিলো, ‘হৃদয় ব্যথা করছে।’

চারটে মন একই সুরে ভেবে উঠলো, আচ্ছা? আর কোনোদিন কি ওদের দেখা হবে? দুটো কথা বলা হয়ে উঠবে কি? চোখাচোখি হবে? অভিমান করাও হবে? গাল ফুলিয়ে বসে থাকাও কি হবে? তাকিয়ে থাকা হবে? ঝগড়া করা হবে? একসাথে ঘুরা হবে? বাইক দিয়ে? কখনো কি… দেখা হয়ে উঠবে?
কে জানে আদেও হবে কিনা? তবে কিছু একটা না বলা থেকে গেলো। কিছু একটা হলো না। ফাঁকা রয়ে গেলো বুকের ভেতর। বুকের সেই ফাঁকফোঁকর দিয়েই না বেরিয়ে পরে মনপাখি।

পথ মাড়িয়ে যেতেই আদরের মনে পরলো, ‘ইশশ…তার সরি বলা হয়নি।’ তবে আদর পেছন ফিরে তাকালো না। দেখলো না আর টিকলিকে। ইচ্ছেগুলোকে খাঁচার ভেতর আটকিয়ে সে কদম ফেললো একের পর এক।
থাক না দু একটা না বলা কথা। বুকের গহীনেই দগ্ধ হোক না সেসব। সব কথাই কি বলে দিতে হয়? তবে যদি ভাগ্যের জোরে কখনো তাদের দেখা হয়ে যায় তখন কি বলবে? থাক নাহয় কথাগুলো, লুকিয়ে চুরিয়ে মনের আনাচে-কানাচে। আদরের ব্যস্তময় দিনগুলোতে যদি একটু ফুরসৎ পেলে এই না বলা কথাগুলো বারংবার উঁকি দেয় তবে ক্ষতি কি? অন্যায় হবে নাতো!

আদর আকাশে তাকালো। অনেক মেঘ সেখানে। মেঘের বুকে চাঁদ খুব যত্ন করে আড়াল হয়ে গেছে।ইশশ.. কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই তাদের পথ শেষ হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই বোধ হয় ছন্দ কেটেছে। আচ্ছা, প্রেম হয়েছে কি?

চলবে❤️

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ💗
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

১৯.
হাসপাতালের চারিদিকে মৃদু গুঞ্জন। কারো কান্নার আহাজারি, কারোর হতাশতা, তো কারোর নিস্তব্ধ কষ্ট, কেউ অসুখী, কারোর যাওয়ার পালা, কারোর আসার বার্তা। আদর অপারেশন থিয়েটার থেকে মাত্র বের হলো। নিজের চেম্বারে এসেই শরীরটাকে এলিয়ে দিলো কালো রঙের চেয়ারটাতে। টেবিলের উপর এক হাত রেখে পেপারওয়েট ঘুরাতে ঘুরাতে কিছুক্ষণ নানান চিন্তা করলো।
একটু আগে অপারেশন থিয়েটারে ব্রেন টিউমারের এক পেসেন্ট ছিলো। মহিলাটির ততটাও বয়স নয়৷ অপারেশন শুরু করতেই আদর খেয়াল করলো মহিলাটির কপাল থেকে শুরু হওয়া দু গাছি চুল গুলো হুবহু টিকলির মতোন। কপালের মাঝবরাবর ছোট্ট একটা গুরু। মিনিট খানিকের জন্য আদর নির্বাক হয়ে পরলো। নিঝুম দ্বীপ থেকে বাড়ি এসেছে আজ প্রায় এক সপ্তাহ। এ কয়দিন ব্যস্ততায় টিকলিকে তেমন মনে না পরলেও হুট করে আজ ভীষণ বাজেভাবে মনে পরলো। অন্যমনস্ক আদর খুব কষ্টে দীর্ঘ সময় নিয়ে অপারেশন শেষ করে বের হলো।

,

সারাদিনের ব্যাস্ততাময় প্রহর শেষ করে বাড়ি ফিরতেই বুক পিঠ ছেয়ে যায় এক অনাবিল সুখে। শান্তির ঢেউ বয়ে যায় অন্তরপথে। এই তো…এখন আমার বিশ্রাম। একটু নিজের জন্য সময় পাওয়া গেলো। এবার একটু ঘুমোবো। রাত এগারোটা বাজে তখন। আদর ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ বসতেই দেখলো সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। প্লেট সোজা করতে করতে আদর বলল,

‘এখনো খাওনি কেনো তোমরা? রাত জেগে আমার জন্য অপেক্ষা করতে নিষেধ করেছি।’

আজিম খান খাওয়া শুরু করলেন। শান্ত শিষ্ট বুদ্ধিমান স্নেহের এক মাত্র বড় ছেলের উপর তিনি ভীষণভাবে ক্ষিপ্ত। ছোট ছেলেকে অতিরিক্ত মাত্রায় আদর দিয়েছিলেন বলেই সে আজ ঠোঁটকাটা এবং সাথে কেয়ারলেস। কিন্তু বড় পুত্রও যে এমন ধারার হয়ে যাবে তা ভাবতে পারেননি। থমথমে মুখে আজিম খান বলে উঠলেন,

‘বেশি চাপ? প্রায় প্রতিদিন দেরি করে আসছো যে?’

ক্লান্ত গলায় আদর বলল, ‘হুম বাবা। প্রচুর। তিন দিনের যে ছুটিতে ছিলাম। তার ধকল এই এক সপ্তাহ জোরালো ভাবে আমার উপর দিয়ে গেলো। ইনশাআল্লাহ কাল থেকে একটু ফ্রি হতে পারি।’

আজিম খান গুপ্তধন পেয়েছেন এমন খুশি খুশি গলায় বললেন, ‘সত্যি কালকে ফ্রি আছো?’

আদর চোরাচোখে তাকিয়ে বলল, ‘জি।’

আজিম খান গলা খাকারি দিয়ে বললেন, ‘তবে, আমার এক বন্ধুর সাথে কাল দেখা করতে যেও।’

ভ্রু কুচকে আদর প্রশ্ন করলো, ‘বন্ধু মানে? তোমার বন্ধুর সাথে আমি কেনো দেখা করতে যাবো?’

আর্দ্র ভদ্র বাচ্চার মতো খাচ্ছিলো। বাবার কথা শুনে সে শুধরে দিলো, ‘বাবা বলো বন্ধুর মেয়ের সাথে।’

আজিম খান কড়া চোখে তাকালেন। মনোয়ারা বেগমও নিশ্চুপে ধমক দিলেন। ভাইয়ের কথা শুনে নিয়েই আদর বিরক্তি ভঙ্গিতে বলল,

‘সিরিয়াসলি বাবা? আমি শুনেছি ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য মায়েরা পাগল থাকে কিন্তু আমার বেলায় সব উল্টো।’

‘বিয়ে করলে তোমার সমস্যা কি?’

‘কোনো সমস্যা নেই। আই হেভ নো প্রবলেম। বাট দেয়ার ইজ আ বিগ প্রবলেম। আমি তাকে বউ হিসেবে দেখতেই পারবো না। বোন বোন ফিলিংস হবে আমার। কারণ আমি এমন কাউকে বিয়ে করবো যার উপর আগে আমার প্রেম প্রেম ভাব কাজ করবে।’

কথাগুলো বলতেই কেনো যেনো হুট করে টিকলির মুখখানা চোখে ধরা দিলো। আদর অপ্রস্তুত হলো বাবার সামনে এমন কথা বলায়। আজিম খান ভ্রু কুচকে খানিক চেয়ে থেকে বললেন,

‘ওকে এই মেয়ের সাথে কথা বলো। ঘুরো। প্রেম প্রেম ফিলিংস এমনিতেই আসবে।’

খাওয়া ছেড়ে উঠে পরলো আদর। মনোয়ারা বেগম দৌড়ে এলেন। শান্ত কন্ঠে আদর জবাব দিলো,

‘আমি আর খাবো না মা। আর বাবা, বিয়ের কথা আমি নিজেই তুলবো আমার মরজিমাফিক। সব বিষয় সবার উপর চাপিয়ে দিতে নেই। এইসব বিয়ে সম্পর্কিত বিষয় তো নয়ই। আমরা এডাল্ট। নিজের ইচ্ছের দাম তো আছে নাকি? আর একবার বিয়ের কথা তুললে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো আমি।’

আদরের কথা শেষ হতেই আদর নিজের ঘরে চলে গেলো। পুরো ডাইনিং টেবিল জুড়ে পিনপিন নিরবতা। যদিও আদর শান্ত শিষ্ট ভদ্র একটা ছেলে তবে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিংবা পছন্দের সই কিছু না হলে ওর ওই তীরের ফলার ন্যায় কথার আঘাতেই মানুষকে আধমরা করে দিবে। আর্দ্র বিরক্তিতে চু শব্দ করে বলল,

‘কি দরকার ছিল বাবা? ভাইয়ার বিয়ে ভাইয়াকেই বলতে দেও না। বিয়ের সময় এলে সে নিজেই বলবে।’

_____________________________

মন খারাপের মুখে বসে ছিলো টিকলি। টায়রা বসেছিলো একটু দূরে। টিকলি বলল করুণ গলায়,

‘আমার ভালো লাগছে না টায়রা।’

টিকলির দিকে তাকিয়ে টায়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলো, ‘কি করবো বল?’

টিকলি ঠোঁট কামড়ে তাকালো ঘরের দরজার দিকে। নিঝুম দ্বীপ থেকে আসার পর ওরা দুইদিন ওদের বান্ধবীদের বাসায় ছিলো। বাড়ি ফেরার আজ পাঁচদিন। এই পাঁচদিনে শায়লা আক্তার বকা-ঝকা করার পর দুই মেয়ের সাথে কথা বললেও কথা বলছেন না জামিলুর রেজা। টিকলির বড্ড অসহায় লাগে। দুনিয়াদারি অন্ধকার দিয়ে আসে। বাবা কথা না বললে পৃথিবীকে পানিশূন্য মনে হয়। চন্দ্র সূর্য বিহীন মনে হয়। বাবার সাথে কথা বলতে পারছে না এর চেয়ে জঘন্য সময় আর কি হতে পারে? ভেতরটা খচখচ করছে। চাপা শ্বাসে বুক উদ্বেল। টিকলি হঠাৎ উঠে দাড়ালো। বলল,

‘চল টায়রা বাবার কাছে যাবো।’

টায়রার কাছে মার চেয়ে বাবা একটু বেশি আপন। বাবা তাদের ছায়া। মাথার উপর শক্ত আচ্ছাদন। তবে বাবার চেয়ে মা খুব বেশি প্রিয়। টায়রাও উঠে দাঁড়িয়ে ভীতু গলায় বলল,

‘সত্যি যাবি?’

‘হুম চল।’

টিকলি হেটে গেলো। টায়রা বোনের পেছন পেছন লুকিয়ে চুরিয়ে এলো কোনোমতে। বাবা-মায়ের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চির পরিচিত অভ্যাস, নখ কামড়াতে শুরু করলো টিকলি। ভয়ে বুকে ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে। মাথা ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মা ঘুমোচ্ছে। ইশশ…এই সময়েই ঘুমোতে হলো। কিছু হলে মা বাচিঁয়ে দিতো। বাবাকে গিয়ে বলবে কি? টায়রা প্রশ্ন করলো,

‘কিরে আপু যাস না কেনো?’

টিকলি নখ কামড়াতেই চোখ পাকিয়ে তাকালো। দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলল, ‘বিপদের সময় আপু? কেনো তুই যা। কি সুন্দর এখন আপু ডাকা হচ্ছে! পল্টিবাজ মেয়ে একটা!’

টায়রার থেকে চোখ সরিয়ে ধুরুধুরু বুক নিয়ে টিকলি দরজায় নক করে বলল,

‘বাবা আসবো?’

উপন্যাসের পাতা থেকে মুখ ঘুরিয়ে দৃষ্টি দরজায় স্থাপন করলো জামিলুর রেজা। টিকলি স্বভাবও পেয়েছে একদম বাবার মতো। বাবার মতোই বই পড়া স্বভাব তার। অন্যদিকে বই দেখলে টায়রার জবাব,

‘নিজের একাডেমিক বই পড়ি না। আর তোমার এই বা* ছা* বই পড়তে যামু? খায়ে দায়ে কাম নাই আর আমার।’

জামিলুর রেজা গম্ভীর গলায় বললেন, ‘এসো।’

কাঁপা কাঁপা পায়ে ভেতরে এলো দুই বোন। বোনের নীল উড়নার কোণা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো টায়রা। জামিলুর রেজা বললেন,

‘বসো দুজন।’

টিকলি বসলো বাবার পাশে। টায়রা অন্যপাশে বসলো। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতার পর জামিলুর রেজা বললেন,

‘কি বলতে চাও?’

টিকলি গলা পরিষ্কার করে মাথা নিচু করে বলল, ‘বাবা আই এম সরি।’

টায়রাও মাথা নিচু করলো। বলল, ‘আই এম অলসো সরি বাবা। আসলে হয়েছিল কি….’

জামিলুর রেজা হাত তুলে বললেন, ‘কৈফিয়ত দিচ্ছো কেনো? আমি তোমাদের কৈফিয়ত দিতে বলিনি। যদি এতোই আমাদের কথা ভাবতে তবে এই কাজ করতে না।’

টিকলি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘কিছু করার ছিলো না বাবা। আমি তোমাকে বারন করেছিলাম। আমি বিয়ে করতে চাইনি। তুমি জোরাজোরি করলে। তাই বাধ্য হয়ে…’

জামিলুর রেজা সূক্ষ্ম কণ্ঠে বললেন, ‘তোমার কি বিয়ে হবে না কখনো? বিয়ে করবে না? সেই বিয়েটা এখন করলে কি সমস্যা?’

‘এখন না করলে কি সমস্যা?’

‘তর্ক করো না টিকলি।’

নাথা নত করে টিকলির উত্তর, ‘সরি বাবা। তর্ক করতে চাইনি।’

জামিলুর রেজা গম্ভীর সুরে বললেন, ‘আমি দেখাতে চাই সেই লোককে যে, তাদের ছেলের চেয়েও ভালো ছেলের কাছে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারি এবং খুব তাড়াতাড়ি।’

টায়রা ভাবুক গলায় প্রশ্ন করলো, ‘কাকে দেখাতে চাও বাবা?’

‘যে আমায় ফোন দিয়ে আমার মেয়ে সম্পর্কে বাজে কথা বলেছে। বলেছে আমার মেয়ে নাকি পনেরো দিনের…ছি ছি ছি! বলতেও আমার মুখে বাধে। অশিক্ষিত লোক একটা। ‘

টিকলি কথা ঘুরানোর চেষ্টা করলো, ‘বাবা আমাদের মাফ করে দেও। আসলে এতোটাই টেনসড ছিলাম যে কি করবো ভেবে উঠতে পারিনি। তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম।’

জামিলুর রেজা মিনিট খানিক তাকিয়ে থেকে ভাবলেন। এরপর বললেন, ‘বিয়ে করবে?’

টিকলি অসহায় চোখে তাকালো। টায়রা বলল, ‘বাবা তুমি কি সামহাও ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছো? আর আমি বুঝতে পারছি না, বিয়ে বিয়ে করে এতো পাগল হচ্ছো কেনো তুমি?’

‘কারণ টা একটু আগে বলেছি। এককথা বলতে বার বার ভালো লাগে না।’

টিকলি অসহায় অসহিষ্ণু গলায় বলল, ‘বাবা, আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। আমি বিয়ে করবো আর আমার একটা মতামত আছে না বলো? আমি মন থেকে রাজি না বাবা। প্লিজ…’

জামিলুর রেজা হতাশ চোখে তাকালেন মেয়ের দিকে। টায়রা ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে প্রচুর কাদতে পারে। কাদার এক্টিং এ সে এক্সপার্ট। এইদিক থেকে টিকলি খুব শক্ত। খুব কম কাদে সে। বুক পুড়ে খানাখানা হয়ে গেলেও চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরবে না। চোখেই রয়ে যাবে।

টায়রা বলল ধরা গলায়, ‘বাবা আপুকে মাফ করে দেও।’

মেয়ের কন্ঠে গলে গেলেন জামিলুর রেজা। দুই মেয়েকে দুই হাত দিয়ে বুকে টেনে নিলেন। মেয়েদের মাথায় চুমু খেয়ে বললেন, ‘ ব্ল্যাকমেইল!’

টায়রা হাসলো। শায়লা আক্তার ঘুম থেকে উঠে পরেছেন তখন। বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখছিলেন অন্যরকম মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপটে। জামিলুর রেজা বললেন, ‘কাজ হাসিলের সময় কি ইমোশনাল তাই না? চোখে পানি আবার সাথে আপুও।’

টায়রা শব্দ করে হাসলো। টিকলি নিরবে হেসে বাবার দিকে তাকালো। তারপর মাকে কাছে টেনে বলল,

‘বাবা-মা আমি না তোমাদের খুব ভালোবাসি। এতো তাড়াতাড়ি পর করে দিও না। আমি সারাজীবন তোমাদের সাথে থাকতে চাই।’

প্রিয় মায়ের চোখ জলে সিক্ত হলো। তিনি মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে বললেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ে দিবো না। এই টিকলির বাবা আর কোনো পাত্র দেখো না তো তুমি। আমার রাজ্যের রাজকন্যারা হারিয়ে গেলে আমি রাজ্য দিয়ে কি করবো?’

_______________________________

বারান্দার লতা পেচানো দোলনাটিতে বসে ছিলো টিকলি। এক কোণায় খাচায় বন্দি দুটি ময়না পাখি বুলি আওড়াচ্ছিলো,

‘টিকলি… টিকলি….টায়রা…টায়রা।’

টিকলি স্মিত হাসলো। শেষ আকাশের মাথায় ফুটে উঠেছে লাল হলুদ বেগুনি রশ্মি। একটু আগেই থেমেছে ঝুম বৃষ্টি। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মন খারাপ হলো টিকলির। বুক ভার হলো। বিষন্নতার বাশির সুর বয়ে গেলো। সেই মন খারাপ ক্রমাগত রূপান্তরিত হলো হৃদয় ব্যথায়। কি অসহ্যকর ব্যথা! তবুও টিকলি কাদলো না। শুধু চোখের কোণায় জলেরা হানা দিয়ে আবার একা একাই মিশে গেলো স্বর্ণ খচিত ওই আকাশটাতে। ওই স্বর্ণালি আকাশটাতে যেনো ভেসে উঠলো মনচিঠির লেখাগুলো। যেগুলো একয়দিনে খুলে পড়বার সাহস হয়নি টিকলির। তবে এখন পড়বে। পড়তে ইচ্ছে করছে। চোখের কোণা অশ্রুসিক্ত করে পড়তেই থাকবে। টিকলি পড়লো। গভীর নিবিড় প্রগাঢ় অনুভবে মনকে রাঙিয়ে সে পড়লো বিরবির করে। ভারী গলায়। উত্তাল নিঃশ্বাসে,

“ভালোবাসা তটিনী। গাঙ ভাসা রঙিন। স্রোতস্বিনী বেয়ে চলা পাহাড়িময় ঢাল। প্রবাহিণী জলধি। আবার কখনো মরা শঙ্খচিল। বেদনার সুর। কান্নার ধ্বনি। আবার কখনো গোলাপের ন্যায় মসৃণ, ভেজা, স্নিগ্ধ, মোলায়েম। ভোমররা ঘুরে মদু আহরণ করতে চায়। কেড়ে নিতে চায় ফুটন্ত ভালোবাসা কে। আবার ঈগলের মতো কখনো নির্দয়। ছু মেরে নিয়ে চলে যায় ভালোবাসাকে। তার তীক্ষ্ণ চোখে রাগ ঝরে। ভালোবাসার মলিনতা উড়ে রোষাগ্নি হয়। রোষানলে পুড়ে তখন ছারখার হয়ে যায় এই বুক। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের গর্জনে কেঁপে উঠে হৃদয়কূল। কানে লাগে, সিংহের মতোন গর্জন। যে গর্জন টেনে হিচড়ে বুক থেকে নিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা নামক আদরকে। হ্যাঁ, ভালোবাসা নামক আদরকে!”

টিকলি চোখ বন্ধ করলো। এরপর অনেকদিন বাদে কিছু না পাওয়ার বেদনার দু’ফোটা পানি পরলো নয়ন বেয়ে ঠোঁটের উপর। ঠোঁট অভিযোগ করলো, ‘কাদছিস কেনো? কাদিস না। তুই কাদলে আমার উপর নোনতা স্বাদ অনুভব হয় রে।’

চলবে❤️