বৃষ্টিস্নাত তুমি পর্ব-০৪

0
356

#বৃষ্টিস্নাত_তুমি (৪)
হুযাইফা মাইশা

লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এসব কথা মুখ দিয়ে বের হলোনা ইয়াভকিনের। হু,হা করে মায়ের সাথে টুকটাক কথা সেড়ে কল কেটে দিয়ে হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়ল। এরপর ধীরে সুস্থে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। রাতের রান্না করা হয়নি। খালাকে ডাকেনি আর দাওয়াতে ছিল বিধায় পূর্ণতাও রান্না করেনি।
পাশের রুমের সামনে কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করতে করতে নক করল একবার। দরজা আলগোছে খুলে গেল। ভিড়িয়ে রাখা ছিল। ভেতরে ঢুকবেনা, ঢুকবেনা করেও পা বাড়াল। বিছানায় গভীর ঘুমে তলিয়ে পূর্ণতা। ভেজা চুলগুলো অধিকাংশ পিঠের নিচে। বাকিগুলো বালিশের পাশে ছড়িয়ে। গায়ে পাতলা চাদর টানা। না চাইতেও দু কদম এগিয়ে গেল ইয়াভকিন। নাম ধরে ডাকল,
‘ পূর্ণতা, এই মেয়ে?’

সাড়া নেই। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। জ্বর এসেছে কিনা দেখার জন্য কপালে আলতো করে হাত রাখল। নাহ,জ্বর নেই! হাত সরিয়ে কিছুক্ষণ এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। নিজের কান্ডে নিজে অবাক হলো ভীষণ। মেয়েটার খোঁজ নিচ্ছে ও? কালই হয়তো ফিরে যাবে ওই বাসায়। এরপর..এরপর আর দেখা হবেই বা কবে? মেয়েটা নাকি ওর বউ! কি অবিশ্বাস্য কথা!

রাত এগারোটায় আবারও পূর্ণতার কাছে এল। কয়েকবার ডাকতেই পিটপিট করে নেত্রযুগল খুলল মেয়েটা। ইয়াভকিন তখন ওর দিকে ঝুঁকে আছে। চুলগুলো কপালে ছড়ানো। ভ্রুদ্বয় কুঁচকানো। এতো কাছে তাকে দেখে ভড়কে গেল পূর্ণতা। উঠে বসার জন্য চেষ্টা করতেই মাথা গিয়ে ঠে’কল ইয়াভকিনের থুতনিতে। আর্ত’নাদ করে উঠল পূর্ণতা। মাথায় হাত চেপে উঠে বসল। ইয়াভকিনও থুতনিতে বেশ ব্যথা পেয়েছে। কিন্তু টু শব্দ অব্দি করছিনা। কেবল কুঁচকানো ভ্রু দ্বয় আরো কুঁচকেছে। সেই সাথে মুখশ্রী হয়েছে গুরুগম্ভীর!

মিনিট কয়েক পার হতেই থমথমে গলায় পূর্ণতা বলল,
‘ কি দরকার এখানে?’
‘ খেতে আসো। কতক্ষণ ধরে ডাকছি।’
‘ ক্ষিদে নেই।’
‘ তাও খেতে হবে। চলো..’
‘ জোর করছেন কেন?’
‘ তোমার বাবা-মা, আমার বাবা-মা সবার ভরসা আমার উপর। বিশ্বাস করেন বলেই বিয়েটা দিয়েছেন। আমি চাচ্ছিনা আমার দায়িত্বে কোনো কমতি থাকুক।’

বেরিয়ে গেল ইয়াভকিন। পূর্ণতা ঠায় বসা। লোকটা কি ওকে দরদ দেখাচ্ছে? কালকেই ফিরে যাবে!
মুখ হাত ধুঁয়ে বাইরে এসে দেখল টেবিলে ডিম ভাঁজি রাখা। কে বানিয়েছে বুঝতে বাকি রইলনা। একটা চেয়ারে বসা ইয়াভকিন। প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছে। পূর্ণতা বসতেই বলল,
‘ ডিম ছিল ফ্রিজে। সেটাই বানালাম। খালা আসেননি তো তাই। আর বাইরের আনহেলদি খাবার আমার পছন্দ না।’

মাথা কিঞ্চিৎ দুলাল পূর্ণতা। প্রত্যুত্তর দিয়েছে আরকি। খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল।

পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বের হলোনা পূর্ণতা। নয়টার দিকে দরজা লাগানোর শব্দ কানে আসতেই ভাবল, ইয়াভকিন বোধহয় বেরিয়ে গেছে। আপনমনে বিড়বিড় করতে করতে রুম থেকে বের হওয়ার সময় রিংটোনের শব্দে আবারও ফিরে আসল। মায়ের কল! নিজেকে ধাতস্থ করে কল ধরতেই ওপাশ থেকে হেনা ফুঁপিয়ে উঠলেন,
‘ কি করছিস? খাচ্ছিস ঠিক মতো?’
ভড়কে গেল পূর্ণতা,
‘ কাঁদছো কেন? বিদায়ের সময় ও তো কাঁদলে না!’
‘ ওখানে ঠিক আছিস?’
‘ হ্যাঁ মা, ঠিক থাকবনা কেন?’
‘ ছেলেটা খুব দায়িত্বশীল, বুঝেছিস? জানি, তোদের কথাবার্তা কম হয়েছে। অনেকেরই এমন হয়। কিন্তু পরে গিয়ে ওরা খুব সুখী হয় জানিস? ওইযে তোর ছোট খালার ভাসুরের মেয়েরও এমনভাবে বিয়ে হয়েছে! এখন মেয়েটার দুটো ছেলে আছে। কি ফুটফুটে দেখতে, তোর খালায় বাসায় দেখলিনা?’
হেনা কোন কথা ছেড়ে কোথায় গেলেন তা ভেবে হাসি আটকালো পূর্ণতা। খানিক চুপ থেকে বলল,
‘ দেখেছি মা। মনে আছে আমার।’
‘ হ্যাঁ, তুইও একটু মানিয়ে নে। ছেলেটা খুব দায়িত্বশীল। ওকে আমরা অনেকবার দেখেছি জানিস? একদম ওর বাবার মতো, কি আন্তরিক! তুই তো কলেজে ছিলি তখন, বাড়িতে একবার এসেছিল।’

এই সেই বলতে বলতেও ক্লান্ত হলেন না হেনা। যা কথা বলছেন আপাতত তার নব্বই শতাংশ ইয়াভকিনের প্রশংসা। পূর্ণতা বিরক্ত হল। পায়চারি করতে করতে বাইরে এল। ভেবেছে ফ্লাট পুরো খালি। মাকে বলল,
‘ থামো মা। আর বলোনা, উনার নামে এসব কথা হয়তো উনিই জানেন না!’
দমে গেলেন হেনা। আরও কয়েক সেকেন্ড কথা বলে ফোন রেখে দিল। লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেল পূর্ণতা। সামনে পকেটে হাত গুঁ’জে দাঁড়ানো ইয়াভকিনকে নজরে এল তখনি। হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ আপনি যান নি? অফিস নেই?’
‘ কার সঙ্গে কথা বলছিলে?’
‘ মা।’
‘ কাকে নিয়ে বলছিলে, শুনি?’
‘ আপনার তাতে কি? অফিস নেই?’
‘ যাইনি।’
‘ কোন দুঃখে?’
‘ তোমার তাতে কি?’

আঁধার নামল যেন পূর্ণতার মুখশ্রীতে। বিড়বিড় করে বলল, ‘ কিছুনা।’ পাশ কাটিয়ে অগ্রসর হলো ড্রয়িং রুমে। পিছু পিছু যে ইয়াভকিন আসছে সেটা ঠের পাচ্ছে ও। ভ্রুদ্বয় কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কোনো দরকার?’
‘ যাবে কখন?’
‘ একটু পর।’
‘ বিকেলের দিকে যেও?’
‘ কেনো?’
থতমত খেল ইয়াভকিন,’ মা যদি কল দেয় আরকি!’
সন্দিহান নজরে তাকাল পূর্ণতা। ইয়াভকিন ফের গম্ভীর গলায় বলল,
‘ সন্দেহ করতে পারে, তাই। তোমার সমস্যা হলে যেতে পারো।’
আয়েশ করে সোফায় বসল পূর্ণতা। প্রত্যুত্তর না পেয়ে প্রস্থান করল ইয়াভকিন। পূর্ণতা এক্ষুনি যাচ্ছেনা তাহলে!

ঘড়ির কাটায় আড়াইটে। রান্না সেড়ে সবে বেরিয়েছে পূর্ণতা। হাত করা শিখেছে বহু আগেই। হোস্টেল ছেড়ে যখন বাসায় উঠল দুই বান্ধবী নিয়ে, প্রায়ই হেনাকে জিজ্ঞেস করে করে রান্না করতো। ঘড়িতে চোখ বুলাতেই হাঁসফাঁ:স করে উঠল। দেরি হয়ে গেছে। গোসল করা বাকি, তারপর আবার খাবার খেয়ে বেরোবে কখন?
হন্তদন্ত পায়ে রুমের দিকে ছুটতে গিয়ে দরজার কিছুটা আড়ালে ফোন কানে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়াভকিনকে নজরে এলোনা সহজে। ইয়াভকিন তখন কলে। কানে ফোন আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পূর্ণতার দিকে নিবদ্ধ ছিল। পাক্কা গিন্নির ন্যায় চালচলন মেয়েটার। অথচ, ওদের মধ্যকার সম্পর্কটা একদমই স্বাভাবিক নয়। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষন আশংকায় ও।

গোসল সেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এল পূর্ণতা। নাকে-মুখে তখনও পানি লেপ্টে। খাবার টেবিলে খাবার সাজানো, একপাশের চেয়ারটায় বসা ইয়াভকিন। ফোনে কিছু একটা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কিন্তু সেই মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটতে সময় লাগলনা। পূর্ণতার উপস্থিতি টের পেতেই ফোন অফ করে সোজা হয়ে বসে বলল,
‘ বসো।’
‘ খাওয়া শুরু করলেই পারতেন।’
‘ অপেক্ষা করছিলাম।’
‘ ফর্মালিটি?’
‘ খানিকটা!’

চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে আবার গেল পূর্ণতা। রেডি হয়ে বের হতে না হতেই দরজার কাছে এসে ইয়াভকিন হাজির। পরনে টিশার্টের উপর কালো রঙের শার্ট। পূর্ণতা অবাক হয়ে শুধাল,
‘ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’

একহাতে চুল ঠিক করতে করতে দরজা খুলে কিছুটা সরে দাঁড়াল ও। বলল,
‘ ভাবলাম, পৌঁছে দিয়ে আসি। আফটার অল, তোমার দায়িত্ব আমার উপর। এন্ড ইউ নো হোয়াট, দায়িত্বে হেরফের করিনা আমি!’

প্রশ্ন করার উপায় রাখলনা ইয়াভকিন। গটগট পায়ে ব্যাগ হাতে বের হলো পূর্ণতা। থমথমে মুখশ্রীতে কোথায় যেন তিক্ত ভাবটা স্পষ্ট। চোখ এড়ালোনা ইয়াভকিনের।

_

পূর্ণতা যেখানে থাকে সেটা একতলা বাসা। বাড়ির মতো। বিশাল বড় বড় দেয়াল চারদিকে। গাছপালায় ভরা চারপাশ। এক বৃদ্ধা আর বৃদ্ধ থাকেন একতলার একদিকে। অন্য দিকে পূর্ণতা, নওশিন আর বর্ষা। মেয়েটা দু’টো পূর্ণতার সঙ্গে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়লেও নওশিনের ডিপার্টমেন্ট আলাদা।
ছিমছাম, নিরিবিলি বাসাটা ভার্সিটি থেকে মিনিট পনেরো এর দূরত্বে। বাসাটায় একবার চোখ বুলাল ইয়াভকিন। গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে। একটু পাশেই পূর্ণতা দাঁড়িয়ে। হাতে ব্যাগ। ইয়াভকিনের মতলব কি বুঝতে পারছেনা। নীরবতা কাটিয়ে ইয়াভকিন বলল,
‘ ভার্সিটি থেকে তো ফ্লাটটা দূরে না ওতোটা!’
‘ বিশ মিনিট কোন দিক দিয়ে কম?’
‘ এখান থেকে যেতে নিশ্চয়ই দুই মিনিট লাগেনা।’
‘ পনেরো মিনিট, তার চেয়েও কম।’
‘ কাছাকাছি। যাইহোক, বাবা মা কেউ কল করে কথা বলতে চাইলে ম্যানেজ করবে তুমি, কারণ সমস্যাটা তোমার। বুঝেছ?’
‘ কি স্বার্থপর আপনি!’
‘ হ্যাঁ, তাতো বটেই। মনে আছে, মাথায় পানি ঢেলেছিলে?’

থমথমে হলো মুখশ্রী। মনে মনে পূর্ণতা বলল, ‘ বেশ করেছি পানি ঢেলেছি। দরকার পড়লে আবার ঢালব। কি তেজ! হাহ্!’

‘ যাও,যাও। ভেতরে যাও।’

পূর্ণতা বড় বড় কদম ফেলে নিমিষেই গেটের ভেতরে ঢুকলো। ইয়াভকিন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর ফিরে এল।

_

নওশিন পড়াশোনায় ব্যস্ত। হুট করে রুমে পূর্ণতাকে ঢুকতে গেলে খানিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ এসে গেছিস?’
‘ হ্যাঁ।’
‘ আমি ভেবেছি একেবারে চলে গেছিস।’
‘ একেবারে যাওয়ার জায়গা বলতে শুধু গ্রামের বাড়িটাই আছে। মা-বাবা বাসায় থাকেনা। ভাইয়া গ্রামে চেম্বার নিয়েছে। ভাবিকে নিয়ে ওখানেই আছে।’
‘ ইশ, তোর বর মানা করলনা?’

উত্তর দিলনা পূর্ণতা। বিয়ের ব্যাপারটা আপাতত এ বাসার সকলেই জানেন। হন্তদন্ত পায়ে রুমে ঢুকল বর্ষা। কাঁধের ব্যাগ বিছানার উপর রেখে পাশে ধপ করে বসে জিজ্ঞেস করল,
‘ পূর্ণতা, ওটা তোর হাজবেন্ড ছিল নাকি?’
‘ হু।’
‘ বেশ সুন্দর। তোদের মানিয়েছে রে।’

চুপ থাকল পূর্ণতা। বর্ষা একটু পর আবার বলে উঠল,
‘ বাই দ্যা ওয়ে, পূর্ণতা..’
‘ বল..’
‘ তন্ময় তোর খোঁজ করছিল। ক্লাসে এসে সরাসরি তোর কথা জিজ্ঞেস করেছে। আসিস নি কেন সেই কারণে!’
‘ কি বললি?’
‘ বললাম ওর ফ্যামেলি প্রবলেম। ওকে বলে দেয়া উচিত তোর বিয়ে হয়ে গেছে।’
‘ হুহ, বলে দেব।’
_

তখন সন্ধ্যা। একা ফ্লাটে ইয়াভকিন। বর্তমানে ওর রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে। হাতে সিগা’রেটের শেষাংশ। অন্যহাতে ফোন। খানিক পরে সেটা বেজে উঠতেই চকিত নয়নে নাম্বারটায় চোখ বুলাল। কাজল কল করছেন। রিসিভ করতেই বললেন,
‘ পূর্ণতা কোথায়?’

আমতা আমতা করে ইয়াভকিন উত্তর দিল,
‘ আছে তো।’
‘ দেখি ওকে ফোনটা দে। কল ধরছেনা কেন?’
‘ ঘুমোচ্ছে তো তাই।’
‘ অসময়ে কেউ ঘুমায়? তুই ডাক দে।’
‘ মাত্রই শুয়েছে মা। উঠলে দিবো নাহয়?’
‘ ঠিক আছে।’

কল রেখে একধ্যানে বাইরে তাকিয়ে রইল ও। মিথ্যে বলল মাকে! কি সাং-ঘাতিক কান্ড! মেয়েটার জন্য কিনা মিথ্যে বলতে হলো, শেষমেশ আরো কি কি করতে হবে কে জানে!

সুপ্ত রাগ মাথায় চেপে পূর্ণতার নাম্বারে কল দিল। কাজল আবার কল দিয়ে ওর সাথে কথা বলতে চাইবেন। না কথা বলিয়ে দিলে সন্দেহ করবেন।
ধুপধাপ পা ফেলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল! মেয়েটার জন্য বারবার মিথ্যে বলতে পারবেনা সে!

পূর্ণতা গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। কালকে একটা এক্সাম। কিছুদিন ধরে এসবের কারণে ঠিকঠাক মত পড়তেও পারেনি! পড়া জমে গেছে বিধায় সকল মনোযোগ আপাতত পড়াতেই দিয়েছে। ঠিক এ কারণেই দরজা ধা’ক্কানোর শব্দা ওর কর্ণকুহর দিয়ে প্রবেশ করতে পারলনা। কিন্তু পাশ থেকে নওশিন উঠে গেল।
দরজা খুলে অপরিচিত কাউকে দেখে ভড়কে দেখে জিজ্ঞেস করল,
‘ কে আপনি?’

তার জানামতে গেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ান কাউকে ঢুকতে দেয়না রাতে। ততক্ষণে বর্ষা এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে খানিকটা চমকে উঠল,
‘ ভাইয়া, আপনি?’
‘ পূর্ণতাকে একটু ডেকে দিবেন, কাইন্ডলি?’

গলা উঁচিয়ে পূর্ণতাকে ডাকতেই হন্তদন্ত পায়ে ছুটে এল সে। তারপর পিটপিট, চকিত নয়নে সেকেন্ড হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দরজার পাশটায় এসে দাঁড়াতেই ইয়াভকিন বলল,
‘ একটু বাইরে এসো। জলদি।’

পিছু পিছু গেল পূর্ণতা। বাড়ির সামনে খালি জায়গা। গেটের দুই ধারে লাইট। সেগুলোর আলোয় সবকিছুই স্পষ্ট। পূর্ণতা থেমে থমথমে কণ্ঠে বলল,
‘ কি দরকার? এখানে এসেছেন কেনো আবার?’
‘ মা কল করেছিল, কথা বলতে চেয়েছেন তোমার সাথে। মিথ্যে বলতে হয়েছে তোমার জন্য!’
‘ সত্যি বললেই তো পারতেন।’
‘ হ্যাঁ, সত্যিটা বললে তো মা কষ্ট পেত। যেটা আমি চাইনা। দুই পরিবারকে আশাহত করার মানে হয়!’
‘ আপনি সেসব পরোয়া করেন নাকি? যাক গে! এখন কি করব? মাকে কল দিয়ে কথা বলে প্রমাণ করব যে আমরা একসাথে আছি?’

তীক্ষ্ণ নজর ইয়াভকিনের। চোয়াল শক্ত। পূর্ণতা সেসব বিশেষ ধ্যান না দিয়ে ফের বলল,
‘ কল ধরিয়ে দিন। আমারটা রেখে এসেছি।’

রিং হতেই রিসিভ করলেন কাজল। প্রথমে ইয়াভকিন কথা বলল,
‘ মা? পূর্ণতার সাথে কথা বলো।’

ফোনটা হাতে নিলো পূর্ণতা। স্পিকার অন। টুকটাক কথা সাড়তেই কাজল ধীরে ধীরে বললেন,
‘ ইয়াভকিন কি পাশে? ওর পাশ থেকে একটু সরে আসো তো।’

একবার ইয়াভকিনের মুখের দিকে তাকাল পূর্ণতা। ভ্রু কুঁচকানো। লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে স্পিকার অফ করে করে কানে ঠেকালো ফোন। কাজল ওপাশ হতে বলে উঠলেন,
‘ ওকে বলে গ্রামে নিয়ে আসতে পারবে? বিয়ের অনুষ্ঠান নাহয় হয়নি, তাই বলে বৌভাতও হবেনা? পরদিন ওমন ছুটে আসলো রাগে! একবার বলে দেখো, কেমন?’
‘ ঠিক আছে মা।’

কল রেখে দিতেই হাত থেকে ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিল ইয়াভকিন। সেটা পকেটে ঢুকিয়ে আড়াআড়ি করে দুহাত ভাঁজ করে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করল,
‘ কি বলল মা?’
‘ কিছুনা।’

খানিকটা সময় নীরবতা। সেটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে ইয়াভকিন প্রবল অধিকারবোধ সহিত গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ ব্যাগ গোছাও গিয়ে। আমার সাথে যাচ্ছো তুমি।’

চলবে।