বৃষ্টি নামার পরে পর্ব-১১

0
3957

#বৃষ্টি নামার পরে❤
#লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১১

১৬.
“সন্ধ্যার পরে গুঞ্জন আরিশাকে নিয়ে ছাদে বসে ছিলো।তখনো আকাশ ছিলো ঘোলাটে, বাতাসে সাঁ সাঁ শব্দের নীরব আওয়াজ।কাজের মহিলা রুবি হাতে করে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে আসলো। বললো, আফা আপনেরার চা!”

“গুঞ্জন ভ্রু কুঁচকে তাকালো।বললো,চা!চা কে চেয়েছে?”

“রুবি বললো,সন্ধ্যার নাশতায় হক্কলের লাগি চা’য়ের ব্যবস্থা করা হইছে।”

-“কিন্তু আমরা তো বলিনি যে চা খাবো?”

-“আফনেরা কইন নাই,কিন্তু দাদী কইছে।
কি বলেছে?”

-“কইছে যে আফনেরে চা দিয়া আসতুম!”

“আরিশা এবার বিরক্ত হয়ে বললো, ওফ খালা একটু ভালো করে কথা বলো তো!”

-“আমি আবার কি করলাম আরু আফা?”

-“ওফ,আবার আমাকে আপু বলছো কেন?আমি কি তোমার বোন হই?”

-“না।”

-“তাহলে?”

-“তাইলে কি?”

-“আরে আজব!আমি নিজেই তোমাকে খালা ডাকছি,সেই হিসেবে তুমি আমার মায়ের বোনের মতো।আর তুমি কি না বারবার আমাকে আপু বলছো?নেক্সট টাইম আমাকে আর আপু বলবা না।”

“রুবি দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো, কিছু হইতো না আফা ডাকলে।আর ইলিশরাজীতে কি কইছো আমি বুঝবার পারছি না,খোলাসা কইরা কও।
গুঞ্জন আর আরিশা বোকার মতো একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। আরিশা কপাল চাপড়ে বললো, ওহহ গড!”

“গুঞ্জন ঠান্ডা গলায় বললো, খালা তুমি না এখন থেকে একটু শুদ্ধ ভাষায় কথা বলিও।

“রুবি মন খারাপ করে বললো,আমাগো মতোন গরীব মাইনসেরে কি আর শুদ্ধ ভাষায় কথা কওন মানায়?”

-“মানাবে না কেন?”

-“আমরা হইলাম গেরামের মুক্ক সুক্কু মানুষ, লেহাপড়া করি নাই,হের লাইজ্ঞা ভালো কইরা কথাও কইতে শিখি নাই।ছোডুবেলায় বাপ-মার আদরই পাই নাই আবার পড়ালেহা!”

“গুঞ্জনের একটু মন খারাপ হলো। ওর ইচ্ছে হচ্ছে রুবিকে জড়িয়ে ধরে বলতে যে,এভাবে বলো
না,আমার কষ্ট হয়।কিন্তু গুঞ্জন বলতে পারলো না।নাকটা টেনে বললো,তোমাকে আমি পড়াবো এখন থেকে, ঠিক আছে?”

“রুবি বেশ অবাক হলো।মুখটা বিস্ময়ে হা হয়ে গেলো।বললো,এই বয়সে পড়ালেহা?”

“গুঞ্জন হেসে বললো,লেখাপড়ার কোনো বয়স হয় না খালা।তুমি এখন থেকে আমার কাছে পড়বে।আর তুমি ওই সময় বললে না যে ইলিশরাজীতে কি বললো?”

“রুবি অবাক হয়ে বললো,হ।”

“আরিশা এ পর্যায়ে হেসে ফেললো। গুঞ্জন বললো, এটা ইলিশরাজী না খালা।এটা ইংরেজি!”?”

“রুবি টেনে টেনে বললো, ইংরাজী?”

“গুঞ্জন বললো, ইংরেজি/ইংরাজী হুম বলতে পারো!”

“রুবি দুবার উচ্চারণ করলো। তারপর এটা মুখস্থ করার জন্য বিড়বিড়িয়ে বারবার উচ্চারণ করতে করতে চায়ের কাপ রেখে নিচে চলে গেলো।”

“এদিকে আরিশা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।গুঞ্জন গম্ভীর গলায় বললো,খালার পড়াশোনার বিষয়টা আমি দেখবো।”

“আরিশাও সাথে সাথে মাথা দুলালো।বললো, ভালো সিদ্ধান্ত।আমি তোমাকে হেল্প করবো,,”

_________

১৭.
“ভোর ছয়টা।সোফা থেকে ঘুমের ঘোরে নিচে পড়ে গেলো গুঞ্জন।ছাদ থেকে ধুপধাপ শব্দ আসছে।গুঞ্জন রেগেমেগে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা মৃন্ময়ের দিকে তাকালো।চাদর গায়ে দিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।দেখতে লাগছে পুরো আদুরে বেড়ালের মতো।কিন্তু এই মুহূর্তে গুঞ্জনের অনেক রাগ হচ্ছে ওকে দেখে,ইচ্ছে হচ্ছে ওর গলায় ছুরি চালিয়ে দিতে।গুঞ্জনের আরামের ঘুমটা নষ্ট করে এভাবে বেড়ালের মতো শুয়ে শুয়ে ঘুমাবে সেটা তো গুঞ্জন হতে দিতে পারে না।এতদিন পাগলামিটা কম করেছিলো এখন মনে হচ্ছে এই অনু শয়তান্নির জন্য আবার শুরু করতে হবে।তাই রেগে গুঞ্জন মৃন্ময়কে এক ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুললো।”

“ঘুমঘুম চোখে মৃন্ময় বললো, সকাল সকাল ডিস্টার্ব করো না তো!”

“গুঞ্জন মৃন্ময়ের টি-শার্টের কলার টেনে ধরলো।রেগে বললো, উঠুন বলছি,উঠুন।আপনার সাথে আমার কথা আছে।”

“মৃন্ময় আর না পেরে উঠলো।গুঞ্জনকে ধমকে বললো,কি হয়েছে? কি এত কথা তোমার, বলো!”

“গুঞ্জন বললো, আমি একটা ডিসিশান নিয়েছি।”

“মৃন্ময় অবাক হয়ে বললো,কি ডিসিশন?”

-“শুনুন আর কিছুদিন পরে তো আমিও চলে যাবো!কিন্তু যাওয়ার আগে আমি একটা খুন করতে চাই!”

-“হোয়াটটটট…”

-“ইয়েস!”

-“সিরিয়াসলি গুঞ্জন? তোমার কি সত্যি সত্যিই মাথা খারাপ হয়েছে নাকি ঘুমের ঘোরে আছো?”

-“শুনুন আপনার এই ঘ্যানঘ্যান বন্ধ রাখুন প্লিজ।”

“মৃন্ময় নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, কাকে?আমাকে নিশ্চয়ই?”

“গুঞ্জন রেগে বললো, আপনার ওই জান্টুস বাঁদর বোন অনুকে!”

“মৃন্ময় হতভম্ব হয়ে বললো, অনু কি করেছে?”

“গুঞ্জন বিরক্ত গলায় বললো, এই অনু সকাল সকাল ছাদে উঠে বাঁদরের মতো লাফাচ্ছে।আমাকে কি একটুও শান্তিতে ঘুমাতে দেবে না?বাসায় আসার পর থেকে একটার পর একটা ন্যাকামি করেই যাচ্ছে।কি এত ঢং এই ফাজিলের!”

-“তাতে তোমার কি সমস্যা গুঞ্জন?”

-“বললাম তো,একে আমার সহ্য হয় না।তাই যাওয়ার আগে আমি একে খুন করে যাবো।বুঝলেন?সো একে খুনের দোষে পুলিশ আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে।আর আমি হোস্টেলে বসে বসে আপনার আর আপনার ওই ঢংগী বোনের অধপতন দেখবো।”

“মৃন্ময় চোখ বন্ধ করলো।মাথা ঠান্ডা করে কিছুক্ষণ পরে বললো,তোমার যা ইচ্ছা তুমি তা-ই করো।বিকজ আমার কিছু যায় আসে না।কারণ তুমি নিজেই একটা বাঁদর মেয়ে।ডেঞ্জারাস বাঁদরের ফিমেইল ভার্সন, বুঝলে?”

“গুঞ্জন রাগী সুরে বললো, তাই নাকি? আমি ডেঞ্জারাস হলে আপনি…আ..আপনি হলেন একটা চোর।”

“মৃন্ময়ের মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো।বললো,এই তুমি পাগলের মতো কাহিনী করা বন্ধ করো।আমি কবে কি চুরি করেছি,ড্যাম ইট।তোমার এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা শোনার কোনো প্রবল ইচ্ছা আমি বোধ করছি না!”

“গুঞ্জন বললো,কি যে চুরি করেছেন আপনি জানেন না?আপনার মন যে অনু চুরি করেছে আর আপনি যে অনু বেপ্পির মন চুরি করেছেন আমি কি তা জানি না?অথচ আমি আপনাকে আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার অফার দিয়েছিলাম। ছিঃ ছিঃ..”

“মৃন্ময় বিরক্ত হয়ে ধমকে উঠলো।বললো, স্টপ দিস ননসেন্স।তুমি যদি এই মুহূর্তে এখান থেকে না যাও তাহলে আমি কি করবো সেটা নিজেই জানিনা!”

“গুঞ্জন পা দুলাতে দুলাতে হেসে বললো,কি আর করবেন!কিছুই তো কর‍তে পারেন না।আমি চলে গেলে সব শিখে নিয়েন।ওকে?”

“মৃন্ময়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। এ মেয়ে যে আবার নিজের পুরাতন রুপে ফিরে এসেছে তা বেশ বুঝতে পারলো।রাগে ওর কপালের রগ দপদপ করছে,এতোটা রাগ ও কোনোদিন হয়নি। গুঞ্জনের হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলো , আর তাতে টাল সামলাতে না পেরে গুঞ্জন পড়লো একেবারে মৃন্ময়ের বুকের উপর।আর মৃন্ময় চাদরটা দিয়ে নিজেদের ঢেকে নিলো।গুঞ্জনকে চেপে ধরে পাগলের মতো ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো।হতভম্ব গুঞ্জন কিছু বোঝার আগেই যে এমন একটা বিদঘুটে পরিস্থিতিতে পড়বে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।”

“মৃন্ময় ওর থেকে একটু আলগা হয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘ আমি তো শুধু আমার নয়
আমি তো শুধু তোর।
দূরে ঠেললে রাত্রি হবো
কাছে ডাকলে ভোর।’

___অনিরুদ্ধ কিরণ

” বলেই আবারও ঠোঁট ছোঁয়ালো গুঞ্জনের ঠোঁটে। তখন ভোরের সূর্য পৃথিবীতে সোনা রঙা পবিত্র আলো ছড়াচ্ছিলো। মখমলের মতো নরম বাতাসে পবিত্রতা অনুভূত হচ্ছিলো খুব করে।সুবাসে ভরে উঠেছিলো এই পবিত্র ভোরের আলোরা,পবিত্র অনুভূতিরা!”

চলবে….ইনশাআল্লাহ!