বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব-২৩+২৪

0
420

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২৩
লেখনীঃ মনা হোসাইন

আদি চোখ খুলে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল,
-“কিছু বলছিলি…?

আদিবা কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারল না।
আদি কী তাহলে শুনেনি..?নাকি শুনেও না শোনার অভিনয় করছে? বিষয়টা আদিবার মাথায় ঢুকল না। আদি ঠোঁটের র*ক্ত মুছতে মুছতে বেশ শান্ত ভাবে বলল,
-“এখন তোর কি শাস্তি পাওয়া উচিত?

আদিবা এবারেও উত্তর দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেল না সে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আদি বাঁকা হাসল।
-“ঘটনা কী?

-“না মানে কিছু না…

-“আচ্চা চল তাহলে যাওয়া যাক। ভয় পেতে হবে না আজ কোন শাস্তি দিব না. যা করতে বলেছিলাম করছিস সে ভাল করে হোক বা খারাপ করে করেছিস তো। তোকে আগেই বলেছি এখনো বলছি তুই যদি আমার কথা শুনিস পৃথিবীর সব সুখ তোর পায়ের কাছে এনে দিব।

আদিবা আদিত্যের কথার মানে বুঝল না। আদি কি ইচ্ছে করেই প্রপোজালের ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছে?

-“ভ ভ ভাইয়া…

-‘হুম কিছু বলবি…?

আদিবা কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু কথাগুলো পেটের মাঝে ঘুরপাক খেলেও মুখে আসছে না। গলার কাছে এসে আটকে যাচ্ছে কেন যেন বলে উঠতে পারছে না। আদিকে আজ অন্যদিনের মত রাগী লাগছে না তাকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। ড্রাইভ করতে করতে মুচকি হাসছে আদিত্য যেন যুদ্ধ জয় করে ফিরছে। এদিকে কোন কারন ছাড়াই আদিবা নার্ভাস ফিল করছে। কেমন যেন লাগছে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে সে ভয় পাচ্ছে নাকি লজ্জা পাচ্ছে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেল না।

-“আচ্ছা আদিবা ধর আজ রাতে আমরা বাসায় ফিরলাম না। সারারাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম কেমন হবে ব্যপারটা? অদ্ভুত কিন্তু এক্সাইটেড টাইপের কিছু একটা হবে তাই না?

-“কিন্তু আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরব কেন?

-“যুক্তিক প্রশ্ন রাস্তায় ঘুরার মত কিছু তো ঘটেনি।
আচ্ছা বাদ দে এই প্লেন ক্যান্সেল।

-“ভাইয়া আপনি একটু অদ্ভুত আচারন করছেন না?

-“করছি বুঝি..?

-“আপনি তো সবসময় আমার উপড় রেগে থাকেন আজ আমি আপনায় ব্যাথা দিলাম তবুও রাগ করলেন না..?

-“রাগ করতে ইচ্ছে হল না। জানিস আদিবা তুই দেখতে খুব মিষ্টি… আদিত্য কথা শেষ করার আগে আদিবার হিচকি উঠে গেল সে চোখ বড় বড় করে বলল।

-“ভাইয়া পানি খাব.

আদিত্য আদিবার দিকে তাকিয়ে আবারো হাসল। না তারপর স্টেয়ারিং এর পাশ থেকে পানির বোতল নিয়ে আদিবার দিকে এগিয়ে দিল। আদিবা এই আদিত্যকে চিনতে পারছে না। আদিত্যের আচারন আদিবার সুবিধার মনে হচ্ছে না অস্বাভাবিক লাগছে আর যাই হোক আদি কখনো আদিবাকে মিষ্ট বলতে পারে না।

-“কাকিয়া বলছিল তোকে নাকি কয়েকবছর ধরে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না ব্যাপারটা কি সত্য?

-“মা এসব বলল আপনায়..?

-“নাহ বাসায় সবাই আমার বিয়ের কথা বলছিল তখন তোর নামটাও শুনলাম। জিজ্ঞাস করায় বলল কোন এক অজানা কারনে তোর বিয়ে হচ্ছে না। কারন টা কী বলতো?

-“আমার বিয়ে না হওয়ায় আপনার খুব অসুবিধে হয়েছে মনে হচ্ছে…

-“তা তো একটু হয়েছেই..আচ্ছা বাদ দে তোর কেমন ছেলে পছন্দ বলতো দেখি খুঁজে পাওয়া যায় কিনা..

-“মজা করছেন?

-“কেন মনে হচ্ছে আমি মজা করছি.?

ভাইয়া আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। গল্প বাদ দিয়ে ড্রাইভ করুন।

আদিবা কত সংকোচ ভুলে মনের কথা বলেছিল আদি তার কথার কোন গুরুত্বই দিল না উলটে কত আবল তাবল কথা বলল দেখে আদিবার ভিষন রাগ হল।গাড়ি এসে বাসার সামনে থামতেই আদিবা হনহন করে ভিতরে চলে গেল। গিয়ে কিছুটা অবাক হল বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে গোল সভা বসিয়েছে। এখানে বাসার প্রত্যেকেই উপস্থিত একমিনিটের জন্য আদিবার অসুস্থতার জন্য হয়ত সবাই অপেক্ষা করছে কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল পরিবারের কেউই তাকে এতগুরুত্ব দিবে না,দেওয়া সম্ভব না।সে মরল কি বাঁচল তাতে কারো কিছু যায় আসে না। তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল সাথে সাথে তার মা পথ আগলে দাঁড়াল এর মধ্যেই আদিও এসে বাসায় ঢুকল কিন্তু ঠোঁটে দাগ থাকায় সে সবার সামনে দাঁড়াতে চাইল না তাড়াতাড়ি উপড়ে চলে যেতে চাইল কিন্তু সিঁড়ির অর্ধেক আসতেই তার পা দুটি আটকে গেল। সারা শরীর যেন কেঁপে উঠল। কপালের মাঝ বরাবর রগ ফুলে উঠল সেকি ঠিক শুনেছে? আদিত্য রাগি চোখে পিছন ঘুরে তাকাল।

নিচে আদিবার মা আদিবাকে প্রশ্ন করছেন,
-“কিরে চুপ করে আছিস কেন উত্তর দে আদিবা..ছেলেটা কে?

আদিবা অবাক হয়ে বলল,
-‘তুমি কি বলছ মা আমি বুঝতে পারছি না কিসের ছেলে..?

-“এত রাতে তোকে ফোন করে কে? তোর সাথে কোন ছেলের কথা বলতে থাকতে পারে.? তাও একবার না এই নিয়ে দশবারের উপড়ে ফোন দিয়েছে। কে সে জবাব দে। এই জন্যেই তুই বিয়েতে রাজি হোস না?

-“মা কিসব বলছো?

-“কি বলব তাহলে আমায় শিখিয়ে দে.. পাঁচ বছর ধরে তুই বাসার বাইরে যাস আত্মীয়রাও পর্যন্ত তোকে চিনে না তারমধ্যে ছেলে বন্ধু আসল কোথা থেকে..?

আদিবা উত্তর দেওয়ার আগেই আদির দিকে তাকাল কারন এখানে তাকে নিয়ে কে কি ভাবছে সে নিয়ে তার কোন চিন্তা নেই তার একমাত্র চিন্তা আদিকে নিয়ে কোন ছেলে রাতের বেলার তাকে ফোন করেছে এটা আদি কিছুতেই মানবে না সে যদি আদিবার বন্ধুও হয় তবুও না।

আদিবাকে তাকাতে দেখে আদি শক্ত গলায় বলল,

-“আদিবা সেকেন্ড অপশনটা ভাল ছিল



চলবে…!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#বোনাস_পার্ট
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন

আদিবা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই বাসার লেনলাইন আবার বেজে উঠল । আদিবার মা রাগী চোখে তাকালেন আদিবার বুঝতে বাকি রইল না ফোনটা তাকেই তুলতে হবে তাই এগিয়ে গিয়ে ফোন ধরল ।আদিত্য উপড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে কিছু বলছে না। আদিবা ফোনে কথা বললেও সেদিকে তার মন নেই সে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। আদিও আদিবার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে। যেন প্রবল ঝড় শুরু হওয়ার আগে আকাশ ঘুম হয়ে আছে। আদিবা সবার সামনেই কথা বলে শেষ করল সাথে সাথে আদির ধর্য্যার বাঁধ ভাংগল নিজেকে আর সামলাতে পারলনা হনহন করে নিচে নেমে এসেই কোন কিছু না বলে আদিবার চুল টেনে ধরল ধরল। ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠল আদিবা। চোখ ভরে উঠল কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

আদির বাবা এখানে উপস্থিত কিন্তু আদির মা আর আদিবার মা আছেন।আদিবার মা তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বললেন,

-“কী করছিস বাবা? ছেড়ে দে এমন করিস না প্লিজ। আমি দেখছি কে ফোন করেছিল।

আদিত্য কাউকে পাত্তা না দিয়ে আরও শক্ত করে টেনে ধরে প্রশ্ন করল,

-” এত রাতে তোকে কে ফোন দেয়? কে ফোন করেছিল বল? এত নিচে নেমে গেছিস তুই.?

আদিত্য কথাটা শেষ করার আগেই আদিবা এক অসম্ভব কান্ড ঘটিয়ে বসল সে স্বজোরে আদির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে। আদিবা কখনো এমন করতে পারে সেটা যেন সবার কল্পনার বাইরে ছিল, যে মেয়ে কোনদিন উঁচু গলায় কথা বলে না সে কিনা আজ থাপ্পড় বসিয়ে দিল তাও আদির গালে? কিভাবে সম্ভব? সবাই ভুত দেখার মত চমকালো আদির মা এগিয়ে আসতে আসতে বললেন

-“তোর এত বড় সাহস হয় কি করে আদিবা?তুই সবার সামনে আদির গায়ে হাত তুললি?

আদির মা কাছাকাছি আসতেই আদিবা চেঁচিয়ে উঠল,

-“খবরদার কাকিমনি আমার গায়ে হাত দিবে না। অনেক সহ্য করেছি আর না।এবার আমাকে মা*রলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।তুমি আমার গুরুজন আমি সেটা ভুলে যেতে বাধ্য হব তোমরা আমাকে পেয়েছোটা কি শুনি..?

-“আদিবা তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারছিস?

-“কাকিমনি আমার মত একটা মুর্খ,ঘরকোণে মেয়ের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কী আশা করো তোমরা..? আমি যে অকথ্য ভাষায় গা*লিগালাজ করছি না এটাই তো অনেক। যাকে কোনদিন কোন সমাজে বের হতে দাও নি সে সামাজিক আচারন করবে সেটা ভাবো কি করে?সব সময় আমার সাথে অন্যায় করেছো আর সহ্য করব বলতে পারো? আমিও তো মানুষ..? এই ছয় বছরে তো অনেক মেরেছো আর কত? এবার আমায় মুক্তি দাও…
বলেই ডুকরে কেঁদে উঠল আদিবা..আদিবাকে এর আগে এমন আচারন করতে কখনো দেখে আদি তাই সে বেশ অবাক হয়েছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।সে আদিবার দিকে ঝুঁকে বলল

-“চুল ধরায় কি বেশিই ব্যাথা পেয়েছিস?

আদিবা অগ্নিঝড়া কন্ঠে জবাব দিল
-“না আমার শরীর লোহা দিয়ে তৈরি আমি কখনো ব্যাথা পাইনা।

-“ব্যাথা পাওয়ার মত করে ধরিনি তো…

-“আমি আপনার মত ছেলে নই তাই আমাকে কিভাবে ধরলে কতটা লাগে আপনি বুঝবেন না

-“আদিবা তুই আজ আমার সাথে কি কি করেছিস আশা করি ভুলে যাস নি আগের কথা বাদ দিলাম এখন তুই আবার আমাকে থা*প্পড় মে*রেছিস এখন কার রাগ করার কথা?আমি কিছু বলছি না উলটে তুই রাগ দেখাচ্ছিস?

-“দেখান রাগ, মানা করেছে কে, রাগ দেখান,মারুন,
বাসা থেকে বের করে দিন এর বেশি আর কি করবেন?

-“যে ফোন করছিল সে কি বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে নাকি..?

-” মুখ সামলে কথা বলুন মিস্টার আদিত্য চোধুরী।

-“তারপর…?

-” আপনি আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছেন তারপরেও শান্তি হয় নি..? কি দোষ ছিল আমার সেদিন? সারারাত ধরে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখেছিলেন তারপর আপনার পরিবার আপনাকে দুটো কথা শুনিয়েছিল বলে আপনি বাসা ছেড়ে চলে গেলেন আর তার দায় চাপল আমার ঘাড়ে কেন বলতে পারেন? এখন আপনি ফিরে আসলেন যারা আপনাকে শাস্তি দিয়েছিল সবার সাথে মিলেও গেলেন শুধু বাকি রইলাম আমি কিন্তু কেন? সেদিন আমি একটা বারের জন্যেও প্রশ্ন করি নি কেন এমন করলেন? প্রতিবাদ কিংবা অভিযোগ কিছুই করিনি তবুও সব দায় চাপল আমার ঘাড়ে…

-“তার মানে আমি কেন চলে গিয়েছিলাম সেটা তুই এতদিনেও বুঝিস নি…

-“এতদিন ভাবতাম আপনি হয়ত আমাকে ভালবাসেন তাই আমাকে এত শাসন করেন কিন্তু আজ ত প্রমাণ হয়ে গেল। তারপরেও কেন? আর আপনি যদি আমায় ভালও বেসে থাকেন তবুও বলছি এমন ভালবাসা যেন কোন মেয়ের ভাগ্যে না জুটে।এ কেমন ভালবাসা যেখানে সারারক্ষন ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়? এমন ছেলেকে কেউ লাইফ পার্টনার হিসেবে চায় না। আসলে আপনি কখনো কাউকে ভালই বাসতে পারেন নি পারবেন ও না ..

-“একটু আগেই তো বলছিলি তুই নাকি আমায় ভালবাসিস…? এখন বলছিস আমার মত ছেলেকে চাস না?

-“হ্যা আমিই বলছি। একটু আগে যেটা বলেছিলাম আবেগে বলেছিলাম এখন যা বলছি বাস্তব বলছি।ধরুন আমি আপনাকে বিয়ে করলাম কি হবে তখন? আমি কোথাও গেলে আমাকে বাথরুমে আটকে রাখবেন। কেউ আমাকে ফোন করলে গায়ে হাত তুলতেও ভাব্বেন না। এমন জীবন গল্লে কাটানো যায় বাস্তবে সম্ভব না।

-“আদিবা তোর কি মনে হচ্ছে না তুই একটু বেশিই সাহস দেখাচ্ছিস আমি তো বুঝতে পারছি না তোকে এত সাহস কে যোগাচ্ছে?

-“খবরদার আমার দিকে আংগুল তুলবেন না আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনাদের কারোর নেই।

-“তাই নাকি?

-“হ্যা তাই আমাকে কিছুক্ষন আগে যে ফোন করেছিল সে আমার কেউ হয় না। সে আপনার বোনের প্রেমক। আমাকে ক্ষমা করো অরিন আপু আমি আর এই অপবাদ নিতে পারছি না। আমার পক্ষে আর চুপ থাকা সম্ভব না আজ আমাকে সবটা বলতে হবে।

আদি আদিবার কথায় পুরোই অবাক হল সে দৃঢ় গলায় প্রশ্ন করল

-“কি বললি আবার বল…

-“যা শুনেছেন তাই বলেছি ছয় বছর আগে আপনি আমাকে যে ছেলের সাথে দেখেছিলেন সেটা অরিন আপুর পছন্দের ছেলে ছিল। সেদিন আপুই আমাকে পাঠিয়েছিল তাকে বলার জন্য যে আপু তাকে ভালবাসে। প্রথমে আমি যেতে রাজি হইনি.কিন্তু আপু আমায় বলেছিল আমি তাদের বাসায় থাকি, খাই তাই এইটুকু প্রতিদান দেওয়া উচিত। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদান দিয়ে আসছি।
সেদিন যখন আপনি আমায় প্রশ্ন করেছিলেন ছেলেটা কে? আমি চাইলেই উত্তর দিতে পারতাম কিন্তু যার নুন খাই তার নিন্দা করতে পারিনি। পারিনি আপুকে বিপদে ফেলতে। কিন্তু আজ আপু সেই ছেলেটাকে ফেলে অন্য একজন কে বিয়ে করছে, বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে জেনে ছেলেটি ব্যাকুল হয়ে আমাকে ফোন করছে। মজার বিষয় কি বলুন তো আমি এতদিন যার জন্য এত কষ্ট সহ্য করলাম সেই আপু সবটা জেনেও কিছু বলছে না আজও বলছস না সেদিনো বলেনি।আপনারা সবাই আমাকে ব্যবহার করেছেন আর করবেনেই বা না কেন যাকে নিজের মা সহ্য করতে পারে না সেখানে আপনারা কেন করবেন..?
যাইহোক আমি খারাপ আমার চরিত্র খারাপ তাই আজ সবাইকে মুক্তি দিয়ে আমি চলে যাব।

বলেই উলটো ঘুরে হাঁটা দিল আদিবা সাথে সাথে তার মা বলল,
-“এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস আদিবা..?

-“জাহান্নামে, এগিয়ে দিবে…?

আদিবার কথা শুনে আদিত্য যেন পাথর হয়ে গেছে কিছু বলতে পারছে না। কোন মুখেই বা বলবে? কী করে সে আদিবাকে আটকাবে আদিবা যে বলেছে সে আদির মত ছেলেকে চায় না।

আদিবা হনহন করে হেঁটে বাইরে চলে যাচ্ছিল পিছন থেকে আদিত্য বলল,

-“খবরদার আদিবা এই রাতে তুই বাইরে যাবি না।

-“আজ আমি চলে যাব ভাইয়া একমাত্র মৃত্যু ছাড়া এই সিধান্ত বদলাবে না। আপনি যদি আজ আমায় মারতে মারতে মেরে ফেলেন তবুও আমি এখানে আর একমুহূর্ত থাকব না।তাছাড়া আপনি যদি আমার পিছন পিছন আসেন আমাকে বাঁধা দিতে চান আজ ট্রেনের নিচে মাথা দিব আমি যে এক কথার মানুষ সেটা নিশ্চুই জানেন।

বলে বেরিয়ে গেল আদিবা আদি যেতে চেয়েছিল কিন্তু আদিবার শেষ কথাগুলো তাকে ভাবাল সত্যি সত্যি যদি কোন অঘটন ঘটয়ে বসে তাই গেল না।


চলবে..!!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২৪ (অংশবিশেষ)
#লিখনীঃ মনা হোসাইন

আদিবা হন হন করে বেরিয়ে গেল একবার ঘুরেও তাকায় নি। আদি তার চলে যাওয়ার দিকে নিশ্চুপ চেয়ে তাকিয়ে রইল। চোখ দুটো ভরে উঠছে কিন্তু আদিবাকে সে বাঁধা দেওয়ার কোন প্রয়োজনবোধ করেনি। যে মেয়েটা তার কাছ থেকে দূরে গিয়ে শান্তি খুঁজতে চাইছে, যে মেয়েটা তাকে অসহ্যকর মনে করে তার জন্য এত উতলা হওয়ার আবশ্যকতা নেই ভেবে নিজেকে শান্তনা দিল।

আদিবা আদিকে যেভাবে দোষারোপ করল আদির জায়গা অন্য কেউ থাকলে তার নিশ্চুই অনুশোচনা হত কিন্তু আদির অনুশোচনা হচ্ছে না তার কষ্ট হচ্ছে। বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে। আদির চোখ ভরে এসেছে সে সবার সামনে কাঁদতে চায় না তাই শান্ত পায়ে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।

-“আচ্ছা তবে কি আদিবা সত্যিই আমায় চায় না? আমি এতই খারাপ, আমার মত ছেলেকে কেউই পছন্দ করে না তাইনা? আমিও জানি আমাকে পছন্দ করার মত কোন কারন নেই আমার আচারন স্বাভাবিক না। কিন্তু আদিবা কেন বুঝল আমি যেমনেই হই আমার ভালবাসায় কোন খাঁদ ছিল না। মানছি আমি অন্যদের মত ভালবাসতে পারি নি আমার ভালবাসা বেপরোয়া ছিল তাই বলে ও আমায় ছেড়ে চলে যাবে? আমার কাছ থেকে পালানোর জন্য ব্যকুল হয়ে পড়বে.?

-“আচ্ছা আদিবা তোর মনে কী একটা বারের জন্যেও প্রশ্ন জাগল না আমি কেন সেদিন বাসা ছেড়েছিলাম? সামান্য বকার জন্য কেউ বাসা ছেড়ে চলে যায় ? আমি তো তোর উপড় কিংবা বাবা মায়ের উপড় কারোর উপড় রাগ করে বাসা ছাড়ি নি, ছেড়েছিলাম নিজের উপড় রাগ।আমি নিজেকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। তোকে সেদিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ভিতর আত্মা কেঁপে উঠেছিল সিধান্ত নিয়েছিলাম তোর থেকে দূরে থাকব কারন আমি দেখতে পাচ্ছিলাম আমি নিজের রাগ সামলাতে ব্যার্থ হচ্ছি। মন থেকে না চাইলেও তোকে ঠিকি আঘাত করছি। তাই চেয়েছিলাম তোকে ছেড়স থাকতে নিজের যত কষ্টই হোক মেনে নিব তবুও তোর সাথে থেকে তোর উপড় অত্যা”চার করব না। ভেবেছিলাম তোর থেকে দূরে থাকলে হয়ত নিজের রাগকে বশে আনতে পারব।
শুধুমাত্র তোকে কষ্ট দিব না জন্যে নিজেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে ঠেলে দিয়েছিলাম।
কি করব বল পৃথিবীর সবাই তো আর একরকম হয় না। সবাই যদি এক রকম হত তাহলে কি পৃথিবীতে এত খু*ন খা*রা*বি হত বল? সবাই এক হয় নারে কেউ রাগী হয় কেউ আবার কোমল আমাকে উপড়ওয়ালা এভাবেই গড়েছেন। তুই আমার অবাধ্য হলে মাথায় র*ক্ত চড়ে যায় আমি কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারিনা।আসলে তোকে আমার খুব আপন মনে হয় যাকে সবটা দিয়ে নিজের করে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম। যে শুধু আমার হবে সারাক্ষন আমায় নিয়ে ভাব্বে তার পুরো পৃথিবী জুড়ে থাকব শুধুই আমি।আসলে আমার ভয় হত তোকে স্বাধীনতা দিলে অন্যদের সাথে মিশতে দিলে তুই যদি আমায় ছেড়ে চলে যাস?

তবে বিশ্বাস কর আদিবা এই ছয় বছরে আমি নিজেকে বদলানোর অনেক চেষ্টা করেছি, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছি কিন্তু সবি বৃথা।কারন আমি প্রকৃতিগত ভাবেই এমবন। এত বছর পেরেও যেই তোর কাছি কাছি আসলাম সাথে সাথে আমার ছয় বছরের সাধনা বিফলে গেল আবারো সেই বেপরোয়া আদিতে ফিরে গেলাম সব যেন পাল্টে গেল মুহুর্তেই। তোর দিকে তাকানোর সাথে সাথে মনে হল তুই শুধুই আমার তোকে অন্য কারোর পাশে দেখা সম্ভব না।

কিন্তু আজ আমি সফল ছয় বছরে যা পারিনি আজ পেরেছি তুই আমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছিস জেনেও আমি তোর বাঁধা দেইনি রাগো করিনি। কারন আমি বুঝে গেছি তোকে পাওয়ার যোগ্যত আমার নেইা নেই। তাই তোকে নিজের সাথে জড়িয়ে কষ্ট দিব না দেওয়ার মানে হয় না। তুই আজ থেকে মুক্ত আদিবা। আমি আর তোর পিছনে ছুটব না আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি আদিবা আজ থেকে তুই আমার কাছে মৃত….আমি আদিবাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি।



চলবে…!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২৪ (শেষাংশ)
#লিখনীঃ #মনা_হোসাইন

রাত বারোটার ঘর ছুঁই ছুঁই আদিবা রাগে বের তো হয়ে এসেছে কিন্তু এখন যাবে কোথায়? হাতে টাকা পয়সা কিছুই নেই। আদিবা হাঁটতে হাঁটতে এসে রাস্তার পাশের বেঞ্চটায় বসল।মাথায় নানান চিন্তারা এসে ভীড় জমালো বেশ ভয়ও লাগছে এতটা সাহস দেখানো উচিত হয়নি। এখন কী করবে..? কার কাছে যাবে তেমন নিকটাত্মীয় তো কেউ নেই যার কাছে টাকা ধার পাওয়া যাবে।আদিবা বেশ চিন্তা করে পেল তার এক বান্ধবী আছে বাসা কাছেই তাই তার কাছে যাওয়া উচিত। টাকা চাওয়া না গেলেও রাত টা অন্তত কাটানো যাবে যেমন ভাবনা তেমন কাজ সে দু বাসা পেরিয়ে বান্ধবী তিন্নির বাসায় গিয়ে হাজির হল। বাসার সবাই তাকে দেখে অবাক হল।তিন্নি এগিয়ে এসে বলল,

-“আদিবা তুই এত রাতে?

-“তোর রুমে গিয়ে কথা বলি..

-“বেশ চল উপড়ে চল।

আদিবা তিন্নির ঘরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসল।

-“আদিবা কিছু কি হয়েছে? এত রাতে তুই এখানে?

-“তিন্নি তোর যদি কোন আপত্তি না থাকলে আজ রাতটা তোর বাসায় থাকতে চাইছিলাম।

-“আমার আপত্তি তো নেই কিন্তু আদিত্য ভাইয়া এখন দেশে আছে আদিবা।

-“তো উনি দেশে আছেন বলে তুই আমায় জায়গা দিবি না? ঠিক আছে লাগবে না আমি চলে যাচ্ছি।

-“আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? জানি কোন ঝামেলা ছাড়া তুই বাসা থেকে বেরুস নি কিন্তু আদিবা তোর তো আর পাঁচজনের মত রাগ দেখানোর অধিকার নেই। বাসার কেউ কোন অন্যায় করলেও শেষ তোকেই মেনে নিতে হবে।

-‘কেন মানতে হবে আমি কি মানুষ নই?

-“অবশ্যই কিন্তু তুই আদি ভাইয়ের হবু বউ তাই তুই মানতে না চাইলে জোর করে মানাবে। আদি ভাই যদি জানতে পারে তুই এখানে উনি কি সেটা মানবেন? ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি তোর অন্যদের সাথে মিশা আদি ভাই পছন্দ করে না। অরিন আপুর এনগেইজমেন্টের দিন তোকে কেমন মাঝরাতে এসে নিয়ে গিয়েছিল?যে রাগী উনি…

-“উনার রাগে আমার আর কিছু যায় আসে না।তাছাড়া উনি জানবেন কী করে।

-“হাসালি আদিবা তুই ভুলে গেছিস ফয়সাল ভাই
আদি ভাইয়ের বন্ধু।ফয়সাল ভাই অবশ্যই বলে দিবে আর কিছুক্ষন পরে আদি ভাইয়া এসে তোকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যাবে। ছোট বেলায় যখন খেলতে আসতি যেভাবে নিয়ে যেত ঠিক সেবাবেই
নিয়ে যাবে।

আদিবা আর তিন্নি কথা বলছে এদিকে ফয়সাল আদিত্য কে ফোন দিল ফোন তুলে আদিত্য শান্ত গলায় জবাব দিল

-“হুম বল…

-“কোথায় তুই

-“কোথায় থাকার কথা? বাসায়ই আছি।আর এটাও জানি তুই এত রাতে ফোন কেন দিয়েছিস কেন

-“জানিস তবুও বাসায় বসে আছিস?দেখ চাই মাঝরাতে এসে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে এখন নিয়ে যা।

-“না আমি আসভ না আজ রাতটা আদিবাকে তোদের ওখানে থাকতে দে।

-“এটাও সম্ভব?

-“হুন সম্ভব। আর শোন সকালে আদিবা চলে যাওয়ার সময় কিছু টাকা দিয়ে দিস।তোর হাত থেকে নিয়ে চাইবে না তিন্নিকে দিতে বলিস।

-“মানে বুঝলাম না।

-“এত মানে বুঝে তোর কাজ কি?যা বলেছি সেটা কর বলে আদি ফোন কেটে দিল।

আদিবা সারারাতে একবারো চোখ বন্ধ করতে পারেনি তাই সকাল হতে না হতেই বেরিয়ে যেতে চাইল তিন্নি এসে তালে আটকে দিয়ে কিছু টাকা দিল। আদিবা কথা বাড়ায় নি কারন রার এখন টাকার প্রয়োজন।

আদিবা এসে ট্রেনের টিকিট কাটল আর মোটামুটি পাঁচ ঘন্টা পর গ্রামের বাড়িতে পোঁছাল। নির্জন নিস্তব্ধ বাড়ি মানুষ তো দূর একটা কাক পক্ষীও নেই। পড়া বাড়ি এর চেয়ে বেশি আর কি হবে? কতবছর হয় কেউ আসে না।

আদিবা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই গা ছম ছম করে উঠল। আশে পাশে কোন বাড়ি ঘর নেই তাই পুরো বাড়িতে সে একা তবে যাই হয়ে যাক এবার আদিবা আর কোন পরাজয় মানবে না তাই কোমড় বেঁধে লেগে পড়ল কাজে।দীর্ঘদিনের অব্যবহৃত ঘরকে বসবাস যোগ্য করে তুলতে বেশ পরিশ্রম হয়েছে আদিবার তার পক্ষে আর কোন ঘর পরিষ্কার করা সম্ভব হয় নি একটাই পরিষ্কার করেছে।দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে আদিবা এখনো খায় নি। খাবেই বা কি করে রান্না করার পরিবেশ এখনো করে উঠতে পারেনি।ঘরে না আছে চুলা আর না আছে রান্নার সামগ্রী তাই নিরুপায় হয়ে আদিবা একদিন না খেয়ে থাকার সিধান্ত নিল।

সন্ধ্যা হতে না হতেই দরজা লক করে শুয়ে পড়ল আদিবা। ঘরে আলোর তেমন ব্যবস্থা নেই একটা লাইট টিমটিম করে জ্বলছে হটাৎ দরজায় কড়া নাড়ায় ভয় পেয়ে গেল আদিবা।

-“ক ক কে ওখানে..?

উত্তর আসল না তবে আরও দুইবার কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসল আদিবা গিয়ে দরজা খুলতে চোখ কপালে উঠস গেল,

-“আপনি এখানে কি করছেন..?

-“দাদার বাড়িতে ঘুরতে এসেছি তাছাড়া আমি কখন কোথায় যাব তার কইফত কি তোকে দিতে হবে..

-“দেখুন ভাইয়া যথেষ্ট হয়েছে আর না আপনি এখনী এখাম থেকে যান।আর কত জ্বালাবেন আমায়?আমি রেগে যাওয়ার আগে চলে যান

বলা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য আদিবাকে সামনে থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় শুতে শুতে জবাব দিল

-“রাগ কি শুধু তোর একার আছে?আমার নেই? চুপচাপ সহ্য করছি বলে মাথায় চড়ে গেছিস তাই না? আর একবার গলা উঁচু করে কথা বলে দেখ তোকে যদি এখানে পুঁ*তে রেখে না দেই…

-“আপনি এখানে কি চান? কেন এসেছেন?

-‘তুই নিজেকে কি ভাবিস রে আদিবা..? খুব সুন্দরী? কোন এংগেল থেকে তীর কাছে নিজেক্ব সুন্দরী মনে করিস আমাকে একটু বল তো। একে তো দেখতে খারাপ, দ্বিতীয় তো পড়াশোনার নামে খবর নেই, তয় তোর বয়স ২৫ বছরে ঘর ছুঁয়েছে।এমন মেয়ের সাথে প্রেম ত দূর তাকিয়ে দেখারো ইচ্ছা আমার নেই। এখানে এসেছি বিশেষ একটি কারনে তাই প্যান প্যান করবি না।যা আমার জন্য খাবার নিয়ে।

-“আমি কেন আনব?

-“কারন না আনলে তোর হাড়গোড় একটাও আস্ত থাকবে না। এখানে কিন্তু বাড়ির বড়রা নেই যে তোকে বাঁচাবে মাইন্ড ইট
.



চলবে.।