বৃষ্টি নামার পরে পর্ব-১০

0
4018

#বৃষ্টি_নামার_পরে❤
#লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১০

১৩.
“গুঞ্জনকে দেখে অনু মনে হলো একটু রেগে গেলো। মৃন্ময়কে ছেড়ে দিয়ে ওর গালে হাত রেখে বললো,সুইটহার্ট তুমি এই অবেলায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো?”

“অনেকক্ষণ টাস্কি খেয়ে বসে থাকার পর মৃন্ময়ের ঘুমের রেশ কাটলো।হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে অনু’র দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো, তোমরা এসে পড়েছো?তোমাদের না সন্ধ্যার দিকে ল্যান্ড করার কথা?”

“অনু বললো, সারপ্রাইজড করতে চলে এলাম।খুশি হওনি?”

“মৃন্ময় খুশি হবার ভান করে বললো, অনেক খুশি হয়েছি।”

“অনু বললো,তা এ অসময়ে ঘুমালে কেন বললে না যে?”

-” আসলে সারাদিন অফিস থাকি তো,তাই রেস্ট খুব কম হয়।আজ তোমরা আসবে শুনে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে এলাম।দ্যান কখন যে চোখ লেগে গেলো বুঝতেই পারিনি।”

“অনু অভিমানী গলায় বললো, বউ কি ঘুমাতে দেয় না তোমায়?একদম খেয়াল রাখে না,তাই না?”

“মৃন্ময় কাটা কাটা গলায় বললো,তেমনটা নয়!”

-“জানি জানি। এ মেয়েকে দেখলেই বোঝা যায় আনকালচারড একটা মেয়ে!কি করে যে একে বিয়ে করলে?”

“গুঞ্জন এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো। ওকে নিয়ে কথা বলায় গুঞ্জন রেগে গেলো।বললো, অ্যাটেনশন গাইজ!”

“অনু আর মৃন্ময় গুঞ্জনের দিকে তাকালো।মৃন্ময়ের মনেই ছিলো না যে গুঞ্জন এখানেই আছে।ও এবার একটু নড়েচড়ে বসলো।গুঞ্জন বললো, আমি যে আনকালচারড মেয়ে সেটা আমি নিজেই জানি,ইভেন আমি নিজেই সবাইকে বলে বেড়াই যে,আমি আনকালচারড গাইয়া মেয়ে।সো,আমার বিষয়ে তোমার এসব ফাও ফাও মন্তব্য উনাকে না শুনালেও চলবে।”

“অনু ভ্রু কুঁচকে বললো,বাবাহ!তুমি তো দেখছি কথাও বলতে পারো।আমি তো ভেবেছিলাম তুমি বুঝি বোবা!”

“গুঞ্জন রাগী সুরে বললো,সময় বুঝে কথা বলি।অন্যদের মতো গায়ে পড়ে কথা বলার স্বভাবটা বাদ দিয়ে ফেলেছি।তবে যখন বলতাম তখনো তোমার মতো একজন মানুষের বিষয়ে আরেকজনের সাথে ডিসকাস করতাম না!”

“অনু বললো, বেশ পটর পটর করতে পারো তো!”

-“জ্বি পারি।আরও অনেক কিছুই পারি!”

-“তা শুনি আর কি কি পারো?”

-“ঝগড়া, মারামারি, কাটাকাটি সব করতে পারি।এমনকি কিছু বেয়াদব, অভদ্র মেয়েদের সাইজ করতেও পারি।তবে তোমার মতো অন্যের বরকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে পারি না।রোমান্টিক কথাবার্তা বলতে পারি না।”

-“তাই?”

-“হুম।এরপর মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললো, তবে মনে হচ্ছে এগুলো আমাকে ও শিখে নিতে হবে।মিষ্টি মধুর কথাবার্তা শেখার কোর্স করতে হবে।”

“মৃন্ময়ের চেহারার রাগ ফুটে উঠলো।থমথমে চেহারা নিয়ে গুম হয়ে বসে রইলো। আর এদিকে গুঞ্জন আর অনু একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে,মৃন্ময় পড়েছে বিপাকে।এ দুই ডেঞ্জারাস গুঞ্জন আর অনু যেভাবে কথা বলছে তাতে ওর মনে হচ্ছে এই ঘরেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ খানিকক্ষণের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।এই দুই ঝগড়ুটে মেয়ে দুটোর মাঝখানে ওর নিজেকে এলিয়েন বলে মনে হচ্ছে।দুজনকে থামানোর জন্য মৃন্ময় বিছানা থেকে নামলো। অনুর দিকে তাকিয়ে বললো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।তুমি নিচে যাও প্লিজ!”

“অনু মৃন্ময়ের কথামতো বাধ্য মেয়ের মতো চলে গেলো।যাওয়ার আগে মৃন্ময়ের গালদুটো বাচ্চাদের মতো টেনে দিয়ে বললো,হাউ কিউট গুলুমুলুটা!”

-“আপনি এসব কি করছেন?”

-“আমি কোথায় কি করলাম?”

-“এই যে,আপনার বোন আপনার গলা জড়িয়ে রেখেছিলো?”

“মৃন্ময় বাঁকা হেসে বললো, আদর খাচ্ছিলাম!”

“গুঞ্জন বললো,আদর খাচ্ছেন খান।তবে জেনে রাখুন আমি গুঞ্জনও না এই ঘরে থাকি,তাই এসব নোংরামি না আপনি আপনার ওই বোনের ঘরে বা রাস্তায় গিয়ে করবেন।”

“মৃন্ময় আবারও বাঁকা হেসে ভ্রু নাচিয়ে বললো,জেলাস ফিল হচ্ছে?”

“গুঞ্জন যেন খুব মজা পেলো এরকম একটা কথা শুনে। সে ঘর কাঁপিয়ে অট্টহাসি হেসে বললো, লাইক সিরিয়াসলি মিস্টার মৃন্ময় চৌধুরী!যতই আমি বা আপনি এই বিয়ে না মানি, বিয়ে তো হয়েছেই।তাই আপনার সাথে কেউ এরকম করলে বা আমার সাথে কেউ এরকম করলে আমি যেমন জেলাস ফিল করি,ঠিক তেমনি আপনিও জেলাস হন।বুঝলেন?”

“খুব সত্যি যে কথাটা সেটা মৃন্ময় নিজেও জানে আর উপলব্ধি করতে পেরেছে।তাই আর কিছু না বলে ফ্রেশ হওয়ার অজুহাত দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।সম্পর্ক জিনিসটা এমন যে,যতই মানুষ না মানুক একটা অদ্ভুত অদৃশ্য শক্তি সম্পর্কটাতে প্রভাব ফেলে। চাইলেও আর না চাইলেও সেই শক্তি আলগা সুতোর টানে দুজন মানুষকে বেঁধে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে।গুঞ্জন আর মৃন্ময়ের বেলায়ও এমনই হয়তো!স্বামী-স্ত্রী’র বন্ধন হলো পবিত্র বন্ধন।সেখানে এই অদৃশ্য সুতোর টান আরও বেশি দৃঢ়, শক্তিশালী!জীবনে সব ধরনের শিক্ষারই প্রয়োজন আছে,এটাও হয়তো জীবনকে,সম্পর্ককে একটা অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়!”

____________________

১৪.
There’s not much to do
When all I can
Is thinking about you
Not doing well
Don’t know where you are
Cause your not here
It’s been way too long
If I could lay down beside you
I would, I would
When nothing really matters
Thats all I wanna do
I hope that you safe and
That I will see you soon
If I could lay down beside you
I would, I would
We talk on the phone
Every night
Love to hear your voice
I’m not sleeping well
I know that you’re alright and I can’t take it
You’ve been gone for way too long now
If I could lay down beside you
I would, I would
When nothing really matters
Thats all I wanna do
I hope that you safe and
That I will see you soon
If I could lay down beside you
I would, I would
Even if you’re gone I won’t forget you
Your all I know, what I need
And that ain’t changing
Even if you gone I will remember
Your all I know, what I need
And that ain’t changing
If I could lay down beside you
I would, I would
When nothing really matters
Thats all I wanna do
I hope that you safe and
That I will see you soon
If I could lay down beside you
I would, I would
If I could lay down beside you
I would, I would
When nothing really matters
Thats all I wanna do
I hope that you safe and
That I will see you soon
If I could lay down beside you
I would, I would

“অনেক জোরে মিউজিক বাজাচ্ছে অনু।গুঞ্জন আর আরিশা পা টিপে টিপে দরজা ঠেলে চুপিচুপি দেখতে লাগলো।একটা শর্ট জিন্সের প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে বিছানার উপর নাচছে উরাধুরা। তবে এটা নাচ না লাফানো সেটা গুঞ্জন বুঝতে পারছে না।শুধু লাফ দিয়ে বিছানার এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছে আর আসছে।আরিশা অনুর এসব দেখে হাসি থামাতে পারলো না।পেটে খিল ধরানো হাসি নিয়ে গুঞ্জনকে বললো, আপ্পি এ মেয়ে কি পাগল হয়ে গেলো নাকি?ওরে..রে.রে…এটা খরগোশের মতো এভাবে লাফাচ্ছে কেন?”

“গুঞ্জন হাসলো না।বললো, স্মার্ট!একেই বলে ওভারস্মার্ট।”

-“একে পাত্তা দেয় কে?ঢংগী কোথাকার।”

-“গুঞ্জন বললো, নিজের বোনকে এভাবে বলে কেউ?”

-“আমি বলি।”

-“কেন?”

-“আরে আপ্পি তুমি তো জানোনা,এ যে কি পরিমাণ অহংকারী আর হিংসুটে তুমি বুঝবাও না।দেখতে সুন্দর বলে নিজেকে মহারাণী ভাবে।সবার উপর কর্তৃত্ব ফলাতে চায় এই মেয়ে।আমি দুচোখে এই মেয়েকে দেখতে পারিনা।”

“গুঞ্জন বললো, আহারে!এতো রাগ কেন বোনের উপর?”

“আরিশা মুখ কালো করে বললো, অনু আপ্পি হয়তো একটু বেশিই ফর্সা আমার থেকে, কিন্তু এর জন্য ওর কত বড়াই জানো তুমি?মানে, কাউকে পাত্তাই দিতে চায়না।আর দাদাভাইয়ের উপর ফিদা,কারণে অকারণে সারাক্ষণ দাদাভাইয়ের পিছনে পিছনে ঘুরবে,আমি ওইবার যখন বললাম যে,আপ্পি তুমি এমন কেন?ওমা,,আমার সাথে কি রুড বিহেভটাই না করলো।বলে কিনা,ওর ব্যাপারে যাতে আমি নাক না গলাই,আমার সাথে ওর নাকি যায় না।হুহ,পড়ালেখায় সবসময় ডাব্বা মারতো আর আমি ফার্স্টক্লাস অলওয়েজ। বলো তো,কার না রাগ উঠবে?তাই আমি একে পাত্তাই দিই না।রিডিকিউলাস!”

“গুঞ্জন বললো, এ তো দেখি ডেঞ্জারাস মেয়ে!”

“এমন সময় মৃন্ময় পেছন থেকে বলে উঠলো, তোমার থেকে নিশ্চয়ই বেশী ডেঞ্জারাস নয়?”

“ঘাড় ঘুরিয়ে মৃন্ময়কে দেখতে পেয়ে তাড়াহুড়ো করে আরিশা আর গুঞ্জন ঠিক হয়ে দাঁড়ালো।আরিশা হাসার চেষ্টা করে বললো, দাদাভাই!তুমি এখানে… ”

“মৃন্ময় কড়া চোখে তাকালো ওর দিকে।তা দেখে আরিশার আত্মা উড়ে গেলো। বাকি কথাটুকু আর বলতে পারলো না,চুপ হয়ে গেলো।মৃন্ময় বললো, একজনের ঘরে এভাবে উঁকিঝুঁকি দেওয়াটা কি ম্যানার্সের মধ্যে পড়ে?এসব বেয়াদবি কোথায় শিখেছিস?”

“আরিশা কিছু বলার জন্য খুঁজে পেলো না।সে জানে,তার ভাইটা অতি সহজে রাগে না।কিন্তু একবার রাগলে পৃথিবী উল্টে গেলেও ওর কথার বা শাস্তির নড়চড় হবে না।সে তেতলাতে তোতলাতে বললো,আআ..স..আ আ..আসলে দাদা..দাদাভা…”

“গুঞ্জন ভ্রু কুঁচকে আরিশার দিকে তাকালো।মৃন্ময়কে দেখে এভাবে ভয় পাওয়াতে গুঞ্জন আরিশাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, তুমি কি উনাকে ভয় পাচ্ছো আরিশা?”

“আরিশা কিছু বললো না।এমনিই দাঁড়িয়ে রইলো নত মুখে।মৃন্ময় রাগী চেহারা নিয়ে তাকিয়ে রইলো আরিশা আর গুঞ্জনের দিকে।”

“গুঞ্জন বললো, ডোন্ট ওরি আরিশা।তুমি উনাকে মোটেও ভয় পাবে না।ভাই-বোনের সম্পর্কের মাঝে ভয়ডর রাখতে নেই।ভাইবোন হলো একে অপরের প্রাণ। এই সম্পর্কে শুধু একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা,ভালোবাসা,মমত্ববোধ থাকতে হয়।এর বাইরে তুমি যদি ভয় পেয়ে থাকো তাহলে তো হবে ন,সম্পর্ক হয়ে যাবে ফিকে।আর তোমার এই ক্রেজি ভাইকে ভয় পেয়ে তোতলানোর মতো কিছু হয়নি,বুঝলে?উনি কাজের কাজ কিছুই কর‍তে পারেন না,খালি একে ওকে ধমকে বেড়ান।যত্তসব!”

“মৃন্ময় প্রথমে কিছু না বললেও শেষের কথায় প্রচন্ড রেগে গেলো।বললো, তাই নাকি? তাহলে তুমি কি?ফাজিলের মতো অনুর ঘরে উঁকি দিয়ে কি দেখছিলে?এসব কে শিখিয়েছে তোমায়?”

“গুঞ্জন মুখ ঝামটা মেরে বললো,শুনুন এ বাসায় না অনেক মানুষও থাকে।শুধু আপনি বা আপনার অনু নয়।তাই এই বদ্ধ পাগল মেয়েটাকে বলুন যে,এটা কোনো রিয়েলিটি শো না যে,জোরে গান বাজিয়ে রাস্তার পাগলদের মতো খাটের উপর ধেই ধেই করে লাফাবে।আর আমরা পাগলের কান্ড দেখতে গেলেই হয়ে গেলাম ম্যানারলেস পাবলিক?বাহ!”

“মৃন্ময় রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু খট করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। কানে হেডফোন লাগানো।সেটা খুলে গুঞ্জনের দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, কি হচ্ছে কি এখানে? কারো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলা উচিৎ না, জানো না?”

“আরিশা বিড়বিড় করে বললো, আসছে ম্যানার্সওয়ালা পাবলিক।”

“গুঞ্জন হাসলো।আর ওদের সাথে মৃন্ময়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনু দৌড়ে গেলো ওর কাছে।মৃন্ময়ের গাল দুটো টেনে ওর হাত জড়িয়ে ধরে বললো, সুইটহার্ট তোমাকে এতো কিউট লাগছে কেন?দুনিয়ার সব কিউটনেসের ডিব্বা কি তুমি কিনে নিয়েছো সুইটহার্ট?”

“এদিকে পাগলের পাল্লায় পড়ে মৃন্ময় বুঝলো আজ আর ওর রক্ষা নেই।ও অনেক কষ্টে হাসি টানলো মুখে।গুঞ্জন ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওদের দুজনকে প্রাইভেসি দিয়ে আরিশাকে নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে!”

একটু অন্য ধরনের ভালো মন্তব্য আশা করি সবার কাছ থেকে। কিন্তু বরাবরই সেই আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে রিডার্সরা নেক্সট, নাইস বলেন।আর আমি দুঃখী দুঃখী চেহারা নিয়ে আপনাদের কমেন্ট পড়ার চেষ্টা করে কষ্ট পাই।ফিলিং বহুত খারাপ।সেইজন্য গল্পে একটু গান যোগ করি,রিভেঞ্জ হিসেবে!গানটা বারবার পড়ি আর ফিলিং আরাম আরাম!

চলবে……ইনশাআল্লাহ!