বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব-১১+১২+১৩

0
421

#বেপরোয়া ভালবাসা
#পর্বঃ১১
#লেখনীঃ মনা হোসাইন

বিকালের দিকে আদি বাসায় ফিরল। যেহেতু আদি সারাদিন বাসায় ছিল না তাই আদিবার দিন টা ভালই কেটেছে। আদিবা সারাদিনে আদির ঘর গোছানো থেকে শুরু করে কাপড় গোছানো সবকাজ করে রেখেছে। প্রয়োজনীয় সব জিনিস লাগেজ থেকে বের করে হাতের কাছে সাজিয়ে রেখেছে যেন বাসায় ফিরে আদিবাকে ডাকাডাকি না করে…কিন্তু কে শোনে কার কথা আদি বাসায় ঢুকে ঘরে যাওয়ার আগেই আদিবাকে ডাকতে শুরু করল।

-” আদিবা এই আদিবা

আদিবা শোনল ঠিকি কিন্তু উত্তর দিল না। আদি আবারো গলা ছাড়ল।

-“আদিবার বাচ্চা কোথায় তুই ডাকছি কথা কানে যায় না..?

আদিবা রান্না ঘরে ছিল আদির ডাকে বেশ বিরক্তি নিয়ে আদির কাছে এগিয়ে গেল,
-“কি হয়েছে কী? গরুর মত চেঁচাচ্ছেন কেন..?

-“কি বললি তুই..?

-“বাসায় আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেল.. (ফিসফিস করে)

-“সাহস বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে

-“ভদ্রভাবে কথা বলুন। বাসায় অনেক লোকজন সবাই কিভাবে তাকাচ্ছে দেখেছেন?

-“তুই এত পটর পটর করার সাহস পাচ্ছিস কোথা থেকে সেটাই বুঝতে পারছি না ?দাঁড়া আজ তোর হচ্ছে…

বলেই আদি আদিবার হাত ধরে টানতে শুরু করল।

-“কি হচ্ছে কী এসব? মান সম্মানের পুরো বারোটা বাজিয়ে ছাড়বেন দেখছি। হাত ছাড়ুন বলছি…

আদিবা চেঁচিয়ে বললেও আদির কান পর্যন্ত আদিবার কথা পৌঁছাল না।সে আদিবাকে টানতে টানতে নিজের ঘরে চলে গেল এদিকে ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সবার মাঝে জুই অরিন সাদিয়াও আছে। ওদের দেখে জুই বলে উঠল,

-“বড়চাচা শুধু শুধু এতকিছুর আয়োজন করল এতগুলো মেয়েকে দাওয়াত করে নিয়ে আসল এতে কী কোন কাজ হবে? বাজি ধরে বলতে পারি বিয়ে ত দূর ভাইয়া আদিবাপু ছাড়া কারো দিকে ফিরেও তাকাবেও না। অরিন আপু তোমার কী মনে হয়?

-“ঠিকি বলেছিস আমিও মাকে বারবার নিষেধ করেছি এভাবে মেয়েদের পরিবার সহ ডেকে এনো না । আগে ভাইয়ার সাথে কথা বলো। ভাইয়া কাউকে পছন্দ করবে না উল্টে রেগে যাবে কিন্তু কে শুনে কার কথা। মায়ের ধারনা এখান থেকে কাউকে না কাউকে ভাইয়ার ভাল লাগবেই

-“কিন্তু আমার মনে হয় ভাইয়া আদিবাপু কে ভালবাসে দেখো না একমিনিট ও আপুকে ছাড়া থাকতে পারে না।

-“ভাইয়া সবদিকে বদলে গেলেও এই একটা বিষয়ে একটুও বদলায় নি। ছোটবেলায় যেমন আদিবার জন্য বেপরোয়া ছিল এখনো তেমনি আছে।




এদিকে রুমে এসে আদি,আদিবাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিল। আদিবার ধর্য্যের সীমা পেরোল। রাগী কন্ঠে বলে উঠল,
-“আপনার সমস্যাটা কী একটু বলবেন..?

-“সমস্যা আমার নয় তোর। তাও একটা না অনেক… কয়টা শোনবি..?

-“আমার কী সমস্যা হ্যা…? এসেছেন থেকে জ্বালাচ্ছেন।আপনার এমন আচারন আর নিতে পারছি না। ভুলে যাবেন না আমি আর ছোট নেই

-“ওহ তাই নাকি…?

-“হ্যা তাই… নিজেকে সংযত করুন কারনে অকারনে এভাবে ডাকবেন না। আমরা আর ছোট নেই যে ছেলেমানুষী করব।আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি আমার থেকে দুরত্ব বজায় রাখুন.

-“তুই আমাকে সাবধান করছিস..?নিজের অবস্থান টা হয়ত ভুলে গেছিস তাই না? সমস্যা নেই আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি তুই বিনা খরচে আমাদের বাসায় থাকিস সহজ ভাষায় যেটাকে বলে আশ্রিতা। আর একজন আশ্রিতার দায়িত্ব তার মালিক কে খুশি রাখা।

আদির কথাটা হয়ত আদিবার খারাপ লেগেছে তাই গলা নিচু করে বলল,
-” কি কি করতে হবে বলুন করে দিচ্ছি। যা যা করতে হবে সব একবারে বলুন আমি সব একসাথে করে দিব তবুও একটু পর পর ডাকবেন না।

-“এখন তোর কথায় আমাকে চলতে হবে…??

-“আপনি এত ত্যাড়া কেন? একটা মানুষ এত ত্যাড়া কী করে হতে পারে ভেবে পাচ্ছি না।

-“মুখ সামলে কথা বল…বলে হাতে থাকা প্যাকেট টা ছুঁড়ে দিল আদিবার দিকে..

-‘কী এটা…?

-“শাড়ি,আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি তুই চেঞ্জ করে শাড়িটা পরে নে।

-“আমি হটাৎ শাড়ি পরতে যাব কেন?

-“গতকাল কেন পরেছিলি..?

-“আমার ইচ্ছে হয়েছিল তাই পরেছিলাম আজ পরব কেন…?

-“তোর স্মৃতি শক্তি খুবি খারাপ আদিবা। তুই হয়ত ভুলে গেছিস কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস।আমার কথার অবাধ্য হলে কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় সেটাও হয়ত ভুলে গেছিস। তাই ছোট বেলার ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়াটা জরুরী হয়ে পড়েছে।

বলে এগিয়ে আসল আদি। আদিবার খুব কাছে এসে বসল তারপর হুট করে গলা থেকে ওড়না টা নিয়ে নিল।

আদিবা তাড়াতাড়ি সরে বসল,
-ক ক কী করতে চাইছেন…? স স সাবধান কাছে আসবেন না।

-“কেন, কাছে আসলে কী করবি..?

-“ভুলে যাবেন না আজ বাসায় অনেক লোকজন। খারাপ কিছু করতে চাইলে আ আ আমি চেঁচাতে বাধ্য হব..

আদিবার কথায় আদি ভয় পাওয়া তো দূরে থাক এমন একটা ভাব নিল যেন আদিবার কথা সে শুনতেই পায় নি। হাত বাড়িয়ে হ্যাচকা টানে আদিবাকে আবারো নিজের কাছে নিয়ে আসল…

আদিবা অসহায় কন্ঠে বলল
-“ভ ভ ভাইয়া….!!!

-“এত আস্তে কেন? চেঁচা…যতখুশি চেঁচা। সম্মান গেলে বাবার যাবে আমার তাতে কী? সবাই বলবে আহমেদ সাহেবের ছেলেটা অ*মা*নু*ষ হয়েছে।

কথা বলতে বলতে আদি ওড়না দিয়ে আদিবার হাত দুটি শক্ত করে বেঁধে নিল।

ভয়ে আদিবার চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল…আদি যেই জামায় হাত দিতে যাবে আদিবা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে উঠল
-“আ আ আমি শাড়ি পরব…

-“শাড়ি ত তোকে পরতেই হবে। তুই চাইলেও পরাব না চাইলেও পরাব। এই শাস্তি শাড়ির জন্য না আমার সাথে তর্ক করার জন্য। আচ্ছা ভয় পাচ্ছিস যখন তাহলে শাস্তির ধরন টা বদলে দেই বলে আদিত্য আদিবাকে কোলে তুলে নিল…

আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আদির দিকে।
আদি তাকে কোলে নিয়ে বাথরুমে গেল তারপর নিচে বসিয়ে দিল। হাতের বাঁধনটা খুলে ওড়না টা মুখে বেঁ*ধে দিয়ে বলল।

-“ভাবিস না তুই চেঁচাবি জন্যে মুখ বেঁ*ধে*ছি. এখন আমাকে অনুরোধ করবি তাই বেঁধে নিলাম। যত যাইহোক তোর অনুরোধ আবার ফেলতে পারি না। যাইহোক দরজায় থাক্কা থাক্কি কিংবা খোলার চেষ্টা করবি তো তার ফলাফল এর চেয়েও ভয়ানক হবে…
বলে উঠে দাঁড়াল আদি।

আদিবার বুঝতে বাকি রইল না আদিত্য কী করতে চলেছে। ছোটবেলায় কিছু হলে আদি এভাবেই তালে বাথরুমে আটকে রাখত । যতক্ষন না তার রাগ কমত অন্ধকারে বসে থাকতে হত আদিবাকে। আদিবা ছোটবেলা থেকেই অন্ধকার ভয় পায় সেই ভয় আজও কাটিয়ে উঠতে পারে নি তাই আদি উঠে দাঁড়াতেই আদিবা তাড়াতাড়ি আদির হাত আঁখরে ধরল।

আদি আখড়ে থাকা হাতের দিকে একবার দেখল তারপর আদিবার চোখের দিকে তাকাল চোখ দুটি ছল ছল করছে…

-“ভয় পেয়েছিস…??

আদিবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

-“একটু আগেই না বলছিলি বড় হয়ে গেছিস…

আদিবা চোখ নামিয়ে আদির হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের কান ধরার চেষ্টা করে বুঝাতে চাইল সে ক্ষমা চাইছে কিন্তু হাত কান পর্যন্ত যাওয়ার আগেই আদি একটানে আদিবাকে বুকে জড়িয়ে নিল।

-“এখনো অন্ধকারকে এত ভয় পাস..?

আদিবা জবাব দিল না শুধু মাথা তুলে তাকাল আদি কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল,

-“চোখ মুখে পানি দে। এত ভয় পাওয়ার মত কিছু ঘটে নি আমি আছি তো…

আদি বাইরে চলে গেল আদিবা বুঝার চেষ্টা করতে লাগল আদিত্য কেন এমন করছ? সে কী বুঝতে পারছে না আদিবা আর ছোট নেই। চাইলে একটা যুবতী মেয়েকে বুকে টেনে নেওয়া যায় না। যায় না কপালে চুমু আঁকা। যাইহোক এখন দেরি করলে আদি তাকে বাথরুমে আটকে রাখবে বুঝতে পারল তাই বাধ্য হয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে শাড়িটা হাতে নিল।

লাল টকটকে শাড়ির সোনালী আচল। দেখে বেশ অবাক হল আদিবা। আদির দিকে তাকাতেই আদি বলল,

-“কোন সমস্যা..?

-“না মানে এই শাড়িটা আমার জন্য…?

-“তো অন্যজনের হলে তোকে দিতাম নাকি..?

-“নতুন বউয়ের শাড়ির মত লাগছে…আমি কখনো এত লাল শাড়ি পড়িনি।

-“আমার রুচি খা*রাপ তাই বলতে চাইছিস..

-“আ আ আমি এমন বলনি

বলেই আদিবা তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরতে শুরু করল যদিও সে মাঝে মাঝে শাড়ি পরে কিন্তু একা একা শাড়ি পরা অনেকটাই ঝামেলার কুচি ঠিক করতে সমস্যা হচ্ছে।

আদিবার অসুবিধে হচ্ছে দেখে আদি এগিয়ে আসল। কোন কথা না বলে সোজা আদিবার পায়ের কাছে বসে কুচি ঠিক করতে শুরু করে দিল। আদিবা অবাক হল,

-“কী করছেন আপনি আমার গুরুজন উঠুন প্লিজ পায়ে হাত দিবেন না ….

-“আমি চাইনা সবার সামনে শাড়ি খুলে যাক তাই হেল্প করছি এর বেশি কিছু না।তাই পাকামি করিস না। বলে আদি শাড়ির কুচিতে মনযোগ দিল।
আদিত্য শাড়ি ঠিক করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। আদিবা নিচু গলায় বলল,

-” আমি এখন যাই…

-“হুম যা।

আদিবা এক ছুটে বেরিয়ে গেল। কিন্তু নিচে যেতেই
আদিত্যের মা তাকে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন।

-“তোকে আমি কী বলেছিলাম আদিবা…?

-“আ আ আমি ভাইয়াকে নিষেধ করেছিলাম কাকিমনি। তুমি যা যা বলতে বলেছিলে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাইয়া শোনার আগেও রেগে গেল শুধু বলেছিলাম আমার থেকে দূরে থাকতে তাতেই রেগে আমাকে…

-“তোকে কী..? কি করেছে হ্যা,মে*রে ফেলেছে? কই আমি তো দেখতে পারছি না কিছু করেছে, দিব্বি তো আছিস। শোন আদিবা একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি তুই আদিকে যতই নিজের কাছে টানার চেষ্টা কর না কেন আমরা তোকে কিছুতেই মেনে নিব না।এতবছর ধরে তোকে খায়িয়ে পরিয়ে মানুষ করেছি তার প্রতিদান এভাবে দিস না৷ আমাদের একমাত্র ছেলেকে তুই কেড়ে নিস না। আজ পার্টিতে আদির বউ বাচাই করব তুই আজ অন্তত ওর সাথে লেপ্টে থাকিস না।

বলে আদিবাকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে রুবিনা বেগম বেরিয়ে গেলেন। আদিবার নিজের কাছেই নিজেকে অসহায় মনে হল। কী করবে এখন সে ভাইয়ার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইলে ভাইয়া তাকে শা*স্তি দেয় আর ভাইয়ার কথা শুনলে তার পরিবার….

আদিবা মন খারাপ করে বেরিয়ে আসল তারপর নিজমনে কাজে লেগে পড়ল। সবার সব কাজ হাতে হাতে করে দিচ্ছে…



দেখতে দেখতে পার্টির সময় হয়ে গেল
আদি একবারে রেডি হয়ে নিচে আসল। বাগানের দিকে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে তবে ঘরেও অনেক আত্মীয় আছে। আদির মা এগিয়ে এসে আদির হাত ধরলেন।
-“মাসাল্লাহ,আমার ছেলে কত বড় হয়ে গেছে.. কালো সুটে তোকে খুব সুন্দর লাগছে বাবু…

-“মা কি যে বল না…

-“হয়েছে লজ্জা পেতে হবে চল তোকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই…

-“উম মা বলছিলাম কী…

-“কি..?

-“নাহ কিছু না বলে আদি চারদিকে চোখ বুলাল তার চোখ আসলে আদিবাকে খুঁজছে।

-“আদি ওর নাম নীলা,তোর শিউলি ফুফির মেয়ে।
মায়ের কথায় ধ্যান ভাংগল আদির

-“ওহ আচ্ছা, ভাল আছেন আপু..?

আদির অদ্ভুত সম্মোধনে অবাক হলেন রুবিনা বেগম।
-“ও তোর চেয়ে অনেক ছোট আদি…

-“তাতে কী মা..?? ছোট বড় সবাইকে সম্মান করা উচিত। এক্সিউজ মি আমি একটু আসছি …

বলে আদি এগিয়ে গিয়ে অরিনের পাশে বসল,
-“অরিন আদিবা….

আদির কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিনের পাশে বসা এক মহিলা বলে উঠলেন,

-“অরিন ওই লম্বা চুলের মেয়ে টা কেরে..?

-“কোনটা খালা..? চারদিকে তো অনেক মেয়ে

-“আরে ওই যে লাল শাড়ি পরা মেয়েটা। কি লক্ষি আর শান্ত কখন থেকে একা হাতে সব সামলাচ্ছে…

মহিলার ইশারা করা দিকে অরিনের সাথে আদিও তাকাল মহিলা আদিবার কথা জিজ্ঞাসা করছে দেখে আদির কিছুটা খটকা লাগল কিন্তু কিছু বলল না। অরিন উত্তর দিল,

-“ওহ ওটা তো আদিবা মেজো চাচার মেয়ে..

-“তাই বল…দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভদ্র ঘরের মেয়ে। আসলে তোর তিয়ান ভাইয়ার জন্য মেয়ে খুঁজছি কিনা..

কথাটা শুনামাত্র আদি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল।
কোন কিছু না ভেবে সোজা বলে উঠল,

-“ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে খালা শুধু শুধু নজর দিও না।

আদি রাগে ফুসতে ফুসতে সোজা গিয়ে আদিবার সামনে দাঁড়াল…আদির চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠছে
আদিবা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন করল,

-“কিছু কী হয়েছে ভাইয়া..??

-“তুই চুল খোলে রেখেছিস কেন..?

-“ম ম মানে..?

-“এখনী চুল বেঁধে আয়…

-“আ আ আসলে ভাইয়া…

-“আসলে কী…

আদিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের গলার দাগ দেখিয়ে বলল,
-“চুল বাঁধলে দাগগুলো দেখা যাবে…

-“তুই এখনী আমার রুমে যাবি যতক্ষন না আমি ফিরছি রুমের বাইরে একপাও ফেলবি না…

-‘কিন্তু কেন..?

-“কইফত চাচ্ছিস..?

আদিবা মাথা নিচু করে নিল…
-“উফফ কোন বুদ্ধিতে যে আমি বাসায় পার্টির আয়োজন করলাম…? মহিলা গুলোই ছাড় দিচ্ছে না আমার বন্ধু বান্ধব গুলো তো ওকে দেখলে পাগল হয়ে যাবে (ফিসফিস করে)

-“ভাইয়া কিছু বলছেন..?

-“তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস? উপড়ে যা বলছি…
আমি বাইরে যাচ্ছি কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবি জরুরী কাজ আছে তাই গিয়েছি।

আদিবা মাথা নাড়ল…

-“সাবধান এসে যেন না দেখি তুই ঘোরাঘুরি করছিস। যদি রুমের বাইরে বের হোস সারারাত বাথরুমে আটকে রাখব…



চলবে…!

#বেপরোয়া_ভালোবাসা
লেখাঃ Mona Hossain
পর্ব ১২+১৩

দেখতে দেখতে পুরো বাড়ি মেহমানে ভরে গেল। পার্টি বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে কিন্তু যাকে ঘিরে এত আয়োজন তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। পার্টির কোথাও আদি নেই।
আদি বাইরে যাওয়ার সময় আদিবাকে বলেছিল যেন রুমের বাইরে না যায় কিন্তু আদিবা সেই হুকুম শোনে নি সে পুরোদমে নিজের কাজ করে যাচ্ছে…

বেশ কিছুক্ষন পরে আদি ফিরল। এসে আদিবাকে বাইরে ঘুরাঘুরি করতে দেখে ক্ষেপে গেল কিন্তু তেমন রিয়েক্ট করল না আদিবার কাছে গিয়ে আদিবার দিকে একটা দুধের বাচ্চা এগিয়ে দিল । আদিবা অবাক হলেও হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিল।

-“বাচ্চাটা কে ভাইয়া…?

-“আমার বন্ধুর ছেলে। সাবধান একবারো কোল থেকে নামাবি না…

আদিবা কথা বাড়াল না বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই টুকটাক কাজ করতে লাগল। কিন্তু বাচ্চা কোলে থাকায় সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না তবে ঘুরে ঘুরে সবার খোঁজ খবর নিচ্ছে।

এদিকে আদির বাবা মা আদিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে ব্যাস্ত। আদিও সানন্দে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে কিন্তু তার মনে খটকা লাগছে কারন পার্টিতে বেশিরভাগেই অল্প বয়সী মেয়ে ঘুরঘুর করছে। কেউ দূর সম্পর্কের ফুফুর মেয়ে কেউ খালার মেয়ে মোট কথা এখানে যেন মেয়েদের হাট বসেছে আর তারা আদির দিকে রহস্যময়ী চোখে তাকাচ্ছে।

আদি ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টায় অরিনের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল,

-“কাহিনি কী বলতো…

অরিন চমকে পিছনে ঘুরে জবাব দিল,
-“কিসের কাহিনী..?

“এই মেয়েগুলো কারা..?

-” মা পরিচয় করিয়ে দেয়নি..?

-“দিয়েছে কিন্তু এদের এখানে আসার কারন কী..?

-“মা বাবা তোমার বিয়ে দিতে চায় তাই পাত্রী খোঁজছে…

-“তাই বল…আমিও সেটাই ভাবছিলাম যাইহোক আদিবা কোথায় রে..?

“একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘরের দিকে গেল দেখলাম। আসলে বহুবছর হয় আদিবা কোন গ্যাট টুগেদারে যায় না তাই হয়ত আনইজি লাগছে।

-” যায় না কেন..?

-“তাত জানি না তবে আদিবা লোকজনের ভীড়ে যেতে পছন্দ করে না ইনফেক্ট কারো বাসায় ঘুরতেও যায় না। অনেক আত্মীয় তো ওকে চিনেই না।

আদিত্য অরিনের সাথে কথা বলছিল তখনী একদল ছেলে এসে আদিকে ঘিরে ধরল আদি চোখ ঘুরাতেই আনন্দে দিশেহারা অবস্থা এটা তার ছোটবেলার বন্ধুদের দল।

আদি অরিনকে বিদায় দিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে সবার সাথে কোলাকুলি করল

“সবাই কেমন আছিস..কতদিন পর দেখা হল বলতো..

-” আমরা তো ভাল আছি তোর কি খবর আদি? সেই যে হারিয়ে গেলি…

-“আর বলিস না ছোট বেলার পাগলামি বুঝিসেই তো…

-“পাগলামি তো বুঝলাম কিন্তু এখন সব ঠিক আছে তো..? কোথায় সেই মহারানী..?

-“উফফ ফয়সাল থামবি তুই..? একটুও বদলাস নি।

-“তুই ও কিন্তু বদলাস নি। যাইহোক একবার ডাক না আদিবাকে কতবছর দেখি না।

-“চুল সা*লা একদম নজর দিবি না বলে দিলাম

বলেই হেসে উঠল সবাই। সময় বয়ে যেতে লাগল আদির বন্ধুরা আসায় সে পার্টিটা বেশ উপভোগ করছে।কিন্তু এদিকে বাচ্চার যন্ত্রনায় আদিবার নাজেহাল অবস্থা বাচ্চাটা কিছুক্ষন আগে থেকে কান্না শুরু করেছে কিছুতেই থামছে না আদিবা তাই বাধ্য হয়ে আদির কাছে গেল।

-“ভাইয়া একটু শোনবেন…??

আদি পিছন ঘুরে আদিবাকে দেখে সরু চোখে তাকাল।

-“কী ব্যাপার তোর কোল খালি কেন বাচ্চাটা কোথায় বেশ ধমক দিয়ে প্রশ্নটা করেছে আদি।

-“সাদিয়ার কোলে দিয়ে এসেছি…

-“কেন সাদিয়ার কোলে দিবি কেন? বলেছিলাম না তীর কোল থেকে একদম নামাবি না। এখনী গিয়ে কোলে এক মিনিট তো দূর এক সেকেন্ডের জন্যেও কোল থেকে নামাবি না…

-“বলছি ওর বাবা মা কী এখনো ফ্রি হয় নি..??

কথাটা বলার সাথে সাথেই আদি চোখ গরম করে আদিবার দিকে তাকাল এর কারনটা আদিবা না বুঝলেও এটা বুঝতে পারল এত বছরেও আদির আচারনের কোন পরিবর্তন ঘটে নি সে আগের মতই হুটহাট আদিবার গায়ে হাত তুলতে পিছপা হবে না।

আদিবা অসহায় চোখে আদির দিকে তাকিয়ে রইল।
-“এভাবে তাকিয়ে আসিস কেন? আজ সারারাত বাচ্চাটা তোর কাছে থাকবে তাতে কোন আপত্তি আছে তোর..?

আদিবা উত্তর দিতে পারল না..

-“গুড এভাবে সবসময় চুপচাপ আমার কথা শুনবি তাহলে অযথা মা*র খেতে হবে না অন্যথায়….

আদিবা বুঝতে পারল কথা বাড়িয়ে লাভ নেই তাই ফিরে এসে বাচ্চাটাকে কোলে নিল কিন্তু বাচ্চার কান্না কিছুতেই থামছে না। আদিবা হেলেদুলে নানা রকম ভাবে বাচ্চাটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।

-“এই মেয়ে বাচ্চাটাকে এভাবে কাঁদাচ্ছ কেন?

প্রশ্নটা শোনে আদিবা পিছন ঘুরে দেখল একজন ভদ্রমহিলা কথাটা বলেছেন।

-“বাচ্চাটার ক্ষুধা পেয়েছে বুঝতে পারছ না? আজকালকার মেয়েরা মা যে কেন হয় বুঝি না।

পাশ থেকে অন্য একজন বলে উঠল
-“আর বলবেন না ভাবী ফিগার খারাপ হয়ে যাবে বলে বাচ্চাকে না খায়িয়ে রাখে ভাবা যায়…? এই মেয়ে ঘরে গিয়ে বাবুটাকে একটু বু*** দুধ খাওয়াও যাও। মা হওয়ার তো যোগ্যতা নেই আবার বাচ্চা নিয়েছে।

আদিবা ওদের কথায় অবাক হল,
“আপনারা এসব কি বলছেন..?

-” একদম কথা বাড়াবে না যাও খায়িয়ে আসো বলছি…

মহিলাগুলোর কথা আদিবার বেশ খারাপ লাগল সে হনহন করে সোজা আদির কাছে চলে গেল…রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,

-“বাচ্চাটাকে ধরুন…

-“কী বললি তুই…?

-“সবাই আমাকে কত খারাপ খারাপ কথা বলছে জানেন..?

-“কেন কে কী বলেছে..?

-“বলেছে আমি নাকি ওর মা..

-“সময়মত বিয়ে হলে এর মত কয়েকটা বাচ্চার মা হয়ে যেতি খারাপ কি বলেছে?

-“একদম বাজে কথা বলবেন না ওরা বলছে আমি নাকি ইচ্ছে করে বাচ্চাটাকে খেতে দিচ্ছি না।

-“তো দিচ্ছিস না কেন ঘরে গিয়ে খায়িয়ে আন..

-“আপনিও কী পা”গল হয়ে গেছেন? ও কি আমার বাচ্চা যে আমি দুধ খাওয়াতে পারব..?

কথাটা বলার সাথে আদি হা হা করে হেসে উঠল,

-“এভাবে হাসছেন কেন🥺

-“দুধ কী শুধু মায়ের কাছেই থাকে? কিনতে পাওয়া যায় না..? ইডিয়েট আমি বু*** দুধের কথা বলি নি ফ্রিজে দুধ আছে গরম করে খায়িয়ে আন…

আদির কথায় আদিবা লজ্জা পেল সত্যিই তী কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলছে সে আদির সাথে আদিবা কথা ঘুরানোর জন্য তাড়াতাড়ি বলে উঠল

-“বাচ্চা কোলে নিয়ে আমি কি করে দুধ গরম করব..??

-“আমার কোলে দে আমি যাচ্ছি তোর সাথে…

-“আপনার যেতে হবে না আমি করে নিয়ে আসছি
বলে আদির কোলে বাচ্চাটা দিয়ে কোন মতে ছুটে পালিয়ে গেল আদিবা। আদির বেশ হাসি পেল হাসতে হাসতে বলল
-“তাড়াতাড়ি ফিরবি কিন্তু…



আদিবা দুধ নিয়ে ফিরে আসল। বাচ্চাটা হয়ত ফিডার খেয়ে অভ্যস্থ না তাই খাওয়াতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আদি আদিবা দুজন মিলে খাওয়ানো ট্রাই করছিল তখন একজন এগিয়ে এসে বলল,

-“আদি তুই বউ বাচ্চা নিয়ে ফিরেছিস কই তোর মা তো বলল না..?

মহিলার কথায় আদিবা অবাক হলেও আদি মোটেও বিচলিত হল না।

-“যাক তবুও ভাল বিদেশিনী নিয়ে আসিস নি। তা বউয়ের বাসা কোথায়?

আদি উত্তর দেওয়ার বদলে মুচকি মুচকি হাসছে দেখে আদিবার গা জ্বলে গেল নিজেই উত্তর দিতে বাধ্য হল,

-“খালা আপনার ভুল হচ্ছে আমি আদিবা..অনেক বছর দেখা হয় না তাই হয়ত ভুলে গেছেন আমি ভাইয়ার বউ না।

কথাটা বলতেই আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল…ইচ্ছে করল কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগাতে আদিবার গালে, কিন্তু বাচ্চার জন্য দেওয়া হল না।

-“তুই আদিবা হায় আল্লাহ কত বড় হয়ে গেছিস আমি ত চিনতেই পারি নি। আসলে আদি অন্য কারোর বাচ্চাকে কোলে করে খাওয়াবে আমি ভাবতেই পারিনি তাছাড়া তোর শাড়ি সব মিলে মনে হচ্ছে যেন যুগলবন্দী যাইহোক তোর বাচ্চা বুঝি..?

-“খালা আমার বিয়ে হয়….

কথাটা শেষ করার আগেই আদি হ্যাচাকা টানে আদিবা নিয়ে হাঁটা শুরু করল,

-“ভাইয়া কি করছেন খালা কি ভাবল…?

আদির কানে কথা ঢুকল না সে দ্রুতবেগে হেঁটে যাচ্ছে..

-“ভাইয়া থামুন বাচ্চাটা পড়ে যাবে..

আদি বাসার পিছন দিকে গিয়ে থামল,
-‘তোকে এত পকর পকর করতে বারণ করেছিলাম না..?

-“মানে..?কি বলতে চাইছেন খালা ভুল বুঝছিল আর আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকব..?

আদি কোন উত্তর না দিয়ে আদিবার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিল। আদিবা ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেও পেরে উঠল না কারন তার কোলে বাচ্চা সেই সুযোগে বেশ অনেক্ষন পর আদি তাকে ছাড়ল।

ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে আদিবা ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল

-“ক ক কী করলেন এটা…?

-“পকর পকর করার শাস্তি দিলাম..এরপরেও যদি পকর পকর করিস তাহলে কি হবে বুঝতেই পারছিস.

-“এসবের মানে কী ভাইয়া..? আজ আপনার পাত্রী খোঁজার জন্য পার্টি দেওয়া হয়েছে এখন যদি আমাকে আপনার বউ ভাবে তাহলে আপনার বিয়ে হবে কী করে..?

-“আর আমি এই বাচ্চাটাকে এতিমখানা থেকে নিয়ে এসেছি আর শাড়িটাও ইচ্ছে করেই কিনে এনেছি যাতে সবাই ভাবে তুই বিবাহিত…

-“ম ম মানে কী…??

-“মানেটা তোর গোবর ভরা মাথায় ঢুকবে না তাই চুপচাপ ঘরে যা বাচ্চাটা ঘুমিয়ে গিয়েছে আমার রুমে শুয়িয়ে নিজেও শুয়ে থাকবি একদম বের হবি না…

হুট করে ঘুম ভেঙে গেল আদিবার। কেমন যেন অস্বস্তিবোধ হচ্ছে, মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলে যেমন হয়। তবে শুধু শুধু ঘুম ভাঙেনি,ঘুমের মধ্যে আদিবার মনে হলো কেউ যেন তার পরনের শাড়ির ভাঁজ খুলছে, পেটের দিকে দুটি হাত বিচরন করছে। হাত দুটো ক্রমশো পেট থেকে উপড়ের দিকে উঠছে। আদিবা হুট করে কিছু বুঝে উঠতে পারল না কারন চোখ থেকে এখনো ঘুম বিদায় নেয় নি।পরক্ষনে পেটের একপাশে ক্ষীন ব্যাথায় সমস্ত ঘুম উবে গেল। আদিবা তাড়াতাড়ি উঠতে চাইল কিন্তু পারল না তার উপড় ভারি কিছু চেপে আছে। আদিবা এমনিতেই বিষ্ময়ের মধ্যে ছিল তারমধ্যে তাকে আরাও অবাক করে দিয়ে পেটের ডানপাশটাতে কেউ স্বজরে কামড় বসিয়ে দিলো৷ আদিবা এবার ভয়ে চিৎকার করতে নিল। কিন্তু তার আগেই মুখটা চেপে ধরে এক জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলল,

-“একদম ন্যাকামি করবি না।

-“আ আ আদি ভাইয়া আ আ আপনি..?

-“অন্য কেউ হলে খুশি হতি..?

-“কথা ঘুরাবেন না,কি করলেন এটা..?

-“না বুঝার মত কিছু করেছি?

আদিত্যের অদ্ভুত কান্ডে অবাক হয়েছে। আদিবা কিছুক্ষন আগেই বাচ্চাটাকে ঘরে নিয়ে এসে শুয়িয়ে দিয়ে বাচ্চার পাশে নিজেও শুয়ে ছিল। কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারে নি হটাৎ কারোর অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে ঘুম ভেঙেছে।

-“এসব কী ধরনের অসভ্যতা? যখন তখন গায়ে হাত দেন কেন?

-“ভাল লাগে তাই..

-“ভাল লাগে মানে কী..?

-“ভাল লাগার আলাদা কোন মানে হয় নাকি..?

-“লজ্জা বলতে কিছু নেই আপনার.? এসেছেন থেকে অসভ্যতা করে চলেছেন। আমরা আর ছোট নেই আপনি কী বুঝেন না?

-“আমি যতদূর জানি এসব শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই করতে পারে ছোট বাচ্চারা করে জানতাম না তো..

-“লজ্জা করছে না আপনার? শেষবারের মত সাবধান করে দিচ্ছি যখন তখন গায়ে হাত দিবেন না।

-“এখন তাহলে দিনক্ষন ঠিক করে গায়ে হাত দিতে হবে? আচ্ছা প্রতিদিন রাতে দিব ঠিক আছে..?

-“আপনি কিন্তু সীমা পেরিয়ে যাচ্ছেন।

-“তোর সাবধান বানী তোর কাছেই রাখ। একটা কথা কান খুলে শোনে রাখ আমি তোর সাথে যা ইচ্ছে তাই করব তুই চাইলেও করব না চাইলেও করব।

-“আপনি কী ভুলে যান আমি আপনার বোন হই।

-“সরি সরি, কি হোস তুই আমার?

-“এখন কী সেটাও অস্বীকার করবেন?

-“অস্বীকার করছি না কিন্তু তুই হয়ত জানিস না আমি তোকে কোনদিনি বোনের চোখে দেখিনি দেখতে পারবও না।

-“পা*গলের হয়ে গেছেন আপনি।

-“আট বছর আগেই হয়েছিলাম যেদিন তোকে অন্য ছেলের সাথে দেখেছিলাম।

কথাটা বলতে বলতেই আদির মুখভঙ্গি বদলে গেল। চোখ দুটি যেন ভিতরের সব রাখ উগ্রে দিতে চাইছে আদি নিজেকে কন্ট্রোল করার প্রচেষ্টায় আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসল। আদিবা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিচু গলায় বলল,

-“ভাইয়া সেদিন…

আদিবা পুরো কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই আদি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

-“শুনতে চাইনি, তোর প্রেমকাহিনি শোনার কোন ইচ্ছে আমার নেই।

-“আপনি ভুল…

-“বল্লাম না কোন কথা শুনতে চাইনি। উঠে কাপড় ঠিক কর বাচ্চাটাকে দিয়ে আসতে হবে।

-“আমাকেও যেতে হবে?

-“আদিবা আমাকে রাগাস না..

বলে বেরিয়ে গেল আদিত্য।
-“আজব একটা মানুষ নিজে যা বুঝবে সেটাই ঠিক বাকি সব ভুল। একটা ছেলে এত বদমেজাজি কী করে হয়?

ভাবতে ভাবতে আদিবা শাড়ি ঠিক করতে নিল।কুচি ঠিক করতে যেই আয়নার সামনে দাঁড়াল পেটের দিকে কা**ড়ের দাগ জ্বলজ্বল করে উঠল।আদিবা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল। আদি এসেছে পরে থেকে তাকে নানাভাবে হ্যারেস করে চলেছে এটা তারেও প্রমাণ৷ কোনভাবে দাগ ঢাকা গেল না তাই শাড়ি ছেড়ে জামা পরে নিল সাথে সাথে বাইরে থেকে আদির গলা ভেসে আসল

-” আদিবা তোর এখনো হয়নি..? একটা শাড়ি ঠিক করতে এতক্ষন লাগে?

আদিবা আবারও লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল।
বাচ্চাকোলে বেরিয়ে আসতেই আদিও উঠে হাঁটা দিল। এতরাতে দুজন মিলে বাইরে যাচ্ছে দেখে পার্টিতে আসা অনেকেরই ব্যাপারটা হজম হল না। সবাই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে দেখে আদির মা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলেন

-“এতরাতে তোরা কোথায় যাচ্ছিস?

আদির সোজাসাপটা জবাব,
-“আমি নিশ্চুই ছোটবাচ্চা নই মা, যে কোথায় যাচ্ছি তার কইফত দিয়ে যেতে হবে।

আদির কথার ধরন দেখে আদিবা তাড়াতাড়ি বলে উঠল,
-” ভাইয়ার বন্ধুর বাচ্চাকে দিতে যাচ্ছি কাকিমনি। ভাইয়া বাচ্চা নিয়ে ড্রাইভ করবে কিভাবে তাই আমি যাচ্ছি এখনী চলে আসব।

আদি একবার আদিবার দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। চুপচাপ হাঁটা দিল আদিবাও পিছন পিছন গেল। বাসা ভর্তি মেহমান ছিল তারমধ্যে একজন বলেই উঠল,

-“রেহানা তোমার ছেলের জন্য বউ খোঁজার কী দরকার? ছেলে তো নিজেই বউ পছন্দ করে নিয়েছে।

-“ভাবী কি বলছেন এসব? আদির সাথে আদিবার তেমন সম্পর্ক নেই।

-“চোখ থাকতেও যদি অন্ধ হয়ে থাকতে চাও তাহলে তো কিছু বলার নেই বোন।

কথাগুলোতে আদির মা বেশ অপমানিত বোধ করলেন এদিকে ঘড়ির কাঁটা ১২ এর ঘর পেরিয়েছে। আদিরা বাচ্চাটাকে এতিমখানায় দিয়ে ফিরে আসছিল হটাৎ মাঝরাতে গাড়ি থেমে গেল।আদিবা প্রশ্ন করল,

-“কী হল গাড়ি থামালেন কেন..?

-“গাড়ি থেকে নাম..

-“নামব মানে কী?

-“নামবি মানে আমি তোকে নিয়ে যাব না।

-“মাথা ঠিক আছে আপনার?

-“নামবি নাকি জোর করে নামাতে হবে

আদিবা যতদূর সম্ভব তর্কাতর্কি করল কিন্তু কাজ হল না আদি জোর করে রাতের নিস্তব্ধ রাস্তায় নামিয়ে দিল আদিবাকে।

-“আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না ভাইয়া। বাসায় ফিরে সবার কাছে কি জবাব দিবেন?

-“আমার জবাব আমি দিব তোকে ভাবতে কে বলেছে?

-“আ আ আপনি সত্যিই আমাকে রেখে চলে যাবেন?

-“সন্দেহ আছে?

-“আমি অন্ধকার ভয় পাই আপনি জানেন তবুও।

-“নিয়ে যেতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।

-“কী শর্ত?

-“প্রতিদিন রাতে আমার সাথে ঘুমাতে হবে..

-“আপনি…

-“থাক তাহলে সারারাত এখানে..বলে আদি গাড়ি স্টার্ট দিতে নিল

আদিবা ভেবে দেখল এখন বাসায় ফিরা সবচেয়ে বেশি জরুরী পরে কিছু একটা করতে হবে তাই তাড়াতাড়ি বলল,

-“আমি রাজি…

-“কথা দিচ্ছিস তো…?

-“দিচ্ছি দিচ্ছি নিয়ে চলুন প্লিজ।

-“ঠিক আছে…

আদিবারা বাসায় ফিরতে ফিরতে ১ টা বেজে গেল ততক্ষনে মেহমান মোটামুটি বিদায় নিয়েছে। বাসায় ফিরে আদি নিজের ঘরে চলে গেল আদিবাও তার ঘরে গেল। কিছুক্ষন পর পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে গেল সবাই মোটামুটি ঘুমিয়ে গিয়েছে। সারাদিন কাজ করে সবাই ক্লান্ত তবে আদিবার ঘুম পায় নি সে লাইট অফ করে শুয়েছিল হটাৎ চুলে টান পড়ল আদিবার বুঝতে বাকি রইল না কাজটা আদির।
উঠে বসল,

-“কি বলবেন বলুন..

-“এক কথা কতবার বলতে হবে হ্যা..? তোকে বলেছিলাম না আমার সাথে ঘুমাতে।

-“আমি পারব না।

আদির মুট শক্ত হয়ে এল চুলে টান পড়েছে

-“আহ কি করছেন লাগছে তো…
আরে আরে করছেন কী।

আদিবার কথায় কান দিল না আদি চুল ধরে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে গেল।

-“একটা শব্দ করবি তো আমি তোকে মে**রে আবার নিরুদ্দেশ হব।

আদির কথায় আদিবা কিছুটা ভয় পেল এই ছেলের মতিগতির কোন ঠিক নেই যখন যাখুশি করতে পারে। আদি আর কোন কিছু না বলে আদিবাকে আঁশটে পিঁশটে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।

-“অন্তত একটু সরে শোন প্লিজ আমি এভাবে ঘুমাতে পারি না।

-“বিয়ের পর কি করবি..? দেখা গেল তোর বর জড়িয়ে ধরা ছাড়া ঘুমাতে পারে না তখন..?

-“পরের টা পরে দেখা যাবে এখন ছাড়ুন

-“আদিবা সারাদিন অনেক দখন গিয়েছে ঘুমাব ডিস্টার্ব করিস না।

-“ভাইয়া আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।

আদি এবার আদিবার আরও কাছে এসে ঘাড়ের চুল সরিয়ে মুখ ডুবিয়ে দিল। আদিবার সারা শরীর কেঁপে উঠল।

-“ক ক ক কী করছেন।

আদির পক্ষ থেকে উত্তর আসল না সে আদিবার মাঝে ডুব দিয়েছে অনেক আগেই।

-“ভ ভ ভাইয়া আমার কেমন যেন লাগছে.. এমন করবেন না ছা ছা ছাড়ুন….

চলবে