বৃষ্টি নামার পরে পর্ব-১+২

0
6603

#বৃষ্টি_নামার_পরে
#ইশরাত_জাহান_ফারিয়া
#পর্ব-১

১.

“অনেক কাহিনী করে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর বাসরঘর নামক সাজসজ্জা হীন একটা ঘরে বসে আছে গুঞ্জন।দীর্ঘক্ষণ সোফায় বসে থাকার পর একসময় বিরক্ত
হয়ে উঠলো সে।সারা ঘরময় পায়চারি করতে করতে ভাবছে কি করা যায়?যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সেই অতিব সুন্দর মানবের কাছে তো আর নিজেকে ছোট করা যায় না।তাই গুঞ্জন মনে মনে ঠিক করে ফেললো যে,মৃন্ময় ঘরে আসলেই যা করার করে নিতে হবে ওর।”

“কিছুক্ষণ পর নিজের ঘরে এলো মৃন্ময়।দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে।মৃন্ময়ের এটা ভাবতেই রাগ হচ্ছে যে,ওর ঘরে ওর জন্য কেউ অপেক্ষা করছে।সেটাও নাকি আবার ওর বউ,এটা নাকি বাসরঘর। দরজা লাগিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।এদিকে গুঞ্জন সোফার উপর দু’পা তুলে বসে আছে।শাড়ি ছেড়ে সাধারণ সালোয়ার-কামিজ পড়ে নিশ্চিন্ত মনে বসে আছে।মৃন্ময়কে দেখেও না দেখার ভান করলো। মিনিট দশেক পরে রুমে প্রবেশ করা মাত্রই নিজের সব জামা কাপড় ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললো। এদিকে গুঞ্জন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।যেখানে ও ভেবেছিলো এ লোকটার অন্য ব্যবস্থা করবে সেখানে নিজেই ভড়কে গেলো।মৃন্ময় ননস্টপ কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো।গুঞ্জন রেগে গিয়ে বললো, এসব কি করছেন?”

“মৃন্ময় রক্তচক্ষু নিয়ে বললো,আমার যা ইচ্ছা তাই করবো।তুমি বলার কে?আম্মুর চামচা কোথাকার!তোমার সাহস হলো কি করে আমাকে বিয়ে করার?”

“গুঞ্জন এবার ভয় পেয়ে গেলো।”

“মৃন্ময় ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,খুব শখ না আমাকে বিয়ে করে আমার টাকা-পয়সা হাতানোর?তোমার মতো এমন আলাভোলা মেয়ে যে এমন কিছু করতে পারে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।”

“গুঞ্জন ভয়ে কান্না করে দিলো।ও নিজেই যেখানে বিয়েটা মানতে পারছে না সেখানে মৃন্ময় বলছে কিনা ও মৃন্ময়কে টাকার জন্য বিয়ে করেছে?এর কি উত্তর দেবে গুঞ্জন?যত যাই-ই হোক আত্মসম্মানবোধ প্রবল ওর।সেজন্যই তো বিয়ে করতে চাইছিলো না মৃন্ময়কে।কিন্তু মৃন্ময়ের দাদীমার কথা রাখার জন্য নিজের চাচাতো বোনের ছোট মেয়ে গুঞ্জনের সাথে ওর বিয়ে দিয়েছেন মৃন্ময়ের মা।গুঞ্জন কিছুতেই মৃন্ময়কে বিয়ে করতে রাজি ছিলো না।ওর পরিবারের সবাই একপ্রকার ওকে জোর করে,শেষপর্যন্ত থাপ্পড় মেরে কবুল বলিয়েছে।আর এখন মৃন্ময়ের এসব কার্যকলাপে অবাক হচ্ছে গুঞ্জন।”

“পরক্ষণেই ওর মাথা গরম হয়ে গেলো।ধাক্কা দিয়ে মৃন্ময়কে সরিয়ে দিয়ে বললো,ঢং কম করেন।এসব নাটক দেখালেই কি আপনি ভেবেছেন আমি গলে যাবো?আপনার মতো রূপবান পুরুষের প্রেমে হাবুডুবু খাবো?আপনার এসব ছাতার মাথা টাকার জন্য এই গুঞ্জন কখনো আপনাকে বিয়ে করেনি।এসব সস্তা ন্যাকামুগুলো আপনার প্রেমিকা রুহিকে দেখাবেন, আমাকে নয়।অহংকারী লোক একটা।অলওয়েজ আমার থেকে দূরে থাকুন।”

“মৃন্ময় ধাক্কা খেয়ে বেক্কল বনে গেলো।রাগে ফর্সা মুখটা থমথমে অবস্থা ধারণ করেছে। এই দুদিনের পুচকি বলে কিনা মৃন্ময় ন্যাকামি করছে?অহংকারী?আবার বলে কিনা টাকার জন্য বিয়ে করেনি?এইভাবে? এইভাবে গুঞ্জন মৃন্ময় চৌধুরীকে অপমান করলো?ভাবতে পারছে না সে।”

“রেগে গিয়ে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো গুঞ্জনের গালে।”

“গুঞ্জন যেন ব্যাপারটার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিলো। জানতোই যে মৃন্ময়ের রাগ অনেক। ওর কথা শুনে থাপ্পড় দেবেই।তাই মৃন্ময়ের দেওয়া থাপ্পড় হজম করে নিজেকে সামলে নিয়ে মৃন্ময়ের পায়ে একটা লাথি মেরে দিলো।”

“পুরো মেঝেতে মৃন্ময়ের অগোছালো জামাকাপড় গুলো ছড়িয়ে আছে।সেগুলোতে পা পিছলে মৃন্ময় একেবারে আলমিরার দরজার উপর পড়লো।তাতে মাথার একপাশ কেটে রক্ত পড়ছে একটু একটু।গুঞ্জন এগুলোকে আবার পুনরায় ভাঁজ করে শান্তশিষ্ট ভাবে আলমিরাতে রেখে দিলো। অতঃপর সোফায় পা তুলে বসে চুটকি বাজিয়ে মৃন্ময়কে বললো,ভুলেও আমার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করবেন না।আজ তো একটু কেটেছে, আবার চেষ্টা করলে পুরো মাথাই কেটে যাবে।সো..আমাকে অবলা ভেবে মারতে আসবেন না।”

“মৃন্ময় আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো। লম্বায় বেশ,ফর্সাও প্রচুর, পড়নের পাঞ্জাবিটা খুব সুন্দর। কিন্তু এ মুহূর্তে এসবকিছু গুঞ্জনের কাছে বিষের মতো লাগছে।কিছু বলতে যাবার আগেই মৃন্ময় ওকে সোফা থেকে টেনে তুলে বললো, তুমি আসলেই একটা চরিত্রহীনা মেয়ে।তোমার টাকাপয়সার প্রতি লোভ খুব বেশি,তাই না?বলো,কত টাকা পেলে তুমি আমায় ছেড়ে দেবে?”

“গুঞ্জন রেগে উঠলেও নিজেকে সামলালো।বললো, ওকে।আপনাকে ছাড়তে হবে তাই তো?”

“মৃন্ময় রেগে বললো,অফকোর্স।দ্যান আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।”

“গুঞ্জন বললো, আহ!থামুন মিয়া।এসব গার্লফ্রেন্ডের কাহিনী রাখুন।আমি তো আপনাকে এমনিই ছেড়ে দিতাম।ইভেন দেবোও।যে ছেলে এতটা খারাপ তার সাথে বিয়ে দিয়ে আমার ফ্যামিলি আমার জীবনটা নষ্ট করতে চাইছে!কিন্তু আমি তা হতে দেবো না।আমি নিজেই কাল চলে যাবো। বুঝলেন?আর আপনার মতো ছাগলকে যে কোন মাইয়া পছন্দ করলো কে জানে।সেও নিশ্চয়ই আপনার মতো বাঁদর টাইপ শাকচুন্নী মহিলা হবে। দেখতে কি বিচ্ছিরি আপনি, ছিহ।বলেই নাক সিঁটকালো গুঞ্জন।”

“মৃন্ময় রেগে বললো, কি বললে তুমি?”

-“যা সত্য তাই বললাম।”

”আর ঠিক এমন সময় দরজায় কে যেন নক করলো।মৃন্ময় রেগে বিরক্ত হয়ে বলল,খুলছি!ওয়েট।”

“ওপাশ থেকে এই মৃন্ময়ের দাদীমা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, খুলতে হবে না। নাতির বাসর ঘরে যা হয়েছে তা কাল তোমার বউয়ের কাছ থেকেই শুনবো।খুব তাড়াতাড়ি যাতে সুখবর পাই।আমি আসি।”

“গুঞ্জন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, খুব তাড়াতাড়ি সুখবর শুনতে চেয়েছে আপনার দাদীমা।যান আপনার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসুন।
বলেই হাসতে লাগলো।”

মৃন্ময় রাগে চোখমুখ লাল করে ফেললো। গুঞ্জনের দিকে একবার তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো, তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।

-মোটেও না।

-তাহলে আমাকে এসব উল্টো পাল্টা কথা বলছো কেন?

-আমি কই বললাম?আপনার দা…দীই তো…

-চুপ একদম। তাই জন্য তুমি হাসবে?

-অবশ্যই হাসবো।আজ বিয়ে হলো আর তাড়াতাড়ি বাচ্চাকাচ্চাদের কথা বললে কে না হাসবে?আর আপনার দাদীমা তো এসব জানেও না যে তার নাতি একটা নষ্ট, লুচ্চা মানুষ। যে বউ থাকতেও রীতিমতো গার্লফ্রেন্ড এর জন্য হাসফাস করছে।

“মৃন্ময় বোধহয় এবার সত্যিই রেগে গেলো।গুঞ্জনকে সোফার সাথে চেপে ধরে ঠাস করে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলো।আর এদিকে গুঞ্জন ফ্রিজড হয়ে বসে ভাবছে এই লুনুষটা এটা কি করলো।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে মৃন্ময়ের গলায় এক কামড় বসিয়ে দিলো।একটা চিৎকার করে মৃন্ময় গুঞ্জনের হাত চেপে ধরলো।তারপর যা করল সেটা গুঞ্জন ভাবতেও পারেনি।ওর চোখে পানি এসে গেলো!”

চলবে……ইনশাআল্লাহ

#বৃষ্টি_নামার_পরে❤
#লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২
২.
“মৃন্ময় গুঞ্জনের হাত মুচড়ে ধরেছে।এমনভাবে ধরেছে যে গুঞ্জনের হাতে লাল দাগ বসে গিয়েছে।গুঞ্জনের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো পানি।যতই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন নারী হোক না কেন,এতসব ঘটনা যে নিজের জীবনের সাথে ঘটছে সেই ভেবে গুঞ্জন ভেতর থেকে ভেঙে যাচ্ছে,কষ্ট পাচ্ছে।সারাজীবন পরিবারের মানুষদের অনাদর-অবহেলা সহ্য করে শুধু নিজের জন্য সে বেঁচেছিলো।কিন্তু সেটাও হয়তো কারো সহ্য হলো না,বিয়ে দিয়ে দিলো। পাঠার বলি হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না গুঞ্জন।জোর করে বিয়ে দিয়েছে নিজেদের পছন্দের ছেলের সাথে,যে ছেলে গুঞ্জনকে সহ্যই করতে পারেনা।কোনো মানে হয় এসবের?এসব সম্পর্ক,পিছুটানের জাঁতাকলে নিজের জীবন পিষ্ট করার কি খুব দরকার আছে?না,গুঞ্জন কখনোই জীবনের প্রতি এমন অবিচার করবে না।কেউ যখন গুঞ্জনকে নিয়ে ভাবে না,তাহলে গুঞ্জন কেন এখানে পড়ে থাকবে?কি দায় পড়েছে ওর?সে বেরিয়ে যাবে এ সম্পর্ক থেকে, মানুষগুলো থেকে!এটাই হয়তো ওর ভবিতব্য!”

“মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর কি করে হতে পারে?গুঞ্জনও যে একটা মানুষ,ওরও যে কষ্ট হয় এটা হয়তো মৃন্ময় ভুলেই গিয়েছে।নইলে এতক্ষণে গুঞ্জনের হাত ছেড়ে দিতো।কিন্তু মৃন্ময় ছাড়েনি,নিজের রাগ আর জেদের বশে শুধু শুধুই এরকম করছে।গুঞ্জন কিছু বলার ভাষায় খুজেঁ পাচ্ছে না।সামনে থাকা
মানবটাকে বদ্ধউন্মাদ বলে মনে হচ্ছে।শেষ পর্যন্ত না পেরে হালকা করে একটা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো মৃন্ময়কে।”

“ধাক্কা দেওয়াতে গুঞ্জনের হাত থেকে ওর হাত একটু আলগা হয়ে গেলো। সেইসুযোগে গুঞ্জন ওর হাতটা সরিয়ে নিলো।গুঞ্জন সোজা গিয়ে বিছানায় কম্বলমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।একটা কথাও বললো না।”

“এদিকে মৃন্ময় রাগে ফুঁসছে।কি বেহায়া মেয়েরে বাবা।কত সাহস আবার ওর বিছানা দখল করেছে,আর গুঞ্জনকে যখন বউ হিসেবে মানেই না তখন প্রশ্নই উঠে না একবিছানায় ওর সাথে থাকার।মৃন্ময়ের আবার এক সমস্যা,নিজের বিছানা ছাড়া ওর ঘুমই হয় না।তাই সে চেঁচিয়ে বললো,এই বেয়াদব মেয়ে।আমার বিছানায় শুয়েছো কেন?এক্ষুণি উঠো বলছি।”

“গুঞ্জন চুপ করে রইলো।কম্বলটা টেনে আরও আয়েশ করে শুয়ে পড়লো।
মৃন্ময়ের ইচ্ছে করছে গুঞ্জনকে ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে ফেলে আচ্ছামতো থাপ্পড় দিতে।পাঞ্জাবির হাতাটা ফোল্ড করে কম্বলটা টানতে টানতে বললো,
এই মেয়ে,কথা কানে যায় না??এতো বেহায়া কেনো তুমি?লাস্ট বারের মতো ওয়ার্ন করছি
এক্ষুনি নামো আমার বিছানা থেকে।বিয়ে করেছ বলে কি মাথা কিনে নিয়েছ আমার?সবকিছুতে ভাগ বসাতে এসেছ?ড্যাম ইট!”

“গুঞ্জন বেশ বিরক্ত হলো।সোজা হয়ে বসে রাগী গলায় বললো,ঐ মিয়া!আপনার সমস্যাটা কি হুম?এতো আজাইরা প্রলাপ বকছেন কেন?নিজেকে কোন দেশের প্রেসিডেন্ট মনে করেন হা?যত্তসব!আপনার এসব ছাতার মাথা সো কল্ড জিনিসপত্রে কোনো ছাগল ছাড়া আর কেউ ভাগ বসাতে আসবে না,বুঝলেন?এখন সামনে থেকে সরেন আর আমাকে ঘুমুতে দেন।বলেই আবারও শুয়ে পড়লো!”

“গুঞ্জনের বলা কথায় রীতিমতো রাগের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গিয়েছে মৃন্ময়।নিজের সম্পর্কে গুঞ্জনের এসব অপমানজনক কথায় একটান মেরে গুঞ্জনের উপর থেকে কম্বলটা সরিয়ে গুঞ্জনকে খাট থেকে ফেলে দিলো মৃন্ময়।বললো, তোমাদের মতো সো কল্ড মিডেলক্লাস মেয়েদের এসব বলেও কোনো লাভ নেই,তাই না?সো,এখন খাটের তলায় ঘুমাও আর ভুলেও আমার বিছানার ধারেপাশেও আসবে না।গট ইট!”

“এবার আর গুঞ্জন চুপ থাকতে পারলো না।এভাবে মৃন্ময় ওকে অপমান করলো?অনেক হয়েছে আর নয়।নিজের রাগ,ক্ষোভ,অভিমানকে জড়ো করে উঠে দাঁড়ালো সে।অতঃপর বেড-সাইড টেবিলে রাখা ল্যাম্পটা ঠাস করে ফ্লোরে ফেলে দিলো, ঝনঝন শব্দ করে ওটা ফেটে চৌচির হয়ে গেলো। এখানেই ক্ষান্ত হলো না গুঞ্জন। একেএকে কাচের গ্লাস,মৃন্ময়ের ছবিওয়ালা ফটোফ্রেম ভেঙ্গে ফেললো। তারপর আলমিরা থেকে মৃন্ময়ের সব কাপড় বের করে মাটিতে ফেলে দিলো। শার্টগুলো টেনে টেনে ছিঁড়ে দিলো।লম্বা একটা দম নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো।তারপর কম্বলটা নিয়ে সোজা সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।মৃন্ময়ের উদ্দেশ্যে বললো,ভুলেও আমাকে অবলা ভাববেন না।আমি এমন না যে,নামমাত্র স্বামী নামক আহাম্মক লোকের অত্যাচার চুপচাপ সহ্য করবো।নেক্সট টাইম আমার সাথে লাগতে আসলে এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু করে ফেলতে পারি।দ্যান আমি এখন ঘুমাবো,আমাকে যাতে আর কেউ ডিস্টার্ব না করে।”

-“গুঞ্জ….জ…ন.ন..ন!”

-“চিল্লাবেন না।নয়তো পুরো বাড়ি এখন মাথায় তুলবো।”

“মৃন্ময় চুপ করে গেলো।এ মেয়েকে বিশ্বাস নেই। রাগে ওর গা কাঁপছে।ঘেমে একাকার।তবুও গুঞ্জনকে আর ঘাটালো না।চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো।সেই সময়ই ওর ফোন বাজতে লাগলো।তাতে যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো হলো।গুঞ্জনের রাগটা মৃন্ময় ফোনের উপর ঝাড়লো।ঠাস করে মোবাইলে ফ্লোরে ফেলে দিলো।”

“এদিকে কম্বলের ফাঁক দিয়ে গুঞ্জন মৃন্ময়কে দেখছে আর মনে মনে হাসছে।ক্যায়সা লাগা ম্যারা মাজাক,মিস্টার মৃন্ময় চৌধুরী?যাক, ব্যাটার মুখের উপর উচিৎ জবাবাটা দিতে পেরে গুঞ্জনের এখন প্রচন্ড শান্তি লাগছে।আজ রাতে মনের সুখেও ঘুমুতে পারবে।এতোদিন জানতো বাসরঘরে বিড়াল মারা হয়,কিন্তু বাসরঘরে যে টর্নেডো হয় সেটা আজ জানলো।পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা থাকা উচিৎ এই রাতের কথা,আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ুক মহিয়সী, সাহসী নারী গুঞ্জনের সাহসীকতার কথা,গ্রেট গুঞ্জন!গ্রেট!”

“আর মৃন্ময় ভাবছে কিভাবে এই মেয়েকে শায়েস্তা করা যায়।ওর মতো ড্যাশিং একটা ছেলেকে এই গুঞ্জন মুখের উপর বিচ্ছিরি বলে দিলো?ওর প্রিয় জিনিসপত্র,শার্টগুলোকে এভাবে ছিঁড়ে দিলো? এর শোধ তো নেবেই ও।যেখানে ওকে দেখলে ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেনা,সেখানে ও একটা পুঁচকে মেয়ের কাছ থেকে এতো ইনসাল্ট মেনে নিতে কখনোই পারবে না।”

________

“সকালবেলা দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দে আরামের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো গুঞ্জনের।মাথাটা কেমন ধরে আছে,চোখ খোলে বোঝার চেষ্টা করলো ও কোথায়। সবকিছু মনে পড়তেই লাফিয়ে উঠলো।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে মৃন্ময় নেই,ওয়াশরুমে পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে।তার মানে ব্যাটা ওখানে।রুম ঝকঝকে,পরিষ্কার। কোথাও ভাঙ্গাভাঙ্গির চিহ্ন নেই।নিশ্চয়ই মৃন্ময় করেছে।এভাবেই পড়ে থাক আমার পায়ের তলায় মনে মনে বললো গুঞ্জন। যাক,ভালো। এখন কারো সামনে আর লজ্জ্বায় পড়তে হবে না।ভেবে দরজা খুলার জন্য এগিয়ে গেলো গুঞ্জন।”

“দরজা খুলে গুঞ্জন দেখলো,মৃন্ময়ের মা দাঁড়িয়ে আছে।অদ্ভুত কারণে এই মহিলাকে খুব ভালোবাসে গুঞ্জন।কেউ গুঞ্জনকে খুব একটা পছন্দ না করলেও মৃন্ময়ের পরিবারের মানুষজন গুঞ্জনকে খুব ভালোবাসে।আনিসা চৌধুরী মিষ্টি হেসে বললেন,কি?ঘুম ভাঙলো?”

“গুঞ্জন হাই তুলতে তুলতে বললো,এতো সকালবেলা ঘুমটা না ভাঙালেও পারতে!”

“আনিসা চৌধুরী বললেন,নতুন বউদের একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠতে হয়!”

“গুঞ্জন চোখমুখ কুঁচকে বললো,সেটা কি সংবিধানে লেখা আছে?”

-“লেখা নেই,তবে নিয়ম।”

-“সেই নিয়মও কি কোথাও লেখা আছে?”

-“ওফফ,,ছাড়োতো।তুমি আমার ছেলের বৌ বলে কথা।মৃন্ময়ের দাদীমা ডাকছে তোমায়।বেচারি নাতবউয়ের মুখে বাসররাতের গল্প শুনতে চায়!”

“গুঞ্জন খুশি খুশি গলায় বললো,রিয়েলি খালামণি?গ্রেট!যাক,শান্তি মতো তো বলতে পারবো একজনের কাছে,নইলে তো আমার শান্তিই হবে না!কিভাবে কাবু করলাম তোমার ছেলেকে।”

“মৃন্ময়ের মা চোখ কপালে তুলে অবাক হয়ে বললেন, কি বলছো এসব গুঞ্জন?এসব লজ্জ্বাজনক কথা কেউ বলে না,বলতে নেই।”

“গুঞ্জন অবাক হয়ে বললো,এখানে লজ্জ্বার কি আছে?দুটো ছেলে-মেয়েকে সবাই মিলে বিয়ে দিয়েছে, এখন তারা প্রথম রাতে ঘরে একসাথে কি কি করেছে সেগুলো জানার অধিকার তাদের অবশ্যই আছে।এখানে লজ্জ্বার তো কিছু নেই।”

“আনিসা চৌধুরী মুখে হাত দিয়ে বললেন,এসব কাউকে বলতে নেই মামণি।”

“গুঞ্জন বললো,আরে তুমি বুঝতে পারছো না,টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মানুষ যেভাবে উপভোগ করে, বাসররাতের কাহিনীও তারা এভাবেই উপভোগ করবে।”

“আনিসা চৌধুরী লজ্জ্বায় পড়ে গেলেন।তিনি গুঞ্জনকে থামানোর জন্য বললেন,যাইহোক!গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নাও,আমি নাস্তা রেডি করছি।”

“গুঞ্জন চোখ পিটপিট করে বললো,এতো সকালে কে গোসল দেবে!আমিতো ঠিক করেছি দুপুরে গোসল করবো!এই ঠান্ডায় আমি নেই বুঝলে?বলেই রুমে চলে আসলো।”

“আনিসা চৌধুরী চোখ গোল গোল করে ভাবছে, মেয়েটা এখনো ছোটই রয়ে গিয়েছে।বয়স হয়েছে ঠিকই,কিন্তু একেবারে সরলমনা।তিনি মুচকি হেসে চলে গেলেন।”

“এদিকে গুঞ্জন রুমে ঢুকে দাঁতব্রাশ করার জন্য ওয়েট করছে।কিন্তু মৃন্ময় সেই কখন ঢুকেছে, এখনো বেরুবার নাম নেই।অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কানোর পরেও মৃন্ময় দরজা খুলছে না।ভেতর থেকে বলছে,আমার আরও দেরি হবে।ওয়েট করো।”

“এভাবে অনেকক্ষণ ওয়েট করার পরেও যখন মৃন্ময় বের হলো না তখন গুঞ্জন বুঝলো যে,ইচ্ছে করেই ও এরকম করছে।তখন গুঞ্জন রেগে একটা লাথি দিলো ওয়াশরুমের দরজায়,ফলে দরজা খুলে গেলো।তারপর গুঞ্জন যা দেখলো,তাতে ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।”

চলবে…..ইনশাআল্লাহ