বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব-৯+১০

0
402

#বেপরোয়া_ভালবাসা
০৯
লেখনীঃ মনা হোসাইন

(ইহা একটি কাল্পনিক গল্প এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। এর স্থান কাল চরিত্র সবি কাল্পনিক)

-“আপনার মাথায় যে সমস্যা আছে সেটা কী আপনি জানেন..?

-“জানি কিন্তু সেই সমস্যা টা শুধু একজনকে ঘিরেই।

-“হাত ছাড়ুন যেতে দিন…

আদি বাধ্য ছেলের মত হাত ছেড়ে দিল। আদিবাও একমিনিট দেরি না করে বাইরে আসল।

কয়েকমিনিট পর আদি চেঞ্জ করে রুমে ঢুকল এসেই মুচকি হাসল কারন আদিবা এখনো ভেজা কাপড়ে তার ঘরেই দাঁড়িয়ে আছে…

-“কী ব্যাপার ম্যাডাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তারা গুনছেন নাকি…?

আদিবা রা/গে ফুসতে ফুসতে বলল,

-“আমি এই অবস্থায় বাইরে যাব কি করে…? সবাই কী বলবে? এভাবে ভিজে আপনার ঘর থেকে যাচ্ছি কেন জবাবে কি বলব..?

-“আমি যে উত্তর টা বলব তোর পছন্দ হবে না তাই না বলি। যাইহোক কোন রুমে থাকিস বল আমি জামা এনে দিচ্ছি।

-“আপনার আনতে হবে না সাদিয়া কিংবা অরিন আপুকে একটু ডেকে দিন।

আদি কোন উত্তর না দিয়ে বিছানায় বসে এসি চালিয়ে দিল।

-“কি হল এটা…?

-“দেখি কতক্ষন ভেজা কাপড়ে থাকতে পারিস…

-“মানে কী..?

-“মানেটা তো সহজ আমি হেল্প করতে চাইলাম তোর হেল্পের দরকার নেই। এখন হয় দাঁড়িয়ে থাক অথবা এভাবেই বাইরে যা…

-“ঠিক আছে এভাবেই যাব তবুও আপনার কাছে সাহায্য চাইব না…

-“এইটুকুনি মেয়ে অথচ রা/গ আছে ষোল আনা…দাঁড়া দাঁড়া এনে দিচ্ছি সবাইকে শ*রী*র দেখিয়ে বেড়াতে হবে না।

বলে আদি হন হন করে বেরিয়ে গেল…বাইরে এসে সাদিয়ার সাথে দেখা হল,

-“এই সাদিয়া শোন

-‘ভাইয়া তুমি এখানে? কিছু লাগবে…?

-“আদিবা কোন ঘরে থাকে রে…

-“কেন ভাইয়া..? ও তো ঘরে নেই ডেকে দিব..?

-“নাহ লাগবে না ও কী তোর সাথে ঘুমায়?

-“নাহ একা ঘুমায় । বারান্দার পাশের ঘরে।

-“আচ্ছা ঠিক আছে…

আদি আদিবার ঘরে ঢুকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল তারপর ড্রয়ার থেকে কাপড় নিয়ে নিজের ঘরে গেল।আদিত্য যেতে না যেতেই আদিবা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। বের হয়ে এদিক ওদিক কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা এক দৌড়

আদির মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠল,
-“পালিয়ে যাবি কোথায়? আজকের রাত টা তোর জন্য স্বরনীয় হয়ে থাকবে শুধু আর একটু অপেক্ষা কর…




বেশ কিছুক্ষন পর নিচ থেকে সরগোলের আওয়াজ ভেসে আসল আদি তাতে বেশ বিরক্তই হল। ঘুম ঘুম চোখে নিচে নেমে আসল। আসতেই অবাক হল কারন তার ছোট চাচা ছোট চাচী আর চাচাত বোন জুঁই বিদেশ থেকে এসেছে

জুঁই আদিকে দেখেই ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরল আদি কিছুটা হতভম্ব হল কিন্তু আদিবা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে দেখে সেও জুঁইকে জরিয়ে নিল।

-“ভাইয়া কতবছর পর তুমি আসলে এতদিন কোথায় ছিলে..?

-“অস্ট্রেলিয়া…

-“ওমা তাই..? কিভাবে গেলে..?

-“লম্বা কাহিনী অন্য সময় বলব এখন বল তুই কেমন আছিস..?

-“ভাল আছি এখন একটু বেশিই ভাল আছি।

-“চাচা চাচী তোমরা কেমন আছো…

-“ভাল আছি বাবা তুই ফিরে এসেছিস জেনে আরও ভাল লাগছে…

-“জুঁই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় তোদের জন্য গিফট আছে। নিয়ে নিস এখন ফ্রেশ হয়ে নে।

বলে আদি হাঁটতে হাঁটতে বলল আদিবা আমার সাথে ঘরে আয় তো…

আদিবা কথাটা শোনেও না শোনার ভান করল আদি ঘরে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠল এবার আদিবা বাধ্য হয়েই উপড়ে গেল।

-“কী হয়েছে এভাবে ডাকছেন কেন?

-“কইফত দিতে হবে?

-“আপনি যে কয়ফত দিবেন না সেটা আমি ভাল করেই জানি কিন্তু বাসা ভর্তি লোকজন সবাই কী ভাবছে?

-“কী ভাবছে..?

-“ভাবছে আমি আপনার মাথা চিবিয়ে খাচ্ছি

-“সেতো জন্মের পর থেকেই খাচ্ছিস এ আর নতুন কী?

-” আপনি ….

-“বেশি কথা ভাল লাগে না লাগেজে জিনিসপত্র আছে বের করে সবাইকে এক এক করে দিতে হবে।

-“গিফট আপনি এনেছেন আপনি দিবেন আমাকে বলছেন কেন?

-“আদিবার বাচ্চা তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি রকমের কথা শিখেছিস। আর একটাও কথা না বলে যা বল্লাম তাই কর।

আদিত্য একহাতে লাগেজ অন্য হাতে আদিবাকে ধরে নিচে গেল তারপর আদিবাকে হুকুম করল সবাইকে জিনিসপত্রগুলো দিতে আদিবা একে একে সবাই কে জিনিসপত্র দিচ্ছে।একফাঁকে আদিত্য বলল

-“মা অরিনের বিয়ে কবে..?

-“কেবল তো আংটি পরানো হবে তারপর ডেট ফিক্সট হবে

-” আমি বেশিদিন থাকব না তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিতে হবে।

-“মানে কী তুই আবার চলে যাবি..?

-“আমি এখানে থাকতে আসিনি যেতে তো হবেই। যাইহোক আদিবা জুঁইকে ডেকে আনতো ওর জন্য কিছু স্পেশাল গিফট আছে।

জুইয়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো টা বোধ হয় আদিবার পছন্দ হয় নি তাই জিনিসপত্র ছেড়ে উঠে বলল,

-“নিজে ডেকে আনতে পারেন না?

-“চাচিম্মা দেখেছো ভাল কথা বললেও তোমার মেয়ে কেমন আচারন করে..?

-“আদিবা বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে কেউ কথা বলে? যা এখনী জুই কে ডেকে আন।

-“থাক যেতে হবে না ওদিকে সাদিয়া আর জুঁইয়ের জন্য ড্রেস চকলেট কসমেটিক আছে সাদিয়ার গুলো দিয়ে বাকি গুলো জুই এর জন্য গুছিয়ে রাখ…ও ফ্রেশ হয়ে এসে নিয়ে যাবে।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদিবা আদির কথা মত সব করল। কিন্তু অবাক করা বিষয় আদি সবার জন্য গিফট আনলেও আদিবার জন্যে আনেনি।আদিবার তাতে বেশ খারাপেই লেগেছে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারল না।





দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে সবাই রিসোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে যথারীতি আদিবাও রেডি হয়েছে। আদিত্য রেডি হয়ে নিচে নামতে নামতে আদিবার দিকে তাকাল। আদিবা হালকা গোলাপি শাড়ির সাথে সাদা ফুল হাতা ব্লাউজ পরেছে, কোমড় ছাড়িয়ে পড়া খোলা চুলে গুছিয়ে সাদা রজনী মালা, কানে দুল গোলাপি চুড়ি আর ঘন কাজলে সাজিয়ে চোখ দুটি। সব মিলে অপ্সরি লাগছে তাকে। যেন সদ্য ফুটে ওঠা বনফুল যার উপড় থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া কষ্টকর।

অন্যদিকে সাদামাটা একটা কালো টিশার্টে কি অপরুপ লাগছে আদিকে। যদিও সাজগোজের বাহার নেই কিন্তু তার নজর কারা হাসি,পরিপাটি পোশাক গোছানো চুল তার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে চলেছে। বাসার সবার দৃষ্টি এখন তার দিকেই।
আদিত্য নিচে আসতেই জুই বলে উঠল,

-“উফফ ভাইয়া তুমি কত হেন্ডসাম হয়ে গেছো তোমার উপড় থেকে চোখ সরানোই দায়।

আদিত্য মুচকি হাসল তারপর সবাইকে তাড়া দিতে লাগল..

-“মা এখনো বের হও নি তোমরা কখন যাবে বলতো..??

-এই তো বাবা এখনী যাচ্ছি। সবাই কোথায় গাড়িতে গিয়ে বসো…

সবাইকে তাড়া দিয়ে বাসার বাইরে পাঠিয়ে রুবিনা বেগম বাসায় তালা দিলেন। বাসার বড়রা একসাথে গাড়িতে যাবে আর ছোটরা একসাথে। আদিত্য বড় দের গাড়িতে তুলে দিয়ে পাঠিয়ে দিল। অন্য গাড়ি সে নিজেই ড্রাইভ করবে গাড়িতে অরিন,সাদিয়া,জুই সহ আরো কিছু আত্মিয় স্বজন আছে। সবার মাঝে আদিবাও আছে সে অরিনের পাশে বসেছে।

সব ঠিকঠাকেই ছিল কিন্তু আদি গাড়িতে উঠেই হুট করে রেগে গেল। হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে আদিবার পাশের দরজা স্বজোরে খুলে দিল। আদির কান্ডে উপস্থিত সবাই বিব্রত হয়েছে কিন্তু আদিবা একটু কিছুটা ভয় পেয়েছে..আদিবা প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই

-“তুই এখানে কী করছিস…? আদিবার দিকে তাকিয়ে কর্কশ কন্ঠে প্রশ্নটা করেছে আদিত্য।

-“আ আ আমি মানে…

-“মানে টা তো আমিও জানতে যাচ্ছি তুই কোথায় যাচ্ছিস..?

আদির প্রশ্নে অবাক হল আদিবা…
কিন্তু কিছু বলতে পারল না।

আদিবার অবস্থা দেখে অরিন বলল,

-“ছোটরা সবাই একসাথে যাব তাই আদিবাও আমাদের সাথে এসেছে।

-“অরিন একটা কথা শুনে নে আদিবা যদি তোর সাথে যায় তাহলে আমি যাব না।

-“তুই এসব কি বলছিস ভাইয়া…?

-“সোজা কথা আমি সোজা ভাবেই বলি ড্রাইভার ডেকে দিচ্ছি তোরা চলে যা…

-“ভাইয়া তাই কখনো হয় নাকি তুই না গেলে…

বলেই আদিবার দিকে তাকাল সবাই। আদিবা বুঝতে পারল তার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত তাই প্রতিবাদ জানাল না নেমে দাঁড়াল আদিও কিছু বলল না গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেল।

আদির এমন অদ্ভুত আচারনে আদিবা কষ্ট পেয়েছে নাকি অবাক হয়েছে সে বুঝার চেষ্টা করছিল। তখন মনে হল যত যাইহোক অরিনের বিয়েতে কোন রকম গন্ডগোল করা উচিত হবে না তাই ঘরে ফিরে যাবে ভাবছিল কিন্তু ফিরে এসে আরও একটা ধাক্কা খেল দরজার ঝুলছে মস্তবড় তালা। সে এখন ঘরে যাবে কি করে? কাউকে ফোন করে বলবে সেই উপায়ো নেই। কারন তার নিজস্ব কোন ফোন নেই চারদিকে শুনসান নিরবতা। দেখতে দেখতে রাত বাড়তে লাগল আদিবার বেশ ভয় লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই। আদিবা কোন উপায় না দেখে সে তার ছোট বেলার বান্ধবীর বাসায় চলে গেল কারন একা একা এই অন্ধকারে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না।

আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে সবাই ফিরল। আদির পা দরজার তালা খুলছেন দেখে আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

-“মা তুমি বাসায় তালা দিয়ে গিয়েছিলে..?

-“হ্যা কিন্তু কেন..

-” আদিবা…?? তাহলে আদিবা কোথায়?

-“তাই তো ও তো অনুষ্টানেও যায় নি।

আদি আর কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ল, আশেপাশে খুঁজতে লাগল।

-“আজ একবার তোকে পাই তারপর বুঝাব মজা।

তখনী আদির ফোনে ফোন আসল আর তার মা বলল আদিবা ফোন করে বলেছে সে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে আজ ফিরবে না।

-“কীহ…?? কোন বান্ধবী…?

আদির মা নাম বললেন…

-“ঠিক আছে বাসার ফোন নাম্বার টা দাও তো মা ওর বাড়ির বাইরে থাকার মজা আমি দেখাচ্ছি।

ঘড়িতে ১২ টা বেজে ৩৪ মিনিট সশব্দে বেজে উঠল কলিং বেল। আদিবা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল কিন্তু তার বান্ধবী তার ঘুম ভেঙে বলল তাকে নিতে তার ভাই এসেছে। আদিবা ঘুম ঘুম চোখে প্রশ্ন করল

-“ভাই কোন ভাই…?

-“আদিত্য…

নামটা শোনামাত্র আদিবার চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি নিচে নামল।

আদি নিচে বসে আছে চোখে মুখে যেন আগুন ঝরছে..আদিবা এসে দাঁড়াতেই আদিত্য বলে উঠল -“আন্টি আমরা তাহলে যাই.

-“আদিবা আজ রাত টা থেকে গেলেই তো পারত শুধু শুধু কষ্ট করে আসলে।

-“আন্টি আসলে বাসায় বিয়ে তো অনেক লোকজন তাই রাতেই যেতে হবে।

-“আচ্ছা তাহলে নিয়ে যাও সাবধানে যেও।

আদিত্য সামনে সামনে হাঁটছে আদিবা তার পিছন পিছন…

-“এটা ফয়সালদের বাসা না..? তিন্নি মানে তোর বান্ধবী তো ফয়সালেরেই বোন তাই না?

আদিবা উত্তর দিল না।

-“সাহস কী করে হল অন্য বাড়িতে রাত কাটানোর সিধান্ত নেওয়ার? আমি যখন দেশে ছিলাম না তখন এসবেই করে বেরিয়েছিস তাই না?

আদি সারা রাস্তা আদিবাকে ধম**কাতে ধম**কাতে নিয়ে আসল আদিবার চোখ ফেঁটে কান্না পাচ্ছে কিন্তু মায়ের অসহায়তার কথা ভেবে কারো কাছে অভিযোগ করল না চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে জামা কাপড় চেঞ্জ করে নিল। তখনী কানে আসল তার মায়ের ডাক ভিতরটা ধ্বক করে উঠল,অনুষ্ঠানে কেন যায় নি মা প্রশ্ন করলে কি উত্তর দিবে সে..?

কিন্তু মায়ের কাছে গিয়ে বুঝতে পারল সে অনুষ্ঠানে গিয়েছে কি যায় নি তাতে তার কিছু যায় আসেনি তিনি আদিবাকে অন্য কারনে ডেকেছেন।

-“মা ডাকছিলে…?

-“হুম আদিবা শোন জুঁই আজকে তোর সাথে ঘুমাবে।

আদিবা মাথা নেড়ে সায় জানাল কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারল ২ টি হি**স্র চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে তবে এর কারন টা বুঝতে পারল না তাই তেমন গুরুত্ব দিল না।নিজের ঘরে গিয়ে বিছানা গুছিয়ে জুই কে শুতে বলল। তারপর নিজেও জুইয়ের পাশে শুয়ে পড়ল।

-“আচ্ছা আদিবাপু ভাইয়াকে তোমার কেমন লাগে..?

-“মানে..?

-“মানে ভাইয়ার মত এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে আশেপাশে থাকলে সবারেই ভাল লাগার কথা তাই না..?

জুইয়ের অবান্তর কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে হল না আদিবার…তাই চুপ করে রইল।

-“আপু জানো পার্টিতে সবাই ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল।

-“আহ জুই রাতদুপুরে ভাইয়া ভাইয়া না করলেই কী নয় এবার ঘুমাও না?

-“আপু জানো আমার মনে হয় কি আমি ক্রাশ খেয়েছি…

-“ভাল করেছো সকালে চাচা চাচী কে বলে ক্রাশের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিব কিন্তু এখন ঘুমাও প্লিজ।

-“কিন্তু আপু আমার মনে হয় ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে…

-“জুই তুমি এত বাজে বকো কেন?

-“সত্যি বলছি আপু,পার্টিতে বড় চাচা বলেছেন ভাইয়ার বিয়ে দিবেন যাতে সে এখানেই থাকে। চলে যেতে না পারে।ভাইয়াকে যখন বিয়ের কথা বলল তখন ভাইয়া বলেছে তার নাকি মেয়ে পছন্দ করা আছে আর সে ছোটবেলা থেকেই তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে। যদিও ভাইয়া এখন তোমায় পছন্দ করে না কিন্তু ছোটবেলায় ও তোমার জন্য পাগল ছিল তাও না সবাই সেটা জানে…তারমানে ভাইয়া তোমাকেই বিয়ে করবে।

-“জুই তুমি প্লিজ ঘুমাও আমার এখন এসব শুনতে একদম ইচ্ছে করছে না।

-“হাউ আনরোমান্টিক…
মুখ ভেংচি দিয়ে জুই উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে পড়ল।

বেশকিছুক্ষন পর আদিবা লক্ষ্য করল জুই তাকে আঁশটে পিশটে জরিয়ে ধরেছে।

-“জুই একটু সরো প্লিজ আমি এভাবে ঘুমাতে পারি না।

আদিবার কথায় জুইয়ের কোন পরিবর্তন ঘটল না বরং সে তাকে আরও জড়িয়ে নিল।

-“উফ আমি এভাবে ঘুমাতে পারি না… সরো প্লিজ।

“”” আর আমিও জড়িয়ে না ধরে ঘুমাতে পারি না”””

কন্ঠ টা শোনে আদিবার আত্মা উড়ে গেল..তাড়াতাড়ি উঠে বসল সে।

-“ভ ভ ভাইয়া আপনি এখানে…?

-“হিসস এত জোরে কথা বললে জুই জেগে যাবে…

-“এসবের মানে কী..?

-“মানে আমি তোর সাথে ঘুমাম

-“কিসব বলছেন…

-“যা বলার তাই বলেছি। যখন তোর জামা নিতে এসেছিলাম তখনী ভেবে নিয়েছি আমি তোর সাথে ঘুমাব কিন্তু এই জুই সবকিছুতে জল ঢেলে দিল।

-“এখনী এখান থেকে বেরিয়ে যান তাহলে আমি কিন্তু চেঁচাব।

-“সাহস থাকলে চেঁচা দেখি কেমন পারিস…
আমার বি*রু**দ্ধে কিছু বলা বা করার আগে আগাগোড়া ভেবে নিস।

-“এতকিছুর পরেও আপনার মুখে কথা বের হচ্ছে..?

-“আমি তো কোন অন্যা*য় করি নি যা করার তুই করেছিস বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিস তাও এত সেজেগুজে।এর শা**স্তি ত পেতেই হবে।

-” আমি আপনার পায়ে পড়ছি প্লিজ যান এখান থেকে জুই জেগে গেলে মানসম্মান থাকবে না।

-“তাহলে তুই আমার রুমে চল…

-“আ আ আমি আপনার ঘরে…?



চলবে…!!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১০
লেখনীঃ মনা হোসাইন

সকাল ৬ টা বেজে ৪০ মিনিট ঘুম ভেঙেও যেন ভাংগছে না। চোখ পিটপিট করে তাকাল আদিবা সারা শরীরে কেমন অস্বস্তিকর ব্যাথা গলার দিকটা একটু বেশিই ব্যাথা করছে। আদিবা বেশ চেষ্টা করে উঠে বসল সাথে সাথেই ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। তারপাশে আয়েশ করে ঘুমিয়ে আছে আদিত্য।

আদিত্য,আদিবার জীবনের একমাত্র শনি যে কিনা ছোট বেলা থেকেই আদিবার ঘাড়ে চড়ে আছে। আদিবা চারপাশটা ভাল করে দেখে নিল। না সে নিজের রুমে নয় আদিত্যের রুমে আছে।

ধীরে ধীরে রাতের সব ঘটনা মনে পড়তে লাগল। রাতে আদিবা নিজের রুমেই ঘুমিয়েছিল কিন্তু আদিত্য তাকে জো**র করে এই রুমে নিয়ে এসেছে তারপর যা যা করেছে সেসব ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা আদিবার নেই। আদিবা কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে গিয়েছিল।

আদিবা তাড়াতাড়ি উঠে নিজের ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু তাতে সফল হতে পারল না। আদিত্য দরজা লক করে রেখেছে। কিভাবে লক করেছে সেটা আদিবার জানা নেই শুধু এইটুকু জানে যে দরজাটা খোলার ক্ষমতা তার নেই। কিছুক্ষন চেষ্টার পর ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসল। এখন কী করবে মাথায় ঢুকছে না। সবাই জেগে যাওয়ার আগেই এখান থেকে যাওয়া উচিত সবাই যদি জানে সে আদির সাথে রাত কাটিয়েছে মানসম্মান থাকবে না।

আদিবা কোন উপায় না পেয়ে আদিকে গিয়ে ডাকল,
-“শুনতে পাচ্ছেন…??

-“…….

-“ভাইয়া শুনতে পাচ্ছেন…

আদি চোখ বন্ধ রেখেই আড়মোড়া ভেঙে জবাব দিল,
-“কি হয়েছে সাত সকালে এভাবে চেঁচামেচি করছিস কেন?

-“দরজাটা খুলে দিন..

আদি এবার চোখ খোলল
-“দরজা খুলে দিব মানে …?

-“রুমে যাব না?

-“এটা কী বন জংগল ?

-“আমি আমার রুমে যাব সেটাই বলেছি সবাই যদি জেগে যায় মুখ দেখাব কি করে..?

-“কেন মুখে আবার কী হয়েছে যে মুখ দেখাতে পারবি না…

-“আপনার কী একটুও লজ্জা নেই…? এত অভিনয় কী করে করেন?এতকিছুর পরেও কথা বলছেন..?

-“লজ্জা পাওয়ার মত কিছু করেছি বলে তো মনে পড়ছে না।

-“কী করতে বাকি রেখেছেন…?

-” যতটা করার কথা ছিল ততটা করি নি ঠোঁট, থেকে কোমড় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলাম এর বাইরে যাই নি…

-“আপনি কতটা নিচে নেমে গেছেন ভাবতে পারছেন?

-“যে মেয়ে ক্লাস নাইনে থাকতে প্রেম করতে পারে সে এখন আমাকে উপড় নিচ শিখাচ্ছে…?

-“আপনি…

-“ভুল কিছু বল্লাম? তুই এসবে অভ্যস্থ না..?

-“চুপ করুন,আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে লাগছে..

-“উচিত কথা সবারেই গায়ে লাগে।

-“আর একটাও বাজে কথা বলবেন না। দরজা খুলুন আমি যাব..

-“নিজেকে আয়নায় দেখেছিস?

-“মানে…?

-“গলায় লাভ বাইট চকচক করছে জামা আর চুলেরও নাজেহাল অবস্থা…

-“আপনি আমার ভাই ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে…কী করে পারলেন..?

-“পারলাম আর কই কান্নার জন্যে তো পুরো কোর্স কমপ্লিট হল না যাইহোক ঘৃনাই যখন করবি তাহলে এইটুকু আর বাকি থাকবে কেন বাকিটুকুও করে ফেলি…

-“আপনি চুপ করবেন?

-“আচ্ছা করলাম কিন্তু প্যান প্যান করবি না,ঘুমাম।

-“দরজাটা খুলে দিয়ে ঘুমান

আদি উত্তর দিল না। উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়ল।

-“এসবের মানে কী?কোনধরনের হেয়ালি এটা..?

-“আর একটা কথা বলবি তো থা প্প ড় মে**রে সবকটা দাঁত ফে*লে দি*ব।

-“মান সম্মান শুধু আমার যাবে না আপনারও যাবে.

-“গেলে যাবে. আমার সম্মান নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।

-” সবাইকে বলে দিব আপনি জো**র করে আমার সাথে…

-“তোর সাথে কি…? কী করেছি বল?

-“…..

-” চুপ কেন বল কি করেছি? কিছুই করি নি আমার সাথে বাড়াবাড়ি করবি তো কাল যা যা ছাড় দিয়েছি আজ দিব না.

-“আপনি এত ক্যারেক্টার লেস হবেন ভাবতেও পারিনি

-“যা যা ভাবার ভাব কিন্তু এখন ঘুমাতে দে।আমার ঘুম ভাঙবি তো তোর কপালে দুঃখ আছে

-“দরজাটা খুলুন

-“তুই ভাল কথার মেয়ে না দাঁড়া মাকে ডাকছি
বলেই আদি মা বলে গলা ছাড়ল আদিবা কি করবে ভেবে না পেয়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে আদির মুখ চেপে ধরল।

-“পা গ ল হয়ে গেছেন? আপনি এমন ছেলে মানুষি কেন করছেন?

-“কারন ছেলে মানুষির বয়স টা তোর সাথে কাটাতে পারি নি। বলে আদি,আদিবাকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল। আদিবা নিজেকে ছাড়াতে ছ ট ফ ট করতে লাগল।

-‘উম আদিবা অনেক বাড়াবাড়ি করেছিস আর না…ঘুমাতে দে..

আদির সাথে শক্তিতে পেরে উঠল না আদিবা তাই বাধ্য হয়েই আদির সাথে শুয়ে রইল। প্রায় ঘন্টাখানিক পর আদিবার খুঁজ শুরু হল কারন সকালের নাস্তা সে বানায়। তাই সে না থাকায় নাস্তার ব্যবস্থা হয় নি তারউপড় বাসা ভর্তি লোকজন নানান রকমের কাজ।

আদিত্যের মা আদিবাকে গলা ছেড়ে ডাকছেন আদিবা শুনতে পাচ্ছে কিন্তু উত্তর দেওয়ার উপায় নেই। কেটে গেল আরও কিছুক্ষন আজ আদিবার কপালে দুঃখ আছে সেটা সে জানে।

প্রায় ৯ টার কাছাকাছি আদির ঘুম ভাংগল শুধু শুধু ভাংগে নি আদির মা দরজায় কড়া নাড়ায় ভেঙেছে।

আদি বেশ ধীরে সুস্থে উঠে বসল যেন কোন কিছুই ঘটে নি কিন্তু এদিকে ভয়ে আদিবার হাত পা কাঁপছে চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে দরজা খোলার সাথে সাথে তার দিকে ভয়ানক ঘুর্নিঝড় বয়ে আসবে সন্দেহ নেই।

আদি আদিবার দিকে তাকাল আদিবা ভিতু হরনীর মত আদির দিকে তাকিয়ে আছে,
-“এমন মুখ করে থাকার কী আছে..? দেখে মনে হচ্ছে শোক দিবস পালন করছিস। বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দে…আমি দেখছি মা কেন ডাকছে।

আদির কথাটা আদিবার পছন্দ হয়েছে। হ্যা ওয়াশরুমেই একমাত্র জায়গা যেখানে সে লুকাতে পারে তাই আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে গেল।

আদি গিয়ে দরজা খুলল,
আদির মা আর জুঁই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের হাতে চায়ের ট্রে।

চা টা এগিয়ে দিয়ে রুবিনা বেগম বললেন,
-“সরি বাবা চা দিতে দেরি হয়ে গেল। আরও আগেই দিতাম কিন্তু…

-“আমি সকালে চা খাই না মা। কফি খাব।

-“ওহ আমি এখনী করে আনছি…

-” তোমার করতে হবে না মা। আদিবা হাতের কাজ টা শেষ করে বানিয়ে দিবে…

-“আদিবা দিবে..?

-“হ্যা ওয়াশরুমে আমার কাপড় ধুচ্ছে কাল ধুয়ার কথা ছিল কিন্তু ধুয় নি তাই সকালে ধুচ্ছে। কাপড় ধুয়ে কফি বানাবে।

-“ওমা তাই..? ও এখানে আর আমরা ওকে খুঁজে হয়রান হয়ে যাচ্ছিলাম।

-“কেন খোঁজাখুঁজির কি আছে? ওত ছোট বাচ্চা না যে হারিয়ে যাবে।

-“না মানে সকালে নাস্তা ও বানায় তাই..

-“অহ কিন্তু ও তো ব্যাস্ত। আজ অন্য কাউকে বলো নাস্তা বানাতে…

রুবিনা বেগম আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলেন সাথে জুঁই ও…কিছুদূর গিয়ে জুঁই বলতে শুরু করল

-“কাকিমনি কি বলতো, আমার কী মনে হয় আদি ভাইয়া এখনো আদিবাপু কে ভালবাসে আর ওকেই বিয়েই করবে…

-“অসম্ভব এ কিছুতেই হতে পারে না।

-“কিন্তু ওর হাবভাবে তো এমনটাই মনে হয়।

-” আদি অন্য যাকেই পছন্দ করোক আমরা মেনে নিব কিন্তু আদিবাকে কিছুতেই না।

-“কেন আদিবাপুকে না কেন..?

-“আদিবার জন্য আমরা অনেক বছর আদিত্যকে কাছে পাইনি আমি চাই না আবারো এমন কিছু ঘটুক। যে করেই হোক আদিবাকে আদিত্যের জীবন থেকে বিদায় করতে হবে। আমি আজকেই এর একটা বিহিত করব।

এদিকে রুবিনা বেগম চলে যাওয়ার পর আদিত্য বলল,

-“ম্যাডাম বাইরে আসতে পারেন মা চলে গেছে।

আদিবা বাইরে আসল তারপর ফ্যালফ্যাল করে তাকাল আদির দিকে।

-‘আগেই ত বলেছিলাম ভয় পাওয়ার কিছু নেই যেটা সামলাতে পারব না সেই কাজ আমি করিনা এখন নিচে যা আমার জন্য কফি নিয়ে আয়।

আদিবা কথা বাড়াল না চলে যেতে চাইল।

-“এই দাঁড়া চুল ঠিক করে গলা ঢেকে তারপর যা..আর রাতের ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবি না।

আদিবা মাথা নাড়ল তারপর ওড়না দিয়ে ভাল করে গলা ঢেকে চুল ঠিক করে নিচে গেল। আদিবা নিচে যাবার কিছুক্ষন পরেই আদি নিচে নেমে আসল। এসেই টেবিলে বসল বাকিরাও আছে আদিবা রান্না ঘরে কফি বানাচ্ছে কাজের মহিলা আর রুবিনা বেগম নাস্তা।

রান্নাঘর আর খাবার টেবিল কাছাকাছি হওয়ার সব কথায় শোনা যায়। আদিকে দেখে আদিত্যের বাবা বললেন,

-“আদি তুমি এতদিন পর দেশে এসেছো তাই আমি চাচ্ছি একটা গেট টুগেদার আয়োজন করে সবার সাথে তোমাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে তোমার কোন আপত্তি নেই তো…??

-“নাহ আপত্তি কিসের…যা ভাল বুঝো করো কিন্তু এই দেশে থাকার আবদার করো না। আমি এখানে বেশিদিন থাকব না আবার ফিরে যাব

-“সে নাহয় পরে দেখা যাবে আপাতত আজ সন্ধ্যায় বাসায় থেকো…আর চাইলে তোমার পুরনো বন্ধুদের দাওয়াত করতে পারো।

-“আইডিয়া টা খারাপ দাও নি। আমার সবার সাথে দেখা করা উচিত। আচ্ছা তাহলে পার্টির আয়োজন করা যাক।

-“আমি সব আয়োজন করেই রেখেছি ক্যাটারিং এর লোক কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসবে তুমি তোমার বন্ধুদের দাওয়াত করে দাও।

-“আদি হ্যাসূচক মাথা নেড়ে খেতে শুরু করল।

খাওয়া শেষে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসল। তারপর সব পুরোনো বন্ধুদের ফোন করে দাওয়াত দিতে শুরু করল। আর আদির বাবা আত্মীয়দের দাওয়াত দিচ্ছেন এর মধ্যে আদিবা কফি নিয়ে এসে আদিত্যের সামনে রাখল।

হটাৎ করে আদিবাকে দেখে থেমে গেল। ভূত দেখার মত চমকে উঠে তাকাল আদিবার দিকে এমন একটা ভাব যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুলটা এই মাত্র সে করে বসেছে।

-‘ক ক কী হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কোন ভুল করেছি?

-“বিরাট বড় ভুল… বলেই আদি উঠে গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়াল।

-“বাবা পার্টি বাসায় না করে অন্য কোথাও করা যায় না..?

-“কিন্তু সবাইকে ত বাসার কথা বলে দিয়েছি।

-“আই সি…উফফ আমি কী করে ভুলে গেলাম।

-“কেন কোন সমস্যা হয়েছে…?

-” সমস্যা তো হয়েছেই। আচ্ছা হোক আমি সামলে নিতে পারব বলে আদি বাইরে চলে গেল…



চলবে…!!